বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

শান্তি কমিটি আলবদর আল শামসকে সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারিকৃত কোন দলিল পাননি তদন্ত কর্মকর্তা//জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস প্রভৃতি বাহনীকে  সহযোগী বাহিনী গণ্য করে জারি করা কোন  প্রমান্য  দলিল তিনি তার তদন্তকালে পাননি ।

আজ জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয় “জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি তদন্তকালে সংগ্রহ করতে পারেননি।”

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি আমার তদন্তকালে পাইনি। তবে  উক্ত  সংগঠনগুলো অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।”

তদন্ত কমকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে গতকাল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। এছাড়া  জেরা শেষ করার জন্য  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সময় বেঁধে দেয়া নিয়েও দর্ঘি বিতর্ক চলে। গতকাল ৪টা ৫০ মিনিটে শেষ হয় বিচার কার্যক্রম।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন  অধ্যাপক গোলা আযমের   পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরার সময় মিজানুল ইসলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আর্মির আত্মসর্পনের সময় স্বাক্ষরিত দলিল নিয়ে প্রশ্ন করলে তা নিয়েও দীর্ঘ সময় আলোচনা, বিতর্ক চলে। মিজানুল ইসলাম বলেন,  আত্মসর্পনের সময় জেনারেল নিয়াজি কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার’ ডকুমেন্ট ছাড়াও  আরো কিছূ  দলিল সম্পাদন হয় এবং তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন। সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তা জেনেও গোপন করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা  তা অস্বীকার করেন। মিজানুল ইসলাম সে দলিল থেকে  ট্রাইব্যুনালে যে তালিকা উল্লেখ করেন সেখানে  পাকিস্তান বাহিনীর নিয়মিত, প্যারা, এবং বিভিন্ন সহযোগী বাহিনীর ২৬ হাজার ২৫০ জন সদস্যের পরিসংখ্যান দেয়া আছে। সে তালিকায় মুজাহিদ বাহিনী, রাজাকার বাহিনীর নাম আছে। কিন্তু আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির নাম নেই সহযোগী বাহিনী হিসেবে।

রাতে  মিজানুল ইসলামের কাছে তার দাবিকৃত   ডকুমেন্টের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দলিলটির নাম হল ‘ট্রুপস ইন ঢাকা এট দি টাইম অব সারেন্ডার : রেগুলোর এন্ড প্যারা।

জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট  তাজুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন।
বিচার কার্যক্রম করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

জেরা :

প্রশ্ন : আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২, এয়ারফোর্স এ্যাক্ট ১৯৫৩ ও নেভি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১তে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কোন  বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল কিনা বা অন্য কোন বাহিনীকে মেইনন্টেইন করা হতো কিনা?
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর  জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তার সঙ্গে অক্সিলিয়ারি ফোর্সও আত্মসমর্পন করেছিল
উত্তর : অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে প্যারামিলিটারী ও সিভিল আর্মড ফোর্সেস ছিল।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সেনাাহিনীর ইষ্টার্ণ কমান্ডার জেরারেল নিয়াজী যখন আত্মসমর্পন করেন তখন তার কোন বাহিনীর  কত  সদস্য ছিল এটার কোন তালিকা ছিল কিনা জানা আছে?
উত্তর : রেকর্ডে দেখা যাচ্ছেনা। আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার-এ স্বার  করা ছাড়া অন্য কোন দলিলে জেনারেল নিযাজী  স্বাক্ষর  করেছেন?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন জেনারেল নিয়াজী ও জেনারেল অরোরা কোন দলিলে সার  করেছেন এটা জানতে সংশিষ্ট কর্তৃপরে  সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা?
উত্তর : যোগাযোগ করিনি। 
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজি যখন আত্মসমর্পন করেন তখন যেসব দলিল সম্পাদন করেছেন তার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ছিল যা আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন।  সেগুলো হল
হোডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, এ পর্যন্ত বলার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন   করে বলা হয় এটি আসামী পক্ষ প্রদর্শন করেননি ট্রাইব্যুনালে। তাছাড়া উনি ‘যেসব দলিল’ বলে সবকিছু এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছেন বলে আপত্তি করা হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটি আপনি কি আমাদের  কাছে জমা দিয়েছেন?  মিজানুল ইসলাম বলেন দিয়েছি। তখন ট্রাইব্যূনালের নির্দেশে  তিনটি ভলিউম আলমারি থেকে বের করা হয়। সেগুলো দেখে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি যে  দলিলের কথা বলছেন তাতো আমাদের সামনে নেই। কাজেই  ডকুমেন্ট না থাকলে সে বিষয়ে সাজেশন দেবেন কিভাবে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আত্মসমর্পনের সময় এক পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয় তাতে পাকিস্তান আর্মির সৈন্য সংখ্যা, কি কি সম্পদন ছিল তার  উল্লেখ ছিল। আমি সাজেশন দিচ্ছি ইনস্ট্রুমেন্ট অব ডকুমেন্ট এর সাথে আরো কিছু ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো  তদন্ত কর্মকর্তা গোপন করছেন। তিনি যদি তা অস্বীকার করেন তাহলে তা প্রমানের দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমি কেন সাজেশন দিতে পারবনা? আইনে এ বিষয়ে বাঁধা কোথায়।
তখন ট্র্ইাব্যুনাল বলেন, সাজেশনটা অন্যভাবে দেন। সেটা এভাবে  হতে পারে- ওই ডকুমেন্ট এর সাথে  আরো কিছু ডকুমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছিল আপনি তা জানেন কি-না।
কিন্তু এরপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সারেন্ডার ডকুমেন্ট এর সাথে যদি অন্য ডকুমেন্ট থাকে এবং তদন্ত কর্মকর্তা তা গোপান করে থাকেন তাহলে এর বেনিফিট আসামী পক্ষকে নিতে দেবেননা কেন?
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, আমরা এ সাজেশনটি দেয়ার অনুমতি দিলাম। এরপর প্রশ্নটি নিম্নলিখিতভাবে করা হয়।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পনের সময় ইনস্ট্র্রুমেন্ট অব সারেন্ডার ডকুমেন্ট ছাড়াও অন্য কিছু দলিল সম্পাদন করা হয়। তার মধ্যে নিম্নলিখিতি বিষয়গুলো ছিল। ১. হেডকোয়ার্টাস (ক) হেডকোয়ার্টার্স ইস্টার্ন কমান্ড, (খ) রিয়ার হেডকোয়ার্টার্স ১৪ ডিভিশন, (গ) হেডকোয়ার্টাস ৩৬ ডিভিশিন, হেডকোয়ার্টার্স ইস্ট পাকিস্তান লজিস্টিক, (ঘ) স্টেশন হেডকোয়ার্টার্স, (ঙ)  হেডকোয়ার্টার্স অফিসার কমান্ডিং ইস্ট পাকিস্তান, (চ) ওয়স্ট পাকিস্তান পুলিশ, (ছ)  হেডকোয়ার্টাস  ডিজি রাজাকার।

২. ট্রুপস রেগুলার এন্ড প্যারা। এর অধীনে ট্যাংকস, আর্টিলারি, ইনফ্যান্ট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগনাল, সার্ভিস, মুজাহিদ,  রাজাকার, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ মিলিয়ে মোট ২৬ হাজার ২৫০ জন সৈন্য সংখ্যা উল্লেখ আছে।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আলাদা দুটি প্রশ্ন করেন।
প্রশ্ন : উপরোক্ত বিষয়গুলো ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জেনেও তা পোগন করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপ, নেজামে ইসলাম, শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস, বাহিনীকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স  (সহযোগী বাহিনী)  হিসেবে  গণ্য করে পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড বা সেন্ট্রাল কমান্ড কোন প্রজ্ঞাপন  জারি করেছে এ মর্মে কোন ডকুমেন্ট আপনি সংগ্রহ করতে পারেননি।
উত্তর : সরাসরি কোন প্রামান্য দলিল আমি তদন্তকালে পাইনি। তবে শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলাী সারা দেশে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান আর্মিকে সহায়তা করেছে এবং নিজেরাও অংশগ্রহণ করেছে এর প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি।
এ উত্তরের পর দীর্ঘ বিতর্ক চলে আসামী পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ এবং ট্রাইব্যুনালের মধ্যে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারবেন।  সে অধিকার তার আছে। কিন্তু  ফ্যাক্টস এবং দলিল বিষয়ক এ প্রশ্নে এ ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ এটা দলিল। আমার প্রশ্ন হল কোন প্রজ্ঞাপন জারি  বিষয়ে। সেখানে কার্যকলার কেন আসবে। 
ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তা প্রদত্ত ব্যাখ্যাকে প্রাসঙ্গিক আখ্যায়িত করে বলেন, অনেক কাজ হয় যা কাগজে কলমে লেখা  থাকেনা। কিন্তু হয়েছে এটাই সত্য।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বোঝাতে চেয়েছেন শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলামী সহযোগী বাহিনী হিসেবে  কাগজে কলমে না থাকলেও এদেরকে পাকিস্তান আর্মি ব্যবহার করেছে তাইতো?
ট্রাইব্যুনাল বলেন  ‘হ্যা’।
তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, এটাতো তিনি তার জবানবন্দীতে বলেছেন এবং প্রয়োজনে আবারো  রাষ্ট্রপক্ষ তাকে রিইক্সামিন করে বলাতে পারেন। আইন অনুযায়ী সহযোগী বাহিনী গঠনের অধিকার  মুল বাহিনীর। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বললেন জামায়াতে ইসলামী এসব সহযোগী বাহিনী  গঠন করেছে। আমার আপত্তি সেখানে।
 ট্রাইব্যুনাল বলেন আপনি যা   চেয়েছেন তাতো ওনার উত্তরের প্রথম অংশে আছে। পরের ব্যাখ্যা থাকলে অসুবিধা নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, হয় এ প্রশ্নটি বাদ দেয়া হোক অথবা প্রশ্ন উত্তর আকারে রেকর্ড করা হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, ব্যাখ্যাটি এভাবে নেয়া যায় কি-না দেখেন । তাহল “উক্ত সংগঠনগুলো সহযোগী বাহিনী হিসেবে কার করেছে সে প্রমান আমি তদন্তকালে পেয়েছি”
মিজানুল ইসলাম বলেন ঠিক আছে।
প্রশ্ন : জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পনের সময় রাজাকার বাহিনীর কোন সদস্য উপস্থিত ছিল তদন্তকালে আপনি এমন কোন তথ্য পেয়েছেন ?
উত্তর : আমার রেকর্ডে তা খুঁজে পাচ্ছিনা।
প্রশ্ন : আপনি  কি কোন কেস ডায়েরি ছাড়াই সাক্ষ্য দিতে এসেছেন?
উত্তর ধ চিফ প্রসিকিউটরের কাছে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার সবই আমি নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তার মধ্যে কেস ডায়েরি ছিল?
উত্তর :  থাকার কথা না।
প্রশ্ন : আমি বলছি সত্য উদঘটানের ভয়ে আপনি কেস ডায়েরিসহ আরো অনেক ডকুমেন্ট আনেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অক্সিলিয়ারি ফোর্স এর গঠন সম্পর্কে কোন ধারণা আছে?
উত্তর : পরিস্কার কোন ধারণা নেই। তবে আমি মনে করি যারা মুল বাহিনীকে সহযোগিতা করে তারাই অক্সিলিয়ারি ফোর্স।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পুলিশ বাহিনী আর্মিকে সহযোগিতা করত কি-না।
উত্তর : কিছু কিছু  সদস্য সহযোগিতা করত বলে শুনেছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন,  এখানে তো তাহলে প্রশ্ন এসে যায় বাংলাদেশ সিভিল প্রশাসনও সহযোগিতা করত কি-না। মিজানুল ইসলাম বলেন,  তারা পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তারা  অক্সিলিয়ারি ফোর্স নয় এটা বোঝাতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠনের পর কতজন এসপি, ডিআইজি  আনুগত্য করে?
উত্তর : অনেক। তবে  সঠিক সংখ্যা বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ডিআইজি বা তার উর্ধ্বতন কতজন আনুগত্য করে?
উত্তর : এ  মুহুর্তে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামের মজলিশে শুরায় কতজন পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য ছিল?
উত্তর : এ তথ্য আমার কাছে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান  জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শুরা ছিল তা জানেন?
উত্তর : ধারণা নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম কি প্রকৃয়া সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিত সে বিষয়ে ধারণা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের অস্ত্র সরবাহের জন্য পাকিস্তান আর্মির কাছে আবেদন করেছিল এ মর্মে কোন তথ্য আপনার কাছে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : কি আছে বলেন।
উত্তর : লাহোরে অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে এখনো  দুষ্কৃতকারী আছে। পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয়  নিরীহ জনগনের জন্য অস্ত্রের  প্রয়োজন। এই নিরহী জনগন মানে তার দলের লোক।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি নির্দিষ্ট করে বলেছি জামায়াতে ইসলামের সদস্যদের জন্য অস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কি-না। সেখানে ব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ জনগনকে দলের লোক হিসেবে মেলানোর  কোন সুযোগ নেই। তাহলে পত্রিকার ওই খবরে প্রত্যেকটি শব্দের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব। সে সুযোগ কি আমি পাব?
ট্রাইুব্যনাল বলেন, তার দলের লোকদের ক্ষেত্রে এটা ইমপ্লাইস। কারণ আপনিতো ওই বক্তব্য খন্ডন করতে চাচ্ছেন।
মিজানুল ইসলম বলেন যেহেতু আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর আসেনি  আমি এ প্রশ্ন বাদ দিতে চাচ্ছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন শেষবারের মত আপনাকে এ সুযোগ দেয়া হল। এরপর বুঝে প্রশ্ন করতে হবে যাতে বাদ দিতে না হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, উত্তরও সোজা দিলে আমাকে বাদ দিতে হবেনা।
প্রশ্ন : মসলিম লীগের কোন সদস্য যারা রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদরে যোগ দেইনি এমন কাউকে মুসলিম লীগার হিসেবে  পাকিস্তান আর্মি অস্ত্র সরবরাহ করেছে এমন তথ্য পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আলবদর কবে কোথায় প্রথম গঠন হয়/
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৬ মে শেরপুরে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মীকে সামরিক প্রশিক্ষন দিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়।
প্রশ্ন : এ তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?
উত্তর : তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন  : তদন্তে কিভাবে পেলেন, কেউ কি আপনাকে দিয়েছে?
উত্তর :  আমি তদন্তে পেয়েছি।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে কোন প্রামান্য ডকুমেন্ট জব্দ  করেছেন?
উত্তর :  ডকুমেন্ট দেখেছি তবে জব্দগ করিনি।
প্রশ্ন : ডকুমেন্টটির নাম বলতে পারবনে, মানে কোন বই বা পেপার  কার্টি কি-না?
উত্তর : আলবদর বইতে পেয়েছি।
প্রশ্ন : লেখক কে?
উত্তর : সেলিম মনছুর খালেদ।
প্রশ্ন : তিনি কি বাঙ্গালী?
উত্তর : সম্ভবত নয়। কারণ বইটি লাহোর থেকে প্রকাশিত।
প্রশ্ন : এই লেখক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ছিলেন?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে তার বয়স কতদ ছিল?
উত্তর : বইয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
প্রশ্ন : যে ৪৭ জন ছাত্রসংঘের কর্মী নিয়ে আল বদর বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে তদন্তকালে তাদের নাম পরিচয় সনাক্ত করতে পেরেছেন?
উত্তর  : সবার পারিনি। প্রথম কমান্ডারের নাম কামরান, শেরপুর । এছাড়া অন্যকারো নাম পরিচয় পাইনি।
প্রশ্ন : কামরানের অস্তিত্ব আছে?
উত্তর : শুনেছি আছে। তবে বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : তার পেশা কি ছিল?
উত্তর : বিস্তারিত তদন্ত করিনি।
প্রশ্ন : তার বাড়ি শেরপুরের কোন এলাকায়?
উত্তর : বলেছিতো বিস্তারিত তদন্ত  করিনি।
প্রশ্ন : আলবদর তৈরির পর কেন্দ্রীয় কোন কাঠামো তৈরি হয়েছিল কি-না?
উত্তর : কেন্দ্রীয় কাঠামো জিনিসটা কি বুঝলামনা।
প্রশ্ন  : এই যেমন ধরেন পুলিশের আইজি, তারপর এডিশনাল আইজি, ডিআইজ, এসপি এভাবে।
উত্তর : প্রথম ইউনিট ৩১৩ ক্যাডেট। দ্বিতীয় ইউনিট ৩ কোম্পানী। প্রত্যেক কোম্পানীতে ১০৪ জন মুজাহিদ। ১ কোম্পানীতে ৩ প্লাটুন। প্রত্যেক প্লাটুনে ৩৩ সাজী। ১  প্লাটুনে ৩ সেকশন ট্রুপস। প্রত্যেক ট্রুপে ১১ জন আলবদর।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্ন ছিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কাঠামো।
উত্তর : আমার তদন্তে এ জাতীয় কিছূ পাইনি।
প্রশ্ন : এইযে কাঠামোর কথা বললেন এটা জেলার না মহকুমার?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এই কাঠামো বিন্যাসের তথ্য কোথায় পেলেন?
উত্তর : আলবদর বইতে।
প্রশ্ন : এই কাঠামো অনুযায়ী কোন ইউনিটের সদস্যদের নাম উল্লেখ ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ৩১৩ ক্যাডেটের যে প্রথম ইউনিট তার প্রধানের পদবী কি ?
উত্তর : বইয়ে উল্লেখ না থাকায় আমি জানিনা।
প্রশ্ন : ওই ইউনিটসমূহের প্রধানের পদবীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডারের নাম কি ছিল?
উত্তর : : ঢাকা জেলা আলবদর কমান্ডার হিসেবে আমি কিছু পাইনি। তবে তিনটি গ্রুপের নাম পেয়েছি। একটি শহীদ আব্দুল মালেক কোম্পানী। এর কমান্ডার আর জাহাঙ্গীর। শহীদ আজিজ ভাট্টি কোম্পানী। এর কমান্ডার আব্দুল হক এবং গাজী সালাহউদ্দিন কোম্পানী। এর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান।
প্রশ্ন : এই তিনটি গ্রুপ কোন কোম্পানীর অধীনে ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : আল শামস  কবে গঠন হয়?
উত্তর : সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : এ মুহূর্তে  বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : এর কাঠামো কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন :  এর সদস্যদের  বেতনভাতা কত ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : তাদের পোশাক কেমন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : বেতনবাতা কে দিত?>
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রশ্ন : মুজাহিদ বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই উত্তর  প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।

জেরা শেষ করা নিয়ে বিতর্ক : গতকাল  দুপুরের পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাদের রোববার   আরেক সেশন পর্যন্ত সময় দেয়া হল জেরা শেষ করার জন্য। এর  মধ্যে জেরা শেষ করতে হবে। গতকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেরার পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ৫২৩টি প্রদর্শণী মার্ক করা হয়েছে। এগুলো সবই হল  পেপারকাটিং,  প্রেসরিলিজ, নিউজধমী। এর সংখ্যা ৫২৩টি। এরপরও তার পুরো মামলা নির্ভর করা হয়েছে।  এর মধ্যে মাত্র ৭টি প্রদর্শনী বিষয়ে এ পর্যন্ত  আমরা জেরা করতে পেরেছি। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে  একদম প্রাথমিক দাবী হল সব মৌলিক  ডকুমেন্টের ওপর জেরা করা। আর মাত্র একটি সেশনে জেরা  শেষ করা কোন অবস্থায়ই সম্ভব নয়। এটি আমি আমি আমার আসামীর প্রতি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবনা। তিনি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। আসামীর প্রতি সুবিচার করা সম্ভব  হবেনা। সবকিছুর উদ্দেশ্য হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। আমার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের  সারা দেশের সব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সব কিছুর মাস্টারমাইন্ড বলা হয়েছে।   আমরা যতক্ষন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জেরা করি ততক্ষন পর্যন্ত জেরা করতে দেয়া উচিত।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, বিষয়টি প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক  নয়। বিষয়টি হল  আমরা টাইম ফ্রেমিং পদ্ধতি অনুসরন করছি। সব ক্ষেত্রেই এটি মেনে চলতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা মোট ৫ সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন।  সে অনুযায়ী আপনারা ১১ সেশন পেলেও ১২ সেশন জেরা করতেদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পর্যাপ্ত জেরা হয়েছে। সাতটি প্রদর্শনী জেরা করতে যাদেত আপনাদের ১২ সেশন লাগে তাহলে ৫২৩টি প্রদর্শনী জেরা করতে কত দিন লাগবে এ প্রশ্ন আপনার কাছে আমরা। জবাব দেন।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন সেসব রিপোর্ট তিনি করেননি । তিনি তার কর্তৃপক্ষও নন। কাজেই ওসব রিপোর্ট বিষয়ে আপনারা আরগুমেন্টে বলতে পারবেন। বিচার থেকে খালাস দেয়াও ন্যায়  বিচার নয়, দোষী সাব্যস্ত করাও ন্যায় বিচার নয়।  জাস্টিস ইজ জাস্টিস। দ্রুত বিচার পাওয়াও আসামীর অধিকার। আসামীকে কাস্টডিতে রেখে বিচার  চলছে। কাজেই  দ্রুত বিচার করে তাকে নির্দোষ প্রমান করাও আপনাদের দায়িত্ব।  জাস্টিস ডিলে জাস্টিস ডিনাইড তাও  তো সত্য।

তাজুল ইসলাম বলেন কতদিন লাগবে সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। সেজন্য যদি সময় লাগে সময় দিতে হবে। ৪০ বছর আগের ঘটনার বিচার হচ্ছে। ২ বছর ধরে তারা তদন্ত করেছেন। আর মাত্র ৬টি দিন আমাদের দিলে বিচার বিলম্বিত হয়ে যাবে? যদি তাই হল তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই।  তদন্ত কর্মকর্তা ৫  সেশন জবানবন্দী দিয়েছেন সেটা যেমন সত্য তেমনি তিনি ৫সেশনে  কি ডুকমেন্ট হাজির করেছেন তাও বিবেচনা করে দেখার বিষয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি মাত্র এক মিনিটে ৩১ ঘন্টার ভিডিও ডকুমেন্ট হাজির করেছেন। কাজেই আপনাদের হিসেবে এক মিনিটের জবানবন্দীর জন্য অন্তন্ত ৩১ ঘন্টা সময় দরকার জেরায়।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন রোববার এক সেশনে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। তারপর আমরা দেখব।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন