মেহেদী হাসান, ৭/১০/২০১২
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ করে বলেছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে একাধিক সাক্ষী হাজির না করায় আজ আবার ট্রাইব্যুনাল একটি আদেশ পাশ করে বলেছেন আগামীকাল সোমবার যদি একের অধিক সাক্ষী হাজির করা না হয় তাহলে আগামীকালই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেছিলেন রোববার সাক্ষী হাজির করা না হলে রোববারই সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজনমাত্র সাক্ষী হাজির করায় ট্রাইব্যুনাল আবারো আসামী পক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
এ আদেশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর। শেষ হয়েছে এ বছর আগস্ট মাসে। তারা ৯ মাস সময় পেয়েছে। ৯ মাসে তারা ২৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে। আর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর । আজ পর্যন্ত মোট এক মাস ৫ দিন হয়েছে এবং এ সময়ের মধ্যে নয় জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। আমাদের মাত্র এক মাস ৫ দিনের মাথায় এভাবে কঠোর আদেশ দেয়া হল। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ ১৭ বার ব্যর্থ হয়েছে সময়মত সাক্ষী হাজির করতে। ১৭ বার তাদের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকবার মুলতবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কখনো এভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে আল্টিমেটাম দিয়ে আদেশ পাশ করা হয়নি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোন কোন তারিখে সাক্ষী আনতে পারেনি, সাক্ষী আনতে না পারার কারনে কবে কতদিন সময় দিয়ে বিচার মুলতবি করা হয়েছে তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কতবার তারা সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানিয়েছে সে তথ্যও আছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে না পারার অনেকগুলো তারিখ উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনালের সামনে।
এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তাদেরকে নয় মাস দিয়েছেন। আমরা নয় মাস চাইনা। অর্ধেক দেন। সাড়ে চার মাস সময় দেন আমাদের । সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পক্ষে কাজ করছে। তারপরও তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন সময় মত সাক্ষী আনতে। আর আমাদের ক্ষেত্রে মাত্র এক মাস পাঁচ দিনের মাথায় এভাবে আদেশ দিলেন।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। মার্চ মাসে শেষ হয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল তারাও সাক্ষী আনতে না পারার কারনে আমরা অনেক কথা তাদের বলেছি। পত্রিকায় সেসব কথা হেডলাইন হয়েছে। তবে এটা ঠিক তাদের ক্ষেত্রে এভাবে আদেশ দেয়া হয়নি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদেরও মুখে বলেন, একশবার বলেন। কিন্তু তাদের বেলায় এভাবে লিখিত আদেশ না দিয়ে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ দেয়া হচ্ছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমান সুযোগ চাই। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, মাই লর্ড ইজ ডুয়িং ইনজাস্টিস টু মাওলানা সাঈদী। (মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে)। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ :
আগামীকাল সোমবার একের অধিক সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে এক আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল -১। বেলা দুইটার পরে এ আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। আসামীপক্ষ বলেছেন আরেকজন সাক্ষী তাদের হাতে আছেন তবে সে অসুস্থ থাকায় তাকে কোর্টে হাজির করা যায়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর একজন সাক্ষী হাজির করা হয় এবং ওইদিন আর কোন সাক্ষী ছিলনা। ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী হাজির করা হয় এবং পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর তার জেরা হয়। এরপর সেদিনও আর কোন সাক্ষী তারা আনেনি। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল তবে তারা সেদিন সাক্ষী আনেনি। ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় সাক্ষী আনা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তারা সাক্ষী আনতে না পারায় মুলতবি চান। ১২ সেপ্টেম্বর চতুর্থ সাক্ষী আনেন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষী ছিলনা। ১৬ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষী এবং ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের সাক্ষী ছিলনা। ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষীর জেরা শেষে তাদের পরবর্তী কোন সাক্ষী ছিলনা। ১৯ সেপ্টেম্বর অসুস্থ থাকা তৃতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ হবার পর সেদিনও আর কোন সাক্ষী আনেনি তারা। ২০ তারিখও কোন সাক্ষী ছিলনা। ২৪ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠ, ২ অক্টোবর ৭ম, ৪ অক্টোবর অষ্টম সাক্ষী হাজির করা হয়।
চার নভেম্বর বৃহষ্পতিবার আমরা আদেশ দিয়ে বলেছিলাম রোববার যদি সাক্ষী আনা না হয় তা হলে রোববারই তাদের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করা দেয়া হবে। কিন্তু আজ তারা একজন সাক্ষী এনেছেন। আমরা তাদের বারবার বলেছি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে পরবর্তী সাক্ষী প্রস্তুত রাখবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি তারা একদিনে একজনের বেশি সাক্ষী হাজির করছেনা। আমরা বলেছি সাক্ষী আনতে না পারার কারনে বিচার মুলতবি করা হবেনা। কিন্তু তারপরও আমরা তাদের বেশ কয়েকবার সময় দিয়েছি। শেষে ৪ নভেম্বর আমরা আদেশ পাশ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি তাতেও। তারা একাধিক সাক্ষী আনতে পারেনি। আমরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের সময় দিতে চাই। আগামী কাল একজন সাক্ষী আনলে চলবেনা। আগামীকাল যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সাক্ষী না আনা হয় তাহলে সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদী সাহেবের বিচার নিয়ে এত তাড়াহুড়া কেন। আরো তো অনেক মামলা আছে এ কার্টে। সেগুলো চলতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে। আমাদের ক্ষেত্রে দুয়েকবার অপরাগতা হতে পারেনা? আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষী আনার জন্য। অনেক সাক্ষী বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে রাজি হবার কারনে। তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা। সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক আজ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আদেশ পাশের সময় আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারীর, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ।
মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সময়মত সাক্ষী আনতে না পারার খতিয়ান :
১. ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয় বিচার।
২. ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
৩. ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১২, ২৮ তম সাক্ষী আফরোজা বেগম অসুস্থতার কারনে বিচার মুলতবি করা হয়।
৪. ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় বিচার।
৫. ৭ মার্চ ২০১২ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় এবং আদেশ পাশ করা। আদেশে তাদেরকে “শেষ চান্স” দেয়া হল বলে উল্লেখ করা হয়।
৬. ১৮ মার্চ ২০১২ তারা জানায় তাদের আর কোন সাক্ষী নেই এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দীর জন্য পেশ করতে চায়।
৭. ২০ মার্চ ২০১২ ট্রাইব্যুনালে দরখাস্ত দিয়ে জানান তাদের পক্ষে আর সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয়।
এভাবে ২০১২ সালের জানুয়ারি ৪, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ফেব্রুয়ারি ১, ২, তারিখ সহ আরো মোট ১০ বার রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে পারেনি মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধে। মোট ১৭ বার তারা সময়মত সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়। অনেকবার রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর তালিকার সিরিয়াল ভঙ্গ করে অন্য সাক্ষী হাজির করেছে ।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ করে বলেছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে একাধিক সাক্ষী হাজির না করায় আজ আবার ট্রাইব্যুনাল একটি আদেশ পাশ করে বলেছেন আগামীকাল সোমবার যদি একের অধিক সাক্ষী হাজির করা না হয় তাহলে আগামীকালই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেছিলেন রোববার সাক্ষী হাজির করা না হলে রোববারই সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজনমাত্র সাক্ষী হাজির করায় ট্রাইব্যুনাল আবারো আসামী পক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
এ আদেশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর। শেষ হয়েছে এ বছর আগস্ট মাসে। তারা ৯ মাস সময় পেয়েছে। ৯ মাসে তারা ২৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে। আর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর । আজ পর্যন্ত মোট এক মাস ৫ দিন হয়েছে এবং এ সময়ের মধ্যে নয় জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। আমাদের মাত্র এক মাস ৫ দিনের মাথায় এভাবে কঠোর আদেশ দেয়া হল। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ ১৭ বার ব্যর্থ হয়েছে সময়মত সাক্ষী হাজির করতে। ১৭ বার তাদের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকবার মুলতবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কখনো এভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে আল্টিমেটাম দিয়ে আদেশ পাশ করা হয়নি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোন কোন তারিখে সাক্ষী আনতে পারেনি, সাক্ষী আনতে না পারার কারনে কবে কতদিন সময় দিয়ে বিচার মুলতবি করা হয়েছে তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কতবার তারা সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানিয়েছে সে তথ্যও আছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে না পারার অনেকগুলো তারিখ উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনালের সামনে।
এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তাদেরকে নয় মাস দিয়েছেন। আমরা নয় মাস চাইনা। অর্ধেক দেন। সাড়ে চার মাস সময় দেন আমাদের । সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পক্ষে কাজ করছে। তারপরও তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন সময় মত সাক্ষী আনতে। আর আমাদের ক্ষেত্রে মাত্র এক মাস পাঁচ দিনের মাথায় এভাবে আদেশ দিলেন।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। মার্চ মাসে শেষ হয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল তারাও সাক্ষী আনতে না পারার কারনে আমরা অনেক কথা তাদের বলেছি। পত্রিকায় সেসব কথা হেডলাইন হয়েছে। তবে এটা ঠিক তাদের ক্ষেত্রে এভাবে আদেশ দেয়া হয়নি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদেরও মুখে বলেন, একশবার বলেন। কিন্তু তাদের বেলায় এভাবে লিখিত আদেশ না দিয়ে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ দেয়া হচ্ছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমান সুযোগ চাই। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, মাই লর্ড ইজ ডুয়িং ইনজাস্টিস টু মাওলানা সাঈদী। (মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে)। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ :
আগামীকাল সোমবার একের অধিক সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে এক আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল -১। বেলা দুইটার পরে এ আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। আসামীপক্ষ বলেছেন আরেকজন সাক্ষী তাদের হাতে আছেন তবে সে অসুস্থ থাকায় তাকে কোর্টে হাজির করা যায়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর একজন সাক্ষী হাজির করা হয় এবং ওইদিন আর কোন সাক্ষী ছিলনা। ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী হাজির করা হয় এবং পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর তার জেরা হয়। এরপর সেদিনও আর কোন সাক্ষী তারা আনেনি। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল তবে তারা সেদিন সাক্ষী আনেনি। ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় সাক্ষী আনা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তারা সাক্ষী আনতে না পারায় মুলতবি চান। ১২ সেপ্টেম্বর চতুর্থ সাক্ষী আনেন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষী ছিলনা। ১৬ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষী এবং ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের সাক্ষী ছিলনা। ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষীর জেরা শেষে তাদের পরবর্তী কোন সাক্ষী ছিলনা। ১৯ সেপ্টেম্বর অসুস্থ থাকা তৃতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ হবার পর সেদিনও আর কোন সাক্ষী আনেনি তারা। ২০ তারিখও কোন সাক্ষী ছিলনা। ২৪ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠ, ২ অক্টোবর ৭ম, ৪ অক্টোবর অষ্টম সাক্ষী হাজির করা হয়।
চার নভেম্বর বৃহষ্পতিবার আমরা আদেশ দিয়ে বলেছিলাম রোববার যদি সাক্ষী আনা না হয় তা হলে রোববারই তাদের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করা দেয়া হবে। কিন্তু আজ তারা একজন সাক্ষী এনেছেন। আমরা তাদের বারবার বলেছি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে পরবর্তী সাক্ষী প্রস্তুত রাখবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি তারা একদিনে একজনের বেশি সাক্ষী হাজির করছেনা। আমরা বলেছি সাক্ষী আনতে না পারার কারনে বিচার মুলতবি করা হবেনা। কিন্তু তারপরও আমরা তাদের বেশ কয়েকবার সময় দিয়েছি। শেষে ৪ নভেম্বর আমরা আদেশ পাশ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি তাতেও। তারা একাধিক সাক্ষী আনতে পারেনি। আমরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের সময় দিতে চাই। আগামী কাল একজন সাক্ষী আনলে চলবেনা। আগামীকাল যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সাক্ষী না আনা হয় তাহলে সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদী সাহেবের বিচার নিয়ে এত তাড়াহুড়া কেন। আরো তো অনেক মামলা আছে এ কার্টে। সেগুলো চলতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে। আমাদের ক্ষেত্রে দুয়েকবার অপরাগতা হতে পারেনা? আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষী আনার জন্য। অনেক সাক্ষী বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে রাজি হবার কারনে। তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা। সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক আজ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আদেশ পাশের সময় আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারীর, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ।
মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সময়মত সাক্ষী আনতে না পারার খতিয়ান :
১. ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয় বিচার।
২. ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
৩. ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১২, ২৮ তম সাক্ষী আফরোজা বেগম অসুস্থতার কারনে বিচার মুলতবি করা হয়।
৪. ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় বিচার।
৫. ৭ মার্চ ২০১২ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় এবং আদেশ পাশ করা। আদেশে তাদেরকে “শেষ চান্স” দেয়া হল বলে উল্লেখ করা হয়।
৬. ১৮ মার্চ ২০১২ তারা জানায় তাদের আর কোন সাক্ষী নেই এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দীর জন্য পেশ করতে চায়।
৭. ২০ মার্চ ২০১২ ট্রাইব্যুনালে দরখাস্ত দিয়ে জানান তাদের পক্ষে আর সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয়।
এভাবে ২০১২ সালের জানুয়ারি ৪, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ফেব্রুয়ারি ১, ২, তারিখ সহ আরো মোট ১০ বার রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে পারেনি মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধে। মোট ১৭ বার তারা সময়মত সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়। অনেকবার রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর তালিকার সিরিয়াল ভঙ্গ করে অন্য সাক্ষী হাজির করেছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন