১৪/৭/২০১৩
মানবতাবিরোধী অপরাধের বন্দী হাজী মো : মোবারকের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ আব্দুল মালেক, আমার বয়স-৬৭/৬৮ বৎসর। আমার ঠিকানা-গ্রাম-খড়মপুর (তিতাস নদীর দক্ষিণ পাড়), থানা ও জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।
আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ২৫/২৬ বৎসর। তখনও আমি কৃষি কাজ করতাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পরে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য ভারতের আগরতলায় চলে যাই। সেখানে থেকে ট্রেনিং গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসি। আমাদের আঞ্চলিক কমান্ডার আবুল বাসারের নির্দেশে ভারত থেকে ট্রেনিং করে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিতাম এবং বাংলাদেশ থেকে যে সকল শরনার্থী ভারতে যেতো তাদের পৌঁছে দিতাম। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নির্দেশে আমি সহ সিরাজ মিয়া, খাদেম হোসেন ও নূর মিয়া এই চারজন দায়িত্ব পালন করেছি। এইভাবে দায়িত্ব পালন করাকালে ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ২৮/২৯ তারিখের দিকে রাজাকার মোবারক হোসেন, অন্যান্য রাজাকাররা এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে এবং আমাকে ধরে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে বেঁধে নিয়ে পাশে সিরাজ মিয়ার বাড়িতে যায় এবং সিরাজকেও একই ভাবে আটক করে বেঁধে ফেলে। তৎপর আমাদেরকে লঞ্চে উঠায়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সদর থানায় নিয়ে রাত্রে রাখে। পরের দিন সকাল ৮.০০/৯.০০ টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকার মোবারক সহ আমাকে গাড়ীতে করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটক রাখে এবং মারপিট শুরু করে। ঐ রুমটি ছিল নির্যাতন রুম। মানুষজনকে ধরে এনে ঐ রুমের মধ্যে নির্যাতন করা হতো। আমাদেরকে ঐ রুমের মধ্যে বিদ্যুতের তার পেঁচায়ে মারতে থাকে, কতক্ষণ যাবত মারে তা জানি না, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। অনেক সময় পরে আমার জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই আমি ও সিরাজ মিয়া ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলখানার মধ্যে আটক আছি। তিন/চারদিন পর আমি একটু সুস্থ হই। কয়েকদিন পরে আমি সহ প্রায় ত্রিশজনকে গাড়িতে উঠায়ে মেড্ডা টি,বি, হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদেরকে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে। আমি সহ আটজনের রক্ত সঠিক পায়। আমি সহ আটজনের নিকট থেকে রক্ত নেয়। রক্ত নেওয়ার পর আমাদেরকে জেলখানায় নেওয়ার পথে রাস্তায় আমার বড় ভাই আব্দুর রহমানের সংগে দেখা হয়। তিনি রাজাকার মোবারক ও পাকিস্তানি সৈন্যদের অনুরোধ করলে আমার সহিত আমার বড় ভাইয়ের কথা বলার সুযোগ দেয়। সেখানে আমার পরনের ছেড়া লুঙ্গিটা পাল্টিলেয় আমার ভাইয়ের ভাল লুঙ্গিটা আমাকে দিয়ে যায়। তৎপর আমাদেরকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলখানায় নিয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পর আমার সংগীয় সিরাজ মিয়া সহ ২০/২৫ জনকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়, ঐ গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় আমাকে রেখে যায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে, সিরাজ মিয়া ঐ ২০/২৫ জনকে কুল্লিয়া খালে গুলি করে হত্যা করেছে। এর তিন/চার দিন পরে বুঝতে পারলাম দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমি জবানবন্দী প্রদান করেছি। রাজাকার মোবারক অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরাঃ-
আমি লেখাপড়া জানি না বিধায় কত তারিখে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলতে পারব না, তবে ১৬ তারিখে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি ১৬ তারিখের পরে জেলখানা থেকে বের হয়েছি। (চলবে)
মানবতাবিরোধী অপরাধের বন্দী হাজী মো : মোবারকের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ আব্দুল মালেক, আমার বয়স-৬৭/৬৮ বৎসর। আমার ঠিকানা-গ্রাম-খড়মপুর (তিতাস নদীর দক্ষিণ পাড়), থানা ও জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।
আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ২৫/২৬ বৎসর। তখনও আমি কৃষি কাজ করতাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পরে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য ভারতের আগরতলায় চলে যাই। সেখানে থেকে ট্রেনিং গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসি। আমাদের আঞ্চলিক কমান্ডার আবুল বাসারের নির্দেশে ভারত থেকে ট্রেনিং করে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিতাম এবং বাংলাদেশ থেকে যে সকল শরনার্থী ভারতে যেতো তাদের পৌঁছে দিতাম। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নির্দেশে আমি সহ সিরাজ মিয়া, খাদেম হোসেন ও নূর মিয়া এই চারজন দায়িত্ব পালন করেছি। এইভাবে দায়িত্ব পালন করাকালে ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ২৮/২৯ তারিখের দিকে রাজাকার মোবারক হোসেন, অন্যান্য রাজাকাররা এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে এবং আমাকে ধরে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে বেঁধে নিয়ে পাশে সিরাজ মিয়ার বাড়িতে যায় এবং সিরাজকেও একই ভাবে আটক করে বেঁধে ফেলে। তৎপর আমাদেরকে লঞ্চে উঠায়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সদর থানায় নিয়ে রাত্রে রাখে। পরের দিন সকাল ৮.০০/৯.০০ টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকার মোবারক সহ আমাকে গাড়ীতে করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটক রাখে এবং মারপিট শুরু করে। ঐ রুমটি ছিল নির্যাতন রুম। মানুষজনকে ধরে এনে ঐ রুমের মধ্যে নির্যাতন করা হতো। আমাদেরকে ঐ রুমের মধ্যে বিদ্যুতের তার পেঁচায়ে মারতে থাকে, কতক্ষণ যাবত মারে তা জানি না, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। অনেক সময় পরে আমার জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই আমি ও সিরাজ মিয়া ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলখানার মধ্যে আটক আছি। তিন/চারদিন পর আমি একটু সুস্থ হই। কয়েকদিন পরে আমি সহ প্রায় ত্রিশজনকে গাড়িতে উঠায়ে মেড্ডা টি,বি, হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদেরকে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে। আমি সহ আটজনের রক্ত সঠিক পায়। আমি সহ আটজনের নিকট থেকে রক্ত নেয়। রক্ত নেওয়ার পর আমাদেরকে জেলখানায় নেওয়ার পথে রাস্তায় আমার বড় ভাই আব্দুর রহমানের সংগে দেখা হয়। তিনি রাজাকার মোবারক ও পাকিস্তানি সৈন্যদের অনুরোধ করলে আমার সহিত আমার বড় ভাইয়ের কথা বলার সুযোগ দেয়। সেখানে আমার পরনের ছেড়া লুঙ্গিটা পাল্টিলেয় আমার ভাইয়ের ভাল লুঙ্গিটা আমাকে দিয়ে যায়। তৎপর আমাদেরকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলখানায় নিয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পর আমার সংগীয় সিরাজ মিয়া সহ ২০/২৫ জনকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়, ঐ গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় আমাকে রেখে যায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে, সিরাজ মিয়া ঐ ২০/২৫ জনকে কুল্লিয়া খালে গুলি করে হত্যা করেছে। এর তিন/চার দিন পরে বুঝতে পারলাম দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমি জবানবন্দী প্রদান করেছি। রাজাকার মোবারক অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরাঃ-
আমি লেখাপড়া জানি না বিধায় কত তারিখে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলতে পারব না, তবে ১৬ তারিখে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি ১৬ তারিখের পরে জেলখানা থেকে বের হয়েছি। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন