বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৩

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জেরা : দিনভর দফায় দফায় উত্তেজনা দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে


মেহেদী হাসান
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে জেরার সময় আজ দিনভর ট্রাইব্যুনালে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বংশ পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর প্রথম প্রশ্ন  থেকেই তীব্র হৈচে এবং বাকবিতন্ডা শুরু হয় । সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার সহজসুলভ ভঙ্গিতে সবসমসয় হাসি এবং রসিকতা ছড়িয়ে উত্তর দিয়েছেন জেরার ।  আইনজীবীর কিছু কিছু প্রশ্নে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে জবাব দিয়েছেন তা মাঝে মাঝে হাসির রেশ ছড়িয়েছে পুরো ট্রাইব্যুনালে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জেরা করেন।

জেরা :
প্রশ্ন : আপনার বংশ পরিচয় চৌধুরী নয়।
উত্তর : আমার বংশ পরিচয় সেনও না, পালও না দাসও না। আমার বংশ পরিচয় চৌধুরী।
প্রশ্ন : চৌধুরী সাহেব আপনার আদি বংশ পরিচয় কি?
উত্তর : আমার শরীরের গঠন থেকেই বুঝতে পারছেন আমি বাঙ্গালী বংশো™ভ’ত নই। আমাদের পূর্ব পুরুষ বাইরে থেকে এসেছে। তবে চিটাগাংয়ের লোক নিজেদের  বাঙ্গালী দাবি করেনা। আমরাও করিনা। আমরা বাংলাদেশী।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনাদের পূর্ব পুুরুষ লস্কর। তারা ভারতের গৌড় থেকে এসেছে।
উত্তর : সত্য নয়। এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি যতদূর জানি স্যার আপনাদের এলাকার (চেয়ারম্যানের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকায়) লোক গৌড় থেকে এসেছে। মেঘনা পাড়ি দিয়ে গৌড়ের কেউ চট্টগ্রামে যায়নি।
প্রশ্ন : ২ জুলাই আপনি যে চারটি প্রদর্শনী দাখিল করেছেন তা  পড়ে জেনে বুঝে শুনে দাখিল করেছেন।
উত্তর  : আমি পড়িনি। আমার উকিলরা হয়ত পড়েছেন।
প্রশ্ন : ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী না জেনে বুঝে দাখিল করার কোন সুযোগ নাই।
উত্তর : আমার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা এটা দাখিল করেছেন। তারা পড়েছেন বা বুঝে শুনে করেছেন কি-না তা তারা জানে। আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনার সাক্ষ্যের পক্ষে আপনি কোন ডকুমেন্ট, পেপার কাটিং, সাময়িকী, বই দাখিল করেননি।
উত্তর : আমরা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পরে দাখিল করব।
প্রশ্ন : আপনার জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৩ মার্চ রাউজানের  গহিরায় এক বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারে।
উত্তর : সত্য নয়। চট্টগ্রাম শহরে মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। বাঙ্গালী মুসলিম পরিবার নয়।
প্রশ্ন : আপনার মাতৃভাষা কি?
উত্তর : চাটগাইয়া।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনার মাতৃভাষা বাংলা।
উত্তর : সঠিক নয়। তবে আমার বায়ের বাড়ি কুমিল্লা। এটা ত্রিপুরার সাথে যুক্ত ছিল।
প্রশ্ন : আপনার নয়দিন ব্যাপী জবানবন্দী চার্জের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
উত্তর : সত্য নয়। আমার প্রত্যেকটা বাক্য, প্রত্যেকটা শব্দ চার্জের সাথে সম্পৃক্ত। যারা আমার জবানবন্দী পড়েছে তারা এটা বুঝবেন।  আপনিতো জবানবন্দী পড়েননি।
প্রশ্ন : চাটগাইয়া ভাষার কোন বর্নমালা আছে?
উত্তর : আছে। সিরাজগঞ্জের ড. আযম এটি লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
প্রশ্ন : চৌধুরী সাহেব, আপনিতো অনেক পড়াশুনা করা লোক। ১৯০৫ সালের পার্টিশান অব বেঙ্গল গভর্নমেন্ট রেজুলেশন পড়েছেন নিশ্চয়ই।
উত্তর : পড়েছি।
প্রশ্ন : জেয়াদ আল মালুম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র প্রথম  খন্ডে বর্নিত সে রেজুলেশন থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনান যেখানে বাংলা কোন এলাকা নিয়ে গঠিত তা বর্নিত আছে এবং আসাম যে বাংলার সাথে ঢাকার অধীনে আসাবে তা উল্লেখ করা আছে।   এরপর বিষয়টির প্রতি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উত্তর : ঠিক আছে।
প্রশ্ন : একইভাবে ইন্ডিয়ান  ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট অব ১৯৪৭ ও আপনার পড়া এবং জানাশোনা আছে নিশ্চয়ই।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ভারত এবং পাকিস্তানের সীমানা বর্নিত আছে সে অংশ পড়ে শোনান জেয়াদ আল মালুম। এরপর বলেন, এই কথাগুলো এ্যক্টে উল্লেখ আছে।
উত্তর : আমার কাছে একটি রেফারেন্স থাকলে বা আরেকটি কপি থাকলে বুঝতে পারতাম আপনার কথা সঠিক কি-না। আপনি যা পড়ছেন সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই।
প্রশ্ন : আপনার এবং আপনার পিতার জন্মের বহু আগে থেকেই  চট্টগ্রাম বাংলার অংশ ছিল। কখনোই চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রামবাসী আলাদা জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃত ছিলনা। এই  ঐতিহাসিক বাস্তবতা জানা সত্বেও সত্য গোপন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী দিয়েছেন আপনি।
উত্তর : সত্য নয়। এটা বৃটিশ এডমিনিস্ট্রটেটিভ অংশ  ছিল। বহু পূর্ব থেকে একসাথে ছিল যদি বলেন তাহলে আমার ভিন্নমত আছে। ওইপনিবেশিক বৃটিশ রাজের আইনের মাধ্যমে  জাতিতত্তার স্বীকৃতি পাওয়া যায় এই ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন : স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশের সংবিধান।
উত্তর : সত্য। তবে আর্টিকেল ১৫৩ অনুযায়ী এই সংবিধানের কার্যকারিতা ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে  শুরু। এই সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে ভূতপূর্ব কার্যকারিতার কোন সুযোগ  দেয়া হয়নি।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বিষয়ে আপনি গত ১৮ জুন যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সংবিধান অবমাননার শামিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে।
উত্তর : সংবিধান সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে  এ ধরনের প্রশ্ন করছেন। আমার বক্তব্য সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংঘর্ষিক এবং অবমাননাকর তা উল্লেখ করেননি বিধায় সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করা যাচ্ছেনা।
প্রশ্ন : অনুচ্ছেদ ৭ (ক) (১), ৮ (ক) (২) অনুযায়ী সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অবমাননাকর।
উত্তর : ৭ (ক) তে সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলা আছে। আমার জবানবন্দীর মাধ্যমে কোনটা ভঙ্গ করেছি তা বলেন।
প্রশ্ন : ১৮ জুনের আপনার দেয়া জবানবন্দী সংবিধানের প্রস্তাবনার বিরোধী এবং একইভাবে অনুচ্ছেদ ১-প্রজাতন্ত্র, ২-রাষ্ট্রের সীমানা, ৩-রাষ্ট্রভাষা, ৪-জাতীয় সঙ্গীত পতাকা ও প্রতীক, ৬-নাগরিকত্ব, ৮-মূলনীতিসমূহ, ৯-জাতীয়তাবাদ, ১০-সমাজতন্ত্র তথা শোসনমুক্তি, ১২-ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ এর বিরোধী আপনার বক্তব্য। অনুচ্ছেদ ৭ (ক) (১) অনুযায়ী আপনার বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ, সংবিধান বিরোধী।
উত্তর :  আমার কোন বক্তব্য কোন আইনের কোন ধারার সাথে সাংঘর্ষিক? যেমন আমার বক্তব্যের কোন অংশ সংবিধানের প্রস্তাবনার সাথে সাংঘষির্ক এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নয় বিধায় এর জবাব দেয়া সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে আপনার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী কোন এলাকার প্রার্থী ছিলেন?
উত্তর : রাউজান, হাটহাজারী।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক মো : খালেদ এবং তার কাছে বিপুল ভোটে আপনার পিতা পরাজিত হন।
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : এই পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আপনার পিতা এবং আপনি শসস্ত্র গুন্ডাদের সাথে নিয়ে (আসামী পক্ষের আইনজীবীরা এসময় হৈচে করেন) পরাজয়ের পর থেকে রাউজানের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর শসস্ত্র হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে প্রথম সাধারন নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে রাউজানের  দণিাঞ্চলে দাঙ্গাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অনেকেকে মারপিট  এবং রক্তাক্ত যখম করা হয়। এর বিস্তারিত খবর ১৯৭০ সালের ৯ ডিসম্বের আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
উত্তর : আজাদী পত্রিকার এডিটর  খালেদ সাহেব ছিলেন আমার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী। তার পত্রিকায়  কি ছাপা হয়েছিল তা আমার জানা নেই।

আপনার ফাঁসির বাসনা আমারা পূরন করতে পারবনা :
এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ প্রশ্নের জবাবে আরো একটু ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন আমি তখন কোন প্রার্থী ছিলামনা, কোন দলের সদস্যও ছিলামনা। প্রার্থী ছিলেন আমার পিতা। কাজেই আমার গ্লানির কি আছে। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ব্যাখ্যা দিতে  চাইলে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আর দরকার নেই। আপনার কাছে জানতে মূলত জানতে চাওয়া হয়েছে আপনি পত্রিকার ওই খবরটা জানতেন কি-না। এতটুকু।
তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, একটা কথা বলতে চাই কিছু মনে করবেননা। আমার ফাঁসির রায়ে একথাটা একটু লিখে দিয়েন।

তখন চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবির বলেন, আমি ৩১ বছর সেশন জজ  হিসেবে ট্রায়াল করেছি। কাউকে কোনদিন বলতে শুনিনি আমাকে ফাঁসি দেন। এই ট্রাইব্যুনালেও আপনি ছাড়া আরো অনেক আসামী আছে। তাদেরও কাউকে বলতে শুনিনি আমাকে ফাঁসি দেন। তারা সবসময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।  কিন্তু আপনি বারবার বলছেন আমাকে ফাঁসি দেন, জেল দেন। আমি  বছর দশেক আগে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। সেটা ছিল অপরাধীদের মনস্তত্ব বিষয়ে। একজন অপরাধী যখন তার অপরাধের বিষয়ে খুব বেশি অনুশোচনায় ভোগেন তখন তিনি  বলেন, আমাকে ফাঁসি দেন, আমাকে মেরে ফেলেন, আমাকে শাস্তি দেন। আমি জানিনা আপনি ৭১ সালের কোন অনুশোচনার কারনে না কি অন্য কোন কারনে বারবার ফাসির দাবি করছেন। সেটা আপনিই জানেন, আমরা জানিনা। তবে আপনার চাওয়া অনুযায়ী আপনার ফাঁসির বাসনা পূরন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কেবল আমাদের সামনে যে সাক্ষ্য প্রমান আসবে সে অনুযায়ী বিচার করব।
তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারনে এ বিচার হচ্ছে। সেজন্য হতাশা থেকে মাঝে মাঝে একথা বলি। গাজিপুরে একটি বিচার হচ্ছে। ৬ তারিখ তার রায় হবে।

প্রশ্ন : প্রদর্শনী বি। ড. এম এ হাসান কর্র্তৃক রচিত বই-যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ। এর ১৬৩ পৃষ্ঠায় ডিটেইলস অব নেম অব পলিটিক্যাল মেম্বার অব একিউজড অব ক্রাইমস এগেন্স হিউম্যানিটি এন্ড ক্রাইম অব জেনোসাইড শিরোনামে ১০৬ জনের নামের তালিকা আছে। ১৬৬ পৃষ্ঠায় তালিকার ৯৫ ক্রমিকে ফজলুল কাদের চৌধুরী মুসিলম লীগ সভাপতি, চট্টগ্রাম উল্লেখ আছে। ৯৮ ক্রমিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মেম্বার অব মুসলিম লীগ উল্লেখ আছে।
উত্তর : সত্য। এটা ওই লেখকের অভিমত।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী সি। সিরু বাঙ্গালীর লেখা-আমার যুদ্ধ, আমার একাত্তর বইয়ের ১০৯  পৃষ্ঠায় জালালাবাদ এম্বুশ: ব্যর্থ পরিবের সাথে মতবিরোধ শিরোনামে লেখা হয়েছে-১৪ জুন সোমবার সকালে ক্যাপ্টেন করিম আমাকে নির্দেশ দিল ফজুলল কাদের চৌধুরীর ছাত্রবাহিনী হাটহাজারি লালিয়াহাটের সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এম্বুশ করে খতম করতে হবে।
১১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-চারটা হতে ছয়টার মধ্যেই সৈয়দ ওয়াদিুল আলম ও ফজুলল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী জীপ নিয়ে শহরে তাদের জিপ নিয়ে নির্যাতন কেন্দ্র গুড়সহিলের দিকে যাচ্ছে। ছয়টা বাজার আগেই দেখলাম  আমাকে যে ছেলেটি ইনফরমেশন দিয়েছে সে  দিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তার ইনফরমেশন ঠিক ছিল কি-না এব্যাপারে। সে নিশ্চিত হতে পারছিলনা। শেষ পর্যন্ত আমি প্রগ্রাম বাতিল করতে বাধ্য হলাম।  এ ঘটনার দুই দিনপর হাটহাজারি থেকে ইনফরমেশন নিয়ে আসা সেই ছেলেটির কাছে শুনেছিলাম যে, তার ইনফরমেশন আদতে একদম খাটি ছিল। কিন্তু যে কোন কারনেই হোক শত্রুরা চারটা বাজার অনেক আগেই আড়াইটার সময় রাউজানের গহিরা থেকে রহমতগঞ্জ থেকে  গুডসহিলে ফেরত আসে। সে কারনে আমাদের এম্বুশ ব্যর্থ হয়।
উত্তর  : নিশ্চয়ই উল্লেখ আছে। আপনারাই প্রমান দিলেন আমি ছিলামনা। একথা বলে হাসেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
প্রশ্ন : একই লেখকের আরেকটি বই বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল বইতেও একই তথ্য উল্লেখ আছে।
উত্তর : হ্যা। এটাই প্রমান করে আমি ওখানে যাইনি।
প্রশ্ন : আপনার শিক্ষা জীবনের কোন সনদ দাখিল করেননি।
উত্তর : ট্রাইব্যুনালে কেন নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করিনি।
প্রশ্ন : একইভাবে হল হোস্টেল বা রেসিডেন্স এর কোন ডকুমেন্টও দাখিল করেনন্ ি
উত্তর : আমি কোনদিন হলে থাকিনি।
প্রশ্ন : আপনার জবানবন্দী অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পঞ্জাব এবং লন্ডনের লিংকন ইনে পড়ার কথা সত্য নয়।
উত্তর : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং লিঙ্কন ইনে পড়ার কোন ডকুমেন্ট দাখিল করেননি।
উত্তর : আমার এসব লাগেনা।
১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টম্বর চট্টগ্রামে গেরিলা বাহিনীর আক্রমনে আঘাতের কারনে আহত হয়ে চট্টগ্রামে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ওই আক্রমনে আপনার ড্রাইভার নিহত হয়। পিটিআই পরিবেশিত এই খবর আপনার পিতা ফজলুল কাদের চৌধরুল তথ্যের ভিত্তিতে ২৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তা আপনি গোপন করেছেন আপনার জবানবন্দীতে।
উত্তর : ২০ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেই ছিলামনা।
প্রশ্ন : ১৯৭৪ সালে দেশে ফেরত আসা বিষয়ে কোন বিমান টিকেট, ভিাস পাসপোর্ট ডকুমেন্ট হিসেবে জমা দেনন।ি
উত্তর : সত্য তবে। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ১৯৭৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আমার স্থায়ী ঠিকানার কোন ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে কোন পক্ষ থেকে প্রদর্শন করা হয়নি।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৭৪ সালে বেনামে, বেআইনীভাবে দেশে এসেছেন।
উত্তর : সত্য নয়। নিজনামে আইনীভাবেই এসেছি।
প্রশ্ন : আপনি দেশে আসার পর ১৯৭৪ সালে ছদ্মবেশে ছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গেরিলা আক্রমনে আহত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে আপনি দেশ থেকে পালিয়ে যান।
উত্তর : সত্য নয়। আমি তো দেশেই ছিলামনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ঘটনায় ১৯৭২ সালে আপনার বিরুদ্ধে দালাল আইনে অনেক মামলা হয় এবং জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য আপনি আত্মগোপনে ছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়। তবে আত্মগোপন অবস্থায়, জনরোষ নিয়েও  আমি রাউজান থেকে তিনবারসহ মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।
প্রশ্ন : আত্মগোপনে থাকার কারনে ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন আপনার ছোট বোন হাসিনা চৌধুরীর বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
উত্তর : সত্য নয়। আমিই পাত্রী তুলে দিয়েছিলাম বরের হাতে। আমি সর্বক্ষন উপস্থিত ছিলাম।
প্রশ্ন : পরে আপনি গোপন আস্তানা থেকে শাড়ি এবং বোরকা পরে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে আপনার বোন এবং বোনজামাইকে আর্শীবাদ করেন।
এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, এসব প্রশ্নের কি দরকার। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, খুবই দরকারী প্রশ্ন এটা। ছয়ফুট দুই ইঞ্চি একজন মানুষ বোরখা পড়লে কি অবস্থা দাড়ায় তা দেখুক মানুষ। বলে তীব্র হাসি শুরু করলেন। এসময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে সে হাসির রেশ। এরপর এ প্রশ্নের উত্তর লেখা হয় সত্য নয় বলে।
উত্তর : ৯ দিনের দীর্ঘ জবানবন্দীতে আপনি কোথাও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেননি।
উত্তর : রাজনৈতিক নিষ্পেষনের শিকার হিসেবে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি। আমি বলেছি আমি তখন দেশেই ছিলামনা। কাজেই নির্দোষ দাবির দরকার কোথায় এখানে।
আজ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জেরা শেষ হয়েছে। আগামী ৮ জুলাই তার পক্ষে পরবর্তী সাক্ষীর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন