বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সাঈদীর পক্ষে চতুর্থ সাক্ষী//সাঈদীসহ আমরা চারটি পরিবার ১৯৭১ সালে যশোর শহর থেকে শেখহাটি হয়ে -ধানঘাটা যাই


মেহেদী হাসান, ১২/৯/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  চতুর্থ সাক্ষী জবনাবন্দী দিয়েছেন। তার নাম আবুল হোসেন। বাড়ি যশোর।  জবানবন্দীতে সাক্ষী  বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি যশোরের নিউটাউনে বাস করতেন। সেখানে তাদের বাসার পাশে বাস করতেন মাওলানা সাঈদী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে   তাদের পরিবার, মাওলানা সাঈদী সাহেবের পরিবারসহ পাশপাশি মোট চারটি বাসার পরিবার একত্র হয়ে যশোরের   শেখহাটি  হয়ে ধানঘাট যান। সেখানে  সাত/আট দিন থাকার পর দুটি পরিবার ভারতে চলে যায় এবং মাওলানা সাঈদী বাঘারপাড়ার মহিরনে তার এক পীরের বাড়ি চলে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  বেশ কয়েকজন সাক্ষী  ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন মে মাসে  পিরোজপুরের পারেরহাটে পাক আর্মি আসলে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যরা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। তার  আগে পারেরহাট শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী গঠনে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন।

কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী জানালেন সাঈদী সাহেব তাদের সাথে ১৯৭১  সালের এপ্রিল মাসে যশোর শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশে বের হয়েছেন  নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।

জবানবন্দী :
আমার নাম মো: আবুল হোসেন। বয়স ৫৬ বছর।
আমি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করি। ১৯৬৮ সাল হতে যশোর নিউ টাউন, ব্লক -এ, ১৮৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে । যশোর সেনানিবাস থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। ২৬, ২৭  ও ২৮ শে মার্চ ওখান থেকে নিয়মিত গোলাগুলি চলে। আমার বাড়ির পাশে ১৮৪ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন শহিদুল ইসলাম সাহেব। তিনি শেখহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পাশের বাসায় ১৮৩ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন একই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ( নাম মনে পড়ছেনা এখন) ।  ১৮২ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন দেলওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব। যশোর শহর থেকে অনেক পরিবার ভয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমাদের এই চার পরিবারের অভিভাবকরা আলোচনা করলেন যে, এখানে তো আর থাকা যায় না। আমরা ১৯৭১ সালের ৩ অথবা ৪ এপ্রিল তারিখে যশোর থেকে শেখহাটি চলে যাই। রাত্রে শেখহাটিতে অবস্থান করি। ওখান থেকে সকালে আমরা আরও ভিতরে পূর্বদিকে ধানঘাটা গ্রামে চলে গিয়ে অবস্থান নেই। সেখানে ১৮৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দার (তার নাম   মনে পড়ছে আবুল খায়ের) মামার বাড়িতে অবস্থান করি। সেখানে ৭/৮ দিন থাকার পরে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আমাদের পরিবার এবং শহিদুল ইসলামের পরিবার ভারতে চলে যাবে ।  আবুল খায়ের তিনি তার মামার বাড়ি ধানঘাটায় থেকে গেলেন । সাঈদী সাহেব ওখান থেকে ৮/৯ মাইল দূরে চলে গেলেন যশোরের বাঘারপাড়া থানাধীন মহিরন উনার এক পীর সাহেবের বাড়িতে। আমাদের পরিবার এবং শহিদুল ইসলামের পরিবার ভারতে চলে যাই। এরপর সাঈদী সাহেবের সংগে আমার আর যোগাযোগ হয় নাই।

জবানবন্দী গ্রহনে সাক্ষীকে সহায়তা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ  আনসারী। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরা :
প্রশ্ন : জাতীয় পরিচয় পত্র এনেছেন সাথে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন  জাতীয় পরিচয়পত্র আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : পরিচয় পত্র ঢাকায় আনেননি না কোর্টে আনেননি  কোনটা?
উত্তর : ঢাকায় আনিনি যশোর থেকে। যশোর আছে।
প্রশ্ন : আপনি কি করেন?
উত্তর : একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করি।
প্রশ্ন :  কতদিন ধরে?
উত্তর : ১০/১২ বছর।
প্রশ্ন : ফার্মের নাম কি/.
উত্তর : স্কয়ার ইলেকট্রিক মাইকপট্টি যশোর।
প্রশ্ন : চাকরি করেন সে মর্মে কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  আপনি যে এলাকায় বাস করেন সে মর্মে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি কি  হিসেবে চাকরি করেন দোকানে?
উত্তর : ম্যানেজার।
প্রশ্ন : সেখানে কতজন কর্মচারি আছে?
উত্তর : চার/পাঁচ জন।
প্রশ্ন : মালিকের নাম?
উত্তর : শহিদুল ইসলাম।
প্রশ্ন : তার বয়স?
উত্তর : ৩৬/৩৭ বছর।
প্রশ্ন : এখানে চাকরির আগে কি করতেন?
উত্তর : কিন্ডার  গার্টেন স্কুলে চাকরি করতাম। আমি একজন সঙ্গিত শিল্পী। গানবাজনারও শিক্ষক ছিলাম।
প্রশ্ন : লেখাপড়া?
উত্তর : যশোরে।
প্রশ্ন : লেখাপড়া সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র এনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আপনার পরিবারের অভিভাবক কে ছিলেন?
উত্তর : বাবা। ১৯৮৫ সালে তিনি মারা গেছেন।
প্রশ্ন : তিনি কি করতেন?


উত্তর : পুলিশ অফিসের হেড এসিসট্যান্ট ছিলেন।
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : নয় ভাই চার বোন।
প্রশ্ন : আপনি কত নম্বর?
উত্তর :  তিন।
প্রশ্ন : আপনার বড় দুই জন কি ভাই  না বোন?
উত্তর : ভাই।
প্রশ্ন : তারা ওই সময় কি করত?
উত্তর :  লেখাপড়া।
প্রশ্ন : আপনার লেখাপড়া কতদূর?
উত্তর : আমি ১৯৭২ সালে এসএসসি পাশ করি।
প্রশ্ন : ভারতে গিয়ে কি করলেন?
উত্তর : বনগা মাদ্রাসার  ক্যাম্পের পাশে থাকতাম।
প্রশ্ন : সবাই মিলে?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাড়ি কোথায়?
উত্তর : ২৪ পরগান জেলার  বশিরহাট।
প্রশ্ন : আপনাদের ১৮৫ নং বাড়িটি কি সরকারি এলটের?
উত্তর : হ্যা। যারা এলট পেয়েছে তাদের কাছে আমরা কিনেছি।
প্রশ্ন : ১৮২, ১৮৩, ১৮৪ নম্বর বাড়িও সরকারি এলটেড?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এখানে যারা থাকত তাদের বেশিরভাগই ভারত থেকে এসেছে? তাদের জন্যই এ বাড়িগুলো করা হয়েছিল।
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : ভারত থেকে কবে আসলেন?
উত্তর : স্বাধীনতার এক মাস পর। তার আগে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আমার বাবা পরিবার নিয়ে এদেশে আসেন এবং তখন থেকে আমরা ওখানেই থাকি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পর  দেশে এসে  কি করলেন ?
উত্তর :  গানবজনার সাথে জড়িত হই।
প্রশ্ন : আকড়ায় যেতেন?
উত্তর : আমি আকড়ার শিল্পী নই। আমি রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক এবং আঞ্চলিক গান করি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব তখন ছেলে মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন?
উত্তর : তার দুই সন্তান, পরিবার এবং কাজের মেয়ে নিয়ে থাকতেন।
প্রশ্ন : তিনি কি করতেন?
উত্তর : ওয়াজ মাহফিল করতেন।
প্রশ্ন : তিনি তার দুই সন্তান, পরিবার এবং কাজের মেয়ে নিয়ে থাকার যে কথা বলেছেন তা সত্য নয়।
উত্তর : থাকতেন।
প্রশ্ন : আপনি জীবনে কত মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন?
উত্তর : এ ধরনের মামলায় আমি এই প্রথম সাক্ষ্য দিলাম। তবে আমি যেখানে চাকরি করি সে প্রতিষ্ঠানের মামলায় আমাকে প্রতি মাসে সাক্ষ্য দিতে হয়  বিভিন্ন কোর্টে।


প্রশ্ন : যে কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করতেন সেটি এখন আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সেটি কবে  হয় এবং কবে বন্ধ হয়?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবনে কোন সংগঠন করতেন/
উত্তর : না।
প্রশ্ন যশোরে কি কি ছাত্রসংগঠন ছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ধানগাটা থেকে কারা আগে গেল?
উত্তর : আমরা আগে ভারতে যাই। ওইদিনই সাঈদী সাহেবও চলে যান।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব ওখান থেকে ৮/৯ মাইল দূরে যশোরের বাঘারপাড়া মহিরন চলে যান বলে যে কথা বলেছেন তা মিথ্যা বলেছেন আপনি।
উত্তর : ১০০ ভাগ সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের গ্রামের বাড়ি কোথায় জানেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের পূর্বে সাঈদী সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় থাকা, পাশাপাশি বাড়িতে বাস করা, একত্রে পলায়ানের যে কথা বলেছেন তা  সত্য নয়।
উত্তর :  সত্য।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার কথা কে বলেছে আপনাকে?
উত্তর : ওনার শ্যালক নান্না মামা।
প্রশ্ন : ওনার সাথে আগে পরিচয় ছিল?
উত্তর : উনি এক বছর আগে আমাদের বাসায় গিয়ে আমার আব্বাকে খোঁজ করেন। তিনি মারা গেছেন জানার পর আমাকে অনুরোধ করেন সাক্ষ্য দেয়ার জন্য।
প্রশ্ন : আপনার পেশা হল সাক্ষ্য দেয়া। এদের দ্বারা আর্থিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে এবং প্রভাবিত হয়ে আপনি এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসলেন।
উত্তর :  আপনি  বলতে পারেন। তবে  তা সত্য নয়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন