Mehedy Hasan
০৬/১২/২০১২
৬ ডিসেম্বর ২০১২। বৃহষ্পতিবার। মাওলানা সাঈদীর সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রায়ের তারিখ ঘোষনা করা হবে। ট্রাইব্যুনাল কক্ষে গিজ গিজ করছে সাংবাদিক, আইনজীবী এবং আরো কয়েক শ্রেণি পেশার মানুষ। ঘড়ির কাটায় তখন বিকাল সাড়ে তিনটা। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুরোধ করেন মাত্র পাঁচ মিনিট মাওলানা সাঈদীকে কথা বলতে দেয়ার জন্য। কাঠগড়ায় অবস্থানরত মাওলানা সাঈদী তখন দাড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে বলেন- পাঁচ মিনিট নয় মাত্র দুই থেকে আড়াই মিনিটে আমি শেষ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তাকে কথা বলার অনুমতি দেন শর্তসাপেক্ষে। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কাউকে কটাক্ষ করে বা কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হবেনা এ নিশ্চয়তা দেয়া হলে কথা বলতে দেয়া হবে।
অনুমতি পাবার পর রায়ের তারিখ ঘোষনার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিট আবেগময়ী এবং মর্মস্পর্শী বক্তব্য রাখেন। নিজেকে বিশ্বাসের চূড়ান্ত এবং শেষ স্তরে সপে দিয়ে মাওলানা সাঈদী অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারন করেন- আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি । রোজ কিয়াকমতের দিন যেন রসুল (সা) এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানরা যে যন্ত্রনা ভোগ করেছি, আমার যে পরিমান চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের পানি ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোটা অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুন যন্ত্রনা এবং কষ্ট ভোগের আগে যেন তাদের মৃত্যু না হয়। আর জাহান্নাম হয় যেন তাদের চির ঠিকানা।
মাওলানা সাঈদী বলেন, যদি আমার প্রতি জুলুম করা হয় করা হয় তাহলে এ বিচারের দুইটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব শেষ হবে। আর কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সেই বিচারে আমি হব বাদী। আর আমার বিরুদ্ধে যারা জুলুম করেছে তারা হবে আসামী।
তিনি যখন কথা বলেন তখন পিনপতন নিরবতা বিরাজ করে ট্রাইব্যুনালে ।
বিচার কার্যক্রম শেষে মাওলানা সাঈদীর তিন ছেলে, আত্মীয় স্বজন এবং আইনজীবীরা যখন তার কাঠগড়ার সামনে যান তখন তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার সন্তানদের মাথায় চুমু খান। আইনজীবী এবং অন্যান্যদের সাথে করমর্দন করেন এবং দোয়া করেন। এরপর পুলিশ এসে তাকে হাজত খানায় নিয়ে যায়।
মাওলানা সাঈদী যা বলেছেন :
আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের এই বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগনের নিকট অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এই মামলায় আমার নাম বিকৃতি করে তদন্ত কর্মকর্তা কখনো দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, কখনো দেলু ওরফে দেইল্যা, দেউল্লা বলে আখ্যায়িত করেছে আমাকে।
আমার বিরুদ্ধে চুরি ডাকাতি, জেনা ব্যাভিচার এর অভিযোগ আনছেন তিনি। তিনি ১২/১৪ বার পিরোজপুর গেছেন। রাজনৈতিক কারনে বর্তমান সরকার দ্বারা প্ররোরিচত হয়ে তিনি এসব অভিযো এনেছেন। স্থানীয় এমপির সাথে বসে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী সাবুদ তৈরি করেছেন।
রোজ কিয়ামতের ভয় আছে, পরকালে বিশ্বাস আছে এমন কোন মুসলমান কোন মানুষের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারেনা।
আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি । রোজ কিয়াকমতের দিন যেন রসুল (সা) এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যদি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা হয় এবং যারা এ মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানরা যে কষ্ট এবং যন্ত্রনা ভোগ করেছে, আমার যে চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের পানি ঝরেছে তার প্রতিটি ফোটা যেন অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শত গুন যন্ত্রনা ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহ তায়ালা যেনো তাদের মৃত্যু না দেন। মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয় তাহলে এ বিচারের দুউটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব শেষ হবে। আর রোজ কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সেদিন রাজাধিরাজ, সকল সম্রাটদের সম্রাট, সকল বিচারকরদের বিচারপতি, আসমান ও জমিনের মালিক মহান আল্লাহ হবেন বিচারপতি। যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে আমার প্রতি জুলুম করা হয় তাহলে আমার প্রতি যারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন, আজ এখানে যারা আছেন তারা হবেন আসামী। আর আমি হব বাদী। আপনাদের তিনজনের প্রতি আমি আশা রেখে বলছি আপনাদের ন্যায় বিচারের তৌফিক দান করুন আল্লাহ।
আমি হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে দাড়াতে প্রস্তুত
২৯/০১/২০১৩
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, আমি হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে দাড়াতে প্রস্তুত আছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করিনা। মৃত্যু নিয়ে কোন ভয়ভীতি আমার নেই। আমি আমার যৌবন কাল থেকে শুরু করে আজ ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে পবিত্র কোরআনের দাওয়াত দিয়েছি। কোরআনের একজন খাদেম হিসেবে গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কোরআনের দাওয়াত পৌছে দিয়েছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার মাহফিলে যোগ দেয়। অসংখ্য মানুষ এসব মাহফিল থেকে সঠিক পথের দিশা পেয়েছে। দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমাকে ভালবাসেন। আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত। এটাই কি আমার অপরাধ? আমি কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি।
আলোচিত স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে ট্রাইব্যুনাল পুনরায় গঠনের পর মাওলানা সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে পুনরায় যুক্তি শোনার ব্যবস্থা করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ উভয় পক্ষের পুনরায় যুক্তি উপস্থান শেষ হলে সেদিন আবার নতুন করে রায়ের তারিখ ঘোষনার আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ । রায়ের তারিখ বিষয়ে আদেশ ঘোষনার আগ মুহুর্তে কাঠগড়ায় অপেক্ষমান মাওলানা সাঈদী দাড়িয়ে বলেন, মাননীয় আদালত আনপারা সবার কথা শুনলেন। রাষ্ট্রপক্ষের কথা শুনলেন, আসামী পক্ষের আইনজীবীদের কথা শুনলেন কিন্তু অভিযুক্ত হিসেবে আমার কথা শুনলেননা। আমরা বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে আমার কিছু কথা ছিল তা আপনাদের শোনা উচিত। আমি অতি সংক্ষেপে তা বলতে চাই।
তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আপনার কথা বলার সুযোগ নাই। এরপর মাওলানা সাঈদী কথা বলতে শুরু করেন। কথা বলা শুরুর পরপর বারবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি এবং বাঁধার মুখে ট্রাইব্যুনালও মাওলানা সাঈদীকে অনুরোধ করেন কথা বলা শেষ করার জন্য। আসামী পক্ষের আইনজীবীদের ট্রাইব্যুনাল অনুরোধ করেন তাকে থামানোর জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের বাঁধা উপক্ষো করে মাওলানা সাঈদী তার কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি উত্থাপন করা হলে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শেষে এ অবস্থার মধ্যে মাওলানা সাঈদী তার লিখিত বক্তব্যের মূল অংশ পড়ে শুনিয়ে শেষ করেন।
মাওলানা সাঈদী বলেন,
২০১১ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ এই আদালতের তদানিন্তন চেয়ারম্যান নিজামুল হক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পড়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি দোষী না নির্দোষ? আপনি তখন এই আদালতের একজন বিচারক ছিলেন। বিচারাতি নিজামুল হক ন্যায় বিচারে ভ্রষ্ট পথ অনুসরন করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে স্বেচ্ছায় সরে পড়তে হয়েছে। আজ সেই চেয়ারে আপনি সম্মানিত চেয়ারম্যান। এটাই আল্লাহর বিচার।
কোরআনের আয়াত পড়ে মাওলানা সাঈদী বলেন, আল্লাহ যাকে খুসী সম্মানিত করেন আর যাকে খুসী অসম্মানিত করেন।
তিনি বলেন, সেদিন তখনকার চেয়ারম্যান নিজামুল হকের প্রশ্নের জবাবে আমি যা বলেছিলাম, সেখান থেকেই আমার সামান্য কিছু বক্তব্য শুরু করছি। নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে আমি বলেছিলাম- আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। আল্লাহ কসম! আমার বিরুদ্ধে রচনা করা চার সহা¯্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রত্যেকটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কোন এক দেলোয়ার শিকদারের করা অপরাধ সমূহ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার পাহাড় রচনা করেছেন।
আজ আমি আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে আপনাদের সামনে বলতে চাই, সরকার ও তার রাষ্ট্র যন্ত্র কর্তৃক চিত্রিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের হত্যাকারী, লুন্ঠন, গণ হত্যাকারী, ধর্ষক, অগ্নি সংযোগকারী, দেলোয়ার শিকদার বা ‘দেলু’ বা দেইল্যা রাজাকার আমি নই। আমি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের নিকট চিরচেনা পবিত্র কোরআনের একজন তাফসীরকারক, কোরআনের একজন খাদেম, কোরআনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
যে আমি সেই যৌবন কাল থেকেই শান্তি ও মানবতার উৎকর্ষ সাধনে পবিত্র কুরআনের শ্বাশ্বত বানী প্রচার করার লক্ষ্যে নিজ জন্ম ভূমি থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্ধশত দেশ গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত ভ্রমন করেছি। সেই আমি আজ ৭৩ বছর বয়সে জীবন সায়াহ্নে এসে সরকার ও সরকারী দলের দায়ের করা ‘ধর্র্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার’ হাস্যকর ও মিথ্যা মামলায় গত ২৯ জুন ২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।
আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত হানার অভিযোগ উত্থাপন এবং তজ্জন্য আমাকে তড়িৎ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার কাজটি করলো এমন এক সরকার, যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি দেশের সংবিধানে বহাল রাখাকে সহ্য করতে না পেরে অবলীলায় তা মুছে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বাঁধা দেয়া হয় মাওলানা সাঈদীর বক্তব্য রাখা প্রসঙ্গে। সে বাঁধা উপেক্ষা করে মাওলানা সাঈদী তার কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ৪২ বছরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কোন বিষয়েই কোন মামলা ছিলো না। সামান্য একটি জিডিও ছিলো না। গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বদান্যতায়, মহানুভবতায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আজ আমি ১৭টি মামলার আসামী। সেই জুন ২০১০ থেকে অদ্যাবধি কথিত মানবতাবিরোধী ২০ টি অপরাধের অভিযোগসহ ১৭টি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সরকার আমাকে তাদের এক রাজনৈতিক তামাশার পাত্রে পরিনত করেছে, যা আজ দেশবাসীর কাছে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতই স্পষ্ট।
যে ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আজ আপনাদের সম্মুখে আমি দন্ডায়মান, সেগুলো সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই সাজানো। ১৯৭১ সনে পিরোজপুর বা পাড়েরহাটে পাক বাহিনী যা ঘটিয়েছে, সেসব কাহিনী সৃজন করে চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা
নীতি নৈতিকতার মূলে পদাঘাত করে আমার নামটি জুড়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, মৃত্যুর পরের আযাবে বিশ্বাসী, পরকাল ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের পক্ষে এতো জঘন্য মিথ্যাচার আদৌ সম্ভব নয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এবং সহযোগিতরা তাদের সৃজিত অভিযোগগুলো প্রমানের জন্য কয়েকজন বিতর্কিত চরিত্র, ভ্রষ্ট ও সরকারী সুবিধাভোগী দলীয় লোক ব্যতিত স্বাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকেই হাজির করতে পারেননি।
এ সমসয় আবারো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হয় তার বক্তব্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য। তারপরও মাওলানা সাঈদী তার কথা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সাথে এই ট্রাইব্যুনালের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টেনেছেন। তিনি আইন-কানুন, ন্যায় বিচারের শপথ, অভিযুক্ত হিসেবে আমার বক্তব্য প্রদানের প্রাপ্য অধিকার প্রদান কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেননি বরং তিনি রায় ঘোষনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় মহান রাব্বুল আলামিনের হস্তক্ষেপের ঘটনা। আজ সেই একদা সমাপ্তকৃত বিতর্কিত মামলার পূন: সমাপ্তির দ্বিতীয় আয়োজন। কিন্তু আমি পূর্বের ন্যায় একই উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি মামলা যেনো-তেনো প্রকারে শেষ করার সেই একই ত্রস্ততা।
মাওলানা সাঈদী বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৃত বিবেচনায় আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার রায় প্রকাশ করে গেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান মিডিয়ায় প্রকাশিত স্কাইপ সংলাপকে মেনে নিয়ে অন্যায় ও বে-আইনীভাবে পরিচালিত বিচার কার্যের সকল দায়ভার বহন করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বিদায় হয়েছেন। ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ভাবে বিচার কার্য্য পরিচালনার বিষয়টি তার স্কাইপ কথোপকথনে প্রকাশ পেয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছে কিভাবে সরকারের চাপে পড়ে, সুপ্রীম কোর্টের জনৈক বিচারপতির প্রলোভনে পড়ে, তথাকথিত ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ডিকটেশন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের সাথে অবৈধ যোগসাজসে বিচার কার্য পরিচালনায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, আদালতের ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে আমার পক্ষের স্বাক্ষীর অগ্রিম তালিকা জমা দিতে বাধ্য করে সেই তালিকা প্রসিকিউশন এবং তাদের মাধ্যমে সরকার, সরকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসনকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহন করে স্বাক্ষীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ নানাবিধ অনিয়ম ও বে আইনী কর্মপন্থার মাধ্যমে সমগ্র বিচার কার্যটি কলুষিত করেছেন।
এ পর্যায়ে আবারো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হয়। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির মাওলানা সাঈদীকে অনুরোধ করেন থামার জন্য। তখন মাওলানা সাঈদী তার লিখিত বক্তব্য সংক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর পূর্বে দু’বার ক্ষমতাসীন ছিলো। তখন আমি যুদ্ধাপরাধী ছিলাম না, আমার বিরুদ্ধে কোন মামলাও হয়নি। একটি জিডিও হয়নি বাংলাদেশের কোথাও। আর তদন্ত কর্মকর্তা এই আদালতে বলেছেন ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর আমি নাকি ৮৫ সাল পর্যন্ত পলাতক ছিলাম। তিনি আমাকে ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম বলে মিথ্যচার করেছে। ১৯৭৯ সালে আমি সাধারন সমর্থক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি। এর পূর্বে আমি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ছিলাম না। ১৯৯০ সনের শুরু অবধি আমার রাজনৈতিক কোন পরিচয়ও ছিল না। ১৯৮৯ সালে আমি জামায়াতের মজলিসে শুরায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হই।
মাওলানা সাঈদী বলেন, দেশবাসী স্বাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার কখনো কোনকালেই তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। বরাবরই আমার বিচরন ছিলো কোরআনের ময়দানে। জনগনকে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল আমার কাজ। আমার তাফসীর মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহন করে। এইসব মাহফিল থেকে অসংখ্য অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছে, নামাজি হয়েছে। এটাই কি আমার অপরাধ? দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমার উপর আস্থা রাখেন, আমাকে বিশ্বাস করেন, আমাকে ভালবাসেন। আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত। এই ভালবাসাই কি অপরাধ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি কোরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি, এটাই কি আমার অপরাধ? আমি কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছি, এটাই কি আমার অপরাধ? মাননীয় আদালত এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে, এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করিনা। মৃত্যু নিয়ে কোন ধরনের ভয় বা ভীতি আমার মধ্যে নেই।
মাওলানা সাঈদী বলেন, আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদ এবং কোরআনের বিপ্লবী দাওয়াত প্রচারে আমি অকুন্ঠ চিত্ত। এ কারনে সরকার তাদের ইসলাম বিদ্বেষী মিশন বাস্তবায়নে আমাকে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে আমাকে বিতর্কিত ও জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং নিশ্চিহ্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে। আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার জন্য এবং আমাকে তাদের আদর্শিক শত্রু মনে করে সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমার বিরুদ্ধে শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যা এ মামলা পরিচালনা করেছেন। আমি রাজাবিরাজ, স¤্রাটের স¤্রাট, সকল বিচারপতির মহা বিচারপতি আকাশও জমীনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন মানবতা বিরোধী অপরাধ আমি করি নাই।
আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা, তার সহযোগী প্রসিকিউশন এবং মিথ্যা স্বাক্ষ্যদাতাদের হেদায়েত করো আর হেদায়েত তাদের নসীবে না থাকলে তাদের সকলকে শারিরিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে সে রকম অশান্তির আগুনে দগ্ধিভুত করো যেমনটি আমাকে, আমার পরিবারকে এবং বিশ্বব্যাপি আমার অগনিত ভক্তবৃন্দকে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছে। আর জাহান্নাম করো তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের তীব্র আপত্তি এবং বাঁধার ফলে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাওলানা সাঈদী বলেন, আমি আমার সকল বিষয় সেই মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি, যিনি আমার কর্ম বিধায়ক এবং তাঁকেই আমি আমার একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছি। সাহায্যকারী হিসেবে মহান আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন-ই আমার জন্য যথেষ্ঠ। এর পর তিনি কথা বলা বন্ধ করেন।
এ
২৪/৪/২০১২
শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি
বিচারের নামে আমাকে নিয়ে যা করা হচ্ছে তাতে আমি হতভম্ব, স্তম্ভিত ও বিস্ময়ে বিমুঢ়। তাই আমি আদালতের কার্যক্রম অনুসরণ করা ও বোঝার প্রচেষ্টা অনেক আগেই পরিত্যাগ করে আদালত চলাকালে পবিত্র কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতে মগ্ন থাকি এবং শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুণি। আদালতের রেওয়াজ পূরণের দায়িত্ব আমার আইনজীবিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং মিথ্যাচার একাকার হয়ে আমার জন্য যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে তা উপলদ্ধি কিংবা মোকাবিলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই। আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া, যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নের এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার।
মাননীয় আদালতের কাছে আমার একটি নিবেদন, অন্তত ৭২ বছরের বৃদ্ধ বয়সে এই রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থাকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে মাননীয় আদালত ও প্রসিকিউশন মিলে যা যা করার তা সম্পন্ন করতে পারেন।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত হরতালের দ্বিতীয় দিন চলছে আজ মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল২০১২। গতকাল সোমবার হরতালের প্রথম দিনে ট্রাইব্যুনাল চলেনি। আজো হরতালের কারনে মাওলানা সাঈদীর সিনিয়র কোন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি।
জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী আদালতে হাজির হয়ে বলেন, আমরা পায়ে হেটে এসেছি। সিনিয়র আইনজীবীগন আসতে পারেননি। একথা বলার জন্য তারা আমাদের পাঠিয়েছেন। জুনিয়র আইনজীবীরা এরপর আদালতের কার্যক্রম মুলতবি দাবি করেন। কিন্তু আদালত মুলতবি প্রস্তাবে রাজি না হয়ে কোর্ট পরিচালনার কথা জানান। তখন কাঠগড়ায় থাকা মাওলানা সাঈদী দাড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজে কথা বলেন মুলতবি আবেদনের পক্ষে।
মাননীয় আদালত
দেশে আজও হরতাল পালিত হচ্ছে। ফলে সকল প্রকার চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সঙ্গত কারণেই গতকালের ন্যায় আজকেও আমার আইনজীবীগণ আদালতে উপস্থিত থাকতে সক্ষম হননি। অনুরূপ পরিস্থিতিতে গতকাল আসামি হিসাবে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার পর আপনি আদালত মুলতবী করেছিলেন। একই পরিস্থিতিতে আজকে আবার আদালত কার্যক্রম চালানোর প্রয়াস পাবেন তা আমি আশা করিনি।
মাননীয় আদালত
আমাদের দেশে হরতাল চলাকালে নি¤œ কিংবা উচ্চ আদালতের কোথাও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। সুবিচারের স্বার্থে এ রেওয়াজ দীর্ঘদিন থেকেই বহাল রয়েছে, ব্যতিক্রম শুধু এই আদালত। তাতেও আমার কোনো আপত্তি থাকার সুযোগ থাকত না, যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার আইনজীবীগণ আদালতে হাজির হতে সক্ষম হতেন।
মাননীয় আদালত
আইন অনুযায়ী ওকালাতনামা আদালতে দাখিল করার পর আসামীর কোনো কিছু বলার অধিকার রহিত হয়ে যায়। আসামীর কৌঁসুলিই তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এবং সুবিচার প্রাপ্তির জন্য তৎপর থাকেন, তাই আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সুবিচার পরিপন্থি। আসামি হিসাবে আমার এই অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আরো প্রনিধানযোগ্য। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন এই সম্মানিত আদালত একাধারে আইন প্রণয়ন এবং সেই আইনকে অনুসরণপূর্বক বিচারকার্য সমাধান করার দ্বিবিধ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্বাক্ষ্য আইনের একটি শ্বাশত ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে আসামির চিরায়ত অধিকার হরণ করে আই ও-কে দিয়ে স্বাক্ষীদের প্রক্সি স্বাক্ষ্য গ্রহণের এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত প্রদানের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছেন।
মাননীয় আদালত
আমি একজন ব্যক্তি মাত্র। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও মিথ্যাচার একাকার হয়ে গিয়ে আমার জন্য যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে তা উপলদ্ধি করা কিংবা মোকাবিলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই।
মাননীয় আদালত
আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিচার প্রার্থী হিসেবে আমার অবস্থান তথা অনুভূতি প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকলে আমি বলতে চাই যে, বিচারের নামে আমাকে নিয়ে যা করা হচ্ছে তাতে আমি হতভম্ব, স্তম্ভিত ও বিস্ময়ে বিমুঢ়। তাই আমি আদালতের কার্যক্রম অনুসরণ করা ও বুঝার প্রচেষ্টা অনেক আগেই পরিত্যাগ করে আদালত চলাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতে মগ্ন থাকি এবং শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুণি। আদালতের রেওয়াজ পূরণের দায়িত্ব আমার আইনজীবিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এখন আইনজীবি উপস্থিত থাকার সেই নূন্যতম শর্তটা মান্য করার বিলম্বটি মেনে নেয়ার ফুসরতও যদি আপনাদের না থাকে, তাহলে সবর করা ছাড়া আমার কী বা করার আছে! আমার আইনজীবির অনুপস্থিতিতে আমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি বিচার প্রাপ্তিতে আমার কোনো পার্থক্য নির্ণয় করবে না।
এক্ষেত্রে মাননীয় আদালতের কাছে আমার একটি নিবেদন থাকবে যে, অন্ততপক্ষে ৭২ বছরের এই বৃদ্ধ বয়সে এই রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থাকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে অব্যহতি দিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে মাননীয় আদালত ও প্রসিকিউশন মিলে যা যা করার তা সম্পন্ন করতে পারেন।
কার হিম্মত আছে আপনাদের কাছে জানতে চাওয়ার যে, ঔটঝঞওঈঊ ঐটজজওঊউ ঔটঝঞওঈঊ ইটজজওঊউ বা ঔটঝঞওঈঊ ঘঙঞ ঙঘখণ ঞঙ ইঊ উঊখওঠঊজঊউ, ইটঞ ঞঙ ইঊ ঝঊঊঘ অখঝঙ -এই অমোঘ বাণীসমূহ এই আদালতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে আপ্ত বাক্য হিসেবেই থেকে যাবে।
মাননীয় আদালত
আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নের এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার। আপনার এই মহান আদালত রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তি সাঈদীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তথা ন্যায়বিচার করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। আমি আপনার সেই শপথ ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আস্থাশীল থাকতে চাই।
আমাকে কথাগুলো বলতে দেয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এরপর আদালত মুলতবি আবেদন বাতিল করে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু করেন এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবীরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বেশ কয়েকবার কোর্টরুম ত্যাগ করতে চাইলেও তাদের কোর্টরুম ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের কোর্টরুমে বসে থাকতে বাধ্য করেন আদালত এবং এভাবে ১২টারও কিছু সময় পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহন শেষে মুলতবি করা হয়।
৩/১০/২০১১
শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার
আজ ৩/১০/২০১১ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হল। চার্জ গঠনের আদেশ উপলক্ষে সকাল দশটার দিকে মাওলানা সাঈদীকে আদালত কক্ষের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপরই চার্জ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
যেসব অভিযোগে চার্জ গঠন করা হল তাকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করলেন মাওলানা সাঈদী।
মাওলানা সাঈদী নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে দৃঢকণ্ঠে বললেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা। একাত্তরে আমি কোনও অপরাধ করিনি । কোনও রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার তো দূরের কথা পদেও আমি ছিলাম না। মাবতাবিরোধী নয়, মানবতার পে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে বক্তব্য দিয়েছি। আমাকে অন্য কেউ রাজাকার বলেনা। কেবল ভারতের রাজাকাররাই আমাকে রাজাকার বলে।
আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সহস্রাধিক রচনা লেখা হয়েছে। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন মিথ্যা। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। আমি সেই লানত দেখার অপোয় আছি।’
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে অভিযোগের আদেশ ঘোষণার পর তাকে এজলাসে হাজির করা হয়। এ সময় চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘আমি অর্ডার ইংরেজিতে দিয়েছি এখন আপনার সুবিধার্তে বাংলায় বলব। আপনি যদি দোষী বা নির্দোষ হন তা হলে বলবেন।
জবাবে মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘বাংলায় দেওয়ার দরকার নেই আপনার ইংরেজি অর্ডার আমি বুঝতে পেরেছি।’ এরপর তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তখন বলেন, ‘এ ধরনের কোনও সুযোগ নেই। মাওলানা সাঈদী তখন বলেন, ‘সুযোগ না থাকলে আমি দু-তিন কথায় এর জবাব দেবো। এরপর মাওলানা সাঈদী প্রথমে সবাইকে সালাম দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন।
আপনি তখন হজ করে এসেছিলেন। হজের নুরানি আভা চেহারায় তখনো নষ্ট হয়নি। আমাকে এখানে আনার পর একজন প্রসিকিউটর আমার নাম বিকৃত করে বলেছিলেন। আমি আশা করেছিলাম, আপনি জিজ্ঞেস করবেন, এইটা কোথায় পেয়েছেন? উনার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট বা অন্য কোন দলিলপত্র থেকে পেয়েছেন কি-না?
কিন্তু আপনি তা করলেন না। বরং অর্ডারে ওই নামে আমাকে উল্লেখ করলেন।
আপনি একদিন বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনি সেই দায়িত্ব পালন করতে চান। আসলেই বিচারকের দায়িত্ব অনেক বড়। হাশরের দিনে সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আরশের নীচে ছায়া পাবেন। এর প্রথম হচ্ছেন, ন্যায় বিচারক। তাই আমি আশা করি আপনি ন্যায় বিচার করবেন।
বিচারকের দায়বদ্ধতা আল্লাহ ও বিবেকের কাছে। তৃতীয় কোন স্থানে দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায় বিচার করা যায় না। বরং যেটা করা হয়, সেটা জুলুম হয়ে যায়। আর জুলুমের পরিণাম জাহান্নাম। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর মানবতা বিরোধী অপরাধের কোন অভিযোগ আসেনি। ১৯৮০ সালে জামায়াতের মজলিসে শুরার সদস্য হওয়ার পর এটা আসতে শুরু করে। যখনই এ ধরণের অভিযোগ এসেছে, আমি প্রতিবাদ করেছি, সংসদে বলেছি, মামলা দায়ের করেছি। যার অনেকগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। মানবতা বিরোধী অপরাধ করা তো দূরে থাক, বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশে বিদেশে মানবতার রক্ষায় কাজ করেছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চার সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটি রচনা তৈরি করা হয়েছে। যারা এটা রচনা করেছেন, তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিলো না। তাই তারা এটা করতে পেরেছেন। রাজাকারের কমান্ডার হওয়াতো দূরে থাক, তাদের সঙ্গে আমার কোনই সম্পর্ক ছিলো না। আমি শাান্তি বাহিনীর সদস্য ছিলাম না, রাজাকার ছিলাম না। পাক বাহিনীর সঙ্গে আমি এক মিনিটের জন্যও বৈঠক করিনি।
আমি চাই, আপনি আমাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিবেন। দিতে পারবেন। আমি একজন নিরীহ মানুষ। এই অবিচার করা হলে, আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আল্লাহর লানতে পড়বে। সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে।
আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সহস্রাধিক রচনা লেখা হয়েছে। ‘এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন মিথ্যা। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। আমি সেই লানত দেখার অপোয় আছি।’
আমি কখনোই শান্তি কমিটিতে বা রাজাকার- আলবদর ছিলেন না। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে এক দিনের বা এক মিনিটের জন্যও আমার সাথে কোন সম্পর্ক ছিলনা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্ভাগ্যজ্জনক। সুরা হুজরাতের ১১ নং আয়াতে নামের বিষয়ে বলা আছে- ‘কোনও মানুষকে বিকৃত করে ডেকোনা।’
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর আরশের নিচে সাত শ্রেণীর মানুষ ছায়া পাবে। তার মধ্যে ন্যায় বিচারকরা প্রথমেই রয়েছেন। আপনাদের (ট্রাইব্যুনাল) কাছ থেকে সেই ন্যায় বিচার আশা করি। তাই আপনি ন্যায় বিচার করবেন। তিনি বলেন, বিচারকদের নিরপেক্ষতা, বিবেক, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা না থাকলে সুবিচার নিশ্চিত হয়না।
‘৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক যুগের বেশি সময় আমাকে নিয়ে কোনও কথা হয়নি। ১৯৮০ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয়ার পর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় আমাকে গ্রেফতারের পর। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয়। সেই সংসদে আমি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলাম, আমি রাজাকার নই। সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও এক্সপাঞ্জ করা হয়নি।’
বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, ‘সাঈদী সাহেব তারা (রাষ্ট্রপ) যদি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে আপনি মুক্তি পাবেন।’
তখন মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ’ । এই বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। মাওলানা সাঈদীর বক্তব্যের সময় আদালতে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করে। । প্রসিকিউটর কিংবা সরকার পক্ষে নিযুক্ত কেউই এ বক্তব্যের বিরোধিতা কিংবা দ্বিমত পোষণ করেননি। সবাই সম্মোহিতের মত এই খ্যাতনামা আলেমে দ্বীনের বক্তব্য শোনেন। বক্তব্য শোনার পর ট্রাইব্যুনাল ৩০ অক্টোবর থেকে অভিযোগের ওপর শুনানি শুরুর দিন ধার্য্য করেন।
হে আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম ৭১ এর কোন কাদা আমার গায়ে লাগেনি। আমি মজলুম তোমার কাছে বিচার চাই
ছেলের জানাজার পূর্বে মাওলানা সাঈদী
১৪/৬/২০১২
হে আল্লাহ আমি মজলুম। আল্লাহ আমি তোমার কাছে বিচার চাই। আমি গত ৫০ বছর ধরে সারা দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তোমার কোরআনের কথা প্রচার করেছি। আজ আমাকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। ও আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম, তোমার জাতের কসম, তুমি সাক্ষী ১৯৭১ সালের কোন কাদা এবং কাদার এক ফোটা পানিও আমার গায়ে লাগেনি।
আজ বৃহষ্পতিবার ১৪/৬/২০১২ বড় ছেলে রাফকী বিন সাঈদীর জানাজার নামাজের পূর্বে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একথা বলেন। মতিঝিল বয়েজ স্কুল মাঠে সন্ধ্যার পূর্বে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিশাল মাঠের গন্ডি পেরিয়ে পুরো রাজারবাগ, শাহজাহানপুর এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে পড়ে ওই এলাকার সকল রাস্তাঘাটের চলাচল ব্যবস্থা।
মাওলানা সাঈদী অগনিত মানুষের সামনে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, হে আল্লাহ আমি তোমার জন্য শহীদ হতে প্রস্তুত আছি। তবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে, হত্যাকারী হিসেবে, ধর্ষণকারী হিসেবে, চোর, লন্ঠনকারী হিসেবে আমি ফাঁসি কেন একদিনেরও সাজা চাইনা। এসব অপবাদ নিয়ে আমি মরতে চাইনা। হে আল্লাহ আমি মজলুম। মজলুমের দোয়া এবং তোমার মাঝে কোন পর্দা নাই। আমি তোমার কাছে বিচার চাই।
এরপর মাওলানা সাঈদী বলেন, হে আল্লাহ তুমি হয় জালিমকে হেদায়েত দাও না হয় তাদের বিদায় কর। হে আল্লাহ ১৬ কোটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশকে তুমি কাশ্মীর বানিওনা, আফগান বানিওনা, ইরাক বানিওনা। বাংলাদেশকে তুমি রক্ষা কর।
হে আল্লাহ মুসলমানের দেশে আজ মুসলমান তার পরিচয় নিয়ে চলতে পারেনা। তাদের বেইজ্জতি করা হচ্ছে।
মাওলানা সাঈদী বলেন, আমার কোরআন প্রচার নাস্তিকক্যবাদীরা পছন্দ করেনা। সে কারনে আমাকে বন্দী করে রেখেছে।
৬টা ১০ মিনিটে মাওলানা সাঈদীকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশী নিরাপত্তায় মাঠে নিয়ে আসা হয়। এসময় উপস্থিত জনতা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকাবর বলে স্লোগান দেয় তারা। তবে জানাজা আয়োজক কর্তৃপক্ষ মাইকে তাদের কোন ধরনের স্লোগন দিতে নিষেধ করেন এবং মাওলানা সাঈদীকে নির্বিঘেœ মাঠে প্রবেশে সহায়তা করতে অনুরোধ করেন।
মাওলানা সাঈদী ছেলের লাশের কাছে আসলে জানাজা আয়োজক কর্তৃপক্ষ মাওলানা সাঈদীকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে সালাম জানানোর অনুরোধ করেন তাকে পাহারাত পুলিশের প্রতি।
এরপর মাওলানা সাঈদী মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে সালাম দেন। এরপর ইন্নালিল্লাহ পড়েন। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্নার রোল এসময় ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত শোকাহাত হাজারো জনতার মাঝে। সবাই হুহু করে কাঁদতে থাকেন মাওলানার সাথে।
কান্না থামিয়ে মাওলানা সাঈদী এরপর বলেন, হে আল্লাহ কয়েক মাস আগে এই এখানে আমি আমার মায়ের জানাজা পড়িয়েছি।
আমাকে আমার বাসায় যেতে দেয়া হয়নি। আমাকে আমার পরিবার পরিজনের সাথে বাসায় গিয়ে মিলিত হতে দেয়া হয়নি।
আজ এখানে আমার ছেলে আমার কলিজার টুকরার জানাজায় আমাকে নিয়ে আসা হল।
হে আল্লাহ দুনিয়াতে সবচেয়ে ভারী বোঝা হল পিতার কান্ধে পুত্রের লাশ। আমার ছেলে রাফীককে আমি বলতাম তুমি আমার জানাজা পড়াবা। রাফীক বলত না তুমি আমার জানাজা পড়াবা। আজ আমি তার জানাজা পড়াচ্ছি। এসময় আবার তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সাথে সাথে কাঁদতে থাকেন জানাজার উদ্দেশে আগতরা।
মাওলানা সাঈদী বলেন, আমার বড় ছেলে গতকাল বুধবার বিকালে মারা গেছে। আজ আছরের সময় আমাকে জানানো হয়েছে। একথা বলে তিনি আবারো কাঁদতে থাকেন।
মাওলানা সাঈদী বলেন, হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা, হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা, হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা রাফীককে তুমি বেহেশত দান কর। তার কবরকে তুমি জান্নাতের টুকরা বানিয়ে দিও। তার কবরের সাথে তুমি জান্নাতের সরাসরি রাস্তা করে দিও। বেহেশতে তুমি তার সাথে আমাকে মিলিত করে দিও।
মাওলানা সাঈদী বলেন, আমার ছেলে গতকাল ট্রাইব্যুনালে ছিল । কোর্ট রুম থেকে বের হয়ে যাবার সময় আমাকে বলে যেতে পারেনি। আমি বুঝতে পারিনি ওটাই ছিল আমার সামনে তার শেষ যাত্রা।
এরপর মাওলানা সাঈদী উপস্থিত সবাইকে নিয়ে তাহ তুলে দোয়া করেন আল্লাহর দরবারে।
তিনি বলেন, হে আল্লাহ রাফীকের তিনটা ছেলে মেয়ে আছে। আমি তার সন্তান এবং তার স্ত্রীকে তোমার উপর সোপর্দ করলাম।
তারপর সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি জানাজা পড়াতে শুরু করেন তিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন