মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

মামলা ট্রান্সফারের শুনানী/গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গনআদালত আর বর্তমান ট্রাইব্যুনাল গঠিত অভিযোগ একই-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ৫/৬/১২
অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলা  দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের আবেদনের শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে একটি চার্জ গঠন করা হয়েছিল গণআদালত কর্তৃক ।  ২০ বছর পর তার বিরুদ্ধে  আরেকটি চার্জ গঠন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালকর্তৃক। উভয় চার্জ একই।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে ২০ বছর আগের চার্জ এবং বর্তমান ট্রাইব্যুনালে কর্তৃক  গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গঠিত চার্জের মধ্যে  সাদৃশ্য তলে  ধরে যুক্তি উপস্থাপন করেন।    গণআদালতের কয়েকটি চার্জ  উল্লেখ করে  তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের যে অভিযোগ আজো ২০ বছর পর সেই একই অভিযোগ উভয় চার্জে।

অধ্যাপক গোলাম  আযমের মামলা দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর সংক্রান্ত  আবেদনের  শুনানীতে  আজ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা অংশগ্রহণ করেন।

আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সূচনা বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু মামলা ট্রান্সফারসহ মোট তিনটি  আবেদন শুনানী করায় সূচনা বক্তব্য তথা গোলাম আযমের  বিচার শুরু করা যায়নি।

ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯২ সালের গণআদালতের রায়ে বলা হয়েছিল অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা ফাঁসির যোগ্য অপরাধ। যেহেতু তাদের দণ্ডাদেশ কার্যকর করার ক্ষমতা নেই তাই তারা এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে  দাবি জানায়। ৩১ মার্চ ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিও  গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহবান জানায়। ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ একটি সভায় সরকারের প্রতি  দাবি জানায় গণআদালদেতর রায়ের  ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য। সেই সভায় বর্তমান ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক উপস্থিত ছিলেন।  এ বিষয়ে পরের দিন  ১১ এপ্রিল দৈনিক সংবাদে  খবর প্রকাশিত হয়।
তাই নিরপেক্ষ এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা দাবি জানিয়েছি  গোলাম আযমের মামলাটি  ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের জন্য।
অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলা  প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আবেদ জানানো হয়েছে গত ৩০ মে।
মামলা ট্রান্সফারের  আবেদনের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরা বলা হয় প্রফেসর গোলাম আযমের বিচারের জন্য ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঘাতক দলাল নির্মূল কমিটি গণ আদালত গঠন করে। গণ আদালত অধ্যাপক গোলাম আযমের ফাঁসির আদেশ দেয়।   এই গণ তদন্ত কমিশনের সেক্রেটারিয়েটের সদস্য



ছিলেন  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ।  কমিশনের তদন্ত কাজে এবং রিপোর্ট প্রণয়নে তিনি তখন ভূমিকা পালন করেন।

সুতরাং নীতিগতভাবে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এই বিচার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেননা।  বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়েছে।  তাই স্বচ্ছতা নিরপক্ষেতা এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলাটি  বিচারপতি নিজামুল হকের ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে  ট্রান্সফার করা উচিত ।

জয়নুল আবেদীন : গোলাম আযমের মামলা দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তেরর পক্ষে শুনানীতে অংশ নিয়ে  জয়নুল আবেদিন বলেন, কোন মামলায় হাই কোর্টের কোন  বিচারপতি আগে থেকে কোনভাবেই সম্পৃক্ত থাকলে তিনি পরবর্তীতে সেই মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন এটাই রীতি। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি গোলাম আযমের ফাঁসি কার্যকরের দাবি  জানিয়েছিল।  সেখানে আপনার  নাম আছে।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা : ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা শুনানীতে অংশ নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের প্রতি  উদ্দেশ্য করে বলেন, সবার নিকট গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে, যারা  অভিযুক্ত তাদের মানসিক সন্তুষ্টির সার্থে, তাদের মনে যেন ন্যায় বিচার পাবার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ না  থাকে সেজন্য  এ মামলা পরিচালনা থেকে আপনার বিরত থাকা  বিষয়ে বিবেবচান করা উচিত। 
বিচারপতি নিজামুল হক  এসময় দৈনিক সংবাদে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে বলেন, ঐ সভায় আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে’র দাবি জানানো হয়েছিল।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম তখন বলেন, গণআদালতের রায় তো ছিল ফাঁসির। সেই রায় বাস্তবায়নের জন্যই তো ঐ সভা হয়েছিল। আর আপনি উপস্থিত ছিলেন সেই সভায়।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তি :
দুপুরের বিরতির পর দুইটার দিকে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে অধ্যাপক গোলাম  আযমের মামলা ট্রান্সফারের আবেদন পড়ে শোনান আইনজীবী তাজুল ইসলাম। এরপর জয়নুল আবেদিন এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বক্তব্য রাখার পর আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি দেশী এবং বিদেশী বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স তুলে ধরেন যেখানে অনেক বিচারপতি পূর্ব থেকে কোন মামলার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে পরে আর সেই মামলা পরিচালনায় অংশ নেননি এবং বিরত থেকেছেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মজার ব্যাপার হল ১৯৭৮ সাল থেকে অধ্যাপক গোলাম  আযম দেশে ছিলেন। ১৯৯১ সালে তাকে জামায়াতের আমীর  নির্বাচিত করার পরই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা  শুরু হল। তিনি জামায়াতের আমীর না হলে এসব হতনা।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ২০০৬ সালের শেষের দিকে এটর্নি জেনারেল বিচারপতি শরিফুদ্দিন চাকলাদের  নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এরশাদের মামলা নিয়ে আসলেন। এরশাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক  ঐ বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানানোয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠালেন। এভাবে ২০০৯ সালে বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলায় বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী  নিজেকে বিরত রাখেন। কারণ তিনি সরকারি কর্মকর্তা থাকায় আগেই খালেদা জিয়ার  ঐ মামলা সংক্রান্ত ফাইল নাড়াচাড় করেছেন।




আসামী পক্ষের আইনজীবীদের শুনানী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, গণআদালতের  অভিযোগের সাথে বর্তমান  চার্জের অভিযোগ সিমিলার বলা হয়েছে। সিমিলার হতে পারে। তাতে অন্যায় কোথায়? ১১ জানুয়ারি এখানে গোলাম আযমকে আনা হল। এতদিন কেন ওনারা বলেননি যে, মাননীয় চেয়ারম্যান আপনি গনআদালতের সাথে যুক্ত ছিলেন?  আসামী পক্ষের একের পর এক আবেদনের বানে প্রসিকিউশন দিশেহারা।
এসময় বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, যেকোন বিষয়ে যদি তারা মনে করে তাদের অধিকার রক্ষার সুযোগ আছে তাহলে তারা সে বিষয়ে আবেদন করতেই পারে।
জবাবে মালুম বলেন, আবেদনের উদ্দেশ্যটা কি সেটা দেখতে হবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন