১০/৯/২০১২
শাহরিয়ার কবির আজ ট্রাইবু্যুাল -২ এ জেরায় বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না ইহা সত্য। সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল। মওলানা মতিউর রহমান নিজামী বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
জেরায় শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বঞ্চালীয কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী লিখিত বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। জেনালে নিয়াজী এই বইয়ে বলেছেন রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী। ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।
আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ সাক্ষীকে জেরা করেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
জেরা :
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর একটা প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সামরিক বাহিনীর প্রজ্ঞাপন জারীর পূর্বে ঢাকা জেলার রাজাকার বাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট কে ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর : তা আমি বই না দেখে বলতে পারব না। এই তথ্যটি একাত্তরের ঘাতকেরা কে কোথায় নামক বইতে পাওয়া যাবে
প্রশ্ন : এই প্রজ্ঞাপন জারির পরে রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বা পরিচালনার দায়িত্ব ইস্টার্ন-কমান্ডের কোন অফিসারের উপর দেওয়া হয়েছিল বলতে পারবেন?
উত্তর : তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলায় তালিকাভূক্ত রাজাকারের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : তা বই না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মেজর আরেফিন কর্তৃক তিন খন্ডের সম্পাদিত তেত্রিশ হাজার রাজাকারের পরিচিতি সম্বলিত একটি বই আছে যেখানে ঢাকা জেলার রাজাকারদের সংখ্যা ও তালিকা আছে।
উত্তর : থাকতে পারে।
মেজর আরিফিনের বইয়ে তিনি রাজাকারদের দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেননি। আমার গবেষণাতে এবং মেজর আরেফিনের উল্লেখিত বইয়ে রাজাকারদের দলীয় পরিচিতি সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। (পরে বলেন) আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ রাজাকারই দলীয় পরিচয়ে পরিচিত ছিল আবার অনেকের দলীয় পরিচয় ছিল না। (আপত্তি সহকারে) যুদ্ধাপরাধ একাত্তর শীর্ষক প্রমাণ্য চিত্রে উল্লেখ আছে জামায়াত নেতারা কিভাবে রাজাকার বাহিনীতে জামায়াত কর্মী এবং সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভূক্তি ঘটিয়েছিলেন। এ ছাড়াও মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।
প্রশ্ন : রাজাকাররা পাকিস্তানে সেনা বাহিনীর সহযোগী বাহিনীর বেতনভোগী সদস্য ছিল। মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন।
উত্তর : (আপত্তি সহকারে) রাজাকাররা জামায়াত নেতাদের সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহন করত।
প্রশ্নঃ অধ্যাপক গোলম আযম, আব্বাস আলী খান, এড. আফাজ উদ্দিন, মতিউর রহমান নিজামী এদের কারো কর্তিক ইস্যুকৃত রাজাকারের পরিচয় পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?
উত্তরঃ আমার সংগ্রহে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাক্ষরিত কোন রাজাকারের পরিচয় পত্র নেই। আমার প্রামাণ্য চিত্রে রাজাকাররা তাদের সাক্ষাতকারে বলেছেন তারা মতিউর রহমান নিজামীর সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহণ করত।
প্রশ্ন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
উত্তর: ইহা সত্য। সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল। মওলানা মতিউর রহমান নিজামী বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
প্রশ্ন: আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী কর্তৃক লিখিত বিট্রেয়াল অব ইস্টপাকিস্তান বইটি পড়েছেন?
উত্তর: বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী বলেছেন, রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী এবং ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী আরো বলেছেন, আল-বদর ও আল-শামস নামে কোন পৃথক বাহিনী ছিল না। এগুলো রাজাকার বাহিনীর দুটি উইং বা শাখা ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ। এটা নিয়াজীর কথা।
প্রশ্ন: আল-বদর বাইটি আপনি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বইটির লেখক সেলিম মনসুর খালেদ?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বইয়ে আল বদর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আল-বদর বাহিনী সৃষ্টি করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জামালপুরে কর্মরত মেজর রিয়াজ এবং আল-বদর নামও তার দেয়া।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলী কমান্ড যখন যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমার্পণ করেন তখন তাদের সঙ্গে তাদের সহযোগী বাহিনীও আত্মসমার্পণ করে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বাহিনীগুলো ছিল ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস।
উত্তর: অনেকেই আত্মসমার্পণ করেন, এগুলো আংশিক সত্য।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনীর তালিকায় আল-বদর আল-শামস বাহিনীর নাম ছিল না।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের কি হয়েছিল?
উত্তর: রাজাকারদের অধিকাংশই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। আর যারা যুদ্ধবন্দী হিসেবে দেশে ছিল তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছিল। আত্মসমর্পণকৃত রাজাকাররা যারা এদেশে থেকে যায় তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছে।
প্রশ্ন: যেসক রাজাকারদের বিচার হয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের যাদের বিচার হয়েছিল তাদের বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস এর প্রধান কে ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর: মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: রাজাকারদেরকে মহাকুমা প্রশাসক নিয়োগ দিতেন?
উত্তর: দিতেন, পরে বলেন জামায়াত নেতারা তাদের আইডি কার্ড দিতেন।
প্রশ্ন: অধ্যাপক গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী কর্তৃক ইস্যুকৃত আপনার কথিত রাজাকারদের পরিচয়পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?
উত্তর: সংগ্রহে নেই।
প্রশ্ন: রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তান সরকার একটি প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ৭১ সালে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুর অবাঙ্গালী বিহারী অধ্যুসিত এলাকা বা বিহারী সংখ্যা গরিষ্ট এলাকা ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এ এলাকা থেকে ’৭০ এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন এবং তিনি বিহারী ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিও ছিলেন।
উত্তর: এটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদেননি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা উত্তর গঠিত গণপরিষদে তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতা করার জন্য অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটি বেসামরিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন মুসলিম লীগের খাজা খয়েব উদ্দিন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরণ করার অভিযোগে স্বাধীনতার পর একটি মামলা করা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলা করেছিলেন নাসির আহমেদ।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পান্না কায়সার, নাসির আহমেদ, জাকারিয়া হাবিব, নিলা জাকারিয়া এবং শাহানা বেগমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলাকারী নাসির আহমেদ ওই ঘটনায় জড়িয়ে কোন আল-বদর কমান্ডারের নাম উল্লেখ করেননি।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: জহির রায়হান ও অন্যান্যদের সহায়তায় এবিএমএ খালেক মজুমদারকে আটক করে শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন কি না?
উত্তর: জানা নেই। তখন দেশের বাইরে ছিলাম।
প্রশ্ন: ওই সময় এবিএমএ খালেক মজুমদারের দালাল আইনে সাত বছর সাজা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: দণ্ডের বিরুদ্ধে এবিএমএ খালেক মজুমদার হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি বদরুল হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাকে খালাস প্রদান করেন।
উত্তর: এ আপিল কবে হয় এবং কবে নিষ্পত্তি হয় তা জানা নেই।
প্রশ্ন: এবিএমএ খালেক মজুমদারের আপিলের রায় ম্যারিটের উপর হয়?
উত্তর: রায় না দেখার কারণে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: দালাল আইন বাতিল হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিলকৃত আপিল সমূহ ম্যারিটের বা গুনাগুণ বিবেচনায় নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাজা বহাল, এমনকি সাজা বৃদ্ধিও করা হয়েছে।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: অধ্যাপক মুনির চৌধুরী অপহরণের অভিযোগে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল এবং ওই মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।
উত্তর: জানা নেই। দালাল আইনে আধীনে যে বিচার হয়েছে তা শহীদ পরিবারের সদস্যরা কখনো মেনে নেয়নি কারণ প্রচলিত আইনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: তা হলে দালাল আইনকে কালো আইন মনে করেন কি না?
উত্তর: না, দালাল আইনের ক্রটিমুক্ত করার জন্য ’৭৩ সালে আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন করা হয়।
প্রশ্ন: ওই সময় তিনজন বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ও মনোরঞ্জন ধর দালাল আইন ও আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ করার সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
শাহরিয়ার কবির আজ ট্রাইবু্যুাল -২ এ জেরায় বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না ইহা সত্য। সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল। মওলানা মতিউর রহমান নিজামী বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
জেরায় শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বঞ্চালীয কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী লিখিত বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। জেনালে নিয়াজী এই বইয়ে বলেছেন রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী। ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।
আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ সাক্ষীকে জেরা করেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
জেরা :
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর একটা প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সামরিক বাহিনীর প্রজ্ঞাপন জারীর পূর্বে ঢাকা জেলার রাজাকার বাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট কে ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর : তা আমি বই না দেখে বলতে পারব না। এই তথ্যটি একাত্তরের ঘাতকেরা কে কোথায় নামক বইতে পাওয়া যাবে
প্রশ্ন : এই প্রজ্ঞাপন জারির পরে রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বা পরিচালনার দায়িত্ব ইস্টার্ন-কমান্ডের কোন অফিসারের উপর দেওয়া হয়েছিল বলতে পারবেন?
উত্তর : তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলায় তালিকাভূক্ত রাজাকারের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : তা বই না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মেজর আরেফিন কর্তৃক তিন খন্ডের সম্পাদিত তেত্রিশ হাজার রাজাকারের পরিচিতি সম্বলিত একটি বই আছে যেখানে ঢাকা জেলার রাজাকারদের সংখ্যা ও তালিকা আছে।
উত্তর : থাকতে পারে।
মেজর আরিফিনের বইয়ে তিনি রাজাকারদের দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেননি। আমার গবেষণাতে এবং মেজর আরেফিনের উল্লেখিত বইয়ে রাজাকারদের দলীয় পরিচিতি সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। (পরে বলেন) আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ রাজাকারই দলীয় পরিচয়ে পরিচিত ছিল আবার অনেকের দলীয় পরিচয় ছিল না। (আপত্তি সহকারে) যুদ্ধাপরাধ একাত্তর শীর্ষক প্রমাণ্য চিত্রে উল্লেখ আছে জামায়াত নেতারা কিভাবে রাজাকার বাহিনীতে জামায়াত কর্মী এবং সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভূক্তি ঘটিয়েছিলেন। এ ছাড়াও মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।
প্রশ্ন : রাজাকাররা পাকিস্তানে সেনা বাহিনীর সহযোগী বাহিনীর বেতনভোগী সদস্য ছিল। মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন।
উত্তর : (আপত্তি সহকারে) রাজাকাররা জামায়াত নেতাদের সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহন করত।
প্রশ্নঃ অধ্যাপক গোলম আযম, আব্বাস আলী খান, এড. আফাজ উদ্দিন, মতিউর রহমান নিজামী এদের কারো কর্তিক ইস্যুকৃত রাজাকারের পরিচয় পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?
উত্তরঃ আমার সংগ্রহে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাক্ষরিত কোন রাজাকারের পরিচয় পত্র নেই। আমার প্রামাণ্য চিত্রে রাজাকাররা তাদের সাক্ষাতকারে বলেছেন তারা মতিউর রহমান নিজামীর সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহণ করত।
প্রশ্ন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
উত্তর: ইহা সত্য। সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল। মওলানা মতিউর রহমান নিজামী বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
প্রশ্ন: আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী কর্তৃক লিখিত বিট্রেয়াল অব ইস্টপাকিস্তান বইটি পড়েছেন?
উত্তর: বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী বলেছেন, রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী এবং ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী আরো বলেছেন, আল-বদর ও আল-শামস নামে কোন পৃথক বাহিনী ছিল না। এগুলো রাজাকার বাহিনীর দুটি উইং বা শাখা ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ। এটা নিয়াজীর কথা।
প্রশ্ন: আল-বদর বাইটি আপনি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বইটির লেখক সেলিম মনসুর খালেদ?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বইয়ে আল বদর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আল-বদর বাহিনী সৃষ্টি করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জামালপুরে কর্মরত মেজর রিয়াজ এবং আল-বদর নামও তার দেয়া।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলী কমান্ড যখন যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমার্পণ করেন তখন তাদের সঙ্গে তাদের সহযোগী বাহিনীও আত্মসমার্পণ করে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বাহিনীগুলো ছিল ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস।
উত্তর: অনেকেই আত্মসমার্পণ করেন, এগুলো আংশিক সত্য।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনীর তালিকায় আল-বদর আল-শামস বাহিনীর নাম ছিল না।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের কি হয়েছিল?
উত্তর: রাজাকারদের অধিকাংশই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। আর যারা যুদ্ধবন্দী হিসেবে দেশে ছিল তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছিল। আত্মসমর্পণকৃত রাজাকাররা যারা এদেশে থেকে যায় তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছে।
প্রশ্ন: যেসক রাজাকারদের বিচার হয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের যাদের বিচার হয়েছিল তাদের বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস এর প্রধান কে ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর: মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: রাজাকারদেরকে মহাকুমা প্রশাসক নিয়োগ দিতেন?
উত্তর: দিতেন, পরে বলেন জামায়াত নেতারা তাদের আইডি কার্ড দিতেন।
প্রশ্ন: অধ্যাপক গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী কর্তৃক ইস্যুকৃত আপনার কথিত রাজাকারদের পরিচয়পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?
উত্তর: সংগ্রহে নেই।
প্রশ্ন: রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তান সরকার একটি প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ৭১ সালে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুর অবাঙ্গালী বিহারী অধ্যুসিত এলাকা বা বিহারী সংখ্যা গরিষ্ট এলাকা ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এ এলাকা থেকে ’৭০ এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন এবং তিনি বিহারী ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিও ছিলেন।
উত্তর: এটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদেননি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা উত্তর গঠিত গণপরিষদে তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতা করার জন্য অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটি বেসামরিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন মুসলিম লীগের খাজা খয়েব উদ্দিন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরণ করার অভিযোগে স্বাধীনতার পর একটি মামলা করা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলা করেছিলেন নাসির আহমেদ।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পান্না কায়সার, নাসির আহমেদ, জাকারিয়া হাবিব, নিলা জাকারিয়া এবং শাহানা বেগমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলাকারী নাসির আহমেদ ওই ঘটনায় জড়িয়ে কোন আল-বদর কমান্ডারের নাম উল্লেখ করেননি।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: জহির রায়হান ও অন্যান্যদের সহায়তায় এবিএমএ খালেক মজুমদারকে আটক করে শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন কি না?
উত্তর: জানা নেই। তখন দেশের বাইরে ছিলাম।
প্রশ্ন: ওই সময় এবিএমএ খালেক মজুমদারের দালাল আইনে সাত বছর সাজা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: দণ্ডের বিরুদ্ধে এবিএমএ খালেক মজুমদার হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি বদরুল হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাকে খালাস প্রদান করেন।
উত্তর: এ আপিল কবে হয় এবং কবে নিষ্পত্তি হয় তা জানা নেই।
প্রশ্ন: এবিএমএ খালেক মজুমদারের আপিলের রায় ম্যারিটের উপর হয়?
উত্তর: রায় না দেখার কারণে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: দালাল আইন বাতিল হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিলকৃত আপিল সমূহ ম্যারিটের বা গুনাগুণ বিবেচনায় নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাজা বহাল, এমনকি সাজা বৃদ্ধিও করা হয়েছে।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: অধ্যাপক মুনির চৌধুরী অপহরণের অভিযোগে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল এবং ওই মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।
উত্তর: জানা নেই। দালাল আইনে আধীনে যে বিচার হয়েছে তা শহীদ পরিবারের সদস্যরা কখনো মেনে নেয়নি কারণ প্রচলিত আইনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: তা হলে দালাল আইনকে কালো আইন মনে করেন কি না?
উত্তর: না, দালাল আইনের ক্রটিমুক্ত করার জন্য ’৭৩ সালে আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন করা হয়।
প্রশ্ন: ওই সময় তিনজন বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ও মনোরঞ্জন ধর দালাল আইন ও আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ করার সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন