বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল  কাদের মোল্লার আপিল আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার  পরও  এক বছর পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এমনকি চার্জ গঠনের পরও  তদন্ত বন্ধ করা হয়নি যা বিস্ময়কর ঘটনা।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ-এ শুনানীর সময় আজ  তিনি এ কথা বলেন।  ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রদত্ত  সাজা খালাস চেয়ে আসামী পক্ষে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানী চলছে বর্তমানে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্ত  শুরু  করে  ২০১০ সালের ৭ জুলাই।  তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রসিকিউশন তা ফরমাল চার্জ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর।  ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নয় ২০১১ সালের ২৮ ডিসম্বের। চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মে।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন  ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া, চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ২০১২ সালের ২৮ মে চার্জ গঠন করা হল আর তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানোর কথা তদন্ত কর্মকর্তা জেরায়   স্বীকার করেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া এবং  চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়ে যাবার পরও কি করে তদন্ত চলতে পারে? তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরও এক বছর তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে  ট্রাইব্যুনালের রুল ভঙ্গ করা হয়েছে। এর পরে আর এ বিচার চলতে পারেনা। এ বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিচার ব্যবস্থার দর্শনই সম্পূর্ণরুপে বদলে দিয়েছে।
এসময়  একজন বিচারপতি বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা দেয়া আছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা আছে সত্য,  কিন্তু এ ধরনের আইনবিরোধী, বিধি বিধান বিরোধী কাজের জন্য ট্রাইব্যুনাল কোন আদেশ দেয়নি এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও কোন দরখাস্ত করা হয়নি।
এসময় আরেকজন বিচারপতি এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, আসামী পক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে জবাব  দিতে হবে এবং কোর্টকে  সন্তুষ্ট করতে হবে।

গতকাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পল্লাব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী ছিল এবং দুজনই শোনা সাক্ষী। সাক্ষী  শহীদুল হক মামা বলেছেন তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত ছিল।  এটা কেমনতর শোনা কথা হল? কি করে এ জাতীয় শোনা কথাকে এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করা যায়? শোনা কথাকে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের আইনে দেয়া হয়েছে কিন্তু শোনা কথা এমন হতে হবে যার বিচাররিক মূল্য রয়েছে। যদি সাক্ষী বলত যে, আমাকে আমার ভাগনে বলেছে সে দেখেছে আব্দুল কাদের মোল্লা  অমুককে মেরেছে তা হলে তার মূল্য থাকে। কিন্তু এখানে তো এরকম কেউ বলেনি। একটা শোনা কথা আরেকটা শোনা কথাকে সহায়তা করতে পারেনা।  
পল্লব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের  আরেক সাক্ষী আব্দুল কাইউমও একজন শোনা সাক্ষী। সে মিরপুর বাংলা কলেজের একজন ছাত্রের কাছ থেকে শুনেছে আক্তার গুন্ডা  আব্দুল কাদের মোল্লাসহ পল্লবকে হত্যা করেছে। আবার একথা সে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেনি, বলেছে ট্রাইব্যুনালে এসে। তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সে একথা বলেছিল কি-না।  সে বলেছে হ্যা।  আবার তদন্ত কর্মকর্তকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আব্দুল কাইউম আপনাকে এ বিষয়ে বলেছিল কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছে বলেনি। এরূপ সাক্ষীর শোনা কথা কি করে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী শহিদুল হক মামা বিটিভির কাছে এক সাক্ষাৎকারে ১৯৭১  সালের  ২৫ মার্চের পর ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। জেরায় সে বলেছে বিটিভিতে সে যা বলেছে তা সত্য। কিন্তু তার ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম  উচ্চারন করেনি এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে যে ঘটনার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে করা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলেননি।

এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানী  অনুষ্ঠিত হয়নি।
শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির প্রমুখ।



মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// ১৯৭৩ সালের আইনে কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার এখতিয়ার নেই

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দর রাজ্জাক বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনে ব্যক্তি হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার এখতিয়ার নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আলবদর বা রাজাকার বাহিনীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রমানিত হয়নি এবং তাকে সে হিসেবে সাজাও দেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তাকে সাজা দেয়া হয়েছে একজন ব্যক্তি হিসেবে। কিন্তু কোন বাহিনীর সাথে জড়িত না থাকলে বিচ্ছিন্ন একজন ব্যক্তি হিসেবে তার বিচার করা এবং  সাজা দেয়ার এখতিয়ার ১৯৭৩ সালের আইনে নেই।

আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দাখিল করা আপিল আবেদনের শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ  একথা বলেন। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ শুনানী চলছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৫  জন  পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য বাছাই করেছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু ১৯৭৪ সালে তৃতীয় দেশীয় চুক্তির মাধ্যমে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং  তাদের  বিচার করা হয়নি।  ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের  বিচারের জন্য যে আইন ১৯৭৩ সালে করা হয়েছিল সেই  আইনের অধীনে আজ দেশীয় সহযোগীদের বিচার করা হচ্ছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে, বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের সহযোগীদের বিচার করা যায়না। বাংলাদেশ হাইকোর্ট কর্তৃকও এ বিষয়ে একটি রায় রয়েছে (৫৪ ডিএলআর-২৯৮)।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক কারনে এ বিচার করা হচ্ছে।  ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগ একসাথে আন্দোলন করার সময় দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেক বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে তখন আব্দুল কাদের মোল্লা অংশ নিয়েছেন। তিনি তখন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমদ এবং আব্দুল  কাদের মোল্লাকে ১৯৯৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একসাথে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন ঘটনা যে, একসাথে দুটি দলে আন্দোলন করার পর একটি দল কর্তৃক আরেক দলের নেতাদের ৪০ বছর পর বিচারের মুখোমুখি করা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক  প্রতিপক্ষতার কারনেই  আজ এ বিচার করা হচ্ছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীতে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর কেন এ বিচার করা হচ্ছে, বিচার করতে কেন ৪০ বছর সময় নেয়া হল সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ একটি শব্দও উল্লেখ করেনি, কোন ব্যাখ্যা দেয়নি।
এসময় একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন হিটলারের নাজি সদস্যদেরতো এখনো খুঁজে পাওয়া গেলে বিচার করা হচ্ছে।
জবাবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত  দলের অনেকে পালিয়ে ছিল। যাদের পাওয়া গেছে তাদের বিচার হয়েছে। সেব্রেনিসা গণহত্যার জন্য দায়ী রাদোভান কারাদজিকও নয় বছর পালিয়ে থাকার পর ধরা পড়েছে এবং তার বিচার হয়েছে। কিন্তু  দীর্ঘ ৪০ বছরে আব্দুল কাদের মোল্লা কখনো পালিয়ে ছিলেননা। তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন, চাকরি করেছেন, রাজনীতি করেছেন, দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বও পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে কোন অভিযোগ আগে আনা হয়নি।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ কর্তৃক আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য ২৯ মে শেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আয়াদ এমপি। আসামী পক্ষে গতকাল সময় প্রার্থনা করায় ট্রাইব্যুনাল-২ এ সময় প্রদান করেন।

এছাড়া  ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে।


সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।



Mehedy Hasan


জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ খলিলুর রহমান, আমার বয়স আনুমানিক ৬৩/৬৪ বৎসর। আমার ঠিকানাঃ গ্রাম- সোনাতলা, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
১৯৬৭ সালে আমি এস,এস,সি পাশ করি। ১৯৭২ সালে এইচ,এস,সি পাশ করেছি। এস,এস,সি পাশ করার পর আমি আমার মামার কনষ্ট্রাকশন ফার্মে চাকুরী করতাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বয়স ছিল ২১/২২ বৎসর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতের নদীয়া জেলার কেচুয়াডাঙ্গা ইয়ৎ ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে আনুমানিক আড়াই মাসের মত প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করি। সেখান থেকে হায়ার ট্রেনিংয়ের জন্য দার্জিলিংয়ের পানিঘাটায় যাই। পানিঘাটায় গিয়ে ২৭ দিনের ট্রেনিং গ্রহণ করি। ট্রেনিং নেওয়ার পর ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শিবগঞ্জ বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি এবং সোনা মসজিদে আসি। আমরা একত্রে ১০ জন ছিলাম। আমরা সোনা মসজিদে এসে কলাবাড়িয়া এলাকায় ২৪ দিন অবস্থান করি। সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয় বিধায় আমরা আবার ভারতে ফিরে যাই। পরে আমরা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি হয়ে নদীপথে পাবনা জেলার সুজানগর থানা এলাকায় আসি। সেখানে চর এলাকায় ২/৩ দিন অবস্থান করার পর ২৭শে নভেম্বর ১৯৭১ তারিখ দিবাগত রাত্রি আনুমানিক ১২.০০/১২.৩০ টার দিকে সাথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে ডাঃ আব্দুল আওয়াল সাহেবের বাড়িতে চলে আসি। ঐদিন রাত্রি আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ করে আর্মিদের পায়ের বুটের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি ঐ বাড়ির ঘরের পূর্ব দক্ষিণ দিকের জানালা খুলে দেখতে পাই যে, নিজামী এবং কিছু দখলদার বাহিনী এবং কিছু রাজাকার সহ আমাদের ঘরের দিকে আসছে। ঐ ঘরের উত্তর দিকের দরজা খুলে আমি ঘর থেকে বের হই। ঘর থেকে বের হওয়ার পর কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এছাড়া লোকজনের কথাবার্তা ও আনাগোনা এবং হ্যান্ডস আপ শব্দ শোনা যায়। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি আওয়াল সাহেবের বাড়ির পশ্চিম পাশে থাকা বট গাছে উঠে আত্মগোপন করি। বটগাছের উপর থাকা অবস্থায় ভোর হয়ে আসলে দেখতে পাই আশে পাশের মহিলারা ঐ বটগাছের নীচে এসে বসেছে। তখন আরও দেখতে পাই যে, রাজাকাররা মহিলাদের নিকট থেকে গহনা ছিনিয়ে নিচ্ছে। আরও দেখতে পাই ঐ মহিলাদের মধ্য থেকে দুইজন যুবতী মহিলাকে পাক বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে পাশের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকছে। ঐ ঘরের ভিতর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যায়। আমি বুঝতে পারলাম ঘরের ভিতর মহিলাদের রেপ করছে। এরপর আরও দেখতে পাই সেখানে নিজামী সাহেব রাজাকারদের বলছে পুরুষদের ধরে নিয়ে আস। এরপর দেখতে পাই যে রাজাকাররা পুরুষদের সেখানে ধরে নিয়ে আসার পর তাদেরকে নিয়ে প্রাইমারী স্কুলের দিকে চলে যায়। প্রাইমারী স্কুলটি ঐ বটগাছের দক্ষিণ দিকে। প্রাইমারী স্কুলের পাশে মাঠ এবং মাঠের পাশে ইছামতি নদী। আমি বটগাছ থেকে সকাল আনুমানিক ৯.০০টা/৯.৩০টার সময় নামি। গছ থেকে নামার পর গছের নীচে থাকা অনেক লোকজনের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি মিলিটারীরা চলে গেছে। তৎপর আমি স্কুলের পাশ দিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে মাঠে যাই। সেখানে গিয়ে ২৫/৩০ জন মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। আরও দেখতে পাই আমার সহযোদ্ধাদের মধ্যে চারজন মারা গেছে এবং দুইজন জীবিত আছে। যে দুইজন জীবিত আছে তাদের একজনের নাম শাহজাহান এবং অন্যজনের নাম মাজেদ। শাহজাহানের গলা কাটা অবস্থায় এবং মাজেদের পেটে বেয়নেট চার্জ করা অবস্থায় দেখতে পাই। শাহজাহানের বাড়ি রসুলপুর এবং মাজেদের বাড়ি বনখোলা গ্রামে। বাকীরা স্থানীয় সাধারণ লোকজন। স্বাধীনতার পরে জীবিত দুইজন সহযোদ্ধার সংগে আমার দেখা হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি আগে থেকে চিনতাম, তার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত (আপত্তি সহকারে)। আমি শুনতে পেয়েছি যে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। (জবানবন্দী সমাপ্ত)


জেরা : আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর প্রদান করে তা এখানে তুলে ধরা হল।
আমার আদিবাস সোনাতলা গ্রামে। আমি সোনাতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করি। সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করি। এস.এস.সি পাশ করার পরে আমি কলেজে ভর্তি হই নাই, তবে প্রাইভেটে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা তিনি লেখাপড়া কোথায় করেছেন এ সম্পর্কে আমি জানি না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বাড়িতে প্রয়োজন না হওয়ায় যাই নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পিতার পেশা কি ছিল তাহা আমার জানা নাই। উনার পিতা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে নাকি পরে মারা গেছেন তাহা আমার মনে নাই। নিজামী সাহেবের পিতা কয় ভাই বোন ছিল তাহা আমার জানা নাই। নিজামী সাহেবরা তিন ভাই বোন। বাকী দুইজন উনার বোন। উনার বোনেরা কোথায় লেখাপড়া করেছেন তাহা আমার জানা নাই, তবে একজন বোনের বিবাহ হয়েছে আমাদের গ্রামে। বাংলাদেশ হওয়ার আগে উনার ঐ বোনের বিবাহ হয়েছে। আমি অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবকে চিনি। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে এবং ডাব বাগান যুদ্ধের আগে ভারতে চলে যান কিনা তাহা আমার জানা নাই, তবে তার সঙ্গে আমার ভারতে দেখা হয়েছিল। ২৫ শে মার্চ থেকে আমি ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অধ্যাপক আবু সাঈদের সাথে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে অনেকবার তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমাদের এলাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে সংগঠকের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। মদন মোহন দাস ও আমি একত্রে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কোন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাত হয় নাই এবং ঐ সময় এলাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধা দেখি নাই। আমাদের সাথিয়া এলাকায় সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাসে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম ভাই স্থাপন করেন। তখন আমি ভারতে ছিলাম। ইহা সত্য নহে যে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজ গ্রামেই থাকতাম, বাইরে যেতাম না। আমাদের ইউনিয়নের নাম নাকডেমরা। ১৯৭১ সালে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ। আমার ওয়ার্ডের মেম্বার কে ছিলেন তাহা আমার এখন খেয়াল নেই। আমার সোনাতলা গ্রামে এখন অনেক মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, তখন আমি এবং মদন মোহন ছাড়া আমাদের গ্রামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। ধুলাউড়ি গ্রাম থেকে আমি দুইজন আহত মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ও শাহজাহানকে নদী পার করে দিয়ে আমি ডাক্তার হাবিবুর রহমানের বাড়ী যাই, কিন্তু তিনি ভয়ে চিকিৎসা করার জন্য আসেন নাই। ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত্রি সাড়ে তিনটা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা কোন রাজাকার বা আলবদরদেরকে আটক করে নিয়ে যায় নাই। ঐ ঘটনার দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর বাহিনীর কোন যুদ্ধ হয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না, তবে গোলাগুলির শব্দ শুনেছিলাম। পদ্মাবিলা গ্রামের খবির উদ্দিন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা ঐ দিন ধুলাউড়ি গ্রামের অন্য একটি বাড়িতে ছিলেন, তিনি আমাদের ১০ জনের গ্রুপের সদস্য ছিলেন না। ঐদিন যে সমস্ত পুরুষ লোকজন রাজাকার, আলবদরদের এবং পাকিস্তানী আর্মিদের হাতে ধৃত হয়েছিল তাদের মধ্যে শাহজাহান, মাজেদ ও কুদ্দুস ছাড়া অন্য সকলেই শহীদ হয়। কুদ্দুসের বয়স কম থাকায় তাকে হত্যা করা হয় নাই। সে আমাদের ১০ জনের গ্রুপের একজন সদস্য ছিল। আর্মিরা আসার পরে সর্বপ্রথম কুদ্দুস ধরা পড়ে কিনা তাহা আমি জানি না, তবে সেদিন সে আওয়াল সাহেবের বাড়িতে সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিল। কুদ্দুসকে পাকিস্তানী আর্মিরা ধরে পাবনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাকে প্রথমে সাত দিন ক্যাম্পে রাখতো এবং একদিন বাড়িতে যেতে দিত তৎপর সাতদিন তাকে বাড়িতে থাকতে দিত এবং একদিন পাবনা ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হতো, তৎপর তাকে কবে কিভাবে ছেড়ে দেয় তাহা আমি জানিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে কুদ্দুসের সঙ্গে সর্বপ্রথম কবে দেখা হয়েছিল তাহা আমার স্মরন নাই। কুদ্দস সাহেব অদ্য থেকে আনুমানিক তিন বৎসর আগে মারা গেছেন। শাহজাহান সাহেবকে নদী পার করে দেওয়ার পর কত দিন পরে তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় তাহা আমার মনে নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সম্ভবত আমি ভোট দিয়েছিলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে কয়দিন গিয়েছিলাম তাহা আমার খেয়াল নাই। আমাদের গ্রামে কোন শান্তি কমিটি গঠন হয় নাই। আমাদের ইউনিয়নে কোন রাজাকার বাহিনী বা আলবদর বাহিনী গঠিত হয় নাই। আমি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির নাম শুনেছিলাম। সাথিয়া থানার শান্তি কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি আমার কর্মস্থল চাটমোহরে থাকতাম। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের সঙ্গে সর্বপ্রথম ভারতের ইয়ৎ ক্যাম্পে দেখা হয়। আমার ১০ জনের গ্রুপের মধ্যে আমি খলিলুর রহমান, আখতার আলম (কমান্ডার), শাহজাহান (আহত), অপর শাহজাহান, মোখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, সালাম, কুদ্দুস, মাজেদ, মোকছেদ ও জলিল ছিলাম, তবে জলিল এ ঘটনার দিন আমাদের সঙ্গে ছিল না। জামাল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, তার বাড়ি ডহরজানি গ্রামে। আমার বাড়ি থেকে পদ্মাবিলা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৯/১০ কিলোমিটার। রতনপুর আমার গ্রাম থেকে কতদূরে তাহা বলতে পারব না। নূরপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রাম আমি চিনিনা। রসুলপুর গ্রাম আমি চিনি, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। পদ্মবিলা গ্রাম থেকে রসূলপুর কত দূরে তাহা বলতে পারব না, তবে পাশাপাশি হতে পারে। ধূলাউড়ি গ্রামে আমি ঘটনার দিনই প্রথম যাই নাই, তার আগে থেকে ঐ গ্রামে আমার যাতায়াত ছিল। আমরা যে আওয়াল সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম তার সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। তার বাড়ির সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। ১৯৭১ সালের আগে ধূলাউড়ি গ্রামের আব্দুল গফুর ফকির নামে আমার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে আসা যাওয়া ছিল। আব্দুল গফুর সাহেব ১৯৭১ সালে বিবাহিত ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। গফুররা দুই ভাই। তার অপর ভাইয়ের নাম আমার মনে নাই।  (চলবে)

তাং- ২১/০৫/২০১৩ ইং
 জেরা (পুণরায়) ঃ
উল্লেখিত গফুর সাহেব জীবিত আছে। ধূলাউড়ি গ্রামে আমার যাতায়াত আছে। ঐ গ্রামে ১৯৭১ সালে লোকসংখ্যা কত ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ঐ গ্রামের যে সকল লোকের বয়স ১৫ বৎসর বা তার অধিক ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন জীবিত থাকতে পারে। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের মধ্যে আমি আবেদ আলী এবং লিয়াকত হোসেন কে চিনি। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে ধূলাউড়ি গ্রামে যাওয়ার আগের দিন চর এলাকা ঘরবাড়িতে ছিলাম। তার নাম মনে নাই এবং গ্রামের নামও মনে নাই। ১৯৭১ সালে পাবনা শহর থেকে ধূলাউড়ি গ্রামে ঢোকার রাস্তা গ্রামের মাঝখান দিয়ে ছিল। আওয়াল সাহেবের বাড়ীর তিন দিকে রাস্তা আছে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিক ছাড়া। আওয়াল সাহেবের বাড়ির পূর্ব দিকে নয় উত্তর দিকে মোকলেছ চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ী। আওয়াল সাহেবের বাড়ী ও মোকলেছ চেয়ারম্যানের বাড়ির মাঝখানে বটগাঠটি ছিল না। আওয়াল সাহেবের বাড়ি থেকে প্রাইমারী স্কুলটির দূরুত্ব আনুমানিক ১০০ ফিট দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায়। স্কুলের মাঠ এবং ইছমতি নদী লাগালাগি নহে, মধ্যখানে চাষের জমি আছে প্রায় ২০০ ফিটের মত। লাশগুলি আমি চাষের জমির উপর পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। স্কুলের মাঠে কোন লাশ ছিল কি না তাহা বলতে পারব না, কারণ আমি সেই দিন স্কুলের মাঠে যাই নাই। যে লাশগুলি আমি পড়ে থাকতে দেখেছিলাম তার মধ্যে আমার পরিচিত ব্যক্তির লাশ ছিল। যার মধ্যে আকতার আলম, শাহজাহান, মোকছেদ, মোসলেম এর লাশ ছিল। তাছাড়া যেখানে আহত অবস্থায় শাহজাহান এবং মাজেদকে পেয়েছিলাম যাদেরকে চিনতাম। অন্যদের নাম আমার মনে নাই। উল্লেখিত নিহত আহত ৬ জনই আমার গ্রুপের সদস্য ছিলেন। বাকী নিহতদের নাম আমি জানি না। আমাদের গ্রুপের সালাম ঘটনার রাত্রে সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিল এবং সে ঐ রাত্রে পালিয়ে গিয়েছিল। তিনি বর্তমানে জীবিত আছেন এবং তার বাড়ি গাঙ্গহাটি বনগ্রাম। গাঙ্গহাটি বনগ্রাম ১৯৭১ সালে সাথিয়া থানাধীন ছিল। আমি ঐ গ্রামে কখনও যাই নাই। সাথিয়া থানায় বনগ্রাম নামে গ্রাম আছে তাহা আমি জানি। বনগ্রামের উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে গাঙ্গহাটি গ্রাম অবস্থিত। বনগ্রামে একটি হাট আছে। ঐ হাটে আমি নিজে গিয়েছি। গনগ্রাম বড় কিনা আমি জানি না। রসূলপুর বনগ্রামের কোন পাশে তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বরের আগে পাকিস্তান আর্মিদের আমি দেখেছিলাম। আমি তাদেরকে ঢাকায় দেখেছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি ঢাকায় এসেছিলাম কি না তাহা আমার স্মরণ নাই। আরও যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা সাথিয়া থানাধীন এলাকায় ছিল তাদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা ২৭ নভেম্বর তারিখে ধূলাউড়ি গ্রামে গিয়েছিলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা এদিন ধূলাউড়ি গ্রামে গিয়েছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে নিজাম উদ্দিন সাহেবের ক্যাম্প কোথায় ছিল তাহা আমি বলতে পারি না। ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে আমার ধূলাউড়ি গ্রামে যাওয়ার এবং ২৮ নভেম্বর তারিখে ঐ গ্রাম থেকে চলে আসা পর্যন্ত আমার সঙ্গে নিজাম উদ্দিন সাহেবের দেখা হয় নাই। ১৯৭১ সালে ধূলাউড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর তারিখে দিবাগত রাত্রি তিনটার সময় যখন আমি জানাল খুলে দেখি তখন জোৎ¯œা রাত্রি ছিল। ১৯৭১ সালে রমজান মাস ইংরেজী কোন মাসে ছিল তাহা আমি বলতে পারি না। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোরবানীর ঈদ কোন মাসে হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারিনা। ১৯৭১ সালে রমজান মাস শীতকালে নাকি গরমকালে হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখ সকালে কুয়াশা ছিল তবে ততবেশী নহে। চন্দ্রমাসের আট বা নয় তারিখে চাঁদ কয়টার সময় উঠে এবং কয়টার সময় ডুবে যায় তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালের ২০ শে নভেম্বর ঈদ উল ফিতরের দিন ছিল কিনা তাহা আমার খেয়াল নেই। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর দিবাগত রাত্রি ৩.৩০ মি. সময় জোৎ¯œা ছিলনা। ঐদিন রাত্র ১.২৩ মিনিট সময় চন্দ্র অস্ত গিয়েছিল, ইহা সত্য নহে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ০৬-১১-২০১০ ইং তারিখে জবানবন্দী প্রদান করেছি। ১৯৭১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার থাকা অবস্থায় ধূলাউড়ি গ্রামের ঘটনা নিয়ে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঘটনার রাত্রে রেজাউল করীম নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা ঐ গ্রামে ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। রেজাউল করীম নামে একজনকে আমি চিনি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছেন মর্মে জানি, তবে উহাতে ধূলাউড়ি গ্রামের বর্ণনা আছে কিনা তাহা আমি জানি না। উনার ঐ বইটি মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা এটা আমি শুনেছি। জহুরুল ইসলাম বিশু নামে কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম আমি শুনি নাই। ট্রেনিং শেষে ভারত থেকে এসে পাবনার সুজানগরে প্রবেশ করি। সুজানগরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকবাল সাহেব ছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে যুদ্ধাকালীন সময়ে সুজানগর থানার মুক্তিযোদ্ধাদের ডেপুটি কমান্ডার কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। সাথিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধাদের সি এ্যান্ড সি নিজাম উদ্দিন সাহেব ছাড়া অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার বা মুক্তিযোদ্ধা বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডারের নাম আমি বলতে পারব না। ধূলাউড়ি গ্রামে শহীদদের স্মরনে যে স্মৃতিস্তম্ভ হয়েছে তাহা আমি দেখেছি। ঐ স্মৃতিস্তম্ভে সকল শহীদদের নাম লেখা আছে কিনা তাহা আমি জানিনা, তবে আমার গ্রুপের যে ৪ জন শহীদ হয়েছিল তাদের নাম লেখা আছে। মাজেদ ঘটনার সময় জীবিত ছিলেন একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
    “...............কন্ট্রাডিকশন - এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।”
“মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে” মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন একথা আমাকে কে বলেছিল তাহা আমার মনে নাই, তবে আমি শুনেছিলাম। ঘটনার রাত্রে আক্রমনকারীদের মধ্যে নিজামী সাহেবকে আমি চিনতে পেরেছিলাম, বাকীদের চিনতে পারি নাই। নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আমি পাবনা থেকে এসেছি। আসামীর কাঠগড়ায় একজন ব্যাক্তিই উপস্থিত আছেন। আমি নিজামী সাহেবকে জড়িত করে যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত্রি সাড়ে তিনটার সময় হতে (২৮ শে নভেম্বর) পরবর্তী সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ধূলাউড়ি গ্রামে দেখেছি মর্মে অসত্য বক্তব্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখি নাই। জহরুল ইসলাম বিশু এবং রেজাউল করীম কর্তৃক লিখিত বই দুইটি পড়েছি এবং সত্য প্রকাশের ভয়ে পড়ি নাই মর্মে বলেছি, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)



কাদের মোল্লার মামলায় আপিল শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক/// ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের বিচারের জন্যই ১৯৭৩ সালের আইন করা হয়েছিল

Mehedy Hasan
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিল আবেদনের শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,  ১৯৭৩ সালের যে আইনের মাধ্যমে আজ জামায়াতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বিচার করা হচ্ছে  সে আইনটি করা হয়েছিল শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য।।  বাংলাদেশীদের ঐ আইনের অধীনে বিচারের কোন উদ্দেশ্যই ছিলনা।
১৯৭৩ সালের আইনটি যে  শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার বিচারের জন্যই পাশ করা হয়েছিল সে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইন পাশের আগে বিলের ওপর তৎকালীন সংসদে যে আলোচনা হয়েছিল তা তুলে ধরেন আপিল বিভাগে। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলের ওপর এবং আইনটি পাশ বিষয়ে যে  বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আদালতে পাঠ করে শোনান তিনি।  আইনমন্ত্রী  মনোরঞ্জন ধরের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, পাকিস্তানী  শসন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। তাদের বিচারের জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হল।
এছাড়া আব্দুল্লাহ সরকার, এম সিরাজুল হক, আব্দুস সাত্তারসহ অন্য যারা ১৯৭৩ সালে সংসদে বিলের ওপর আলোচনা করেছিলেন তাদের বক্তব্যও পড়ে শোনানো হয়। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনের খসড়ায় ‘ইনকুডিং এনি পারসন’ বলে শব্দ  যুক্ত ছিল। এ  নিয়ে তখন সংসদ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ সরকার সংসদে বলেছিলেন, এনি পারসন বলতে যেকোন ব্যক্তিকেই  এই আইনের আওতায় ফেলে দেয়া যাবে। এখানেই আমার আপত্তি।
আব্দুস সাত্তারসহ অন্যান্য অনেকে তখন প্রস্তাব করেন, যুদ্ধবন্দীসহ যেকোন ব্যক্তির পরিবর্তে শুধু যুদ্ধবন্দী শব্দ রাখা হোক।
আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর তখন সংসদে বলেন আমি এটা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি সংশোধনী  আনেন এবং ইনকডিং শব্দ বাদ দিয়ে বিলটি আইন আকারে পাশ করা হয়। মনোরঞ্জন ধর তখন বলেছিলেন আমাদের মহান নেতার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্মতিতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে এবং এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক।
এসব রেফারেন্স পেশ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন পাশের পূর্বে সংসদের তখনকার আলোচনা থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে,  ১৯৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী ছাড়া অন্য কারো বিচার করা এ আইনের কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। কোন বাংলাদেশীযে যাতে এ আইনের অধীনে বিচার করা না হয় সেজন্য তারা  উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং সংসদে আলোচনা শেষে বিল থেকে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ  দিয়ে শুধু যুদ্ধবন্দী কথাটা রাখা হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিন্তু আজ সেই পাকিস্তানীদের সেনা কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত আইনটিকেই ২০০৯ সালে সংশোধন করে দেশীয় লোকদের বিচার করা  হচ্ছে। সংসদে আলোচনার মাধ্যমে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ দেয়া হলেও ২০০৯ সালের আবার ‘ইন্ডিভিজুয়াল’ (একক ব্যক্তি) এবং গ্রুপ অব ইন্ডিভিজুয়ালস’ (ব্যক্তিগোষ্ঠী) শব্দ যোগ করা হল।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপীল বেঞ্চ আজ  শুনানী গ্রহণ করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  এ পর্যায়ে শুনানী পেশ করার সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুলে আলমকে উদ্দেশ করে বলেন আপনি ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন এর জবাব প্রদানের জন্য এবং কোর্টকে সহায়তা করবেন।

শুনানীতে  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইনটি পাশ করা হয়। আইনটি পাশের আগে ১৫ জুলাই বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয় আর এটিই ছিল সংবিধানের প্রথম সংশোধনী।  ১৯৭৩ সালের আইন পাশের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছিল  কারণ ১৯৭৩ সালের আইনে ১৯৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকারের বেশ কয়েকটি  ধারা রহিত করা হয়েছিল।
সেজন্য ৭৩ সালের আইনটিকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। ৪৭ (ক) ও ৪৭ (৩ ) নামে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়। 




হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আজ প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।




হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আজ  প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়।

Mehedy Hasan
আমার নাম মোঃ দারুল ইসলাম, আমার বয়স-৭৩ বৎসর। আমার ঠিকানা ঃ গ্রাম-বচিয়ারা, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা ঃ গ্রাম-গংগানগর, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।
বর্তমানে আমি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৬৩ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তিযোদ্ধার ইনটেলিজেন্স সার্ভিসে হাবিলদার ছিলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে আমি ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়ীতে আসি। মার্চ মাসে ঢাকায় আসি বেতন নেওয়ার জন্য। বেতন নিতে এসে জানলাম যে, ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমি উদ্ভূদ্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় ছেলে পেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনিং প্রদান করি। ১৬ই এপ্রিল তারিখে পাক সেনা বাহিনী আমাদের এলাকায় আসে এবং সেখানে আমাদের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আমরা টিকতে না পারায় আমরা ভারতের আগরতলায় চলে যাই। আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতাম এবং ট্রেনিং দেওয়ার পর দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশে পাঠাতাম অপারেশনের জন্য। এপ্রিলের ২০ তারিখে আমি ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসি। ২১শে এপ্রিল তারিখ সকাল বেলা ই,পি,আর, এর ফেলে যাওয়া একটি লাইট মেশিনগান পাই। সেই মেশিনগান পাওয়ার পর আমি বাড়িতে আরও ৫/৬ জনকে যোগাড় করে তাদের নিয়ে পুনরায় ভারতে যাই এবং গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসি। গংগাসাগর দীঘির উত্তর পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্প ছিল। সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল মেজর সেকান্দার এবং আমাদের এলাকার কিছু লোকজন যেমন বজু মিয়া, আবরু মিয়া, মোবারক আলী, মুক্তা মিয়া এবং জমসেদ মিয়া ঐ ক্যাম্পে আর্মিদের সাথে থাকতো। মোবারক মিয়া পাকিস্তান আমলে ই,পি,আর, তর সোর্স হিসাবে কাজ করতো। উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সহ অন্যান্যরা রাজাকারের একটি দল গঠন করল। ১৯শে আগষ্ট আমরা মান্দাইল গ্রামের লোকজনের সাহায্যে তিনলাখপীর স্থানে ব্রীজ ভাঙ্গার জন্য যাই এবং ব্রীজ ভাঙ্গা হয়। আমার সংগে ছিল সুবেদার গিয়াস উদ্দিন, নায়েব সুবেদার আব্দুল কাদির এবং মিন্টু মিয়া সহ প্রায় ১২০ জন। ব্রীজ ভেঙ্গে আমরা চলে আসি। ২১শে আগষ্ট তারিখে জানতে পারি পাক সেনারা এবং রাজাকাররা এই মর্মে সন্দেহ করে যে, মান্দাইল গ্রামের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গেছে। পরদিন ২২শে আগষ্ট সকাল ৯-০০ টার দিকে গংগাসাগর পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে জামসেদ, মুক্তা মিয়া ও মোবারক মান্দাইল গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেয় হাজি নূর বক্স এর বাড়িতে মিটিং হবে সেখানে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলে। বেলা তিনটার দিকে হাজী নূর বক্সের বাড়িতে প্রায় ১৩০/১৩২ জন লোক জড়ো হয়। ঐ সময় গংগাসাগর ক্যাম্প থেকে পাক সেনারা নৌকা যোগে এসে হাজি নূর বক্স এর বাড়ি ঘেরাও করে। ঐ বাড়িতে জমায়েত লোকজনদেরকে পাক সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌকায় করে গংগাসাগর দীঘির পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কার বাবা, কার ভাই, কার আত্মীয় স্বজন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে তাদের বাছাই করা হয়। সেখানে জমসেদ, মুক্তা মিয়া, মোবারক আলী, বজু মিয়া উপস্থিত থেকে উল্লেখিতভাবে মান্দাইল গ্রামের ২৬ জন এবং অন্যান্য গ্রামের ৭জন মোট ৩৩ জনকে বাছাই করে তাদেরকে দীঘির পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায়। বাকী লোকদেরকে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আটক রাখে। দীঘির পশ্চিম পাড়ে উল্লেখিত ৩৩ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ায়। এরপর পাক সেনারা ঐ ৩৩জনকে ব্রাশ ফায়ার করে গুলি করে হত্যা করে ঐ গর্তে মাটি চাপা দেয়। ঐ সময় সেখানে মোবারক আলী, জমসেদ, মুক্তা মিয়া উপস্থিত ছিল। পরদিন ২৩শে আগষ্ট তারিখে ক্যাম্পে আটক রাখা বাকী লোকজনদেরকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। আর্মি ক্যাম্প থেকে যাদেরকে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন আবুল বাশার যিনি ঈমামতি করেন তিনি জীবিত আছেন, তার নিকট থেকে আমি ঘটনার বিষয় জানতে পারি এবং আমি নিজেও গোয়েন্দা সূত্রে ঘটনার বিষয় জানতে পারি। গংগাসাগর ক্যাম্প থেকে রাজাকার বাহিনী গঠন করে মোবারক আলীকে রাজাকার কমান্ডার করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আনন্দময়ী কালি মন্দিরে পাঠায়। সেখানে গিয়ে মোবারক আলী ও তাহার সহ রাজাকাররা কালি মন্দিরে মূর্তি ভেঙ্গে লুটপাট করে কালিমন্দিরের নাম পরিবর্তন করে ‘‘রাজাকার মঞ্জিল” নাম দিয়ে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর মোবারক আলী অন্য রাজাকারের উপর ঐ ক্যাম্পের দায়িত্ব দিয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মোবারক আলীর দায়িত্বে ঐ এলাকায় বেশ কিছু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়। ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য নিজ বাড়িতে গেলে মোবারক আলী ও তার সহযোগীরা তাকে ধৃত করে গুলি করে হত্যা করে। আসামী মোবারক আলী ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন রোকন ছিলেন এবং তিনি স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে জামায়াতে ইসলামীর একজন সদস্য ছিলেন। আমি যে মোবারক আলীর কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি।



বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৩

সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান লাভ// ভারতের কারাগারে বন্দী সে

 Bali

Bali's wife crying after abduction of Bali
Mehedy Hasan
সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান পাওয়া গেছে। কলকাতার দম দম কারাগারে বন্দী সে।
সুখরঞ্জন বালী ভারতের কারাগারে বন্দী রয়েছে মর্মে আজ  নিউএজ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।  চাঞ্চল্যকর এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি করেছেন নিউএজ পত্রিকার সাংবাদিক (এডিটর স্পেশাল রিপোর্টস) ডেভিড বার্গম্যান। এখানে তার প্রতিবেদনটির অনুবাদ তুলে ধরা হল।

(সুখরঞ্জন বালী ছিলেন  রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিতে না এসে বালী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য দেয়ার আগে অপহরনের শিকার হন তিনি। দেশে বিদেশে এ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় তখন। )

ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাক্ষী ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে বলে আসামী পক্ষ দাবি করে আসছে। কলকাতার একটি কারাগারে তার খোঁজ পাওয়া  গেছে।
দণিাঞ্চলীয়  জেলা পিরোজপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের  লোক সুখরঞ্জন বালী।  গত বছরের ৫ নভেম্বর  সকালে তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছিলেন। এসময় সকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে  থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে অপহরন করে নিয়ে য়াওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।

সুখরঞ্জন বালী কলকাতার দম দম সংশোধন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন  এবং তাকে দেখতে তার  পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছে  মর্মে চলতি  বছরের  ফেব্রয়িারি মাসে  জানতে পারে নিউএজ।  এরপর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে এবং কিভাবে তিনি সেখানে গেলেন তা খুজের বের করার জন্য অনুসন্ধান চালায় পত্রিকাটি।
পত্রিকাটি তার সঙ্গে দেখা করতে এবং তার বক্তব্য জানার জন্য  ওই কারাগারে  প্রবেশে  সক্ষম  একজন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছর কথা জানান ওই ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দের বিচার চলছে। এর কোন একটি দলের সাথেও ওই ব্যক্তির কোন সম্পৃক্ততা নেই।

যাকে দিয়ে আমরা সুখরঞ্জন বালীর কাছ থেকে বক্তব্য সংগ্রহ করেছি তিনি নিউএজকে নিশ্চিত করেছেন যে,  যে ব্যক্তির বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার সাথে বালীর আসল ছবির সম্পূর্ণ মিল রয়েছে।

বালীর কাছ থেকে বক্তব্য সংগ্রহ করা ওই ব্যক্তি নিউএজকে জানান, বালী পুরো অপহরন ঘটনার অত্যন্ত স্পষ্ট বিবরন দিয়েছেন। । আমি মনে করি, ঘটনাটি সত্য না হলে এ রকম মুহূর্তে তার কাছ থেকে এমন বিবরণ আসা খুবই কঠিন।’ অবশ্য বালীকে তখন নার্ভাস দেখাচ্ছিল  বলেও ওই ব্যক্তি নিউ এইজ-কে জানান।

বালী জানান, অপহরনের পর  তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।  তবে তারা প্রশ্ন করেছে  ‘কেন আমি সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছি।  তারা বলেছে- আমাকে হত্যা করা হবে এবং সাঈদী সাহেবকে ফাঁসিতে ঝোলানো  হবে।’
তার বক্তব্য অনুযায়ী  ২০১২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী  বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আগে ঢাকায় তাকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত আটক রাখা হয়। গত সাড়ে চার মাস তাকে  ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা  হয়েছে।

বালীর এসব দাবির সত্যতা নিউএইজ স্বাধীনভাবে   নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ, এর আগে তার পরিবারের এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষ তার অপহরন বিষয়ে যেসব কথা বলেছিল তার সাথে বালীর সর্বশেষ বক্তব্যের কিছু  কিছু গরমিল রয়েছে। তবে  বালী আটক থাকা থাকার  সময়সীমার যে তথ্য দিয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে ভারতীয় আদালতে তার আটক থাকা বিষয়ে  পুলিশের দাখিলকৃত তথ্যের সাথে।

ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির ফরেইনার অ্যাক্ট-১৯৪৬ এর অধীনে কলকাতার একটি আদালত বালীকে ১০৫ দিনের কারাদণ্ড দেয় গত ৩ এপ্রিল । । যেহেতু বিচার চলাকালে এই মেয়াদটা  তিনি কারাভোগ করেছেন, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে  তাকে যেকোনো দিন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশনস কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে (বালীর বিষয়ে) কোনো তথ্য নেই। আমি যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের  সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি বলেছেন- তিনি কিছুই জানেন না। এই মুহূর্তে বালী কোথায়  আছে তিনি তা জানেন না।’ মনিরুল ইসলাম ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে।  এরমধ্যে একটি হলো- সুখরঞ্জন বালীর ভাই বিশাবালীকে হত্যায় জাতি  থাকার অভিযোগ।

আদালত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে  বিশাবালীকে একটি নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা  হয়  এবং ‘অভিযুক্ত দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদীর নির্দেশে  রাজাকাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।  আদালত আরো ছয়টিঅপরাধের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেও কোনো সাজা ঘোষণা করেনি। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম  কোর্টের  আপিল বিভাগে রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে বালীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করেছে এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সরকার এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ৫ নভেম্বর  সকালে আসামিপক্ষের  আইনজীবীরা বালীকে অপহরনের ঘটনাটি  ট্রাইব্যুনালকে  জানায়। এর কিছুক্ষন পর  চিফ  প্রসিকিউটর  আদালতকে বলেন, ‘আদালত চত্বরে সাক্ষী অপহরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আদালত চত্বরে যেসব পুলিশ সদস্য রয়েছে তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে এখানে আজ এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেননা। চিফ প্রসিকিউটর যখন ট্রাইব্যুনালকে এ তথ্য জানান তখন তার পাশে তদন্ত সংস্থার প্রধানও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিও এ বক্তব্য সমর্থন করেন।


এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয় সাক্ষী অপহরনের ঘটনাটি আসামী পক্ষের একটি অগ্রহনযোগ্য নাটক। নেতাদের বেআইনিভাবে মুক্ত করতে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম বনচাল করতে তাদের  (জামায়াাতে ইসলামীর) চেষ্টার অংশ এটি।

অপহরণের ঘটনার এক সপ্তাহ পর বালীর পক্ষে দায়ের করা হেবিয়াস করপাস  আবেদনের পরিপ্রেেিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাই কোর্টকে বলেন, ‘এই গল্প একেবারেই উদ্ভট এবং ট্রাইব্যুনালের সুনাম নষ্ট, ট্রাইব্যুনালকে হেয় প্রতিপন্ন  করাই এর উদ্দেশ্য।

বালীর জেলখানায় থেকে দেয়া বিবৃতিতে জানন,  ছয় সপ্তাহ তাকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটকে রাখার পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে চোক বেঁধে  পুলিশ তাকে সীমান্তে  নিয়ে যায়। এরপর ভারতীয়  সীমান্তরী বাহিনী-বিএসএফের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়।  নিজের সই করা বিবৃতিতে বালী বলেন, ‘তারা আমাকে খাবার দেয়ার  জন্য মাগুরার একটি হোটেলের সামনে গাড়ি থামায় ।  এসময় তারা আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়  এবং আমি বুঝতে পারি আমাকে প্রাইভেটকারে এখানে আনা  হয়েছে।

‘আমার খাবার খাওয়া  শেষ হলে ফের আমার চোখ বেঁধে  রওয়ানা দেয়া হয় গাড়িতে করে।  সর্বশেষ বিকেল ৫টার দিকে বিএসএফের হাতে আমাকে তুলে দিয়ে  তারা চলে যায।

বালী বলেন, বিএসএফ সদস্যরা তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে। ‘তারা আমাকে নির্যাতন করে এবং জানতে চায় আমি সেখানে কী করছিলাম। বিএসএফের হাতে তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত আমি কী করেছি তা তুলে ধরার চেষ্টা করি। সম্ভবত তারা আমার কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব পায়নি এবং আমাকে আরো বেধধড়়ক মারধর করা হয়।’
এতে আহত হলে বিএসএফ তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে স্বরূপনগর থানায  নিয়ে যাওয়া  হয়। সেখান থেকে পরদিন তাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। । বসিরহাট কারাগারে ২০ দিন আটক থাকার পর তাকে দম দম   সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয় বলে জানান বালী।

বালী তার বক্তব্যে বলেন, ২০১২ সালের মে মাসের কিছুদিন পর সাঈদীর ছেলে ‘বুলবুল’ তার বাড়িতে যান  তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এসময় তিনি বাড়িতে ছিলেননা। পরে ফোনে তিনি তিনি তাকে প্রথমবারের মত তার পিতা  সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য  দিতে বলেন। বুলবুল তার বাবার জন্য সাক্ষী হতে আমাকে অনুরোধ করে। কিছুদিন পর বুলবুল মারা যান। বালী উল্লেখ করেন  ২০১২ সালের ১৩ জুন সাঈদীর বড় ছেলে রফিক-বিন-সাঈদী মারা যান।

এই ছেলে হৃদরোগে মারা যাওয়ার পর সাঈদীর আরেক ছেলে তার  সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রাখেন বলে জানান বালী এবং দুর্গাপূজার আগে (অক্টোবর ২০-২৪) তিনি ঢাকা আসেন। সাঈদীর বাসায়  ১৫ থেকে ১৬ দিন থাকেন।
তিনি বলেন, ৫ নভেম্বর তাকে সাঈদীর আইনজীবীদের অফিস পল্টনের একটি ভবনের ১০ম তলায় নেয়া হয়।  সেখানে সাঈদীর আইনজীবীদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। এরপর  তাকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যায়  তারা।

এর আগে সাঈদীর আইনজীবীরা এবং বালীর স্ত্রী দাবি করেন, বালী নভেম্বরের শুরুতে প্রথমে ঢাকা আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে বালী সাঈদীর পরিবারের কোনো সদস্যের বাড়িতে অবস্থান করেননি  বলেও দাবি করেন তারা আইনজীবীরা।
ভারতীয় পুলিশের ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর দাখিল করা প্রথম প্রতিবেদনে  বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা কুলদীপ সিং ভারতীয়  সীমান্তবর্তী স্বরূপনগরে ‘সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষন’ করেন এবং বালীকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি পালান। এফআইআর-এ বলা হয়, আটক করা হলে বালী তাদের জানায়, ‘তিনি বাংলাদেশ থেকে তার ভাইযয়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে এসেছে।’

কলকাতায় বাংলাদেশ   হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) শরিফ উদ্দিন নিউ এইজ-কে বলেন, ‘বিভিন্ন সংশোধন কেন্দ্রে আটক বাংলাদেশিদের দেখতে এপ্রিলের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  একটি দল কলকাতায় আসেন।’
‘আমরা  দম দম  সংশোধন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু  তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বালী সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা আমি বলতে পারবো না’ বলে জানান শরিফ উদ্দিন।

ওই  প্রতিনিধি দলের একজন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির লে. কর্নেল তৌহিদ বলেন, ‘বালীর সঙ্গে তারা দেখা করেছেন কিনা তা তিনি বলতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু কারাগারে  প্রায় ১৩০ জন ছিল, তাই আমি বিষয়টি স্মরণ করতে পারছি না। আপনাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।’

সুখরঞ্জন বালীর নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের শিকার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে বালীকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত হবেনা। কারণ এখানে ফেরত আসলে তার জীবন সত্যিই হুমকীর সম্মুখীন হবে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় আজ রিপোর্ট  করা হয়েছে সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান পাওয়া গেছে।  বর্তমানে সে ভারতের দম দম জেলখানায় বন্দী রয়েছে। বালীকে নিয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশের পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার নিরাপত্তার দাবি  জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা  হয়েছে- দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত  উভয় দেশ কর্তৃক সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বালীর অপহরনের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়-বালীর দাবিমতে তাকে  ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে বাংলাদেশী পুলিশ অপহরন করে । এরপর তাকে কিছুদিন বাংলাদেশে বন্দী করে রাখার পর আইনশঙ্খলা বাহিনী তাকে সীমান্ত দিয়ে  ভারতে পাঠিয়ে দেয়  জোর করে। বালী অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা তাকে আটক করে এবং তার ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর তাকে দমদম জেলে পাঠানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড  এ্যাডমা  গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেছেন- ‘ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে সাক্ষী অপহরনের বিষয়টি প্রসিকিউশন, বিচারক এবং সরকারের আচরন নিয়ে  গভীর উদ্বেগ এবং সন্দেহের  জন্ম দিয়েছে।  অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হল কে এই অপহরনের নির্দেশ দিয়েছিল এবং  উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিভাবে এর সাথে নিজেরা জড়িত ছিলেন?’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়-ট্রাইব্যুনালে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল বালীর। বালী জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর তাকে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে। এরপর তাকে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্রাইবু্যুনালের সামনে অবস্থানকারী অনেকে এ অপহরন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে।
আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে এ অপহরন ঘটনা জানানোর পর  ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের (প্রসিকিউশন) নির্দেশ দেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।  অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য স্বাধীন কোন সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়নি। কিছুপক্ষন পর  প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে ফিরে এসে বললেন আদৌ এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। কোন অপহরনের ঘটনা ওইদিন ঘটেনি। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপক্ষ আসামী পক্ষের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করলেন।
বালীর নিরুদ্দেশ হওয়া  বিষয়ে তদন্তের জন্য বিচারকরা পরবর্তীতে আর কোন নির্দেশ দিলেননা। সে কোথায় আছে সে বিষয়ে  কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি জনসম্মুখে। বালী বিষয়ে তদন্তের দাবিও অস্বীকার করল সরকার। বালীর পক্ষে দায়ের করা হেবিয়াস করপাস শুনানীতে  এটর্নি জেনারেল বললেন আদালতের সুনাম ুন্ন করার জন্য এ অভিযোগ করা হচ্ছে আসামী পক্ষ থেকে।

১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগসমূহের মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল সুখরঞ্জন বালীর ভাই   বিশাবালীকে হত্যার অভিযোগ।  রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালী। সাঈদীকে যে দুটি হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অভিযোগ হল বিশাবালীকে হত্যা।

বালী দাবী করেছেন তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পুলিশ অপহরন করেছে। এরপর সরকারী হেফাজতে তাকে কয়েক সপ্তাহ আটকে রাখা হয়। এরপর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়-বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে তাদেরকে কিভাবে বিএসএফ হত্যা করে তার ডকুমেন্ট হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে রয়েছে। ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের  দায়ে এপ্রিল মাসে বালীকে ভারতের একটি কোর্ট ১১০ দিনের জেল দেয়। তার কারাবাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো সে জেলে রয়েছে।

ভারতের দম দম জেলে বালীর বন্দী থাকার বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত মার্চ মাসে জানতে পেরেছে। কিন্তু বালীর নিরাপত্তার স্বার্থে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। গত বৃহষ্পতিবার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমরা বালী বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করছি বলে উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএন এইচসিআর) ভারতীয় অফিস কর্তৃক বালীর সাথে কথা বলার আগে যেন বালীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো না হয়। বালী কোন রাজনৈতিক আশ্রয় চায় কি-না এবং সে উদ্বাস্তু কি-না সেটি তারা নির্ধারন করতে পারে। বালী যদি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাও করে এবং তার এ দাবি যদি প্রত্যাখ্যানও হয় তবু তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হবেনা বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।  কারণ এখানে তার এখানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার ঝুকি রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়-বালীকে যারা অপহরন করে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঠেলে দিয়েছে তাদের ধারণা ছিল বিএসএফ তাকে হত্যা করবে অথবা সে চিরতের নিখোঁজ হয়ে যাবে।
ব্রাড অ্যাডাম বলেন, সত্যিই বালীর জীবন এখানে হুমকির সম্মুখীন। কারণ এখানে তাকে ফেরত পাঠালে  অপহরনের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়বে। বালীর এখন একজন নিরপেক্ষ স্বাধীন আইনজীবী এবং ইউএনএইচসিআর  এর সহায়তা দরকার যাতে তাকে তার নিরাপত্তাহীনতার  বিষয়টি তুলে ধরা যায় এবং এ প্রেক্ষিতে সে  সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী ৬ জুন//“স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ের জন্য ইকোনমিস্ট দায়ী নয়”





মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা  এ কে এম ইউসুফের জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে। জামিন আবেদন খারিজ করে আগামী ৬ জুন তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের  শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ  এ আদেশ দেন।

স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ে ইকোনমিস্ট দায়ী নয় : লন্ডন ভিত্তিক সাময়িকী দি  ইকোনমিস্টোর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক  জারি করা আদালত অবমাননা নোটিশের  ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইকোনমিস্ট’র পক্ষে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি  নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ২৩০টি ইমেইল ডকুমেন্ট ইকোনমিস্ট কর্তৃপক্ষ তৃতীয় একটি পক্ষের কাছ থেকে লাভ করে। কাজেই স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ের জন্য ইকোনমিস্ট দায়ী। প্রাপ্ত ডকুমেন্ট এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইকনোমিস্ট সোর্সের সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু গোপনীয়তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। ব্রিটেনের আইনে সে সুরক্ষা প্রদান করা আছে।

ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম  নিয়ে বেলজিয়ামের ড. আহমদ জিয়া উদ্দিনের সাথে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট হাতে পাওয়ার পর ইকোনমিস্ট এর সাংবাদিক বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। এ প্রেক্ষিতে গত বছর ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমনানা বিষয়ে নোটিশ জারি করেন  বিচারপতি নিজামুল হকের   ইমেইল, স্কাইপি একাউন্টস এবং  কম্পিউটর  থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ  করা হয়েছে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং  গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয় ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে।
আদেশে বলা হয়, ইমেইল, স্কাইপি, কম্পিউটার হ্যাক করা, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা   ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার শামিল। টেলিফোনে চেয়ারম্যানের সাথে যিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি  নিজেকে চেয়ারম্যানের সাথে কথপোকথনে লিপ্ত করেছেন এবং আইন অনুযায়ী তিনি এটি পারেননা।
তাই বিচারকাজে বাঁধা সৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ এর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে ব্যাখ্যা দানের নির্দেশ দেয়া হয়।

আজ শুনানীর সময় ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা অপরাধ কি-না। 
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোন আইন নেই এবং কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও কোন নজির নেই। বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীর  সাথে  দৃটি পত্রিকার সাংবাদিক কথা বলে রিপোর্ট করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ  একটি পর্যবেক্ষন দিয়ে বলেছিলেন সাংবাদিকরা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন বিচারকের কাছে কোন কিছু জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে।
ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে প্রস্তাব করেন এ ক্ষেত্রেও কিছু পর্যবেক্ষন দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যেতে পারে।

ইকোনমিস্ট কোন সূত্র থেকে স্কাইপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি । এ বিষয়ে  ট্রাইব্যুনালের এ প্রশ্নের জবাবে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা কোন অবস্থাতেই সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়।

ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে নোটিশের মূল বিষয় ছিল বিচারকের সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে। বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা আদালত অবমাননা কি-না এবং  ইকোনমিস্ট পক্ষ দাবি করেছেন তারা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন। এ বিষয়ে আপনাদের জবাব কি?
তাছাড়া বিচারকের সাথে কথা বলার বিষয়ে ব্রিটেনের আইনে কি আছে সে বিষয়েও মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।
উভয় পক্ষ জবাব প্রদানের জন্য সময় চাইলে  আগামী ১৮ জুন শুনানীর জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


সোমবার, ১৩ মে, ২০১৩

আসামীর নামও উচ্চারন করলেননা সাক্ষী


 মেহেদী হাসান
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গতকাল ৩৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীর নাম দ্বিজন কৃষ্ণ চৌধুরী (৫৮)। তবে সাক্ষী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে  কোন অভিযোগ করেননি এমনকি আসামীর নামও উচ্চারন করেননি। তাই আসামী পক্ষ থেকে তাকে জেরাও করা হয়নি।

জবানবন্দী :
আমার নাম দ্বিজয় কৃঞ্চ চৌধূরী, আমার বয়স-৫৮ বৎসর, আমার ঠিকানা-জগৎমল্লপাড়া, থানা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম।
১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বৎসর। তখন আমি এস,এস,সি, পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে ডাক বিভাগে চাকুরী করি। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে বেলা আনুমানিক ৯.০০/১০.০০টার সময় আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। গোলাগুলির শব্দ শুনে আমার বাবা-মা, ভাই ও বৌদি সহ আমরা ডাবুয়ায় আমার খালা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। যাওয়ার পথে কিছুদূর যাওয়ার পর আমাদের বাড়ির দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। লোকমুখে শুনতে পাই স্থানীয় কিছু রাজাকার, আলবদরের লোকজন এবং পাক অর্মিরা এসে শান্তি মিটিংয়ের নাম করে আমাদের বাড়ির পাশে কিরণ বিকাশ চৌধূরী ও সুরেন্দ্র বাবুর বাড়ির উঠানে লোকজন জড়ো করে এবং ব্রাশ ফায়ার করে ৩০/৩২জন মানুষ হত্যা করে। ২/৩দিন পরে বড়–য়া পাড়ার লোকজন এসে কিরণ বিকাশ চৌধূরীর বাড়ির উঠানের পাশে লাশগুলি গণকবর দেয়। পরে আমরা ভারতে চলে যাই। পরে আমরা আরো জানতে পারি যে আমাদের গ্রামের তিনজন বিজয় কৃঞ্চ চৌধূরী, বিধু ভূষণ চৌধূরী এবং ধীরেন্দ্র চৌধূরীকে ধরে ডাবুয়া খালের পাড়ে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে। দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে আসার পর জানতে পারি যে নিহতদের হাড় গোড় গণকবর থেকে উঠিয়ে স্থানীয় শ্মশানে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাহ করা হয়। যে স্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছিল সেখানে স্মৃতিসৌধ তৈরী করে নিহতদের নাম লেখা হয়েছে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি।



মাওলানা ইউসুফের জামিন আবেদন আদেশ tomorrow. Usuf's bail petition hearing held


মেহেদী হাসান, ১৩/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফের পক্ষে করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।  শুনানী শেষে আগামীকাল  মঙ্গলবার আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামিন আবেদন শুনানীতে অংশ নেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, রোববার মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হল। আমরা বলেছিলাম সোমবার আমরা তাকে স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করব। ট্রাইব্যুনালও বলেছিলেন আমরা সে সুযোগ পাব। কিন্তু সে সুযোগ পেলাম কোথায়? কোর্টের আদেশের পর লিখিত  ওয়ারেন্ট কপি পাবার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা সিরিয়াস অবজেকশন জানচ্ছি এর বিরুদ্ধে। কোর্টের সই করা লিখিত পরোয়ানা কপি ছাড়া কি করে তাকে গ্রেফতার করা হল? এর মাধ্যমে কোর্টের আদেশ এবং আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। তাই এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

জামিন আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার বয়স ৮৭ বছর। অনেকবার অপারেশন হয়েছে। তাকে  হয় জামিন দেয়া হোক, অথবা বাসায়  গৃহবন্দী রাখা হোক, অথবা অধ্যাপক গোলাম আযমের মত হাসপাতালে রাখা হোক।

রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, মাওলানা উইসুফ জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। নায়েবে আমিরের দায়িত্ব যিনি পালন করতে পারেন তার ক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণ খাটেনা।
জবাবে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মাওলানা ইউসুফ জামায়াতের নায়েবে আমির সত্য কিন্তু এটা একটা অর্নামেন্টাল পোস্ট হিসেবে তাকে  রাখা হয়েছে এ পদে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নেননি। কোন মিটিংয়েও অংশ নেননি। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর ধরে তিনি গৃহবন্দী রয়েছেন। আমরা তাকে কোর্টে নিয়ে  আসার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তিনি কোর্টে আসার জন্য রেডি ছিলেন। কিন্তু তারপরও কোর্টের আদেশ হওয়া মাত্র লিখিত কপি ছাড় করার আগেই তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে রাজনৈতিক কারনে।
তাজুল ইসলাম শুনানী শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জামায়াতের নেতা হওয়া এবং জামায়াতের কর্মী হওয়া এখন অপরাধ হয়ে দাড়িয়েছে  এবং সেই অপরাধের কারনেই রাজনৈতিক উদ্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদেশ কপি সাইন করার আগেই আমরা টিভিতে খরব দেখতে পেলাম মাওলানা ইউসুফ গ্রেফতার। এটা নজিরবিহীন। তাকে এভাবে গ্রেফতার করা অবৈধ।
জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন সৈয়দ হায়দার আলী ও ঋষিকেষ সাহা।


রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা

মেহেদী হাসান, রোববার ১২/৫/২০১৩,:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা করা হয়েছে। এরপর আসামীর বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃকই মিথ্যা  আখ্যায়িত করে তাকে জেরা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  কর্তৃক।

today মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রদীব কুমার দেব। রাষ্ট্রপক্ষের এ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি; এমনকি তার  জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেননি। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি  আসামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছিলেন? জবাবে সাক্ষী বলেন-মনে নেই।

সাক্ষীর এ জাতীয় জবাবে  বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে  জেরা করেন। জেরায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে বলেন, আপনি আসামী পক্ষ কর্তৃক আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করছেন। সাক্ষী তা অস্বীকার করেন।

আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক কোন সাক্ষীকে  বৈরি ঘোষনার ঘটনা এটিই প্রথম ঘটল ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গণেশ  চন্দ্র পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আরো এক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষ পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের শিকার হন এবং আজ অবধি তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।


জবানবন্দী
সাক্ষী প্রদীপ কুমার তার জবানবন্দীতে বলেন,  বয়স আনুমানিক ৬২/৬৩ বৎসর  ।  ঠিকানা- গ্রাম করমজা, থানা সাথিয়া, জেলা পাবনা।

সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৮ই মে তারিখ ভোর রাত্রে মেঘা ঠাকুরের লিচু গাছে উঠি লিচু পাড়ার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পাকিস্তানি সেনারা মেঘা ঠাকুরের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারপর পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির মধ্যে থেকে লোকজনকে ধরে মারধোর করে মন্দিরের পাশে নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যাদেরকে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে মেঘা ঠাকুর, দ্বিজু ঠাকুর, করু ঠাকুর, ষষ্টি হালদার, শান্তি হালদার, আদু হালদার, কার্তিক হালদার, সুরেশ হালদার এবং আমার কাকা মুরালী চন্দ্র প্রমুখ ছিল। লাইনে আরেকজনকে দাঁড় করানো হয়েছিল তার নাম তারা হালদার, তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। ঐ হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর উহা দেখে আমি পালিয়ে যাই। ঐ হত্যাকান্ডের সময় সেখানে শুকুর, আফজাল, আছাদ, মোসলেম গং উপস্থিত ছিল।
ঐ ঘটনার ১২/১৪ দিন আগে খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে একটি মিটিং হয়েছিল। সেই মিটিংয়ে খোদাবক্স চেয়ারম্যান ও অন্যান্যরা ছিল;    সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, গ্রাম ছেড়ে কেউ বাইরে যাবে না। আমি এই পর্যন্ত জানি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর ইকবাল করিম সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এই ঘটনা সম্পর্কে আপনাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল?
সাক্ষী জবাবে বলেন,  আমার মনে নাই।

এসময় মীর ইকবাল করিম বিব্রতক অবস্থায় পড়েন এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুমতি চান সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরা করার জন্য। ট্রাইব্যুনাল বলেন, লিখিত দরখাস্ত দিতে হবে এজন্য। লিখিত দরখাস্ত দেয়ার বিষয়ে রাজি হওয়া সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরার অনুমতি প্রদান করেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে জেরা করা হয়।

জেরা :
প্রশ্ন : আপনি  ০৬/১১/২০১১ ইং তারিখে  এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক সাহেবের নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
উত্তর :  আমার স্মরন নাই।

প্রশ্ন : আপনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদানের সময়  মতিউর রহমান নিজামী এবং রফিকুন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন।
উত্তর :  আমার খেয়াল নেই।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছিলেন আলবদরের কমান্ডার রফিকুন নবী বাবলু মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত লোক ছিল ।
উত্তর :  আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : মতিউর রহমান নিজামী সাহেব মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে হত্যাকান্ডের সময় এবং খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে মিটিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন তা  জানা সত্ত্বেও আপনি  আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে  গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আসামী পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন আপনি।
উত্তর : সত্য নয়।
হরতালেল কারনে গতকাল আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা ইউসুফ গ্রেপ্তার Maolana AKM Ususf arrest



মেহেদী হাসান, ১২/৫/২০১৩,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, প্রবীণ আলেমে দ্বীন বিশিষ্ট হাদিস বেত্তা  মাওলানা একেএম ইউসুফকে গেপ্তার  করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরোয়ানা জারির পরপরই মাওলানা ইউসুফকে তার ধানমন্ডি বাসা থেকে গ্রেপ্তার  করে র‌্যাব, পুলিশ সদস্যারা।

দুপুর একটার দিকে মাওলানা ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে র‌্যাব-২ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকাল চারটার দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনালে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বিকাল পাঁচটার কিছু আগে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল সকালে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধ বিষয়ক অভিযোগ আমলে নেয়। এরপর ২৬ মে’র মধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের  নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ৮ মে বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ফরমাল চার্জে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা,  ধর্মান্তরকরন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ১৫ ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয় বলে ঘোষনা করে তদন্ত সংস্থা।
আগামীকাল  সোমবার মাওলানা  এ কে এম ইউসুফের জামিন আবেদনের ওপর শুনানী  অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। মাওলানা ইউসুফের পক্ষে  অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন মাওলানা ইউসুফকে এভাবে গ্রেপ্তার করা এবং কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি দু:খজনক এবং নজিরবিহীন। সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সময় ২৬ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আমরা ট্রাইব্যুনালকে বলেছে আজ সোমবার আমরা সেচ্ছায় হাজির করব। ট্রাইব্যুনালও বলেছেন, ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার কি, আগামী কাল (আজ) আপনারা তাকে হাজির করেন। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই পরোয়ান হাতে পাবার আগেই আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। এটা আইনের শাসনের ব্যত্যয়। কোর্ট মুলতবি হয়ে যাবার পর তাকে বিকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং চেম্বারে  বসে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন, মাওলানা ইউসুফের বর্তমান বয়স ৮৭ বছর। তিনি বার্ধ্যক্যজনিত নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি  জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ৯/৫/২০১৩
মুহম্মদদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট রায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত এবং শঙ্কিত। প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড তো দূরে থাকÑ কোনরূপ সাজা দেয়ারই কোনো সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলাটি দাঁড়িয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষনার পর নিজ বাসভবনে সংবাদ মাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিকৃয়ায় তিনি আসামী পক্ষ থেকে একথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বীকৃত মতে ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিল একজন ১৯ বছরের  তরুণ। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাদের যত বিচার হয়েছে তার কোথাও এরকম একজন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে পরবর্তী ৭টি প্রধান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোথাও এরকম একজন তরুণের কাঁধে এ ধরনের মারাত্মক অপরাধের দায় চাপানো হয়েছিল, তার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুদ্ধাপরাদের বিচারের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।
আমরা মনে করি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায় চাপানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা এবং এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ রায়ে আমরা শোকস্তব্ধ, বিস্মিত এবং আতঙ্কিত। প্রসিকিউশন স্পষ্টতই এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ মামলার তারকা চিহ্নিত সাক্ষী মোহন মুন্সি তার জবানবন্দির বিভিন্ন অংশে স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করে আলোচিত হয়েছেন। তিনি তার জবানবন্দিতে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের ৩টি ভিন্ন ভিন্ন তারিখ উল্লেখ করেছেন। প্রসিকিউশনের সাক্ষিরা এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা এমনকি ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণও অসম্ভব বলে মনে করেছেন। সাক্ষীরা এক দিকে বলেছে ওই সময় কামারুজ্জামান ছিল একজন তরুণ অন্য দিকে তারা বলেছে তিনি পাকিস্তান আর্মি অফিসারদেরকে নির্দেশ দিতেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতেন, যা আধুনিক যুগের সামরিক নেতৃত্বের কাঠামোর মধ্যে অসম্ভব ব্যাপার। সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলরা ১৯ বছরের একজন ছাত্রের নির্দেশ মেনে চলত এটা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?

তিনি বলেন,  প্রসিকিউশনের কিছু সাক্ষি তাদের নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছেন অথচ তথ্য প্রমাণে তারা যে “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা” তা প্রমাণিত হয়েছে এবং একই সাথে তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে। সরকার পক্ষের প্রতিটি সাক্ষী একইভাবে বিতর্কিত এবং অবিশ্বাসযোগ্য। উপরন্তু প্রসিকিউমন পক্ষের মামলা ব্যাপকভাবে শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভরশীল।  প্রমাণ্য অন্যান্য তথ্যাদি ছাড়া এই ধরনের শোনা সাক্ষী  নির্ভর মামলা প্রসিকিউশন অভিযোগের অসারতা ও দুর্বলতা প্রমাণ করে। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর যে একটি আদালত এমন সব দুর্বল, স্ববিরোধী এবং অবিশ্বাসযোগ্য, শোনা  সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে সাজা প্রদান করতে পারে।
উপরন্তু এই মামলার পদ্ধতিগত ত্রুটি এই রায়কে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হলেও আসামী পক্ষের সাক্ষী সংখ্যা ৫ জনে বেধে দেয়া হয়। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন দেড় বছর সময় নিয়ে এই মামলাটি সাজিয়েছিল অথচ ডিফেন্স পক্ষকে তাদের মামলার প্রস্তুতি এবং জবাব দেয়ার জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ৪ সপ্তাহ। ট্রাইব্যুনাল জোরপূর্বক প্রসিকিউশন পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন বহুল আলোচিত বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ যার সততা ও নিরপেক্ষতা আমার দেশ ও ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ   কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক তার পদ থেকে সরে দাড়ানোর পর এ মামলা আর কোনমতেই চলতে পারেনা।

তিনি বলেন, আসামী পক্ষ মনে করে প্রসিকিউশনের উপস্থাপতি সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কখনই এরকম রায় হতে পারে না। এটা একটা ন্যায়ভ্রষ্ট রায়।  এ রায়টি দেশের সুপ্রীম কোর্টের রায়ের মানের অনেক নিইে শুধুই নয়  বরং এই ধরনের অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠিত যেকোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মানেরও  অনেক নিচে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আমাদের হাতে অনেক শক্তিশালী কারণ এবং গ্রাউন্ড রয়েছে। তাই আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিল।

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড


মেহেদী হাসান ও হাবিবুর রহমান ৯/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে জনাকৃর্ণ ট্রাইব্যুনাল কক্ষে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, অন্য দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং আরেকটি অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।  রাষ্ট্রপক্ষ আনীত সাতটি অভিযোগের মধ্যে অপর দুটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান,  সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মোঃ শাহিনুর ইসলাম বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা সময় ধরে রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পরপরই  কাঠগড়ায় থাকা  মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা রং জাজম্যান্ট।  ইতিহাস কাউকে মা করবে না ।  সবাইকে একদিন কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।

মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে যেসব অভিযোগে সাজা প্রদান করা হয়েছে সেগুলো সবই মুলত উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়ে প্রদান করা হয়েছে । এসব অপরাধ তার জ্ঞাতসারে সংঘটিত হওয়া, অপরাধের সাথে তার যোগসাজস, সহযোগিতার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক  অভিযোগের সাথে সরাসরি  তার  সংশ্লিষ্টতা ছিলনা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে  ইসলামীর  মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান এবং কর্মকান্ডের বিষয়ে দীর্ঘ কলেবরে বর্ননা করা হয়েছে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়ে। সে সমেয় জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকান্ডও তুলে ধরা  হয়েছে।

রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা বা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায় ঘোষনার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতি আজ সস্তি পেয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপর দিকে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন এটা একটা ন্যায়ভ্রষ্ট রায়।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা উপলক্ষে গতকাল ট্রাইব্যুনালে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের সামনে ভিড় করতে থাকেন সাংবাদিক এবং বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সময় সোচ্চার ভূমিকায় অবর্তীন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা কর্মীরা। আদালতের কার্যক্রম   শুরুর আগেই ট্রাইব্যুনালের সামনে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতাকর্মীরা। রায় ঘোষনার পর তারা উল্লাস প্রকাশ করেন।

যে দুই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। 
সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড: ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আনা এই অভিযোগে কামারুজ্জামান কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
গোলাম মোস্তফা হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে শাস্তি প্রদান করা হয়। সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানকে দোষী প্রমাণিত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।

দুই অভিযোগে যাবজ্জীবন: মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে বদিউজ্জামান ও দারাসহ অজ্ঞাত ছয়জন হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।
 বদিউজ্জামান হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৯ জুন সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লখ করা হয়।
 দারাসহ অজ্ঞাত ছয়জন হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নেয়া হয়। পরদিন ওই দু’জনসহ সাতজনকে আলবদররা গুলি করলে টেপা মিয়ার পায়ে লাগে। তিনি পালাতে সম হন। অন্য ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানে বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এক অভিযোগে ১০ বছর সাজা: প্রিন্সিপাল হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে।  মুক্তিযুদ্ধে সময় শেরপুর কলেজের অধ্য সৈয়দ আবদুল হান্নানকে মাথা ন্যাড়া করে চুনকালি মাখিয়ে পুরো শহর ঘোরানো হয়। এঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। 
দুই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি: রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা পাঁচ ও ছয় নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে কামারুজ্জামানকে ওই দুই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নির্যাতনের পর থানায় চার দিন আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়। এ দু’টি অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় কামারুজ্জামানকে এর থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
রং জাজমেন্ট, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না: রায় ঘোষণার পুরো সময় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান শান্ত ছিলেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় বসে রায় শোনেন। রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘রং জাজমেন্ট, রং জাজমেন্ট (এটা অবিচার ও অনায্য রায়)। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। সবাইকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এর পরই পুলিশ কামারুজ্জামানকে কাঠগড়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
হরতালের কারণে কামারুজ্জামানের পক্ষে সিনিয়র কোন ডিফেন্স আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। ছয় বা সাতজন জুনিয়র আইনজীবী রায়ের উপস্থিত ছিলেন।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রসিকিউশনের সদস্য, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা সদস্যরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটরা পরস্পর কোল্লাকুলি করেন। ট্রাইব্যুনালের বাইরে এসে অনেকে শ্লোগান দেয়। এসময় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের লাইভ মন্তব্য প্রচার করে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবার বয়স ছিল ১৮ বছর, তিনি এইচএসসির ছাত্র ছিলেন: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন বড় ছেলে হাসান ইকবাল। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ’৭১ সালে আমার বাবার বয়স ছিল ১৮ বছর। তিনি তখন এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি ছাত্রসংঘের রাজনীতি করেন। রায়ে তাকে বলা হয়েছে তিনি পুরো ময়মনসিংহ অঞ্চলের আল-বদরের চীফ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিন্সিপাল হান্নান জিবিত আছেন। তার সাক্ষ্য না নিয়েই আদালত তাকে নির্যাতনের মামলায় বাবাকে ১০ বছর সাজা দিয়েছে। বদিউজ্জামান হত্যার ঘটনায় তার পরিবার একটি মামলা করেছে, সেখানে তো বাবার নাম নেই। ওই অভিযোগেও তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রপক্ষ যেভাবে বলেছে রায়ে সেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা বিচার পায়নি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা অপিল করব।
অন্যদিকে রায় ঘোষনার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায়ে আমরা সস্তি প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে একাত্তর সালে জামায়াতে ইসলাম ও তাদের সহযোগী বাহিনী আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনীর ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ ও তৃতীয় ফাঁসির রায়: গত ২১ জানুয়ারি মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন একই ট্রাইব্যুনাল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। সব মিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর এটি চতুর্থ রায়। আর কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করল।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার শেষ ধাপে গত ১৭ এপ্রিল যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়ের জন্য রাখেন ট্রাইব্যুনাল-১।

নজিরবিহীন  নিরাপত্তাবলয়: মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালের চারপাশে গতকাল সকাল থেকে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের ভিতরে ও বাইরে নিয়োগ করা হয় বিপুল সংখ্যক সশস্ত্রর‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স। হাইকোর্ট সংলগ্ন কদমফোয়ারা এলাকা পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যরিগেট সৃষ্টি করে ট্রাইব্যুনালমুখী সব যানবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শিক্ষাভবনের বিপরীতপাশে সশস্র র‌্যাব সদস্য নিয়োগ করা হয়। হাইকোর্টের মাজারগেটে ম্যাশিনগান স্থাপন করা হয়। এখানে ভারি অস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও গোয়েন্দা সদস্যরা অবস্থান নেয়।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ট্রাইব্যুনালের মূল প্রবেশপথ সুপ্রিমকোর্টের গেটে অবস্থান নেয় সোয়াত বাহিনীর সদস্যরা। আর র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা শিশু একাডেমীর সামনে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেটসহ সংলগ্ন এলাকা, শিা ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরোনো হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্ত্বরসহ পুরো এলাকায় অবস্থান করে।
জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১০ প্লাটুন পুলিশ, র‌্যাব ও আর্মড ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলও। ট্রাইব্যুনালের ভেতর ও বাইরে ৫০টির বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

মামলার বিবারণ: গত ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলার শেষ ধাপে রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায়ের জন্য অপেমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত বুধবার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এরপর ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১৬ মে আসামিপ এবং ২০ মে রাষ্ট্রপরে আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন।
গত বছরের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপরে মোট ১৮ জন সাী স্যা দেন।
অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পে গত ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ জন ডিফেন্স সাী স্যা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মোঃ আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম। তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন রাষ্ট্রপ।
গত ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এবং ১৬ এপ্রিল ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে ৩ থেকে ১৬ এপ্রিল ৪ কার্যদিবসে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিকী।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পরিচিতি: নাম মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। পিতার নাম মরহুম ইনসান আলী সরকার। স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম- কুমড়ী মুদিপাড়া, ইউনিয়ন- বাজিতাখিলা, থানা ও জেলা- শেরপুর। বর্তমান ঠিকানা, বাড়ী-১০৫, রোড-৪, ব্লক-এফ, সেকশন-১১, সাংবাদিক আবাসিক এলাকা, পল্লবী।  কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে কামারুজ্জামান জিকে স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। তারপর জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে আইএসসি’তে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে কামারুজ্জামান নাসিরাবাদ কলেজে থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ২য় বিভাগে পাশ করে। কামারুজ্জামান ঢাকা কিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক। কামারুজ্জামান বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল  ।




রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধ// পর্ব-৭//উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি

মেহেদী হাসান
১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানেবর মধ্যে  ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।   চুক্তি অনুযয়ী বাংলাদেশে  ১৯৭১ সালের যুদ্ধে  গণহত্যা,   মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং  যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তাকে ক্ষমা করে বাংলাদেশ।  চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের বেদনায়ক  ঘটনার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে  ‘ক্ষমা কর এবং ভুলে যাও’ আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের বিচার না করে   ক্ষমা করে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে  ভারতে আটক ৯২ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যসহ ৩০ লাখের উপরে বেসামরিক নাগরিক তখন তিন দেশে  আটকা পড়ে ছিল ।  ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং চুক্তিতে   দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং  সম্প্রীতি  স্থাপনে সব ধরণের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করা হয় উভয় দেশের পক্ষ থেকে।   কিন্তু তার কোনটিই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না  বাংলাদেশকেন্দ্রিক যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় । যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান এবং তা নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৭২ সাল থেকে  দফায় দফায় আলোচনাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সবশেষে তা পূর্ণতা পায়  ১৯৭৪ সালের  ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে।  চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর দিল্লী, ইসলামাবাদ এবং ঢাকা থেকে তা  একযোগে প্রকাশ করা হয়।  ১৬ দফার  সেই চুক্তিটি এখানে অনুবাদ  তুলে ধরা হল। অনুবাদ : লেখক।


(১)     ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের  প্রধানমন্ত্রী  এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  উপমহাদেশে শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে  বিদ্যমান  দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পারষ্পরিক বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। এছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে যেকোন  বিবদমান বিষয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে  পারষ্পরিক তথা দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। 

(২)    বাংলাদেশের পক্ষ থেকে  সিমলা চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।  উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশদুটির মধ্যে  সমঝোতা চুক্তিকে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জোরাল সমর্থন জানান।

(৩)     ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে যে মানবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তা উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।  বাংলাদেশ  একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তখনো ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে না পারায়  যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিলনা। এ সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হিসেবে ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল সবেচেয়ে বেশি  জরুরি।   বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠানে প্রধান অন্তরায় ছিল পাকিস্তান কর্তৃক  বাংলাদেশকে তখনো একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া।

(৪)      বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে আটকে পড়া দুই দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের প্রত্যাবর্তন এবং ভারতে আটক ৯২ হাজার সৈন্য ফেরত পাঠানোসহ নানাবিধ মানবিক সমস্যা সমাধানে ভারত এবং বাংলাদেশ একটি  জোরাল উদ্যোগ নেয় ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল।  এজন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতিজনতি  রাজনৈতিক সমস্যাকে  আপাতত পাশে সরিয়ে রাখা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল দুই দেশের পক্ষ

থেকে একটি যৌথ ঘোষনা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, উপমহাদেশে উত্তেজনা কমিয়ে স্থায়ী  শান্তি ও সমৃদ্ধির  লক্ষ্যে দুই দেশ বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করে যাবে। দুই দেশ থেকে প্রস্তাব করা হয় যে, আটককৃত এবং আটকে পড়া  নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। তবে  বন্দী ঐসব পাকিস্তানী সৈন্য, যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের বাংলাদেশে বিচারের  প্রয়োজন হতে পারে তাদের  ক্ষেত্রে এই মানবিক দৃষ্টিকোনের বিষয়টি প্রযোজ্য হবেনা।

(৫)    এই ঘোষনার আলোকে ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক  চলে।    বৈঠক শেষে ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট একটি সমঝোতায় আসে দেশ তিনটি। এবং  বাংলাদেশের সম্মতির  ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে  একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়  বিদ্যমান মানবিক সমস্যা সমাধানে।

(৬)      এই সমঝোতার ফলে ১৯৭৩ সালের  ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দেশের মধ্যে আটকে পড়া এবং বন্দী প্রত্যর্পন শুরু হয়। প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক  তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরার সুযোগ পায় তখন।   এর ফলে তিন দেশের মধ্যে  বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উপমহাদেশে শান্তির পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

(৭)     ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায়    একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তিনদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ সুগম হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী শরন সিং এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ সমমর্যাদা নিয়ে  ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লীতে  বৈঠক করেণ এবং বৈঠকে তিন দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্তরায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্বসহকারে স্থান পায়। এছাড়া পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশ ও ভারতে  আটকে পড়া পাকিস্তানীদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর চলমান প্রকৃয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়। 

(৮)     ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্টের দিল্লী সমঝোতার আলোকে তিন দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি তিন মন্ত্রী  মূল্যায়ন করেণ এবং বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শেষ  পর্যায়ে চলে আসায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেণ।

(৯)      আটকে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বাকী কাজ দ্রুত এবং সন্তোষজন উপায়ে শেষ করতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে একমত পোষন করেণ তিন  মন্ত্রী।

(১০)    ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় ভারতে বন্দী এবং আটকে পড়া  বাদবাকী সৈন্য  ও নাগরিকদের  দিল্লী চুক্তির অধীনে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।  ১৯৭৪ সালের এপ্রিলের মধ্যেই এ প্রত্যাবাসন কাজ শেষ করার ঘোষনা দেয়া হয়।  দুই দেশের মধ্যে চলমান ট্রেনে করেই একদিন পরপর  বাকী সাড়ে ৬ হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১১)     পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকীদেরও শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আন  হবে।

(১২)    পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত,  কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে  চাকরি রত,  অথবা অন্য কোন কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের  যেসব নাগরিক  বাংলাদেশে আটকে পড়েছে তাদের পাকিস্তানে ফেরত আনার জন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রথম তিন ক্যাটাগরিতে যারা পড়বে তারা সংখ্যায় যতই হোক সবাইকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। যাদের দরখাস্ত বাতিল করা হবে সে বিষয়ে  তাদেরকে এর কারণ জানিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবেনা তাদের  আপীল করার সুযোগ  পরবর্তীতে খোলা থাকবে।  এ জন্য কোন নিদির্ষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবেনা। পরবর্তীতে এ জাতীয় আবেদনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌছবে।

(১৩)     উপমহাদেশে  শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে  এবং তিন দেশের মধ্যে  আশু বন্ধুত্বপূর্ণ  সম্পর্ক ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি  নিয়ে তিন দেশের তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আলোচনা করেণ।  বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বলেন যে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যাজনিত অপরাধ বিষয়ে যত আইন আছে তার সবগুলোর বিবেচনাতেই ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য অপরাধী । ঐসব আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যার সংজ্ঞায় যেসব অপরাধের নাম আছে এবং যারা ঐসব অপরাধ করবে তাদের যথাযথ আইনী প্রকৃয়ায়  বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সারা বিশ্ব সর্বসম্মতভাবে একমত। আর ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ঐসব আইনে বর্ণিত অনেক অপরাধ করেছে।  পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনাকে তার  সরকার কঠোরভাবে নিন্দা জানায়  এবং এ জাতীয় অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্য পাকিস্তান গভীরভাবে অনুতপ্ত।


(১৪)    তিন মন্ত্রী একমত হন যে,  উপমহাদেশে শান্তি ও অগ্রগতির স্বার্থে তিন দেশের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তার আলোকেই ১৯৫ জন সৈনিকের বিষয়টি  বিবেচনা করা উচিত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর  আমন্ত্রনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই বাংলাদেশ ভ্রমনে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন  এবং   আপনার দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার  আবেদন জানাবেন । একইভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  পাকিস্তানীদের  প্রতি ক্ষমা  প্রার্থনার  আহবান জানিয়ে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ   ক্ষমা করতে  জানে।  তাই নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করার জন্য ১৯৭১ বাংলাদেশে যে   বর্বরতা এবং  ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে তা তিনি তার দেশের নাগরিকদের ভুলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

(১৫)   ‘ক্ষমা করো এবং ভুলে যাও’  বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই আবেদন এবং মনোভাবের  প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপারাধীর বিচার  না করে  ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে  বলে ঘোষনা করেণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।   অত:পর দিল্লী সমঝোতার আলোকে অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে এই ১৯৫ জন সেনাকর্মকর্তাদেরও  ভারত হতে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

(১৬)  ১৯৭১ সালের যুদ্ধউত্তর মানবিক সমস্যা সমাধানে  তিন দেশের এসব  চুক্তি এবং সমঝোতা ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেণ। তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী   একমত প্রকাশ করে বলেন যে, তিন দেশের দেশের ৭০ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন এবং উপমহাদেশে শান্তি ও  অগ্রযাত্রার পথে তিনটি  দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে মিলে মিশে কাজ করে যাবে। 

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেণ:
ড. কামাল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ সরকার
সরদার শরণ সিং, বিদেশমন্ত্রী, ভারত সরকার
আজিজ আহমেদ, পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পাকিস্তান সরকার।

বুধবার, ৮ মে, ২০১৩

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার রায় আগামীকাল//মাওলানা ইউসুফ’র বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল//এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ৩০ জুনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ


মেহেদী হাসান, ৮/৫/২০১৩, বুধবার, ঢাকা :

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত মামলার রায় আগামীকাল প্রদান করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ রায়ের এ তারিখ ঘোষনা করেন।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাত অভিযোগ:
১. বদিউজ্জামান হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৯ জুন সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করা হয়। এঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
২. প্রিন্সিপাল হান্নানকে নির্যাদন: মুক্তিযুদ্ধে সময় শেরপুর কলেজের অধ্য সৈয়দ আবদুল হান্নানকে মাথা ন্যাড়া করে চুনকালি মাখিয়ে পুরো শহর ঘোরানো হয়। এঘটনায়ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৩. সোহাগপুর গণহত্যা: ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং নারীদের ধর্ষণ করে। এঘটনায় জড়িত উল্লেখ করে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৪. গোলাম মোস্তফা হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৫. লিয়াকত-মুজিবুরসহ অজ্ঞাত ৮ জনকে হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। পরে দু’জনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পাকিস্তান আর্মিরা লিয়াকত, মুজিবুরসহ ৮ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৬. টুনু হত্যা: ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এঘটনায় কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করা হয়।
৭. দারাসহ ছয় হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নেয়া হয়।  পরদিন ওই দু’জনসহ সাতজনকে আলবদররা গুলি করলে টেপা মিয়ার পায়ে লাগে। তিনি পালাতে সম হন। অন্য ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার বিবারণ: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এরপর ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১৬ মে আসামিপ এবং ২০ মে রাষ্ট্রপরে আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন।
গত বছরের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপরে মোট ১৮ জন সাী স্যা দেন।
অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পে গত ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ জন ডিফেন্স সাী স্যা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মোঃ আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম। তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন রাষ্ট্রপ।
গত ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এবং ১৬ এপ্রিল ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে ৩ থেকে ১৬ এপ্রিল ৪ কার্যদিবসে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিকী।


মাওলানা ইউসুফ’র বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফ এর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) থেকে today  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এর কাছে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠ^ানিক অভিযোগ  জমা দেয়া হয়েছে।

ফরমাল চার্জে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ১৫ ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী ফরমাল চার্জ দাখিলের পর   এটি আমলে নেয়া হবে কি-না সে বিষয়ে আদেশ দিবেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ আমলে নেয়া হলে  চার্জ গঠনের জন্য শুনানীর দিন ধার্য্য করা হবে। এরপর চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হবে।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ৩০ জুনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে  চূড়ান্ত তদন্ত  প্রতিবেদন বা ফরমাল চার্জ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।   তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আরো দুই মাস সময় চাওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ৩০ জুনের মধ্যে ফরমাল চার্জ দাখিলের নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল এ তারিখ নির্ধারন করে আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির  অনুপস্থিত ছিলেন।

গত বছর ২২ আগস্ট এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর  ওইদিনই তাকে  তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন। গতকাল তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজত খানায়  আনা হয় তবে বিচার কক্ষে হাজির করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

নিজামীকে দেখা নিয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য সাক্ষীর

মেহেদী হাসান, ২/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষী শাহজাহান আলীর জেরা আজ  শেষ হয়েছে। মাওলানা নিজামীকে দেখা নিয়ে সাক্ষী পরষ্পরবিরোধী উত্তর দিয়েছেন জেরায় প্রশ্নের জবাবে। সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয় ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর আগে আপনি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে দেখেছেন কি-না। সাক্ষী জবাব দেন দেখেছি। কোথায় দেখেছেন  প্রশ্ন করা হলে সাক্ষী বলেন, ১৯৭০ সালে জামায়াতের প্রার্থী আনোয়ারুল হকের নির্বাচনী জনসভায়। কোন জনসভায় জানতে চাইলে তিনি বলেন সাথিয়ার গৌরীপুর। এরপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি গৌরীপুরের জনসভায় যাননি। অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন জামায়াতের প্রার্থী  আনোয়ারুল হকের কোন নির্বাচনী জনসভায়ই তিনি যাননি।

সাক্ষীকে আজ  জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, সাক্ষী টিভি সাক্ষাতকারে বলেছেন ১৯৮৬ সালের আগে তিনি কখনো নিজামীকে দেখেননি। এ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে  সাক্ষী ‘মনে নেই’ বলে উত্তর দেন। এরপর এক পর্যায়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, আপনার স্মরন শক্তি কমে গেছে এবং কখন কি বলেন তা  আপনার মনে থাকেনা। জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি দুইবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছি।
গত ৩০ এপ্রিল জবানবন্দী প্রদান শেষে সাক্ষী শাহজাহান আলীর জেরা শুরু হয়। আজ  জেরায় অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন প্রমুখ।

জেরা :
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে আপনি কি গ্রামের বাইরে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এই সময়ে সাথিয়া থানার মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোন তথ্য আপনার নজরে আসেনি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম মতিউর রহমান নিজামীকে দেখেছেন। এর আগে কখনো দেখেননি।
উত্তর : আগে দেখেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ এর আগে প্রথম কখন দেখেছেন তাকে?
উত্তর : নাম শুনেছি দেখিনাই।
প্রশ্ন : অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক এর নাম শুনেছেন?
উত্তর : তিনি ১৯৭০ এ জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন ।
প্রশ্ন : তার কোন জনসভায় আপনি গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আবু সাঈদী সাহেবের কোন নির্বাচনী জনসভায় গেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোন জনসভায়?
উত্তর : সাথিয়া, বেড়া সুজানগর জনসভায়।
প্রশ্ন : আর কারো জনসভায় যাননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ওই সময় ভোটার হওয়ার বয়স ছিল ১৮ বছর।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আহমেদ রফিক নামে কাউকে চিনতেন?
উত্তর : আমাদের এলাকায় এমপি ছিল ১৯৭০ এ।
প্রশ্ন : সানিক দিয়া  সাথিয়া থানার অন্তর্গত পদ্মানদীর একটি চর।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ চরে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে কে ছিল?
উত্তর : মকবুল হোসেন সঞ্জু।
প্রশ্ন : আপনাদের থানায় সোনাতলা নামে কোন জায়গার নাম আছে?
উত্তর : নাম শুনছি। যাইনি।
প্রশ্ন : ওই গ্রামের অনিল চন্দ্র কুন্ড নামে কারোর নাম শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : নকশাল কমান্ডার বাতেনের নাম শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ঢাকায় চিকিৎসার পর প্রথম আপনি পাবনা গেলেন কবে?
উত্তর : ১৯৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধু তখন জীবিত। আমি পাবনা যাবার কিছুদিন পর তাকে হত্যার ঘটনা  ঘটে।
প্রশ্ন : যে সাতটা রাজাকার আপনাদের নদীর চরে নিয়ে গেল তাদের আপনি কতদিন ধরে চিনতেন?
উত্তর : ১৯৭১ থেকে।
প্রশ্ন : ১৪  জুন মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পর ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাতটা রাজাকারের সাথে দেখা হয়েছিল কখনো?
উত্তর : হ্যা। তারা মেজর ছিল।
প্রশ্ন : মেজর আর্মির একটি পদ তা জানেন?
উত্তর : তা জানিনা তবে মানসে কইত তারা মেজর।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বরের আগে সাত্তার  রাজাকারকে কবে কোথায় দেখেছেন?
উত্তর : ধুলাউড়ায় দেখেছি। ২৮ নভেম্বরের আগে দেখিনি। ওইদিনই প্রথম দেখেছি। 
প্রশ্ন : তারপর আর কোনদিন দেখেননি?
উত্তর : দেখেছি, সে যখন নির্বাচন করে তখন।
উত্তর : কোন নির্বাচনের সময়?
উত্তর : প্রথম যখন এমপি হয়।
প্রশ্ন : সেটা কোন সালে ?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : উনি কোথায় থাকতেন জানেন?
উত্তর : শুনেছি ঢাকায় থাকে। সঠিক জানিনা।
প্রশ্ন : ২৮ নভেম্বর এর আগে নিজামী সাহেবকে দেখেছেন?
উত্তর : দেখেছি।
প্রশ্ন : কোথায়?
উত্তর : আনোয়ারুল হক এর নির্বাচনী জনসভায়।
প্রশ্ন : জনসভা কোথায় হয়েছিল?
উত্তর : গৌরিগ্রাম।
প্রশ্ন : এটা কোন থানায়?
উত্তর : সাথিয়া।
প্রশ্ন : আপনার গ্রাম থেকে কতদূর?
উত্তর : ৫ মাইল।
প্রশ্ন : ওই জনসভায় আপনি গিয়েছিলেন?
উত্তর : না যাইনি।
প্রশ্ন : ২৮ নভেম্বর ধুলাউড়ি কখন গেলেন?
উত্তর :  তিনটা সাড়ে তিনটা হবে। 
প্রশ্ন : আব্দুল কুদ্দুস সাহেবকে চিনতেন?
উত্তর : চিনতাম। মারা গেছে।
প্রশ্ন : ২৮ নভেম্বর আপনি কুদ্দুস সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ২৮ নভেম্বর কুদ্দুস সাহেব আর্মির হাতে ধরা পড়েন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : তখন আমার জ্ঞান ছিলনা। আমারতো  গলা কাটা।
প্রশ্ন : ধুলাউড়িতে কার বাড়িতে ছিলেন?
উত্তর : নাম মনে নেই।
প্রশ্ন : তাকে আপনি আগে থেকে চিনতেননা।
প্রশ্ন : না।
প্রশ্ন : কুদ্দুস সাহেবের সাথে ২৮ নভেম্বর আপনার দেখা হয়নি। ১৯৭৫ সালে পাবনা ফেরার পর প্রথম দেখা হয়।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কুদ্দুস সাহেবের বাড়ি কোথায়?
উত্তর : মনমতপুর।
প্রশ্ন : ২৮ নভেম্বরের আগে তার সাথে কোন দিন দেখা হয়নি?
উত্তর : হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কবে থেকে পান?
উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে। তখন ৭৫ টাকা পেতাম।
প্রশ্ন : ১০ হাজার টাকা কবে থেকে পাওয়া শুরু করলেন?
উত্তর : দুই বছর আগে থেকে।
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালে পাবনা এসে প্রথমে কোন বাড়ি উঠলেন পদ্ধভিলা না মিয়াপুর?
উত্তর : মিয়াপুর।
প্রশ্ন : আপনাকে হত্যা চেষ্টার বিরুদ্ধে আপনার পরিবারের কেউ মামলা করেছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি নিজেও কোন মামলা করার আগ্রহ অনুভব করেননি?
উত্তর : না। দরকার যে তা বুঝিনি।
প্রশ্ন : মামলা করা দরকার সেটা কবে বুঝে আসল?
উত্তর :ছয়/সাত বছর আগে।
প্রশ্ন : আপনার সাথে অন্য যে সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরা হয়েছি তাদের কারো নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : যে চারজনকে আপনাদের সাথে নদীর পাড়ে নেয়া হয়নি তাদের কি হয়েছিল?
উত্তর : তাদেরও মেরে ফেলা হয়।
প্রশ্ন : ধুলাউড়ির দুই/চারজন ব্যক্তির নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি কোন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়েছেন?
উত্তর : মেলা । অনেক সাক্ষাতকার দিয়েছি। 
প্রশ্ন : আপনার মেয়ের জামাইর নাম কি?
উত্তর : রফিক।
প্রশ্ন : তার উপস্থিতিতে আপনি দিগন্ত টিভিতে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মেয়ের জামাইর বাড়িতে  থাকা অবস্থায় টিভিতে কোন সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন কি-না মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শাহরিয়ার কবিরের পক্ষে যে মহিলাকে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন সেখানে আপনি নিজামী সাহেবের উপস্থিতির (নদীর পাড়ে তাকে গলাকাটার সময়)  কথা বলেননি।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : সুজানগরে আপনার জামাইর বাড়িতে বসে ২০১২ সালের জুলাই মাসে আরো একজনকে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন মনে আছে?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : তাহলে আপনার স্মরনশক্তি অনেক কমে গেছে। কখন কি বলেন বা না বলেন তা আপনার মনে থাকেনা।
উত্তর :  আমি দুইবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছি।
প্রশ্ন : এখানে সাক্ষ্য দেয়ার সময় কি কি বলতে হবে তা আপনাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি দুটি টিভিতে সাক্ষাতকারে বলেছেন ১৯৮৬ সালের আগে আপনি নিজামী সাহেবকে দেখেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : একটি টিভি সাক্ষাতকারে আপনি বলেছেন কুদ্দুস সাহেবের শেখানো মতে আপনি নিজামী সাহেবের নাম বলেছেন।
উত্তর : মনে নেই। না।

মাওলানা নিজামীর মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে ১২ মে । ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে জেরা ছাড়াই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ এক সাক্ষীর।

Mehedy Hasan, 2/5/2013
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ  ৩২ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন বাসন্তি ঘোষ (৬৫)। তবে তিনি তার জবানবন্দীতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও উচ্চারন করেননি । তাই তাকে জেরা করা থেকে বিরত থাকেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী । সাক্ষী বাসন্তি ঘোষ তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের একদিন তার স্বামী মনরঞ্জন ঘোষ বাজার থেকে আসার পর তাদের বাড়িতে একজন আর্মি এবং মিলিটারি এবং একজন বাঙ্গালী আসে। তারা তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি এসময় তার স্বামীকে ঝাপটে ধরলে তাকে মারধোর করা হয়। তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয় খিতিশ মহাজানের বাড়ি। সেখানে অনেকের সাথে তার স্বামীকেও হত্যা করা হয়। দুইদিন পর স্বামীর এক ভাই তার স্বামীর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে।