মেহেদী হাসান, ৩০/৪/২০১৩
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩১ তম সাক্ষী সুজিত মহাজনকে আজ জেরা করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা। ২৯ এপ্রিল তর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। আজ জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর দেন তা এখানে তুলে ধরা হল।
আমি গৌরী শংকর বাজারে ছোটখাট মুদির দোকানদারী করি, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। আমাদের এলাকাটি পৌর এলাকার বাইরে বিধায় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক থেকে আমাদের বাড়ীতে যাওয়ার পথে দোকানপাট ছিল। কাপ্তাই রোডটি দুই পার্শ্বের জমি থেকে উঁচু। গৌরী শংকর বাজারটি আমার বাড়ী থেকে উত্তর পার্শ্বে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে। ১৯৭১ সালে রাউজান সদর এবং গহিরায় যেতে হলে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক দিয়ে যেতে হতো কিনা তাহা আমি জানিনা। আমাদের বাড়ী থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বাড়ীর দূরত্ব সড়ক পথে আনুমানিক ১২ কিলোমিটার হবে। আমাদের বাড়ী থেকে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক দেখা যায়।
ঘটনার দিন আর্মিরা পশ্চিম দিক থেকে এসেছিল। ঘটনার দিন আমি কোন আর্মির গাড়ি দেখিনাই। আমার বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অবস্থিত যার সোজাসুজি দূরত্ব হবে আধা কিলোমিটার। উল্লেখিত ঘটনার পূর্বে আর্মিরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দখল করে নিয়েছিল ১১ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে। আমরা মোট ৫ ভাই ১ বোন, তার মধ্যে বড় ভাই আমার বৈমাত্রের ভাই। তার নাম রঞ্জিত দ্বিতীয় বিবাহ করেন। আমার বোন বয়সে আমার চেয়ে ছোট। আমার বোন ১৯৭১ সালে বিবাহিতা ছিলনা। আমার পিতার মৃত্যুর সময়ে আমাদের জায়গা জমি ছিল। বাড়ীর ভিটা সব মিলিয়ে দুই/আড়াই কানি জমি ছিল। বর্তমানেও একই পরিমান জমি আছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিইনাই। আমার দরকার না হওয়ায় সাকসেশন সার্টিফিকেট নিইনাই। ১৯৭১ সালে আমার পিতার নামে ব্যাংকে কোন একাউন্ট ছিলনা। চট্টগ্রামে যারা সুদের ব্যবসা করে তাদের মহাজন বলা হয় কিনা তাহা আমি জানিনা। আমাদের বাড়ী থেকে রাউজান থানার দূরত্ব আনুমানিক ৮ কিঃ মিঃ হবে। দেশ স্বাধীনের আগে বা পরে আমি বা আমার আত্মীয় স্বজন আমার পিতা ও বড় ভাইয়ের হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন মামলা করিনাই। আমাদের উনসত্তর পাড়ায় একটি মন্দিও আছে। ১৯৭১ সালে ঐ মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন দেবেন্দ্র চক্রবর্তী, কৃঞ্চচন্দ্র ভট্টাচার্য কৃঞ্চচন্দ্র ৬৯ পাড়ায় হত্যাকান্ডের ব্যাপাওে রাউজান থানার মামলা নং-২২, তারিখ ২০-০২-১৯৭২, ধারা ঃ ৩০২/৩৭৬ দঃ বিঃ তৎসহ দালাল আইনের ১১ ধারার আসামী লেঃ কর্ণেল ফাতেমী (পাকিস্তান আর্মি), আব্দুর রাজ্জাক মকবুল আহম্মদ, মোঃ ইউসুফ, জহির আহম্মদ, পিয়ারু মিয়া, মবকুল এবং ফজর আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন কিনাতাহা আমি জানিনা। উল্লেখিথ মামলার বিষয়ে জেনেও আমি তথ্য গোপন করছি, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে উনসত্তরপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটে নাই, ইহা সত্য নহে। বর্ণিত ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে উনসত্তরপাড়ায় পাকিস্তান আর্মিরা গিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। বর্ণিত ঘটনার দিন পাকিস্তান আর্মিরা কোন মহিলাকে হত্যা করেছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। ঘটনার দিন আমার মায়ের গুলি খাওয়ার কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলিনাই, ইহা সত্য নহে। ঘটনার প্রায় একঘন্টা পর আমার বৌদি, কাকিমা এবং বোনের সংগে দেখা হয়েছিল। তখন তারা আমাকে ঘটনার কথা বলে নাই, কারণ তখন মা আহত ছিল। আমাদের পাড়ার মধ্যে ঘটনার দিন আমার বর্ণিত জায়গা ছাড়া আমাদের পাড়ার মধ্যে অন্য কোন বাড়ীতে আমি কোন মৃতদেহ দেখিনাই। ১৯৭১ সাওেল উনসত্তর পাড়ার হাইস্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন সম্ভবত পটল বড়–য়া, তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে রাউজানস্থ পল্লী বিদ্যুতের কমপাউন্ডের ভিতওে একটি বিল্ডিংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, ঐ জবানবন্দী প্রদানের সময় আমার সংগে কেউ ছিলনা। ঐ দিন আমি সেখানে হাইস্কুলের কোন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেখিনাই। ১৯৭১ সালে আমার বাড়ী থেকে সবচেয়ে নিকটতম মসজিদেও দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। হাইস্কুলের উত্তর পার্শ্বে রাস্তা আছে ১৯৭১ সালে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক থেকে আমাদের বাড়ী পর্যন্ত গাড়ি যেত, রোডটি আমাদের বাড়ীর সংলগ্ন, ক্ষিতিশ মহাজনের বাড়ী ও আমাদের বাড়ী পাশাপাশি। উল্লেখিত ঘটনার দিন তার বাড়ীর ভিতওে কোন হত্যাযজ্ঞ হয়নাই, পুকুর পাড়ে হয়েছিল, সে টিউবওয়েলের পাশে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল সেই টিউবওয়েলটি আমাদের বাড়ীর ১০০ গজ পশ্চিমে ছিল। পুকুরপাড়টি টিউবওয়েল থেকে ১৫০ ফিট দূওে ছিল, ঘটনার পওে আমি পুকুর পাড়ে যাইনাই। টিউবওয়েল থেকে সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছিল। আমি গোলার পাশে লুকিয়ে থাকার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি যে ধানের গোলের পাশে লুকিয়ে ছিলাম তার দৈঘ্য প্রস্থ কত তাহা বলতে পারবনা। ঐ গোলার মধ্যে ৩০/৩৫ আড়ি ধান বা চাউল রাখা যেতো। আমার মা ১৯৯০ সালে মারা গেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দেওয়ার সময় আমার মা মৃত তাহা বলেছিলাম, তিনি লিখেছেন কিনা তাহা আমি জানিনা। আমি আমার মায়ের মৃত্যু সনদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রহণ করিনাই। আমার মা ২০১১ সালে মারা গেছেন, ইহা সত্য নহে। আমার বৌদি মিনতি মহাজন এবং আমার বোন জীবিত আছে। ঐ কাকিমার ছেলে মেয়ে জীবিত আছে। আমার আহত মায়ের চিকিৎসার কোন সনদপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করিনাই। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল টিউবওয়েল ও পুকুরপাড় আমি দেখাইনাই। আমার মা আহত অবস্থায় যে জমিতে পড়েছিল, সেই জমিটি ক্ষিতিশ মহাজনের। আমার মা, বৌদি এবং কাকিমাকে পাকিস্তান আর্মিরা ধওে নিয়ে যাওয়া অসত্য, ইহা সত্য নহে। পাকিস্তান আর্মিরা যখন আমাদের পাড়ায় যায় তখন আমি আমাদের পাড়ায় হৈ চৈ শুনি নাই। হাফিজ বজলুর রহমান সড়কে ঘটনার সময় কোন লোকজন দৌরাদৌড়ি করেছিল কিনা তাহা আমি দেখিনাই। কারণ তখন আমি বাড়ীর মধ্যে ছিলাম। হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক ১০০ গজ দূওে। আমার ঘর থেকে ক্ষিতিশ মহাজনের ঘরের দূরত্ব আনুমানিক ৩০/৩৫ ফিট দক্ষিনে। ঐ সময় বাড়ী থেকে ডাঃ টেইলরের মিশনারী হাসপাতালের দূরত্ব ঐ সময় আনুমানিক ১৭ মাইল ছিল। বাসে বা গাড়ীতে গেলে একঘন্টার মত সময় লাগে। আমি মহামনি নাম শুনেছি। আমার বাড়ী থেকে মহামনির দূরত্ব আনুমানিক দেড়মাইল দক্ষিনে। আমাদের গ্রাম থেকে মহামনি পর্যন্ত রিক্সা, বেবিটেক্সি এবং গাড়ী চলাচল করতো কিনা তাহা আমি জানি না। মহামনিতে একটি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল হাসপাতাল এবং ডাঃ আব্দুল্লাহিল কাফি কর্মরত ছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালে গৌরী শংকর হাটের দক্ষিণ পাশে কোন চেকপোষ্ট ছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। উনসত্তর পাড়ায় চিতাখোলা পাড়ার কোন লোক মারা গেলে কোথায় তাদের দাহ করা হতো তাহা আমি জানিনা। হত্যাকান্ডের পর মৃতদেহগুলি কারা মাটিচাপা দিয়েছিল তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালে উনসত্তর পাড়ায় কতগুলি মুসলমান পরিবার ছিল তাহা আমি গণনা করিনাই, আন্দোজেও বলতে পারবনা। ক্ষিতিশ মহাজনের পুকুরপাড়ে ১৯৭১ সালে অনেকগুলি ঝোপ এবং বড়বড় গাছপালা ছিল। আমার পিতার চাচারা ৪ ভাই ছিলেন। আমার বাড়ী থেকে পশ্চিম-উত্তরে আধা কিলোমিটার দূরে কুমার পাড়া অবস্থিত শীলপাড়া এক কিলোমিটার থেকে কিছু কম হবে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে আমি শীল পাড়ায় গিয়েছিলাম। উনসত্তর পাড়া থেকে নিকটতম মুসলিম পাড়ার দূরত্ব এক কিলোমিটার। উনসত্তর পাড়ায় ১৯৭১ সালে মুসলি পরিবার বাস করতো। ডাক্তার নিরঞ্জন দত্ত গুপ্ত এর নাম শুনেছি। ঘটনার কয়েকদিন আগে আমাদের পাড়ায় হিন্দুরা অন্যত্র চলে গিয়েছিল শুনেছি। ডাক্তার নিরঞ্জন দত্ত গুপ্তের আহবানে পুনরায় সবাই ফিরে এসেছিল শুনেছি। পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের পাড়ায় এক ঘন্টার মত ছিল। আর্মির ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর পুকুরপাড়ে বাহিরের কোন লোকজন এসেছিল কিনা তাহা আমি দেখিনাই। উনসত্তর পাড়া একটি গ্রাম। আমাদের বাবুল মালির নাম শুনেছিল তিনিও নিহত হয়েছিলেন। ক্ষিতিশ মহাজন আমার খুড়তাতো ভাই।
‘‘কিছুক্ষন পরে পশ্চিম দিক হতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান শুনতে পাই” বা ‘‘আমি ভয়ে রান্না ঘরের পাশে ধানের গোলার পাশে লুকিয়ে থাকি ” বা ‘‘আমার বাবা এবং বড় ভাইকে ক্ষিতিশ মহাজনের পুকুরের উত্তর পাড়ে আরো অনেক লোকজন জড়ো করে ” বা ‘‘আমার মা হরিলতা মহাজনকে তখন গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় পুকুড় পাড়ের পাশের একটি জমিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখি ৬০/৬২ জন মানুষের লাশ পুকুরের উত্তর পাড়ে এবং কিছু পানিতে পড়ে আছে। তখন সন্ধ্যা প্রায় হয় হয় অবস্থায় আমি আমার আহত মাতাকে শীল পাড়ায় নিয়ে যাই। ঘটনার প্রায় দুই/তিন দিন পরে প্রতিবেশীরা পুকুরের পাড়ে গর্ত করে লাশগুলি মাটি চাপা দেয়। মাকে একটু সুস্থ করে তোলার পর তিন/চারদিন পর মায়ের নিকট থেকে জানতে পারি বাঙ্গালীদের মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব এবং তাহার সহযোগীরা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আহতদের মধ্যে জানতী বালা সহ আরও কয়েকজন ছিল। আমি পরবর্তীতে জানতে পেরেছি যে, একই দিনে মধ্য গহিরা, কুন্ডেশ্বরী, জগৎমল্লপাড়া, বণিক পাড়া, উনসত্তরপাড়াতে একই ভাবে পাকিস্তানী সৈন্যরা প্রায় দেড়শতাধিক সংখ্যালঘু লোককে গণহত্যা করেছে” একথাগুলি অসত্য এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নহে। প্রসিকিউশনের শিখানো মতে আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের অত্র ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান কররি, ইহা সত্য নহে। আমার মায়ের সাথে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বন্ধুত্বছিল কিনা বা তাহার সহিত লেখাপড়া করতো কিনা তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালের আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। আমার মা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবকে চিনতেননা বা আমার মা আমাকে ঘটনার কথা বলেনাই, ইহা সত্য নহে। ঘটনার আগের আমাদের পাড়ায় হিন্দুরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আমি তাদের সংগে পালিয়েছি বিধায় আমি ঘটনার সময় বাড়ীতে ছিলামনা, ইহা সত্য নহে। উনসত্তর পাড়ার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৫ই এপ্রিল তারিখ, ১৩ ই এপ্রিল তারিখ, ইহা সত্য নহে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের ১৬ই এপ্রিল তারিখে উনসত্তরপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটেনাই, ইহা সত্য নহে। আমি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্ররোচনায় মিথ্যা মামলার মিথ্যা সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে।
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩১ তম সাক্ষী সুজিত মহাজনকে আজ জেরা করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা। ২৯ এপ্রিল তর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। আজ জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর দেন তা এখানে তুলে ধরা হল।
আমি গৌরী শংকর বাজারে ছোটখাট মুদির দোকানদারী করি, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। আমাদের এলাকাটি পৌর এলাকার বাইরে বিধায় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক থেকে আমাদের বাড়ীতে যাওয়ার পথে দোকানপাট ছিল। কাপ্তাই রোডটি দুই পার্শ্বের জমি থেকে উঁচু। গৌরী শংকর বাজারটি আমার বাড়ী থেকে উত্তর পার্শ্বে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে। ১৯৭১ সালে রাউজান সদর এবং গহিরায় যেতে হলে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক দিয়ে যেতে হতো কিনা তাহা আমি জানিনা। আমাদের বাড়ী থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বাড়ীর দূরত্ব সড়ক পথে আনুমানিক ১২ কিলোমিটার হবে। আমাদের বাড়ী থেকে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক দেখা যায়।
ঘটনার দিন আর্মিরা পশ্চিম দিক থেকে এসেছিল। ঘটনার দিন আমি কোন আর্মির গাড়ি দেখিনাই। আমার বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অবস্থিত যার সোজাসুজি দূরত্ব হবে আধা কিলোমিটার। উল্লেখিত ঘটনার পূর্বে আর্মিরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দখল করে নিয়েছিল ১১ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে। আমরা মোট ৫ ভাই ১ বোন, তার মধ্যে বড় ভাই আমার বৈমাত্রের ভাই। তার নাম রঞ্জিত দ্বিতীয় বিবাহ করেন। আমার বোন বয়সে আমার চেয়ে ছোট। আমার বোন ১৯৭১ সালে বিবাহিতা ছিলনা। আমার পিতার মৃত্যুর সময়ে আমাদের জায়গা জমি ছিল। বাড়ীর ভিটা সব মিলিয়ে দুই/আড়াই কানি জমি ছিল। বর্তমানেও একই পরিমান জমি আছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিইনাই। আমার দরকার না হওয়ায় সাকসেশন সার্টিফিকেট নিইনাই। ১৯৭১ সালে আমার পিতার নামে ব্যাংকে কোন একাউন্ট ছিলনা। চট্টগ্রামে যারা সুদের ব্যবসা করে তাদের মহাজন বলা হয় কিনা তাহা আমি জানিনা। আমাদের বাড়ী থেকে রাউজান থানার দূরত্ব আনুমানিক ৮ কিঃ মিঃ হবে। দেশ স্বাধীনের আগে বা পরে আমি বা আমার আত্মীয় স্বজন আমার পিতা ও বড় ভাইয়ের হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন মামলা করিনাই। আমাদের উনসত্তর পাড়ায় একটি মন্দিও আছে। ১৯৭১ সালে ঐ মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন দেবেন্দ্র চক্রবর্তী, কৃঞ্চচন্দ্র ভট্টাচার্য কৃঞ্চচন্দ্র ৬৯ পাড়ায় হত্যাকান্ডের ব্যাপাওে রাউজান থানার মামলা নং-২২, তারিখ ২০-০২-১৯৭২, ধারা ঃ ৩০২/৩৭৬ দঃ বিঃ তৎসহ দালাল আইনের ১১ ধারার আসামী লেঃ কর্ণেল ফাতেমী (পাকিস্তান আর্মি), আব্দুর রাজ্জাক মকবুল আহম্মদ, মোঃ ইউসুফ, জহির আহম্মদ, পিয়ারু মিয়া, মবকুল এবং ফজর আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন কিনাতাহা আমি জানিনা। উল্লেখিথ মামলার বিষয়ে জেনেও আমি তথ্য গোপন করছি, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে উনসত্তরপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটে নাই, ইহা সত্য নহে। বর্ণিত ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে উনসত্তরপাড়ায় পাকিস্তান আর্মিরা গিয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। বর্ণিত ঘটনার দিন পাকিস্তান আর্মিরা কোন মহিলাকে হত্যা করেছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। ঘটনার দিন আমার মায়ের গুলি খাওয়ার কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলিনাই, ইহা সত্য নহে। ঘটনার প্রায় একঘন্টা পর আমার বৌদি, কাকিমা এবং বোনের সংগে দেখা হয়েছিল। তখন তারা আমাকে ঘটনার কথা বলে নাই, কারণ তখন মা আহত ছিল। আমাদের পাড়ার মধ্যে ঘটনার দিন আমার বর্ণিত জায়গা ছাড়া আমাদের পাড়ার মধ্যে অন্য কোন বাড়ীতে আমি কোন মৃতদেহ দেখিনাই। ১৯৭১ সাওেল উনসত্তর পাড়ার হাইস্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন সম্ভবত পটল বড়–য়া, তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে রাউজানস্থ পল্লী বিদ্যুতের কমপাউন্ডের ভিতওে একটি বিল্ডিংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, ঐ জবানবন্দী প্রদানের সময় আমার সংগে কেউ ছিলনা। ঐ দিন আমি সেখানে হাইস্কুলের কোন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেখিনাই। ১৯৭১ সালে আমার বাড়ী থেকে সবচেয়ে নিকটতম মসজিদেও দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। হাইস্কুলের উত্তর পার্শ্বে রাস্তা আছে ১৯৭১ সালে হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক থেকে আমাদের বাড়ী পর্যন্ত গাড়ি যেত, রোডটি আমাদের বাড়ীর সংলগ্ন, ক্ষিতিশ মহাজনের বাড়ী ও আমাদের বাড়ী পাশাপাশি। উল্লেখিত ঘটনার দিন তার বাড়ীর ভিতওে কোন হত্যাযজ্ঞ হয়নাই, পুকুর পাড়ে হয়েছিল, সে টিউবওয়েলের পাশে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল সেই টিউবওয়েলটি আমাদের বাড়ীর ১০০ গজ পশ্চিমে ছিল। পুকুরপাড়টি টিউবওয়েল থেকে ১৫০ ফিট দূওে ছিল, ঘটনার পওে আমি পুকুর পাড়ে যাইনাই। টিউবওয়েল থেকে সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছিল। আমি গোলার পাশে লুকিয়ে থাকার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি যে ধানের গোলের পাশে লুকিয়ে ছিলাম তার দৈঘ্য প্রস্থ কত তাহা বলতে পারবনা। ঐ গোলার মধ্যে ৩০/৩৫ আড়ি ধান বা চাউল রাখা যেতো। আমার মা ১৯৯০ সালে মারা গেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দেওয়ার সময় আমার মা মৃত তাহা বলেছিলাম, তিনি লিখেছেন কিনা তাহা আমি জানিনা। আমি আমার মায়ের মৃত্যু সনদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রহণ করিনাই। আমার মা ২০১১ সালে মারা গেছেন, ইহা সত্য নহে। আমার বৌদি মিনতি মহাজন এবং আমার বোন জীবিত আছে। ঐ কাকিমার ছেলে মেয়ে জীবিত আছে। আমার আহত মায়ের চিকিৎসার কোন সনদপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করিনাই। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল টিউবওয়েল ও পুকুরপাড় আমি দেখাইনাই। আমার মা আহত অবস্থায় যে জমিতে পড়েছিল, সেই জমিটি ক্ষিতিশ মহাজনের। আমার মা, বৌদি এবং কাকিমাকে পাকিস্তান আর্মিরা ধওে নিয়ে যাওয়া অসত্য, ইহা সত্য নহে। পাকিস্তান আর্মিরা যখন আমাদের পাড়ায় যায় তখন আমি আমাদের পাড়ায় হৈ চৈ শুনি নাই। হাফিজ বজলুর রহমান সড়কে ঘটনার সময় কোন লোকজন দৌরাদৌড়ি করেছিল কিনা তাহা আমি দেখিনাই। কারণ তখন আমি বাড়ীর মধ্যে ছিলাম। হাফিজ বজলুর রহমান সড়ক ১০০ গজ দূওে। আমার ঘর থেকে ক্ষিতিশ মহাজনের ঘরের দূরত্ব আনুমানিক ৩০/৩৫ ফিট দক্ষিনে। ঐ সময় বাড়ী থেকে ডাঃ টেইলরের মিশনারী হাসপাতালের দূরত্ব ঐ সময় আনুমানিক ১৭ মাইল ছিল। বাসে বা গাড়ীতে গেলে একঘন্টার মত সময় লাগে। আমি মহামনি নাম শুনেছি। আমার বাড়ী থেকে মহামনির দূরত্ব আনুমানিক দেড়মাইল দক্ষিনে। আমাদের গ্রাম থেকে মহামনি পর্যন্ত রিক্সা, বেবিটেক্সি এবং গাড়ী চলাচল করতো কিনা তাহা আমি জানি না। মহামনিতে একটি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল হাসপাতাল এবং ডাঃ আব্দুল্লাহিল কাফি কর্মরত ছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালে গৌরী শংকর হাটের দক্ষিণ পাশে কোন চেকপোষ্ট ছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। উনসত্তর পাড়ায় চিতাখোলা পাড়ার কোন লোক মারা গেলে কোথায় তাদের দাহ করা হতো তাহা আমি জানিনা। হত্যাকান্ডের পর মৃতদেহগুলি কারা মাটিচাপা দিয়েছিল তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালে উনসত্তর পাড়ায় কতগুলি মুসলমান পরিবার ছিল তাহা আমি গণনা করিনাই, আন্দোজেও বলতে পারবনা। ক্ষিতিশ মহাজনের পুকুরপাড়ে ১৯৭১ সালে অনেকগুলি ঝোপ এবং বড়বড় গাছপালা ছিল। আমার পিতার চাচারা ৪ ভাই ছিলেন। আমার বাড়ী থেকে পশ্চিম-উত্তরে আধা কিলোমিটার দূরে কুমার পাড়া অবস্থিত শীলপাড়া এক কিলোমিটার থেকে কিছু কম হবে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে আমি শীল পাড়ায় গিয়েছিলাম। উনসত্তর পাড়া থেকে নিকটতম মুসলিম পাড়ার দূরত্ব এক কিলোমিটার। উনসত্তর পাড়ায় ১৯৭১ সালে মুসলি পরিবার বাস করতো। ডাক্তার নিরঞ্জন দত্ত গুপ্ত এর নাম শুনেছি। ঘটনার কয়েকদিন আগে আমাদের পাড়ায় হিন্দুরা অন্যত্র চলে গিয়েছিল শুনেছি। ডাক্তার নিরঞ্জন দত্ত গুপ্তের আহবানে পুনরায় সবাই ফিরে এসেছিল শুনেছি। পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের পাড়ায় এক ঘন্টার মত ছিল। আর্মির ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর পুকুরপাড়ে বাহিরের কোন লোকজন এসেছিল কিনা তাহা আমি দেখিনাই। উনসত্তর পাড়া একটি গ্রাম। আমাদের বাবুল মালির নাম শুনেছিল তিনিও নিহত হয়েছিলেন। ক্ষিতিশ মহাজন আমার খুড়তাতো ভাই।
‘‘কিছুক্ষন পরে পশ্চিম দিক হতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান শুনতে পাই” বা ‘‘আমি ভয়ে রান্না ঘরের পাশে ধানের গোলার পাশে লুকিয়ে থাকি ” বা ‘‘আমার বাবা এবং বড় ভাইকে ক্ষিতিশ মহাজনের পুকুরের উত্তর পাড়ে আরো অনেক লোকজন জড়ো করে ” বা ‘‘আমার মা হরিলতা মহাজনকে তখন গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় পুকুড় পাড়ের পাশের একটি জমিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখি ৬০/৬২ জন মানুষের লাশ পুকুরের উত্তর পাড়ে এবং কিছু পানিতে পড়ে আছে। তখন সন্ধ্যা প্রায় হয় হয় অবস্থায় আমি আমার আহত মাতাকে শীল পাড়ায় নিয়ে যাই। ঘটনার প্রায় দুই/তিন দিন পরে প্রতিবেশীরা পুকুরের পাড়ে গর্ত করে লাশগুলি মাটি চাপা দেয়। মাকে একটু সুস্থ করে তোলার পর তিন/চারদিন পর মায়ের নিকট থেকে জানতে পারি বাঙ্গালীদের মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব এবং তাহার সহযোগীরা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আহতদের মধ্যে জানতী বালা সহ আরও কয়েকজন ছিল। আমি পরবর্তীতে জানতে পেরেছি যে, একই দিনে মধ্য গহিরা, কুন্ডেশ্বরী, জগৎমল্লপাড়া, বণিক পাড়া, উনসত্তরপাড়াতে একই ভাবে পাকিস্তানী সৈন্যরা প্রায় দেড়শতাধিক সংখ্যালঘু লোককে গণহত্যা করেছে” একথাগুলি অসত্য এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নহে। প্রসিকিউশনের শিখানো মতে আমি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের অত্র ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান কররি, ইহা সত্য নহে। আমার মায়ের সাথে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের বন্ধুত্বছিল কিনা বা তাহার সহিত লেখাপড়া করতো কিনা তাহা আমি জানিনা। ১৯৭১ সালের আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল কিনা তাহা আমি জানিনা। আমার মা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবকে চিনতেননা বা আমার মা আমাকে ঘটনার কথা বলেনাই, ইহা সত্য নহে। ঘটনার আগের আমাদের পাড়ায় হিন্দুরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আমি তাদের সংগে পালিয়েছি বিধায় আমি ঘটনার সময় বাড়ীতে ছিলামনা, ইহা সত্য নহে। উনসত্তর পাড়ার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৫ই এপ্রিল তারিখ, ১৩ ই এপ্রিল তারিখ, ইহা সত্য নহে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের ১৬ই এপ্রিল তারিখে উনসত্তরপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটেনাই, ইহা সত্য নহে। আমি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্ররোচনায় মিথ্যা মামলার মিথ্যা সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন