রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন মুক্তিযোদ্ধা খসরুল আলম

মেহেদী হাসান, ১৬/৯/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ পঞ্চম সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন ট্রাইব্যুনালে (১)।  তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম  খসরুল  আলম। তার বাড়ি শঙ্করপাশা  ইউনিয়নে। পাড়েরহাট মুক্ত হওয়ার পর তিনিসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করেন।

জবানবন্দী:
আমার নমা খসরুল আলম। পিতা মৃত কাসেম আলী মাতুব্বর। বয়স ৬২।
১৯৭১ সালে আমি মোড়েলগঞ্জ  এস এম কলেজে এই কম ছাত্র ছিলাম। ১৯৭০  সালে আমি সেখানে  ভর্তি হই। আমি মোড়েলগঞ্জ কলেজের ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। কলেজের তখনকার ভিপি লিয়াকত আলী খান, সাবেক ভিপি মোশাররফ হোসেন খান একত্রিত হয়ে মোড়েলগঞ্জের প্রাক্তন আর্মি সুবেদার এস এম কবির আহমেদের নেতৃত্বে  মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে অগ্রসর হই। এভাবে কবির আহমেদের নেতৃত্বে আমরা রাইফেলের ট্রেনিং নেই। তার সাথে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাই। তারপর সংবাদ পাই আমি ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের কারনে শঙ্করপাশা (ডাক পাড়েরহাট, পিরোজপুর) আমাদের বাড়িতে পাড়েরহাটের পিস কমিটির সদস্য মৌলভী শফিজউদ্দিনের ছেলে মহসিন রাজাকার কয়েকজন পাঞ্জাবী সেনা নিয়ে   যায়। তারপর আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়ে ছাই   করে দেয়। আমার ষাটোর্ধ মাকে পাকিস্তানীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। মে মাসের শেষের দিকে এ খবর পাই। এ ঘটনা শুনে মোড়েলগঞ্জের ভিপি লিয়াকত আলী খানের নেতৃত্বে সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের  স্টুডেন্ট ক্যাম্প গঠন করা হয়।  তার সাথে শামসুল আলম তালুকদার ছিলেন। স্টুডেন্ট ক্যাম্প গঠনের পর আমরা অনেক  ছাত্র ক্যাম্পে যোগ দেই। আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য ক্যাপ্টেন জিয়া পরিতোষ নামে  একজন ইনস্ট্রাক্টর   নিয়োগ দেন। প্রশিক্ষনের পর অভিযান   শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জিয়া পিরোজপুর দখলের জন্য আড়াইশর  মত মুক্তিযোদ্ধা পাঠান লিয়াকতের নেতৃত্বে। রওয়ানার পরে রাত একটা বা দেড়টার দিকে পাড়েরহাট পৌছাই। লিয়াকত আলী শেখ বাদশা সেখানে কতক্ষন অবস্থান করেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পারেরহাট বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে। আমাদের আসার খবর পেয়ে রাজাকাররা ক্যাম্প থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে পালিয়ে যায়। লিয়াকত আলী বাদশা আমাদের ওখানে রেখে যান ক্যাম্প দেখাশুনার জন্য। মোকাররম হোসেন কবির, আব্দুল গনি পশারী ছিলেন আমাদের সাথে। এরপর ক্যাপ্টেন জিয়া এবং তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পারেরহাট হাজির হন। অনেক লোকজন আসে তাদের অভিনন্দনের জন্য। ক্যাপ্টেন জিয়া ৫/১০ মিনিট  অবস্থান করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে চলে যান। শামসুল আলম  তালুকদার পারেরহাট থেকে যান ২/৩ ঘন্টার জন্য। ক্যাপ্টেন জিয়া পিরোজপুর চলে যান। লিয়াকত আলী ও শামসুল আলম তালুকদার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন  যুক্তভাবে। পাড়েরহাট হাইস্কুল রাজাকার ক্যাম্প, যেখানে মাঝে মাঝে পাকিস্তান আর্মি এসে থাকত, সেটাও পরিদর্শন করেন।

একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তা হল,  রাজাকারদের কার্যকলাপ স্থানীয় লোকজন ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনকে  অবহিত করে। তার মধ্যে সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, মফিজউদ্দিন মৌলভী, আসমত আলী মুন্সি, আব্দুল হনি হাজী এরা কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির লোক ছিল। এদের সাথে আরো অন্যান্য রাজাকার ছিল। তৈয়ব আলী মিস্ত্রী, আব্দুল করিম, মফিজ উদ্দিনের জামাই। সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন একথা কোন লোকই ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনকে বলেনি ।
মোসলেম মাওলানা ভানু সাহাকে নিয়ে দীর্ঘ আট মাস বিপদ সাহার বাসায় বাস করেছে।
ক্যাপ্টেন জিয়া চলে যাবার সময় আমাদের দায়িত্ব দিয়ে যান এবং সেই অনুযায়ী ঢোলসহরত করে সবাইকে জানাই আপনাদের যা বলার আমাদের বলবেন। কোন রাজাকারকে আশ্রয় দেবেননা। নিশিকান্ত কয়েকদিন ঢোল পেটায়।
মাওলানা সাঈদী সাহেবকে তার বিয়ের পর থেকে চিনতাম। তিনি তার শশুরবাড়িতে আসতেন সেই সূত্রে পরিচয় ছিল। বিপদ সাহা আমার কাঁধে হাত দিয়ে কেঁদে বলেছিল মোসলেম মাওলানা দ্বারা আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা  ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা।
আমরা সেকেন্দার সিকদার শফিজউদ্দিন, আব্দুল করিম এদেরকে আমরা আটক করি।
মোসলেম মাওলানা, দানেশ মোল্লা এবং অন্যান্য কুখ্যাত রাজাকারদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি কয়েকবার।
স্বাধীনতার পর ক্যাম্পে থাকাকালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের সাথে আমার দুয়েকবার দেখা হয়।

জবানববন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরা :
জেরা : শফিউজউদ্দিন মৌলভীরা কয় ভাই?
উক্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন :  মহসিন রাজাকাররা কয় ভাই?
উত্তর :  জানা নেই। তারা তখন ছোট ছিল।
প্রশ্ন : এদের বাড় কোথায়?
উত্তর : মূল বাড়ি টগরা। থাকত পাড়েরহাট।
প্রশ্ন : টগরায় কতজন রাজাকার ছিল?
উত্তর : এটা পরিসংখ্যান করা হয়ন্ ি
প্রশ্ন : আপনার জানামতে পারেরহাটে কতজন রাজাকার ছিল?
 উত্তর : ৩০ এর বিশ।
প্রশ্ন : এদের মধ্যে কুখ্যাত কতজন ছিল?
উত্তর : ৪১ বছর আগে ঘটনা।  যা দেখেছি, শুনেছি তার সব মনে নেই। যা দরকার তা মনে আছে।
প্রশ্ন : কোন গ্রামে কয়টি বাড়িতে রাজাকার ধরার জন্য অভিযান চালান?
উত্তর : মোসলেম মাওলানার  বাড়িতে, তার নানা বাড়ি, শশুর বাড়িতে অভিযান চালাই। সাধারন ক্ষমা ঘোষনার আগ পর্যন্ত তাকে পাওয়া যাযনি।
প্রশ্ন : টগরায় কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : নাম?
উত্তর : মিজানুর রহমান?
প্রশ্ন : মিজানুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসেছিল?
উত্তর : পরে যোগ দেয়।
প্রশ্ন : অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও পরে ক্যাম্পে যোগ দেয়?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ক্যাম্পে কি পরিমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তর :১৫/১৬ জন।
প্রশ্ন : ক্যাম্পে কতদিন ছিলেন?
উত্তর : ফেব্রুয়ারির ১৫/২০ তারিখ পর্যন্ত ।
প্রশ্ন : আপনি চলে আসার পরও ক্যাম্প চলছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ক্যাপ্টেন জিয়া উদ্দিন যখন লোকজনের সাথে কথা বলেন তখন কিভাবে বলেছিলেন অনেক লোকের সাথে একসাথে না আলাদা আলাদভাবে  একজন একজন করে?
উত্তর : তিনি ৫/১০ মিনিট ছিলেন। যাবার সময় আমাদের বললেন রাজাকারদের কেউ আশ্রয় দেবেনা। কারো কোন অভিযোগ থাকলে তা এখানাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বলবেন। এছাড়া তিনি অন্য কারো কথা শোনেননি।
প্রশ্ন :  শামসুল আলম যখন লোকজনের সাথে কথা  বলেন তখন কি পরিমান লোক ছিল?
উত্তর : হাজার/১২শ।
প্রশ্ন : তারা সবাই তার কাছে কথা বলছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কতজন বলেছে অনুমান?
উত্তর : সবারই অভিযোগ ছিল। তবে সবাই তো আর কথা বলতে পারেনি। কিছু লোক বলেছে।
 এ পর্যন্ত জেরার পর জেরা সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন