মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন// জামায়াত করায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ-এটিএম আজহার



মেহেদী হাসান, ১২/১১/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  সূচনা বক্তব্যের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। এরপর শুরু হবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব। 

১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অপহরন, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষনে সহায়তাসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ  চার্জ গঠনের এ আদেশ দেন।

এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয় রংপুর অঞ্চলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন ।  ১৯৭১ সালে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন এবং জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি ছিলেন। সে হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং তার পরামর্শ ও পরিকল্পনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রংপুরের  বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।

জামায়াত করায়  আমার বিরুদ্ধে  অভিযোগ :
চার্জ গঠনের আদেশের পূর্বে এটিএম আজহারুল ইসলাম নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেন, শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলাম করার কারনে আমার বিরুদ্ধে ৪০ বছর পর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ অভিযোগ আনা হয়েছে ।
চার্জ গঠনের আদেশের পূর্বে ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ  পড়ে শোনান। অভিযোগ পড়ে শোনানো শেষে ট্রাইব্যুনাল তার কাছে জানতে চান অভিযোগ বিষয়ে তিনি নিজেকে দোষী না নির্দোষ দাবি করেন সে বিষয়ে।
তখন এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি সম্পূণ নির্দোষ। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং ষড়যন্ত্র। এসব অভিযোগের সাথে আমার সামান্যতম সম্পৃক্ততা নেই। গত ৪০ বছরেও আমার বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কেউ এসব অভিযোগে  কোন মামলা করেনি, কোন জিডিও করেনি। আমার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সাল বিষয়ে সামান্যতম কোন অভিযোগ ছিলনা। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী করার কারনে, জামায়াতের সাথে আমার সম্পৃক্ততার কারনে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তাকে থামানোর চেষ্টা করলে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের পর আমার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দেয়া হয়। ওইসব মামলা থেকে আমি একের পর এক বের হয়ে আসছিলাম। তখন আমাকে কোনভাবে আটকাতে না পেরে ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে এসব মিথ্যা এবং কাল্পনিক অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। রাজনৈতিক কারনে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে।

গতকাল হরতালের কারনে আসামী পক্ষে সিনিয়র কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেননা ট্রাইব্যুনালে। আসামী পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন চার্জ গঠন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে এটিএম আজহারুল ইসলাম ইন্টারমিডিয়েটের একজন ছাত্র ছিলেন। তার মত একজন ছাত্রেরর পরামর্শে এবং নির্দেশে পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তারা কাজ করত একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। একাদশ শ্রেণীর একজন ছাত্রের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূণ্য করার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।


ছয় অভিযোগ :
যে ছয়টি অভিযোগে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে সেগুলো হল
অভিযোগ-১:  ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ রংপুর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আইনজীবী মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরন  করে নির্যাতন করা হয়।  এরপর তাদের ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ  শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় একজন বেঁচে যায়। এর সাথে এটিএম আজহারুল ইসলাম জড়িত ছিল মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ-২ : ১৯৭১ সালের  ১৬ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় হত্যাকান্ড ঘটে। এসময়  ১৫ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এ হত্যাকান্ডের সাথে এটিএম আজহাহরুল ইসলাম জড়িত ছিল মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে। 

অভিযোগ-৩ :  ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ার বিল এলাকায় ১২শ’র বেশি নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এর সাথে এটিএম আজহারুল ইসলাম জড়িত মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে। 

অভিযোগ-৪ : ১৭ এপ্রিল  কারমাইকেল কলেজের চার শিক্ষক ও আরেক শিক্ষকের স্ত্রীকে  ধরে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে পাকিস্তানী সেনা সদস্যরা  গুলি করে হত্যা করে। এদেরকে ধরিয়ে দেয়ার বিষয়ে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ-৫ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলাদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক  ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে আসামীর  জড়িত থাকার অভিযোগ।


অভিযোগ-৬ :  নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তাপাড়ায় একজনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।

প্তম অভিযোগ, ‘একাত্তরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি হতে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে আটক রেখে নির্যাতন করে গুরুতর জখম করার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।’

এটিএম আজহারুল ইসলামকে দাড় করিয়ে রাখা প্রসঙ্গ :
ট্রাইব্যুনালে আসামীর কাঠগড়ায় একটি চেয়ার থাকে আসামীর বসার জন্য। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর এটিএম আজহারুল ইসলামকে যখন কাঠগড়ায় হাজির করা হয় তখন সেখানে কোন চেয়ার ছিলনা এবং তিনি দাড়িয়ে ছিলেন। কেন তাকে দাড় করিয়ে রাখা হয় এ বিষয়ে আসামী পক্ষ জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন ১২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখে এ বিষয়ে জানানো হবে। আজ এটিএম আজহারুল ইসলামকে কাঠগড়ায় হাজির করা হলে সেখানে কোন চেয়ার ছিলনা। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিচারপতিগন এজলাসে প্রবেশের সময় এবং নেমে যাওয়ার সময় সবাইকে দাড়িয়ে আদালতকে সম্মান করতে হয় এবং করেন। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে তিনি এসময় বসে থাকেন। তিনি কোর্টকে সম্মান করতে চাননা। তাই তার চেয়ার সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

তখন আসামী পক্ষে উপস্থিত জুনিয়র আইনজীবী তারিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে ছিলনা। আমরা বিষয়টি তাকে অবহিত করব এবং ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবেনা বলে দুু:খ প্রকাশ করায় আদালত তার বসার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

তারিুকল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, কোর্ট শেষে আমরা এ বিষয়টি এটিএম আজহারুল ইসলামকে  অবহিত করলে তিনি বলেছেন, এরকম কোন ঘটনার কথা তার জানা নেই। তিনি  জানিয়েছেন, তাকে এ পর্যন্ত যতবার কোর্টে আনা হয়েছে তার প্রায় প্রতিবারই কোর্ট শুরুর পর আনা হয়েছে। নামিয়েও নেয়া হয়েছে অধিংকাশ সময় কোর্ট চলাকালে। কাজেই  বিচারপতিগন এজলাসে প্রবেশ এবং নেমে যাবার সময় চেয়ারে বসে থেকে তাদের অসম্মান করার  কোন ঘটনা তার জানা নেই  বলে তিনি জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন