বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

শেষ হচ্ছে পুনশুনানী

২৮/১/২০১৩
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আগামীকাল শেষ হচ্ছে। আজ  আসামী পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছে।  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আজ   ট্রাইব্যুনালে জানানো হয়েছে তাদের এক ঘন্টার মত সময় লাগবে আসামী পক্ষের যুক্তির জবাব দিতে।  রাষ্ট্রপক্ষের জবাব প্রদান শেষ হলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বিচারের সমস্ত কার্যক্রম শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী  মামলার কার্যক্রম শেষে রায়ের তারিখ ঘোষনা করা হয়। সে হিসেবে আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ের তারিখ ঘোষনা  করা  হতে পারে।

এর আগে গত বছর ছয় ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে যেকোন দিন রায় ঘোষনা হবে মর্মে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।  এরপর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম  স্কাইপ কেলেঙ্কারির কারনে পদত্যাগ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে।  বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন তার স্থলে। ট্রাইব্যুনালে চেয়্যারম্যান বদল হবার প্রেক্ষাপটে মাওলানা সাঈদীর মামলায় যুক্তিতর্ক পুনরায় শুনানীর  আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষকে দুই দিন এবং আসামী পক্ষের জন্য তিন দিন বরাদ্দ করা হয় যুক্তি উপস্থাপনের জন্য। সে হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ প্রথমে দুইদিন যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর আসামী পক্ষ  প্রায় ছয়দিনের মত সময় নেয় যুক্তি উপস্থাপনের জন্য।  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক গতকাল   সাড়ে তিনটায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
যুক্তি উপস্থাপনের সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা  যে পরিমান প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন  এবং সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারির পর  দেশবাসীর কাছে ট্রাইব্যুনালের গ্রহণ যোগ্যতা শুন্যের কোটায়  চলে গেছে।
গতকাল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১৯.২ ধারায় গ্রহণ করা ১৬ সাক্ষীর জবানবন্দী এবং সেফহাউজ ডকুমেন্ট বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২০ মার্চ ৪৬ জন সাক্ষীর একটি তালিকা দিয়ে দরখাস্ত করে জানায় যে, এসব সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। এই ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রখ্যাতা যাদু শিল্পী জুয়েল আইচ, হুমায়ূন আহমেদ এর ভাই লেখক প্রফেসর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল,  ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন, সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট এবং হুমায়ূন আহমেদ এর ভগ্নিপতি আলী হায়দার খান, হুমায়ূন আহমেদের বোন সুফিয়া  হায়দার এর নাম ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ছয়জন লোককে হাজির করা কেন অসম্ভব হল রাষ্ট্রপক্ষের জন্য? শাহরিয়ার কবির তো ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সদা সোচ্চার রয়েছেন।  আলী হায়দার খান তো এই ট্রাইব্যুনাল থেকে মাত্র দু’শ গুজ দূরে হাইকোর্টে প্রাকটিস করেন। জাফর ইকবাল এবং সুফিয়া হায়দারের পিতা ফয়জুর রজমানকে হত্যার অভিযোগ সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে। তারা কেন তার পিতার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসলেননা? 
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৪৬ জনের তালিকায়  উক্ত ছয় জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় তদন্ত কর্মকর্তা কি পরিমান প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন।  শাহরিয়ার কবির একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন তিনি সাঈদীর মামলা কোন সাক্ষী নন। জুয়েল আইচ বলেছেন তাকে কোন কিছূ জানানো  হয়নি। জাফর ইকবাল বলেছেন তিনি তার পিতার হত্যার বিচার চান কিন্তু সাঈদী তার পিতার হত্যার বিষয়ে জড়িত কি-না তা না জেনে কিভাবে সাক্ষ্য দেবেন।  যারা সাক্ষী নন তাদের নামে তদন্ত কর্মকর্তা জবানবন্দী লিখে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন করেছেন ট্রাইব্যুনালে। এর চেয়ে বড় জালিয়াতি আর কি হতে পারে?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হেগে আমরা দেখেছি  এ ধরনের মামলায় ভুক্তভোগীরা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোর্টের সামনে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। ৪০ বছর পর  বিচার হচ্ছে। জাফর ইকবাল, সুফিয়া  হায়দারদের তো দৌড়ে আসা উচিত ছিল এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। তাদের মাও জীবিত আছেন। তাদের আসা উচিত ছিল তার পিতার হত্যার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা কেউ আসলেননা। ফয়জুর রহমানের স্ত্রী জীবন যেরকম নামে একটি বই  লিখেছেন। সেখানে মাওলানা সাঈদীর নামও তিনি কোথাও   উল্লেখ করেননি। লেখক হুমায়ূন আহমেদ জোছনা ও জননীর গল্প বইয়েও তার পিতার হত্যার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন  কিন্তু সেখানেও  মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

তিনি বলেন, যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে তা তদন্ত কর্মকর্তা  কর্তৃক রচিত। তা তাদের জবানবন্দী নয়। একই জবানবন্দী নাম ঠিকানা বদল করে কপি পেস্ট করে আরেকজনের নামে চালয়ে দেয়া হয়েছে। তার পক্ষে তিনি কয়েকটি উদাহরন তুলে  ধরেন।

এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সেফ হাউজের সত্যতা বিষয়ে সেফ  হাউজের ডকুমেন্ট থেকে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন প্রমান হিসেবে।  তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনেককে রাষ্ট্রপক্ষের হেফজতে সেফহাউজে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন।   তার সমস্ত ডকুমেন্ট আমরা ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছি। সেফ হাউজের ডকুমেন্টর এর সত্যতা বিষয়ে কফেকটি উদাহরন পেশ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেফ হাউজের  নামে তিনটি টেলিফোন লাইন বরাদ্দ নেয়া হয়। তিনটি নম্বরের বিপরীতে যে টেলিফোন বিল জমা দেয়া হয়েছে তা আমরা বিটিআরসি থেকে সংগ্রহ করেছি। বিটিআরসির সে টেলিফোন বিলে যে ঠিকানা রয়েছে এবং সেফ হাউজের ঠিকানা একই। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন এই  এই ডকুমেন্ট কি কারো পক্ষে তৈরি করা সম্ভব?

আজ যুক্তি উপস্থাপনে  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী জবাব  প্রদান  শুরু করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন