বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

সাবেক প্রধান বিচারপতি মইনুর রেজা চৌধুরীর ছোট ভাই কাইউম রেজা চৌধুরী সাক্ষ্য দিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে


১৬/৭/২০১৩
জবানবন্দী :
আমার নাম কাইউম রেজা চৌধুরী, আমার বয়স ৬৩ বৎসর, আমার ঠিকানা-হাউজ নম্বর ১৩, রোড নম্বর ৫১, গুলশান-২, ঢাকা, আমার স্থায়ী ঠিকানা-রাজশাহী হাউজ, ৯৮ বড় মগবাজার, ঢাকা।
আমার পেশা ব্যবসা। আমার পিতা মরহুম মোর্তজা রেজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালের পূর্বে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এ্যাসেমব্লির মেম্বার ছিলেন ।  তিনি সৈয়দ আজিজুল্লাহ সাহেবের বড় জামাতা ছিলেন। সেই সুবাদে  উনার অন্য দুই শ্যালিকার সহিত ফজলুর রহমান সাহেব (সালমান এফ রহমানের পিতা)  এবং ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের বিবাহ প্রদান করেন। তৎকালে তারাও রাজনীতির সংগে জড়িত ছিলেন। দেশ বিভাগের পূর্বে কলিকাতায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হয়েছিল। দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে আমার পিতাকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সমূহে খাদ্য বিতরণের জন্য ফুড কমিশনার হিসাবে বৃটিশ সরকার নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। ঐ সময় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমূহে খাদ্য বিতরণের কাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেছিলেন। দেশ বিভাগের পরে আমার পিতা পরিবারসহ রাজশাহীতে চলে আসেন। লাহোরে প্রথম মুসলিম লীগ কনভেনশনে আমার পিতা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ আলী সাহেবের মন্ত্রীসভায় আমার পিতা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সেই কারণে তিনি করাচিতে থাকতেন। ইস্কান্দার মির্জা সাহেব মোহাম্মদ আলী সাহেবের মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করলে আমার পিতাকে কলিকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। আমি তখন কলিকাতায় সেন্ট জেভিয়ার স্কুল এন্ড  কলেজে পড়াশুনা করতাম। আমার বড় ভাই মইনুর রেজা চৌধুরী সেন্ট জেভিয়ার পাটনাতে পড়াশুনা করতেন এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আমার অন্য দুই ভাই মৃত কামরান রেজা চৌধুরী এবং সাহেদ রেজা চৌধুরী পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরে সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়াশুনা করতো। ১৯৫৬ সালে কলিকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব এবং আতাউর রহমান খান সাহেব আমাদের কলিকাতায় বাসায় এসেছিলেন এবং সেই সময় আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সংগে আমার জীবনে প্রথম দেখা হয়। ১৯৫৮ সালে ১০ই অক্টোবর তারিখে আমার পিতার মৃত্যুর পরে আমরা ফিরে এসে বসবাস করতে শুরু করি। এরপর আমি সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলে ভর্তি হই। ১৯৬৪ সালে আমি সেন্ট জোসেফ হাইস্কুল ছেড়ে শাহিন স্কুলে ভর্তি হই। এই শাহিন স্কুলে আমার সংগে শেখ কামাল এবং নিজাম আহম্মেদ (ডি,ডব্লিউ-২) সাহেবের সংগে আমার পরিচয় হয়। এই স্কুলে পড়াশুনা করাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল এবং নিজাম আহম্মেদকে তার গাড়ি নম্বর ৩১৩১ এ করে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আসতেন। কোন কোন সময় বঙ্গবন্ধু অনুপস্থিতি লক্ষ্য করলে শেখ কামাল প্রশ্নের জবাবে বলতেন বাবাকে এ্যারেষ্ট করে নিয়ে গিয়েছে। আমি এবং শেখ কামাল উভয়ে খেলাধুলায় পারদর্শী থাকার কারণে আমাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠ ছিল, যদিও শেখ কামাল আমার চেয়ে এক কাস নিচে পড়তো। আমি শাহিন স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে এস,এস,সি পাশ করি। এরপর আমি ঢাকা নটর ডেম কলেজে ভর্তি হই। সেখানে সালমান এফ, রহমান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং নিজাম আহম্মেদও ভর্তি হয়। নটর ডেম কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় অন্যান্য বিষয় যেমন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইনডোর আউটডোর গেমসের উপর প্রাধান্য দেওয়া হতো এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব ইন্টার কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নটর ডেম কলেজের প্রতিনিধিত্ব করতেন। আমার খালু জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবে যখন পাকিস্তানের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঢাকায় আসতেন তখন তিনি আমাদের রাজশাহী হাউজে আমার মাকে সালাম করতে আসতেন। ১৯৬৬ সালে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার সুবাদে আমার কাজিন (খালাত ভাই) সালমান এফ, রহমান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আমাদের বন্ধু নিজাম আহম্মেদের সংগে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। নিজাম আহম্মেদের বন্ধুত্বের সুবাদে আমরা প্রায়শই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যেতাম। নিজাম আহম্মেদ এবং বঙ্গবন্ধু বাড়ির মধ্যখানে যাতায়াতের জন্য একটি ছোট্ট গেইট ছিল যা এখনও আছে। নটর ডেম কলেজে পড়াকালীন সময়ে সালাউদ্দিন কাদের ইস্কাটনের একটি বাসায় একাই থাকতেন এবং সেখানে আমরাও যেতাম। আমি এবং সালমান এফ, রহমান বিজ্ঞান বিভাগে ছিলাম এবং নিজাম আহম্মেদ এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবিক বিভাগে ছিল। আমরা নটর ডেম কলেজ থেকে এইচ,এস,সি, তে সকলেই প্রথম বিভাগে পাশ করি। এর পরবর্তীতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ও নিজাম আহম্মেদ অর্থনীতি বিভাগে, সালমান এফ,রহমান পদার্থ বিদ্যায় এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হই। ঐ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছয় দফা ও এগারো দফা আন্দোলনের জন্য উত্তাল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করলে আমরা তার মুক্তির আন্দোলনে শরীক হই এবং সেই আন্দোলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহ আমরা সকলেই অংশগ্রহণ করি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডে আই,জি,পি, আলমগীর কবির সাহেবের বাসায় থাকতে শুরু করেন। ঐ আন্দোলনের সময় মিছিলে আমরা শহীদ আসাদের সংগে ছিলাম। শহীদ আসাদকে যখন গুলি করা হয় তখন আমি, সালমান এফ, রহমান ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একটি গাছের পিছনে, নিজাম আহম্মেদ শহীদ আসাদের দুই ফিট দূরে এবং খায়রুল বাশার সেই সময় রায়ট ভ্যানের উপরে ছিল। এই আন্দোলনের সময় একদিন যেহেতু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব আমাদের চেয়ে লম্বা ছিলেন সম্ভবত সেই কারণেই ই,পি,আর, তার পিছনের দিকে লাথি মেরেছিল। অর্থনীতিতে পাঠ দানকালে প্রফেসর রেহমান সোবহান সাহেব পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিষয়ে পড়াতেন এবং তাতে আকৃষ্ট হয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করি। আমার আব্বা মারা যাওয়ার পরে বিহারের সম্পত্তি হারানোর ক্ষতিপুরণ হিসাবে আমাদেরকে নবাব শাহ্ সিনদে নয় হাজার বিঘা তুলা উৎপাদনের জমি দিয়েছিল। এই জমি থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা আমাদের সংসার এবং লেখাপড়ার খরচ চলতো। পাকিস্তানে এত সম্পত্তি পাওয়ার পরেও আমাদের মধ্যে এই চেতনা ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের কারণ যৌক্তিক। খন্দকার আমিনুল হক বাদশা সাহেবের সুবাদে এবং অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধুর সংগে আমার ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই আন্দোলন চলাকালে আমরা যারা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতাম তারা জয় বাংলা শ্লোগান এবং আন্দোলনকারীদের একটা অংশ দুনিয়ার মজদুর এক হও শ্লোগান দিতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে ধানমন্ডিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বাসায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আসতেন। মূল জায়গা ছিল আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাড়ি যেহেতু সেটা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নিকটবর্তী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে আমার খালু ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব এবং ভাই এরফান রেজা চৌধুরী সাহেব পরাজিত হন। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলা চলাকালীন সময়ে এ্যাসেমব্লির অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করায় খেলা পন্ড হয়ে যায়। ঐ সময় আমার ইংরেজীতে দখল থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু আমাকে বাদশা ভাইয়ের সংগে বিদেশী সংবাদিকদের দেখাশুনা ও অনুবাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এইজন্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ইংরেজী টাইপিং এর দায়িত্ব আমার উপর পড়ে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষনের সময় রেসকোর্সে আমাদের সংগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। ঐ সময় আওয়ামী লীগের কাজের জন্য আই,সি,আই, আমাকে একটি গাড়ি দিয়েছিল। এই গাড়িটি বিদেশী সাংবাদিকদের আনা নেওয়া এবং তাদের প্রেসের খোঁজ খবর দেওয়ার কাজে আমি ব্যবহার করতাম। ১৭ই মার্চ, ১৯৭১ তারিখে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে হ্যাপি বার্থ ডে উইশ করার পরে জিজ্ঞাসা করলেন আজকে আমাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন। বঙ্গবন্ধু জবাবে বললেন ‘‘ডযধঃ রং সু নরৎঃয ফধু ধহফ যিধঃ রং সু ফবধঃয ফধু, সু ষরভব রং ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ঊধংঃ চধশরংঃধহ.”
১৯৭১ সালের ১৮ কিংবা ১৯শে মার্চ বিকাল ৪.০০ টার সময় বঙ্গবন্ধু ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে দেখা করার জন্য ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের বাসায় এসেছিলেন এবং আমি বঙ্গবন্ধুর সংগে ছিলাম। তাদের আলোচনার সবকিছু আমি শুনি নাই তবে শুধু একটি কথা কানে এসেছিল যে, ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন পাকিস্তানিদের বিশ্বাস করো না। ১৯৭১ সালের ২৩ বা ২৪ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর সংগে বিদেশী সাংবাদিকদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা আমি এবং বাদশা ভাই মিলে করে দিতে পারি নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে বাদশা ভাই, নিজাম আহম্মেদ, নেওয়াজ আহম্মেদকে নিয়ে আমি গাড়ি চালিয়ে তৎকালীন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে প্রেস রিলিজ দেওয়ার জন্য যাই। প্রেস রিলিজ দেওয়ার পর আমি গাড়িতে ফেরত আসি, বাদশা ভাই তখন হোটেল থেকে বের হয়ে আসবেন তখন প্রায় ১০.২০ বাজে। এই সময় একজন পাকিস্তানি সৈন্য বন্দুক তাক করে আমাদেরকে হোটেলের মধ্যে যেতে নির্দেশ দিল। বাদশা ভাইয়ের ব্রীফকেসটি গাড়িতে আটকা পড়লো যাহার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র ছিল। বিদেশী সাংবাদিক সায়মন ড্রিং বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও বাঁধা প্রদান করে। আমরা হোটেলের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম। আমরা ঐ হোটেলে অবরুদ্ধ থাকাকালীন সময়ে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মেদ এবং হারুন আহম্মেদ চৌধুরীকেও সেখানে দেখি। ২৭শে মার্চ সকালে কারফিউ শিথিল  হলে আমি রাজশাহী হাউজে, নিজাম আহম্মেদ এবং তার ভাই তাদের বাসায় এবং বাদশা ভাই পালিয়ে/আত্মগোপনে চলে গেলেন। ২৮শে মার্চ তারিখে নিজাম আহম্মেদ আমাদের বাসায় আসে এবং নিজাম আহম্মেদ বলে যে, ধানমন্ডির ৮ নম্বর ব্রীজের কাছে যে সুইডিস পরিবার ছিল তারা আমাদের পূর্ব থেকেই পরিচিত ছিল এবং তারাই বলেছিল যে, আমাদের সমস্যা হলে তাদের বাসায় গিয়ে থাকতে পারবে। সেই সুবাদে আমি এবং নিজাম আহম্মেদ ২৮শে মার্চ সুইডিস পরিবারের বাসায় গিয়ে উঠি। ঐ বাসাটি ছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবদের বাসার দুই রাস্তার আগে। ২৮শে মার্চ তারিখে ৮ নম্বর ব্রীজের কাছে আমি যখন গাড়ি নিয়ে বের হই তখন শেখ কামালকে দেখতে পাই। শেখ কামালকে নিয়ে আমি ঐ সুইডিস পরিবারের বাসায় ফিরে আসি। সুইডিস মহিলা শেখ কামালকে দেখে শেখ কামালের গোফ কেটে দিল এবং মাথার চুল মাঝখান দিয়ে চিরুনী করে দিল যাতে তাকে দেখে সহজে চেনা না যায়। ঐদিন অর্থাৎ ২৮শে মার্চ দুপুরের পরে আমি হেটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ১৮ নম্বর রোডের বাসায় যাই। আমাকে দেখে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলল, আমি আগামী কাল করাচি যেতে চাই, আমাকে পরের দিন এয়ারপোর্টে পৌছে দিতে হবে। ৩২ নম্বর রোডস্থ আমার বোন মিসেস ফারাদি খান এর বাসা থেকে আমার দুলাভাইয়ের টয়োটা করোনা যার নম্বর ৪৮৯৩ গাড়ি করে আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসায় যাই এবং তাকে গাড়িতে তুলে দুপুরে তেঁজগাও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে দিই। আমার বোনের স্বামী যেহেতু ইউ,পি এর মানুষ সেহেতু বাদশা ভাই সহ আওয়ামী লীগের আরও অনেকে আমার ঐ বোনের বাড়ীতে ঐ সময় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। শেখ কামাল, নিজাম আহম্মেদ এবং আমি ৩/৪ দিন ঐ সুইডিস পরিবারের সংগে ছিলাম। ৩০/৩১শে মার্চ শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যেতে না পেরে সেই সুইডিস পরিবারে আবার ফেরত এসেছিল। এই সময় পাকিস্তান সরকার সুইডিস পরিবারকে দেশ ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করে। এই নির্দেশের পরে আমি, শেখ কামাল এবং নিজাম আহম্মেদ খাবার দাবার নিয়ে ৩২ নম্বরে আমার বোনের বাড়ীতে উঠি।

আমার বোনের বাড়ীতে থাকাকালীন সময়ে আমি উর্দূ জানার কারণে ঘোরাফেরা করতে পারতাম। ঐ সময় আমরা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে শেখ কামাল বললেন আমি টুঙ্গিপাড়ায় যাই আর তোমরা তোমাদের বন্ধু বান্ধবসহ জার্মানীতে যাওয়ার চেষ্টা করো। ৪ঠা এপ্রিল কিংবা ৫ই এপ্রিল তারিখে শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় আমাকে তার পরিবারের সদস্যদের দেখাশুনা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি আমার ভাইয়ের গাড়ি নিয়ে আমি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর মামি-অর্থাৎ বেগম মুজিব আমাকে দেখে বললেন বাবা তুমিই প্রথম আমাদের দেখার জন্য এখানে এসেছো। সেখানে শেখ জামাল, শেখ রাশেল, শেখ রেহানা, বর্তমানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, ডঃ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে নিজাম আহম্মেদ এবং শেখ কামাল সেখানে উপস্থিত হয়, কারণ শেখ কামাল টুঙ্গিপাড়ায় যেতে পারেনি। তখন আমরা তিনটি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদেরকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে ১ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডস্থ মিসেস বদরুন্নেছা আহম্মেদের বাড়ীতে নিয়ে আসি।
২/৩ দিন পরে সালমান এফ, রহমান শাইন পুকুর থেকে ঢাকায় আসেন। নিজাম আহম্মেদের কোন পাসপোর্ট ছিল না। ৮ই এপ্রিল,  ১৯৭১ তারিখে সালমান এফ, রহমান, নিজাম আহম্মেদ এবং আমি পি,আই,এ, বিমান যোগে করাচি যাই এবং সেখানে গিয়ে সালমান এফ, রহমানের বাসায় উঠি। আমি করাচি পৌঁছাবার দুইদিন পরে যখন আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য একটি বাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সালমান এফ, রহমানের বাসায় এসেছিল, সে সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে আমার দেখা হয় নাই। আমার ভায়রা মিঃ আব্দুল মোমেন চৌধুরী যিনি তানজানিয়া থেকে করাচি এসেছিলেন আমি আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে গিয়ে তার সংগে দেখা করি। উক্ত আশিকুর রহমান সাহেব বর্তমানে আওয়ামী লীগের এম,পি, এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের ফুফাতো বোনের স্বামী। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে বসে আব্দুল মোমেন চৌধুরী বললেন তোমার কাজিন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের দেখা হয়েছে এবং পরিচয় হয়েছে। আমার এবং নিজাম আহম্মেদের উদ্দেশ্য ছিল জার্মানীতে যাওয়। আমি এবং নিজাম আহম্মেদ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জার্মানী যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইসলামাবাদে পৌঁছালাম। ইসলামাবাদে পৌঁছার পরের দিন আমার বোনের বাসা থেকে আমাকে গ্রেফতার করে করাচিতে নিয়ে আসা হয়। এই আমার জবানবন্দী।

জেরা ঃ-
আমি জমিদার বংশের ছেলে। অদ্য আমি সুস্থ শরীরে ট্রাইব্যুনলে জবানবন্দী করেছি। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলা চলাকালীন সময়ে এ্যাসেমব্লি স্থগিত করায় খেলা পন্ড হয়ে যায় ‘‘কথাগুলো সত্য নয়”। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমার আপন খালাতো ভাই। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব কখনো বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে সমর্থন করেছিলেন কি না তাহা আমার জানা নাই (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন