রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লা মামলা ও হযরত আলী পরিবার হত্যাকান্ড : ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে বিপরীতধর্মী তথ্য

মেহেদী হাসান,৮/১২/২০১৩
আবদুল কাদের মোল্লাকে একটি অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন আপিল বিভাগ।  এ অভিযোগটি হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। দেশের সর্বোচ্চা আদালত বা সুপ্রীম কোর্টের  আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুালের  এ যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন ।

হযরত আলী পরিবার হত্যা ঘটনায়  বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের   বড় মেয়ে মোমেনা বেগম।
রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায় একমাত্র সাক্ষী হিসেবে মোমেনা বেগমকে হাজির করে ট্রাইব্যুনালে । মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দীতে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং বোনকে ধর্ষনের বিবরন দিয়েছেন।
এদিকে মিরপুরে হযরত আলী লস্করের  পরিবারের হত্যার ঘটনার বিবরন সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতের ভিত্তিতে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ  এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায় মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে তাদের পরিবারের হত্যাকান্ড বিষয়ে যে বিবরন দিয়েছেন তার সাথে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী  তথ্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে।  যেমন ট্রাইবু্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা দেখেছেন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে তার বরাত দিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান তিনি। তাছাড়া ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন হত্যাকান্ডের সময় কাদের মোল্লা ঘটনাস্থলে ছিল কিন্তু  মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে কাদের মোল্লার নামই নেই এ ঘটনা বিষয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কথা :

মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে  বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার,  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ। শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে।

যে হযরত আলী লস্করের পরিবার হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  এবং আপিল বিভাগে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরন রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা  লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন আকারে  সংরক্ষন করা হয়েছে। এখানে হযরত আলী পরিবার হত্যার ঘটনার বিবরন রয়েছে।  মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরন তারা সংগ্রহ করে। প্রতিবেদনের সাথে    মোমেনা বেগমের একটি ছবিও সেখানে  সংযুক্ত রয়েছে।

হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০০৭  তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরন দেন তার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘুর কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন তৈরি করে এবং এখনো ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষিত রয়েছে তা  নিম্নরূপ।

ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।
হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকলে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারিরা হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভেতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রানে বেঁচে যায়। হযরত আলী স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্বা ছিল।
কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম যা বলেছেন :
ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা)  মোমেন বেগমের  সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  ফলে সেসময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে  বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের  জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে  ঘটনা বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে  ঘরে আসলেন এবং  বললেন কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরো বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও  হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।

মোমেনা জানায় সে এবং তার  ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়।  এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যর্থা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক  ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে তাদের পরিবারের ঘটনার    বর্ননা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি।

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে সম্পূর্ণ বিপরতী তথ্য :

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে  সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী তথ্য রয়েছে।

যেমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী মোমেনা বেগম তার জবানবন্দীতে  বলেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং তার বোনকে  ধর্ষনের  ঘটনা দেখেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও ধর্ষনের শিকার হন এবং পরে  অচেতন হয়ে পড়েন। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যায়  মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শশুর বাড়িতে চলে যান । ফলে তিনি প্রানে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে  মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন। সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে  মোমেনা বেগম  তার জবানবন্দীতে বলছেন  কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে এবং  নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। কাদের মোল্লা এবং আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে ধাওয়া করে ঘর পর্যন্ত নিয়ে আসে। এরপর ঘরে ঢুকে তার পিতাকে শার্টের কলার ধরে বাইরে নিয়ে যায়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী   জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সেকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোশন করা যায়না।   
আপিল বিভাগের রায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার রায়ে লিখেছেন মোমেনা বেগম ন্যাচারাল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। বর্বরোচিত এ ঘটনায় তিনি তার পরিবারের সব সদস্যদের হারিয়েছেন। তাকে আসামী পক্ষ বিস্তারিতভাবে জেরা করেছে। কিন্তু তার বর্নিত ঘটনা এবং যেভাবে তিনি ঘটনার বিবরন দিয়েছেন তাকে আসামী পক্ষ দুর্বল করতে পারেনি।

আসামী পক্ষের দাবি : মোমেনা বেগমকে জেরার সময় আসামী পক্ষ দাবি করেছিল ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছে তিনি  আসল মোমেনা নন। আসামী পক্ষ থেকে নয়া দিগন্তকে জানানো হয়েছে তখন তাদের কাছে এ দাবির পক্ষে ডকুমেন্ট ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত হযরত আলী পরিবারের হত্যার বিবরন বেশ পরে তারা সংগ্রহ করে  ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। এ ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর   ট্রাইব্যুনাল তখন তা  নথিভুক্ত করে জানিয়েছিলেন বিষয়টি তারা রায়ের সময় বিবেচনা করবেন। তবে  ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আপিল শুনানীর সময়ও তারা এটি জমা দিলে আপিল বিভাগ থেকে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা জানতে চান এ রিপোর্ট যাদুঘরের কাছ থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সে মর্মে কোন রেকর্ড আছে কি-না এবং কে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাকে তারা হাজির করা হয়েছিল কিনা।  আসামী পক্ষের  প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ প্রশ্নের জবাবে তখন আদালতকে বলেন, আমরা দাবি করছি  আমরা যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি সেটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের  কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এখন মাননীয় আদালত চাইলে  এর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে পারেন। আদালত ইচ্ছা করলে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাউকে এখানে ডেকে জানতে চাইতে পারেন তাদের কাছে এ ধরনের কোন ডকুমেন্ট বা প্রতিবেদন আছে কি-না । তাহলেই প্রমান হয়ে যাবে আমাদের দাবি সত্য কি-না। 

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা  হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে দন্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।  হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিল ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী আওয়ামী লীগ করার কারনে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে  আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।  রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড দেয়।  একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ  আবেদন  শুনানী শেষে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন