মেহেদী হাসান, ১৭/৯/২০১২
‘মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস’ নামক বইয়ে ওই জেলার শান্তি কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ‘মিছবাহ’ এবং ‘ছানু মিয়া’ নামে দুটি নাম উল্লেখ আছে। আজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরার সময় এ বই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাক্ষী বলেন, বইটি আমি পড়িনাই এবং বইয়ের নামও শুনিনাই।
এছাড়া মৌলভীবাজার মহকুমার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একটি স্মরনিকা বের হয় ১৯৮২ সালে । এর নাম ‘শতাব্দী’। সেখানে পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ এবং ‘ছানু মিয়া’র নাম রয়েছে।
এই বইটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মিছাবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বইটির নাম আমি জানি। তবে সেখানে তার এবং তার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় আছে কি-না তা তার জানা নেই।
মাওলানা নিজামীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, মৌলভীবাজার জেলার ইতহাস বইয়ে শন্তি কমিটির তালিকায় ‘মিছবাহ’ এবং শতাব্দী নামক স্মরনিকায় ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ হিসেবে যার নাম উল্লেখ আছে তিনি মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। উভয় স্থানে পিতার নাম ছানু মিয়া উল্লেখ আছে। মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর পিতার নাম ছানু মিয়া। মিজানুল ইসলাম বলেন আমরা বই দুটি ট্রাইব্যুনালে ডকুমেন্ট হিসেবে জমা দিয়েছি।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে আজ তৃতীয় দফা জেরা করা হয়।
জেরায় মিছবাহুর রহমান চৌধুরী স্বীকার করেন ১৯৭৪ সালে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের মিছিলে নেতৃত্বের বিষয় অস্বীকার করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নানার নাম অন্নদা ঠাকুর ভট্টচার্য।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরা করেন মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেম মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন প্রমুখ।
জেরা :
প্রশ্ন : ১৯৯৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঈদে মিলাদুন্নবীর একটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সাহেব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন । সেখানে গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগে আপনাকে গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর : হ্যা । কথিত অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।
প্রশ্ন : আনপাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের এক আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল ১৯৭৪ সালে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাকে দুই দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের একটি মিছিলে আপনি নেতৃত্ব দেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার কথা অনুযায়ী যে পত্রিকায় আপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?
উত্তর : না। তবে প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলাম। আমি কোন পত্রিকার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেই নাই। পত্রিকায় যখন এই খবরটি ছাপা হয় তখন আমি কারাগারে ছিলাম। আমার সংগঠন প্রতিবাদটি পাঠিয়েছিল।
প্রশ্ন : প্রতিবাদ ছাপা হয়েছিল?
উত্তর : যে পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছিল তারা আমাদের এ প্রতিবাদটি ছাপায় নাই, তবে অন্যান্য পত্রিকায় প্রতিবাদটি ছাপানো হয়েছিল।
প্রশ্ন : আপনি বায়তুল মোকাররম হকার কমিটির সভাপতি ছিলেন।
উত্তর : না। বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলাম।
প্রশ্ন : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রণে থেকে বায়তুল মোকাররমকে মুক্ত করে আপনার মুসল্লী কমিটি কর্তৃক পরিচালনার দাবী করেছিলেন আপনি।
উত্তর : সঠিক নয়।
প্রশ্ন : আপনার মানব সম্পদ রাপ্তানীর লাইসেন্স ছিল?
উত্তর : কোন দিন ছিল না।
প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল।
উত্তর : ওই একই পত্রিকায় এ অভিযোগ লেখা হয়েছিল।
(আপনার দশ বউ লেখা হয়েছিল। জবাবে মিছবাহ চৌধুরী বলেন আমার একজনই বউ। তবে এ প্রশ্নটি কোর্ট এলাউ করেনি।)
প্রশ্ন : ১৬৮, বাসাবো মুন্নী বেগমকে চেনেন?
উত্তর : চিনি। তার সঙ্গে আমার কাবিননামা সম্পন্ন হয়েছিল তবে তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বেই পরিবারিকভাবে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।
প্রশ্ন : ১৭৮/বি, খিলগাঁও এর আজিজুর রহমানকে চেনেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : খিলগাঁও একটি বাড়িতে আপনি ভাড়া থাকতেন।
উত্তর : একটি বাড়িতে আমি ভাড়া ছিলাম। আমি জানতে পারি যে, ঐ বাড়ির মালিক জামায়াতে ইসলামীর রোকন। তখন আমি সেই বাসা ছেড়ে দেই।
প্রশ্ন : ঐ বাড়িওয়ালা আপনার বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করেছিল?
উত্তর : আজ প্রথম শুনলাম।
প্রশ্ন : আপনি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী লোক?
উত্তর : আপনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরসের একজন সদস্য।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
উত্তর : হ্যা।
(এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ব্যালে ড্যান্সের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোর্ট তা এলাউ করেনি)
প্রশ্ন : আপনার এলাকায় আপনার পিতামাতার নামে একটি হাসপাতাল তৈরির জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
উত্তর : আমাদের পারিবারিক জমিতে তা করা হয়। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নয়, বায়তুল মোকাররমের মাননীয় খতিব মাওলানা সালাউদ্দিন সাহেব ২০১১ সালে করেছিলেন।
প্রশ্ন : কাজ শুরু হয়েছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : টুরিষ্ট ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েটস লিমিটেড বাংলাদেশের এর আপনি কি?
উত্তর : এমডি।
প্রশ্ন : চেয়ারম্যান কে?
উত্তর : আমার বোন বেগম গুলশান আক্তার চৌধুরী, উনি লন্ডন প্রবাসী।
প্রশ্ন : হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে স্থানীয় এলাকাবাসী অন্যের জায়গায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে মর্মে এর প্রতিবাদ করেছে এবং সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। ফলে সেখানে হাসপাতালের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
উত্তর :সঠিক নয়।
প্রশ্ন : এ ব্যাপারে পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন?
উত্তর : সংবাদ সম্মেলন বা অভিযোগে হাসপাতাল বিষয়ে কিছু ছিলনা।
প্রশ্ন : “মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস” যার লেখক মোঃ মোমিনুল হক, বটি পড়েছেন?
উত্তর : পড়ি নাই।
প্রশ্ন : নাম শুনেছেন?
উত্তর : নামও শুনি নাই।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার মহকুমার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘শতাব্দি’ নামে একটি স্মরণিকা বের হয়েছিল জানেন?
উত্তর : তা আমি জানি।
প্রশ্ন : ঐ বইয়ে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের অনেকের নাম আছে।
উত্তর : থাকতে পারে।
প্রশ্ন : আপনার এবং আপনার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে ঐ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ।
উত্তর : তা আমি জানিনা।
প্রশ্ন : মোমিনুুল হক লিখিত মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস নামক বইয়ে আপনার এবং আপনার পিতার নাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে উল্লেখ থাকায় আপনি তা জেনেও অস্বিকার করছেন ।
উত্তর : ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিলেট জেলার দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার মালিক, কর্ণেল সরফরাজ মালিক এবং ক্যাপ্টেন নুরুদ্দিন খান কে চেনেন?
উত্তর : ১৯৭১ সালে দায়িত্বে ছিলেন কিনা তা আমি জানিনা, তবে পরবর্তিকালে দুই/একজনের নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার মহকুমার ব্রিগেডিয়ার আলী, মেজর আজিজ খান, ক্যাপ্টেন ইউসুফ ও ক্যাপ্টেন রফিক, সুবেদার লালমনি চেনেন?
উত্তর : ক্যাপ্টেন ইউসুফের নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনাদের বাড়ি থেকে নিকটবর্তী আর্মি ক্যাম্প কতদূর?
উত্তর : দুই মাইলের মত দূরে ছিল। ক্যাম্পটি কোর্ট রোডের মাথায় ছিল, সম্ভবত সার্কিট হাউজে ছিল।
প্রশ্ন : এর চার্জে কে ছিল?
উত্তর : আমি ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাদের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছিলাম তা হলো মেজর ফখরুল ইসলাম ছিলেন ঐ ক্যাম্পের দায়িত্বে।
প্রশ্ন : ছাত্রসংঘের কোন কোন নেতার সাথে তখন আপনার পরিচয় ছিল?
উত্তর : ইসলামী ছাত্র সংঘের সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মোহাম্মদ আলী, ইসহাক এবং জামায়াতে ইসলামীর জনাব এডভোকেট আব্দুল মান্নান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জামায়াতে ইসলামীর আমীর এদের সঙ্গে দুইদিন জামায়াতে ইসলামীর অফিসে বসে আমার আলাপ হয়।
প্রশ্ন : রাজাকার ও পিস কমিটির অফিস কোথায় ছিল জানা আছে?
উত্তর : তা আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : আপনি লন্ডন যাবার আগে মৌলভীবাজারে অবস্থানকালীন সময়ে আল-বদর গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : কার্র্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে আল-বদর বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়নি।
প্রশ্ন : শাহিন ফৌজের নিজস্ব কোন অফিস ছিল?
উত্তর : না, তবে ইসলামী ছাত্র সংঘের অফিসে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
প্রশ্ন : মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে আপনার কোন দিন দেখা হয়েছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি হয়েছিল সেই তালিকা দেখেছিলেন?
উত্তর : পত্রিকায় দেখেছি।
প্রশ্ন : তাতে সর্বপ্রথমে কার নাম ছিল?
উত্তর : তা আমার মনে নাই।
প্রশ্ন : মেজর ফখরুলের নাম ঐ তালিকায় দেখেছিলেন?
উত্তর : মনে নাই কারণ পাকিস্তানীদের নাম আমি মনোযোগসহকারে দেখি নাই।
প্রশ্ন : ঐ তালিকায় কোন বাঙ্গালীর নাম ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি যে দুইদিন জামায়াতে ইসলামীর অফিসে গিয়েছিলেন তার তারিখ এবং মাস মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : মতিলব সাহেবেকর চিঠি পাবার আগে না পরে?
উত্তর : প্রথম দিন গিয়েছিলাম মতলিব সাহেবের চিঠি পাওয়ার আগে, দ্বিতীয়বার সম্ভবতঃ ঐ চিঠিটি পাওয়ার পরের দিন।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব আপনার বাসায় নিয়মিত আসতেন?
উত্তর : না, মাঝে মাঝে আসতেন।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব আপনাকে আরো চিঠি দিয়েছিলেন?
উত্তর : আমাকে ছাত্র সংঘ করাকালীন ঐ একটি চিঠিই দিয়েছিলেন, আমরা যেহেতু একই জায়গার বাসিন্দা কাজেই এর বেশি প্রয়োজন হয় নাই।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব কোথায় থাকতেন?
উত্তর : সেই সময়ে মতলিব সাহেবের শহরে বাড়ী ছিল না, উনি তখন মৌলভীবাজার ছাত্রাবাসে অবস্থান করতেন।
প্রশ্ন : আপনি তার গ্রামের বড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর : না। সেটা আমার বাড়ি থেকে ৭/৮ মাইল দূরে। ছাত্রাবাসটি আমার বাড়ি থেকে দেড়/দুই মাইল দূরে।
প্রশ্ন : দেশ স্বাধীনের পরে মুক্তিবাহিনীরা মৌলভীবাজারে এসে সরকারী হাইস্কুলে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি সে ক্যাম্পে গিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঐ ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্বে কে ছিলেন?
উত্তর : তা আমার এখন মনে নেই। তবে আমি যাদের নিকট গিয়েছিলাম তার মধ্যে আমার চাচাতো ভাই তৌফিকুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন, আরও ছিলেন আব্দুল মোছাব্বির বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান উনিও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। আরও অনেক আত্মীয়-স্বজন ছিলেন।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজার কবে মুক্ত হয়?
উত্তর : ১৬ ডিসেম্বরের দুইদিন আগে
প্রশ্ন : ঐ সময়ে মৌলভীবাজারের এম.এন.এ ছিলেন ইলিয়াস আলী সাহেব।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঐ সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ধরে এনে কোথায় আটক রাখা হতো ?
উত্তর : তা আমি জানি না।
প্রশ্ন : ঐ সময়ে মেজর ফখরুলের বিরুদ্ধে তৌফিকুল হক চৌধুরী বা ইলিয়াস আলী সাহেবসহ কোন ব্যক্তির নিকট অভিযোগ করেছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পরে লন্ডন যাওয়ার আগ পর্যন্ত মৌলভীবাজারে অবস্থানকালীন সময়ে মতলিব সাহেবের সঙ্গে দেখা হয় ?
উত্তর : না। কারণ তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের কোন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
উত্তর : স্মরণ নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংঘের এক সম্মেলন উপলক্ষে সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনেকের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজারে রাজনগর থানাধীন পাঁচগাঁও গ্রামের নাম শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : উদনা চা বাগানে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : মজিদপুর গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : রাজনগর পাঁচগাঁওয়ে একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার নানাবাড়ী কোথায়?
উত্তর : আমাদের গ্রামের পাশের গ্রাম নবীনগরে।
প্রশ্ন : আপনার নানার নাম?
উত্তর : অন্নদা ঠাকুর ভট্রাচার্য্য।
প্রশ্ন : তারা এদেশে এসেছেন ?
উত্তর : তারা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব থেকেই কলকাতায় বসবাস করেন।
প্রশ্ন : মঈনদ্দিন চৌধুরী মধুমিয়া আপনার কি হয়?
উত্তর : আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি পাক বাহিনীর সহায়তা নিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
উত্তর : ইহা সত্য নহে।
প্রশ্ন : আপনাদের এলাকা কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল ?
উত্তর : তা আমার খেয়াল নেই।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেব এখনও জীবিত আছেন?
উত্তর : হ্যা। আমি শুনেছি তদন্ত সংস্থা তাকে হাজির হওয়ার চিঠি দিয়েছিল তবে উনি হাজির হন নাই।
প্রশ্ন : বর্তমানে কি তিনি পলাতক/
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ওই চিঠি ছাড়াও তার হাতের লেখা কোন কিছু আপনি দেখেছেন?
উত্তর : দেখেছি।
প্রশ্ন : তার হাতের লেখা কোন কাগজ তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর : তিনি আমাকে মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য হাতে লেখা নোটিশ দিতেন। ঐ চিঠি ব্যতিত তার হাতের লেখা কোন কাগজ আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেই নাই, কারণ তিনি আমার কাছে চান নাই।
প্রশ্ন : মতলিব সাহেবের হাতের লেখা কোন কাগজ আপনি আজ ট্রাইব্যুনালে দেখাতে পারবেন?
উত্তর : না। তবে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল চাইলে আমি আনার চেষ্টা করবো।
( প্রশ্ন : পরে যদি আরেকদিন আপনার জেরা হয় সেদিন কি নিয়ে আসতে পারবেন? এ প্রশ্নটি ট্রাইব্যুনাল রেকর্ড করেননি)
প্রশ্ন : মৌলভীবাজারে আনুষ্ঠানকিভাবে আল-বদর বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয় কবে?
উত্তর : আগষ্ট মাসে বলে আমি শুনেছি।
প্রশ্ন : মৗলভীবাজারের আল-বদরদের নাম এবং সংখ্যা বলতে পারবেন?
উত্তর : জামায়াতে ইসলামী তাদের রোকনদের তালিকা প্রকাশ করলে আমার পক্ষে মৌলভীবাজারের আল-বদরদের সংখ্যা বলা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন : মৌলভীবাজারের ১০ জন আল-বদরের নাম বলেন।
উত্তর : আমি বলতে পারব না কারণ এই বিষয়ে আমি গবেষণা করি নাই।
প্রশ্ন : রেজিমেন্ট, কান্টিনজেন্ট ও ট্যাবলো কি জানেন?
উত্তর : রেজিমেন্ট সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা আছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর কখনো কোন যুব সংগঠন ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আল বদর গঠনের কথা কবে প্রথম জানলেন?
উত্তর : ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিব সাহেবের চিঠির মাধ্যমে আল-বদর বাহিনী গঠনের বিষয়টি আমি জানতে পারি।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ মর্মে জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রকাশিত কোন কাগজপত্র আপনার গবেষণার সময় পেয়েছেন?
উত্তর : আমি পাই নাই, কারণ সেগুলো এর পূর্বেই ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রশ্ন : এ তথ্য কবে পান?
উত্তর : ১৯৭৭/৭৮ সালে
প্রশ্ন : গবেষণা রিপোর্ট সর্বপ্রথম কবে প্রকাশ করেন?
উত্তর : ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাংশ প্রকাশ করি।
প্রশ্ন : পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আজ অবধি প্রকাশ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এই রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে আপনি ব্যক্তিগতভাবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : না। যদিও তার সঙ্গে আমার দুই বার দেখা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কিছু বলিনাই।
প্রশ্ন : কবে দেখা হয়?
উত্তর : চারদলীয় জোট গঠনের পর তার ।
প্রশ্ন : মুফতি এজাহার সাহেব এবং আপনার মধ্যে বিভক্তির আগে না পরে নিজামী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ?
উত্তর : তা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার আগে কি কখনো জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৬২ সালে ।
প্রশ্ন : কিভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়?
উত্তর : পাকিস্তান সেনা শাসকদেরকে তোষামোদের মাধ্যমে।
প্রশ্ন : ফ্যাসিজম সম্পর্কে ধারণা আছে? আপনি জামায়াততে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উত্তর : আছে।
উত্তর :
প্রশ্ন : ফ্যাসিস্টদের যে দল ছিল সে দল গণতান্ত্রিকভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করেনা।
উত্তর : ফ্যাসিস্টরা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি অবলম্বন করলেও প্রকৃতপক্ষে ইহা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।
প্রশ্ন : ফ্যাসিস্ট দলটা কোন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ফ্যাসিজম বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে আসে তবে জার্মানীতে হিটলার এবং ইতালিতে মুসোলিনী ফ্যাসিস্ট হিসেবে সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত।
প্রশ্ন : শাহীন ফৌজের সভাপতি হিসেবে আনপাকে যে নির্বাচিত করা হয় তা কি ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে হয়েছিল?
উত্তর : আমাকে যে নির্বাচন করা হয়েছিল তা অবশ্যই ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতৃবৃন্দের ইচ্ছায় হয়েছিল এবং তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে, ইহা ফ্যাসিসজম কিনা তা তখন আমার ধারণা ছিল না।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়েছে এ মর্মে কতটি বই সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : অনেক। একটা যেমন তাফহীমুল কোরআন।
প্রশ্ন : এই অপব্যাখ্যা সমূহের সংশোধন করে প্রকৃত ব্যাখ্যা সহকারেআপনি কোন বই প্রকাশ করেছেন?
উত্তর : আমি করি নাই, তবে প্রখ্যাত আলেমদের দ্বারা অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগ একসাথে রাজনীতি করেছে।
উত্তর : একসাথে নয় এক ইস্যুতে রাজনীতি করেছে।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে একসঙ্গে বসে আলাপ করার কোন ছবি দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত একক প্রার্থী দিয়েছে এরকম কোন নির্বাচন দেখেছেন?
উত্তর : বেগম ফাতেমা জিন্নাহকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সেই সময়ে আইয়ুব খান এবং মুসলিম লীগ ব্যতীত অন্য সমস্ত দল একত্র হয়ে সমর্থন দিয়েছিল আইউব খানকে ঠেকানোর জন্য। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী ছিল, ইহা সত্য।
প্রশ্ন : অখন্ড পাকিস্তানের সর্বশেষ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের এবং উপনেতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তা জাননে?
উত্তর : তা আমার জানা নাই। (পরে বলেন) যতদূর মনে পড়ে উপনেতা ছিলেন নেজামী ইসলামী দলের।
প্রশ্ন : ঐ সময় আপনি ছাত্রসংঘ করতেন?
উত্তর : জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন