মেহেদী হাসান, 19/9/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আরেক সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। তার নাম নুরুল হক হাওলাদার। তিনি গত ১০ সেপ্টম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জবানবন্দী প্রদান করেন। সেদিন তার আংশিক জেরা হয়। এরপর অসুস্থতার কারনে তার জেরা মুলতবি ছিল। আজ তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। এ নিয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মোট পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হল।
জেরা :
প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাই?
উত্তর : তিন ভাই।
প্রশ্ন : তাদের নাম বলবেন?
উত্তর : মোঃ শামসুল হক হাওলাদার, মোঃ মোজাম্মেল হক হাওলাদার এবং আমি।
প্রশ্ন : অন্য দুজন কি আপনার বড় ?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মোজাম্মেল হকের কয় ছেলে?
উত্তর : চার।
প্রশ্ন : তাদের নাম?
উত্তর : শাহে আলম, শহিদুল ইসলাম, সাইদুল্লাহ এবং হাফিজুল্লাহ হাওলাদার ।
প্রশ্ন : বড় ভাই শামছুল হকের কয় ছেলে?
উত্তর : তিন ছেলে।
প্রশ্ন : নাম?
উত্তর : লোকমান হাওলাদার, সোলায়মান হাওলাদার এবং জামাল উদ্দিন হাওলাদার।
প্রশ্ন : সোলায়মান হাওলাদারের বর্তমান বয়স কত?
উত্তর : ৫৭/৫৮ বৎসর।
প্রশ্ন : মাহবুবুল আলম হাওলাদার (মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী) প্রথমে তার চাচাতো বোন বিয়ে করে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার ফুফা এবং মাহবুবুল আলম হাওলাদারের শ্বশুর পরস্পর কি হন?
উত্তর : চাচাতো ভাই।
প্রশ্ন : মাহবুবুল আলমের ১ম স্ত্রী মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : সেই মামলায় সব সময় আপনি মাহবুবুল আলমের বিপক্ষে কাজ করেছেন।
উত্তর : পক্ষেও কাজ করিনি বিপক্ষেও কাজ করিনি।
প্রশ্ন : ওই স্ত্রীর সঙ্গে মাহবুবের এখন সম্পর্ক আছে?
উত্তর : না। ওই মামলায় সে দুই মাস হাজত খেটেছে।
প্রশ্ন : মাহবুবের বর্তমান বাড়িটি কিসের?
উত্তর : টিনসেড বিল্ডিং, বর্তমানে দোতলার কাজ চলছে।
প্রশ্ন : দোতলায় কাজ চলছে কথাটি সত্য বলেনিনি আপনি।
প্রশ্ন : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনি পাড়েরহাট রাজলক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়ে গেছেন?
উত্তর : ভেতরে কখনও প্রবেশ করি নাই। আমাদের বাড়ীর নিকটবর্তী রাস্তার পাশে স্কুলটি অবস্থিত। ঐ রাস্তা দিয়ে আমি সর্বদা চলাচল করতাম। দোতলা বাহির থেকে দেখা যেত।
প্রশ্ন : আপনাকে কোনদিন কোন মিলিটারী বা রাজাকাররা ডিস্টার্ব করেছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার গ্রামের বাড়িতে বা পাড়েরহাটের বাসায় কোন দিন কোন পাকিস্তানী আর্মি বা রাজাকাররা গেছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পাড়েরহাট বাজারে কয়দিন লুটপাট হয়েছে এবং কয়দিন অগ্নিসংযোগ হয়েছে?
উত্তর : পাড়েরহাট বাজারে একদিনই লুটপাট হয়েছে। তারপর দিন খালের ওপারে বাদুরা চিথলিয়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পাড়েরহাট বাজারে কোন অগ্নিসংযোগ হয় নাই।
প্রশ্ন : পাড়েরহাট বাজার লুট হওয়ার দিন আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : পাড়েরহাট বাজারেই ছিলাম।
প্রশ্ন : লুটপাটের পর আপনি কি করলেন?
উত্তর : আমি আমার বাসায় চলে আসি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকদের দোকান বাড়ি লুটপাট হয়েছে?
উত্তর : হিন্দুদের দোকান। পাঁচ ছয়জন হিন্দুদের দোকান লুট হয়। এরা হলেন, মাখন সাহা, মদন সাহা, নারায়ন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল।
প্রশ্ন : দোকানের সঙ্গেই তাদের বাড়ি ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গ পাল কোথয় আছে?
উত্তর : মারা গেছে।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন হিন্দুরা নিজের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্চায় মুসলমান হয়েছে। তাদের জীবনের প্রতি কারা হুমকি সৃষ্টি করেছিল?
উত্তর : পাকিস্তান আর্মি। তারা দেখতেছে পাক আর্মি হিন্দুদের মেরে ফেলছে। তখন তাদের বাঁচার কোন পথ ছিলনা।
প্রশ্ন : পাকিস্তানী আর্মিরা কে হিন্দু কে মুসলমান তা কি চিনত?
উত্তর : পিস কমিটর লোক তাদের দেখিয়ে দিত।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা মুসলমান হয়েছিল তাদের সংগে আপনার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোথায়?
উত্তর : পাড়েরহাট বাজারে।
প্রশ্ন : আপনি প্রতিদিন গ্রামের বাড়ি যেতেন?
উত্তর : আমি পাড়েরহাটে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমার গ্রামের বাড়ি টগরা যেতাম।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি ফিরে এসেছিল? মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তালুকদার ফিরে এসেছিল?
উত্তর : হ্যা বাড়ি ফিরে আসে। মিজানুর রহমান তালুকদারকে আমি প্রায় ১ মাস পরে দেখেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এসে কোথায় থাতক কি করত?
উত্তর : স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির অফিস ও রাজাকার ক্যাম্পে থাকতো। জনসাধারণ তাদেরকে চাউল ডাইল দিত। তা পাকসাক করে খেত তারা।
প্রশ্ন : মান্নান তালুকদার সাব কি করত?
উত্তর : পিরোজপুরে একটি ব্যাংকে চাকুরী করতো।
প্রশ্ন : তিনি তার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মান্নান তালুকদার সাহেব কখনও আপনাকে তার উপর নির্যাতনের কথা বলেন নাই বলে যে কথা বলেছেন তা অসত্য।
প্রশ্ন : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : রাজাকাররা লুটকরা মালামাল মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়িতে জমা দিয়েছে। তিনি সেই মালামাল ঢোল সহরত করে যাদের মাল তাদেরকে ফেরত দিয়েছে। আমরা ৪০ বৎসরের মধ্যে একথা শুনি নাই। আপনার এই কথাগুলি অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : আপনি কখনও মান্নান তালুকদার সাহেবের সংগে টগরা কামিল মাদ্রাসা ও এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলেননা।
উত্তর : ছিলাম।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গ সাহার বাসা আপনার বাসা থেকে কতদূর?
উত্তর : আমার বাসা থেকে ১০০/১৫০ গজ দূরে ছিল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনার বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ির মধ্যখানে কয়টি দোকান ছিল?
উত্তর : আনুমানিক ২০/২৫টি বাড়িঘর ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি ও রাজাকার ক্যাম্পের মাঝখানে কয়টি বাড়িঘর ছিল?
উত্তর : ১০/১৫টি
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ির মধ্যখানে যে ২০/২৫টি বাড়ি ছিল তার মধ্যে হিন্দুদে;র কয়টি এবং মুসলমানদের কয়টি?
উত্তর : ৭/৮টি হিন্দু বাড়ি ছিল।
প্রশ্ন : আপনার সবচেয়ে নিকটে কোন মুসলমানের বাড়ি ছিল?
উত্তর : শফিজউদ্দিন মৌলভীর বাড়ি।
প্রশ্ন : শফিজউদ্দিন মৌলভীর ওই সময় কয় মেয়ে ছিল?
উত্তর : এক মেয়ে।
প্রশ্ন : ছেলে?
উত্তর : ২ জন।
প্রশ্ন : কার বয়স কত ছিল?
উত্তর : বড় ছেলের বয়স ২০/২২ বছর।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গের বাড়ির পাশে কার বাড়ি ছিল?
উত্তর : সতীন্দ্র ডাক্তারের বাড়ি। এখন সে বাড়ি ও গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি নাই। নদীতে ভেঙ্গে গেছে।
প্রশ্ন : সতিন্দ্র ডাক্তারের কয়টি মেয়ে ছিল?
উত্তর : জানা নেই। তবে তার ২ ছেলে ছিল, একজনের নাম সুভাষ, অন্য জনের নাম বলতে পারব না।
প্রশ্ন : সেই সময় গৌরাঙ্গ সাহার বয়স ১০/১১ বৎসর। তার বোনেরা তার ছোট ছিল। বড় বোনের বয়স ৬/৭ বৎসর। আমাদের পাড়ের হাট ইউনিয়েনে কোন মহিলা ধর্ষিত হয় নাই। আজ প্রায় ৪০ বৎসর হয়ে গেছে কোন লোক বলাবলি করে নাই যে, গৌরাঙ্গ সাহার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আপনার এই কথাগুলি অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : মোসলেম মাওলানার এখন কয় স্ত্রী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : তিনি কয়টি বিবাহ করেছেন?
উত্তর : তাও জানা নেই।
প্রশ্ন : প্রচারিত হয়েছিল যে ঐ মেয়েকে (ভানু সাহা) মোসলেম মাওলানা বিবাহ করেছে। আপনার একথাও সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব রাজাকারও ছিলেন না, স্বাধীনতা বিরোধীও ছিলেন না এবং মানবতা বিরোধী কোন কাজ তিনি করেন নাই। তিনি এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। জবানবন্দীতে আপনার একথাহুলি অসত্য।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : আপনি কি সব সময় নির্বাচনী জনসভায় যেতেন?
উত্তর : মাঝে মাঝে রাজনৈতিক দল সমূহের জনসভায় উপস্থিত হয়েছি।
প্রশ্ন : নিয়মিত পত্রিকা পড়েন?
উত্তর : মাঝে মাঝে পত্র পত্রিকা পড়ি।
প্রশ্ন : দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকায় খবর আসত। তা পড়েছেন?
উত্তর : কিছু কিছু পড়েছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব তিনটি এম,পি, নির্বাচন করেছেন। তার প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রচারনায় তার বিরুদ্ধে কোন মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেন নাই। যদি তিনি এই অপরাধে অভিযুক্ত হতেন তাহলে নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ তার নির্বাচনী প্রচারনার সময় তা তুলে ধরতো। আপনার এই কথাগুলি সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের আষাঢ়Ñশ্রাবণ মাসে সাঈদী সাহেব পাড়েরহাটে আসেন। আপনার একথাও সত্য নয়।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার ভাতিজা রাজাকার ছিল। আপনাদের পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : বর্তমানে আপনি জামায়াতে ইসলামী করেন এবং পাড়েরহাট জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বে আছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : দায়িত্বে নেই, তাহলে কোন পদে আছেন?
উত্তর : আমি কোন পদে নেই। আমি জামায়াত করিনা।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সক্রিয় আছেন বিধায় জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য গোপন করে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল।
উত্তর : আমি স্যার এইমাত্র শুনলাম।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি সৈয়দ আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন