বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

সাক্ষী বললেন আমি চারবার জেল খেটেছি// অপর সাক্ষীর নাম রাজাকার তালিকায়


মেহেদী হাসান, ২৫/১/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  আজ   দুজন সাক্ষীর  জেরা   শেষ হয়।   ১৫ তম সাক্ষী সোলায়মান হোসেন বলেন, তিনি চারবার জেল খেটেছেন। অপর সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম পাওয়া গেছে   একটি বইয়ের রাজাকার তালিকায়।  এরা দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

১৫ তম সাক্ষী সোলায়ামান হোসেন গতকাল   জবানবন্দী দেন আদালতে। আজ  সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। জেরার সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি সরকারি চাকরি করা অবস্থায় দুবার হাজতে যান।  রাজনৈতিক মামলায়  দুইবার হাজতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন সাক্ষী। এরপর তার জেরা শেষ হলে আদালত তার কাছে  দুইবার হাজতে যাওয়া বিষয়ে স্পষ্ট করে জানতে চান। এসমসয় সাক্ষী  সোলায়মান হোসেন বলেন দুইবার নয় আমি চারবার জেল খেটেছি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু  হত্যাকান্ডের পর, ১৯৮৭ সালে এরশাদের আমলে  এবং   ১৯৯৫  ও ২০০৪ সালে আরো দুইবার। সবগুলো গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে রাজনৈতিক কারনে । কোন দুর্নীতির কারনে নয়। তবে তিনি কোন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ছিলেননা বলেও স্বীকার করেছেন।

সাক্ষী সোলায়ামন হোসেনের জেরা শেষে  ১৬ তম সাক্ষী হিসেবে জুলফিকার আলীর  জবানবন্দী শুরু হয় বেলা পৌনে একটার সময়। জেরার  সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবরা  আদালতে একটি বই  দেখিয়ে বলেন যশোরের রাজাকার তালিকায়  সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম রয়েছে।  যশোরে গত ৪০ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত যশোরের পরিরিচত সাংবাদিক লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধা  রুকুনউদ্দৌলাহ লিখিত ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’ শীর্ষক বই আদালতকে  দেখান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।  বইয়ের ১৬৮ পৃষ্ঠায় রাজাকারদের তালিকায় সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম রয়েছে বলে জানান তারা। সাক্ষী রাজাকার থাকার কথা তীব্রভাবে অস্বীকার করে বলেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন  এবং রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তাকে সাতদিন নির্যাতন করে চামড়া কেটে নিয়েছিল রাজাকাররা।
 আজ  যে দুজন সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষী দিয়েছেন তাদের দুজনের বাড়িই যশোর।

সাক্ষীর জবানবন্দী  এবং মাওলানা সাঈদীর  ক্যাসেট :
যশোরের দুজন সাক্ষী   জবানবন্দীতে দাবি করেছেন ১৯৭১ সালের পর মাওলানা সাঈদীর যশোরে রওশন আলীর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। ২০০৫ অথবা ২০০৬ সালে যাশোর বাঘারপাড়ায় একটি ধর্ম সভায় সাঈদী বলেছিলেন রওশন ভাই এখানে আছেন কিনা।  রওশন আলী  দুর্দিনে আমাকে শেল্টার দিয়েছিলেন। রওশন ভাই না থাকলে আমি বাঁচতামনা।  সাঈদীর মুখে তারা একথা শুনেছেন।

তবে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জেরার সময় আদালতকে জানান  মাওলানা সাঈদীর ওয়াজ মাহফিলের অডিও ভিডিও ক্যাসেট সারা দেশে পাওয়া যায়। ঐ  সভার অডিও ক্যাসেটও তাদের কাছে আছে। তিনি কি বলেছিলেন তাও আছে।  আদালতকে তা শোনার প্রস্তাব করা হলে আদালত বলেন আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে একসাথে শুনব পরে।

আরে আগে বেশ কয়েকজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন ১৯৭১ সালের মে মাসে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে পিরোজপুর পারেরহাট  এবং আশপাশের এলাকায় হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জেরার মাধ্যমে বলার চেষ্টা করেছেন মাওলানা সাঈদী স্বাধীনতা   যুদ্ধের  শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত  পিরোজপুরেই ছিলেননা।

দুজন সাক্ষী বলেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মাওলানা সাঈদী যশোরে আত্মপোগন করেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  সাক্ষীকে প্রশ্নের মাধ্যমে আদালতকে জানানোর চেষ্টা করেছেন  স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর  সময় থেকে জুলাই পর্যন্ত  তিনি যশোর ছিলেন।  তবে সাক্ষীদের বর্ণিত মতে স্বাধীনতার পর আত্মগোপন করে নয়। তার অডিও ক্যাসেটে তার প্রমান আছে। সাক্ষীদের বর্ণিত ২০০৫ অথবা ২০০৬ সালের ঐ ওয়াজ মাহফিলে  মাওলানা সাঈদী বলেছিলেন,  ৭ মার্চের পর  যশোরে কাবুলিওয়ালা হত্যাকান্ড, ঝুমঝুমপুর  বিহারী হত্যাকান্ড এবং মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের অসহযোগ আন্দোলনের সময় রওশন আলীর বাড়িতে ছিলেন তিনি।   মাওলানা সাঈদী  প্রথমে ১৫ দিন তার বাসায় ছিলেন স্বপরিবারে। তারপর নিউমার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায়  থাকেন

১৫ তম  সাক্ষীর   জেরা
আইনজীবী : ১৯৭০ সালের ঐ  জনসভার তারিখ  এবং বার বলতে পারবেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ঐ সভা পরিচালনা করেন কে বলতে পারবেন?
সাক্ষী :  সম্ভবত হোসাইন মুন্সী। ৪০ বছর আগেরতো ।  ভাল মনে নেই।
আইনজীবী: ১৯৭০ সালে আপনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: আপনি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : পরে বাঘারপাড়া  থানা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী:  আপনি  ২০০৫  অথবা ২০০৬ সালে  পাইলট স্কুল মাঠে  মাওলানা সাঈদীর যে ধর্মসভার কথা বললেন।  ঐ ধর্মসভা ছাড়া ২০০১ থেকে  ২০০৬ পর্যন্ত  জামায়াতের অন্য কোন জনসভায় যাননি?
সাক্ষী : সুযোগ  হয়নি।
আইনজীবী : ১৯৭০ সালের দোহাকুলার ঐ  জনসভা ছাড়া  স্বাধীনতার আগে জামায়াতের অন্য কোন জনসভায় যোগ দেননি?
সাক্ষী : ১৯৭০ সালে আমাদের বাড়ির পাশে দোহাখোলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় আমি সরাসরি যোগ দিই নাই। আমাদের বাড়ীর পাশে মিটিং হয়েছিল বিধায় আমি মিটিংয়ের বক্তব্য শুনেছিলাম।
 আইনজীবী : আপনি সরকারি চাকরি করতেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী: কোন সালে যোগ দিয়েছিলেন?
সাক্ষী : ১৯৭৬ সালে।
আইনজীবী:  অবসর নেন ১৯৯৬ সালে?
সাক্ষী :  অবসর  নয়। চাকরি ছাড়িনাই। অবসরও নেইনি। এমনি যাইনি।  রেজিগনেশনের দরখাস্তও  করিনি।
আইনজীবী : আপনি  ১৯৯৬ সালে সাত নং দরাঘাট  ইউনিয়ন পরিষদ  নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিতদ হয়েছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী: একইভাবে  ২০০১ সালে বাঘারপাড়া  পৌর মেয়র পদেও  আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : ১৯৮১ হতে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত  আপনি দুই বার হাজতে গেছেন?
সাক্ষী : রাজনৈতিক মামলায়।
আইনজীবী: পেনশন আবেতন করেছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরি করার কারনে আপনার বিরুদ্ধে  রাজনৈতিক কারনে মামলা হবার সুযোগ নেই হয়েছিল দুর্নীতি মামলা।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : এ কারনে আপনি পেনশন পাননাই।
সাক্ষী : পেনশনের আবেদন করিনাই।
আইনজীবী : ১৯৭০ সালের ঐ জনসভার আগে সাঈদী সাহেবকে চিনতেননা।  ঐদিনই চিনলেন।
সাক্ষী: ঐদিনই চিনলাম।
আইনজীবী: তখন ওনার পরিচয় জানার চেষ্টা করলেন?
সাক্ষী : ঐখানেই শুনলাম ওনার পরিচয়।
আইনজীবী : কি পরিচয়   শুনলেন?
আইনজীবী : জানতে পারি তিনি জামায়াতের নেতা।  বা ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতদা।
আইনজীবী : ঐ সভয়া  বক্তব্য দেয়ার সময় সাঈদী সাহেবকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি যে, তিনি অমুক বা অমুক পদে আছেন?
সাক্ষী : স্মরন নেই।
আইনজীবী: ওনার বাড়ি কোথায়, কোথায় থাকেন বা কি করেন তার খোঁজ নিয়েছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : আপনি স্বাধীনতাযুদ্ধে  অংশগ্রহণ করেননি।
সাক্ষী:  করেছি।
আইনজীবী: কোন এলাকায় করেছেন?
সাক্ষী : আমি সরাসরি যুদ্ধ  করিনাই।  ভারতে মুক্তিযুদ্ধ  ক্যাম্পে ছিলাম। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরি।
আইনজীবী : ক্যাম্পে কবে যান?
সাক্ষী: জুন মাসে।
আইনজীবী : ফিরলেন কবে?
সাক্ষী : ১৬ ডিসেম্বরের আগে।
আইনজীবী: দেশে ফেরত আসার কতদিন পর প্রথম সাঈদী সাহেবের সাথে দেখা হল?
সাক্ষী : সাঈদী সাহেবের সাথে দেখথা হয়নি।
আইনজীবী : সাঈদী সাহেব রওশন  আলীর বাড়িতে  থাকে  একথা কে বললেন?
সাক্ষী : দেলোয়ার মোল্লা বর্তমানে মৃত, তোজাম্মেল হোসেন, হোসেন আলী, জুলফিকার আলী।
আইনজীবী : কোন মাসের কোন তারিখ ঐ কথা বলেছিল মনে আছে?
সাক্ষী : ১৯৭২ সালের  জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে।
আইনজীবী : আপনাদের বাড়ি যশোর ।  মুক্তিযুদ্ধে  যশোর নামে একটি বই লিখেছেন রুকুনউদ্দৌলাহ জানা আছে?
সাক্ষী:  জানা নেই।
আইনজীবী : বাঘারপাড়া রামকান্তপুর  গ্রাম চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী : থানা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি জুলফিকার আলীর বাড়ি রামকান্তপুর?
সাক্ষী : আগে বাড়ি ছিল পাইকপাড়া। পরে রামকান্তপুর করেছে।
আইনজীবী: কতদিন আগে রামকান্তপুর এল?
সাক্ষী : অনুমনা ৩০ বছর।
আইনজীবী : ১৯৭১  বা ১৯৭২ সালে রওশনের বাড়ি দেখেছিলেন?
সাক্ষী : বাড়িতে আমি যাইনি।
আইনজীবী : রওশন আলীর ভাই খলিলুর রহমান ২০১১ সারের আগের টার্মে বাঘারপাড়া পৌর মেয়র ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : খলিলুর রহমান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা 
সাক্ষী : সবে এক বছর হল সে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। আগে বিএনপি ছিল।
আইনজীবী : রওশন  এবং খলিল দুইভাইকে ১৯৭১ সালের আগে থেকে চিনতেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী :  তারা কয় ভাইবোন বলতে পারবেন?
সাক্ষী: ৫ ভাই। তবে বোনদের সংখ্যা জানিনা।
আইনজীবী: খলিলুর রহমানের পিতার নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী : সুফী  দাউদ হোসেন।
আইনজীবী : স্বাধীনতা যুদ্ধের  সময় রওশন আলীর ভূমিকা বলতে পারবেন?
সাক্ষী : বলতে পারবনা।
আইনজীবী: একইভাবে খলিলুর রহমানের ভূমিকাও জানা নেই?
সাক্ষী: তারা কোথায় কি অবস্থায় ছিল জানা নেই।
আইনজীবী : ২০০৫  অথবা ২০০৬ সালে যে ধর্মসভার (ওয়াজ মাহফিল) কথা বলেছেনে সেখানে মাওলানা সাঈদীর শুধু ঐ   বক্তব্যটুকু শুনে চলে আসেন?
সাক্ষী: কিছু কিছু শুনেছি। ১০, ১৫, ২০ মিনিট শুনেছি।
আইনজীবী : রওশনকে স্টেজে ওঠানো পর্যন্ত ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী  : স্বাধীনতার আগে অসহযোগ আন্দোলনের  কথা তো আপনার জানা আছে।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী  : কবে হয়েছিল?
সাক্ষী  : ৭ মার্চ ভাষনের পর।
আইনজীবী : ৭ মার্চ পরে বা আগে কাবুলিওয়ালা হত্যাকান্ডের কথা শুনেছিলেন?
সাক্ষী : আমার জানা নেই।
আইনজীবী : ঝুমঝুমপুর অধিবাসীদের অধিংকাংশ তখন বিহারী ছিল?
সাক্ষী:  হ্যা।
আইনজীবী :  ৭ মার্চের পর ঝুমঝুমপুর বিহারী-বাঙ্গালী  সংঘর্ষ হয়?
সাক্ষী : ২৬ মার্চের পরে।
আইনজীবী : সংঘর্ষে বহু  বিহারী নিহত হয়?
সাক্ষী : এই ঘটনায় যশোর ক্যান্টনমেন্টের পাক আর্মি বিহারীদের পক্ষে  অবস্থান নিয়ে সারা যশোরে হত্যাকান্ড  চালায় ?
সাক্ষী : পাক বাহিনী তাদের জাতীয়  পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হত্যাকান্ড চালায়।
আইনজীবী: প্রথম দিকে  ঐ হত্যাকান্ডে পাক আর্মির সাথে বিহারীরাও যোগ দিয়েছিল?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী : আপনি   জবানবন্দীর সময় ২০০৫ অথবা ২০০৬ সালের ধর্মসভার উল্লেখ করে বললেন সাঈদী সাহেব ঐ সভায় বলেছিলেন রওশন তাকে দুর্দিনে শেল্টার দিয়েছেন। ঐ  সভায় মাওলানা সাঈদী বলেছিলেন কাবুলিওয়ালা হত্যাকান্ড, ঝুমঝুমপুর হত্যাকান্ড, এবং মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি ঐ রওশন আলীর বাড়িতে ছিলেন। একথা আপনি শুনেছিলেন?
সাক্ষী: আমার জানা নেই।
আইনজীবী: জুলিফিকার আলী সাহেব। আমাদের কাছে অডিও রেকর্ডি আছে। আপনাকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছি।
এ পর্যন্ত বলার পর রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীরা আপত্তি জানিয়ে বলেন অডিওর কথা বলে সাক্ষীকে ভয় দেখাচ্ছেন। তখন আদালত বলেন এর মধ্যে একটা ব্যাড স্মেল  পাচ্ছি। মিজান সাহেব আপনি প্রশ্নটা করুন।
তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন আমি অবশ্যই ভয় দেখানোর জন্য একথা বলিনি। তাকে মনি করিয়ে দেয়ার সুবিধার জন্য বলছি।  এর যদি অন্য মানে হয় তাহলে আমি সাক্ষী  এবং আদালতের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

মিজানুল ইসলাম বলেন আমাদের কাছে  ঐ সভার  অডিও রেকর্ডিং আছে। আপনারা চাইলে শুনতে পারেন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, পরে আপনাদের সাথে নিয়ে একসাথে শুনব। এখন প্রশ্ন করেন।
আইনজীবী: জুন মাসের আগেইতো আপনার এলাকায় রাজাকার পিস কমিটি হয়েছিল।
সাক্ষী : হয়েছিল। আমি ঐসময় এলাকায় ছিলামনা।
আইনজীবী : আপনি আপনার এলাকা কবে ত্যাগ করলেন?
সাক্ষী : এপ্রিলের প্রথম দিকে।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে যশোর নিউমার্কেট এলাকায় একটি বসতি এলাকা ছিল।
সাক্ষী:  হ্যা।
আইনজীবী: সদরুদ্দিন নামে একজন পীর সাহেব থাকত ঐ এলাকায়।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী  : আপনার বাড়ি মহিরুন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী: রওশনের বাড়ি দোহাকুলা এবং দোহাকুলা ও মহিরুন পাশপাশি গ্রাম।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আমি বলছি সাঈদী সাহেব ১৯৭১ সালের বহু আগে থেকে যশোর এলাকায় থাকতেন এবং আপনি তা জানতেন।
সাক্ষী  : আমার জানা নেই।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালের আগে থেকেই সাঈদী সাহেব নিউ মার্কেট এলাকায় এ ব্লকে ভাড়া থাকতেন।
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী :   ঝুমঝুমপুর হত্যাকান্ডের পর, মহিরনের পীর সাহেব সদরুদ্দিনের বাড়িতে সাঈদীসাহেব স্বপিরবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী : ঐ বাড়িতে ১০/১৫ দিন থাকার পর  রওশন আলীর বাড়িতে যান এবং জুলাইর মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানেই থাকেন।
সাক্ষী : জানা নেই।
 মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর জেরা শেষ হলে আদালত তাকে একটি প্রশ্ন করেন।
আদালত : আপনার বিরুদ্ধে  দুইবার হাজতে থাকার অভিযোগ করলেন বিজ্ঞ কৌসুলি। আপনি বললেন দুর্নীতির কারনে নয়। রাজনৈতিক কারনে হাজতে গেছেন। একটু বুঝিয়ে বলুন।
সাক্ষী: দুইবার নয় আমি চারবার হাজতে গিয়েছি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু  হত্যাকান্ডের পর, ১৯৮৭ সালে এরশাদের আমলে  এবং   ১৯৯৫  ও ২০০৪ সালে আরো দুইবার। সবগুলো গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে রাজনৈতিক কারনে । আওয়ামী লীগের  রাজনীতির সাথে  জড়িত থাকার কারনে। কোন দুর্নীতির কারনে নয়।
এরপর ট্রাইব্যুনালের অনুমিত নিয়ে মিজানুল ইসলাম একটি প্রশ্ন করেন।
আইনজীবী : আপনি  চাকরি করার সময় ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ছিলেন?
সাক্ষী: না।
সোলায়মান হোসেনের জেরা শেষ হলে পরের ১৬ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করেন আদালত।

১৬তম সাক্ষীর জবানবন্দী
আমার নাম জুলফিকার আলী। বয়স ৫৯ বছর।  মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছাত্র ছিলাম।  ঐ  সময়ে আমি যশোর জেলার অন্তর্গত বাঘারপাড়া এলাকায় ছিলাম। ৮নং সেক্টরের মেজর মঞ্জুর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তারপর  ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা বাঘারপাড়ার মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হতে থাকলাম। এরপর আমরা বিভিন্ন এলাকার রাজাকারদের সংগ্রহ   করার জন্য তল্লাশী করি। তখন আমরা জানতে পারলাম আমাদের একজন বন্ধু রওশন আলী সাহেবের বাড়িতে একজন লোক আশ্রয় নিয়েছে। রওশন সাহেবের সাথে একজন লোককে বাঘারপাড়া বাজারে দেখি। আমরা বিভিন্ন লোকের নিকট জানলাম যে, ঐ লোকটা রওশন সাহেবের বাড়ীতে আত্মগোপন করে আছে।  তখন আমাদের বাঘারপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন সোলায়মান সাহেব (বর্তমানে মৃত)। তিনি সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিলেন যে, ঐ লোকটাকে রওশন আলীর বাড়ি থেকে ধরে আনতে হবে। এরপর আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রওশন আলীর বাড়ি ঘেরাও করি। রওশন আলী সাহেবের সাথে বাঘারপাড়া বাজারে যে লোকটাকে আমরা দেখেছিলাম সেই লোকটাকে রওশন আলীর বাড়ি ঘেরাও করার পরে তাকে পেলাম না, সে পালিয়ে গিয়েছিল। ঐ লোকটাকে না পেয়ে রওশন আলী সাহেবকে বিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেছিলেন যে, ঐ লোকটির নাম দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব পালিয়ে যাবার পরে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি যে, সাঈদী সাহেব একটি গরুর গাড়িতে করে ‘বোরখা মুড়ি দিয়ে’ তালবাড়িয়া এলাকার দিকে পালিয়ে গেছে।  এগুলো শোনা কথা। আমরা তো দেখিনাই।
আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আরও জানতে পারি এবং  রওশন সাহেবকে চাপ প্রয়োগ করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন যে, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব তার সাথে মাহফিল করে বেড়ান এবং সেই জন্য তিনি তার বাড়িতে ছিলেন। রওশন সাহেবের নিকট আরও  শুনেছি তার বাড়ি পিরোজপুর। নাম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। রওশন সাহেব বলেছিলেন সাঈদী সাহেব যুদ্ধের পরে পিরোজপুরে থাকতে পারছিলেন না। তাই তার  বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। আমি দেখি নাই তবে লোক মুখে শুনেছি যে, সাঈদী সাহেব পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অত্যাচার, নির্যাতন করেছেন। সেই কারণে তিনি রওশন আলীর বাড়ীতে আত্মগোপন করেছিলেন। ২০০৫/৬ সালে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব বাঘারপাড়া থানা এলাকায় সভা করতে আসলে তখন তাকে পুনরায় দেখি। ঐ মিটিংয়ে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বলেছিলেন যে, রওশন আলী ভাই না থাকলে আমি বাঁচতাম না। সাঈদী সাহেব তখন রওশন আলীকে তার বক্তৃতার মঞ্চে আসতে বলেন। রওশন সাহেব গিয়ে ষ্টেজে বসলেন।


১৬ তম সাক্ষীর জেরা:
আইনজীবী : আপনি বর্তমানে  বাঘারপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি।
সাক্ষী  : হ্যা।
আইনজীবী : একটু আগে সোলায়মান সাহেব সাক্ষ্য দিলেন। তিনি কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত  থানা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি ছিলেন?
সাক্ষী : ২০০৪ সালের আগে থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সেক্রেটারি ছিলেন।
আইনজীবী : সেক্রেটারি হবার আগে তিনি কোন দায়িত্বে ছিলেন?
সাক্ষী : আমার জানা নেই।
আইনজীবী : আপনি কতসারে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
সাক্ষী : ১৯৭১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ পছন্দ করতাম।
আইনজীবী: তখন তো আপনি ছাত্র ছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগদেননি। যোগ দিলেন কবে?
সাক্ষী : মনে নেই্
আইনজীবী : স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত?
সাক্ষী: জি।
আইনজীবী: ২০০৪ অথবা ২০০৫ সালে আপনি বাঘারবাড়ায় চারদলীয় জনসভায় সাঈদী সাহেবকে ভাষন দেয়ার কথা বলেছেন। যে জনসভায়  সাঈদী সাহেব বলেছিলেন রওশন সাহেব তাকে শেল্টার দিয়েছিল।
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঐ জনসভার পুরা ভাষনটি আপনি শুনেছিলেন?
সাক্ষী: না কিছুটা শুনেছি।
আইনজীবী: আপনি বললেন সাঈদী সাহেব ভাষনের সময় বলেছেন রওশন ভাই না থাকলে তিনি বাঁচতেননা। ঐ কথা বলার পর রওশন আলীকে স্টেজে আনার আগ পর্যন্ত আপনি তার ভাষন শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : ঐ সভাপর সভাপতি কে ছিলেন মনে আছে?
সাক্ষী:  খেয়াল নেই।
আইনজীবী : পরিচালনা  কে করেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী : সাঈদী সাহেব ছাড়া আর কে কে বক্তব্য রাখেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী : সাঈদী সাহেবের ভাষনের অড়িও এবং ভিড়িও  পাওয়া যায়  এবং দেশের অনেকে তা শোনে তা জানা আছে?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঐ জনসভারও অডিও  হয়ে থাকতে পারে তা জানা আছে?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী :  সাঈদী সাহেব ঐ ভাষনে  রওশন আলী না থাকলে বাঁচতামনা এই কথা বলার  আগে বলেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর  যশোরে কাবুলিওয়ালা হত্যাকান্ডের কথা। ঝুমঝুমপুর হত্যাকান্ডের কথা। এবং মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের সময়ের ঘটনার কথা  বলেছিলেন।  এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছিনে ঐ সময় তিনি রওশন আলীর বাড়িতে থাকতেন।
সাক্ষী: আমার জানা নেই।
আইনজীবী : আপনি বললেন জানতে পারলাম বন্ধু রওশন আলীর বাড়িতে একজন লোক আশ্রয় নিয়েছে। কবে জানতে পারলেন?
সাক্ষী: ১৯৭২ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে।
আইনজীবী : জানার কতদিন পর রওশন আলীর বাড়িতে যান?
সাক্ষী: যেদিন জানলাম সেদিনই কমান্ডারের সাথে পরামর্শ করে যাই।
আইনজীবী : রওশন আলীর বাড়িতে কয়টা ঘর ?
সাক্ষী: গুনে দেখিনাই।
আইনজীবী : ঘরটা কিসের তৈরি।
সাক্ষী: ঘরের দিকে খেয়াল করিনাই।
আইনজীবী: বাড়ি ঘেরাও করার সময় আপনার সাথে আর কারা ছিলেন?
সাক্ষী: আমি, সোলায়মান।
আইনজীবী: আর কারো নাম?
সাক্ষী : আমার খেয়াল নেই।
আইনজীবী : দিনের বেলায় না রাতে গিয়েছিলেন?
সাক্ষী: সকালে।
আইনজীবী : সাঈদী সাহেব তালবাড়িয়া পালিয়ে গেছেন তা কিভাবে শুনলেন?
সাক্ষী: রওশন সাহেবের কাছে। এলাকার লোকজন বলেছে সে তালবাড়িয়ার দিকে গেছে।
আইনজীবী: রওশন আলী সাহেব আপনার বন্ধু বললেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার ভূমিকা বলতে পারবেন?
সাক্ষী : কোন ভূমিকা ছিলনা।
আইনজীবী : রওশন সাহেব স্বাধীনতার আগে থেকেই সাঈদী সাহেবের সাথে যশোর এলাকায় ওয়াজ করে বেড়াতেন?
সাক্ষী: আমার ভাল জানা নেই।
আইনজীবী: রওশন সাহেব নিজেও ওয়াজ করতেন?
সাক্ষী: খুব ভাল মনে পড়েনা।
আইনজীবী: রওশন সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার আগে থেকেই সাঈদী সাহেবকে চিনতেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ১৯৭১.৭২ সালে তার পেশা কি ছিল জানেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রওশন সাহেবের বাড়িতে কি তিনি একা আশ্রয় নিয়েছিলেন না স্বপরিবারে?
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী :  রওশন সাহেবরা কয় ভাইবোন?
সাক্ষী: মনে হয় ৫ ভাই।  দুই ভাইকে  চিনি।
আইনজীবী : তল্লাসী চালিয়ে কয়জন রাজাকার ধরেছিলেন?
সাক্ষী : কাউকে ধরতে পারিনাই। সব পলাতক ছিল।
আইনজীবী : বাঘারপাড়া রাজাকার প্রধান কে ছিলেন বলতে পারবেন?
সাক্ষী : বলতে পারবনা।
 আইন্জীবী : যশোর রাজাকার প্রধান?
সাক্ষী : বাঘারপাড়াই বলতে পারিনা। যশোর বলব কিভাবে।
আইনজীবী : রওশন আলী বেঁচে আছেন>
সাক্ষী : হ্যা।  হজ করে আসছেন।
আইনজীবী: এসএসসি পাশ কবে করেন?
সাক্ষী : মনে নেই।
আইনজীবী : আপনার গ্রাম রামকান্তপুর?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : রুকুনউদ্দৌলাহ সাহেব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন?
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী : ৪০ বছর ধরে তিনি  প্রাচীন পত্রিকা সংবাদের যশোর প্রতিনিধি। তার লেখা গ্রাম গ্রামান্তর বই  যশোরে খুব পরিচিত। তিনি সাংবাদিক হিসেবে অনেক কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এলাকায় খুব পরিচিত।
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী: রুকুনউদ্দৌলাহ রচিত মুক্তিযুদ্ধে যশোর শীর্ষক বইয়ে ১৬৮ পৃষ্ঠায় রাজাকার তালিকায় আপনার নাম রয়েছে।  বইটি ২০০৯ সালে একুশে বই মেলায়   প্রকাশিত হয়।
সাক্ষী : নাম থাকলেও তা মিথ্যা । যদিও আমার ঐ বই সম্পর্কে  জানা নেই। । (এসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন,  লিখে দিলেই রাজাকার হয়ে গেল। আমাকে প্রমান করতে চাইছেন আমি রাজাকার। আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি ভাতা পাই। অন্য চারটি বইয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম আছে। সেগুলো বলেননা কেন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন