বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী সহায়তায় ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ


মেহেদী হাসান
আব্দুল কাদের মোল্লা মামালায় আপিল শুনানীতে সহায়তা  এবং মতামত গ্রহনের জন্য  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ গতকাল বৃহষ্পতিবার  এ নিয়োগ প্রদান করেন। এরা হলেন, সাবেক বিচারপতি  টি এইচ খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রবীন আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

আজ  সকালে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী শুরু হলে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা এই মামলায়  অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  তাদের কাছ থেকে ল’পয়েন্টে মতামত গ্রহণ করা হবে।

এরপর বিকালে এটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সাতজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।

আজ রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী পেশ করেন। ১৫ দিনের জন্য  গ্রীস্মের ছুটিতে যাবার আগে আজই  ছিল শুনানীর শেষ দিন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষ হয়নি। ছুটি শেষে আগামী সাত জুলাই পুনরায় কোর্ট বসলে এটর্নি জেনারেল তার অসমাপ্ত শুনানী পেশ করবেন। এরপর অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মতামত গ্রহণ করবেন আদালত।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ের  বিরুদ্ধে আসামী এবং রাষ্ট্র উভয় পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল শুনানীতে  রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছ থেকে অনেক আইনগত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে । বিশেষ করে ট্রাইব্যুনালের রায় হবার পর রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সুযোগ দিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি যে আইন সংশোধন করা হয়েছে  তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না তা নির্দিষ্ট করে জানতে  চান আদালত। গত মঙ্গল এবং বুধবার এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানী পেশ করার সময় আদালতের কাছ থেকে  এ বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার  বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীকে সাজা দেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষ আর  আপিল করতে পারবেনা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি আসামীকে  খালাস দেয়া হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বা অভিযোগকারী আপিল করার সুযোগ পাবে; অন্যথায় নয়। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে  ওঠে।  সে প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনালের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয় সংসদে।  সংশোধিত আইনে বলা হয় আসামী পক্ষের মত সরকার পক্ষও আপিলের সমান সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শুধু খালাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষও আপিল করতে  পারবে ।
আইনের আপিল সংক্রন্তা ধারা সংশোধনের পর সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে।
গত মঙ্গল এবং বুধবারের শুনানীর সময় আদালত সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চান ১৮ ফেব্রুয়ারির সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না। আদালত এ প্রশ্নের জবাব   পাবার জন্য আইনটি পাশের সময় সংসদ প্রসিডিংস   হাজির করতে বলেন রাষ্ট্রপক্ষকে। কিন্তু সংসদীয় প্রসিডিংস পর্যালোচনা করে দেখা যায় সংশোধনী আইনটি আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য  না চলমান অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে বিষয়ে আইনে যেমন কোন কিছু নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি তেমনি সংসদ প্রসিডিংসেও কিছু  উল্লেখ নেই।
আদালত এটর্নি জেনারেল এর কাছ থেকে জানতে চান- উপমহাদেশ বা ইংল্যান্ডের অন্তত একটি উদাহরন পেশ করুন যেখানে  রায় হবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করার নজির আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এ নজির পেশ করত ব্যর্থ হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি সংশোধনী এই মালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না সে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত দুই দিনে তার জবাবে বলেন- প্রযোজ্য। তিনি বলেন,  ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের পর  এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দিয়ে আইনের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর হবে। আপনাদের ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর আছে। কাদের মোল্লার রায় হবার আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে  রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ ছিল বলে ধরে নিতে হবে। সেখানে কবে রায় হল এবং কবে  আইন সংশোধন হল এটা অপ্রাসঙ্গিক  বিষয়। কারণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে এ সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর।
কিন্তু আদালত এটর্নি জেনারেল এর উদ্দেশে গত বুধবার বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে আমাদেরকে আইন রিরাইট করতে হবে। আইন রিসেটেল এবং রিস্টাবলিশ করতে হবে।
আদালত আরো বলেন, মনে রাখবেন আমরা আজ  এ মামলায় এখান থেকে যে ব্যাখ্যা দেব তা আইন হয়ে যাবে।  ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব আছে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন। আপনি রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। একই সাথে আপনি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক।

অবশেষে আজ   আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় আপিল বিভাগ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিলেন আইনী বিষয়ে তাদের মতামত গ্রহনের জন্য। অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে কোট করে বিভিন্ন অনলাইনে পরিবেশিত খবরে বলা হয়- ১৯৭৩ সালের আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না সে বিষয়ে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবেন আদালত।

এটর্নি জেনারেল এর কাছে দৈনিক নয়া  দিগন্ত’র পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে  যেমন আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন বিষয়ে মতামত নেয়া হবে কি-না সে বিষয়ে সকালে কোর্ট তো নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। কোর্ট বলেছেন ল’পয়েন্টে মতামত নেয়া হবে। তাহলে আপিলের ধারা  সংশোধন বিষয়ে মতামত নেয়ার যে কথা আপনি বলেছেন তার ভিত্তি কি-। তখন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  বলেন, আমি যেটা বলেছি সেটা আমার অনুমান।   আমি এখনো নিয়োগের অর্ডার কপি পাইনি।

এদিকে আজ  বৃহষ্পতিবার শুনানীর সময় আদালত এটর্নি জেনারেল এর কাছে জানতে চান যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মেয়াদ কত বছর ।  এটর্নি জেনারেল বলেন,  আমৃত্য। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা  তার সাথে একমত পোষন করেন।
বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৭ তে বলা হয়েছে যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের আইনের ক্ষেত্রে পেনাল কোর্ড এবং সিআরপিসি প্রযোজ্য নয়। অপর দিকে ট্রাইব্যুনালের আইনে যাবজ্জীবন সাজার  মেয়াদও উল্লেখ নেই। ফলে এ নিয়ে গতকাল প্রশ্ন তোলেন আদালত।
অপরদিকে এ বিচার দেশীয় আইনে করা যাবে বলে  মত দেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল শুনানী গ্রহণ করেন।


বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৩

কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী//এটর্নি জেনারেল এর প্রতি আদালত : আপনার আবেদন গ্রহণ করলে আইন রিরাইট করতে হবে


mehedy hasan
আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানীর সময় এটর্নি জেনারেল এর প্রতি লক্ষ্য করে আদালত বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে আমাদেরকে আইন রিরাইট করতে হবে। আইন রিসেটেল এবং রিস্টাবলিশ করতে হবে।
আদালত আরো বলেন, মনে রাখবেন আমরা আজ  এ মামলায় এখান থেকে যে ব্যাখ্যা দেব তা আইন হয়ে যাবে।  ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব আছে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন। আপনি রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। একই সাথে আপনি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক। সাবমিশন রাখার সময় এ বিষয় মনে রাখবেন। 

রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করেছে। ট্রাইব্যুনালের সাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিলনা পূর্বে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন রায় প্রদানের পর শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলনের দাবির ফলে   গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের আপিলের ধারা সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষকেও আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। এ সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ ফাঁসির দাবিতে আবেদন করেছে । আজ বুধবার  রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল তার দাবির পক্ষে যুক্তি পেশ করার সময়  দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন।

গতকালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজ বুধবার শুনানীতে এটর্নি জেনারেল  মাহবুবে আলম  বলেন, আদালতের প্রশ্ন হল ট্রাইব্যুনাল আইনের চতুর্থ সংশোধনী কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না। এ প্রশ্নে আমার জবাব হল- প্রযোজ্য। ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের পর  এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দিয়ে আইনের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর হবে। আপনাদের ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর আছে। কাদের মোল্লার রায় হবার আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে  রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ ছিল বলে ধরে নিতে হবে। সেখানে কবে রায় হল এবং কবে  আইন সংশোধন হল এটা অপ্রাসঙ্গিক  বিষয়। কারণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে এ সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর।

এটর্নি জেনারেল বলেন,  সংবিধানের ৪৭ ধারা মোতাবেক ১৯৭৩ সালের আইন সংরিক্ষত একটি আইন। এ আইনকে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। সে হিসেবে আইনের চতুর্থ সংশোধনীও চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। তিনি বলেন, এই আইন চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। চ্যালেঞ্জ করলে আইনের উদ্দেশ্য ফ্রাসট্রেট হয়ে যাবে।

এটর্নি জেনারেল এর এ সাবমিশনের জবাবে আদালত বলেন, আমরা কোন আইন বা সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করছিনা। আমরা সিম্পল জানতে চাচ্ছি  ১৮ ফেব্রুয়ারি যে সংশোধনী হয়েছে তা  কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন,  এই সংশোধনী বিশেষ করে এই মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না তা বলেন।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, এই সংশোধনীতেতো কোন দণ্ড দিচ্ছেন না, বরং রাষ্ট্রপক্ষকে  আপিলের পাওয়ার দিচ্ছেন।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গতকালের মত আজো প্রশ্ন করেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বা ইংল্যান্ডে যেকোন একটি সিঙ্গেল বেঞ্চ  এর একটি উদাহরন দেখান যেখানে রায় হবার পর এ ধরনের আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা হয়েছে।
এসময় এটর্নি জেনারেল বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মত ৩০ লাখ লোক মারা যায়নি, এত লোক ধর্মান্তরিত, দেশান্তরিত হয়নি এবং এত লোক ইজ্জত হারায়নি।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এরকম হলে আসামী ন্যায় বিচার পাবেননা। ইমশোনাল হবেননা।
বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালে কি হয়েছিল তা কি আমরা জানিনা? আমরা কি বিদেশ থেকে এসেছি? আমরা যদি ইমশোনাল হয়ে যাই তাহলে কি ন্যায় বিচার হবে?
এর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ঠিক আছে আপনি কন্টিনিউ করেন। আমরা কম ইন্টারফেয়ার করব।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, কি বলেন আপনি? আমরা কি প্রশ্ন করবনা? আমরা কি কিয়ার হবনা? মনে করেন আমরা আসামীকে ফাঁসি দিয়ে দিলাম। তাহলে এর বিরুদ্ধে আসামীর আপিলের সুযোগ কোথায়? কারণ ট্রাইব্যুানালের রায়ের বিরুদ্ধে তারা এখানে এসেছে আপিল নিয়ে। ট্রাইব্যুনালতো তাকে ফাঁসি দেয়নি। এখন আমরা ফাঁসি দিলে তারা পরে আর আপিলের সুযোগ কোথায় পাবে? আর রাষ্ট্রপক্ষেরওতো আগে আপিলের সুযোগ ছিলনা।

সাবমিশনের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মাইলর্ড, আসামীর ক্ষেত্রে এখানে ইননোসেন্ট শব্দ ব্যবহার হবে কেন?
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের এখানে তো ইননোসেন্ট হিসেবে একটা সাবমিশন আছে।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে বলেন, তাহলে আপনারা আপিলের বিধান না রাখলেই পারতেন। ট্রাইব্যুনালই সব, বলে দিলে পারতেন। মিস্টার এটর্নি জেনারেল, মনে রাখবেন আমাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখতে হবে। আমরা আজ এখানে যে ব্যাখ্যা দেব তাই আইন। ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব থাকবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এটর্নি জেনারেল এর উদ্দেশে বলেন,  আপনার আবেদন গ্রহণ করতে হলে ইউ হ্যাব টু রিরাইট দি ল’, রিসেটেল দি ল’ এন্ড  রিস্টাবলিশ দি ল’।

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, আপনি রাষ্ট্রের একজন এটর্নি জেনারেল। সেই সাথে রাষ্ট্রের একজন নাগরিক। কাজেই সে হিসেবে সাবমিশন রাখবেন।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর আগে তার সাবমিশনের বলেছিলেন,  ট্রাইব্যুনালের সাজার বিরুদ্ধে পূর্বে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিলনা। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধনের পর  রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সুযোগ পেয়েছে এবং তারা মৃত্যুদন্ডের দাবি করে আবেদন করেছে। ১৮ ফ্রেবুয়ারি যদি আইনটি সংশোধন না হত তাহলে কাদের মোল্লার ফাঁসির কোন সুযোগ ছিলনা। আপিল বিভাগকে হয় ট্রাইব্যুনালের সাজা যাবজ্জীবন বহাল রাখতে হত না হয় কমাতে হত। কিন্তু যাবজ্জীবন বাড়িয়ে ফাঁসি দিতে পারতনা। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধনের ফলে আসামীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
আইন সংশোধন, আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে গতকাল এবং আজো বিতর্ক চলে শুনানীতে।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে  চার নং অভিযোগ কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। এর বিরুদ্ধেও সাজা দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে।  এ আপিলের সুযোগ আছে কিনা- আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, সুযোগ আছে।






মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই // আইন পাশে এমপিদে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

মেহেদী হাসান
আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল আইনের আপিলের ধারা সংশোধন করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চা শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করেছে। কিন্তু আইনের সংশোধনিটি আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে  কি-না সে বিষয়ে কোথাও কোন কিছু উল্লেখ নেই।  এমনকি সংশোধনী পাশের সময় এ বিষয়ে সংসদের আলোচনায়ও কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আজ  মঙ্গলবার আপিল আবেদন শুনানীর সময় সংশোধনী আইনের এ অস্পষ্টতা নিয়ে দীর্ঘ  বিতর্ক চলে। আইনটি পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে সংসদের আলোচনায় এ বিষয়ে কোন কিছু না থাকায় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

রায় হয়ে যাবার পর  আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষকে নজির পেশ করতে বলেন আদালত। 

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার  বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীকে সাজা দেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষ আর  আপিল করতে পারবেনা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি আসামীকে পুরোপুরি খালাস দেয়া হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বা অভিযোগকারী আপিল করার সুযোগ পাবে; অন্যথায় নয়। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে  ওঠে।  সে প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনালের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয় সংসদে।  সংশোধিত আইনে বলা হয় আসামী পক্ষের মত সরকার পক্ষও আপিলের সমান সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শুধু খালাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষও আপিল করতে  পারবে ।
আইনের আপিল সংক্রন্তা ধারা সংশোধনের পর সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে। এছাড়া  কাদের মোল্লাকে যে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল খালাস দিয়েছে সেটিতেও সাজা দাবি করা হয়েছে সরকার পক্ষের আবেদনে।
আজ  আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায়  আপিল  আবেদন শুনানীর সময় যুক্তি পেশ করছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় আদালত তাকে প্রশ্ন করেন আপনারা যে আইনের বলে আপিল আবেদন করেছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না। কোন বিধান বলে আপনারা এই মামলার ক্ষেত্রে এ দরখাস্ত করেছেন।

তখন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন  এই মামলার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের সংশোধনী আইন  প্রযোজ্য এবং আইনের সংশোধনীতে বলা  আছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর বলে ধরে নেয়া হবে।
এসময় আদালত জানতে চান  ১৮ ফেব্রুয়ারি সংশোধনী আইন পাশ  যে আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা  কোথাও উল্লেখ আছে কি-না।  এসময় আদালত আইনটি সংশোধনের  উদ্দেশ্য পড়ে শোনাতে বলেন এটর্নি জেনারেলকে। আইন পাশের উদ্দেশ্য পড়ে শোনানো হলে তাতে দেখা যায় আইনে যেমন এ বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি তেমনি সংশোধনী আইন পাশের বিষয়েও আব্দুল কাদের মোল্লার মামলা বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। তখন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সংশোধনী পাশের সময় এর উদ্দেশ্য নিয়ে  সংসদে কি আলোচনা হয়েছিল তা আছে আপনার কাছে? সংসদে এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছিল না শুধু হাত তুলে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে বলে পাশ হয়েছিল? এটর্নি জেনারেল এসময় সংশোধনী আইন পাশের সময়কার সংসদীয় প্রসিডিংস উপস্থাপন করেন আদালতে।
কিন্তু তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাতেও সংশোধনীটি পাশের ক্ষেত্রে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার রায় বের হবার পর সেক্ষেত্রে  সংশোধনী প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে কেউ কোন আলোচনাও পেশ করেননি সংসদে। তখন এমপিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন।

এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিলটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদের যে প্রসিডিংস উত্থাপন করেন তাতে  দেখা যায় মো : ফজলে রাব্বি মিয়া সংশোধনী প্রস্তাব বিল আকারে সংসদে উত্থোপন করেন। হুইপ আব্দুল ওয়াহাব  এর ওপর আলোচনা করেন। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংশোধনী গ্রহনের জন্য স্পিকারের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। এরপর কণ্ঠভোটে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে মর্মে বিলটি পাশ হয়। এছাড়া রাশেদ খান মেনন সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দটি যোগ করার জন্য প্রস্তাব করেন এবং এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। তা এটর্নি জেনারেল পড়ে শোনান আদালতে। তাতে দেখা যায় রাশেদ খান মেনন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন,  ১৯৭১ সালে  জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে।  আল বদর, আল শাসস, রাজাকার গঠন করে। আজো তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে চলেছে। তাই সংগঠন হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তিনি সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দ যোগ করার প্রস্তাব করেন। তার বক্তব্য পাঠ শেষ হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, এসবতো বেখাপ্পা কথাবার্তা। অস্পষ্ট। এর মধ্যেতো সংশোধনী পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়াও  একই ধরননের মন্তব্য করেন এসময়।
এসময় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি   মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন,  এই যে, বলা হয় শুধু হাত তোলা ছাড়া কোন কাজ নেই.........। আজকের পত্রিকায় যে  হেডলাইন আছে....।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধ আইনটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদে আইনের উদ্দেশ্য নিয়ে কত সুন্দর  আলোচনা এবং বিতর্ক হয়। অনেক এমপি আইনের ক্ষেত্রে তাদের মতামত তুলে ধরেছিলেন। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরসহ অন্যরা  আইনটি বিষয়ে সংসদে কথা বলেছিলেন।
এসময় অপর বিচারপতি সুরেন্ত্র কুমার সিনহা  আফসোস করে বলেন, সেই সংসদ আর আজকের সংসদ; কোথায় এসে দাড়িয়েছে।
আদালতের নির্দেশে আইনটি পাশের  উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ  এর বক্তব্য পড়ে শোনান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেখানে উল্লেখ আছে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যানশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যক্ট প্রণয়ন করা হয়। .....উক্ত অ্যাক্টের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনক্রমে যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধেল সাথে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পর বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, এখানে ‘বিচার কার্যক্রম চলামান রয়েছে’ বলে একটি কথা আছে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্মক। তিনি বলেন, মিস্টার এটর্নি জেনারেল, এ থেকে যেটি স্পষ্ট তাহল ১৮ ফেব্রুয়ারির সংশোধনী ট্রাইব্যুনালের যেসব বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।  এ মামলার ক্ষেত্রে নয়।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এটর্নি জেনারেলকে বারবার একটি প্রশ্ন করেন-রায় বের হবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা হয়েছে এমন একটি নজির দেখান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল তা দেখাতে পারেননি।
আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে আসামীর অধিকার ুন্ন হওয়া বিষয়ে। কারণ ট্রাইব্যুনালের আইনে ফাঁসির বিধান থাকলেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন।  তাই ফাঁসির উদ্দেশে আইন সংশোধন করা হলে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসে। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে বলেন আপনার দরখাস্ত গ্রহণ করা হলে তো আসামীকে ফাঁসি দিতে হয়।
এটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে আপিলের একটা সুযোগ দেয়া  হয়েছে আইন সংশোধন করে। সেখানে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসবে কেন?
২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনী  আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে দুর্বলতা, অস্পষ্টতা বিষয়ে  বিতর্ক চলাকালে আদালত বিরতিতে চলে যান গতকাল। দুপুর ১২টায় আবার কোর্ট বসে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন অনুপস্থিত থাকায় আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার শুনানী আজ আর হয়নি।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানী গ্রহণ করেন।






বুধবার, ১২ জুন, ২০১৩

কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী//এটর্নি জেনারেলকে একের পর এক প্রশ্ন আদালতের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত  যাবজ্জীবন কারাদান্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ আসামী পক্ষের  শুনানীর জবাব দিচ্ছিলেন  রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা বা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। জবাব প্রদানের সময় একের পর এক নানামুখী প্রশ্নের মুখোমুখি হন এটর্নি জেনারেল। প্রশ্নের জবাব প্রদানে এটর্নি জেনারেলকে  সহায়তা না করায় কোর্টে উপস্থিত অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, ডেপুটি এটর্নি জেনারেলদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন  দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়ের বিভিন্ন অসঙ্গতি, দুর্বল  দিক তুলে ধরে অনেক অভিযোগ উত্থাপন করেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।  এটর্নি জেনারেল এর কাছে এসব অভিযোগের জবাব  দাবি করেন কোর্ট। এটর্নি জেনারেল কোর্টের  বিভিন্ন প্রশ্নের এবং আসামী পক্ষের অভিযোগের জবাব প্রদানের সময় রায়ের কপি, ফরমাল চার্জসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে পাতা উল্টিয়ে রেফারেন্স দেয়ার চেষ্টা করেন।  প্রথম বেঞ্চে তখন  তিনজন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এবং আরো কয়েকজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলসহ  এটর্নি জেনারেল অফিসের  ছয় থেকে সাতজন  আইন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্নের জবাব প্রদানে কোন সহায়তা করছিলেননা। তখন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ অন্যান্য বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের প্রতি। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ওনারাতো সব জেনারেল। ওনারা কি সহায়তা করবেন। এটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে হলে  বিগ্রেডিয়ার, কর্নেল, লে, লে কর্নেল এবং ক্যাপ্নে লাগবে। তিনি এটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জবাব দিতে এত সময় লাগলে তো চলবেনা। কেউ তো আপনাকে কোন রেফারেন্স দিয়ে হেল্প করেনা। আপনাকে আমরা এত সময় দেব কেন? তিনি অন্যন্যা সরকারি আইন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন শুধু ম্যাটেরিয়াল এক্সিবিট হয়ে লাভ নেই।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা  বলেন, আপনার টিম এসব কালেক্ট না করে আসলে কেমনে হবে?
বিচারপতি আব্দুল  ওয়াহহাব মিয়া বলেন,  ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব যখন সাবমিশন রাখেন তখন তার জুনিয়ররা তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে একের পর পাতা উল্টায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে। তাকে রেফারেন্স দিয়ে সহায়তা করেন। ভুল হলে কানে কানে আবার বলে দেয়। আপনারা এরকম পারেননা?

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামী পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময় এর আগে বলেছেন,  এইডিং, এ্যাবেটিং এবং কমপ্লিসিটি বিষয়ে কাউকে সাজা দিতে হলে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রমান করতে হবে যে, অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার সারকমসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন বা যথার্থ অবদান ছিল।  তিনি বলেন,  অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের মোল্লার সহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্টতা ছিল এটি রাষ্ট্রপক্ষ  পক্ষ প্রমান করতে পারেনি। অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন না থাকলে  এইডিং, এ্যাবেটিং এবং কমপ্লিসিট এর অভিযোগে সাজা দেয়া যায়না।
এইডিং, এ্যাবেটিং, কমপ্লিসিটি এবং সারকমসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন কি সে বিষয়ে রেফারেন্স হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রুয়ান্ডার লরেন স্যামেঞ্জার মামলার রেফারেন্স দিয়েছিলেন।
আজ যুক্তি পেশের সময় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম লরেন স্যামেঞ্জা মামলার বেশ বড় একটি ডকুমেন্ট বঁধাই করে বিচারপতিদের সরবরাহ করেন।
এরপর বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন, এটি আপনি কেন দিলেন সে বিষয়ে তো কিছু বললেননা। এটি দিয়ে আপনি কি বোঝাতে চান?  এটা কেন দিলেন আমরাতো তা কিছু বুঝলামনা। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব এ বিষয়ে কি সাবমিশন রেখেছিলেন এবং কি বলতে চেয়েছিলেন?
তখন এটর্নি জেনারেল বলেন, ওনারা যে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা আমিও বুঝিনি। তখন বিচারপতি এবং কোর্টে উপস্থিত অনেকের মাঝে হাসির সৃষ্টি হয়।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব  মিয়া বলেন, আপনি আপনাকে হেল্প করছি মি. এটর্নি জেনারেল। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব বলতে চেয়েছিলেন, অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের মোল্লার সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন ছিলনা। সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন না থাকলে কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া যাবেনা এই ছিল তার সাবমিশন। এখন আপনি এর জবাব দেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আসামী পক্ষে  যুক্তি পেশের সময় রাষ্ট্রপক্ষের চার নম্বর সাক্ষী কাজী রোজীর সাক্ষ্য বিষয়ে নানা অসঙ্গতি এবং বৈপরীত্য তুলে ধরে বলেছিলেন, তার সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এটর্নি জেনারেল আজ যুক্তি পেশের সময় বলেন, তার সাক্ষ্য অবশ্যই বিশ্বাস যোগ্য। সে একজন ন্যাচারাল সাক্ষী। এসময় বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ বলেছেন, সাক্ষী শোনা কথা বলেছেন। সাক্ষী কার কাছ থেকে শুনেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। সাক্ষী কার কাছ থেকে শুনেছে সে সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য কিনা?
এটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই সাক্ষী সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, তাছাড়া আসামী পক্ষের অভিযোগ একটি শোনা কথা  আরেকটি শোনা কথাকে সহায়তা করতে পারেনা।  কবি মেহেরুন্নিসা ছিলেন অ্যকশন কিমিটির সেক্রেটারি। আর কাজী রোজী ছিলেন সভানেত্রী। তাই কাজী রোজী কবি মেহেরকে নিয়ে যে বই লিখেছেন তাতে তো বিস্তারিতভাবে থাকা দরকার ছিল স্বাভাবিকভাবে। আব্দুল কাদের মোল্লার নাম সেখানে নেই কেন।
এসময়  আরো  দুয়েকজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন আব্দুল কাদের মোল্লার নাম তার বইয়ে নেই। এটি ছিল আসামী পক্ষের দাবি।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বইতে  উল্লেখ  করলে লেখকের জীবনের হুমকি ছিল।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন,  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে  এসব বলেননি কেন তিনি?
তখন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কবি মেহেরকে নিয়ে কাজী রোজীর বইটি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে এবং তখন আব্দুল কাদের মোল্লা জেলে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুক্তি পেশের সময় বলেছিলেন  আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় চার্জ গঠন  এবং বিচার শুরুর পরও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে যা আইনবিরোধী। তারা তিনজন সাক্ষী পরবর্তীতে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে এটর্নি জেনারেল বলেন, আইনের ৯(৪) এবং রুলের ৪৬ (এ) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত করেছে।

প্রধান বিচারপতি  মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে আজ  আপিল শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।






বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা/// আসামী পক্ষের আপিল শুনানী শেষ রাষ্ট্রপক্ষের জবাব প্রদান শুরু

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আসামী পক্ষের আপিল শুনানী আজ শেষ হয়েছে।  আসামী পক্ষের শুনানী শেষে রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম   তার জবাব প্রদান শুরু করেছেন।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল  হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  শুনানী গ্রহণ করেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ শুনানীর শেষ পর্যায়ে তিনটি  দফা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন আব্দুল কাদের মোল্লা হাক্কা গুন্ডা, আক্তার গুন্ডাসহ বিহারী গুন্ডাদের  কালপাবল এসোসিয়েশন ছিল বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি তারা জুড়িশিয়াল নোটিশের মাধ্যমে আমলে নিয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিহারী গুন্ডাদের দোসর হিসেবে বর্নিত করা হয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,   ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত কোন ঘটনাকে আদালত জুড়িশিয়াল নোটিশে নিতে পারে। তা প্রমানের দরকার হয়না। যেমন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের ঘটনা আদালত জুড়িশিয়াল নোটিশে নিতে পারে। এটা নতুন করে প্রমানের দরকার হয়না। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী গুন্ডাদের দোসর ছিল এবং তাদের সাথে অপকর্মে অংশ নিয়েছে এটা প্রমান করা ব্যাতিরেকে কি করে আদালত জুড়িশিয়াল নোটিশে নিতে পারে?  আব্দুল কাদের মোল্লা  বিহারী গুন্ডাদের দোসর হিসেবে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে তা তো কোন প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ঘটনা নয়। কিন্তু জুড়িশিয়াল নোটিশের সুযোগ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল এটি করেছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন এটা  অবৈধ।
এরপর তিনি বলেন,  ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে আলুবদী হত্যাকান্ড এবং হযরত আলী পরিবারকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগে ফাঁসির দাবি করেছে।  রাষ্ট্রপক্ষের এখন প্রমান করতে হবে ট্রাইব্যুনাল যে যাবজ্জীবন রায় দিয়েছে তা একটি  পারভারস বা ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এটি প্রমান না করে তারা এ দাবি করতে পারেনা। একই ভাবে  ঘাটার চর  হত্যাকান্ড অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগে শাস্তি দাবি করে আপিল করেছে। এ ক্ষেত্রেও তাদের প্রমান করতে হবে যে,  ট্রাইবু্যুনাল এ ক্ষেত্রেও ন্যায়ভ্রষ্ট রায় দিয়েছে।
তিনি বলেন, হযরত আলী হত্যাকান্ডে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোমেনা বেগমকে পুনরায় পাঁচটি প্রশ্নের জেরা করার জন্য রিকলের আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মোমেনা বেগম তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন সেখানে তিনি  তার পিতা এবং পরিবারের লোকজনের হত্যাকান্ড বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। তিনি বলেছেন- বিহারীরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এবং তাদের তিনি চিনতেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার  কাছে মোমেনা বেগমের এ জবানবন্দী আমলে নেয়ার  ব্যবস্থা করা হোক।

ঘাটার চর ঘটনা এবং আদালতের প্রশ্ন এটর্নি জেনারেলের কাছে : চার নং অভিযোগ কেরানীগঞ্জের ঘাটার চর হত্যাকান্ড  থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানী পেশের সময় এটর্নি জেনারেলকে আদালত কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সে  প্রশ্নে যাবার আগে ঘাটার চর ঘটনা এবং সংশ্লিষ্ট সাক্ষীর জবানবন্দী বিষয়ে জেনে নেয়া দরকার।
ঘাটার চর ঘটনার অভিযোগ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরন : ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লা   ৬০-৭০ জন রাজাকার আল বদর বাহিনী নিয়ে ঘাটার চরে হামলা চালায়। এসময় তারা ওসমান গনি এবং গোলাম মোস্তফা নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এছাড়া দুটি গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে তিন জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের একজন হলেন আব্দুল মজিদ পালোয়ান। তিনি  বলেছেন ২৫ নভেম্বর সকালে তাদের গ্রামের উত্তর দিক থেকে গুলি  আসতে লাগল। তিনি ঘটনা জানার জন্য যেদিক থেকে গুলি আসতে লাগল সেদিকেই অগ্রসর হন।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব  মিয়া  এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন আর্মি আসা এবং গুলির আসার শব্দে সবাই যাচ্ছে একদিকে আর সাক্ষী যাচ্ছে যেদিক থেকে গুলি আসচে সেদিকে। এটা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব কি-না। সেসময় সাক্ষীর বয়স কত ছিল?
এটর্নি জেনারেল বলেন ১৬। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ১৫/১৬ বছরের একটি ছেলের পক্ষে আর্মি আসার খবর পেয়ে সেখানে দাড়িয়ে থাকা এবং গুলি যেদিক থেকে আসছে সেদিকে  এগিয়ে যাওয়া কি সম্ভব?
এটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা । তাছাড়া যুদ্ধ তখন শেষ পর্যায়ে। তাই এটা সম্ভব ছিল।

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, আসামী পক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন আপনারা যে মৃত্যুদণ্ড এবং খালাস দেয়া অভিযোগে শাস্তি দাবি করেছেন তার পক্ষে প্রমান করতে হবে যে, ওই বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় পারভারস ছিল। সাধারনত রায় পারভারস না হলে আমরা হস্তক্ষেপ করিনা।
এ পর্যায়ে আজকের মত শুনানীর শেষ হয়।
আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে যুক্তি  উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ ।




বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী/// ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন তিনি হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী কিন্তু জল্লাদখানা ডকুমেন্টে লেখা রয়েছে তিনি ঘটনার ২ দিন আগে শশুর বাড়ি চলে যান


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যে দুটি  অভিযোগে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান  করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অভিযোগ হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা।

এ ঘটনায় বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের   বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ ঘটনা বিষয়ে । ট্রাইবু্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা দেখেছেন। তিনি নিজেও  শারিরীক লাঞ্ছনার শীকার হন এবং এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। একই সাক্ষী মোমেনা বেগম  তাদের  পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা সম্পর্কে  ২০০৭ সালে মিরপুর  জল্লাদখানা যাদুঘর (মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এর অংশ) কর্তৃপক্ষের  কাছে বিবরন দেন। মোমেনা বেগমের  বরাত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। সে প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়  মোমেনা বেগম   ঘটনার দুই  দিন আগে  শশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান।

কোর্টে তিনি বললেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শশুর বাড়ি চলে যান।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে  ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদান্ডের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীর সময় আজ  ৬ নং অভিযোগ তথা হযরত আলী পরিবারের হত্যাকান্ডের বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।    এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হযরত আলীর মেয়ে মোমেনা বেগমের ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত জবানবন্দী এবং জল্লাদ খানা যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট পড়ে শোনান তিনি।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

৬ নং অভিযোগ হযরত আলী হত্যাকান্ড : ৬ নং অভিযোগ হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের  জবানবন্দীর আজ আদালতে পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ঘটনাটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে  ঘটনা বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে  ঘরে আসলেন এবং  বললেন কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরে বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও  হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।
মোমেনা জানায় সে এবং তার  ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়।  এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যর্থা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক  ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে যা রয়েছে :
মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে  শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে। 

যে হযরত আলী হত্যাঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরন রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা  লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষন করা হয়েছে।  মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরন তারা সংগ্রহ করে।    মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত সে ডকুমেন্টে  লেখা আছে ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুর বাড়ি চলে যান।

হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০৭  তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরন দেন তা নিম্নরূপ।

‘ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।
হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকলে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারিরা হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রানে বেঁচে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আলী স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্বা ছিল।
কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে বলেছেন তিনি ঘটনার তিন বছর পর পর্যন্ত পাগল ছিলেন। তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। তিনি তার পিতার হত্যার ঘটনা দেখেননি। ঘটনার দিন তার পিতাকে ধরে নিয়ে যেতে দেকেছেন। কিন্তু কারা কিভাবে হত্যা করেছে তা তিনি দেখেননি। তিনি কামাল নামে একজনের কাছে শুনেছেন তার পিতার হত্যার ঘটনা।

আজ  ছয় নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের পূর্বে   পাঁচ নং অভিযোগ তথা আলুবদি অভিযোগ বিষয়ে অসমাপ্ত বক্তব্য পেশ করেন। এ ঘটনা বিষয়ে ৯ নং সাক্ষী আমির হোসেনর সাক্ষ্য এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের মধ্যে গরমিল তুলে ধরেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী বলেছেন তিনি ১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  চিনতেন। ঘটনার দিন আব্দুল কাদের মোল্লাকে তিনি রাইফেল হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন এ কথা সাক্ষী তাকে বলেননি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা বলেছেন তিনি ঘটনার দিন গ্রামের উত্তর পশ্চিম পাশে কচুরিপানার মধ্যে  লুকিয়ে থেকে ঘটনা দেখেছেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনার বিবরন অনুযায়ী পাকিস্তান আর্মি আসে  গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে। আব্দুল কাদের মোল্লা আসে পূর্ব দিক থেকে। আর সাক্ষী ছিল গ্রামের উত্তর পশ্চিম পাশে কচুরিপানার মধ্যে। এভাবে কি কারো পক্ষে গ্রামের মধ্যে ঘটনা দেখা যায়?
এছাড়া ষষ্ঠ সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা বলেছেন তিনি ঝোপের মধ্যে  চারফিট গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে দেকেছেন  ঘটনা। গ্রামের চারদিকে তখন ধানক্ষেত। সাক্ষীর কথা অনুযায়ী সে  ধানক্ষেত ছিল মানুষের সমান লম্বা। এভাবে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে ধান ক্ষেতের মাথার ওপর দিয়ে ঘটনা দেখা  এবং মানুষ চেনা কি করে সম্ভব হতে পারে>
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের সাবমিশন হল এ দুজন সাক্ষী বিশ্বাসযোগ্য নয় কোন অবস্থাতেই।
শুনানী শেষে অ্যাডভোটেক শিশির মো : মনির  সাংবাদিকদের জানান সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে তারা ১১টি মামলার রেকর্ড সংগ্রহ করেছেন। হাইকোর্টের একজন বিচারকের জমিদখলসহ তার বিরুদ্ধে আরো অনেক দখল, লুটপাটের মামলা হয়েছে। ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্রিকায় তার অপরাধ বিষয়ে লিড নিউজ হয়েছে। সাক্ষী এলাকায় লাটভাই নামে পরিচিত।

যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, শিশির মো : মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।

মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী/// আলুবদি হত্যাকান্ড বিষয়ে যুক্তি পেশ শুরু

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী চলছে।   আজ পাঁচ নং অভিযোগ তথা  মিরপুরে  আলুবদি হত্যাকান্ড বিষয়ে  যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  শুনানী গ্রহণ করেন।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ যে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারদন্ড প্রদান করেছে তার মধ্যে একটি হল মিরপুরের আলুবদি  গ্রামে গণহত্যার  ঘটনা। আব্দুল  কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এটি ছিল পাঁচ নং অভিযোগ।

৫ নং অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালের রায়ে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৫ নং অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরন তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল  সাড়ে চারটার সময় আব্দুল কাদের মোল্লার  সদস্যরা (মেম্বারস)  পাকিস্তান আর্মি সাথে নিয়ে মিরপুর পল্লাবীর  আলুবদি গ্রামে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমন পরিচালনা করে । আক্রমনের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এতে ৩৪৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। এ গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

৫ নং অভিযোগ বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ দুই জন সাক্ষী হাজির করে। তারা হলেন  ৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা এবং ৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা। তারা দাবি করেছেন তারা এ গনহত্যা তারা দেখেছেন এবং আব্দুল কাদের মোল্লা মূল নায়ক হিসেবে এতে অংশগ্রহণ করে। তারা সে সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ।
অপর দিকে এ ঘটনা বিষয়ে আসামী পক্ষের একজন সাক্ষী হল আলতাফ উদ্দিন মোল্লা। আলতাফ উদ্দিন মোল্লা আবার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লার ছোট ভাই।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আজ উক্ত তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরা পড়ে শোনান আদালতে। এরপর রায় থেকে কিছু ফাইন্ডিংস তুলে ধরেন। এরপর তিনি ৬ নং  সাক্ষী সফিউদ্দিন মোল্লা এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের গরমিল তুলে ধরেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন- তিনি ১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন। তার দাবি আব্দুল কাদের মোল্লা তখন গোলাম আযমের নির্বাচনের পক্ষে কাজ করেছেন। অন্যদিকে সাক্ষী নিজে আরেক প্রার্থী জহির উদ্দিন জালালের পক্ষে কাজ করেছেন কর্মী হিসেবে। সেই হিসেবে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষীকে জেরায় প্রশ্ন করা হয়-১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের  মোল্লাকে চেনার কথা কি আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেছিলেন?
সাক্ষী  উত্তর দিয়েছেন-বলেছি।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনত একথা কি আপনাকে বলেছিল? তদন্ত কর্মকর্তা জনান-না বলেননি।

তাছাড়া সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয় আপনি যে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন সে কি বাঙ্গালী না অবাঙ্গালী ছিলেন। তার উত্তর তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া নির্বাচনী এরিয়ার কথাও তিনি বলতে পারেননি।

সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, তিনি দেখেছেন ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটনার সময় আব্দুল কাদের মোল্লা রাইফেল হাতে দাড়িয়ে ছিল এবং নিজে গুলি করেছে।
জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয় একথা আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন কি-না। সে জবাব দেয়-বলেছি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় জানান  আব্দুল কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখার কথা সাক্ষী তাকে  বলেননি।
সাক্ষী বলেছেন তিনি ফজরের আজানের সময় ঝোপের মধ্যে চার ফিট একটি গর্তের মধ্যে থেকে এ ঘটনা দেখেছেন।
সাক্ষী আরো বলেছেন তিনি দেখেছেন আব্দুল কাদের মোল্লা আর্মির সাথে উর্দুতে কথা বলেছেন। কিন্ত দূরে থাকায় তিনি তা শুনতে পাননি।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী শিশির মো : মনির সাংবাদিকদের জানান, আমরা আগামীকাল বুধবার আদালতে স্কেচ ম্যাপ দিয়ে দেখাব ঝোপের মধ্যে চারফিট গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে হত্যাকান্ডের  স্থান এবং ঘটনা দেখা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে আজ যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, শিশির মো : মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।



সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী খোদেজা বেগমের জেরা


হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী খোদেজা বেগম জেরায় প্রশ্নের জবাবে যে উত্তর দেন তা নিম্নরূপ। গত ২৭ মে তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনাল-১ এ।

২৮/০৫/২০১৩
পুনরায় জেরা শুরু ঃ
০৩-০৫-২০০৯ তারিখে আসামী মোবারক ও জমশেদ মিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে, আমার পিতার হত্যার ব্যাপারে মামলা দায়ের করি। আমার দাখিলী নালিশী দরখাস্ত ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত হইতে তদন্তের জন্য থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আমার মামলার উকিল ছিলেন জনাব সৈয়দ তানভীর হোসেন। আমি অন্য কোন উকিল নিয়োগ করি নাই। আমার দাখিলী নালিশী দরখাস্তে সাক্ষী হিসাবে আমার ভাই, চাচাদের নাম আমি দিয়েছিলাম, অন্যদের নাম আমি দিই নাই। আমার ভাইয়ের নাম রফিকুল ইসলাম এবং চাচার নাম আব্দুল আহাদ। আব্দুর রউফ ও মেম্বার ঐ মামলায় সাক্ষী ছিলেন। আমি যে জমশেদ মিয়ার নামে কেইস করেছিলাম অদ্য তাকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় দেখছি না। জমসেদ মিয়া এখনও জীবিত আছে। আমার দাখিলী নালিশী দরখাস্তে আমার বাপের বাড়ি টেংরাপাড়া একথা উল্লেখ করি কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। উল্লেখিত নালিশী দরখাস্তে ১৯৭১ সালে আমার স্মরণ নাই। (চলবে)

২৮/০৫/২০১৩ ইং ২.০০ মিঃ পুনরায় জেরা শুরু ঃ
আমার পিতা আব্দুল খালেক সাহেব মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তার আগে তিনি আনছার ছিলেন। আমার পিতা সেনাবাহিনীতে ছিলনা। আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছিলেন তাহা আমার জানা নাই, কারণ আমি আমার পিতার সংগে যুদ্ধ করতে যাই নাই, আমি শুনেছি আখাউড়া, রানীদিয়া, সরাইল বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। আমার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তৎমর্মে কাগজপত্র আমার নিকট আছে। সেই কাগজপত্র আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রদান করিনাই, তবে গেজেট নম্বর দিয়েছি। আমি লেখাপড়া জানি না বিধায় ঐ গেজেটের মাস, তারিখ বলতে পারব না। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার আবুল কালাম চৌধুরী আমার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকার কমান্ডার আবুল কালাম চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বয়স ১৪/১৫ বৎসর ছিল তৎমর্মে কোন কাগজপত্র আমার নিকট নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বয়স ৫/৬ বৎসর ছিল, ইহা সত্য নহে। আমাদের গ্রামের রাস্তার কোন নাম নাই। যে স্থান থেকে আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে বাকাইল ঘাটের দূরত্ব আনুমানিক দুই কিলোমিটার হবে। আমার প্রথম স্বামীর নাম ইসমাইল, গ্রাম- মজলিসপুর এবং দ্বিতীয় স্বামীর নাম হাসিম, গ্রাম-শিমরাইলকান্দি। ইসমাইল আমাকে তালাক দিয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না, কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমার স্বামী হাসিম মারা গেছেন। ইসমাইল বর্তমানে জীবিত আছে কিনা তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে বাকাইল ঘাট থেকে আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিকের রাস্তার যেতে কাঁচা রাস্তা ছিল, রিক্সা, ভ্যান চলাচল করতো। আমার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে অনেক লোকজন জমায়েত হয়েছিল। যারা জমায়েত হয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ বর্তমানে জীবিত নাই। ঘটনার দিন দৌড়িয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ পৌছি। ঐ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের টেংরাপাড়ার মেম্বার ছিলেন ফুল মিয়া। টেংরাপাড়া গ্রামে ১৯৭১ সালে কতগুলি ঘরবাড়ি ও কতজন লোক ছিল তাহা আমি বলতে পারবনা, কারণ আমি গুনে দেখি নাই। আন্দাজে কেমনে বলব কতগুলি ঘরবাড়ি ছিল। মোবারক হোসেন রাজাকার কমান্ডার থাকা সংক্রান্তে কোন কাগজ আমার নিকট নাই, থাকার কথা নহে। আসামী মোবারক হোসেনের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কতদূর তাহা আমি বলতে পারব না। আমার বাড়ি থেকে মোবারক আলীর বাড়ি ৫৫ কিঃ মিঃ দূরে কিনা তাহা আমি আন্দাজ করে বলতে পারবনা। আমাদের পাড়ায় আমার পিতা ছাড়া তারা হলেন শমসের আলী, সিদ্দিক মিয়া, আব্দুল হেকিম, আহাদ মিয়া প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার চাচা আহাদ মিয়া আমার পিতার সংগে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন মর্মে শুনেছি। রাজাকাররা আসার সংবাদ কেউ দেই নাই। ‘‘ রাস্তায় উঠলেই রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  হাত বেঁধে মারপিঠ শুরু করে। তখন আমরা চিল্লা চিল্লি ও কান্নাকাটি করতে করতে তাদের পিছনে পিছনে যাই” এই কথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। জিল্লুর রহমান নামে দুইজনকে আমি চিনি, তবে তাদের পিতার নাম আমি জানিনা। আমার নানীর বাড়ি বুধল, দাদীর বাপের বাড়ি বেলতলা। মুক্তিযুদ্ধের আগে আসামী মোবারক হোসেনের সংগে আমাদের কোন জায়গা জমি নিয়ে কোন গোলমাল ছিল না এবং তখন তাকে আমরা চিনতামওনা। আমার মা বা দাদীর নয়াদিল গ্রামে কোন ব্যবসা বাণিজ্য ছিলনা। আব্দুর রউফ ভূঁইয়া, পিতা-মৃত আবুল কাহার ভূঁইয়াকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই/আড়াই বৎসর পরে চিনেছি, সে একজন রাজাকার ছিল। রাজাকার বাহিনী কখন গঠিত হয়েছিল তাহা আমি জানি না। আমার কোন জায়গাজমি নাই। স্বামীর দুই শতক জায়গা আছে সেখানে ঘর তুলে থাকি। আমি কোন ভাড়া ঘরে থাকিনা। ঘটনার দিন বাংলা কত তারিখ ছিল। ঐ সময় বাংলা কত সাল ছিল তাহা বলতে পারবনা। ঘটনাস্থলের উত্তর দিকে ঐ সময় স্কুল ছিল এবং অনেক দূরে ঘর বাড়ি ছিল ঘটনাস্থলের পূর্ব দিকে একটি পুকুর ছিল তার পূর্বে ঘর বাড়ি ছিল। ঐসময় পশ্চিম দিকে একটি বাড়ি ছিল। ঘটনাস্থল রাস্তার দুইপার্শে ঘটনার সময় ধানক্ষেতে কোন লোকজন কাজ করছিল না। সকলেই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার স্থান দেখিয়েছি। বাকাইল ঘাটে ১৯৭১ সালে একটি মাত্র চায়ের দোকান ছিল। ঐ ঘাটের পাশে একটি বাজার আছে। দক্ষিণ দিকে একটি হাই স্কুল আছে। উত্তর পূর্ব দিকে একটি  মন্দির আছে কিনা তাহা বলতে পারব না। বাকাইল ঘাটে ১৯৭১ সালে কোন নৌকা বাঁধা থাকতো না, তখন বাজার হওয়াতে নৌকা বাঁধা থাকে। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে বাকাইল ঘাটে বাজার ছিল এবং সেখানে সবসময় অনেকগুলি নৌকা বাঁধা থাকতো। ১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে অনেক রাজাকারের শাস্তি হয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না। সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ আমি ঘটনার দিন ১৫/২০ জন রাজাকার দেখেছিলাম। ঐ সময় ঐ ক্যাম্পে পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছিলাম। ঘটনার দিন আমি, আমার মা, দাদী সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্প যাওয়ার কথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। ‘‘খালেক মাওলানাকে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন আজকে রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে গিয়ে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন। পরদিন সকালে খালেক মাওলানার নিকট যাওয়ার পূর্বে লোকজন বলাবলি করছে যে, তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে আমার বাবাকে গুলি করে করে হত্যা করে সেখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। তখন আমরা কান্নাকাটি করে বাকাইল ঘাটে গিয়ে দেখি আমার পিতার হাত, পা বাঁধা, কপালের ডান পাশে গুলি, মাথার খুলি উড়ে গেছে, বুকের ডান পাশে গুলির চিহ্ন এবং নাভির নীচে ও উপরে দুটি কাটা চিহ্ন অবস্থায় লাশ পড়ে আছে। তারপর আমার মা খালেক মাওলানার নিকট যায়। খালেক মাওলানা উল্লেখিত ক্যাম্প থেকে একটি সিøপ এনে আমাদের নিকট দিলে আমরা আমাদের পিতার লাশ নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি” একথাগুলি অসত্য, ইহা সত্য নহে। আমার পিতার বাড়িতে আমার ভাই ও মা থাকেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার মাকে ঘটনার বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, মা কি বলেছে তাহা আমি জানি না। মোবারক আলীকে মিথ্যা মামলার জড়ানো হয়েছে বিধায় আমি সাক্ষ্য দিবনা একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমার মা বলেছে, ইহা সত্য নহে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নালিশী দরখাস্ত দাখিল করার আগ পর্যন্ত আমার পিতার হত্যা সংক্রান্ত আমি কোন মামলা ইতিপূর্বে করি নাই। গ্রামের যে রাস্তা থেকে আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে লোকজন চলাচল করে। আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশের বাড়ির মালিকের নাম শহীদ মিয়া। শহীদ মিয়ার মাতা জীবিত নাই। আমার পিতার আনছার বিভাগে চাকুরীর শেস কর্মস্থল ছিল উলছাপাড়া, সেখান থেকে পালিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। পিতা বাড়িতে আসার পর কোন জায়গা থেকে এসেছিলেন তাহা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিন্তু তিনি বলেন নাই। আমার বাবার বাড়ি টেংরাপাড়া একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি আব্দুল হামিদ, পিতা মৃত আবুল কাহার ভূঁইয়াকে চিনি না। ‘‘ পালানোর সময় রাস্তায় উঠলেই রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  হাত বেঁধে মারপিঠ শুরু করে” বা ‘‘তখন ক্যাম্পের একজন রাজাকার যার নাম আব্দুর রউফ আমার মা ও দাদীকে বলে যে ঐ খাবার আমার নিকট দিয়ে যান আমি খাইয়ে দিব। আব্দুর রউফ রাজাকার মা ও দাদীকে বলেছে উল্লেখিত ক্যাম্পের কমান্ডার আখাউরা থানার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেন, যাকে ধরলে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নেয়া যাবে। তখন আমার মা ও দাদী বািড়তে ফিরে আমাদের আমাদের ঐ কথা জানায়। তখন আমার মা আমাদের বাড়ির পাশের খালেক মাওলানাকে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন আজকে রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে গিয়ে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন” বা ‘‘যে সকল রাজাকাররা আমার পিতাকে ধরে  নিয়ে গিয়েছিল তাদের কারো নাম ঐসময় জানতাম না, দেখলে চিনবো। আমি শুনেছি আমার বাবাকে ধরে  নেওয়ার সময় রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেন ও তার  সহযোগী রাজাকার জামশেদ ছিল” বা ‘‘তখন তার বয়স কম ছিল, দাড়ি ছিলনা” এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মিদের ভয়ে আসামী মোবারক আলী দাড়ি রেখেছিল, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে আসামী মোবারক হোসেন রাজাকার কমান্ডার ছিল না, ইহা সত্য নহে। আমি যখন আসামী মোবারক হোসেনকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সনাক্ত করি তখন কাঠগড়ায় একজন ব্যক্তিই উপস্থিত ছিলেন। আমি একটি কুচক্রী মহলের ইন্দনে এবং অর্থের লোভে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করলাম, ইহা সত্য নহে। আমার কথিত সময়ে, কথিত স্থান থেকে আমার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং তাকে হত্যা করার কথা অসত্য, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)

কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী তালেব হত্যা বিষয়ে ফরমাল চার্জ, সাক্ষী এবং তদন্ত কর্মকর্তার পরষ্পর বিরোধী তথ্য


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ সোমবারও তিন নং অভিযোগ সাংবাদিক আইনজীবী  খন্দকার আবু তালেব হত্যার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

যুক্তি উপস্থাপনের সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  খন্দকার আবু তালেব হত্যা ঘটনা বিষয়ে সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তা এবং ফরমাল চার্জ থেকে  পরষ্পর বিরোধী বিষয়গুলো  তুলে ধরেন।  তিনি আদালতকে দেখান যে, তালেব  হত্যার ঘটনার বিবরনে ফরমাল চার্জ এবং সাক্ষীদের দেয়া সাক্ষ্যে পরষ্পর বিরোধী তথ্য রয়েছে। যেমন ফরমাল চার্জে ঘটনা বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে মিরপর ১০ নং বাস স্ট্যান্ড থেকে  আবু তালেবকে কাদের মোল্লা অন্যান্য আলবদর, রাজাকার এবং বিহারী দৃস্কৃতকারীরা ধরে  দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানায় নিয়ে হত্যা করে। অপর দিকে এ ঘটনা বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষের যে দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা বলেছেন খন্দকার আবু তালেব বাসায় ফেরার পথে ইত্তেফাকের  প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা বিহারী আব্দুল হালিম তাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়। আব্দুল হালিম মিরপুরে  বাসায় পৌছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে  খন্দকার আবু তালিবকে তোলে এবং তাকে কাদের মোল্লা/বিহারীদের হাতে তুলে দেয়।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে  কারাদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল-২  তার মধ্যে একটি হল খন্দকার  আবু তালেব হত্যার অভিযোগ।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের  আপিল বেঞ্চ শুনানী  গ্রহণ করেন আজ।

তালেব হত্যা বিষয়ে সাক্ষী, তদন্দ কর্মকতা এবং ফরমাল চার্জের গরমিল তুলে ধরে আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যে যুক্তি তুলে ধরেন তা নিম্নরূপ।

৩ নং অভিযোগ : আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জের তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার ঘটনা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে -১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে  আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নেতা  আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার  এবং দৃষ্কৃতকার এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে ফেলে।  তারা খন্দকার আবু তালেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।

ফরমাল চার্জ থেকে পড়ে শোনানোর পরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবু তালেবের ছেলে  ৫ নং সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসানের সাক্ষ্য পড়ে শোনান।

সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান  ট্রাইব্যুনালে বলেছেন- ২৫ মার্চ ইত্তেফাক অফিস গুড়িয়ে দেয়ার  খবর শুনে তার পিতা খন্দকার আবু তালেব সেখানে যান তার সহকর্মীদের অবস্থা জানতে। তিনি সেখানে কিছু মৃতদেহ দেখতে পান। ২৯ মার্চ তিনি তাদের মিরপুর বাসায় আসছিলেন তার গাড়ি এবং টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিরপুর যাবার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা  অবাঙ্গালী আব্দুল হালিমের সাথে দেখা হয় তার। আব্দুল হালিম  তাকে পৌছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে ওঠান এবং আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে যান। এরপর মিরপুর ১০ জল্লাদ খানায় তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে।  এসময় আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে আক্তার গুন্ডা এবং আরো অবাঙ্গালী দুস্কৃতকারীরা ছিল।

সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান জেরায় জানান, তিনি তার পিতার একসময়কার  সহকর্মী  অ্যাডভোকেট খলিল  এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুুল হালিম  তার পিতাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা এবং তার সহযোগীদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেরায় তিনি আরো বলেন, তাদের অবঙ্গালী  ড্রাইভার নিজাম তাকে বলেছেন যে,  আব্দুল হালিম তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা এবং তার সঙ্গীদের হাতে তুলে দিয়েছে।


এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক সাক্ষী হলেন আব্দুল কাইউম। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি মিরপুরের বাসিন্দা এবং  খন্দকার আবু তালেবের বন্ধু ছিলেন। তিনি বলেছেন-  ফারুক খানের (তার কলিগ) কাছে তিনি শুনেছেন যে, স্থানীয় আক্তার গুন্ডা, বিহারী এবং কাদের মোল্লা তালেব সাহেবকে হত্যা করেছে মিপুর ১০ জল্লাদ  খানায়। এছাড়া  তালেব সাহেবের  ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকেও তিনি  শুনেছেন যে, খন্দকার আবু তালেব মিরপুরে তার বাসায় আসার পথে ইত্তেফাকের অবাঙ্গালী হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা   আব্দুল হালিম তাকে  বিহারীদের হাতে তুলে দেয় যারা তাকে মিরপুর ১০ জল্লাদখানায় হত্যা করে।

খন্দকার  আবু  তালেবকে  ধরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষেরই  এ বিপরীতধর্মী তথ্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,    খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান এবং  অপর সাক্ষী আব্দুল কাইউম দুজনেই বলেছেন, ইত্তেফাকের বিহারী হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল হালিম  আবু তালিবকে বাসায় পৌছে দেয়ার নাম করে  তার নিজের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় এবং বিহারীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। তিনি বলেন,   তিন পক্ষের পরষ্পর বিরোধী তথ্যের কোনটা আপনারা বিশ্বাস করবেন? তাছাড়া দুজন সাক্ষীই শোনা কথা বর্ননা করেছেন। অপর দিকে জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন আক্তার গুন্ডাম হাক্কা গুন্ডা এবং কাদের মোল্লা আবুল তালেবকে হত্যা করেছে একথা -১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম  তার কাছে বলেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, তাছাড়া জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের  দুই ভাইবোন যথা খন্দকার আবুল আহসান এবং সখিনা বেগম তাদের পিতা আবু তালেব হত্যা বিষয়ে যে জবানবন্দী দিয়েছেন সেখানেও তারা কেউই আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উচ্চারন করেননি।  জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষও  এ ঘটনা বিষয়ে উল্লেখ করেছে অবাঙ্গালী বিহারীরা আবু তালেবকে হত্যা করেছে।
কাজেই আবু তালেব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লা কোন অবস্থাতেই জড়িত নন।

আজ যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।



রবিবার, ২ জুন, ২০১৩

আপিল শুনানী// জল্লাদখানায় রক্ষিত ডকুমেন্টে পিতা হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি সাক্ষী

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ রোববার শহীদ খন্দকার আবু তালেব  হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে  কারাদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল-২  তার মধ্যে একটি হল খন্দকার  আবু তালেব হত্যার অভিযোগ।

এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি উপস্থাপন করে   সর্বোচ্চ আদালতে বলেছেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল  আহসান ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন তিনি শুনেছেন তার পিতাকে  আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে।  কিন্তু তিনি মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতার  হত্যার যে বিবরন  দিয়েছেন এর আগে সেখানে তিনি তার পিতার হত্যার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। তার  বোন সখিনাও  মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর  কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতা হত্যার ঘটনার বিবরন দিয়েছেন। তিনিও সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষও তাদের প্রতিবেদনে খন্দকার আবু তালে হত্যা বিষয়ে অবাঙ্গালী বিহারীদের নাম উল্লেখ করেছে।
এছাড়া  দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের বিপরীতধর্মী বক্তব্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খন্দকার আবুল আহসান বলেছেন ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকে তিনি  শুনেছেন  আবু  তালেবকে আব্দুল কাদের মোল্লার হাতে তুলে দিয়েছেন বিহারীরা। অপর দিকে ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন  আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন আজ।

৩ নং অভিযোগ : তিন নং অভিযোগ খন্দকার  আবু তালেব হত্যা বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে -১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে  আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নেতা  আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার  এবং দৃষ্কৃতকার এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে ফেলে।  তারা খন্দকার আবু তালেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়। একজন বেসামরিক ব্যক্তির হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সহাতার কারনে তার বিরুদ্ধে আইনে বর্নিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে । 

সাক্ষী :  রায়ে বলা হয় এ অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ দুই জন সাক্ষী হাজির করেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান (৫ নং সাক্ষী) এবং অপর আরেকজন সাক্ষী হলেন  খন্দকার আবু তালেবের বন্ধু সৈয়দ আব্দুল কাইউম (১০ নং সাক্ষী)।  তারা তখন মিরপুরে থাকতেন। তাদের দুজনেই এ হত্যাকান্ডের কথা শুনেছেন, দেখেননি।

ব্যারিস্টাার আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষী সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান  ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা পড়ে শোনান শুনানীর সময়।  খন্দকার  আবুল আহাসন ট্রাইব্যুনালে  বলেছেন, ২৫ মার্চ ইত্তেফাক অফিস গুড়িয়ে দেয়ার  খবর শুনে তার পিতা খন্দকার আবু তালেব সেখানে যান তার সহকর্মীদের অবস্থা জানতে। তিনি সেখানে কিছু মৃতদেহ দেখতে পান। ২৯ মার্চ তিনি তাদের মিরপুর বাসায় আসছিলেন তার গাড়ি এবং টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিরপুর যাবার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা  অবাঙ্গালী আব্দুল হালিমের সাথে দেখা হয় তার। আব্দুল হালিম  তাকে পৌছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে ওঠান এবং আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে যান। এরপর মিরপুর ১০ জল্লাদ খানায় তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে।  এসময় আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে আক্তার গুন্ডা এবং আরো অবাঙ্গালী দুস্কৃতকারীরা ছিল।

সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান জেরায় জানান, তিনি অ্যাডভোকেট খলিল  এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুুল হালিম  তার পিতাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা এবং তার সহযোগীদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেরায় তিনি আরো বলেন, তাদের অবঙ্গালী  ড্রাইভার নিজাম তাকে বলেছেন যে,  আব্দুল হালিম তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা এবং তার সঙ্গীদের হাতে তুলে দিয়েছে।


খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের ডকুমেন্ট :  শহীদ খন্দকার আবু তালেব, পল্লব হত্যাকান্ড  এবং হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে  শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে জল্লাদখানা যাদুঘরে।  মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লা খানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

সেখানে শহীদ  সাংবাদিক    খন্দকার আবু তালেব  সম্পর্কে তার ছেলে খন্দকার  আবুল আহসানের  বক্তব্য রেকর্ড করা আছে যিনি ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত  ডকুমেন্ট এ ড দেখা যায় খন্দকার আবুল আহসান তার পিতার হত্যার ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নামই উল্লেখ করেননি।
এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর  কর্তৃপক্ষের কাছে খন্দকার আবুল আহসান  কর্তৃক  আবু তালেব হত্যা  ঘটনার যে বিবরন উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ। 

‘আজ দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করার সমস্ত পথ পাকিস্তানি হায়েনারা বন্ধ করে দিয়ে করেছে এতিম, মাকে করেছেন উন্মাদিনী, পাগল ও বিধবা। একজনের অনুপস্থিতি একটা পরিবারের সহায়-সম্বলহীন করে দেয় তার জ্বলন্ত সাক্ষী এই শহীদ খন্দকার আবু তালেবের পরিবার।

আমার বাবা ছিলেন কর্মমুখী, দায়িত্বশীল, পরোপকারী এবং স্বাধীনচেতা একজন মানুষ জ্ঞানচর্চা, তার পছন্দের বিষয় ছিল। আমাদের ভাই-বোনের সাথে তাঁর আচরণ ছিল বন্ধুসুলব। আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু বাবাকে হারানোর পর আমাদের সে রকম সুযোগ হয়নি ভালভাবে পড়ালেখা। আমাদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। যুদ্ধের সময় দেশে মা ও ভাই-বোনকে টাকা পাঠাতাম ঢাকায় চা বিক্রি করে। আমাদের পরনে কাপড় পর্যন্ত ছিল না। আর্থিক দৈন্যের কারণে গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে লেখা করতে হয়েছে। বড় ভাইও অনেক কষ্ট করেছেন। স্বাধীনতার পর পরই তিনি প্রথমে গণকণ্ঠ এবং  ৭৪ সালে দৈনিক অবজারভারে চাকরি করে সংসারের ভরণ-পোষণ করেছেন। কষ্ট করতে করতে উন্মাদিনী মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আর্থিক দৈন্য না কাটলেও আমরা বেঁচে আছি।
কারো কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নেই। সকল শহীদ পরিবারের মতো শহীদদের স্বপ্ন--- দেশই আমাদের একান্ত কাম্য।’

জল্লাদখানা যাদুগরের এ ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে এবং আপিল আদালতেও জমা দিয়েছেন।




বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

বিচরপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর বিতর্কের কারনে কোর্ট মুলতবি করলেন প্রধান বিচারপতি

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার কবি  মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে এবং তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানী শুরু হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল  হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি পেশ করে বলেন, কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন সাক্ষী হাজির করেছে। তিনজন সাক্ষী তিনরকম সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২ নং সাক্ষী শহীদুল হক মামলা বলেছেন, তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনা। ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন অবাঙ্গালীরা কবি মেহেরুনকে হত্যা করেছে। অপর দিকে ৪ নং সাক্ষী কাজী রোজী ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিলেও তার নিজের লেখা বইয়ের  তথ্যের সাথে ট্রাইব্যনালে প্রদত্ত বক্তব্যের গরমিল রয়েছে। তাহলে কার কোন বক্তব্য আপনারা গ্রহণ করবেন? কাউকে কোন অভিযোগে সাজা দিতে হলে সকলের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে তাদের এভিডেন্স বিষয়ে একটাই উপসংহারে  পৌছতে হবে। কিন্তু এখানে সবার সাক্ষ্য বিবেচনা করে একটা উপসংহারে পৌছানো সম্ভব নয়। তাই এ অভিযোগে তাকে সাজা দেয়ারও উপায় নেই।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী বিতর্কের কারনে  কোর্ট মুলতবি করতে বাধ্য হলেন প্রধান বিচারপতি :

গত মঙ্গলবার ২৮  মে শুনানীর সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন কবি মেহেরুন হত্যা বিষয়ে সাক্ষী কাজী রোজী তার জবানবন্দীর এক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন এবং আরেক স্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন। এভাবে তিনি বিপরীতধর্মী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আজো শুনানীর সময়  আবারো এ বিষয়ের অবতারনা হলে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, আপনি বলেছেন সাক্ষী  একস্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন আরেক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন। সাক্ষী ঘটনা দেখার কথা কোথায় বলেছেন তা দেখান।
ডিড শি সে শি স’ ইট?  শো ইট ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তখন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনাতে শুরু করেন। সাক্ষী কাজী রোজী বলেছেন “২৭ মার্চ  বিকালে খবর পেলাম যে, মেহেরুন্নেসা ও তার দুই  ভাই ও মাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী যারা ছিলেন তাদের অনেকে মাথায় সাদা অথবা লাল পট্টি বেঁধে সকাল ১১টা মেহেরের বাসায় ঢুকে যায় বলে শুনেছি।”
আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন “কাদের মোল্লার নেতৃত্বে সেদিন ওরা মেহেরুনের বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ওই বাসায় ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারবনা। ”
সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে রেফারেন্স পেশ শেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে তিনি ঘটনা এমনভাবে বর্ননা করছেন মনে হয় যেন তিনি নিজে ঘটনা দেখেছেন।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, এখানে তিনি দেখেছেন তা কোথায় আছে? তিনি দেখেছেন একথা কি বলেছেন সাক্ষী?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হ্যা বলেছেন। এটা আমার সাবমিশন। আপনি এর সাথে একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন সেটা আপনার এখতিয়ার। কিন্তু আমাকে আমার সাবমিশন রাখতে দেন। আমি একজন কাউন্সেল।
এসময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরীকে থামার ইশারা দিয়ে ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্লিজ প্রসিড। প্লিজ  প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
বিচারপতি  এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে লক্ষ্য করে বলেন, প্লিজ ডোন্ট মিস লিড দি কোর্ট।  কোর্টকে মিস লিড করবেননা।  দিস ইজ দি হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি নেশন। কোর্টকে মিস লিড করবেননা।
তিনি আবারো জানতে চান সাক্ষী দেখার কথা বলেছেন তা কোথায় আছে দেখান। এসময় আবারো প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরীর দিকে  তাকিয়ে   তাকে থামার অনুরোধ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ, প্লিজ । এটা ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের সাবমিশন। এরপর তিনি  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে  সামনে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে আবারো বলেন, মিস্টার রাজ্জাক প্লিজ প্রসিড।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিচারপতি শামুসুদ্দীন চৌধুরীর  প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, সিঙ্গেল জাস্টিসকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখবেননা। কোর্টকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখুন প্লিজ। প্লিজ প্রসিড, প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো শিখেছি কোর্টের কোন একজন জাজ কোন প্রশ্ন করলে সেটা কোর্টেরই কোশ্চেন ধরে নেয়া হয়। সেজন্য আমি তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী আবারো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উত্তেরের বিরোধীতা করে মন্তব্য  মন্তব্য করা অব্যাহত রাখলে  এবং তার প্রশ্নের জবাব চাওয়ায় প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ ।  কিন্তু তখনো  তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের  সাবমিশনের বিরোধীতা করে তার মত প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি  কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করেন।
তখন ঘড়ির কাটায় ১০টা ৫৫ বাঁজে। সাধারনত সকাল ১১টায় কোর্ট মুলতবি হয় এবং ১২টায় আবার বসে। আজ  বিতর্কের এ পর্যায়ে ১০টা ৫৫ মিনিটের সময় কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২টা আবার বসবে কোর্ট। যথারীতি ১২টায় আবার কোর্ট বসে।

বিতর্কের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একবার দাড়িয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন হাত নেড়ে।

বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর অবসর গ্রহণ : আপিল বিভাগের বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর চাকরির  বয়স পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে গেছেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ  তাকে বিদায় জানান। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এজে মো : আলী তাকে বিদায় সম্ভাষন জানান।  বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চের সদস্য। তার অবসরর গ্রহনের ফলে এ বেঞ্চের সদস্য সংখ্যা দাড়াল এখন পাঁচ।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। অন্যাান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন খান, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।




মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালে অঝোর ধারায় কাঁদলেন আলী আহসান মো : মুজাহিদ


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ  আজ অঝোর ধারায় কাঁদলেন ট্রাইব্যুনালে। 

আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী  ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মো :  মুজাহিদ ছাত্রজীবনে প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরে পিতার অনুরোধে ছাত্রসংঘে যোগ দেন। আর মুজাহিদ এই দরিদ্রতম দেশের একজন মন্ত্রী হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। জীবনের সকল েেত্রই তিনি মেধার স্বার রেখেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি তার সেই মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। দরিদ্র এই দেশে যেখানে রাষ্ট্র মতায় গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেখানে আজকের কাঠগড়াতে দাঁড়ানো এই মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিরোধী প থেকেও সামান্যতম অনিয়মন কিংবা দুর্নীতির কোন অভিযোগ কেউ তুলতে পারেননি।
তিনি বলেন,  একজন সাক্ষী বলেছেন তিনি  তাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে  জীপে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরকম ঘটনা হলে আরো অনেকের তা দেখার এবং জানার কথা। কিন্তু কই অন্য কেউতো এ ধরনের অভিযোগ করেনি আজ পর্যন্ত।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির আলী আহসান মুজাহিদের মন্ত্রীত্ব পরিচালনাকালে তার সততার পরিচয়  দিয়ে এভাবে যুক্তি উপস্থাপনের সময় কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান আলী আহসান মো : মুজাহিদ ফুপিয়ে কাঁন্না শুরু করেন। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়াতে থাকে। চোখ মুছতে থাকেন তিনি। এসময় কোর্টে উপস্থিত তার  পরিবারের সদস্যরাও ফুপিয়ে কান্না শুরু করেন। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তারাও । এসময় কোর্টে কিছূ সময়ের জন্য আবেগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবিরের পর  যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রপক্ষ ওই রিপোর্টের কপি আদালতে আনেনি।

যুক্তি উপস্থাপনের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ৪২ বছর পর এই বিচার (মানবতাবিরোধী অপরাধের) হচ্ছে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদি প্রমাণ হয় তো হবে। আর না হলে আসামী খালাস পাবে।

যুক্তি উপস্থাপন কলে মুজাহিদের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আরেক সুখরঞ্জন বালী যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আমরা ডিফেন্স সাক্ষী আনিনি। আমাদের সাক্ষীদের কি ধরণের হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে।
এসময় বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আপনার সাক্ষীরা যে চাঁপে তা কোর্টে বলেননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, কিভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের চাঁপ দিয়ে সাক্ষ্য দিতে আনা হয়েছে তা আজ হয় তো প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দুই বা তিন বছর পরে এটা প্রমাণ হবে।
এরপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনি যা বলছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়, মূল্যহীন কথা। মূল্যহীন কথা বলবেন না।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাতটি অভিযোগের কোনটি নূন্যতমভাবে প্রমান করতে পারেনি। 
যুক্তি উপস্থাপন কালে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৪ মাসে ২৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট তদন্ত করেছেন। তিনি ’৭১ সালে যারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কাছে যাননি। ফরিদপুরের তারাপদ এর পরিবারের ১৮ জন সদস্য মারা গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছে যাননি। আজকের আসামী হিরো হলে জিপ গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে মানুষ তা দেখতে পেত। কিন্তু কেউ তা বলছে না। আমি বলব ঘটনা যেখানে ঘটেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আসামী ঘটনার সময় ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ’৭১ সালে ছাত্রসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার ও শান্তি বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমন কোন তথ্য বা ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়নি। ’৭১ সালের কোন ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এই মামলায় কয়েকজন সাী  ঘরে ফিরে কমন সাক্ষী। শাহরিয়ার কবীর ও জহির উদ্দিন জালাল এই ট্রাইব্যুনালে  আরো আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 
এই মামলায় অনেক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। কারণ তারা এই আদালতে সাক্ষ্য দিতে চায়নি এজন্য তাদের সাী করা হয়নি। মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলায় সাক্ষী মুজাহিদের মামলারও সাক্ষী। কিন্তু তিনি মুজাহিদের মামলায় সাক্ষ্য দেননি। এসব সাক্ষীদের কেন আদালতে আনা হয়নি সে ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।


কাজী রোজী তার নিজের বইয়েই আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি/// পল্লব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের রেকর্ড পড়ে শোনানো হল আপিল শুনানীতে


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক প্রদত্ত সাজা খারিজ চেয়ে আসামী পক্ষের দায়ের করা আবেদনের ওপর আপিল শুনানী চলছে। আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ কবি মেহেরুন্নেসা  এবং পল্লব হত্যা বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন।  আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে এ  দুটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

কবি মেহেরুন্নেসা বিষয়ে যুক্তি পেশ : কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তিনজন সাক্ষী হাজির করে। তিনজনই এ ঘটনা বিষয়ে শোনা সাক্ষী।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আজ কাজী রোজী নামে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য  বিষয়ে বিভিন্ন স্ববিরোধীতা তুলে ধরে যুক্তি পেশ করেন।

তিনি বলেন সাক্ষী কাজী রোজী ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ নামে একটি বই লিখেছেন। সে বইয়ে তিনি কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি। অথচ তিনি ট্রাইব্যুনালে এসে এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে দায়ী করে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। জেরায় কাজী রোজীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনিতো আপনার নিজের লেখা বইয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম লেখেননি  এ ঘটনা বিষয়ে। তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন ভয়ে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০১০ সালের জুলাই মাসে আর কাজী রোজী  তার বইটি লিখেছেন ২০১১ সালে।  তাহলে এখানে জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় আসামীর নাম উল্লেখ করতে ভয়ের কি  যুক্তি থাকতে পারে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বরং যেটা সত্য তা হল কাজী রোজী তার বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন অবাঙ্গালীরা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী আব্দুল কাইউমও বলেছেন  কাজী রোজীকে নিজ  বাড়িতে সপরিবারে হত্যা  করে অবাঙ্গালীরা।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাজী রোজী কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার মধ্যে অনেক স্ববিরোধীতা রয়েছে এবং তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
তিনি তার সাক্ষ্যে একস্থানে বলেছেন তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন, আরেক স্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন।
তিনি বলেছেন, গুলজার নামে একজন অবাঙ্গালীর কাছে কবি মেহের হত্যার কথা শুনেছেন। আবার আরেক জায়গায় বলেছেন তিনি কাদের কাছ থেকে শুনেছেন তাদের নাম বলতে পারবেননা।
এসময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী  বলেন,  সাক্ষী নাম বলতে পারবোনা বলে যে কথা বলেছেন সেটা অন্য বিষয় সম্পর্কে বলেছেন তিনি। ২৭ মার্চের পরের ঘটনা সম্পর্কে কার কাছ থেকে শুনেছেন তাদের নাম বলতে পারবেননা বলে বলেছেন। তিনি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে ২৭ মার্চের আগেই শুনেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপনি ভিন্নমত পোষন করতেই পারেন। কিন্তু কাজী রোজী তার সাক্ষ্যে  বলেছেন, কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তারা কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ঘরে ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারবনা।
তিনি এমনভাবে এ ঘটনা বলছেন যেন মনে হয় তিনি সেখানে ছিলেন ঘটনার সময়।
তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন তাদের মাথায় সাদা পট্টি বাঁধা ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন সাক্ষী তাকে একথা বলেননি। আবার তিনি বলেছেন, কোরআন শরীফ বুকে চেপে বাঁচতে চেয়েছিল মেহের। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন একথাও তাকে বলেনি সাক্ষী।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী কাজী রোজী ২৪ মার্চ  ভারতে যান। স্বাধীনতার পর ফিরে আসেন। তিনি কার কাছ থেকে কিভাবে ঘটনা শুনলেন? একবার বলেছেন গুলজার নামে একজন  অবাঙ্গালীল কাছ থেকে শুনেছেন। তার কথায় অনেক বৈপরীত্য রয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে তিনি যে অভিযোগহ করেছেন তা সত্য হলে তিনি তার নিজের বইতে  আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করতেন।



পল্লব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের ডকুমেন্ট পড়ে শোনানো হল :
মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা বিষয়ে গতকাল সোমবার  যুক্তি উপস্থাপনের  সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামী পক্ষের চতুর্থ সাক্ষী সাহেরা বেগমের সাক্ষ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সাহেরা বেগম  হলেন পল্লবের ভাবী।   সে ছিল রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। পরে সে পক্ষ ত্যাগ করে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এ কারনে তার সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে আজ যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন,  ঠিক আছে, পল্লবের ভাবী পক্ষ ত্যাগ করে আসামী পক্ষে এসেছেন  কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি তার দেবর সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা নিয়েতো আর প্রশ্ন নেই। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে সাহেরা বেগম পল্লব হত্যা বিষয়ে যে  বিবরন দেন তা তিনি  আজ আদালতের সামনে পড়ে শোনান। সেখানে তিনি পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি বলে  উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

পল্লব হত্যাকান্ড,   শহীদ খন্দকার আবু তালেব, এবং হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে  শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে জল্লাদখানা যাদুঘরে।  মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদ খানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

পল্লব হত্যাকান্ড বিষয়ে   যাদুঘর কর্তৃপক্ষ পল্লবের  ভাবী সায়রা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন ০৬/০৬/২০০৮ তারিখ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর  কর্তৃপক্ষের কাছে  পল্লব হত্যা বিষয়ে   তার ভাবী সাহেরা বেগম যা বলেছিলেন তা নিম্নরূপ :
 ‘ ভোটাভুটি হয়ে যাওয়ার পর ধরাধরি শুরু হয়। আমি ভোট দিয়েছিলাম। তখন আমার এক ছেলে ফারুকের বয়স পাঁচ মাস। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা মনে আছে। তার পর থেকে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। আশ্রয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আবার ঢাকায় আসি। সাভার থাকার সময় আমার দেবর টুনটুনি মিয়া (পল্লাব) বাসা ছেড়ে চলে যায়। কারণ ও ছিল মুক্তিযোদ্ধা। পরে আবার একদিন সাভারে আমাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু শুধু বলছিল যে, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বসে থাকতে পারি না।’ বিহারিরা তাকে খুঁজছিল তা সে জানতে পারে। ফলে সে ভারতে যাওয়ার জন্য পথে বের হয়। নবাবপুর রোডে বিহারিরা তাকে ধরে ফেলে। কেউ তার হাত কাটে, কেউ তার পা কাটে, এভাবে তাঁকে হত্যা করে বিহারিরা।
বিয়ের জন্য আমরা রসিকতা করলে সে বলতো, ‘আমি রাজনীতি করি, আমার বিয়ে হবে ভাল পরিবেশ।’ শেষ রাতের তারা’ নামে একটা সিনেমায় সে অভিনয় করেছিল। নাটকে অভিনয় করতো। আমাদের বলতো সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবে। টুনটুনি মিয়া তার কলেজে প্যারেড করাতো। সেই গল্প আমাদের শুনাতো বাসায় এসে। পেটে বাচ্চা বেঁধে দৌড়াতে হতো সেই প্যারেডে। আর সে থাকতো খুব ফিটফাট। কবি নজরুলের ভক্ত ছিল টুনটুনি মিয়া। কবির মতো তাঁর গায়ে পেঁচানো থাকতো একখানা চাদর। সে কত ভাল ছিল তা আর কি বলবো! আমার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ঘুরতো সব সময়। বাইরে বাইরে থাকতো প্রায়ই। তবু তাঁর জন্য এতদিন পরেও আমার চোখে জল আসে। ’

সাহেরা বেগম ছাড়াও আব্বাস নামে আরো এক ব্যক্তির  জবানবন্দী যা জল্লাদখানা যাদুঘরের কাছে রক্ষিত আছে তা পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সেখানেও পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলা হয়নি বলে আদালতকে জানান তিনি।
সাহেরা বেগম পল্লব হত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষের হয়ে ট্রাইব্যুনালে যে জবানবন্দী দেন তাও আদালতে আজ পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজাক।
যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। এসসময় আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ ।


সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ haji mobarak hossain pw2


মেহেদী হাসান,২৭/৫/২০১৩

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যুনালে আজ হাজী মোবারক হোসেন এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী খোদেজা বেগমের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।

আমার নাম খোদেজা বেগম, আমার বয়স-৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা-গ্রাম শিমরাইল কান্দি,থানা ও জেলা ব্রাক্ষণবাড়িয়া।
আমার পিতার গ্রামের নাম ছাতিয়ান টেংরাপাড়া। আমি একজন গৃহিনী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১৪/১৫ বৎসর। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব থেকে আমার পিতা আনছার বিভাগে চাকুরী করতো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার দাদা, দাদী এবং মা অসুস্থ থাকার খবর পেয়ে আমার পিতা ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে রাত্রে বাড়িতে আসেন। ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে আমার পিতা আমাদের এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা আসতেছে সেই খবর পেয়ে বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে পালানোর সময় রাস্তায় উঠলেই রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  হাত বেঁধে মারপিঠ শুরু করে। তখন আমরা চিল্লা চিল্লি ও কান্নাকাটি করতে করতে তাদের পিছনে পিছনে যাই। তখন রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে যায় যেখানে রাজাকার ও আর্মির ক্যাম্প ছিল। ঐদিন আসরের পরে আমার আম্মা ও দাদী বাবার জন্য ভাত নিয়ে উল্লেখিত ক্যাম্পে যায়। তখন ক্যাম্পের একজন রাজাকার যার নাম আব্দুর রউফ আমার মা ও দাদীকে বলে যে ঐ খাবার আমার নিকট দিয়ে যান আমি খাইয়ে দিব। আব্দুর রউফ রাজাকার মা ও দাদীকে বলেছে উল্লেখিত ক্যাম্পের কমান্ডার আখাউরা থানার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেন, যাকে ধরলে আমার বাবাকে ঠাড়িয়ে নেয়া যাবে। তখন আমার মা ও দাদী বািড়তে ফিরে আমাদের  ঐকথা জানায়। তখন আমার মা আমাদের বাড়ির পাশের খালেক মাওলানাকে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন আজকে রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে গিয়ে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন। পরদিন সকালে খালেক মাওলানার নিকট যাওয়ার পূর্বে লোকজন বলাবলি করছে যে, তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে আমার বাবাকে গুলি করে করে হত্যা করে সেখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। তখন আমরা কান্নাকাটি করে বাকাইল ঘাটে গিয়ে দেখি আমার পিতার হাত,পা বাঁধা, কপালের ডান পাশে গুলি, মাথার খুলি উড়ে গেছে, বুকের ডান পাশে গুলির চিহ্ন এবং নাভির নীচে ও উপরে দুটি কাটা চিহ্ন অবস্থায় লাশ পড়ে আছে। তারপর আমার মা খালেক মাওলানার নিকট যায়। খালেক মাওলানা উল্লেখিত ক্যাম্প থেকে একটি শ্লিপ এনে আমাদের নিকট দিলে আমরা আমাদের পিতার লাশ নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। যে সকল রাজাকাররা আমার পিতাকে ধরে  নিয়ে গিয়েছিল তাদের কারো নাম ঐসময় জানতামনা, দেখলে চিনবো। আমি শুনেছি আমার বাবাকে ধরে  নেওয়ার সময় রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেন  ও তার  সহযোগী রাজাকার জামশেদ ছিল। ঐসময় আমি তাদেরকে দেখেছিলাম। আমি যে রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেনের কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।  তখন তার বয়স কম ছিল, দাড়ি ছিলনা। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি। আমি আমার পিতার হত্যার বিচার চেয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছিলাম।

জেরা : আজ একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন
রাজাকার জামশেদের নাম আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নয়। (চলবে)



আপিল আবেদন শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// কল্পনার ওপর ভিত্তি করে কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল

মেহেদী হাসান, ২৭/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজার  বিরুদ্ধে দায়ের করা  আপিল আবেদনের ওপর শুনানী চলছে।  তাকে সাজা থেকে খালাস চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানীতে অংশ নিয়ে আজ   আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল অনুমান এবং কল্পনার ওপর ভিত্তি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে। ফ্যাক্টস বা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সাজা দেয়নি।  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমানিত হয়নি এবং তাকে সাজা  দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিরাট বড় ভুল করেছে  বলে তিনি  আপিল শুনানীতে বলেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে  এক নং অভিযোগ তথা পল্লব হত্যার অভিযোগে প্রদত্ত সাজার  বিরুদ্ধে তিনি যুক্তি পেশ করছিলেন। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যার অভিযোগে  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজার বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রায় থেকে দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ে শোনান এবং রায়ের নানা অসঙ্গতি  তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, পল্লব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী ছিল এবং দুজনই শোনা সাক্ষী। এদের একজন হলেন আব্দুল কাইউম । তিনি    ট্রইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লা  পল্লব নামে মিরপুর  বাংলা কলেজের একজন ছাত্রকে হত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন। আবার এ শোনা কথা  তিনি  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে বলেননি; বলেছেন  ট্রাইব্যুনালে এসে। তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি  একথা বলেছিলেন  কি-না।  তিনি বলেছেন  ‘হ্যা বলেছি’।  তদন্ত কর্মকর্তকে জেরার সময়  প্রশ্ন করা হয়েছিল আব্দুল কাইউম আপনাকে এ বিষয়ে বলেছিলেন  কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন ‘না তাকে আব্দুল কাইউম একথা বলেননি’। 
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এরূপ সাক্ষীর  শোনা কথা কি করে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এভাবে সাক্ষীর বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরে তিনি বলেন,  আব্দুল কাইউমের সাক্ষ্য পুরোপুরি বাদ  হলে পল্লব হত্যা বিষয়ে একজন মাত্র সাক্ষী থাকেন এবং তিনি হলেন শহীদুল হক মামা। সাক্ষী  শহীদুল হক মামা বলেছেন- তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত ছিল। 
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের রায়ের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়েই বলা হয়েছে অন্যান্য ডকুমেন্ট দরকার  এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে  সাজা দেয়ার জন্য। কিন্তু আব্দুল কাইউমের সাক্ষ্য  বাদ দিলে তো আর কোন ডকুমেন্ট নাই। শুধুমাত্র শহীদুল হক মামার শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে তাকে সাজা দেয়া যেতে পারে? অন্যান্য ডকুমেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা ষাটের দশকে কি করতেন, সত্তরের দশকে কি করতেন, জামায়াতে ইসলামের সাথে তার সম্পর্ক কি ছিল এসব। ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রশ্ন করেন এসব কি কোন ডকুমেন্ট হতে পারে সাজা দেয়ার  জন্য। তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিরাট ভুল করেছে। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমানিত হয়নি। সম্পূর্ণ কল্পনা এবং অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।

ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পল্লবের আপন ভাবী সাহেরা খাতুন আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে। তিনি সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেছিলেন পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম জীবনেও শোনেননি। জীবনেও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম শোনেননি বলায় তার সাক্ষ্য আমলে নেয়নি ট্রাইব্যুনাল।




মাওলানা নিজামীকে সালাম দিলেন সাক্ষী //সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

মেহেদী হাসান
২৬/৫/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন মোঃ আইনুল হক। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীকে শনাক্ত করার জন্য সাক্ষীকে নিজামীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাক্ষী আইনুল হক ট্রাইব্যুনালে কাঠগড়ায় বসে থাকা নিজামীকে দেখে সালাম দেন। মাওলানা নিজামীও সালাম গ্রহণ করেন। এরপর সাক্ষী ডকে ফিরে এসে বলেন, তিনি আসামীকে চিনতে পেরেছেন। 

জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, ১৯৬৪ সালে আমি এসএসসি পাস করি। গ্রামে আমাকে বিবিসি নামে ডাকে। আমি শিক্ষকতা করি, এখন অবসরে। ১৯৭০-’৭১ সালের পত্রিকায় দেখেছিলাম নিজামী সাহেব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। সাক্ষী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মে মাসের ১০ তারিখে স্কুলের হেড মাস্টারের রুমে ১০-১২জন লেক দেখি। পরে হেডমাস্টারের কাছে জানতে পারি পিস কমিটি গঠনের জন্য তারা এসেছে। হেডমাস্টার বলেন, একজন মতিউর রহমান নিজামী। এরপর সাক্ষী মামা আসগর আলী, চাচা একেএম পরা মানিক খালাতো ভাইসহ প্রায় ৩০০ মানুষকে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক হত্যা করার ঘটনার বর্ণনা দেন। 

জবানবন্দী শেষে জেরায় সাক্ষীকে একটি প্রশ্ন করেন জুনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম। এরপর সোমবার পর্যন্ত জেরা মূলতবি করা হয়। হরতালের কারনে  আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা যাননি ট্রাইব্যুনালে।

সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। জবানবন্দী অসমপ্ত অবস্থায় আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
এছাড়া সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া মৃত ৩ জনসহ নতুন ৮ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, যে সব সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব নয় তাদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের কাছে এ আবেদন করা হয়েছে।
২৮ মে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তার মামলা বাতিল করে দেয়ার ট্রাইব্যুনালের আদেশ (রিকল) পূর্ণ বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা  একটি আবেদন ট্রাইব্যুনালের কাছে দাখিল করেছি যে  বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় মামলা বাতিলের আবেদন সংক্রান্ত বিষয়টি খারিজ করেছেন।
কিন্তু ওই আদেশের সাবেক সদস্য বিচারক একেএম জহির আহমেদ দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। অন্য দুই বিচারপতি ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীর ও  নিজামুল হক নিজে। নিজামুল হক স্বাইপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। সদস্য বিচারক একেএম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেছন। ওই বিচারিক প্যানেলের বর্তমান চেয়ারম্যান শুধুমাত্র রয়েছেন। সেহেতু সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করার পরেও  আমরা তার আদেশ রিকল পূর্ণ বিবেচনার জন্য  আবেদন করেছি। এ বিষয়ে শুনানির ধার্য না করে মামলার কার্যক্রম আগামী ২৮ মে পর্যন্ত মুলতি করেন।


রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল



 মেহেদী হাসান
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে  অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানীর তারিখ ২৭ জুন ধার্য্য করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানীর এ তারিখ ধার্য্য করেন আজ ।

গত ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।
অভিযোগ আমলে নেয়া উপলক্ষে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়  আনা হলেও বিচার কক্ষে নেয়া হয়নি।






হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জেরা

Mehedy Hasan
২১/৫/২০১৩
হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী দারুল ইসলাম জেরার সময় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে যেসব উত্তর দিয়েছেন তা নিম্নরূপ :


মোছাঃ রীনা বেগম দায়েরকৃত আখাউড়া থানার মামলা নং-২৬, তারিখ ২৮/০৫/২০০৭ মামলায় ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া দ্রুত বিচার আাদালতে পি ডব্লিউ-৪ হিসাবে আমি সাক্ষ্য প্রদান করিনাই বা আসামী মোবারক আলীও ঐ মামলায় খালাস পায়নাই। উল্লেখিত মামলায় মোবারক আলী আপিলে দায়রা জজ আদালত হইতে খালাস পান কিনা তাহা আমি জানিনা। আমি পশ্চিম পাকিস্তানে আর্টিলারী সেন্টার ক্যামেলপুরে ছিলাম। ১৯৭০ সালে ছুটিতে আসা পর্যন্ত আমার পোষ্টিং ওখানেই ছিল। আমার সি,ও, একজন পাঠান ছিলেন, তার নাম আমি জানিনা। পাকিস্তান আর্মিতে আমি নন কমিশন অফিসার ছিলাম। আমি কাস টেন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। পাকিস্তান আর্মিতে নন কমিশন ল্যান্স নায়েকরা এককালীন ৩মাসের বেশী ছুটি পায়না, ইহা সত্য নহে। আমি  পাকিস্তান আর্মি রুলস পড়িনাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাকে সুবেদার আব্দুর সাত্তার সাহেব ইনটেলিজেন্সের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আব্দুর সাত্তার সাহেব বর্তমানে জীবিত নেই। সাব সেক্টর-২ এর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন আইনদ্দিন সাহেব যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহন করেছেন। তিনি বর্তমানে জীবিত আছেন। (চলবে)

২২-০৫-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে নিয়ে পুর্ব পাকিস্তানে আসা সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। ইহা সত্য নহে যে, পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত কোন আর্মি সদস্য ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাকে বেতন দেওয়া হতো না। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন উত্তোলন সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে পূর্ব পাকিস্তান আসি নাই বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন তুলি নাই, ইহা সত্য নয়। ইহা সত্য নয় যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি ইনটেলিজেন্স হাবিলদার ছিলাম না। ১৯৭১ সালে গংগাসাগর, আখাউড়া, পাহাড়পূর এবং ফকিরমুরা এলাকা এরিয়া কমান্ডার ছিলেন মেজর সেকান্দার। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে উল্লেখিত এলাকায় ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লা খান ২৩ বেলুচ রেজিমেন্ট, এরিয়া কমান্ডার ছিলেন। উল্লেখিত ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লা খান ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের তালিকায় ২৩ নং ক্রমিকে আছেন কিনা আমি জানি না। উল্লেখিত এলাকা সমূহে ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন মেজর মোঃ আব্দুল্লাহ খান, মেজর সাদেক নেওয়ার ও ক্যাপ্টেন জাবেদ ইকবাল, ইহা সত্য নয়। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়ার মহকুমার পাকিস্তান আর্মিদের কয়টি ইউনিট ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার আর্মিদের ৪টি ইউনিটে লেঃ কর্নেল খিজির হায়াত খান ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহ এবং লেঃ কর্ণেল জায়েদী কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া কোন সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে ২রা আগষ্ট তারিখের পূর্বে বাংলাদেশে কোন রাজাকার ছিলনা, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করতো, তৎপূর্বে বাংলাদেশে আনছার ছিলনা। ইহা সত্য নহে যে, মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতো একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই। জেলা প্রশাসক ও মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন, ইহা সত্য নহে। রাজাকাররা পাকিস্তান সরকার থেকে বেতন ভাতা পেত। রাজাকারদের বদলী এবং পদোন্নতি জেলা প্রশাসকগণ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার এস,ডি ও, কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। আমি খবরের কাগজ ও বইপত্র পড়িনা, কারণ সময় পাইনা। ১৯৭১ সালে আগতলা সরকারের কোন পাশ আমার নিকট নাই, কারণ পাশের দরকার হতোনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি অনেকবার আগরতলা যাতায়াত করেছি এমন কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া’ নামক বইটি আমি পড়ি নাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাহা কোন বই বা পত্রিকায় উল্লেখ নাই, ইহা সত্য নহে। মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সংগে সম্পৃক্ত ছিল তাহা ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত কোন পেপার বা পত্রিকায় এই কথা ছাপা হয়েছিল কিনা তাহা আামি জানি না। আমি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র কখনও পড়িনাই। জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন রোকন হয়না, তবে নেতা হয়। হাজী মোবারক আলী কখনও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলনা তিনি আওয়ামীলীগ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে মোবারক আলী পাকিস্তানি আর্মিদের স্বেচ্ছাসেবক ছিল এমর্মে আমার নিকট কোন দালিলিক প্রমান নাই, তবে তিনি রাজাকার ছিলেন। মোবারক আলী রাজাকার ছিল এ মর্মে কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট নাই। মোবারক আলী কোন সময় স্বেচ্ছাসেবক বা রাজাকার ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার রাজাকার কমান্ডার কে ছিল তাহা আমার স্বরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার শান্তি কমিটির আহবায়ক কে ছিলেন তাহা আমি জানিনা। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলাম এবং দেশ স্বাধীনের পর পালিয়ে এসেছি, ইহা সত্য নহে। আঃ হামিদ, পিতা আব্দুল কাহার ভূঁইয়ার প্ররোচনায় অর্থের প্রলোভনে আমি অত্র মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছি, ইহা সত্য নহে।
‘‘বর্তমানে আমি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৬৩ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তিযোদ্ধার ইনটেলিজেন্স সার্ভিসে হাবিলদার ছিলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে আমি ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়ীতে আসি” বা  ‘‘ বেতন নিতে এসে জানলাম যে, ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন পল্টন ময়দানে” বা ‘‘ বাড়িতে যাওয়ার পর এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় ছেলে পেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনিং প্রদান করি” বা ‘‘যুদ্ধে আমরা টিকতে না পারায় আমরা ভারতের আগরতলায় চলে যাই। আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতাম এবং ট্রেনিং দেওয়ার পর দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশে পাঠাতাম অপারেশনের জন্য। এপ্রিলের ২০ তারিখে আমি ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসি। ২১শে এপ্রিল তারিখ সকাল বেলা ই,পি,আর, এর ফেলে যাওয়া একটি লাইট মেশিনগান পাই। সেই মেশিনগান পাওয়ার পর আমি বাড়িতে আরও ৫/৬ জনকে যোগাড় করে তাদের নিয়ে পুনরায় ভারতে যাই এবং গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসি” বা ‘‘ উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সহ অন্যান্যরা রাজাকারের একটি দল গঠন করল” বা ‘‘২১শে আগষ্ট তারিখে জানতে পারি পাক সেনারা এবং রাজাকাররা এই মর্মে সন্দেহ করে যে, মান্দাইল গ্রামের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গেছে। পরদিন ২২শে আগষ্ট সকাল ৯-০০ টার দিকে গংগাসাগর পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে জামসেদ, মুক্তা মিয়া ও মোবারক মান্দাইল গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেয় হাজি নূর বক্স এর বাড়িতে মিটিং হবে সেখানে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলে” বা ‘‘ ঐ বাড়িতে জমায়েত লোকজনদেরকে পাক সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌকায় করে গংগাসাগর দীঘির পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়” বা ‘‘সেখানে জমসেদ, মুক্তা মিয়া, মোবারক আলী, বজু মিয়া উপস্থিত থেকে উল্লেখিতভাবে মান্দাইল গ্রামের ২৬ জন এবং অন্যান্য গ্রামের ৭জন মোট ৩৩ জনকে বাছাই করে তাদেরকে দীঘির পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায়” বা ‘‘ দীঘির পশ্চিম পাড়ে উল্লেখিত ৩৩ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ায়” বা ‘‘ঐ সময় সেখানে মোবারক আলী, জমসেদ, মুক্তা মিয়া উপস্থিত ছিল। পরদিন ২৩শে আগষ্ট তারিখে ক্যাম্পে আটক রাখা বাকী লোকজনদেরকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। আর্মি ক্যাম্প থেকে যাদেরকে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন আবুল বাশার যিনি ঈমামতি করেন তিনি জীবিত আছেন, তার নিকট থেকে আমি ঘটনার বিষয় জানতে পারি এবং আমি নিজেও গোয়েন্দা সূত্রে ঘটনার বিষয় জানতে পারি” বা ‘‘ ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য নিজ বাড়িতে গেলে মোবারক আলী ও তার সহযোগীরা তাকে ধৃত করে গুলি করে হত্যা করে”
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নহে। ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় আমি সাক্ষী নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি তাবিজ কবজ করে জিন হাজির করে লোকজনকে প্রতারনা করে অর্থ উপার্জন করি। (সমাপ্ত)