বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আরো 2 সাক্ষীর জবানবন্দী /// “রাজাকার ও পিস কমিপির লোকদের সাথে সাঈদী সাহেবকে দেখিনাই”


mehedy hasan, 17/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  দুজন সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়েছে। এরা হলেন ১৪ তম সাক্ষী যশোরের এমরান হোসাইন এবং ১৫ তম সাক্ষী পিরোজপুরের আব্দুস সালাম হাওলাদার।
সাক্ষী আব্দুস সালাম হাওলাদার ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে তার পিতার দোকানে মাঝে মাঝে বসতেন বলে জানান।  ১৯৭১ সালে ৭ মে পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান আর্মির আগমন এবং শান্তি কমিটির লোকজন কর্তৃক  পাড়েরহাট বাজারে লুটপাটের বিবরন দেন। সাক্ষী বলেন, পাড়েরহাট বাজারে  ৭ মে শান্তি কমিটির লোকজন, আর্মি এবং পরবর্তীতে রাজাকারদের সাথেও তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালের মে মাসে  পাড়েরহাটে আর্মি আসার পর শান্তি কমিটির লোকজনের সাথে মাওলানা সাঈদী পাকিস্তান আর্মিকে অভ্যর্থনা জানান । এরপর পাকিস্তান আমি, শান্তি কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট  বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ড চালান।

১৫ তম সাক্ষীর জবানন্দী :
আমার নাম আব্দুস সালাম হাওলাদার, বয়স ৬৫ বছর।  গ্রাম বাদুরা, থানা ও জেলা পিরোজপুর। আমি গৃহস্থ  কাজ করি।  ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে আমার আব্বার দোকান ছিল আমি সেই দোকানে মাঝে মাঝে বসতাম। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ৭ই মে তারিখে পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তাদের সহযোগিতায় পাড়েরহাটের কিছু সংখ্যক লোক দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদার পাড়েরহাটের ৫/৬টি হিন্দুর দোকান লুট করে। লুটপাটের পরে পাক সেনারা আবার পিরোজপুরের দিকে রওনা করে যায়। যাদের দোকান লুট করে তারা হলেন মাখন সাহা, নারায়ন সাহা, মদন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল প্রমুখ। লুটপাটের পরের দিন আবার পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তখন ঐ সমস্ত লোকজন যথা  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদের সাহায্যে  আর্মি ব্রীজ পার হয়ে দক্ষিণ পার্শ্বে আমার চাচা নুরু খান সাহেবের বাড়িতে ঢোকে। পিস কমিটির সদস্যরা ঐ বাড়ি পাক সেনাদের দেখিয়ে দেয় এবং তারা ঐ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ঐ চাচা আওয়ামী লাগের নেতা ছিলেন। ঐ সময়ে আমার চাচা নূরু খান, তার ছেলে সেলিম খান এবং সেলিম খানের মা এরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।  যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট পরে পাক সেনারা সেখান থেকে বের হয়ে চিথলিয়া গ্রামের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ করে আমরা ধোয়া দেখতে পাই। বহু লোকজন  দৌড়াদৌড়ি করছিল । আমরা শুনতে পেলাম চিথলিয়া গ্রামের সইজুদ্দিন এবং রইজুদ্দিনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আনুমানিক আধা ঘন্টা কি ৪৫ মিঃ পরে পাক সেনারা পিস কমিটির সদস্য সহ পাড়েরহাট বাজারের দিকে রওনা করে আসে। আমি তখন ব্রীজের উত্তর পাশে লোকজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং দেখি উল্লেখিত পিস কমিটির সদস্যসহ পাক সেনারা ব্রীজ পার হয়ে পাড়েরহাটের দিকে আসে। তাদের যাওয়ার সময় এবং আসবার সময় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে তাদের সংগে দেখি নাই। পাক সেনারা পাড়েরহাট বাজারে কিছু সময় থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পরে পাড়েরহাটে পিস কমিটি গঠন হয়। সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, দানেশ মোল্লা, সফিজউদ্দিন মৌলভী, গণি, গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদেরকে নিয়ে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পাড়েরহাট বাজারে পূর্ব গলিতে ফরিকদাশের বিল্ডিং দখল করে সেখানে পিস কমিটির অফিস করা হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে পাড়েরহাট হাইস্কুলের দোতলায় রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাজাকার মোমিন, রাজ্জাক, বজলু কারী, হানিফ, মহসিনদেরকে আমি রাজাকার হিসেবে চিনি। তারা পাড়েরহাট বাজারে আসা যাওয়া করতো। তাদের সংগে কখনও আমি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই।
আমাদের পিরোজপুর ১ আসনে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব তিন বার নির্বাচন করেন। দুইবার বাবু সুধাংশু শেখর হাওলাদারের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি একজন নামকরা আইনজীবী তিনি কোন সময় সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই এবং মামলা করেন নাই। তৃতীয়বার উনি এ,কে,এম,এ আওয়াল সাহেবের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন, তিনিও সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই।

অসুস্থ সাক্ষী নিয়ে যা হল :
সকালে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।  কোর্টে আসছেন। তবে আজ তার সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন সাক্ষ্য দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় দায়িত্ব কার।  মিজানুল ইসলাম আপত্তি করেন আজ তাকে না আনার জন্য।  কিন্তু তারপরও তাকে কোর্টে আনার জন্য নির্দেশ দেন  ট্রাইব্যুনাল।

দুপুর একটার দিকে সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে থাকে। নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছু জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
এরপর তিনি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলমে বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হলেন কুলিন ব্রাক্ষ্মন আর আমরা হলাম নমশুদ্র। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে।
এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন