(মিছবাহুর রহমানের নিউজটা একটু নিচের দিকে দেখেন দয়া করে। )
১৭/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আজ রাষ্ট্রপক্ষে দুই জন সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা হলেন সপ্তম সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী, অষ্টম সাক্ষী সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলাম।
আজ আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সপ্তম সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী জবানবন্দীতে বলেন, ’৭১ সালে শেরপুর এলাকায় আল-বদর ও রাজাকারদের কর্মকান্ড এ মুহুর্তে বলতে পারব না। পকিস্তান আর্মিদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার পর সামনে দেখি কামরান, পিছনে কামারুজ্জামানকে দেখি বলে মনে হল। যে কামারুজ্জামানের কথা বল্লাম সে কোন কামারুজ্জামান তা এমুহুর্তে বলতে পারব না।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত):
সাক্ষী মো. লিয়াকত আলী জবানবন্দীতে বলেন, ’৭১ সালে ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়িতে আসি। এরপর নালিতাবাড়িতে ঘেরাও এরমধ্যে পড়ে শেরপুরে চলে আসি। শেরপুরে যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়ি আল-বদররা ঘেরাও করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার পিতার চেষ্টায় ইনেসপেক্টর কবির সাহেবের মাধ্যমে আমাকে পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। এরপর দুইদিন থানায় থাকার পর আমার সাথে আরো দুইজনকে আহম্মদ নগর আর্মি ক্যাম্পে চালান দেয়। এরপর একদিন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের পিছনে একটি গর্তের মধ্যে আমাদের দাঁড় করিয়ে একজন ক্যাপ্টেন কলমা পড়াতে বলেন। এরপর তিনি আমাদের গুলি করতে নির্দেশ দেন। এসময় মেজর রিয়াজ আসে এবং আমাদের তিনজনের নাম ধরে ডাকেন। আমরা গর্ত থেকে উঠে আসি। সেখান থেকে বেশ কিছু দুর আসার পর আমাদের চোখের বাধন খুলে দেয়। সামনে দেখি কামরান, পিছনে কামারুজ্জামানকে দেখি বলে মনে হল। তারপর আমরা চলে আসি। শেরপুর আসার পর দেশ স্বাধীন হয়।
এরপর প্রসিকিউটরের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, যে কামারুজ্জামানের কথা বললাম সে কোন কামারুজ্জামান তা এখন বলতে পারব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ’৭১ সালে শেরপুরে আল-বদর রাজাকারদের কর্মকাণ্ড এই মুহুর্তে বলতে পারব না। জবানবন্দী দেয়ার পর সাক্ষী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করায় মাত্র ১০ মিনিটে আসামী পক্ষের জেরা শেষ হয়ে যায়।
সাক্ষীকে জেরা করেন, ডিফেন্স কাউন্সেল কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
অষ্টম সাক্ষীর জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত):
জবানবন্দীতে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমার বাবার সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না। ১০ ডিসেম্বর ’৭১ আমরা ময়মনসিংহ শহর মুক্ত করি। শহরে যখন ঢুকি হালুয়াঘাটে এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়। সে আমাকে বলে তোর আব্বাকে পাকিস্তন সেনারা মেরে ফেলেছে। ময়মনসিংহে বাড়িতে এসে আমার মাকে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করি। মা বলেন, ’৭১ সালের নভেম্বর মাসে ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার সম্মুখে অবস্থিত জেলাপুরষদের ডাকবংলোয় আল-বদর ক্যাম্পে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহ বড় মসজিদের ইমাম সাহেবের ছেলে আল-বদর তৈয়ব ও রব্বানী বাবাকে ধরে নিয়ে য়ায়। আমার আত্মীয় স্বজনরা বাবাকে ছাড়ানোর জন্য যোগাযোগ ও চেষ্টা করায় বাবাকে ছেড়ে দিবে বলে আমার পরিবারকে আশ্বাস্থ করা হয়। একপর্যায়ে ক্যাম্পে থাকা লোকজন বলে, তাকে ছাড়া যাবে না। কারণ কামারুজ্জামানের হুকুম নেই। ওই সময় পরিবারের সদস্যরা আল-বদর ক্যাম্পে যেতে ভয় পেত। ’৭১ সালের ২৩ সভেম্বর শহর থেকে পাঁচ মাইল দুরে খালের পাশে বাবাকেও সঙ্গে অন্য একজনকে যাকে অনেকে কেনেডী বলে ডাকত তাদের বেনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যা করে লাশ বদর বাহিনীর লোক খালের পাশে ফেলে আসে। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বাবার মৃতদেহ চিনতে পারে। তারা আমাদের বাড়িতে খবর দেয়। পরিবারের লোকজন আব্বার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি চিঠি দেন এবং আর্থিক সহায়তা করেন। তখন মামলা করার সুযোগ না থাকায় ও সংসার তছনছ থাকায় মামলা করতে পারিনি।
জবানবন্দী শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের জেরার দিন ধার্য করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন