সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান


মেহেদী হাসান, ২১/১০/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। তার পক্ষে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন পাবনার মুক্তিযোদ্ধা কে এম হামিদুর রহমান। তিনি ১৯৬৮-৬৯ সময়ে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ   আজ  তার জবানবন্দী  গ্রহণ শেষে জেরা সমাপ্ত হয়।

জবানবন্দী :
আমার নাম কে এম হামিদুর রহমান। বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার বর্তমান ঠিকানা- দিলালপুর, পাবনা শহর, পাবনা। আমি পাবনা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী। আমি ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাশ করার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরে সিপাহী পদে যোগদান করি। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার পর কয়েক মাস চাকুরী করার পর চাকুরী ছেড়ে চলে আসি। এরপর আমি নিয়মিত পড়াশুনা করে ১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করে ১৯৭৩ সালে আমি আইন পেশায় যোগদান করি। আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থা থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হই। ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হই। ১৯৬৯ সালে বিএ পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করি।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পর আমরা ২৬শে মার্চ থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। তারপর থেকে আমরা বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং আমাদের মধ্যে যাদের ট্রেনিং ছিল না তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতে চলে যান এবং আমি যেহেতু সেনাবাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্ত সেহেতু আমি ভারতে যাই নাই। আমরা রাজাকারদের পরিবারের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতাম এই মর্মে যে, তাদের পরিবারের যে সকল লোক রাজাকারে গিয়েছে তারা যেন এলাকায় কোন ক্ষতি না করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সুজানগর থানা আক্রমণ করি এবং সেই যুদ্ধ চারদিন চাররাত্র চলার পর পঞ্চম দিন রাত্রে পাকিস্তান সেনারা সেখানে কয়েকটি লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সুজানগর, সাথিয়া ও বেড়া থানা এলাকায় আমরা চলা ফেরা করতাম এবং সোর্সের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করতাম। সোর্সদের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব সাথিয়া থানা এলাকায় মানবতা বিরোধী কোন অপরাধ করেছেন কিংবা অপরাধের কোন সহযোগিতা করেছেন এই মর্মে কোন ব্যক্তি আমার নিকট অভিযোগ করেন নাই এবং কোন ব্যক্তি আমার নিকট ইহা বলে নাই যে, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া এলাকাতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে তার এলাকাতে এবং পাবনা শহরে স্বাধীনভাবে ঘুরা ফেরা করতে দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি সিও (ডেভ) কে আহবায়ক করে এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে সরকার একটি কমিটি করেছিল রাজাকার, আলবদরদের তালিকা তৈরি করার জন্য এবং পরবর্তীতে তাদের দ্বারা তৈরিকৃত তালিকায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম ছিল না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি চিনি, তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের ডকে উপস্থিত আছেন।


জেরা (সংক্ষিপ্ত ) ঃ
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী এবং মোহাম্মদ আলী।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তর :  গ্রাম গোকুলপুর, ইউনিয়ন সুজানগর।
 প্রশ্ন : ট্রাইব্যুনালে নিজামী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হবে একথা কবে জানতে পারলেন?
উত্তর : অনেক আগে জানতে পেরেছি যে, তবে তারিখ আমার মনে নাই।
প্রশ্ন : সর্বপ্রথম কার কাছ থেকে জানতে পারলেন সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে?
উত্তর : নিজামী সাহেবের ছেলের নিকট থেকে
প্রশ্ন : ঢাকা কবে এসেছেন ?
উত্তর :  গতকাল ।
প্রশ্ন : আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন কবে?
উত্তর :  প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সম্ভবত ১৯৮০ সালের পূর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন এলএলবি পাশ করেছেন আপনি। কোথা থেকে পাশ করলেন?
উত্তর :  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।
প্রশ্ন : আপনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কবে কোন উপজেলায়?
উত্তর : ১৯৮৯ সালে পাবনা সদর।
প্রশ্ন : আপনি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পছন্দে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার পাবনা শহরের বাড়িটা তো বেশ বড়।
উত্তর : আমার তার চেয়েও বড় বাড়ি আছে। পাবনা শহরে আমার ৫৩টি দোকান, তিনটি মার্কেট আছে।
প্রশ্ন : পাবনা শহরের বাড়িতে কতজন ভাড়াটিয়া আছে?
উত্তর : ২০টি পরিবার থাকে। এছাড়া একটি বাড়িতে  ব্যাচেলর সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারীদের জন্য ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে।
প্রশ্ন : আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেন?
উত্তর : অবশ্যই।
প্রশ্ন : গত বছর কত দিয়েছেন?
উত্তর : স্মরন নেই।  সম্ভবত ২০/৪০ হাজার টাকা হবে। আমার ইনকাম ট্যাক্স লইয়ার আছে। সে এসব দেখে।
প্রশ্ন : আপনার মাসিক আয় কত?
উত্তর  : আমি আমার বাড়ি এবং দোকান থেকে মাসিক লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পাই।
প্রশ্ন : আমি বলছি আপনার বাড়ি ও দোকান ভাড়ার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকার অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য তথ্য দিয়েছেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনেক ছাত্রকে আপনার বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি পাবনা  সদর উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির।
উত্তর : সত্য নয়। আমির তো দূরেরর কথা। আমি জামায়াতের কিছুই নই। প্রশ্নটা করার আগে এটা আপনার জানা উচিত ছিল।
প্রশ্ন : আপনি আর্মিতে থাকা অবস্থায় কোথায় ট্রেনিং নিয়েছিলেন?
উত্তর :  পাকিস্তানের এবোটাবাদ-এ ছয় মাসের আর্মি ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে দুই/তিন মাস চাকুরীতে ছিলাম।
প্রশ্ন : আর্মি থেকে চাকরি ছেড়ে আসার কোন সুযোগ নেই।
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনি অনুমতি ছাড়া কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে পালিয়ে চলে এসেছেন?
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সে কারনে আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয় তখন।
উত্তর : সত্য নয়। কোনদিনও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন রাজাকারদের পরিবারকে উদ্ভুদ্ধ করতেন ক্ষতিকর কাজকর্ম না করার জন্য।
এর মানে হল রাজাকার এবং  রাজাকারদের পরিবারের সাথে আপনার সুসম্পর্ক ছিল।
উত্তর : অসত্য।
প্রশ্ন :  তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারদের সাথে আপনি যোগাযোগ রাখতেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনি  সবসময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে থাকতেন এবং চলাফেরা করতেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আপনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কথা ভূয়া ও অসত্য।
উত্তর : আপনার দাবি  সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আমি পাবনা জেলা জামায়াত শিবিরের আর্থিক মদদদাতা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  আপনি  সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময় থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত  ছিলেন একথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক মনোনিত হওয়ার কথাও সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার এলাকায় কোন লোক বিপদে পড়ে আনপার কাছে আসলে আপনি তার পক্ষে সাক্ষ্য দেন।
উত্তর : আমি আমার মেয়ের পক্ষে একবার ছোলেনামা সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। এছাড়া কোনদিন এর আগে কোন মামলায় সাক্ষ্য দেইনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী কি করতেন, কি ছিলেন, তার রাজনৈতিক পরিচয় আপনি জানতেন।
উত্তর : জানতামনা।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, তারিকুল ইসলাম, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু উপস্থিত ছিলেন।



পূর্ন জেরাঃ
জেরায় প্রশ্নের জবাব আকারে  সাক্ষী যে উত্তর দিয়েছেন তা হুবহু এখানে তুলে ধরা হল। উত্তর তেকে প্রশ্নটি কি ধরনের ছিল তা বুঝে নিতে হবে।
আমি কখনোই নোটারী পাবলিক ছিলাম না এবং নোটারী পাবলিক হওয়ার জন্য কখনো আবেদনও করি নাই। ১৯৭১ সালে আমার গ্রামের বাড়ি ছিল গোকুলপুর, ইউনিয়ন পরিষদ ছিল সুজানগর। (চলবে)

০২.০০ টায় পূনরায় জেরাঃ
আমি মাননীয় ট্রাইব্যুনাল থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কোন সমন পাই নাই। অনেক আগে জানতে পেরেছি যে, অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হবে, তবে তারিখ আমার মনে নাই। আমি সর্বপ্রথম মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ছেলের নিকট থেকে জানতে পেরেছি যে, এই মামলায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে আমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে। আমি গতকাল ঢাকায় এসেছি। আমার জানাশুনা একজন লোক আব্দুর রউফ এর সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সম্ভবত ১৯৮০ সালের পূর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম। প্রথম স্ত্রীর একটি মেয়ে আছে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করেছি। আমি পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলাম। আমি তখন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের প্রার্থী হিসাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। আমার বাড়ির ২০টি ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও ব্যাচেলর সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারীদের জন্য ফ্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও আমার আরো তিনটি বাড়ি, ০৮টি গোডাউনসহ ৫৩টি দোকান ঘর আছে। আমি গত বৎসর সম্ভবত ২০/৪০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছি তবে সঠিক পরিমান বলতে পারব না। আমি আমার বাড়ি এবং দোকান থেকে মাসিক লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পাই। আমার বাড়ি ও দোকান ভাড়ার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকার অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য তথ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনেক ছাত্রকে আমার বাড়িতে ভাড়া দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। আমি সদর উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির, ইহা সত্য নহে। আমি পাকিস্তানের এবোটাবাদ-এ ছয় মাসের আর্মি ট্রেনিং নিয়েছিলাম। ট্রেনিং শেষে দুই/তিন মাস চাকুরীতে ছিলাম। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আসার কোন নিয়ম সেনাবাহিনীর চাকুরী বিধিতে নাই, ইহা সত্য নহে। আমি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কোন অনুমতি না নিয়ে বা ইনফরমেশন না দিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম এবং এই কারণে আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, রাজাকারদের পরিবারের সদস্যদের সহিত এবং রাজাকারদের সহিতও আমার সুসম্পর্ক ছিল এবং এজন্যই তাদের সহিত যোগাযোগ রাখতাম। আমি তৎকালিন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারদের সহিত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সহিত যোগাযোগ রক্ষা করতাম, ইহা সত্য নহে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি সবসময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে থাকতাম এবং চলাফেরা করতাম, ইহা সত্য নহে। আমি আমার জবানবন্দীতে যে সোর্স শব্দটি ব্যবহার করেছি, ইহা বলতে আমি রাজাকার, আলবদর ও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত লোকদেরকেই বুছিয়েছি, ইহা সত্য নহে। আমি আমার জবানবন্দীতে যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কথা বলেছি ইহা ভূয়া ও অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে রাজাকার ও আলবদরদের কর্মকান্ড মনিটরিং করতাম, ইহা সত্য নহে। আমি পাবনা জেলা ইসলামী ছাত্র শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাদের আর্থিক সাহায্য করি, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, গত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি পাবনা জেলা ইসলামী ছাত্র শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ড দেখা শুনা করতাম। গত নির্বাচনের পূর্বে সাধারন নির্বাচনে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছিলাম, ইহা সত্য নহে।
আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময় থেকেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলাম না, ইহা সত্য নহে। ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজে বিএ পড়া অবস্থায় পাবনা জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক মনোনিত হই নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবেরে ছেলের নিকট মাননীয় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় আমি আমার পেশাগত এবং বংশগত পরিচয়সহ পুরো পরিচয় দিয়েছি। পাবনা আইনজীবী সমিতির অন্য কোন সদস্যের নিকট মতিউর রহমান নিজমাী সাহেবের ছেলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে বলেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই এবং সেই কারণে আইনজীবী পরিচয়ে অন্য কারো নাম আসামী পক্ষের সাক্ষীর তালিকায় আছে কিনা তাহাও আমার জানা নাই। আমি জানি না যে, প্রথম সাক্ষীর তালিকায় এডভোকেট পরিচয়ে দুইজন সাক্ষীর নাম ছিল কিনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের সুজানগর থানার প্রত্যন্ত এলাকায় কোন পত্রিকা যেতনা এবং কোন পত্রিকা আমি পড়তাম না। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আমি খবরের কাগজ তেমন একটা পড়তাম না, মাঝে মাঝে দুই/একটা পড়তাম। আমার এলাকায় কেউ মামলায় পড়লে আমাকে সাক্ষী দিতে বললে আমি কখনও সাক্ষ্য দেই নাই। আমি ইতিপূর্বে আমার মেয়ের পক্ষে একবার সাক্ষ্য দিয়েছি এবং অদ্য আরেকবার সাক্ষ্য দিলাম, ইহা ছাড়া আমি আর কখনও সাক্ষ্য দেই নাই। আমি কোন নেতার লেখা বই পড়ি নাই। মতিউর রহমান নিজমাী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমির তাহা আমি জানি। ১৯৭১ সালে তিনি কি ছিলেন বা তিনি কি করতেন বা তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল কিনা তাহা আমা জানা নাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ। ঐ দুইটি রাজনৈতিক দলের কোন ছাত্র সংগঠন ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। দৈনিক সংগ্রাম নামে একটি পত্রিকা আছে তাহা আমি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জানতে পারি। সেই পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র এটা এখন শুনি।
“সোর্সদের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব সাথিয়া থানা এলাকায় মানবতা বিরোধী কোন অপরাধ করেছেন কিংবা অপরাধের কোন সহযোগিতা করেছেন এই মর্মে কোন ব্যক্তি আমার নিকট অভিযোগ করেন নাই এবং কোন ব্যক্তি আমার নিকট ইহা বলে নাই যে, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া এলাকাতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখেছেন।” এই কথাগুলি অসত্য বা আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত কর্মী হিসাবে তাকে রক্ষা করার জন্য এই অসত্য বক্তব্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসলাম ছাত্র সংঘের সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসাবে জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনা ও নির্দেশে এবং তার উপস্থিতিতে সাথিয়া থানার বিভিন্ন স্থানে তৎকালীন দখলদার পাক বাহিনী এবং রাজাকার আলবদরদের নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বিতাড়ন সহ বিভিন্ন ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ঘটনার কথা জানা সত্ত্বেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে বাঁচানোর জন্য সত্য গোপন করে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে।
“দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে তার এলাকাতে এবং পাবনা শহরে স্বাধীনভাবে ঘুরা ফেরা করতে দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি সিও (ডেভ) কে আহবায়ক করে এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে সরকার একটি কমিটি করেছিল রাজাকার, আলবদরদের তালিকা তৈরি করার জন্য এবং পরবর্তীতে তাদের দ্বারা তৈরিকৃত তালিকায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম ছিল না।” এই কথাগুলি অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমি জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের কৃত অপরাধ গোপন করে অদ্য মাননীয় ট্রাইব্যুনালে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন