বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

হত্যা, ধর্ষন, লুটপাটের অভিযোগ চতুর্থ সাক্ষীর জবানবন্দিতে

মেহেদী হাসান, ২১/১২/২০১১
মিজানুর রহমানের জেরা শেষ হলে আজ চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সুলতান আহমদ হাওলাদারের সাক্ষ্য গ্রহণ  করেন আদালত। সাক্ষ্যে তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগ আনেন। ভানুসাহা নামে এক হিন্দু মহিলাকে মাওলানা সাঈদী নিয়মিত ধর্ষন করতেন বলে অভিযোগ করেন।

সুলতান আহমেদ বলেন, তার বয়স ৬০ বছর। ১৯৭১ সালে তিনি  পিরোজপুর সোহরাওয়াদী কলেজের   ছাত্র ছিলেন। পিরোজপুরে পাক বাহিনী আসার খবর পেয়ে তিনি গ্রামে চলে যান। গ্রামে গিয়ে  জানতে পারেন জামায়াত নেতা সেকেন্দার  আলী শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী, মোসলেম মাওওলানা এদের নেতৃত্বে পিস কমিটি গঠিত হয়। দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদীর নেতৃত্বে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র এবং স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের  লোকদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। 
সুলতান আহমদ বলেন, বাজারে এবং আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে পাক বাহিনী, পিস কমিটি এবং রাজাকারদের কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করি।   পাক বাহিনী  পাড়েরহাটে আসার পর উপরে বর্নিত পিস কমিটির নেতৃবৃন্দ পাক পাহিনীকে স্বাগত জানায় এবং বাজারে নিয়ে   যায় লুটপাটের জন্য। দেলোয়ার হোসেন বর্তমান সাঈদী হাত উচু করে তাদেরকে হিন্দু  সম্প্রদায় এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির দোকান ও বসতঘর দেখিয়ে দেয়।  বাজারে লুটপাট এবং মানুষের ছোটাছুটি শুরু হলে আত্মীয়ের বাসায় চলে যাই।  পরে আবার বাজারে এসে জানতে পারি ৩০/৩৫টি ঘর লুট হয়েছে। দেলোয়ার হোসেন বর্তমান সাঈদীর নেতৃত্বে লুটের মাল খেয়াঘাটের সামনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আরো শুনতে পেলাম মাখন সাহার ঘর থেকে ২২ শের সোনা রূপা উদ্ধার করা হয়েছে যা  ক্যাপ্টেন  এজাজ নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি এবং গিয়ে দেখি খেয়াঘাটে অবস্থিত নগরবাসী সাহার  ঘর দখল করে লুটের মালামাল  এর সাহায্যে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে যার পরিচালক  ছিলেন দেলোয়ার হোসেন  শিকদার বর্তমানে সাঈদী।
সুলতান আহমদ বলেন, পিস কমিটির উল্লিখত নেতৃবৃন্দ মানিক পসারীর বাড়ির কর্মচারী ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে বাজারের মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে যায়। আমরা তখন  ব্রিজের এপার বসে লক্ষ্য করি উত্তর দিকে থানার ঘাটে নিয়ে দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী পাক আর্মির সাথে কি যেন বলাবলি করছে। এরপর গুলি এবং চিৎকারের শব্দ শুনি। পরের দিন জানতে পারি ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে পানিতে ভাসিয়ে  দিয়ে মফিজকে বেঁধে ক্যাম্পে নিয়ে গেছে।
সুলতান আহমদ আদালতে বলেন দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী উর্দু এবং আরবি ভাষা ভাল জানায় এবং বাকপটু হওয়ায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সকল প্রকার যোগাযোগসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড তার নির্দেশেই পরিচালিত হত। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর লোকেরা পাক হানাদার বাহিনীকে পাকিস্তান রক্ষার জন্য সর্বপ্রকার অঙ্গীকার করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী তার অনুগতদের নিয়ে নিরিহ মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষনের অপরাধ করতে থাকে।   বিপদ সাহার মেয়ে ভানুসাহাকে দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী এবং মোসলেম মাওলানা নিয়মিত ধর্ষন করত।

আজ  আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মানিক পসারীর। কিন্তু তিনি আদালতে আসতে না পারায় পঞ্চম স্থানে   থাকা সুলতান আহমেদ হাওলাদার সাক্ষ্য দেন। সাড়ে ১২টার মধ্যে তার  সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে  আদালত মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরা   শুরু করার নির্দেশ দেন । তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা   সময় চান এবং আজকের  মত আদালতের কার্যক্রম মুলতবী করা হয়। 
এদিকে মাওলানা সাঈদী অসুস্থ বোধ করায় তার আইনজীবীরা চিকিৎসার  আবেদন করলে আদালত জেল কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ফিজিও থেরাপী দেয়ার নির্দেশ দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন