বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

চুরি বিষয়ক প্রশ্নে আপত্তি

মেহেদী হাসান, ৩/১/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীর জেরার সময়   একটি প্রশ্নের উত্তর বলে দিলেন রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী ।  তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের  অপর আইনজীবী  সৈয়দ   হায়দার আলীকে  উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি দেখতে চাই আপনি তার বিরুদ্ধে  এজন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন।
আজ  সকালে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  নবম সাক্ষী  আলতাফ হোসেন জবানবন্দী দেন। এরপর তাকে জেরা শুরু করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম । তিনি সাক্ষীকে  প্রশ্ন করেন “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আপনার দেখা হয়নি”
। সাক্ষী এ  প্রশ্নের জবাব দিতে একটু সময় নিচ্ছিলেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী   সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দেখছি।”

২০১১ সালের  সাত ডিসেম্বর থেকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা শুরু করেন।  জেরা শুরুর পর থেকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ করে আসছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।  রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষীদের  আকার ইঙ্গিতে, মাথা নেড়ে  উত্তর বলে দেয়ার চেষ্টা, একটু পর পর প্রশ্ন বিষয়ে আপত্তি  তুলে  জেরায় বাঁধা সৃষ্টি বিষয়ে অনেকবার অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আদালতে তারা  প্রটেকশনও দাবি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের  ব্যাপারে। আদালতও  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। এমনকি সাইদুল ইসলাম নামে  রাষ্ট্রপক্ষের  একজন আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এরপর প্রয়োজনে আদালত  কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হবে। 

আজ  জেরার সময় নবম সাক্ষী আলতাফ হাওলাদারকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী প্রশ্ন করেন চিত্ত সাধুর  মাছ চুরির কারনে আড়াই হাজার টাকা  এবং জয়নাবের মুরগী চুরির কারনে ১২শ টাকা জরিমান হয় আপনার বিরুদ্ধে।  তখন  সাক্ষী এর তীব্র বিরোধীতা করে বলেন, আমার জীবনে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নাই।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে তখন সাক্ষীকে হেয় করা হচ্ছে মর্মে আপত্তি উত্থাপন করা হয়। আদালত তখন  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে বলেন, বিষয়টি কোর্টে উঠেছিল কি-না। মিজানুল ইসলাম  আদালতকে জানান, গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা হয় এবং তাকে জরিমানা করা হয়। আদালত তখন বলেন বিষয়টি রেকর্ডে  যাবেনা।  মিজানুল ইসলাম তখন আদালতে নিবেদন করে বলেন, আমাদের এ বিষয়ে সাক্ষী আছে। সেজন্য বিষয়টি রেকর্ড রাখা দরকার।   আদালত তখন বলেন, আপনাদের সাক্ষীদের  মুখ দিয়ে বলিয়েন এবং আজকের রেফারেন্স  প্রসঙ্গে বিষয়টি উল্লেখ করিয়েন। মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বিষয়টি রেকর্ডে রাখার জন্য দরখাস্ত  জমা দেয়ার আবেদন করেন। আদালত অনুমতি দিলে তিনি দরখাস্ত জমা দেন চুরি বিষয়ক প্রশ্নটি নথি হিসেবে রাখার জন্য।


১৯৭১ সালে পারেরহাটে  পাক আর্মি আসা, পারেরহট  মুক্ত হওয়া, রাজাকারদের পোষাক নিয়ে ইতোপূর্বে  সাক্ষীরা যেসব তথ্য দিয়েছেন তার সাথে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়েছে গতকাল নবম সাক্ষীর দেয়া তথ্যের সাথে। বিশেষ করে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের বিষয়ে ।   যেমন গতকাল নবম সাক্ষী আলতাফ হোসেন জেরার সময় বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মে’র আগে রুহুল আমিন নবিন  এলাকা ছেড়ে চলে যান। ঐ তারিখ তিনি পারেরহাট ছিলেননা। 


গত বছর ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবীন আদালতে সাক্ষ্য দেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালে ৭ এবং  ৮ মে  পারের হাট এবং আশপাশের গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, শান্তি কমিটির  সেকেন্দার  আলী শিকদার, দানেস মোল্লা, মাওলানা মোসলেহউদ্দিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবসহ আরো কয়েকজন  শান্তি কমিটির লোকজন ৭ মে পারেরহাট রিক্সা স্ট্যান্ডে পাক আর্মিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।  পাক আর্মি আসার পর শান্তি কমিটির লোকজন পাক হানাদারদের নিয়ে পারেরহাট বাজারে  প্রবেশ করে  এবং  আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের বাড়িঘর দোকানপাট দেখিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন এজাজ অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে উর্দুতে বলেন ‘লে লও”।  শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের দেখিয়ে দেওয়া ঘরগুলোতে   শুরু হয় লুটপাট।  পারের হাট বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন  সাহার দোকানের মাটির নিচের লোহার সিন্দুক থেকে ২২ শের স্বর্ণ ও রূপা লুট করে। ৩০/৩৫টি দোকান ঘর লুটাপাট চালায়। পরের দিন ৮ মার্চ বাদুরা চিথলিয়া গ্রামে সাত আটটি ঘরে  লুটাপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
অথচ  গতকাল সাক্ষী আলতাফ হাওলাদার জানালেন রুহুল আমিন নবীন ৭ মে’র আগেই পারেরহাট ছেড়ে চলে যায়। কার কতা সত্য রুহুল আমিন নবিন না আলতাফ হাওলাদার?

সকালে আদালতে নবম সাক্ষী আলতাফ হাওলাদারের  জবানবন্দী শেষ হলে   রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে বলেন, আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন তিনি উপস্থিত আছেন কিনা দেখে বলেন। তখন সাক্ষী  ডকে বসা মাওলানা সাঈদীর দিকে তাকিয়ে বলেন, “তাকে তো চিনতে পারলাম না?”
তখন আইনজীবী বলেন না চিনলে কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক বলেন, “ওয়েল নোন পারসনকে সনাক্তকরনের দরকার হয়না।”
 জবানবন্দীর সময় সাক্ষী বলেন, মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে  এক রাজার বিশাবালীকে গুলি করে হত্যা করে।  এ ঘটনা তিনি  দেখেছেন। কিন্তু  একটু পরেই তিনি মাওলানা সাঈদীর দিকে তাকিয়ে বলেন, তাকে তো চিনতে পারলামনা।

ইতোপূর্বে যতজন সাক্ষীকে  জেরার সময় রাজাকারদের পোষাক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে তারা সবাই এক বাক্যে বলেছেন  তারা রাজাকারদের খাকি পোষাকে দেখেছেন। কিন্তু  গতকাল আলতাফ হাওলাদারকে প্রশ্ন করা হয় “রাজাকারদের  কি খাকি পোষাক ছিল?” এর উত্তরে তিনি জানান “যার যার পোষাক পরেছে। যার পরনে যা ছিল তা পরে আইছে। পরে কি পোষাক  পরেছে তা জানিনা।”


নবম সাক্ষীর জবানবন্দী:
মে মাসের  সাত তারিখ পাক আর্মি পারেরহাট বাজারে আসে। পাক আর্মি আসার  ছয়/সাত দিন আগে  সেকেন্দার শিকদার, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লার নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠন হয়। তারপর রেজাকার বাহিনী গঠন হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতত্বে। শান্তি কমিটির লোকজনই রেজাকার বাহিনী গঠন করে।

এ বাহিনী গঠনের পর পারেরহাট বন্দরে ৩০/৩৫টি  দোকান ঘর  এবং ববাসা বাড়ি লুটপাট করে । পারেরহাট এবং তার আশপাশে যা কিছুই ঘটে যেমন অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষন সবই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
১৯৭১ সালের ২ জুন মামার বাড়ি উমেদপুর গ্রামে যাই। যাবার পথে   রাস্তায় দাড়িয়ে দেখি  একদল পাক হানাদার বাহিনী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আরো অনেক রাজাকার  উমেদপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ায় ঢুকছে। এ ঘটনা দেখার জন্য রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে চলে যাই। যাবার পর দেখি পাক হানাদার বাহিনী  এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হিন্দু পাড়ার ঘরে ঢুকে মালামাল লুট করে। ১৮/২০টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ইতোমধ্যে বিশাবালীকে ধরে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে রাজাকাররা মারিপট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পাক হানাদার বাহিনীর সাথে কি যেন আলাপ আলোচান করল। তখন সাঈদী সাব বলে, শালাকে গুলি কর। এ কথা বলার পর একজন রাজাকার রাইফেল বা পিস্তল ঠিক বলতে পারবনা,  লম্বা লম্বা দেখেছি,  তা দিয়ে গুলি করে। গুলি করার  সাথে সাথে মা বলে চিৎকার  দেয়। আমি ভয়ে কাতর হয়ে  ঐ জঙ্গলের আরো গভীরে চলে যাই। এরপর মামার বাড়ি গিয়ে দুপুরে খেয়ে  অনেকের সাথে বিকালে পোড়াবাড়ি দেখতে যাই। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি লাশটা গেল কোথায়। অনেকে লক্ত টক্ত দেখতে পায়। আমিও রক্ত দেখি। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি ওকে খালে ফালাইয়া দিছে।

তারপর জুন মাসের মাঝামাঝি সময় আমি একদিন পারেরহাট বাজারে যাই বাজার করতে।  বাজারের উত্তর মাথায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাবসহ অন্যান্য কয়েকজন রাজাকার এবং সাধারন লোকজন নিয়ে মদন সাহার দোকান ভেঙ্গে নৌকাযোগে তার শ্বশুরবাড়ি ইউনুস মুন্সির বাড়িতে নিয়ে যায়। 
নবম সাক্ষীর জেরা:
আইনজীবী: আপনার গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি?
সাক্ষী: না, সাধারন সম্পাদক।
আইনজীবী: মাওলানা সাঈদী সাহেবকে ১৯৭১ সালের কতদিন আগে থেকে চিনতেন?
সাক্ষী: অনুমান ৭/৮ বছর।
আইনজীবী: যখন তাকে চিনতেন তকনব কি তিনি বিবাহিত ছিলেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: সর্বপ্রথম তাকে আপনি কোথায় দেখেন?
সাক্ষী: পারেরহাটে।
আইনজীবী: পারেরহাটে তিনি কি করতেন?
সাক্ষী: দোকানদারি করতেন।
আইনজীবী: কিসের দোকান?
সাক্ষী: তেল, নুন মরিচ, সাবান।
আইনজীবী:  তিনি চট বিছিয়ে উপরে চটের ছাউনি দিয়ে দোকানদারি করতেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: তিনি শুধু হাটের দিন দোকানদারী করতেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: সাঈদী সাহেবের মত  আরো যারা অস্থায়ী দোকানদার ছিল তাদের কারো নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী:  জীবন মালাকারের পোলা, টেংরাটিলার মজিদ।
আইনজীবী:  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বাড়ি কোথায় বলতে পারবেন?
সাক্ষী: সাউথখালি।
আইনজীবী: তার পিতাকে চিনতেন?
সাক্ষী: চিনতামনা। নাম শুনেছি।
আইনজীবী:   দেশ স্বাধীন হবার কতদিন পর প্রথম  মাওলানা সাঈদীকে দেখলেন?
সাক্ষী: ইন্দুরকানী বজারে দেখেছি। কবে দেখেছি মনে নেই।
আইনজীবী: ১৯৭২-৭৩ সালে দেখেছেন?
সাক্ষী: দেশ স্বাধীন হবার পর বাজারে গিয়ে দেখেছি।
আইনজীবী: স্বাধীনতার আগে তাকে ওয়াজ করতে শুনেছেন?
সাক্ষী: আগে শুনিনাই। পরে শুনেছি।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে মাওলানা সাঈদীর কোন ছেলে মেয়েকে দেখেছেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: পারেরহাটে যে বাড়িতে মাওলানা সাঈদী থাকতেন তা  তা দেখেছেন?
সাক্ষী: পারেরহাটে তার বাড়ি ছিলনা। শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।
আইনজীবী:  তার শ্বশুরবাড়ি  গেছেন কখনো>
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনি পিরোজপুর আদালতে মাহবুবুল আলমের মামলায় সাক্ষী হিসেবে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাতে মাওলানা সাঈদী বিশাবালীকে গুলি করার নির্দেশ দেন এবং  আপনি তা দেখেছেন  একথা বলেননি।
সাক্ষী: বলেছি।

এ পর্যায়ে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী ১৯৯৩ সালে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি কর্তৃক গঠিত গন তদন্ত কমিশনের  সেক্রেটারিয়েটে এর ৪০ জন সদস্যসহ প্রায় ৬০ জন ব্যক্তির নাম  একজন একজন  করে  উল্লেখ করে সাক্ষীর কাছে জানতে চান তিনি এসব নাম শুনেছেন কি-না। এর মধ্যে  তিন চার জনের নাম তিনি শুনেছেন বলে জানান । জাহানারা ইমাম, অ্যডভোকেট গাজিউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ,  কবির চৌধুর, কলিম শরাফী, লে, কর্নেল অব,  কাজী নুরুজ্জামান, লে. কর্নেল অব আবু ওসমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার শওকত আলী খানসহ ৪০ সদস্যের  গণতদন্ত কমিশনের সদস্য   তকালীন এ্যাডভোকেট নিজামুল হক এবং এ্যাডভোকেট  জেয়াদ আল মালুমের  নামও  তিনি শুনেছেন কি-না জানতে চাওয়া হয়।

প্রায় ৬০ জনের নাম ধরে প্রশ্ন করার পর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন “ এসব ব্যক্তি বা এদের পক্ষে কেউ কখনো  কি আপনার কাছে ১৯৭১ সালের ঘটনা জানতে চেয়েছেন?”।

সাক্ষী বলেন “মনে পড়েনা”
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এ প্রশ্ন বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আপত্তির পেছনে যুক্তি চানতে চান।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার  আলী বলেন, এই লোকগুলোকে জড়িয়ে সাক্ষীকে প্রশ্ন করার মধ্যে এই বিচারের এবং তার দেয়া জবানন্দীর সাথে কি সম্পর্ক আছে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। তাছাড়া আজ এতগুলো নাম জিজ্ঞেস করল। কাল ৫শ নাম জিজ্ঞেস করবে।

 মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী নিজামুল হক  রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীর বিরোধীতা করে বলেন, যাদের নাম বলা হল এদের সমন্বয়ে  একটি গন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তারা মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে  ঘটনা তদন্ত করেছে। তদন্ত করার সময় হয় তারা পিরোজপুর গেছেন, আর তদন্ত না করলে ভিন্ন কথা। তদন্তের সময় এদের কেউ এই সাক্ষীর কাছে গেছেন কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন করা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। কারণ এরা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন এবং তার ওপর ওনারা নির্ভর করছেন। ঐ তদন্ত রিপোর্ট তারা তদন্ত করে তৈরি করেছেন সে বিষয়ে জানার অধিকার আমাদের আছে। কারণ এই ডকুমেন্ট আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে  ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের নামকরা এই  ভদ্রলোকেরা ঐ রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্ট তৈরির সময় হয় তারা এলাকায় গেছেন অথবা তাদের পক্ষে অন্যরা কেউ এলাকায় গিয়ে তদন্ত করেছেন। তারা কোথায় কিভাবে সাক্ষীদের জবানবন্দী নিলেন, কিভাবে মানুষকে  সাক্ষী দেয়ার জন্য আহবান জানালেন, বর্তমান এই সাক্ষী তাদের কাছে জবানবন্দী দিয়েছিল কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন না করলে আমরা কিভাবে জানব বিষয়টি।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর এ যুক্তির পর আদালত বলেন, সামান্য পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রশ্নটি গ্রহণ করা হল।
এরপর নবম সাক্ষীর জেরা অসমপ্ত রেখে আজকের মত শেষ হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন