রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

আদালত অবমাননার অভিযোগে খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে নোটিশ জারি

মেহেদী হাসান, ৬/১০/২০১৩
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ  তার বিরুদ্ধে এ  নোটিশ জারি করে। আদালত অবমানার অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে  আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।

তবে তার পদমর্যাদা বিবেচনায় তাকে কোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বক্তব্যের জের ধরে রাষ্ট্রপক্ষ তার  বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে গত বৃহষ্পতিবার। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল আজ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করল।

ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয় রাষ্ট্রপক্ষ খন্দকার মাহবুব হোসেন  এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা যৌক্তিক। খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, আইনজীবী এবং সাক্ষীসহ সমস্ত বিচার প্রকৃয়াকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তার বক্তব্য ট্রাইব্যুনাল এবং স্বাধীন  বিচার ব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট হুমকি । সুপ্রমী কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে তার এ  বক্তব্য  বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য হুমকিস্বরূপ।  এ ধরনের বক্তব্য বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।


ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মান এবং পদমর্যাদ বিবেচনা করে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত জবাব দিতে পারবেন।

চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল -১  কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করে।

আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষাপট :
গত ১ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পরপরই   জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রীম কোর্ট বার ভবনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে  খন্দকার মাহবুব হোসেন ট্রাইব্যুনালের বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন,   জাতীয়তাবাদী শক্তি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে এই বিচারের সাথে জড়িতদেরও বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।

তার এ বক্তব্যকে আদালত অবমাননা আখ্যায়িত করে গত বৃহষ্পতিবার  তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দায়ের করে। 

আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারির আবেদন করা হয  রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে।

অভিযোগ দায়ের করার পর জেয়াদ আল মালুম এর প্রেক্ষাপট এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের এই বিচারের সাথে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, তদন্ত সংস্থা, সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অসংখ্য পরিবার জড়িত। বিচারের এই পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এ বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে এবং বিচারের সাথে সম্পৃক্তদের বিচার করা হবে বক্তব্য দিয়ে সবাইকে হুমকি দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য বিচারের প্রতি অবজ্ঞা, আদালত অবমাননা এবং আতঙ্ক সৃষ্টির শামিল। তার এ বক্তব্য ট্রাইব্যুনালের সমগ্র বিচার প্রকৃয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ন্যায় বিচারকে বাঁধাগ্রস্ত করার শামিল। কাজেই তার এ বক্তব্যের কারনে কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমনানার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহন  করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারি করা হোক এবং এ বিষয়ে তার যদি কোন ব্যাখ্যা দেয়ার থাকে তাহলে আদালতে হাজির হয়ে সে ব্যাখ্যা দিতে বলা হোক।

বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের   আবেদনের ওপর জেয়াদ আল মালুম শুনানী পেশ করার পর রোববার আদেশের জন্য ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রহসনের বিচারের সাথে সম্পৃক্তদেরও বিচার করা হবে মর্মে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার   খন্দকার মাহবুব হোসেন  বক্তব্য প্রদানের পর ২ অক্টোর বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বপ্রথম আপিল বিভাগের নজরে আনেন বিষয়টি। মাওলানা সাঈদীর আপিল আদেন শুনানীর লক্ষ্যে গঠিত প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এর কার্যক্রম সকালে শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসময় যথাযথ স্থানে এ বিষয়টি উত্থাপনের পরামর্শ দেন। 
এরপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে ট্রাইব্যুনাল -১ এর কার্যক্রম শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু মৌখিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাকে বিষয়টি লিখিত আকারে দায়ের করার পরামর্শ দিলে  বৃহষ্পতিবার খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
খন্দকার মাহবুব হোসেন এর পরিচয় : খন্দকার মাহবুব হোসেন  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়শেনর পরপর দুবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি সারা দেশের সকল আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান  এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী এদেশীয় পাকিস্তানী সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন তিনি।
তাকে বাংলাদেশে শীর্ষ  ফৌজদারি আইনজীবী  হিসেবে গণ্য করা হয়। সর্বশেষ তিনি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে শুনানী পেশ করেছেন এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষেও তাকে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আমার বক্তব্যে বিচারকদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি-খন্দকার মাহবুব


আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমার বক্তব্যে বিচারকদের সম্পর্কে কিছু ছিলনা। কেননা বিচারক কোন মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেননা। তিনি থাকেন নিরপেক্ষ।

তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আদালত অবমাননার নোটিশ জারির পর দুপুরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মামলার বাদী, বিবাদী এবং যারা সাক্ষ্য দেন তারাই মামলার সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। বিচারক মামলার সাক্ষ্য প্রমান শুনে তা পর্যালোচনা করে রায় দেন। তার রায় বাদী পক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রমানের ওপর নির্ভর করে হয়ে থাকে।  আমাদের দন্ডবিধি আইনেও আদালতে মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। তাই ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় মিথ্যা মামলা তৈরি করে এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কাউকে সাজা দেওয়া হয়েছে তবে অবশ্যই তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি ট্রাইব্যুনাল এবং বিচারকদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করিনাই। আমার বক্তব্য বিকৃত করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদি আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হল তবে এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত কেনননা তা না হলে দেশে আইনের শাসন থাকবেনা এবং সাংবিধানিকভাবে কারো নিরাপত্তা থাকবেনা।
তিনি বলেন, আমরা বক্তব্য কারো প্রতি হুমকি নয়-বরং এটি একটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা।
লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রসিকিউশন এ অভিযোগ দায়ের করেছে।










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন