শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী-২ যুদ্ধাপরাধ থেকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ

মেহেদী হাসান
যুদ্ধাপরাধী এবং মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এদেশীয় সহযোগী সম্পূর্ণ ভিন্ন  দুটি বিষয় । সেজন্য তাদের বিচারের  জন্য  দুটি পৃথক আইন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সহযোগীদের বিচারের জন্য করা হয় দালাল আইন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালল) এ্যাক্ট। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে  যাদের চিহ্নিত  করা হয়েছিল তারা সকলেই (১৯৫ জন) ছিল পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা।

বর্তমান সরকার এদেশীয় সহযোগীদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। যুদ্ধপারধী বলতে যেহেতু পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বোঝায় তাই  সরকার যুদ্ধাপরাধী শব্দের বদলে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ শব্দটি ব্যবহারের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী বলতেও  মূলত পাকিস্তানী ঐ সেনাকর্মকর্তাদেরই বোঝানো হয়েছে সবসময়।  অতীতে কখনোই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এদেশীয় সহযোগী বা পাকিস্তান সমর্থনকারীদের যুদ্ধাপরাধী বা মনাবতার বিরুদ্ধে অপরাধী হিসেবে অভিহিত করা হয়নি। এমনকি বর্তমানে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের  তো নয়ই। ১৯৭৪ সালে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় চুক্তি, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা,  পাকিস্তানের হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট,  দালাল আইন, দালাল আইনে করা অসংখ্য মামলা এবং সেসময়কার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরা-খবর এর  স্বাক্ষর বহন করছে।  

যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করা বিষয়ক ১৯৭৪ সালে দিল্লীতে স্বাক্ষরিত ত্রিদেশীয়  চুক্তির   ১৩ দফায়  লেখা হয়েছে-“বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ড. কামালা হোসেন) বলেন যে,  পাকিন্তানী  যুদ্ধাপরাধীরা  বিভিন্ন ধরণের অপরাধ যেমন যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার মত অপরাধ করেছে।”  চুক্তির এ ধারায়ও  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী বলতে  পাকিস্তানী ঐ সেনাকর্মর্তাদের বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশী সহযোগীদের নয়।

১০ জুন  ১৯৭৪ সালের ইত্তেফাক পত্রিকার একটি  খবরের শিরোনাম হল “পাকিস্তান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করিয়াছে: এ্যমনেস্টি  ইন্টারন্যাশনাল সম্মেলনে অভিমত। প্রতিবদেনে লেখা  হয়েছে-প্যারিসে
এ্যমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত নির্যাতনের অবসান সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়েছে। সম্মেলনে বলা হয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

এছাড়া বাংলাদেশে পাকিস্তানের পরাজয়  এবং ভারতের কাছে পাকিস্তানী সৈন্যদের  আত্মসমর্পনের কারণ খুঁজে বের করতে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই  পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। হামুদুর রহমান কমিশন প্রতিবেদনেও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে।
সুতরাং  যুদ্ধাপরাধীর পরিবর্তে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ শব্দ ব্যবহার করলেই যুদ্ধাপরাধের দায় একজনের ওপর থেকে অপরজনের ওপর বর্তাবে বিষয়টি এমন কি?


এই সাইটের যেকোন লেখা, তথ্য উপাত্তা যেকেউ ব্যবহার, পুনমুদ্রন, পুন প্রচার, প্রকাশ করা যাবে; তবে শর্ত হল সূত্র হিসেবে Mehedy Hasan https//www.bangladeshwarcrimestrial.blogspot.com  উল্লেখ/লিঙ্ক  করতে হবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন