১৭/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১০ সাী সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম জবানবন্দী দিয়েছেন আজ ট্রাইব্যুনাল-২ এ ।
জবানবন্দী (সংক্ষিপ্ত): ’৭১ সালে সাংবাদিক ও আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ’৭১ সালের ২৩ মার্চ তালেব সাহেবের বাসায় রাত ১২টা পর্যন্ত টেলিভিশন দেখি। টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধের সময় আমরা অপেক্ষা করছিলাম পাকিস্তানের পতাকা না বাংলাদেশের পতাকা দেখানো হবে। বন্ধের সময় দেখলাম পাকিস্তানের পতাকাই দেখানো হয়। তারপর বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। রাত ১টা ৩৫ মিনিটের সময় শুনতে পাই বাইরর কিছু লোক আমার ঘরের জানালা ভাংছে এবং আমাকে মারার কথা বলছে। ভয়ে আমি বাসার পেছন দিক থেকে প্রাচির টপকে ড্রেনের মধ্যদিয়ে তালেব সাহেবের বাসার দিকে যেতে শুরু করি। তখন তিন থেকে চারজন লোক আমাকে আটক করে। তারা আমার হাতে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে। আমার চিৎকার শুনে মুল্লা নামের একজন লম্বা লোক ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে আক্রমণকারীরা চলে যায়। এরপর তালেব সাহেব ও তার লোকজন এসে প্রথমে আমাকে তার বাসায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর আমার এক সহকর্মী ফারুক আহমেদের সহায়তায় আমি নিজবাড়ি নাসিরনগর থানার নাসিরপুর গ্রামে যাই।
এরপর ’৭১ সালের জুন মাসে ফারুক আমাদের বাড়িতে আসে। তার কাছে আমি শুনলাম খন্দকার আবু তালেবকে অবাঙ্গালী আক্তার গুন্ডা মিরপুর ১০ নম্বরে জল্লাদ খানায় নিয়ে হত্যা করেছিল।
’৭২ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকায় এসে আবার স্কুলের কার্যক্রম শুরু করি। একদিন তালেব সাহেবের ড্রাইভার নিজামের সাথে আমার দেখা হলে নিজামও একই কথা বলে। হালিম নামে ইত্তেফাকের একজন অবাঙ্গালী হিসাব রক্ষক ছিল। হালিম তালেব সাহেবকে নিজ বাড়িতে আনছিলেন। কিন্তু হালিম তালেবকে বাড়িতে না পৌছিয়ে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়। বিহারীরা জল্লাদ খানায় নিয়ে তাকে হত্যা করে।
জবানবন্দীর শেষ পর্যায়ে প্রসিকিউটরের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, ঘটনার সময় কাদের মোল্লা তরুণ ছিল দাঁড়ি ছিল না। ৪০ বছর আগের ঘটনা স্পষ্ট মনে নেই।
জবানবন্দী শেষ হলে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের জেরার দিন ধার্য করা হয়।
প্রসিকিউশনের অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষীর তালিকায় সৈয়দ আবদুল কাইয়ুমের নাম না থাকায় বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের দৃষ্ট আকর্ষণ করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। তারা বলেন, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী যে তিনজন অতিরিক্ত সাক্ষীর বিষয়ে আদালতের অনুমতি নিয়েছেন তাদের নাম শুরুতে উল্লেখ করা আছে এবং তিনি মৌখিকভাবেও আমাদের তিনজনের নাম জানিয়েছেন। কিন্তু ওই তিনজনের বাইরে এই সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। এ বিষয়ে আসামী পক্ষ অবহিত নয়। এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আদেশে উল্লেখ করেছি তিনজন অতিরিক্ত সাক্ষীর। প্রসিকিউশনের আবেদনে ক্রটি আছে। এরপর প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে ট্রাইব্যুনাল বলেন সাতজনের নাম দিয়েছেন, যার মধ্যে তিন জনের বিষয়ে আবেদন করেছেন। এগুলো কখনো করবেন না। এরপর ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে সৈয়দ আবদুল কাইয়ুমের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন