মেহেদী হাসান, ১৩/১১/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় যেকোন দিন ঘোষনা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ রায় ঘোষনার তারিখ অপেক্ষমান রাখা বিষয়ে আদেশ দেন।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হল। এ মামলার শেষ ধাপে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। কিন্তু হরতালজনিত কারনে পরপর চারদিন আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষনা করে আজ ট্রাইব্যুনাল মামলার বিচার কার্যক্রম কোজ করেন এবং রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করেন। তবে আসামী পক্ষ চাইলে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের অসমাপ্ত যুক্তি লিখিত আকারে জমা দিতে পারবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সাত নভেম্বর বৃহষ্পতিবার মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। আসামী পক্ষ একদিন যুক্তি উপস্থাপনের পর রোববার থেকে চারদিনের হরতাল শুরু হয়। রোববার মাওলানা নিজামীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী আসাদ উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জানান হরতাল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনতি কারনে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারছেননা। তাই তিনি মামলার কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এক দিনের জন্য মুলতবি করেন। এভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত একই প্রেক্ষাপটে একদিন করে মোট তিনদিন মামলা মুলতবি করা হয় আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী না থাকায়। গত মঙ্গলবারও এভাবে একদিনের জন্য আসামী পক্ষের মুলতবি আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল বলে দেন এটাই শেষ সুযোগ। এরপর আর মুলতবি করা হবেনা।
আজ বুধবারও একই প্রেক্ষাপট অর্থাৎ হরতালের কারনে সিনিয়র কোন আইনজীবী হাজির হননি আসামী পক্ষে। জুনিয়র আইনজীবী তারিকুল ইসলাম এবং আসাদ উদ্দিন উপস্থিত হন। আসাদ উদ্দিন আর একদিনের জন্য অর্থাৎ বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন করে শেষবারের মত সুযোগ চান। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেন।
মুলতবি আবেদন নাকচ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা ন্যায় বিচারের স্বার্থে একের পর এক মুলতবি আবেদন মঞ্জুর করেছি, তাদের সহযোগিতা পাবার জন্য। আজ আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার জন্য ধার্য্য ছিল। কিন্তু আজো তারা আসলেননা। কিন্তু আমরা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আনলিমিটেড সময় অপেক্ষ করতে পারিনা। ট্রাইব্যুনাল আইনে দ্রুততার সাথে মামলার কার্যক্রম শেষ করার কথা বলা আছে। তাই আজ মুলতবি আবেদন আর গ্রহণ করা হলনা। আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন এখানে সমাপ্ত ঘোষনা করা হল।
অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, গত চার বছরে যত হরতাল হয়েছে তার কোনদিন আসামী পক্ষের (জামায়াত নেতৃবৃন্দ) কোন সিনিয়র আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আসেননি নিরাপত্তাজনতি কারনে। ট্রাইব্যুনালও পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেছেন। গত তিনদিন পর্যন্ত একই প্রেক্ষাপটে তারা আসতে পারেননি এবং আমরা জুনিয়র আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে এসে সময় প্রার্থনা করেছি হরতালের কারনে। তিনদিন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের মুলতবি অবেদন নামঞ্জুর করে আমাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী গুরুতর অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। যুক্তি উপস্থাপন মামলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। কিন্তু এতবড় একটি মামলায় আমাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হল। তারিকুল ইসলাম বলেন, হরতালের সময় হাইকোর্টেও সিনিয়র আইনজীবীরা আসেননা।
তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল আমাদের অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সুযোগ চেয়ে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করব।
রায় অপেক্ষমান ঘোষনার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ২৬ জন সাক্ষী হাজির করেছি। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যৃদন্ড দাবি করছি আমরা।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রসহ স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি এবং পরিকল্পনার ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ ছিলনা। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে আলাদা কোন অভিযোগ ছিলনা। তবে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকে আলাদা একটি অভিযোগ হিসেবে গন্য করে চার্জ গঠন করেন। গত বছর ২৮ মে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র এবং বৃদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ ছিলনা। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে আলাদা কোন অভিযোগ ছিলনা। তবে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকে আলাদা একটি অভিযোগ হিসেবে গন্য করে চার্জ গঠন করে।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একজন তদন্ত কর্মকর্তা এবং ২ জন জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ২৬ জন সাক্ষী হাজির করে। এর মধ্যে সপ্তম সাক্ষী প্রদীপ কুমার দেব নামে একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ বৈরি ঘোষনা করে। কারণ সে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি এবং মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেনি।
অপরদিকে মাওলানা নিজামীর পক্ষে তার ছেলেসহ মোট চারজন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষে মোট চারজন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছিল।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সংক্রান্ত একটি মামলায় মাওলানা নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন জাতীয় প্রেসকাব চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছর ২ আগস্ট তাকে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
আসামী পক্ষের বিবৃতি
যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত রেখে মামলার রায়ের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা বিষয়ে আসামী পক্ষ বিবৃতি প্রদান করেছে। আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যে কোন মামলায় যুক্তি উপস্থাপন আসামীর অধিকার এবং এটি মামলাটির অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অধিকার থেকে আসামী পক্ষকে বঞ্চিত করে ন্যয়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবীগন বিশেষকরে অত্র মামলার প্রধান ট্রায়াল ল’ইয়ার এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম তার শারীরিক সমস্যার কারণে হরতাল চলাকালীন সময়ে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কখনই ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি এবং ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারপতিগণ এই গ্রাউন্ডে সবসময়ই সময় দিয়ে এসেছেন। ডিফেন্স টিমের অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীগণও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে হরতালের মধ্যে পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট সহ কোন আদালতেই কোনদিন হাজির হননি। অত্র মামলাটিতে এতদিন পর্যন্ত আসামীপক্ষকে উপোরল্লিখিত গ্রাউন্ডে সুযোগ দিলেও হঠাৎ করে যুক্তিতর্কের মত অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি না শুনেই মামলা কেন কোজ করা হল তা আমাদের বোধগোম্য নয়। আসামীপক্ষ এর মাধ্যমে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয় মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের দৈনিক কার্যতালিকায় আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের মামলা গত ৪ দিন যাবত একাধারে শুনানীর জন্য থাকলেও হরতালের কারণে উক্ত মামলার শুনানী হয়নি। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের মাধ্যমে আসামীর প্রতি মারাত্বক অবিচার করা হয়েছে। অধিকন্তু দুপুরের পর পরই ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের রি-কল চেয়ে আবেদন নিয়ে গেলে ট্রাইব্যুনারের রেজিষ্ট্রার তা গ্রহন করেননি।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় যেকোন দিন ঘোষনা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ রায় ঘোষনার তারিখ অপেক্ষমান রাখা বিষয়ে আদেশ দেন।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হল। এ মামলার শেষ ধাপে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। কিন্তু হরতালজনিত কারনে পরপর চারদিন আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষনা করে আজ ট্রাইব্যুনাল মামলার বিচার কার্যক্রম কোজ করেন এবং রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করেন। তবে আসামী পক্ষ চাইলে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের অসমাপ্ত যুক্তি লিখিত আকারে জমা দিতে পারবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সাত নভেম্বর বৃহষ্পতিবার মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। আসামী পক্ষ একদিন যুক্তি উপস্থাপনের পর রোববার থেকে চারদিনের হরতাল শুরু হয়। রোববার মাওলানা নিজামীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী আসাদ উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জানান হরতাল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনতি কারনে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারছেননা। তাই তিনি মামলার কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এক দিনের জন্য মুলতবি করেন। এভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত একই প্রেক্ষাপটে একদিন করে মোট তিনদিন মামলা মুলতবি করা হয় আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী না থাকায়। গত মঙ্গলবারও এভাবে একদিনের জন্য আসামী পক্ষের মুলতবি আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল বলে দেন এটাই শেষ সুযোগ। এরপর আর মুলতবি করা হবেনা।
আজ বুধবারও একই প্রেক্ষাপট অর্থাৎ হরতালের কারনে সিনিয়র কোন আইনজীবী হাজির হননি আসামী পক্ষে। জুনিয়র আইনজীবী তারিকুল ইসলাম এবং আসাদ উদ্দিন উপস্থিত হন। আসাদ উদ্দিন আর একদিনের জন্য অর্থাৎ বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন করে শেষবারের মত সুযোগ চান। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেন।
মুলতবি আবেদন নাকচ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা ন্যায় বিচারের স্বার্থে একের পর এক মুলতবি আবেদন মঞ্জুর করেছি, তাদের সহযোগিতা পাবার জন্য। আজ আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার জন্য ধার্য্য ছিল। কিন্তু আজো তারা আসলেননা। কিন্তু আমরা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আনলিমিটেড সময় অপেক্ষ করতে পারিনা। ট্রাইব্যুনাল আইনে দ্রুততার সাথে মামলার কার্যক্রম শেষ করার কথা বলা আছে। তাই আজ মুলতবি আবেদন আর গ্রহণ করা হলনা। আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন এখানে সমাপ্ত ঘোষনা করা হল।
অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, গত চার বছরে যত হরতাল হয়েছে তার কোনদিন আসামী পক্ষের (জামায়াত নেতৃবৃন্দ) কোন সিনিয়র আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আসেননি নিরাপত্তাজনতি কারনে। ট্রাইব্যুনালও পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেছেন। গত তিনদিন পর্যন্ত একই প্রেক্ষাপটে তারা আসতে পারেননি এবং আমরা জুনিয়র আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে এসে সময় প্রার্থনা করেছি হরতালের কারনে। তিনদিন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের মুলতবি অবেদন নামঞ্জুর করে আমাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী গুরুতর অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। যুক্তি উপস্থাপন মামলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। কিন্তু এতবড় একটি মামলায় আমাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হল। তারিকুল ইসলাম বলেন, হরতালের সময় হাইকোর্টেও সিনিয়র আইনজীবীরা আসেননা।
তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল আমাদের অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সুযোগ চেয়ে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করব।
রায় অপেক্ষমান ঘোষনার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ২৬ জন সাক্ষী হাজির করেছি। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যৃদন্ড দাবি করছি আমরা।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রসহ স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি এবং পরিকল্পনার ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ ছিলনা। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে আলাদা কোন অভিযোগ ছিলনা। তবে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকে আলাদা একটি অভিযোগ হিসেবে গন্য করে চার্জ গঠন করেন। গত বছর ২৮ মে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র এবং বৃদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ ছিলনা। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে আলাদা কোন অভিযোগ ছিলনা। তবে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকে আলাদা একটি অভিযোগ হিসেবে গন্য করে চার্জ গঠন করে।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একজন তদন্ত কর্মকর্তা এবং ২ জন জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ২৬ জন সাক্ষী হাজির করে। এর মধ্যে সপ্তম সাক্ষী প্রদীপ কুমার দেব নামে একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ বৈরি ঘোষনা করে। কারণ সে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি এবং মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেনি।
অপরদিকে মাওলানা নিজামীর পক্ষে তার ছেলেসহ মোট চারজন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষে মোট চারজন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছিল।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সংক্রান্ত একটি মামলায় মাওলানা নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন জাতীয় প্রেসকাব চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছর ২ আগস্ট তাকে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
আসামী পক্ষের বিবৃতি
যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত রেখে মামলার রায়ের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা বিষয়ে আসামী পক্ষ বিবৃতি প্রদান করেছে। আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যে কোন মামলায় যুক্তি উপস্থাপন আসামীর অধিকার এবং এটি মামলাটির অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অধিকার থেকে আসামী পক্ষকে বঞ্চিত করে ন্যয়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবীগন বিশেষকরে অত্র মামলার প্রধান ট্রায়াল ল’ইয়ার এ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম তার শারীরিক সমস্যার কারণে হরতাল চলাকালীন সময়ে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কখনই ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি এবং ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারপতিগণ এই গ্রাউন্ডে সবসময়ই সময় দিয়ে এসেছেন। ডিফেন্স টিমের অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীগণও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে হরতালের মধ্যে পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট সহ কোন আদালতেই কোনদিন হাজির হননি। অত্র মামলাটিতে এতদিন পর্যন্ত আসামীপক্ষকে উপোরল্লিখিত গ্রাউন্ডে সুযোগ দিলেও হঠাৎ করে যুক্তিতর্কের মত অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি না শুনেই মামলা কেন কোজ করা হল তা আমাদের বোধগোম্য নয়। আসামীপক্ষ এর মাধ্যমে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয় মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের দৈনিক কার্যতালিকায় আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের মামলা গত ৪ দিন যাবত একাধারে শুনানীর জন্য থাকলেও হরতালের কারণে উক্ত মামলার শুনানী হয়নি। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের মাধ্যমে আসামীর প্রতি মারাত্বক অবিচার করা হয়েছে। অধিকন্তু দুপুরের পর পরই ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের রি-কল চেয়ে আবেদন নিয়ে গেলে ট্রাইব্যুনারের রেজিষ্ট্রার তা গ্রহন করেননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন