জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। আজ সকালে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আইনজীবীদের জানিয়ে দেন।
হরতালের কারণে গতকাল ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের পক্ষের কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। মুজাহিদের মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ট্রাইবুনালে ছিলেন।
তিনি বলেন, মুজাহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। আমরা স্যা ও দালিলিক প্রমাণের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছি।
এর আগে গত ৫ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষামান ঘোষনা করেন।
এ দিকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলা রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ চতুর্থ রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এর আগে একই ট্রাইব্যুনাল মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোলার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করে।
অপর দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় রায় ঘোষণা করে। একই ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।
মামলার রায় ঘোষণার বিষয়ে মুজাহিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের একটিও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান তার সাক্ষ্যে বলেছেন, রাজাকার ও আল-বদরের কোন তালিকায় মুজাহিদের নাম পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আর রাষ্ট্রপক্ষের দালিলিক এভিডেন্স সন্দেহের বেড়াজালে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খবই দুর্বল। আর অভিযোগগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাক্ষ কোন সাক্ষ্য প্রমান আনতে পারেনি। আমরা আশা করি মুজাহিদ সাহেব ন্যায় বিচার পাবেন। বিচারে তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ:
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর চামেলীবাগ বাসা থেকে ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে ৭/৮ জন যুবক মিনিবাসে তুলে করে নিয়ে যায়। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযোগে বলা হয়, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ’৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ঠগ বাছিতে গা উজাড়’ শিরোনামে এক প্রবন্ধ লিখেন। ওই প্রবন্ধ প্রকাশের পর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ‘অতএব ঠক বাছিও না’ শিরোনামে পাল্টা প্রবন্ধ ছাপা হয়। এছাড়া তিনি আল-বদরদের লক্ষ্যে পরিণত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুজাহিদ, জনৈক হাম্মাদ মাওলানা, ৮-১০ জন অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনারা ফরিদপুরের তিনটি হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি ও বালাডাঙ্গিতে হামলা চালায়। ওই হামলায় ৫০-৬০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নিহত হন।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের জুন মাসের ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে পুরাতন সার্কিট হাউসে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত মুজাহিদের ইঙ্গিতে রাজাকার ও অবাঙালিরা তাঁকে নির্যাতন করে। রাতে রণজিৎ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চতুর্থ অভিযোগে মুজাহিদের বিরুদ্ধে আবু ইউসুফ ওরফে পাখির উপর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয় আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে রাজাকাররা আটক করার পর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর মুজাহিদের পরামর্শে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের ৩০ আগস্ট আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামী নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন এবং পাকিস্তানি একজন ক্যাপ্টেনকে বলেন যে, প্রেসিডেন্টের সাধারণ মা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। মুজাহিদ তাঁর সঙ্গীদের সহযোগিতায় তাঁদের অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে মুজাহিদ বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন। ওই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড শুরু হয়।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করে। সেখানে বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেণ সিকদার, সানু সাহা, জগবন্ধু মিত্র, জলধর মিত্র, সত্য রঞ্জন দাস, নরদ বন্ধু মিত্র প্রমুখকে হত্যা করা হয়।
মামলার বিবরণ: গত ৭ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত মোট চারদিন রাষ্ট্রপক্ষ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ২ জুন মুজাহিদের পক্ষে অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার আইনগত বিষয়ে উপস্থাপন করেন আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ৫ জুন মামলার কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। এরপর সংক্ষিপ্তভাবে ওই যুক্তির জবাব দেন আসামীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী।
গত বছরের ২৬ আগস্ট আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে শাহরিয়ার কবিরের সাক্ষ্য গ্রহনের মধ্য দিয়ে স্যাগ্রহণ শুরু হয়। এরপর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
অপরদিকে মুজাহিদের পক্ষে আদালত তিনজন ডিফেন্স সাক্ষী সীমিত করে দেয়ার পর মুজাহিদের ছোট ছেলে আলী আহমদ মাবরুর (জব্দ তালিকার) একমাত্র ডিফেন্স স্বাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।
গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদকে নির্যাতন, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং মুজাহিদ একক ও দলবদ্ধভাবে জড়িত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সহযোগিতা ও নির্দেশ দানের মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ আনা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
হরতালের কারণে গতকাল ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের পক্ষের কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। মুজাহিদের মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ট্রাইবুনালে ছিলেন।
তিনি বলেন, মুজাহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। আমরা স্যা ও দালিলিক প্রমাণের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছি।
এর আগে গত ৫ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষামান ঘোষনা করেন।
এ দিকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলা রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ চতুর্থ রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এর আগে একই ট্রাইব্যুনাল মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোলার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করে।
অপর দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় রায় ঘোষণা করে। একই ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।
মামলার রায় ঘোষণার বিষয়ে মুজাহিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের একটিও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান তার সাক্ষ্যে বলেছেন, রাজাকার ও আল-বদরের কোন তালিকায় মুজাহিদের নাম পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আর রাষ্ট্রপক্ষের দালিলিক এভিডেন্স সন্দেহের বেড়াজালে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খবই দুর্বল। আর অভিযোগগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাক্ষ কোন সাক্ষ্য প্রমান আনতে পারেনি। আমরা আশা করি মুজাহিদ সাহেব ন্যায় বিচার পাবেন। বিচারে তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ:
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর চামেলীবাগ বাসা থেকে ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে ৭/৮ জন যুবক মিনিবাসে তুলে করে নিয়ে যায়। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযোগে বলা হয়, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ’৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ঠগ বাছিতে গা উজাড়’ শিরোনামে এক প্রবন্ধ লিখেন। ওই প্রবন্ধ প্রকাশের পর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ‘অতএব ঠক বাছিও না’ শিরোনামে পাল্টা প্রবন্ধ ছাপা হয়। এছাড়া তিনি আল-বদরদের লক্ষ্যে পরিণত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুজাহিদ, জনৈক হাম্মাদ মাওলানা, ৮-১০ জন অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনারা ফরিদপুরের তিনটি হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি ও বালাডাঙ্গিতে হামলা চালায়। ওই হামলায় ৫০-৬০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নিহত হন।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের জুন মাসের ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে পুরাতন সার্কিট হাউসে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত মুজাহিদের ইঙ্গিতে রাজাকার ও অবাঙালিরা তাঁকে নির্যাতন করে। রাতে রণজিৎ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চতুর্থ অভিযোগে মুজাহিদের বিরুদ্ধে আবু ইউসুফ ওরফে পাখির উপর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয় আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে রাজাকাররা আটক করার পর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর মুজাহিদের পরামর্শে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ’৭১ সালের ৩০ আগস্ট আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামী নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন এবং পাকিস্তানি একজন ক্যাপ্টেনকে বলেন যে, প্রেসিডেন্টের সাধারণ মা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। মুজাহিদ তাঁর সঙ্গীদের সহযোগিতায় তাঁদের অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে মুজাহিদ বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন। ওই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড শুরু হয়।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করে। সেখানে বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেণ সিকদার, সানু সাহা, জগবন্ধু মিত্র, জলধর মিত্র, সত্য রঞ্জন দাস, নরদ বন্ধু মিত্র প্রমুখকে হত্যা করা হয়।
মামলার বিবরণ: গত ৭ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত মোট চারদিন রাষ্ট্রপক্ষ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ২ জুন মুজাহিদের পক্ষে অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার আইনগত বিষয়ে উপস্থাপন করেন আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ৫ জুন মামলার কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। এরপর সংক্ষিপ্তভাবে ওই যুক্তির জবাব দেন আসামীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী।
গত বছরের ২৬ আগস্ট আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে শাহরিয়ার কবিরের সাক্ষ্য গ্রহনের মধ্য দিয়ে স্যাগ্রহণ শুরু হয়। এরপর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
অপরদিকে মুজাহিদের পক্ষে আদালত তিনজন ডিফেন্স সাক্ষী সীমিত করে দেয়ার পর মুজাহিদের ছোট ছেলে আলী আহমদ মাবরুর (জব্দ তালিকার) একমাত্র ডিফেন্স স্বাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।
গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদকে নির্যাতন, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং মুজাহিদ একক ও দলবদ্ধভাবে জড়িত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সহযোগিতা ও নির্দেশ দানের মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ আনা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন