বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২
মহকুমা, জেলা থানা শান্তি কমিটির আহবায়কদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন তা বলতে পারলেননা তদন্ত কর্মকর্তা
মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের জেরা চলছে। তাকে জেরা করছেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। আজ জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয় ১৯৭১ সালে মহকুমা, জেলা এবং থানা পর্যায়ে শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন অন্য মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় ব্যবহার করেছেন।
আজ জেরা শেষ করার অনুরোধ : আজ জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামকে বলেন, আগামীকাল বৃহষ্পতিবারের মধ্যে জেরার শেষ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। মিজানুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমার ১২টি সেশন পাব বলে আশা করছি। আগামীকাল শেষ করলে আমার ১১টি সেশন হবে। তারপরও আমি চেষ্টা করব কালকের মধ্যে শেষ করার। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমি জানি মিজানুল ইসলাম চেষ্টা করলে শেষ করতে পারবেন।
এরপর জেরা শুরু হয়। জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।
জেরা :
প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে ভিন্ন কোন শান্তি কমিটি হয়েছিল?
উত্তর : এ মুহুর্তে ডকুমেন্টে খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : মৌলভী ফরিদ আহমেদ শান্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আছে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির ১৪০ সদস্যের মধ্যে ফরিদ আহমেদ নামে একজনের নাম আছে। তিনি মৌলভী ফরিদ আহমেদ কি-না বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন বৈঠকের কোন কার্যবিবরনী সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কোন সাধারন সভার কোন খবরের পেপারকাটিং সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
উত্তর : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান এবং দৈনিক পয়গাম আছে।
প্রশ্ন : ১৩/৪/১৯৭১ তারিখের আজাদ পত্রিকার খবরে একটি শোভাযাত্র আয়োজনের আহবানের খবর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই খবরে শোভাযাত্রা আয়োজনের বিষয়টি কোথায় বসে কত তারিখের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সে বিষয়টি উল্লেখ নেই।
উত্তর : নাই। তবে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে শোভাযাত্রার কথা বলা আছে।
প্রশ্ন : ওই খবরে কোন বিবৃতিকারীর নাম নাই।
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : দৈনিক পয়গাম এবং দৈনিক পাকিস্তানের খবরেও একই কথা বলা আছে।
উত্তর : দৈনিক পয়গামে আরো বলা আছে নাগরিক শান্তি কমিটির উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে এক শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্ন : মহকুমা, জেলা শান্তি কমিটির যারা আহবায়ক ছিলেন তাদের মধ্যে কতজন জামায়াত করতেন?
উত্তর : সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পটুয়াখালিতে দৈনিক সংগ্রাম বিতরন হত কি-না।
উত্তর : এ মর্মে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সব জায়গায় এসব পত্রিকায় যেত।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের সংগ্রামের সার্কুলেশন কত ছিল?
এ প্রশ্নের পর প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালও আপত্তি করেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালে সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করা। সংগ্রামের খবর. অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য, বিবৃতি পড়ে কি পরিমান লোক উদ্বুদ্ধ হত তা জানার জন্য সংগ্রামের সার্কুলেশন তখন কত ছিল তা জানা দরকার। অনেকে টিভিতে বলে বেড়াচ্ছেন শুধুমাত্র সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কপি জমা দিয়েই গোলাম আযমের ফাঁসি দেয়া যায়। আর কিছু লাগেনা। কাজেই সংগ্রাম তখন কত ছাপা হত এটা জানা খুবই দরকার। শেষে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নেই। কাজেই এ প্রশ্ন যাবেনা। এরপর মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন কয় থানায় সংগ্রাম বিলি হত। ট্রাইব্যুনাল বলেন এ প্রশ্নও যাবেনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে থানা, জেলা এবং মহকুমার দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন এমন কতজনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য লিখিত নোটিশ দিয়েছিলেন?
উত্তর : আমি কোন সাক্ষীকেই লিখিত নোটিশ দেইনি আমার কাছে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
প্রশ্ন : কতজন সেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ২ জন।
প্রশ্ন : কতজন সাবসেক্টর কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : ১ জন।
প্রশ্ন : এদের নাম কি?
উত্তর : মেজর জেনারেল (অব) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, মেজর (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং জনাব মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
প্রশ্ন : বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কতজন জেলা কমান্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তদন্তকালে আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন এবং জেলাগুলোর নাম কি?
উত্তর : ১৫টি। চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, এবং ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া।
প্রশ্ন : বর্তমান মামলার ফরমাল চার্জের সাথে কতজন সাক্ষীর জবানবন্দী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে জানেন?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : অন্য কোন মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : (তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে বলেন করিনাই। এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় করেছেন। একটু দেখেন। এরপর বেলা একটা বেজে যায় এবং এ প্রশ্নটি এবং উত্তর অমিমাংসিত রেখে ট্রাইব্যুনাল বিরতিতে যান। দুইটায় আবার ট্রাইব্যুনাল বসলে মিজানুল ইসলাম প্রশ্নটি করেন। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন “জি অন্য একটি মামলার জবানবন্দী এ মামলায় ব্যবহার করেছি। সেটা হল ধর্মান্তর সংক্রান্ত। অন্য মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন : যে মামলার জবানবন্দী ব্যবহার করেছেন সেই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম কি?
উত্তর : আমার রেকর্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নেই।
প্রশ্ন : সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নাম কি?
উত্তর : আব্দুর রাজ্জাক খান, হেলাল উদ্দিন এবং নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন : তাদেরকে এ মামলায় সাক্ষী করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের রেকর্ডকৃত বা জব্দকৃত কোন আলামত আপনি এ মামলায় ব্যবহার করেছেন কি-না।
উত্তর : কোন আলামত ব্যবহার করিনাই তবে রেকর্ডকৃত জবানবন্দী ব্যবহার করেছি।
প্রশ্ন : এ মামলায় আপনি সরকারি গোপন নথিপত্র ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর :করেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কতিপয় তথ্য সংক্রান্ত নথিপত্র আপনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আপনি বলেছেন। সেই নথির বিষয়বস্তু কি?
উত্তর : এটা গোপনীয় প্রকাশ করা যাবেনা।
প্রশ্ন : নথির কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করেছেন?
উত্তর : সরাসরি কোন অংশ ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিল করিনি। তবে সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংগৃহীত ডকুমেন্ট দাখিল করেছি।
প্রশ্ন : গোপনীয় ডকুমেন্ট ব্যবহার করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়েছেন কি-না।
উত্তর : যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি।
প্রশ্ন : ওই ডকুমেন্ট ব্যবহারে সরকার কি বাঁধা দিয়েছিল?
এ প্রশ্নের সাথে সাথে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেন এ প্রশ্নটি যাবেনা। এরপর এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন নিয়ে বেশ কিছুক্ষন উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক চলে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন, তদন্ত সংস্থা একটি স্বাধীন সংস্থা। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবে কোন ডকুমেন্ট সে ব্যবহার করবে বা করবেনা, কোনটি দাখিল করবে বা করবেনা।
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সংস্থা স্বাধীন এবং সরকারি ডকুমেন্ট ব্যবহারে তাদের অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরও তারা অনুমিত নিয়েছেন। সেজন্যই বিষয়টি এসেছে। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক উদাহরন টেনে বলেন সৌজন্যতার খাতিরে অনুমতি নেয়া হয় অনেক সময়।
প্রশ্ন : যখন অনুমতি চান তখন কয়টির অনুমতি দিয়েছিল সরকার?
উত্তর : আমি যেগুলোর অনুমতি চেয়েছি সেগুলো আমার প্রয়োজনমত ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কয়টি বধ্যভূমি আছে?
উত্তর : আটটি বধ্যভূমি, গণকবরের তালিকা আমি পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ তালিকা কে প্রস্তুত করেছে এবং আপনাকে তা কে দিয়েছে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পঞ্চগড় শহরে সংঘটিত অপরাধের দায় দায়িত্ব কার তা আপনি নির্ধারন করেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : পঞ্চগড়ে কতজন ধর্ষিতা আছে?
উত্তর : আমার কাছে এ মুহুর্তে এ তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের বা তাদের কোন আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এবং কাউকে সাক্ষীও করেননি।
উত্তর : করিনাই।
প্রশ্ন : পঞ্চগড় সদরে যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয় তার একটিরও তারিখ আপনার তদন্তে আসেনি।
উত্তর : এ মুহুর্তে বলতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ইউএনও ডিসিদের রিপোর্ট কে তলব করেছিল?
উত্তর : তদন্ত সংস্থা।
প্রশ্ন : কত তারিখ?
উত্তর : রেকর্ড না দেখে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : রেকর্ড দেখে বলেন।
উত্তর : রেকর্ড এখন হাতে নেই।
জেরার এক পর্যায়ে গতকাল মিজানুল ইসলাম বলেন, বারবার বলা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের মামলার ক্ষেত্রে আমি যেন আমার মাথা থেকে সিআরপিসি (দি কোড অব ক্রিমিানল প্রসিডিউর) ঝেড়ে ফেলে দেই। কিন্তু সিআরপিসি মামলায়ও আমি কোন দিন দেখিনি যে, কেস ডায়েরি ছাড়া কোন তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে আসেন। (তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান কেস ডায়েরি নিয়ে আসেননা সাক্ষ্য দেয়ার সময়)
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
গতকালের জেরা, ৩০/১০/২০১২, মঙ্গলবার
গোলাম আযম রাজাকার, শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা একথা সত্য নয়
পবিত্র ঈদুল আযহার পর গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ বিচার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় দিনব্যাপী জেরা চলে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের। তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান হন মো: ইউনিস। তিনি জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন, “গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।” জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সত্য নয়।”
অ্যাডভোকেম মিজানুল ইসলাম গতরাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, তার মানে হল তদন্ত কর্মকর্তার জবাব অনুযায়ী গোলাম আযম রাজাকার এবং শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। কিন্তু আসলে গোলাম আযম রাজাকার বা শান্তি কমিটির কোনটারই প্রধান ছিলেননা। আবার আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বললেন , সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান হন মো: ইউনিস। তার কাছ থেকেই তো দুই রকম উত্তর আসল।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তাকে আরো একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেটি হল “খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল কি-না।” এর জবাবে তিনি বলেছেন এরকম কোন তথ্য তার কাছে নেই।
গতকাল জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এবং প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন উপস্থিত ছিলেন।
জেরা :
প্রশ্ন : তিতাস নামে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় একটি নদী আছে নাম শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ থেকে তিতাস নদীর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানের নাম কি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : পৈরতলা রেলব্রিজ নিকটবর্তী গণকবর থেকে তিতাস নদী দেখা যায়?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : প্রত্যক্ষদর্শী যাদের কাছে শুনেছেন বলেছেন তাদের দুয়েকজনের নাম বলেন।
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : একপক্ষ ম্যাগাজিনের কূপন এবং ছবি কি দুটি ছবির সমন্বয় না একটি ছবি?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ছবিটি কার?
উত্তর : যতদুর মনে হয় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার আগে এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : তা না জানলেও এ বাহিনী মাওলানা একেএম ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে খুলনায় খানজাহান আলী রোডে আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে গঠিত হয়।
প্রশ্ন : এর তথ্যসূত্র কি?
উত্তর : স্থানীয় লোকজন বলেছে এবং তদন্তকালে পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত কোন খবর আনপার সংগ্রহে নেই?
উত্তর : এ মুহূর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : মাওলানা এ কে এম ইউসুফ সাহেব রাজাকার বাহিনী গঠন করেছেন এ মর্মে সবচেয়ে পুরনো কি ডকুমেন্ট আছে আপনার কাছে?
উত্তর : আমার কাছে নেই। তবে তদন্তে আমি এটা পেয়েছি।
প্রশ্ন : সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে হয়?
উত্তর : মো: ইউনিস। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছেন। (এ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী প্রথমে বলেছিলেন, মো :ইউনিস, জামায়াতে ইসলামী। ডিজি ইসলামী ব্যাংক, জিজি মজলিশে শুরা ইসলামী ব্যাংক। তবে উত্তরটি এভাবে না লিখে উপরোক্তভাবে রেকর্ড করা হয়। )
প্রশ্ন : রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির সময় আনছার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : গেজেট প্রকাশের পর রাজাকার বাহিনীর ডিজি ছিলেন পুলিশের ডিআইজি আব্দুর রহিম সাহেব।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে সামরিক বাহিনীর অধীনে নেয়ার পর এর প্রধান কে হয়?
উত্তর : স্মরন নেই। তবে রাজাকার বাহিনীকে জামায়াতে ইসলামী এবং পিস কমিটির লোকজন নিয়ন্ত্রন করত।
প্রশ্ন : সামরিক বাহিনীর কোন অফিসার রাজাকার বাহিনীকে অক্সিলিয়ারী ফোর্স হিসেবে নিয়ন্ত্রন করত?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : এটা জানার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক করে শান্তি কমিটি গঠনের পর তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে কি শান্তি কমিটির আহবায়ক বা চেয়ারম্যান বা সভাপতি করা হয়েছিল?
উত্তর : এরকম কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : তাহলে একপক্ষ ম্যাগাজিনে যে লেখা হয়েছে গোলাম আযম শান্তি কমিটি/রাজাকার বাহিনীর প্রধান এ তথ্যটি অসত্য।
উত্তর : (এ তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি এর উত্তর না দেয়ায় মিজানুল ইসলাম তাকে আবার অন্যভাবে সাজেশন আকারে প্রশ্নটি করেন। )
প্রশ্ন : গোলাম আযম রাজাকার বাহিনী/শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেননা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২২/২/২০১১১ তারিখে বাংলা একাডেমীর অনুকুলে কোন জিম্মানামা সম্পাদনা করেছেন কি-না। করলে কয়টায়।
উত্তর : করেছিলাম। সময় লিখিত নেই। যতদূর মনে পড়ে সত্যায়িত ফটোকটি জব্দ করার পরই তা জিম্মায় প্রদান করি।
প্রশ্ন : মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, খাজা খয়ের উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযম, মেজর আফসার উদ্দিন, আবুল কাশেম, ওয়ারাসাত হোসেন খান, তোহা বিন হাবিব এদের মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কতজন সদস্য ছিল?
উত্তর : গোলাম আযম ছাড়া অন্যরা কে কি করতেন তা জানা নেই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির নিয়ন্ত্রন, পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের একক ক্ষমতা গোলাম আযমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি-না তা প্রকাশিত খবরে উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন : এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের সভা সেটি ছিলনা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি কবে গঠন হয়?
উত্তর ৯/৪/১৯৭১।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের নীতিমালা কি ছিল?
উত্তর : শান্তি কমিটির পরবর্তী কার্যক্রমই প্রমান করে তাদের নীতিমালা কি ছিল।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা তো উত্তর হলনা। তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, যেকোন সংগঠন গঠনের সময় তার একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য বা নীতিমালা থাকে। শান্তি কমিটি গঠনের বিষয়ে আপনি এ জাতীয় কিছু পেয়েছেন কি-না। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুষ্কৃতিকারীদের আন্দোলন হিসেবে গণ্য করে তাদের ভাষায় সেই দুস্কৃতিকারীদের ধ্বংস করাই ছিল শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির কোন সাংগঠনিক কাঠামো ছিল?
উত্তর : যেভাবে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল সেভঅবে জেলা, ,মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি গঠনের পর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট ছিল?
উত্তর : ১৪০।
এরপর জেরা আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ আবার তার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন