সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য ১৯৭৩ সালের আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে //মাওলানা আব্দুস সোবহানের জামিনের শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ১/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহানের জামিন আবেদনের  ওপর  আজ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন,  বর্তমান সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য ১৯৭৩ সালের  আইনকে ব্যবহার করছে। মাওলানা আব্দুস সোবহানকে অন্য কোন মামলায় আটক রাখার সুযোগ নেই বিধায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুনানীর সময়  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে এবং জামায়াতে ইসলামীকে একটি দল হিসেবে ধ্বংস করার জন্য  মাওলানা আব্দুস সোবহানকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জামায়াতের নবম নেতা যাকে সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার করা হল।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, প্রসিকিউশন থেকে  বলা হয়েছে মাওলানা আব্দুস সোবহান পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এটি অসত্য। তিনি ঢাকা থেকে পাবনা যাচ্ছিলেন। যাবার পথে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে দুইবার যথাক্রমে ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা যদি সত্য হত তাহলে তিনি এভাবে নির্বাচিত হতে পারতেননা। গত ৫০ বছর ধরে তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা তিনি। ৫০ বছরে পাবনায় যত উন্নয়ন হয়েছে তার সবকিছুতে কমবেশি অবদান আছে তার।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক  বলেন,  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে মাওলানা  আব্দুস সোবহান জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে সুকৌশলে দেশে বিদেশে বিচারের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালাচ্ছেন, দেশে বিদেশে সাক্ষ্য প্রমান ধ্বংসের কাজে রত আছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা সৃষ্টি, অশান্তি এবং ধ্বংসাত্মক কাজের ইন্ধন যোগানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক এ  অভিযোগ  খন্ডন করে বলেন, এ মামলার সাক্ষীরা সব দেশী। বিদেশী সাক্ষী নেই রাষ্ট্রপক্ষের। অভিযুক্ত ঘটনাস্থল সব দেশের মধ্যে। তাহলে কি করে তিনি বিদেশে সাক্ষ্য প্রমান ধ্বংসের কাছে লিপ্ত হতে পারেন?
মাওলানা  আব্দুস সোবহানের জামিন আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তিনি উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার বয়স ৮৪ বছর। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তাকে গ্রেফতারের পর যথাসময়ে আদালতে হাজির করা হয়নি। এর মাধ্যমে  কর্তৃপক্ষ আইন এবং সংবিধান লঙ্ঘন  করেছে।  মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২০ তারিখ গ্রেফতারের পর ২৩ তারিখ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।  রাজনৈতিক উদ্দেশে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে ব্যারিস্টার আব্দু রাজ্জাক  ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান  সাংবাদিকদের বলেন, অন্য কোন মামলায় আটক রাখার কোন সুযোগ না থাকায় মাওলানা  আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এ অভিযোগ রাজনৈতিক। তিনি একটি রাজনৈতিক মামলায়  হাজিরা দিতে পাবনা যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় পথে তাকে গ্রেফতার করা হল। এটি কি ঠিক হল?
জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঋষিকেশ সাহা বলেন, ১৯৭১ সালে পাবনায় পাকিস্তান আর্মি যে নৃশংস বর্বরতা চালিয়েয়ে তার প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী হলেন মাওলানা আব্দুস সোবহান।  তার নেতৃত্বে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের মাধ্যমে  পাবনায় এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কাজেই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে আটক রাখা প্রয়োজন।
শুনানীর সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ঋষিকেশ সাহাকে প্রশ্ন করেন আপনি কি  মনে করেন যে, মাওলানা  আব্দুস সোবহানের বয়ষ ৮৪ বছর?
জবাবে ঋষিকেশ সাহা বলেন, হতে পারে।
এরপর তাকে তিনি প্রশ্ন করেন আপনি কি মনে করেন যে, মাওলানা আব্দুস সোবহান
ট্রাইব্যুনাল শুনানী শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার আদেশের জন্য ধার্য্য করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক শুনানী  গ্রহণ করেন।
মাওলানা আব্দস সোবহানের পক্ষে  অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় আজ মহিলা সাক্ষীর জেরা হয়েছে ক্যামেরা ট্রায়ালের (রুদ্ধদ্বার কক্ষে) মাধ্যমে । তার জেরা শেষ হয়েছে। গত  রোববার তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন