বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর মামলা///বেডে শুয়ে সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যবস্থার নির্দেশ ট্রাইব্যুালের


মেহেদী হাসান ,18/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে  আগামী রোববার  বিছানায়  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সেজন্য ট্রাইব্যুনাল কক্ষে সিক বেডের ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গতকাল  বুধবার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৫ তম সাক্ষী হিসেবে  জবানববন্দী প্রদান করেন  আব্দুস সালাম হাওলাদার। কিন্তু জবানবন্দীর পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই দিন আর তার জেরা করা সম্ভব হয়নি। আজও  তিনি অসুস্থ থাকায় আসামী পক্ষ তাকে কোর্টে  হাজির করেনি।

এ এছাড়া  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে   অন্য কোন নতুন সাক্ষীও  গতকাল    হাজির করেনি আসামী পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেন, আগামী  রোববার বাকী পাঁচ জন সাক্ষীকে  হাজির করতে হবে।  একই সাথে  অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষী যাতে বিছানায় শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে মর্মে  সিকবেড প্রস্তুত রাখার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২৩ তম সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে  ট্রাইব্যুনালে সিক বেডে রেখে ডাক্তারের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

আজ  সকালে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হলে  মামলার তদ্বিকারক মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী  কাঠগড়ায় যান। তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন এবং তার অসমাপ্ত জেরা শুরু হবার কথা ছিল গতকাল। তাকে জেরার শুরুতে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন আপনাদের বাকি সাক্ষীদের খবর কি? মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ তম সাক্ষী এখনো সুস্থ হয়নি। এছাড়া আমাদের হাতে আজ আর কোন নতুন সাক্ষী নেই। এরপরই ট্রাইব্যুনাল আদেশ প্রদান করেন।

আদেশ :
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আসামী  পক্ষকে সাক্ষী হাজিরের জন্য যথেষ্ঠ সময় এবং সুযোগ দেয়া হয়েছে।  আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তাদের ১৫ তম সাক্ষী অসুস্থ। আমরা তার অসুস্থতা নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমরা রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি এখানে একটি সিক বেডের ব্যবস্থা করতে যাতে অসুস্থ সাক্ষী আগামী রোববার বেডে  শুয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগামী রোবার তাদের বাকী পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে  হবে। যদি ওইদিন তারা সব সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যতে  আর নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবেনা। তাদেরকে সাক্ষী আনার জন্য আর কোন সময়ও দেয়া হবেনা।
 এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  গতকাল তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। সারাদিন তার জেরা চলে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য  জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।



১৫ তম সাক্ষীর অসুস্থতা প্রসঙ্গ :
গত বুবধবার সকালে  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ। তবে তিনি  কোর্টে   এসেছেন।  আজ তার

সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, নিয়ে আসেন তাকে। মিজানুল ইসলাম বারবার  আপত্তি জানিয়ে বলেন, আজ থাক। তবে ট্রাইব্যুনাল আপত্তি না শুনে সাক্ষী হাজিরের নির্দেশ দেন।

দুপুর একটার দিকে  ১৫ তম সাক্ষী আব্দুস সালামের  জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। কাঠগড়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। এসময়  ট্রাইব্যুনাল কিছূক্ষন সময় নেন সাক্ষী যাতে স্বাভাবিক বোধ করেন সেজন্য।  ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের কাছে  জানতে চান সাক্ষীকে স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান,  না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে আসে।  আমার নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছুই জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?  আপনাদের পাশের রুমেই সহকারি রেজিস্ট্রারের অফিস তাকেও জানাতে পারতেন অন্তত।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর আবার কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন সেজন্য।  কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট।
বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন, স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন সাক্ষ্য  দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে সাক্ষীকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে  বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।

এরপর ১৩ তম সক্ষিী মাসুদ সাঈদীর অসমাপ্ত  জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় বুধবার আর অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন