বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৩

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ//উই আর নট স্টুডেন্ট

31/7/2013
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার আসামীপক্ষে যুক্তি উপস্থান শুরু হবার কথা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  রাষ্ট্রপক্ষে প্রথমে অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন সুলতান মাহমুদ সিমন। এরপর আইনী বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

তুরিন আফরোজ সালহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জবানবন্দী তুলে ধরে বলেন, তার নিজের দেয়া জবানবন্দীতেই অনেক অসঙ্গতি এবং স্ববিরোধীতা রয়েছে। তিনি বলেছেন ১৯৬৯ সালে ঢাকায় তার বাসায় আইউব বিরোধী আন্দোলনে নিয়মিত বৈঠক হত । আজকের পরিচিত অনেক রাজনীতিবিদ সে বৈঠকে যোগ দিতেন। তিনি তার বাসা ও গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সে আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের সাত মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন সাত মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষন যদি স্বাধীনতার ঘোষনা হয় তাহলে তিনিও স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সক্রিয় সমর্থক আইনগতভাবে।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা তার এ কার্যক্রম বিষয়ে কোন বিতর্ক  করছিনা। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যক্রমের পরে তিনি কি করলেন? ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পরে তিনি (তার দাবি অনুযায়ী) পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমালেন। আইউববিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তান পাড়ি দিলেন। বিদেশে গিয়েও অনেকে মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তান গিয়ে কি করলেন? তিনি আগস্টে সেখানে অনার্স পরীক্ষা শেষে বন্ধু বান্ধব মিলে পাকিস্তানের উত্তারাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল মারিতে বেড়াতে গেলেন। দেশে তখন যুদ্ধ চলছে। এরপর সেপ্টেম্বরে বন্ধুবান্ধব মিলে গাড়িতে করে পাকিস্তান থেকে লন্ডন যাত্রা করলেন। কি রাজকীয় ভ্রমন।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, হতে পারে তিনি ১৯৬৯ সালে আইউব বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে তিনি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রমান ফুটে ওঠে তারই দেয়া জবানবন্দী থেকে। আইউব বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানে অবস্থান ও কর্মকান্ড বিষয়ে তিনি যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা  স্ববিরোধী এবং অসঙ্গতিতে পূর্ণ।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, তিনি বাই চয়েজ বাংলাদেশী নাগরিক। কিন্তু কখন এ বাইচয়েজ তিনি বাংলাদেশী নাগরিক হলেন? ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশে আসলেন। তিনি বলেছেন ১৯৭৩ সালে তার পিতা ঢাকা জেলখানায় মারা যান। তখনো তিনি বাই চয়েজ বাংলাদেশী নাগরিক হলেননা এবং বাংলাদেশেও আসলেননা। আসলেন ১৯৭৪ সালে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে রাশিয়ার স্বঘোষিত বিতর্কিত  ধর্মযাজক রাশপুতিনের সাথে তুলনা করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি  বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন   রাজনৈতিক বিচারের অংশ হিসেবে তিনি আজ এ ট্রাইব্যুনালের সামনে দণ্ডায়মান। তিনি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং মুসলমান হবার কারনে তার আজ  এ বিচার হচ্ছে। কিন্তু তিনি যে নিজেকে মুসলমানদের প্রতিনিধি দাবি করছেন তা তার সার্বিক জীবন পর্যালোচনা করলে তার  এ দাবির সত্যতা মেলেনা। তিনি পাকিস্তানের সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়েছেন। নামকরা এ স্কুলে অমুসলমানরাও পড়েন। নটরডেম কলেজে পড়েছেন তিনি। সেটা একটা মিশনারী স্কুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি যেখানে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আলোচনা হয়। লন্ডনেও পড়েছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের অভিযোগ তুলে ধরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, এদেশে হিন্দুদের জন্মই আজন্ম পাপ। হিন্দু হবার কারনেই তাদের তখন নৃশংষ হত্যার স্বীকার হতে হয়। পেটের নিষ্পাপ শিশুও নারকীয় হত্যা থেকে রেহাই পায়নি। কারণ সে শিশু হিন্দুর পেটে ছিল। এটাই ছিল তার অপরাধ।
ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের  যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তিনদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। গতকাল চতুর্থ দিনে তাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হয়েছে। আজ আসামী পক্ষ যুক্তি উপস্থান  শুরু করবে এবং এরপর আবার রাষ্ট্রপক্ষ সুযোগ পাবে পরবর্তীতে।

উই আর নট স্টুডেন্ট : ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার যুক্তি উপস্থানের শুরুতে তার বক্তব্যের একটি লিখিত কপি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের হস্তান্তর করেন। এসময় ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত আসামী পক্ষ যত দরাখাস্ত দিয়েছে তার সবই তারা দিয়েছে ইংরেজিতে। আর রাষ্ট্রপক্ষ যত  যা কিছু দিয়েছে সবই দিয়েছে বাংলায়। আমরা রায় লিখব ইংরেজিতে। আপনারা কি আমাদের সহযোগিতা করছেন না করছেনা?
এরপর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বক্তব্যের সারাংশ বিষয়ে বলেন, এটা আপনি কি দিয়েছেন? উই আর নট স্টুডেন্ট। উই আর জাজেস  অব দিস ট্রাইব্যুনাল।  আমরা স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় এ ধরনের লেকচার শিট পেতাম কাসে। আপনি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রসিকিউটর হিসেবে আর্গমেন্ট এর জন্য দাড়িয়েছেন। আপনি আর্গুমেন্ট করবেন। কিন্তু যা দিয়েছেন তা লেকচারের জন্য  হতে পারে।
এরপর তিনি তার সারাংশের একটি শিরোনাম ‘প্যাটার্নস অব ক্রাইমস’ উল্লেখ করে বলেন এসব কি? একটা সিনোপসিসতো অন্তত দিবেন। অন্তত আপনার কাছে এটা আশা করেছিলাম।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভাষা ব্যবহারের সুযোগ আছে। আর আমি আমার বক্তব্য  ইংরেজিতেই তৈরি করেছি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন