মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩

মাওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন// আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা

মেহেদী হাসান, ৩১/১২/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন  অপরাধসহ মোট নয়টি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  তার বিরুদ্ধে আজ অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেয়। আগামী ২৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হল মাওলানা আবদুস সোবহানের।

মাওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ পড়ে শোনানো শেষে ট্রাইব্যুনাল তার কাছে জানতে চান আপনি কি দোষী না নির্দোষ দাবি করেন?
জবাবে মাওলানা আবদুস সোবহান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা  মিথ্যা। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এর সাথে আমার কোন রকম সম্পর্ক ছিলনা।

চার্জ গঠন আদেশ উপলক্ষে মাওলানা আবদুস সোবহানকে আজ ট্রাইব্যুনালে আসামীর কাঠগড়া থেকে সামনের দিকে সাক্ষী কাঠগড়ায় এনে বসানো হয়।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির অভিযোগ পড়ে শোনান এবং চার্জ গঠন করে আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে মোট নয়টি অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং নয়টি অভিযোগেই চার্জ গঠন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে মাওলানা আবদুস সোবহান পাবনা জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন। সেই হিসেবে তার পরামর্শ,  নির্দেশে এবং নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি  পাবনায় স্বাধীনতাপন্থীদের দমন এবং নির্মূলের জন্য ও হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ, অপহরন নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী নানাবিধ অপরাধ সংঘটন করে মর্মে অভিযোগ গঠন আদেশে  উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তান আর্মি ছাড়াও মাওলানা আবদুস সোবহানের সহযোগী হিসেবে খোদাবক্স খান এবং পাবনার অনেক  বিহারীর নাম  উল্লেখ করা হয়েছে যারা অনেক অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত করেছে ।

অভিযোগ :
অভিযোগ ১ : ১৯৭১ সালের ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে তেলডিপো  থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ঈশ্বরদী জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়া মোতালেব খানকে  মাওলানা আবদুস সোবহানের নির্দেশে অপহরন করে হত্যা।

অভিযোগ ২ : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর গোপালপুর এবং যুক্তিতলা গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে মাওলানা আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে লুটপাট এবং হামলা চালানো হয়। এতে অনেকে নিহত হয়। এ ঘটনায় আটজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ ৩ : ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে খোদাবক্স খানকে সাথে নিয়ে মাওলানা আবদুস সোবহান আলাউদ্দিন এবং  রিয়াজউদ্দিন মেম্বারের বাড়ি লুট করে। এছাড়া  জয়নুদ্দিন, নুরু, আনসার কমান্ডারসহ অনেককে অপরহরন করে নির্যাতান করা হয়। এ অভিযোগে ২ জন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ ৪ : মাওলানা আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি ইশ্বরদীর শাহপুর গ্রামে অপারেশন পরিচালনা করে। এসময় বিভিন্ন বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে গণহত্যা পরিচালনা করা হয়। এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ ৫ : মাওলানা আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি পাবনা সদরের কুলনিয়া এবং দোগাছি গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় পাকিস্তান আর্মি স্বাধীনতাপন্থী অনেককে গুলি করে হত্যা করে। বাড়িঘরে আগুন দেয়।  এ ঘটনায় সাতজন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ ৬ : ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তান আর্মি ৩০০ সৈন্য নিয়ে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় বিভিন্ন বাড়ি ঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় পরিচালিত গণহত্যায় কয়েকশ লোক নিহহ হয়। এদের মধ্যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।

অভিযোগ ৭ : পাবনার আটঘরিয়া ইউনিয়নে ২১ মে পাকিস্তান আর্মি অপারেশন পরিচালনা করে ১৯ জনকে হত্যা করে।
অভিযোগ ৮ :  সাবেক পাবনা সদর বর্তমানে আতাকুলা থানার দুবলিয়া বাজার থেকে দুই জন স্বাধীনতাপন্থীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৯ : ১৯৭১ সালেল ২১ নভেম্বর পাবনার বেতবাড়িয়া গ্রামে পরিচালিত অপারেশনে বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয়া হয়। এসময় চারজনকে অপহরন করে হত্যা করা হয়।

২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  মাওলানা  আব্দুস সোবহানকে টাঙ্গাইল থেকে আটক করে। ২০০৩ সালে পাবনা থানায় দায়েরকৃত  মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (চিফ প্রসিকিউটর) গোলাম আরিফ টিপু মাওলানা আব্দুস সোবহানকে  গ্রেফতার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট)  আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করে ওইদিন এবং তাকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় আটক দেখানো হয়। ২৩ তারিখে ট্রাইব্যুনালের  আদেশের প্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর মাওলানা আবদুস সোবহানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন