২৪/৭/২০১৩
জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুল মোমেন চৌধুরী। আমার বয়স ৭৩ বৎসর। আমার ঠিকানা রোড নম্বর ৪১ বাড়ী নম্বর ৪৪, গুলশান, ঢাকা।
আমি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত কুটনীতিবিদ। আমি ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদুত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ১৯৬৮ সালে সিরিয়ার দামেস্কাসে ৩য় সেক্রেটারী হিসাবে প্রথম যোগদান করি। ১৯৭০ সালে বাবার মৃত্যুতে আমি ঢাকায় এসেছিলাম। মাস খানেক ঢাকায় অবস্থান করে আমার শিশু কন্যা শ্বশুরের নিকট রেখে আমরা আবার দামেস্কাসে চাকুরীস্থলে ফিরে যাই। ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসের ২৮ তারিখে আমার স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। ঐ সময় ইন্ডিয়ান একটি বিমান হাইজাক হওয়ার কারণে ইন্ডিয়ান এয়ার স্পেস পাকিস্তানি ফাইটের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমার স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর তার সংগে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পাকিস্তান সরকার আমাকে দামেস্কাস থেকে তানজানিয়ায় বদলী করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে করাচি যাই। আমি করাচিতে আমার এক বন্ধু আব্দুল জলিলের সংগে সেন্ট্রাল গভঃ হোষ্টেল, গার্ডেন রোডে আনুমানিক দুই সপ্তাহ অবস্থান করি। ঐ সময় আমার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় আসার কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পি,আই,এ, এর কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারি নাই। ঐ সময় সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। টেলিফোনেও যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমার একই ব্যাচের সিভিল সার্ভিসের অনেক কর্মকর্তা পাকিস্তানের অনেক স্থানে কর্মরত ছিলেন ঐ সময়। তখন আমার ব্যাচমেট মিঃ হাবিবুন নবী আশিকুর রহমান সিন্ধু সরকারের অধীনে কর্মরত আছে। তখন আমি উনার খোঁজ করে একদিন তার অফিসে যাই। যখন আমি উনার অফিসে যাই তখন উনার অফিসে একজন ভদ্রলোক বসা ছিলেন। আমি উক্ত ভদ্রলোককে পূর্বে চিনতাম না। আশিকুর রহমান সাহেব তার সংগে আমার পরিচয় করিয়ে দেন যে, তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আশিকুর রহমান সাহেবও ঐ সময় করাচি থেকে আমার পরিবারের সংগে কোন রকম যোগাযোগ করে দিতে সক্ষম হননি। উনার অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থানের পরে আমি গর্ডেন রোডে ফিরে আসি। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে অবস্থানকালে দুইজনের কথা প্রসংগে জানতে পারলাম কাইউম রেজা চৌধুরীও করাচিতে অবস্থান করছেন। কাইউম রেজা চৌধুরী সাহেবকেও আমি ঐ সময় ভালভাবে চিনতাম না যদিও আমার শ্বাশুড়ীদের সংগে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে যাওয়ার আনুমানিক এক সপ্তাহ পরে কাইউম রেজা চৌধুরী আমার গার্ডেন রোডের বাসায় হঠাৎ একদিন আসে। তখন আমি আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন তারা নিরাপদে আছে। কিন্তু কোথায় আমার পরিবার আছে তাহা বলতে পারলেন না। আমি চিন্তার মধ্যে থাকলাম। ফকরউদ্দিন সাহেব যিনি পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন তার পরামর্শক্রমে আমি দামাস্কাস হয়ে পরবর্তীতে তানজানিয়ায় চলে গেলাম। ১৯৭১ সালে আমি কখনও পূর্ব পাকিস্তানে আসি নাই।
জেরা ঃ
আমি অদ্য আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসভবন থেকে অত্র ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করতে এসেছি। (চলবে)
জেরা ঃ-
আমি অদ্য আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসভবন থেকে অদ্য ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করতে এসেছি। আমি অদ্য ট্রাইব্যুনালে জেনে শুনে বুঝেই সত্য কথা বলার জন্য এসেছি। আমি গুলশান থেকে বেলা ১১.০০ টার সময় গাড়ি যোগে ট্রাইব্যুনালে এসেছি। আমার জন্য একটি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। সেই গাড়িতেই আমি এসেছি। আমাকে কোর্টে আসার জন্য ব্যারিস্টার এ,কে,এম ফখরুল ইসলাম সাহেব টেলিফোনে বলেছিলেন। অদ্য তারিখে পূর্বে থেকে আমি জানতাম অদ্য মামলায় আমাকে সাফাই সাক্ষ্য দিতে হবে। আজ থেকে সাত থেকে দশ দিন আগে জনাব এ,কে,এম ফখরুল ইসলাম সাহেব আমাকে এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে হবে একথা বলেছেন আমি ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তান সরকারের সরকারী চাকুরীতে যোগদান করি। আমার চাকুরী ফরেন সার্ভিসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নাই। আমি অক্টোবর ১৯৬৬ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করি। ১৯৬৮ সালের সেপ্টম্বর মাসে সিরিয়ার দামেস্কোতে যোগদান করি এবং ১৯৯৭ সালে আমার বয়স ৫৭ বৎসর পূর্ন হওয়ায় আমি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করি। ঐ সময় আমি ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রদূত হিসাবে কর্মরত ছিলাম। ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি একনাগাড়ে পাকিস্তান সরকারে অধীনে চাকুরীরত ছিলাম। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন কালীন সময়ে আমি সিরিয়ার দামাস্কাস কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখান থেকে নির্বাচনের ফলাফল অবগত হয়েছিলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল তাহা আমি জানতাম। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল ও নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় সে খবর আমি বিস্তারিত জানতাম না। ২৫ শে মার্চ রাত্রে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ তারিখের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন একথা আমি জানতাম এবং স্বাধীনতার ঘোষনার পর পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার আলোকে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল তাহা আমার জানা আছে। প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাস যাবৎ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। ২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনায় উজ্জীবিত হয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত দেশ প্রেমিক বাঙ্গালী অফিসাররা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিল তাহা আমি জানতাম। তাদের মধ্যে ছিলেন হোসেন আলী, জনাব হুমায়ন রশিদ চৌধুরী প্রমুখ উল্লেখ যোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তখাত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এদেশিয় সহযোগী সহ আত্মসমর্পন করে এবং আত্মসর্ম্পন দলিলেও স্বাক্ষর করে আমি জানতাম। আমি সহ কুটনীতিবিদরা ‘‘হোয়াইট লাই” “ঞরিংঃবফ াবৎংব” এই শব্দগুলির সাথে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের চাকুরীর মোহ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি নাই বা করার চেষ্টা করি নাই ইহা সত্য নয়। কাইয়ুম রেজা চৌধুরী সাহেব আমার ভায়রা। কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব পরস্পর আত্মীয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমার কোন আত্মীয় নহেন, তবে কাইয়ুম রেজা চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব পরস্পর কাজিন বিধায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব আমার আত্মীয়ের আত্মীয়। ১৯৭১ সালে ফকরুদ্দিন সাহেব পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ কওে বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন ইহা সত্য নহে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের গুডসহিল রাউজান ও রাউজান চট্টগ্রাম এলাকায় সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার চলছে-
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে করাচি যাই। আমি করাচিতে আমার এক বন্ধু আব্দুল জলিলের সংগে সেন্ট্রান গভঃ হোষ্টেল, গার্ডেন রোডে আনুমানিক দুই সপ্তাহ অবস্থান করি। ঐ সময় আমার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় আসার কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পি,আই,এ, এর কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারি নাই। ঐ সময় সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। টেলিফোনেও যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমার একই ব্যাচের সিভিল সার্ভিসের অনেক কর্মকর্তা পাকিস্তানের অনেক স্থানে কর্মরত ছিলেন ঐ সময়। তখন আমার ব্যাচমেট মিঃ হাবিবুন নবী আশিকুর রহমান সিন্ধু সরকারের অধীনে কর্মরত আছে। তখন আমি উনার খোঁজ করে একদিন তার অফিসে যাই। যখন আমি উনার অফিসে যাই তখন উনার অফিসে একজন ভদ্রলোক বসা ছিলেন। আমি উক্ত ভদ্রলোককে পূর্বে চিনতাম না। আশিকুর রহমান সাহেব তার সংগে আমার পরিচয় করিয়ে দেন যে, তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আশিকুর রহমান সাহেবও ঐ সময় করাচি থেকে আমার পরিবারের সংগে কোন রকম যোগাযোগ করে দিতে সক্ষম হননি। উনার অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থানের পরে আমি গর্ডেন রোডে ফিরে আসি। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে অবস্থান কালে দুইজনের কথা প্রসংগে জানতে পারলাম কাইউম রেজা চৌধুরীও করাচিতে অবস্থান করছেন। কাইউম রেজা চৌধুরী সাহেবকেও আমি ঐ সময় ভালভাবে চিনতাম না যদিও আমার শ্বাশুড়ীদের সংগে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আশিকুর রহমান সাহেবের অফিসে যাওয়ার আনুমানিক এক সপ্তাহ পরে কাইউম রেজা চৌধুরী আমার গার্ডেন রোডের বাসায় হঠাৎ একদিন আসে। তখন আমি আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন তারা নিরাপদে আছে। কিন্তু কোথায় আমার পরিবার আছে তাহা বলতে পারলেন না এইকথাগুলো অসত্য ইহা সত্য নয় আমার উল্লেখিত কথাগুলো হোয়াইট লাই, ঞরিংঃবফ াবৎংব নহে। তবে কুটনীতিবিদরা সৎ তবে দেশের স্বার্থে অনেক সময় অসত্য কথা বলতে হয়।
তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সরকারের চাকুরী বিধিমালা অনুসারে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বদলী করলে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের সময়ে নির্ধারন করে দেওয়া হত ইহা সত্য নয়। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে পাকিস্তান আমলে দামাস্কাস থেকে তানজানিয়াতে বদলী আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে যোগদান করার নির্দেশ থাকার কথা ছিল, ইহা সত্য নহে। এই ট্রাইব্যুনালে শপথ নিয়ে আমি অদ্য যে সাক্ষ্য প্রদান করেছি সেই সাক্ষ্যের সমর্থনে কোন দালিলিক প্রমানপত্র আমার নিকট নাই, তবে আমার চাকুরী সংক্রান্ত কাগজপত্র আমার নিকট নাই, তবে চাকুরীর কাগজপত্র আমার নিকট আছে। সাক্ষ্যের মধ্যে বিভিন্ন দেশে ঐ সময় আমি যে ভ্রমন করেছি সেই সংক্রান্তে কোন ডকুমেন্ট আমার নিকট নাই। ১৯৭১ সালে করাচি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ছিল। ঐ সময় করাচি এয়ারপোর্টে বিদেশী এয়ারলাইন্স যাতায়াত করতো। ১৯৭১ সালে টেলিকমিউনিকেশন চালু ছিল কি না তাহা আমি জানি না কারণ আমি তখন পাকিস্তানে ছিলাম না। ঢাকা করাচি টেলিকমিউনিকেশন কবে বন্ধ হয়েছিল এবং কখন পুনরায় চালু হয়েছিল এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নাই। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দালালিতে ব্যস্ত ছিলাম, প্রকৃত সত্য জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের সংগে আত্মীয়তার সূত্রধরে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে অত্র ট্রাইব্যুনালে শপথ গ্রহণ করে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম ইহা সত্য নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন