২১/৭/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনী জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রয়োগের প্রশ্নে দুই ধরনের মত দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। লিখিত মতামতে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক টি এইচ খান বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করে ৫ ফেব্রুয়ারি। তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। যে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালস আইনে সংশোধন আনা হয়। এ সংশোধনে যেকোন দণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে আপিল দায়েরের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এর আগেই কাদের মোল্লার মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ সংশোধনী প্রয়োগের সুযোগ নেই। তবে তার সাথে দ্বিমত পোষন করে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা রয়েছে। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যেই আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এ কারণে এ সংশোধন তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। টি এইচ খানের পক্ষে তার লিখিত মতামত আদালতে উত্থাপন করেন অ্যাডভোকেট ফয়সাল এইচ খান।
অসুস্থতার জন্য আদালতে আসতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করে লিখিত মতামতে টি এইচ খান বলেন, আদালত দুটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। একটি ইস্যু হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের ক্ষেত্রে প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? শুধুমাত্র হ্যাঁ বা না এর মধ্যে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। এটা প্রতিষ্ঠিত নীতি যে, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে বিভেদ দেখা দিলে দেশীয় আইনই প্রাধান্য পাবে। সাধারণত দেশীয় আদালত দেশীয় আইন অনুসরণ করেন। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আইন পূর্ণাঙ্গ নয়, যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে দেশীয় আদালত আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মিমাংসিত সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’র কোনো সংজ্ঞা নেই। বাংলাদেশের অন্য কোনো আইনেও এ অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগকে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারির আইনে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে। তবুও তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা। কারণ, তার মামলার কার্যক্রম আগেই শেষ হয়েছে।
ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনালস আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনীকে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে, আইনে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া যাবেনা। ট্রাইব্যুনাল আইনটিকে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো মৌলিক অধিকার নেই। অভিযুক্ত ব্যক্তি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো রিটও দায়ের করতে পারেন না। এ আইন নিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন না। সংবিধানে এক্ষেত্রে বাধা রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। মূল আইনে সাজা বাড়াতে সরকার পক্ষের আপিলের বিধান না থাকলেও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে সরকারকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকার ও আসামী দু-পক্ষই আপিল দায়ের করে। এ আপিলের শুনানিকালে উত্থাপিত আইনি প্রশ্নের মিমাংসায় গত ২০ জুন সাত জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে যে ভূতাপে কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না?
এ বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ইতোমধ্যে সিনিয়র আইনজীবী রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম ও আজমালুল হোসেন কিউসি মত দিয়েছেন। আরো মতামত দিবেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও কাদের মোল্লার পে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন