21/7/2013
আমার নাম মোঃ আব্দুস সেলিম লতিফ, আমার বয়স- ৫৯/৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা- সাং বৃশালিখা, থানা-বেড়া, জেলা- পাবনা।
১৯৭০ সালে আমি বেড়া কলেজের ১ম বর্ষ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে শুনে আমি এবং আমার সহপাঠিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি কল্পে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি, ই,পি,আর, এবং পুলিশদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে প্রাথমিক ট্রেনিং শুরু করি। ২৬ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর আমরা বেড়া থানা থেকে ১৪টি রাইফেল এবং গোলাবারুদ সহ স্থানীয় যে সকল লোকের লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল সেই সমস্ত বন্দুক এবং কার্টিজ সংগ্রহ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এরপর বিভিন্ন স্থানে সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুমানিক ৩/৪ তারিখে আমরা খবর পাই যে, আরিচা থেকে পাকিস্তানী আর্মিরা নগরবাড়ী যাওয়ার জন্য ফেরি যোগে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন আমরা ও অবসর প্রাপ্ত ই,পি,আর, আর্মি ও পুলিশের সদস্য সহ আমরা নগরবাড়ী ফেরিঘাটে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলি। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের অবস্থানের খবর পেয়ে আনুমানিক ৪ঠা এপ্রিল বিমান থেকে আমাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। ঐ গুলি বর্ষণের ফলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে টিকতে না পেরে আনুমানিক ৫/৭ কিঃমিঃ দূরে শহীদ নগর ডাব বাগানে অবস্থান নেই। এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা নগরবাড়ী ঘাট দখল করে নেয়। ৬/৭ তারিখের দিকে তারা বগুড়ার অভিমুখে যাত্রা করলে আমরা ডাব বাগান শহীদ নগরে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেই। তখন ৬/৭ তারিখে পাকিস্তান আর্মিদের সংগে আমাদের ডাব বাগানে সম্মুখ সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পরবর্তীতে ঐ জায়গার নাম হয় শহীদনগর। ১৯৭১ সালের মে মাসে আমি, এস,এম, আমির আলী, আলাউদ্দিন, সুজা উদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আমরা অনেকেই ভারতে যাই। ভারতে গিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরে পতিরামপুর ক্যাম্প/ মালঞ্চ ক্যাম্পে এক সপ্তাহের শর্ট ট্রেনিং নিয়ে পুনরায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বেড়া থানায় ফিরে আসি এবং তৎকালীন এম,এন,এ, আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের সম্ভবত ১৫ তারিখে আব্দুল লতিফ মির্জা সাহেবের নির্দেশে বেড়া থানা রেকি করতে যাই। যাওয়ার পথে বেড়া থানার এল,এস,ডি, লঞ্চ ঘাটে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানায় আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। ঘন্টা খানেক পরে ওখান থেকে আমাদেরকে নগরবাড়ী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার সময় খালি গায়ে আমাদেরকে পিঠ মোড়াদিয়ে বেধে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদেরকে একটি ফেরির উপর রাখা হয়। গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের মত আরও ৯/১০ জন পিঠ মোড়া দিয়ে বাধা অবস্থায় আছে। আরও দেখি একজন আর্মি অফিসারের সাথে মতিউর রহমান নিজামী কথা বলছেন। ইত্যবসরে রাত্রি আটটা বেজে যায়। সেখানে আর্মির একজন ক্যাপ্টেন ছিল তার কাছে আমাদেরকে ফেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে ঐ এলাকায় কারা কারা আওয়ামী লীগ করে, কারা কারা মুক্তিযুদ্ধের সহিত জড়িত, বেড়া থানা থেকে লুণ্ঠিত রাইফেল কোথায়। আমরা বলি যে, আমরা কিছুই জানি না। তখন আমাদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। জলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে আমার পিঠে ছ্যাকা দেওয়া হয়। এইভাবে প্রায় দুই/তিন ঘন্টা অত্যাচার চলতে থাকে। আমার পিঠে সেই ছ্যাকার চিহ্ন এখনও আছে। আমাদের নিকট থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তখন ক্যাপ্টেন বললেন ‘পার করে দে গা’। তখন আমাদেরকে বাহিরের ফেরিতে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি রুমে বসিয়ে রেখে আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে বাহিরে নিয়ে যায়। আনুমানিক ২০/৩০ মিনিট পরে পানির মধ্যে পড়ে যাওয়ার মত বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। এর এক মিনিটের মধ্যে আমাকে বাইরের ফেরীর রেলিংয়ের মধ্যে পিঠমোড়া দিয়ে দাড় করায়। তৎপর দুইজন পাকিস্তান আর্মি ও দুই একজন আলবদরের সদস্যরা আমার দুটি পা ইলেকট্রিকের চিকন তার দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধে এবং আমার দুই হাট পিঠমোড়া করে তার দিয়ে বাধে। আমি দেখতে পাই যে, আমার নিকট থেকে সামান্য দূরে দুইটা বস্তার ভিতর আনুমানিক ৮/১০ খানা ইট ঢোকানো হচ্ছে। এরপর বস্তার মুখ তার দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর ঐ ইটের বস্তা দুটি আমার কাধের দুই পার্শ্বে ঝুলিয়ে দেয়।এরপর আমার পা উচু করে বলে যে, “লে বাঙ্গালী লেও ছয় দফাকে এক দফা লেও” এই বলে আমাকে নগরবাড়ী যমুনা নদীতে দুইটি ফেরীর মাঝখানে ফেলে দিলে পার্শ্ববর্তী ফেরীর সংগে ধাক্কা খেয়ে আমার কাধের বস্তা দুইটি খুলে পড়ে যায় মর্মে আমি অনুভব করি। বস্তা সরে যাওয়ার পর আমার মনে হয় আমি বাঁচব তখন আমি আমার হাতের বাঁধন খোলার জন্য চেষ্টা করি। আমি পানি খেতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার জ্ঞান শুন্য হওয়ার অবস্থায় আমার হাতের বাঁধন খুলে যায়। এরপর আমার সামান্য জ্ঞান ফিরে আসে, তখন আমি বুঝতে পারি আমি ফেরির নীচে। তখন আমি বাঁচার জন্য ফেরীর তলায় হাত দিয়ে স্রোতের সাথে ভাসতে থাকি। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ফেরীর তলা থেকে বের হয়েছি, তখন আমি ভেসে উঠে আমি দেখতে পাই পাকিস্তানী আর্মি ও আলবদররা ফেরির উপর থেকে টর্চ মেরে আমরা কি অবস্থায় আছি তাহা লক্ষ্য করছে। এরপর একটু কিনারে গিয়ে আমার পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। নগরবাড়ি থেকে এক কিঃমিঃ সাতার কেটে গোকসেলুন্দা গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে উঠি। তখন রাত্রি আনুমানিক একটা/দেড়টা হবে। ঐ বাড়ির লোকেরা তখন আমাকে আশ্রয় দিয়ে লুকিয়ে রাখে এবং পরের দিন সকালে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনের সংগে সেদিন আনিছ সহ আরও কয়েকজন ছিল। তাদের মধ্যে চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু আনিছ বাড়িতে ফিরে আসে নাই। আনুমানিক ১০/১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি একটু সুস্থ হলে আবার আমি, আমার আব্বা সহ চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আরও কয়েকজন মাইনকার চর দিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখানে পশ্চিম দিনাজপুরে ৭ নং সেক্টরে মালঞ্চ ক্যাম্পে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের তৎকালীন এম,এন,এ, অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ৭ নং সেক্টরে বেসামরিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। সেখান থেকে ৭ দিনের স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব আমাদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। আমরা ২২ জন একসংগে আসি। আমার পিতা শহীদ সোহরাব আলী প্রামাণিক অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের কাছে থেকে যান। দেশে ফিরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী আর্মি, রাজাকার, আলবদরদের সংগে যুদ্ধ করি।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে আমার পিতা আমাদের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই খবর স্থানীয় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা জানতে পেরে আলবদর বাহিনীর চীফ ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয়। ৩রা ডিসেম্বর তারিখে ভোর বেলা আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা যৌথভাবে আমাদের বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা আমাদের গ্রামের বহু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং আমার আব্বাকে আমাদের বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে রাস্তার উপর নির্মম অত্যাচার করে ও আমার অবস্থানের কথা আমার আব্বার কাছে জানতে চায়। আমার অবস্থান সম্পর্কে আমার পিতা কিছু না বলায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনা আমি আমার মা, আজগর আলী মুন্সি, অহেদ আলী প্রামাণিক, শাহজাহান আলীসহ আরও অনেকের নিকট থেকে শুনেছি। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার আব্বাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। তারা আমার পিতা ছাড়াও আমাদের গ্রামের মনু, ষষ্টি প্রামাণিক, ভাদু প্রামাণিক, জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদার সহ আরও অনেক নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যা করে। আমি এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
-জেরা
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট কত তারিখে জবানবন্দী প্রদান করি তাহা আমার মনে নাই। কোন্ সালের কোন্ মাসে জবানবন্দী প্রদান করি তাহাও মনে নাই। (চলবে)
পুনরায় জেরাঃ
তাং- ২২/০৭/২০১৩ইং
সম্ভবত ২০১১ সালের ৮ মাসে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলাম। আমি যখন জবানবন্দী প্রদান করি তখন আমার সামনে উহা লেখা হয়েছিল। লিখিত জবানবন্দী আমাকে পড়ে শুনানো হয়েছিল। আমার কথামত জবানবন্দী লেখা হয়েছে বিধায় আমার কথামত লেখা হয় নাই এ মর্মে আমি কোন আপত্তি প্রদান করি নাই। আমার স্মরণ শক্তি কমে নাই। জবানবন্দী নেওয়ার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার বাসায় গিয়েছিলেন। আমার জবানবন্দী গ্রহণ করার জন্য আমাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয় নাই। স্থানীয় কোন লোক আমাকে এই জবানবন্দী গ্রহণের বিষয়ে খবর দেয় নাই।
১৯৭১ সালে আমাদের পরিবারের সদস্য ছিল ৯ ভাই-বোন ও পিতা-মাতা সহ ১১ জন। আমার ভাই আমিনুল ইসলাম ডাবলু আমার থেকে ২০/২২ বছরের ছোট হবে। আমার গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে আমি প্রাথমিক লেখাপড়া করেছি। মাধ্যমিক লেখাপড়া আমি বিপিন বিহারী হাই স্কুল, বেড়া থানায় করেছি। ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় আমি ভোটার ছিলাম না। আমরা সাধারণভাবে কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা শহরে যেতাম। কাশিনাথপুর রোড দিয়ে পাবনা যেতে মনমথপুর, বোয়াইলমারী এবং সাথিয়া সদর পড়ত না। আমার জন্ম সাল ১৯৫৭ সন কিনা তাহা এখন স্মরণ নাই। জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি কালে আমার দেওয়া তথ্য মতে এবং আমার সাক্ষরে তৈরি হয়েছে। ভোটার লিষ্টে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করা আছে। সাথিয়া থানার মনমথপুরে আমার আত্মীয় স্বজন নাই, তবে বোয়াইলমারীতে আত্মীয়-স্বজন আছে।
আমি যে স্কুলে ও কলেজে পড়তাম সেই স্কুলে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন যাতায়াত ছিল না। নিজামী সাহেব যেখানে পড়ালেখা করতেন সেই স্কুলে বা কলেজে আমার যাতায়াত ছিল না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পিতাকে আমি চিনতাম না। নিজামী সাহেবরা কয় ভাই-বোন তাহা আমি বলতে পারি না। বোয়াইলমারী এবং মনমথপুর গ্রামের দূরত্ব আনুমানিক দেড়/দুই কিলোমিটার নদীর এপার ওপার। নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলেকে আমি চিনতাম না। এখন পর্যন্ত নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলের নামও আমি জানি না। নিজামী সাহেবকে আমি সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখেছি। ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হকের নির্বাচনী জনসভায় আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছিলাম। মাওলানা ইছহাক সাহেবের নাম শুনেছি তার ঐ নির্বাচনে তিনি বেড়া এলাকার প্রার্থী ছিলেন না তবে অন্য কোন এলাকার প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমা স্মরণ নাই। ঐ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব এবং অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ছাড়া আর কোন প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার পিতা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার পিতা ব্যবসা করতেন। আমার পিতার সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন দিন দেখা সাক্ষাত হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সামনে দাড়িয়ে মুখোমুখি কথাবার্তা বলি নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাকে চিনতেন এ ধরনের কোন খবর আমার নিকট ছিল না, তবে চিনলেও চিনতে পারেন।
কলেজে পড়াকালীন আমার ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ছিল। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠন ছিল না। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজের ভিপি ছিলেন আল মাহমুদ সরকার। তিনি জীবিত আছেন। তার বাড়ী আমাদের গ্রামে। তিনি প্রথম দিকে আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও পরবর্তী পর্যায়ে তিনি কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। জি.এস কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমার পিতা এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন ছাড়াও আমাদের গ্রামের হারুন অর রশিদ, জানে আলম, চাঁন আলী, বেলায়েত হোসেন এবং আমিসহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমাদের গ্রামের ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনুমানিক একশত জনের বেশি লোক এখনও জীবিত আছে। তাদের মধ্যে আমাদের গ্রামের শাহজাহান আলীর সাক্ষাতকার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়েছিলেন। আমাদের গ্রামে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২/৩ দিন গিয়েছিলেন। আমি ঢাকায় আসার পরও আমাকে জবানবন্দীর একটি কপি দেওয়া হয়েছে।
আর্মির পদ পদবী সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা নাই। পাকিস্তান আর্মিদের বুকে নাম ফলক লেখা ছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। পাকিস্তানী আর্মি অফিসারদের র্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বাহিনীদের র্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর আমাদের ট্রেনিং দিতেন আনছার কমান্ডার মোজাহার আলী এবং আব্বাস আলী সাহবে। আব্বাস আলী সাহেব মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন মোজাহার আলী সাহেব যান নাই। মোজাহার আলী সাহেবের বাড়ী আমাদের গ্রামে ছিল।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ডাব বাগান যুদ্ধের সময় কালীন সময়ে সুজানগর, বেড়া এবং সাথিয়া এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী প্রকাশ্য কোন তৎপরতা ছিল না। গোপনে কিভাবে কোথায় কি তৎপরতা ছিল সেটা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পাবনা এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের পরে পাকিস্তান আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে বগুড়ার দিকে গেছে। আর্মিরা ৪ঠা এপ্রিল প্রথম নগরবাড়ী ঘাটে আসে এবং দখল নেয়। নগরবাড়ী থেকে কাশিনাথপুর হয়েই পাবনা যেতে হতো। আমরা ডাব বাগানে থাকাকালীন সময়ে আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা গিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমরা যখন নগরবাড়ী ঘাটে অবস্থান করি তখন আমাদের কমান্ডার ছিলেন বেড়ার এস,এম আমির আলী। তিনি পরবর্তীতেকালে সাথিয়া নয় বেড়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন। ৪ঠা এপ্রিল থেকে আমার প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী কোন তৎপরতা প্রকাশ্যে দেখি নাই। উক্ত সময়ে আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকা সাথিয়া, সুজানগর, আটঘরিয়ায় কোন স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামসের কোন নাম শুনি নাই। আমাদের এলাকার রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে পারতাম, কারণ তারা আমার এলাকার লোক ছিল। আমার বাড়ি বেড়া ইউনিয়নে, এখন যেটা পৌরসভা। বর্তমানে আমি ঐ বাড়িতেই বসবাস করি। ১৯৭১ সালে বেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন রাজা মিয়া। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যান নাই, পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন না। আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমাদের গ্রামে পিস কমিটির সদস্য ছিল না। আমি প্রথমবার ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সপ্তাহ খানেক পরে মে মাসেই দেশে ফিরে আসি। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পরে বিভিন্ন সময় সাথিয়া, উল্লাপাড়া এবং শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পর থেকে দ্বিতীয়বার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের এলাকায় কোন রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করি নাই। সাথিয়া এলাকায় রাজাকার ও আলশামসদের ক্যাম্প একই সঙ্গে থানাতেই ছিল। (বিরতি)
পুনরায় জেরাঃ
বিকালঃ ২:০০
বেড়া থানাতে বেড়া থানার রাজাকার এবং আলবদরের ক্যাম্প ছিল। আমি শুনেছি বেড়া থানার পিস কমিটির অফিস বেড়া ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে ছিল। বেড়া থানার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও কয়েকজন পিস কমিটির মেম্বারদের চিনতাম তাদের মধ্যে ছিল রইচ উদ্দিন এবং মফিজ। আমার পিতাকে যে রাজাকার এবং আলবদররা হত্যা করেছিল তাদের নাম কেউ আমাকে বলে নাই। আমিও কাউকে জিজ্ঞাসা করি নাই যে, আমার পিতাকে কারা হত্যা করেছে।
আমি জবানবন্দীতে যে পুলিশ এবং ই.পি.আর এর কথা বলেছি তারা অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। ই.পি.আর দের মধ্যে বৃশালিখার আব্দুল লতিফ ছাড়া অন্য কারো নাম মনে আসছে না। পুলিশদের মধ্যে কে কে ছিল তাদের নাম এখন মনে আসছে না। বেড়া এলাকায় কোন ই.পি.আর ক্যাম্প ছিল না। ১৯৭১ সালে ৩রা ডিসেম্বর সালে সাড়ে ছয়টার পরে সুর্য উদয় হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমাদের বৃশালিখা গ্রামটি মোটামুটি বড় গ্রাম। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লোকের বসবাস ছিল। আমাদের গ্রামটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা। আমাদের বাড়িটি ছিল গ্রামের মধ্যভাগে, তবে দক্ষিন প্রান্তে। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের গ্রামে ঐদিন নিহত মনু, ষষ্টি প্রামানিক, ভাদু প্রামানিক এবং জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদারদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে ৫০০/৬০০ গজ দূরে হিন্দু পাড়ায়। ঐ হিন্দু পাড়ায় এখনও কিছু কিছু হিন্দু সম্প্রদায়েরর লোকজন বসবাস করে। এখনও ৫০/৬০ টি বাড়ি আছে। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নাম হাবিবুর রহমান ওরফে হবি। আমাকে ফেরি ঘাটে পানিতে ফেলে দেয়ার পর থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্য আমাকে দেখেছিল কিনা বলতে পারি না, তবে আমি কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্যদের উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সামনা সামনি দেখি নাই। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব একজন বেসামরিক লোক ছিলেন, তবে তিনি আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টফ/প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ ছাড়া অন্য কোন পদবী সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। আলবদর বাহিনীর সদস্যরাও বেসামরিক বাহিনীর লোক ছিল। বেড়া থানার আলবদর বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। পাবনা জেলা সদরের পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যদের আমি চিনি না। নগরবাড়ি-আরিচা ফেরি ঘাটে ১৯৭১ সালে কয়টি ফেরি চলাচল করতো তাহা আমার মনে নাই। আমরা যখন নগরবাড়ি ফেরি ঘাটে ছিলাম তখন আমাদের নিকট কোন ওয়ারলেস সেট ছিল না। বিজয় অর্জনের পরে আমার পিতার হত্যাকান্ড সংক্রান্তে আমি কোন মামলা করি নাই এবং আমাকে মামলা করতে কেউ বাধা দেয় নাই। আমার স্কুলের সিনিয়র ছাত্র রফিকুন নবী বাবলুকে আমি চিনি। তার বাড়িতে আমার যাতায়াত নাই। বিজয় অর্জনের পরে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকজন রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী গ্রেফতার হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনে আমাদের এলাকায় আমি প্রভাবশালী ছিলাম কিনা তাহা আমি বলতে পারি না, অন্য লোকেরা বলতে পারে। বিজয় অর্জনের পর পরই সার্কেল অফিসারকে আহবায়ক এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কার কি ভূমিকা ছিল তাহা তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। যে সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমার পিতাকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল তাহা আমি শুনেছি। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা হল জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং অভাবী সাধারণ মানুষ যাদেরকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বা পেটের দায়ে তারা গিয়েছিল। ১৯৭০/১৯৭১ সালে নেজামে ইসলাম বা পি,ডি,পি নামে কোন সংগঠন আমাদের এলাকায় ছিল না। ১৯৭০/১৯৭১ সালে একটি মাত্র পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক ২/৩ দিন পর পর আসতো। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে অনেক রাজাকার আলবদরদের চিনতাম, তবে তাদের সংখ্যা বলতে পারব না। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুল সহ মফস্বলের কোন স্কুলেই ছাত্র রাজনীতি ছিল না। সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। ঐ সময় কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত ছিল না। আমাদের কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন করতো এমন ছাত্রের মধ্যে অনেককেই চিনতাম তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল লাল। বিজয় অর্জনের পর যে সকল রাজাকার আত্মসমর্পন করেছিল তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এই কারণে যে, তারা সকলেই স্থানীয় লোকজনের আত্মীয় স্বজন ছিল।
অদ্য আসামীর কাঠগড়ায় একজন মাত্র ব্যক্তি উপস্থিত আছেন এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই পাবনা থেকে এসেছি।
“ঈড়হঃৎধফরপঃরড়হ...” একথাগুলি আমি তদন্ত কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আগষ্ট মাসের “সম্ভবত ১৫” তারিখে কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর, রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি এই কথাগুলির মধ্যে “মতিউর রহমান নিজামী সাহেবেরে অনুগত” এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানার আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করে এই কথাগুলির মধ্যে, “আলবদরদের” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বাবাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, এই কথাগুলির মধ্যে “নির্দেশে” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে। “পতিরামপুর/মালঞ্চ” ক্যাম্পে আমি ট্রেনিং নিয়েছিলাম একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি একথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। একজন আর্মি অফিসারের সঙ্গে ফেরির উপর মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে কথা বলতে দেখেছি ইহা অসত্য, সত্য নহে। আমাকে বস্তায় ইট বেধে ফেরির উপর থেকে ফেলে দেওয়া অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার বাবা মালঞ্চ/পতিরামপুর থেকে ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে ফিরে আসলে স্থানীয় আলবদর সদস্যরা আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয় মর্মে যে বক্তব্য আমি দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আমার পিতার হত্যাকান্ড ঘটে মর্মে আমি জবানবন্দীতে যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আলবদর বাহিনী সম্পর্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাহাও অসত্য, ইহা সত্য নহে। ঐ সময় আমার কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব না থাকায়, ছাত্র ইউনিয়নের ......... ছাড়া অন্যদের ..............., সাথিয়াতে কোন কলেজ না থাকায়, সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ থাকা না থাকা সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকায়, ঐ সময় মফস্বল স্কুল সমূহে ছাত্র রাজনীতি না থাকায় এবং ঐ এলাকার কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত না থাকায় ইসলামী ছাত্র সংঘকে জড়িয়ে যে সাক্ষ্য প্রদান করলাম তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ও নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাদের এলাকায় থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য প্রদানের আরও একটি কারণ হলো তিনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)
আমার নাম মোঃ আব্দুস সেলিম লতিফ, আমার বয়স- ৫৯/৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা- সাং বৃশালিখা, থানা-বেড়া, জেলা- পাবনা।
১৯৭০ সালে আমি বেড়া কলেজের ১ম বর্ষ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে শুনে আমি এবং আমার সহপাঠিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি কল্পে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি, ই,পি,আর, এবং পুলিশদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে প্রাথমিক ট্রেনিং শুরু করি। ২৬ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর আমরা বেড়া থানা থেকে ১৪টি রাইফেল এবং গোলাবারুদ সহ স্থানীয় যে সকল লোকের লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল সেই সমস্ত বন্দুক এবং কার্টিজ সংগ্রহ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এরপর বিভিন্ন স্থানে সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুমানিক ৩/৪ তারিখে আমরা খবর পাই যে, আরিচা থেকে পাকিস্তানী আর্মিরা নগরবাড়ী যাওয়ার জন্য ফেরি যোগে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন আমরা ও অবসর প্রাপ্ত ই,পি,আর, আর্মি ও পুলিশের সদস্য সহ আমরা নগরবাড়ী ফেরিঘাটে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলি। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের অবস্থানের খবর পেয়ে আনুমানিক ৪ঠা এপ্রিল বিমান থেকে আমাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। ঐ গুলি বর্ষণের ফলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে টিকতে না পেরে আনুমানিক ৫/৭ কিঃমিঃ দূরে শহীদ নগর ডাব বাগানে অবস্থান নেই। এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা নগরবাড়ী ঘাট দখল করে নেয়। ৬/৭ তারিখের দিকে তারা বগুড়ার অভিমুখে যাত্রা করলে আমরা ডাব বাগান শহীদ নগরে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেই। তখন ৬/৭ তারিখে পাকিস্তান আর্মিদের সংগে আমাদের ডাব বাগানে সম্মুখ সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পরবর্তীতে ঐ জায়গার নাম হয় শহীদনগর। ১৯৭১ সালের মে মাসে আমি, এস,এম, আমির আলী, আলাউদ্দিন, সুজা উদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আমরা অনেকেই ভারতে যাই। ভারতে গিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরে পতিরামপুর ক্যাম্প/ মালঞ্চ ক্যাম্পে এক সপ্তাহের শর্ট ট্রেনিং নিয়ে পুনরায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বেড়া থানায় ফিরে আসি এবং তৎকালীন এম,এন,এ, আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করি। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের সম্ভবত ১৫ তারিখে আব্দুল লতিফ মির্জা সাহেবের নির্দেশে বেড়া থানা রেকি করতে যাই। যাওয়ার পথে বেড়া থানার এল,এস,ডি, লঞ্চ ঘাটে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানায় আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। ঘন্টা খানেক পরে ওখান থেকে আমাদেরকে নগরবাড়ী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার সময় খালি গায়ে আমাদেরকে পিঠ মোড়াদিয়ে বেধে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদেরকে একটি ফেরির উপর রাখা হয়। গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের মত আরও ৯/১০ জন পিঠ মোড়া দিয়ে বাধা অবস্থায় আছে। আরও দেখি একজন আর্মি অফিসারের সাথে মতিউর রহমান নিজামী কথা বলছেন। ইত্যবসরে রাত্রি আটটা বেজে যায়। সেখানে আর্মির একজন ক্যাপ্টেন ছিল তার কাছে আমাদেরকে ফেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে ঐ এলাকায় কারা কারা আওয়ামী লীগ করে, কারা কারা মুক্তিযুদ্ধের সহিত জড়িত, বেড়া থানা থেকে লুণ্ঠিত রাইফেল কোথায়। আমরা বলি যে, আমরা কিছুই জানি না। তখন আমাদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। জলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে আমার পিঠে ছ্যাকা দেওয়া হয়। এইভাবে প্রায় দুই/তিন ঘন্টা অত্যাচার চলতে থাকে। আমার পিঠে সেই ছ্যাকার চিহ্ন এখনও আছে। আমাদের নিকট থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তখন ক্যাপ্টেন বললেন ‘পার করে দে গা’। তখন আমাদেরকে বাহিরের ফেরিতে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি রুমে বসিয়ে রেখে আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে বাহিরে নিয়ে যায়। আনুমানিক ২০/৩০ মিনিট পরে পানির মধ্যে পড়ে যাওয়ার মত বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। এর এক মিনিটের মধ্যে আমাকে বাইরের ফেরীর রেলিংয়ের মধ্যে পিঠমোড়া দিয়ে দাড় করায়। তৎপর দুইজন পাকিস্তান আর্মি ও দুই একজন আলবদরের সদস্যরা আমার দুটি পা ইলেকট্রিকের চিকন তার দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধে এবং আমার দুই হাট পিঠমোড়া করে তার দিয়ে বাধে। আমি দেখতে পাই যে, আমার নিকট থেকে সামান্য দূরে দুইটা বস্তার ভিতর আনুমানিক ৮/১০ খানা ইট ঢোকানো হচ্ছে। এরপর বস্তার মুখ তার দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর ঐ ইটের বস্তা দুটি আমার কাধের দুই পার্শ্বে ঝুলিয়ে দেয়।এরপর আমার পা উচু করে বলে যে, “লে বাঙ্গালী লেও ছয় দফাকে এক দফা লেও” এই বলে আমাকে নগরবাড়ী যমুনা নদীতে দুইটি ফেরীর মাঝখানে ফেলে দিলে পার্শ্ববর্তী ফেরীর সংগে ধাক্কা খেয়ে আমার কাধের বস্তা দুইটি খুলে পড়ে যায় মর্মে আমি অনুভব করি। বস্তা সরে যাওয়ার পর আমার মনে হয় আমি বাঁচব তখন আমি আমার হাতের বাঁধন খোলার জন্য চেষ্টা করি। আমি পানি খেতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার জ্ঞান শুন্য হওয়ার অবস্থায় আমার হাতের বাঁধন খুলে যায়। এরপর আমার সামান্য জ্ঞান ফিরে আসে, তখন আমি বুঝতে পারি আমি ফেরির নীচে। তখন আমি বাঁচার জন্য ফেরীর তলায় হাত দিয়ে স্রোতের সাথে ভাসতে থাকি। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ফেরীর তলা থেকে বের হয়েছি, তখন আমি ভেসে উঠে আমি দেখতে পাই পাকিস্তানী আর্মি ও আলবদররা ফেরির উপর থেকে টর্চ মেরে আমরা কি অবস্থায় আছি তাহা লক্ষ্য করছে। এরপর একটু কিনারে গিয়ে আমার পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। নগরবাড়ি থেকে এক কিঃমিঃ সাতার কেটে গোকসেলুন্দা গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে উঠি। তখন রাত্রি আনুমানিক একটা/দেড়টা হবে। ঐ বাড়ির লোকেরা তখন আমাকে আশ্রয় দিয়ে লুকিয়ে রাখে এবং পরের দিন সকালে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনের সংগে সেদিন আনিছ সহ আরও কয়েকজন ছিল। তাদের মধ্যে চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু আনিছ বাড়িতে ফিরে আসে নাই। আনুমানিক ১০/১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি একটু সুস্থ হলে আবার আমি, আমার আব্বা সহ চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন, হারুন অর রশিদ সহ আরও কয়েকজন মাইনকার চর দিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখানে পশ্চিম দিনাজপুরে ৭ নং সেক্টরে মালঞ্চ ক্যাম্পে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের তৎকালীন এম,এন,এ, অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ৭ নং সেক্টরে বেসামরিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। সেখান থেকে ৭ দিনের স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব আমাদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। আমরা ২২ জন একসংগে আসি। আমার পিতা শহীদ সোহরাব আলী প্রামাণিক অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের কাছে থেকে যান। দেশে ফিরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী আর্মি, রাজাকার, আলবদরদের সংগে যুদ্ধ করি।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে আমার পিতা আমাদের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই খবর স্থানীয় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা জানতে পেরে আলবদর বাহিনীর চীফ ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয়। ৩রা ডিসেম্বর তারিখে ভোর বেলা আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা যৌথভাবে আমাদের বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা আমাদের গ্রামের বহু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং আমার আব্বাকে আমাদের বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে রাস্তার উপর নির্মম অত্যাচার করে ও আমার অবস্থানের কথা আমার আব্বার কাছে জানতে চায়। আমার অবস্থান সম্পর্কে আমার পিতা কিছু না বলায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনা আমি আমার মা, আজগর আলী মুন্সি, অহেদ আলী প্রামাণিক, শাহজাহান আলীসহ আরও অনেকের নিকট থেকে শুনেছি। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার আব্বাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। তারা আমার পিতা ছাড়াও আমাদের গ্রামের মনু, ষষ্টি প্রামাণিক, ভাদু প্রামাণিক, জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদার সহ আরও অনেক নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যা করে। আমি এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
-জেরা
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট কত তারিখে জবানবন্দী প্রদান করি তাহা আমার মনে নাই। কোন্ সালের কোন্ মাসে জবানবন্দী প্রদান করি তাহাও মনে নাই। (চলবে)
পুনরায় জেরাঃ
তাং- ২২/০৭/২০১৩ইং
সম্ভবত ২০১১ সালের ৮ মাসে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলাম। আমি যখন জবানবন্দী প্রদান করি তখন আমার সামনে উহা লেখা হয়েছিল। লিখিত জবানবন্দী আমাকে পড়ে শুনানো হয়েছিল। আমার কথামত জবানবন্দী লেখা হয়েছে বিধায় আমার কথামত লেখা হয় নাই এ মর্মে আমি কোন আপত্তি প্রদান করি নাই। আমার স্মরণ শক্তি কমে নাই। জবানবন্দী নেওয়ার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার বাসায় গিয়েছিলেন। আমার জবানবন্দী গ্রহণ করার জন্য আমাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয় নাই। স্থানীয় কোন লোক আমাকে এই জবানবন্দী গ্রহণের বিষয়ে খবর দেয় নাই।
১৯৭১ সালে আমাদের পরিবারের সদস্য ছিল ৯ ভাই-বোন ও পিতা-মাতা সহ ১১ জন। আমার ভাই আমিনুল ইসলাম ডাবলু আমার থেকে ২০/২২ বছরের ছোট হবে। আমার গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে আমি প্রাথমিক লেখাপড়া করেছি। মাধ্যমিক লেখাপড়া আমি বিপিন বিহারী হাই স্কুল, বেড়া থানায় করেছি। ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় আমি ভোটার ছিলাম না। আমরা সাধারণভাবে কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা শহরে যেতাম। কাশিনাথপুর রোড দিয়ে পাবনা যেতে মনমথপুর, বোয়াইলমারী এবং সাথিয়া সদর পড়ত না। আমার জন্ম সাল ১৯৫৭ সন কিনা তাহা এখন স্মরণ নাই। জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি কালে আমার দেওয়া তথ্য মতে এবং আমার সাক্ষরে তৈরি হয়েছে। ভোটার লিষ্টে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করা আছে। সাথিয়া থানার মনমথপুরে আমার আত্মীয় স্বজন নাই, তবে বোয়াইলমারীতে আত্মীয়-স্বজন আছে।
আমি যে স্কুলে ও কলেজে পড়তাম সেই স্কুলে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন যাতায়াত ছিল না। নিজামী সাহেব যেখানে পড়ালেখা করতেন সেই স্কুলে বা কলেজে আমার যাতায়াত ছিল না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পিতাকে আমি চিনতাম না। নিজামী সাহেবরা কয় ভাই-বোন তাহা আমি বলতে পারি না। বোয়াইলমারী এবং মনমথপুর গ্রামের দূরত্ব আনুমানিক দেড়/দুই কিলোমিটার নদীর এপার ওপার। নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলেকে আমি চিনতাম না। এখন পর্যন্ত নিজামী সাহেবের বোনের কোন ছেলের নামও আমি জানি না। নিজামী সাহেবকে আমি সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখেছি। ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হকের নির্বাচনী জনসভায় আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছিলাম। মাওলানা ইছহাক সাহেবের নাম শুনেছি তার ঐ নির্বাচনে তিনি বেড়া এলাকার প্রার্থী ছিলেন না তবে অন্য কোন এলাকার প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমা স্মরণ নাই। ঐ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব এবং অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব ছাড়া আর কোন প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার পিতা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার পিতা ব্যবসা করতেন। আমার পিতার সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কোন দিন দেখা সাক্ষাত হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সামনে দাড়িয়ে মুখোমুখি কথাবার্তা বলি নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাকে চিনতেন এ ধরনের কোন খবর আমার নিকট ছিল না, তবে চিনলেও চিনতে পারেন।
কলেজে পড়াকালীন আমার ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ছিল। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠন ছিল না। ১৯৭০ সালে আমাদের কলেজের ভিপি ছিলেন আল মাহমুদ সরকার। তিনি জীবিত আছেন। তার বাড়ী আমাদের গ্রামে। তিনি প্রথম দিকে আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও পরবর্তী পর্যায়ে তিনি কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। জি.এস কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমার পিতা এবং আমার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন ছাড়াও আমাদের গ্রামের হারুন অর রশিদ, জানে আলম, চাঁন আলী, বেলায়েত হোসেন এবং আমিসহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমাদের গ্রামের ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনুমানিক একশত জনের বেশি লোক এখনও জীবিত আছে। তাদের মধ্যে আমাদের গ্রামের শাহজাহান আলীর সাক্ষাতকার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়েছিলেন। আমাদের গ্রামে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২/৩ দিন গিয়েছিলেন। আমি ঢাকায় আসার পরও আমাকে জবানবন্দীর একটি কপি দেওয়া হয়েছে।
আর্মির পদ পদবী সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা নাই। পাকিস্তান আর্মিদের বুকে নাম ফলক লেখা ছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। পাকিস্তানী আর্মি অফিসারদের র্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বাহিনীদের র্যাঙ্ক ব্যাজ কি ছিল আমি বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর আমাদের ট্রেনিং দিতেন আনছার কমান্ডার মোজাহার আলী এবং আব্বাস আলী সাহবে। আব্বাস আলী সাহেব মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন মোজাহার আলী সাহেব যান নাই। মোজাহার আলী সাহেবের বাড়ী আমাদের গ্রামে ছিল।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ডাব বাগান যুদ্ধের সময় কালীন সময়ে সুজানগর, বেড়া এবং সাথিয়া এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী প্রকাশ্য কোন তৎপরতা ছিল না। গোপনে কিভাবে কোথায় কি তৎপরতা ছিল সেটা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পাবনা এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ডাব বাগান যুদ্ধের পরে পাকিস্তান আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে বগুড়ার দিকে গেছে। আর্মিরা ৪ঠা এপ্রিল প্রথম নগরবাড়ী ঘাটে আসে এবং দখল নেয়। নগরবাড়ী থেকে কাশিনাথপুর হয়েই পাবনা যেতে হতো। আমরা ডাব বাগানে থাকাকালীন সময়ে আর্মিরা কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা গিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমরা যখন নগরবাড়ী ঘাটে অবস্থান করি তখন আমাদের কমান্ডার ছিলেন বেড়ার এস,এম আমির আলী। তিনি পরবর্তীতেকালে সাথিয়া নয় বেড়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন। ৪ঠা এপ্রিল থেকে আমার প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী কোন তৎপরতা প্রকাশ্যে দেখি নাই। উক্ত সময়ে আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকা সাথিয়া, সুজানগর, আটঘরিয়ায় কোন স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি প্রথমবার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামসের কোন নাম শুনি নাই। আমাদের এলাকার রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে পারতাম, কারণ তারা আমার এলাকার লোক ছিল। আমার বাড়ি বেড়া ইউনিয়নে, এখন যেটা পৌরসভা। বর্তমানে আমি ঐ বাড়িতেই বসবাস করি। ১৯৭১ সালে বেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন রাজা মিয়া। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যান নাই, পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন না। আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। আমাদের গ্রামে পিস কমিটির সদস্য ছিল না। আমি প্রথমবার ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সপ্তাহ খানেক পরে মে মাসেই দেশে ফিরে আসি। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পরে বিভিন্ন সময় সাথিয়া, উল্লাপাড়া এবং শাহজাদপুর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। মে মাসে ভারত থেকে ফেরত আসার পর থেকে দ্বিতীয়বার ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের এলাকায় কোন রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করি নাই। সাথিয়া এলাকায় রাজাকার ও আলশামসদের ক্যাম্প একই সঙ্গে থানাতেই ছিল। (বিরতি)
পুনরায় জেরাঃ
বিকালঃ ২:০০
বেড়া থানাতে বেড়া থানার রাজাকার এবং আলবদরের ক্যাম্প ছিল। আমি শুনেছি বেড়া থানার পিস কমিটির অফিস বেড়া ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে ছিল। বেড়া থানার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও কয়েকজন পিস কমিটির মেম্বারদের চিনতাম তাদের মধ্যে ছিল রইচ উদ্দিন এবং মফিজ। আমার পিতাকে যে রাজাকার এবং আলবদররা হত্যা করেছিল তাদের নাম কেউ আমাকে বলে নাই। আমিও কাউকে জিজ্ঞাসা করি নাই যে, আমার পিতাকে কারা হত্যা করেছে।
আমি জবানবন্দীতে যে পুলিশ এবং ই.পি.আর এর কথা বলেছি তারা অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। ই.পি.আর দের মধ্যে বৃশালিখার আব্দুল লতিফ ছাড়া অন্য কারো নাম মনে আসছে না। পুলিশদের মধ্যে কে কে ছিল তাদের নাম এখন মনে আসছে না। বেড়া এলাকায় কোন ই.পি.আর ক্যাম্প ছিল না। ১৯৭১ সালে ৩রা ডিসেম্বর সালে সাড়ে ছয়টার পরে সুর্য উদয় হয়েছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমাদের বৃশালিখা গ্রামটি মোটামুটি বড় গ্রাম। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লোকের বসবাস ছিল। আমাদের গ্রামটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা। আমাদের বাড়িটি ছিল গ্রামের মধ্যভাগে, তবে দক্ষিন প্রান্তে। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের গ্রামে ঐদিন নিহত মনু, ষষ্টি প্রামানিক, ভাদু প্রামানিক এবং জ্ঞানেন্দ্র নাথ হালদারদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে ৫০০/৬০০ গজ দূরে হিন্দু পাড়ায়। ঐ হিন্দু পাড়ায় এখনও কিছু কিছু হিন্দু সম্প্রদায়েরর লোকজন বসবাস করে। এখনও ৫০/৬০ টি বাড়ি আছে। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নাম হাবিবুর রহমান ওরফে হবি। আমাকে ফেরি ঘাটে পানিতে ফেলে দেয়ার পর থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্য আমাকে দেখেছিল কিনা বলতে পারি না, তবে আমি কোন রাজাকার, আলবদর, পিস কমিটির সদস্যদের উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সামনা সামনি দেখি নাই। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব একজন বেসামরিক লোক ছিলেন, তবে তিনি আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টফ/প্রধান ছিলেন। আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ ছাড়া অন্য কোন পদবী সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। আলবদর বাহিনীর সদস্যরাও বেসামরিক বাহিনীর লোক ছিল। বেড়া থানার আলবদর বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। পাবনা জেলা সদরের পিস কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যদের আমি চিনি না। নগরবাড়ি-আরিচা ফেরি ঘাটে ১৯৭১ সালে কয়টি ফেরি চলাচল করতো তাহা আমার মনে নাই। আমরা যখন নগরবাড়ি ফেরি ঘাটে ছিলাম তখন আমাদের নিকট কোন ওয়ারলেস সেট ছিল না। বিজয় অর্জনের পরে আমার পিতার হত্যাকান্ড সংক্রান্তে আমি কোন মামলা করি নাই এবং আমাকে মামলা করতে কেউ বাধা দেয় নাই। আমার স্কুলের সিনিয়র ছাত্র রফিকুন নবী বাবলুকে আমি চিনি। তার বাড়িতে আমার যাতায়াত নাই। বিজয় অর্জনের পরে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকজন রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী গ্রেফতার হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনে আমাদের এলাকায় আমি প্রভাবশালী ছিলাম কিনা তাহা আমি বলতে পারি না, অন্য লোকেরা বলতে পারে। বিজয় অর্জনের পর পরই সার্কেল অফিসারকে আহবায়ক এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কার কি ভূমিকা ছিল তাহা তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। যে সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমার পিতাকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল তাহা আমি শুনেছি। যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা হল জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং অভাবী সাধারণ মানুষ যাদেরকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বা পেটের দায়ে তারা গিয়েছিল। ১৯৭০/১৯৭১ সালে নেজামে ইসলাম বা পি,ডি,পি নামে কোন সংগঠন আমাদের এলাকায় ছিল না। ১৯৭০/১৯৭১ সালে একটি মাত্র পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক ২/৩ দিন পর পর আসতো। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে অনেক রাজাকার আলবদরদের চিনতাম, তবে তাদের সংখ্যা বলতে পারব না। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুল সহ মফস্বলের কোন স্কুলেই ছাত্র রাজনীতি ছিল না। সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ ছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। ঐ সময় কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত ছিল না। আমাদের কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন করতো এমন ছাত্রের মধ্যে অনেককেই চিনতাম তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল লাল। বিজয় অর্জনের পর যে সকল রাজাকার আত্মসমর্পন করেছিল তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এই কারণে যে, তারা সকলেই স্থানীয় লোকজনের আত্মীয় স্বজন ছিল।
অদ্য আসামীর কাঠগড়ায় একজন মাত্র ব্যক্তি উপস্থিত আছেন এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই পাবনা থেকে এসেছি।
“ঈড়হঃৎধফরপঃরড়হ...” একথাগুলি আমি তদন্ত কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আগষ্ট মাসের “সম্ভবত ১৫” তারিখে কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর, রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি এই কথাগুলির মধ্যে “মতিউর রহমান নিজামী সাহেবেরে অনুগত” এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ধরা পড়ার পর আমাদেরকে বেড়া থানার আর্মি ও আলবদরদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করে এই কথাগুলির মধ্যে, “আলবদরদের” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি আরও শুনতে পাই যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বাবাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, এই কথাগুলির মধ্যে “নির্দেশে” শব্দটি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে। “পতিরামপুর/মালঞ্চ” ক্যাম্পে আমি ট্রেনিং নিয়েছিলাম একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত আলবদর ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি একথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। একজন আর্মি অফিসারের সঙ্গে ফেরির উপর মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে কথা বলতে দেখেছি ইহা অসত্য, সত্য নহে। আমাকে বস্তায় ইট বেধে ফেরির উপর থেকে ফেলে দেওয়া অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার বাবা মালঞ্চ/পতিরামপুর থেকে ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে ফিরে আসলে স্থানীয় আলবদর সদস্যরা আলবদর বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নিকট খবর দেয় মর্মে যে বক্তব্য আমি দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আমার পিতার হত্যাকান্ড ঘটে মর্মে আমি জবানবন্দীতে যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আলবদর বাহিনী সম্পর্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাহাও অসত্য, ইহা সত্য নহে। ঐ সময় আমার কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব না থাকায়, ছাত্র ইউনিয়নের ......... ছাড়া অন্যদের ..............., সাথিয়াতে কোন কলেজ না থাকায়, সুজানগর এবং আটঘরিয়ায় কোন কলেজ থাকা না থাকা সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকায়, ঐ সময় মফস্বল স্কুল সমূহে ছাত্র রাজনীতি না থাকায় এবং ঐ এলাকার কোন মাদ্রাসায় আমার যাতায়াত না থাকায় ইসলামী ছাত্র সংঘকে জড়িয়ে যে সাক্ষ্য প্রদান করলাম তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ও নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আমাদের এলাকায় থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য প্রদানের আরও একটি কারণ হলো তিনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন