বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু/// রাজনৈতিক ভূমিকার বাইরে মাওলানা নিজামীর অন্য কোন কার্যক্রমের প্রমান নেই


মেহেদী হাসান, ৭/১১/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আসামী পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। আজ প্রথম দিন যুক্তি উপস্থান শুরু করেছেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

প্রথম দিন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরুর পদ্ধতিগত বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন। এছাড়া মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে তা অসত্য দাবি করে যুক্তি পেশ করেন ।

মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক ভূমিকার বাইরে অন্য কোন কার্যক্রমের প্রমান হাজির করতে পারেনি।  মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তার প্রতি পদে পদে তাদের অসত্য তথ্য এবং বক্তব্যের প্রমান রয়েছে। তারা যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তার প্রমান রয়েছে।  রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টেই দেখা যায়  কোথাও একসাথে রাজাকার এবং আলবদর বাহিনী গঠনের কথা রয়েছে। কোথাও মে মাসে, কোথাও জুন মাসে রাজাকার বাহিনী গঠনের কথা রয়েছে। আবার কোথাও খুলনায়, কোথাও ঢাকায় বসে রাজাকার বাহিনী গঠনের তথ্য রয়েছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী দাবি করেছেন, ১৯৭৪ সালে তিনি সৌদি আরব গেছেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে। কিন্তু বাস্তব সত্য হল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আগে কোন পাসপোর্ট ইস্যু করেনি, কোন ভিসাও দেয়নি। তাহলে তিনি কি করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেলেন? তার এ দাবি অসত্য।

সাক্ষী দাবি করেছেন তিনি ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেছেন। কিন্তু তিনি সেই সময় যেসব সাবজেক্ট নিয়ে পড়ালেখা করার কথা বলেছেন তা তখন ডিগ্রী কোর্সে ছিলনা।  তাছাড়া ১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে যারা পাশ করেছে তাদের  টেবুলেশন শিটেও মিছবাহুর রহমানের  নাম পাওয়া যায়নি। অ্যাডভোকেট মিজাননুল ইসলাম  তার দাবির পক্ষে ১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে যারা ডিগ্রী পাশ করেছেন তাদের সকলের ট্যাবুলেশন শিট ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন।

মিজানুল ইসলাম বলেন, মিছবাহুর রহমান নিজেকে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য দাবি করেছেন কিন্তু তিনি সংগঠনের নামটি পর্যন্ত ঠিকমত বলতে পারেননি।  তাকে  ১৯৭৪ সালে তাকে বিশেষ   ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের  মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ধরনের চরিত্রের একজন সাক্ষীকে বিশ্বাস না করার অনুরোধ জানান মিজানুল ইসলাম।

মিজানুল ইসলাম বলেন,  মৌলভীবাজার মহকুমার  শতবর্ষ পূর্তি  উপলক্ষে একটি স্মরনিকা বের হয় ১৯৮২ সালে । এর নাম ‘শতাব্দী’। সেখানে পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হিসেবে  যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ এবং  ‘ছানু মিয়া’র নাম রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার ইতহাস  বইয়ে শন্তি কমিটির তালিকায় ‘মিছবাহ’ এবং শতাব্দী   নামক স্মরনিকায় ‘মিছবাহ আহমদ চৌধুরী’ হিসেবে যার নাম উল্লেখ আছে তিনি মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। উভয় স্থানে পিতার নাম ছানু মিয়া উল্লেখ আছে। 

মামলা শুরু বেআইনীভাবে :
মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে বলেন, পল্লবী থানায় দায়ের করা একটি মামলা ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয় ২০১০ সালে। সে মামলা ট্রাইব্যুনালের আদেশে রেজিস্ট্রার পাঠান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। এভাবে শুরু হয় এ মামলার কার্যক্রম। সিআরপিসি এবং ট্রাইব্যুনালের আইন উভয় বিধান অনুযায়ী এভাবে  ট্রাইব্যুনালে মামলা শুরু হতে পারেনা। কিন্তু যে যে প্র্রক্রিয়ায় এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং অবৈধ। কাজেই এ মামলা চলতে পারেনা।

মিজানুল ইসলাম বলেন, মামলার আজহারে ১২ জন আসামী ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা তাদের মধ্য থেকে চারজনকে আসামী করলেন। এ চারজনই রাজনৈতিক দলের নেতা। এরা হলেন,  মাওলানা নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আব্দুল কাদের মোল্লা। আসামী বাছাই থেকেই বোঝা যায় এটা ছিল একটা রাজনৈতিক মামলা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষন করলে বোঝা যায় এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদন্ত সংস্থা কর্তৃক নয় বরং অন্য কোনখানে, অন্যকোন সময়ে অন্য কারো নির্দেশে সম্পন্ন হয়েছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পাকিস্তান আর্মির সাথে ষড়যন্ত্র করে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন করেছেন। কিন্তু মাওলানা নিজামী পাকিস্তান আর্মির সাথে বসে কোন মিটিং করেছেন এ ধরনের একটি ডকুমেন্টও রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভূমিকার বাইরে অন্য কোন কার্যক্রমের প্রমান মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে নেই। ১৯৮৬ সালে পাবনায় জামায়াত থেকে সংসদ নির্বাচনের ঘোষনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একটি মহল প্রচারনায় নামে এবং নানা ধরনের ডকুমেন্ট তৈরি করা শুরু করে।


শাহবিরয়ার কবিরের বই বিশ্বাস করলে বিচারের নামে সর্বনাশ হবে :
মিজানুল ইসলাম যুক্তি পেশ করার সময় বলেন, শাহরিয়ার কবির তার বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকা বইয়ে মন্তব্য করেছেন- স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য সংস্থার  শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে মুসলিম পরিচয় ধারনে আগ্রহ দেখায়। এরপর ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন, হাজার হাজার মসজিদ  মাদ্রাসা অনুমোদন এব্ং স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র প্রশ্নের সম্মূখীন হয়।

মিজানুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার কবিরের এই বই রাষ্ট্রপক্ষ ডকুমেন্ট হিসেবে এ মামলায় জমা দিয়েছে মাওলানা নিজামীর  বিপক্ষে । এই লোকের কথা বিশ্বাস করা হলে বিচারের নামে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন