বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

বিদেশী সাক্ষী আনতে সমন জারির আবেদন খারিজ

 ১৮/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে  ন্যাটোর সাবেক এক জেনারেলসহ দুজন বিদেশী সাক্ষী  মেনেছিল আসামীপক্ষ। তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য  সমন জারির  প্রার্থনা করে আবেদন করেছিল অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবীরা। গতকাল সে আবেদন  খারিজ করে দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষ যাকে  খুসী সাক্ষী আনতে পারবেন। সেটি তাদের বিষয়। এরপর সমন জারির আবেদন খরিজ করে দেন।


বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আরো 2 সাক্ষীর জবানবন্দী /// “রাজাকার ও পিস কমিপির লোকদের সাথে সাঈদী সাহেবকে দেখিনাই”


mehedy hasan, 17/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  দুজন সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়েছে। এরা হলেন ১৪ তম সাক্ষী যশোরের এমরান হোসাইন এবং ১৫ তম সাক্ষী পিরোজপুরের আব্দুস সালাম হাওলাদার।
সাক্ষী আব্দুস সালাম হাওলাদার ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে তার পিতার দোকানে মাঝে মাঝে বসতেন বলে জানান।  ১৯৭১ সালে ৭ মে পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান আর্মির আগমন এবং শান্তি কমিটির লোকজন কর্তৃক  পাড়েরহাট বাজারে লুটপাটের বিবরন দেন। সাক্ষী বলেন, পাড়েরহাট বাজারে  ৭ মে শান্তি কমিটির লোকজন, আর্মি এবং পরবর্তীতে রাজাকারদের সাথেও তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালের মে মাসে  পাড়েরহাটে আর্মি আসার পর শান্তি কমিটির লোকজনের সাথে মাওলানা সাঈদী পাকিস্তান আর্মিকে অভ্যর্থনা জানান । এরপর পাকিস্তান আমি, শান্তি কমিটির অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট  বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ড চালান।

১৫ তম সাক্ষীর জবানন্দী :
আমার নাম আব্দুস সালাম হাওলাদার, বয়স ৬৫ বছর।  গ্রাম বাদুরা, থানা ও জেলা পিরোজপুর। আমি গৃহস্থ  কাজ করি।  ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে আমার আব্বার দোকান ছিল আমি সেই দোকানে মাঝে মাঝে বসতাম। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ৭ই মে তারিখে পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তাদের সহযোগিতায় পাড়েরহাটের কিছু সংখ্যক লোক দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদার পাড়েরহাটের ৫/৬টি হিন্দুর দোকান লুট করে। লুটপাটের পরে পাক সেনারা আবার পিরোজপুরের দিকে রওনা করে যায়। যাদের দোকান লুট করে তারা হলেন মাখন সাহা, নারায়ন সাহা, মদন সাহা, বিজয় মাস্টার, গৌরাঙ্গ পাল প্রমুখ। লুটপাটের পরের দিন আবার পাক সেনারা পাড়েরহাটে আসে। তখন ঐ সমস্ত লোকজন যথা  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, গণি গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদের সাহায্যে  আর্মি ব্রীজ পার হয়ে দক্ষিণ পার্শ্বে আমার চাচা নুরু খান সাহেবের বাড়িতে ঢোকে। পিস কমিটির সদস্যরা ঐ বাড়ি পাক সেনাদের দেখিয়ে দেয় এবং তারা ঐ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ঐ চাচা আওয়ামী লাগের নেতা ছিলেন। ঐ সময়ে আমার চাচা নূরু খান, তার ছেলে সেলিম খান এবং সেলিম খানের মা এরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।  যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট পরে পাক সেনারা সেখান থেকে বের হয়ে চিথলিয়া গ্রামের দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ করে আমরা ধোয়া দেখতে পাই। বহু লোকজন  দৌড়াদৌড়ি করছিল । আমরা শুনতে পেলাম চিথলিয়া গ্রামের সইজুদ্দিন এবং রইজুদ্দিনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আনুমানিক আধা ঘন্টা কি ৪৫ মিঃ পরে পাক সেনারা পিস কমিটির সদস্য সহ পাড়েরহাট বাজারের দিকে রওনা করে আসে। আমি তখন ব্রীজের উত্তর পাশে লোকজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং দেখি উল্লেখিত পিস কমিটির সদস্যসহ পাক সেনারা ব্রীজ পার হয়ে পাড়েরহাটের দিকে আসে। তাদের যাওয়ার সময় এবং আসবার সময় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে তাদের সংগে দেখি নাই। পাক সেনারা পাড়েরহাট বাজারে কিছু সময় থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। এর দুই/তিন দিন পরে পাড়েরহাটে পিস কমিটি গঠন হয়। সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, দানেশ মোল্লা, সফিজউদ্দিন মৌলভী, গণি, গাজি, আসমত আলী মুন্সি, মালেক শিকদারদেরকে নিয়ে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পাড়েরহাট বাজারে পূর্ব গলিতে ফরিকদাশের বিল্ডিং দখল করে সেখানে পিস কমিটির অফিস করা হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে পাড়েরহাট হাইস্কুলের দোতলায় রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাজাকার মোমিন, রাজ্জাক, বজলু কারী, হানিফ, মহসিনদেরকে আমি রাজাকার হিসেবে চিনি। তারা পাড়েরহাট বাজারে আসা যাওয়া করতো। তাদের সংগে কখনও আমি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই।
আমাদের পিরোজপুর ১ আসনে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব তিন বার নির্বাচন করেন। দুইবার বাবু সুধাংশু শেখর হাওলাদারের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি একজন নামকরা আইনজীবী তিনি কোন সময় সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই এবং মামলা করেন নাই। তৃতীয়বার উনি এ,কে,এম,এ আওয়াল সাহেবের সংগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন, তিনিও সাঈদী সাহেবের বিপক্ষে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ করেন নাই।

অসুস্থ সাক্ষী নিয়ে যা হল :
সকালে ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন পরের সাক্ষী নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।  কোর্টে আসছেন। তবে আজ তার সাক্ষ্য না নিলে ভাল হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন নিয়ে আসেন। মিজানুল ইসলাম বলেন সাক্ষ্য দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় দায়িত্ব কার।  মিজানুল ইসলাম আপত্তি করেন আজ তাকে না আনার জন্য।  কিন্তু তারপরও তাকে কোর্টে আনার জন্য নির্দেশ দেন  ট্রাইব্যুনাল।

দুপুর একটার দিকে সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হয়। এরপর এক ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সাক্ষীকে যখন কোর্টে হাজির করা হয় তখন সে অসুস্থ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা  জানান বিরতির সময় তার বমি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান স্যালাইন বা কোন ঔধষ খাওয়ানো হয়েছে কি-না। বা অন্য কোন খাবার খাওয়নো হয়েছে কি-না। আইনজীবীরা জানান না । স্যালাইন, ঔষধ খাওয়ানো হয়নি। অন্য খাবার খেতে পারছেনা। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাই্যুনালের কোথায় কি হয় সব আমার নজরে থাকে। নজরে আনা হয়। ডিফেন্স রুমে একজন সাক্ষী এভাবে অসুস্থ হয়ে  পড়লেন আর আপনারা আমাদের কিছু জানালেননা। এটা কি ঠিক করলেন আপনারা?
মিজানুল ইসলাম বলেন, মনে করেছিলাম বমি বন্ধ হলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হলনা।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সকালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তো দেখে ভালই মনে হয়েছিল।
এরপর কিছুক্ষন  সময় দেয়া হয় সাক্ষীকে যাতে সে সুস্থতা বোধ করেন। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকেন কোর্ট। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি সাক্ষ্য দিতে পারবেন? সাক্ষী বলেন স্যার আমি এখন পারবনা। একটু সময় দিলে ভাল হয়।
বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, সময় দেয়া হবেনা। পারলে এখন দেবেন। না হলে বাড়ি চলে যাবেন।  ল ইউলি টেক ইট অউন কোর্স।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন, ঠিক আছে সাক্ষীকে নিয়ে যান।
এরপর তিনি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলমে বলেন, মি মিজানুল ইসলাম, ২০ জন সাক্ষী হাজির করা আপনাদের পার্ট। দায়িত্ব আপনাদের। এখন অন্য সাক্ষীর (১৩ তম সাক্ষী মাসুদ সাঈদী) জেরা হবে।  এর মধ্যে যদি ওই সাক্ষী সুস্থ হয় তাহলে তার সাক্ষ্য হবে। তা না হলে ল ইউল টেক ইট অউন কোর্স। আপনি জানেন হোয়াট  ইজ ল। পরের সাক্ষী ডকেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হলেন কুলিন ব্রাক্ষ্মন আর আমরা হলাম নমশুদ্র। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে।
এরপর মাসুদ সাঈদীর জেরা শুরু হয়।  সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে জেরা। তখনো তার জেরা শেষ না হওয়ায় অসুস্থ ১৫ তম সাক্ষীকে আর ডাকা হয়নি ।







১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :

১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী : ১৭/১০/২০১২
আমার নাম  এমরান হোসাইন,  বয়স- ৫৯ বছর।  গ্রাম- মহিরন, থানা- বাঘারপাড়া, জেলা যশোর ।
আমার পেশা শিক্ষকতা। বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
১৯৭১ সালে  আমি ছাত্র ছিলাম। ১৯৬৯-৭০ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যশোরে নিউ টাউনে বাসা ভাড়া থাকতেন। ওই সময় ধর্ম সভা করেন। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে শেল মারা শুরু করলো শহরের ওপরে। শহরের বসবাসকারী লোকজন ভয়ে ভীত হয়ে গ্রামে চলে যেতে লাগল। ওই সময় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মে মাসের মাঝামাঝি সময় আমাদের মহিরন গ্রামে মরহুম সদরুদ্দিন পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পরে দোহারকোলো গ্রামের রওশন আলী সাহেবকে পীর সাহেব ডেকে বললেন, আমার বাড়িতে লোকজনের ভিড় হয়েছে, থাকার সমস্যা । আপনি আপনার বাড়িতে সাঈদী সাহেবকে নিয়ে যান। উনার বাড়িতে আড়াই মাস থাকার পর সাঈদী সাহেবকে তার ভাই এসে তাকে দেশের বাড়িতে পিরোজপুর  নিয়ে গেলেন।

জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : আপনি কোন বিষয় পড়ান?
উত্তর : ইসলাম  ধর্ম।
প্রশ্ন : স্কুলটি স্বাধীনতার আগে হয়েছিল না পরে ?
উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন : যে পীর সাহেবের কথা বলেছেন তার ছেলে মেয়ে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে প্রথম কবে সাঈদী সাহেবের দেখা হয়?
                   উত্তর : তিনি যেদিন পীর সাহেবের বাড়িতে যান সেদিন।  মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে পরিচয়হয়। পীর      সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ির মধ্যে ১০০/১৫০ গজ ব্যবধান।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের সঙ্গে রওশন আলীর বাড়িতে গেছেন?
উত্তর : না ।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় পড়শোনা করেছেন?
উত্তর : আমি পদ্মবেলা সিনিয়র আমীর মাদরাসা খুলনায় পড়েছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদরাসা খোলা ছিল না বন্ধ ছিল?
উত্তর : বন্ধ ছিল।
প্রশ্ন : পুরো সময় বন্ধ ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে পীর সাহেব ছাড়া আরো অবস্থাসম্পন্ন পরিবার  পরিবার ছিল।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : আমরা মধ্যবিত্ত  শ্রেণীল ছিলাম। গরিবও না  বেশি  ধনিও না।
প্রশ্ন : মাদরাসার ছাত্ররা অনেকে রাজাকার, আলবদর, বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো জানেন?
উত্তর : আমি শুনেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালে আপনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাননি ।
উত্তর : যাইনি।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে  পাকিস্তান বাহিনী বা রাজাকার বাহিনী দ্বারা কোন কান তি হয়েছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তান বাহিনী, আলবদর, রাজাকার ও শান্তিবাহিনী মানুষকে খুন করতো
অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো তা শুনেছেন?
উত্তর : তখন শুনিনি, পরে শুনেছি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকজনের ওপর তারা  অত্যাচার  করতো, তারা কাদেরকে মারতো?
উত্তর : বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : আপনি যে মামলায় সাী দিতে এসেছেন সেটা কিসের মামলা?
উত্তর : কাগজপত্রে দেখেছি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে।
যে সময়ের কথা পত্রিকায় উলেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি আমাদের গ্রামে ছিলেন। এজন্য সত্য কথা
বলতে আমি সাী দিতে এসেছি।
প্রশ্ন : কবে কিভাবে এটা জানলেন?
উত্তর : এক বছর কয়েক মাস আগে এটা জেনেছি।
প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকা কি আগেও পড়তেন না একবছর কয়েক মাস আগে থেকে পড়েন?
উত্তর : আগে পড়তাম।  তবে মাঝে মাঝে । এখনো মাঝে মাঝে পড়ি।
প্রশ্ন : আগে যখন  পড়েছেন তখন এই অভিযোগ দেখেননি?
উত্তর :না।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
উত্তর : আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই।
প্রশ্ন : এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে আপনাকে কে বলেছে?
উত্তর : এক বছর আগে সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে রাফিক  আমাদের বাড়িতে যান। তিনি আমাদের পাড়ার
অনেক লোকজন ডাকলেন। তিনি তার  আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা আমাদের বললেন। তিনি
আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পিতা  সাঈদী সাহেব  যুদ্ধের সময় এখানে ছিলেন কি-না। আমরা বলি 
হ্যা তিনি এখানে ছিলেন। তখন তিনি আমদের এ বিসয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ করলে আমি রাজি হই ।
প্রশ্ন : এভাবে অনুরোধ করলে আপনি স্যা দেন।
উত্তর : আমি অন্য কোনো মামলায় সাী দেইনি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন?
উত্তর : এ কথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আপনার দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা
চলছে তাই আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে  সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।

উত্তর : আপনার এ কথা সত্য নয়।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজরু আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির
আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।


গোলাম আযমের পক্ষে বিদেশী সাক্ষী আনার বিষয়ে আপত্তি রাষ্ট্রপক্ষের

১৭/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে দু’জন বিদেশী সাক্ষী আনার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আজ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, অসদুদ্দেশে (ম্যালাফাইডি)  এবং বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য আসামী পক্ষ থেকে এ ধরনের আবেদন জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগের বিষয়ে তীব্র বিরোধীতা করে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এর মধ্যে কোথায় অসদুদ্দেশ্য আছে  তার একটি   উপাদান তারা দেখাক। সম্পূর্ণ আইনী  কাঠামোর মধ্যে এ আবেদন করা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল আইন আমাদের সে অধিকার দিয়েছে।   কোন আবেদন নিয়ে আসলেই তরা মুখস্ত বলে দিচ্ছে অসুদুদ্দেশ্যে আনা  হয়েছে। তাদের এ অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা খুবই  বিরক্ত।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে যে দুজন বিদেশী সাক্ষী আনার জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রতি সমন জারির আবেদন জানানো হয়েছে তারা হলেন, ন্যাটোর সাবেক  কমান্ডার ইন চিফ (এলাইড ফোর্স নর্দার্ন রিজিয়ন) জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেল এবং      আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (গ্যালওয়ে) আইন অনুষদের প্রফেসর উইলিয়াম এ সাবাজ।

গত ১ জুলাই অধ্যাপক গোলাম  আযমের পক্ষে ২ হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর  তালিকা জমা দেয়া হয়। তার মধ্যে উক্ত দুই জন বিদেশী সাক্ষীও ছিলেন। এরপর গত ৯ অক্টোবার ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষকে ১২ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন   করে দিয়ে আদেশ দেন। আসামী পক্ষ  তাদের ১২ জন সাক্ষীর  তালিকায়ও  উক্ত দুই বিদেশী সাক্ষীর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তাদেরকে দেশে এসে সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সমন জারির আবেদন করেন।  আসামী পক্ষের আবেদনে     উপরোক্ত বিদেশী দুজন সাক্ষীকে এক্সপার্ট উইটনেস বা বিশেষজ্ঞ সাক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সেই হিসেবেই তাদের প্রতি সমন জারির আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে নেতৃত্বের দায় (কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) অভিযোগ আনা হয়েছে। স্যার জ্যাক ডেভারেল একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে এ বিষয়ে তার বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরবেন এবং তিনি একজন এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ সাক্ষী।  এছাড়া উইলিয়াম সাবাজ সার্বভৌমত্ব বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরবেন।

গত মঙ্গলবার এ আবেদনের ওপর  শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আজ বুধবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য্য করা ছিল। আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী বা চিফ প্রসিকিউটর  গোলাম আরিফ টিপু বলেন, তারা সাক্ষী হিসেবে আসতে পারেন কিন্তু এক্সপার্ট সাক্ষী হিসেবে নয়। তিনি  অভিযোগ করেন বিচার বিলম্বিত করার জন্য এ ধরনের আবেদন করা হয়েছে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তারা যদি তাদের মামলায় সহায়তার জন্য বিদেশী সাক্ষী আনেন তাহলে আপত্তি কোথায়।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের অপর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন,  আসামী পক্ষের এ আবেদন  অসদুদ্দেশ্য প্রনোদিত।  এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমকে একটি  খোরাক দেয়ার জন্য তারা এ আবেদন এনেছে। তারা  দেশে বিদেশে যে প্রচারনা চালাচ্ছেন তার সুবিধার জন্য তারা এটি করেছেন। তাছাড়া এ আবেদনের কোন ভিত্তি নেই। এ আবেদন বাতিল করা উচিত। এ আবেদন  মেইনটেইনবেল নয়।

জেয়াদ আল মালুম বলেন, গোলাম  আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল বেসামরিক নেতৃত্বের দায়।  আসামী পক্ষ যে বিদেশ  সাক্ষী আনতে চাচ্ছেন তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কি-না সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তারা সিভিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বিষয়ে  বিশেষজ্ঞ কি-না তাও উল্লেখ করা হয়নি।  মামলার যে বিষয়বস্তু তাতে কোনভাবেই এটা ট্রাইব্যুনালের জন্য সহায়ক নয়।
 উইলিয়াম সাবাজের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বই আমরাও পড়ি। তিনি  আন্তর্জাতিকভাবে একজন খ্যাতিমান আইনজ্ঞ তাতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তা কিভাবে আমাদের এই মামলায় প্রয়োজনীয় এবং সহায়ক তা পরিষ্কার নয়।

এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের জবাবে বলেন, তাদের মুখস্ত কথা শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত। সব কিছুতে তারা মুখস্ত বলে দিচ্ছেন  অসুদুদ্দেশ্য। কিন্তু কোথায় কিভাবে অসদুদ্দেশ্যে নিহিত আছে এ আবেদনের মধ্যে তার একটি উপাদান তিনি দেখাক। আমরা যদি বিচার মুলতবি চেয়ে আবদেন করতাম তাহলে এ অভিযোগ করলে মেনে নেয়া যেত। কিন্তু আমরা সম্পর্ণূ আইনী অধিকার বলে এবং আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে আবেদন করেছি। আর  তাকে তারা অসদুদ্দেশ্য বলে দিলেন।
এসময় ট্রাইব্যুনাল  প্রশ্ন করেন   কোন আবেদনকে কি প্রতিপক্ষ ম্যালাফাইডি আখ্যায়িত করতে পারেনা?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক  বলেন, না  সব সময় পারেনা।
এরপর ট্রাইব্যুনাল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি প্রশ্ন করেন, ট্রাইব্যুনাল মনে করলে যেকোন বিশেষজ্ঞকে যেকোন সময় ডেকে আনতে পারি। কিন্তু আপনারা কেন এক্সপার্ট সাক্ষী আনবেন? তারা কোন বিষয়ে আপনাদেরকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাহায্য করবে? আসামী কোন আর্মি কমান্ডার নন। এখানে  আসামীর বিরুদ্ধে সিভিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানে  আর্মি কমান্ডার হিসেবে এসে তিনি কি করবেন?
জবাবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি শুধুমাত্র আর্মিতেই হয়। বেসামরিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ অভিযোগ আনতে হলে তাকে রাষ্ট্রপ্রাধন হতে হবে যার  নিয়ন্ত্রন থাকবে আর্মির ওপর। যেমন   সশস্ত্র বাহিনী প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। প্রতিরক্ষা  মন্ত্রনালয প্রধানমন্ত্রীর হাতে।  এধরনের বেসামরিক ব্যাক্তির ক্ষেত্রে  বেসামিরক  নেতৃত্বের দায় চাপানো  যায় । কিন্তু  অধ্যাপক গোলাম আযম  এ ধরনের কোন    ক্ষমতায় ছিলেননা যাতে বলা যায়  আর্মির ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দর রাজ্জাক বেলন, কমান্ড রেসপনসিবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৯ সালে যখন উপসাগরীয় যুদ্ধ হল তখন তাতে যুক্তরাষ্ট্র  এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশ অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনকে বলেছিল তোমাদের আর্মিও আমাদের কমান্ডে থাকুক। কিন্তু  বৃটেন তাতে রাজি না হলে বলল আমাদের আর্মি আমাদের নেতৃত্বে থাকবে।
সেজন্য  এ বিষয়টির বিষয়ে  আমরা ন্যাটোর  সাবেক জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেলকে আনতে চাচ্ছি।

শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন আগামী কাল এ বিষয়ে আদেশ হবে।



সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দের ঘোষনা /////আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে

 ১৫/১০/২০১২
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা এবং হয়রারিন বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেছেন, আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে । ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর  গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন,  অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে সকল ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি তুলে নিতে হবে এবং হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশর সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে  এবং গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।   ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে তার পেশাগত  দায়িত্ব পালনে  হয়রানি এবং বাঁধার প্রতিবাদে সুপ্রীম কোর্টের  আইনজীবীবৃন্দ আজ সুপ্রীম কোর্ট বারের  দণি হলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন    দেশের প্রবীণ আইনজীবী  বিচারপতি  টিএইচ খান।
সভায় বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের  ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  সিনিয়র অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদীন,  সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মো¤ম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন এমপি, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, গোলাম মো: চৌধুরী আলাল, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত হন।


টিএইচ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আপনারা গোয়েবলসের নাম শুনেছেন কিন্তু হ্যান্সিয়ানির নাম শোনেননাই। হিটলারের সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন হ্যান্সিয়ানি। সে সময়ও আইনজীবীদের এরকম নজরদারি করা হত। পরে ওই আইনমন্ত্রীর ফাঁসি হয়েছিল। এখন যা কিছু হয়, তাই বলা হয় যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আজ আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে সমেবেত হয়েছি তা সত্যিই হৃদয় বিদারক। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একজন বিজ্ঞ আইনজীবী।  তিনি তার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারবে না। তার কোনো ক্রিটিক নেই।  আজ তার পেছনে সরকারের  গোয়েন্দা নজরদারি ও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।’

তিনি   বলেন, ‘আমরা কথায় কথায় বলি পবিত্র সংবিধান, পবিত্র সংবিধান।  আপনারা সংবিধান খুললে দেখতে পাবেন তিনি (ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আর সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ মতে, একজন আসামীরও অধিকার আছে তিনি কাকে আইনজীবী হিসাবে পছন্দ করবেন। সাংবিধানিক এই দায়িত্ব পালনকালে তার পিছু নেয়া হচ্ছে- এমন কথা শুনতে অত্যন্ত কষ্ঠ লাগে। এটি করা হচ্ছে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যা কিছুই ঘটে সরকার বলে যে, এটি যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে করা হচ্ছে। আপনারা জানেন দেশে ঠাডা পইরা (বজ্রপাতে) মানুষ মরতেছে।  বলা হবে যে, এটি  যুদ্ধাপরাধ বিচারকে বানচাল করার জন্যই হচ্ছে। এখন বন্যার সময় নয়। কিন্তু অকাল বন্যা হতে পারে। তখন সরকার বলবে যে, এটিও বিচারকে বানচাল করার জন্য করা হয়েছে। এই ধরনের আর্গুমেন্ট হিটলারের সময় করা হতো।’


ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অপরাধ তিনি তার  পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা বিচারের বিরুদ্ধে নই। ব্যারিস্টার রাজ্জাকও বিচারের বিরুদ্ধে নন। বিচারের বিরুদ্ধে হলে তিনি তো ট্রাইব্যুনালে যেতেননা। তিনি তো ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিচারকে সহায়তা করছেন। আমরা সবাই স্বচ্ছ বিচার চাই। তিনিও স্বচ্ছ বিচারের জন্য কাজ করছেন। সেটাই তো সবার উদ্দেশ্য। কিন্তু আজ তাকে হয়রানি করে মূলত আইনের শাসন, আইনজীবীদের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত করা হয়েছে। একজনকে তার পেশায় বাঁধা দেয়ার মত হীন কাজ আর কিছু  হতে পারেনা।  এ  ধরনের হয়রানি বন্ধ করা  হোক। তা না হলে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইনের শাসন না থাকলে গনতন্ত্র  এবং মানবসভ্যতা থাকতে পারেনা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত লোকের পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি করা আইনের শাসন এবং সংবিধানের লঙ্ঘন।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অপরাধ সমর্থন করা কোন আনজীবীর দায়িত্ব নয়। কোন আসামীকে আদালতেক হাজির করা হলে  সে দোষী না নির্দোষ সেটা প্রমানে কোর্টকে সহায়তা করা আইনজীবীর দায়িত্ব।  শুধু ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নয় বাংলাদেশের যেকোন আইনজীবীর ওপর তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের বাঁধা আসলে আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব। আইনজীবীকে তার পেশাগত কাজে বাঁধা দেয়া, হয়রানির পরিমনা অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীদের  বিজয়ের পর সরকার এখন বার কাউন্সিলকে পঙ্গু করার জন্য একটি আইন করছে। আমরা ৪৬ হাজার আইনজীবীর প্রতিনিধি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোন অপরাধকে সমর্থন করতে ট্রাইব্যুনালে যাননি।  ট্রাইব্যুনালে  যাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে তাদের আইনগত সহায়তা করছেন এবং তিনি কোর্টকে সহায়তা করছেন। এর আগে আসামী পক্ষের আরেক  গুরুত্বপূণূ আইনজীবী তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র   গোয়েন্দারা হানা দিয়েছে। সরকারের মনে রাখা উচিত কালো পোশাকধারীরা রাস্তায় নামলে তাদের  পতন অনিবার্য ।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা  বলেন, এটর্নি জেনারেল শুধু সরকারের এটর্নি জেনারেল নন। তিনি সারা বাংলাদেশের   এটর্নি জেনারেল। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির বিষয় জানার সাথে সাথে তার উচিত ছিল এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা। প্রয়োজনে কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারতেন। এটি তার দায়িত্ব ছিল। তিনি তা না করায়   আইনজীবী সমাজ ুব্ধ এবং ব্যথিত। এ অবস্থা  উত্তোরনের জন্য আমি তাকে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা আইনের শাসন মানেনা, গণতন্ত্র মানেনা তারাই কেবল এ কাজ করতে পারে।

ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির প্রতিবাদ করে তিনি বলেন এ আঘাত সমস্ত আইনজীবীদের ওপর আঘাত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল। যদি এ হয়রানি বন্ধ না করা হয় প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদন বলেন, গনতান্ত্রিক নামের এ সরকারের আমলে কেউ তার  পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেননা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত একজন আইনজীবীকে গোয়েন্দা  নজরদারিতে রাখা এবং হয়রানি করা  অত্যন্ত লজ্জার কথা। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র আইনজীবী। অনেক আগে তাকে   সিনিয়র আইনজীবী করা হয়েছে। তিনি ডাবল স্টারধারী । আপীল বিভাগ  এ মর্যাদা দিয়ে থাকে।
যাইনুল আবেদীন বলেন, সরকার যদি অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে হয়রানি এবং গোয়েন্দা নজরদারি তুলে না নেয় তাহলে ব্যাপক কর্মসূচী দেয়া হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি বলেন, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সাথে এ সরকারের পার্থক্য কোথায়? তখনো  মানুষের পেছনে এভাবে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার পেছনে সব সময় কিছু হোন্ডা ঘুরত। বর্তমান সরকার ওয়ান ইলেভেনের প্রাডাক্ট। তাই দুই সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যখন কোন বিচার হয় তখন যদি তার আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য না থাকে তাহলে রাষ্ট্র  তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। আইনজীবী ছাড়া কারো বিচার হয়না। সংবিধানে এ অধিকার দিয়েছে নাগরিকদের। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আসামীর পক্ষে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আইনজীবীদের নিয়ে ছিনিমিন খেলবেননা। এ হয়রানি বন্ধ না হলে বিচার প্রশাসন বন্ধ হয়ে যাবে। কারন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোন একজন মাত্র ব্যক্তি নন।

আফজাল এইচ খান বলেন, আজ অত্যন্ত একটি পরিতাপের বিষয় নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছি। জনগন আজ পীড়িত। কিছু হলেই বলা হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য এটি করা হচ্ছে।
ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, পুরো দেশ আজ কারাগার, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের মত দেশে আজ গুম সংস্কৃতি চালু হয়েছে।  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর হেনস্থার আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গোলাম মো: চৌধুরী আলাল বলেন,  বাংলাদেশ আজ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনজীবীদের পেশা পালনে বাঁধা এবং মৌলিক অধিকার হরনের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তার সর্বশেষ নজীর  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির ঘটনা।

প্রতিবাদ সভাপর শুরুতে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে  তিনি ১০ জন আসামীর পক্ষে  প্রধান আইনজীবী। তিনি তার মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ এ পর্যায়ে  উপনীত হয়েছেন। আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবস্থান করছেন। তার গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।  তিনি যাতে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন সেজন্য তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আছে’ প্রতিবেদন বিষয়ে জেরা ///প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে প্রশ্নে আপত্তি ট্রাইব্যুনালের


মেহেদী হাসান, ১১/১০/২০১২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে  বিরোধী দলীয়  নেতা থাকাকালে ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল গণআদালতের ন্যায্যতা এবং  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রমান তুলে ধরে একটি ভাষন দেন। ভাষনে তিনি বলেন, গোলাম আযম যে একজন হত্যাকারী ছিলেন তার একটি প্রমান আমি এখানে এনেছি। কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর  গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালকে গোলাম আযমের লিখিত নির্দেশে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৭  অক্টোরব সিরু মিয়া এবং তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামাল ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার সময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাসহ রাজাকারদের  হাতে ধরা পড়েন। সিরু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অনেক দু:সাহসিক কাজ করেছেন। তিনি আমাদের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী বেগম তাজউদ্দিনকে সপরিবারে কুমিল্লা সীমান্ত থেকে পার করে দিয়েছিলেন। সেই সিরু মিয়াকেও গোলাম আযমের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। তার নজির  ও প্রমান (কাগজ দেখিয়ে) এই কাগজে আছে। আপনি (মাননীয় স্পিকার) চাইলে এই কাগজও আপনার কাছে দিতে পারি।

পাক্ষিক ‘একপক্ষ’ নামে একটি ম্যাগাজিনে  বাংলা ১৪১৭ (ইংরেজি ২০১০ ) সংখ্যায় ‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই  আছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  সংসদে   প্রধানমন্ত্রী  অভিযোগ এবং প্রমান উত্থাপন   সংক্রান্ত উপরোক্ত বিষয়টি বিস্তারিত  তুলে ধরা হয়।

একপক্ষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত  উপরোক্ত প্রতিবেদনটি  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে ।  এ বিষয়ে আজ   তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় মিজানুল ইসলাম প্রশ্ন করেন,  প্রতিবেদনে বর্নিত  প্রধানমন্ত্রীর  কাছ থেকে ওই প্রমানপত্রটি   উদ্ধারের জন্য   যোগাযোগ করেছিলেন কি-না।  প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে করা এ পশ্নে  আপত্তি  করেন ট্রাইব্যুনাল। শেষে ট্রাইব্যুনালের পরামর্শে মিজানুল ইসলাম  প্রশ্নটি অন্যভাবে করেন।  এরপর এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,  তিনি ওই প্রমানপত্রটি সংগ্রহ করেননি । এমনকি অধ্যাপক গোলাম আযম যে পেয়ারা মিয়ার কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন বলে বলা হয় তার বাড়িতে তল্লাসী করেনি এবং তার ছেলের সাথেও যোগাযোগ করেননি বলেন জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ঈদের  দিন রাতে  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানা থেকে  সিরু মিয়া, তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালসহ ৩৮ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ হত্যঅ  বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের  বিরুদ্ধে অভিযোগ  আনা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে জেরা করা হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে।



জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : ‘গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের প্রমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই  আছে’ শিরোনামে ‘একপক্ষ’ ম্যাগাজিনে  প্রকাশিত একটি   প্রতিবেদন আপনি দাখিল করেছেন।
উত্তর : হ্যা।

প্রশ্ন :  প্রতিবেদনে  গোলাম আযমের  বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমান যেখানে আছে বলা হয়েছে তা সংগ্রহের জন্য সেখানে যোগাযোগ করেছিলেন?
উত্তর : না। কারণ তদন্তের জন্য তা প্রয়োজন মনে হয়নি।
প্রশ্ন : ওই  প্রতিবেদনে  বর্নিত সিরু মিয়ার মুক্তির জন্য গোলাম আযমের যে চিঠির কথা বলা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য সচিবালয় বা কোন মন্ত্রণালয়ে  আপনি কোন পত্র পাঠিয়েছিলেন?

উত্তর : না।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের লিখিত সিরু মিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত চিঠিটি আপনি সিরু মিয়ার স্ত্রী শহীদ জননী আনোয়ারা বেগম আপনাকে প্রদান করেননি।
উত্তর :  না, তিনি  প্রদান করেননি।
প্রশ্ন : চিঠি উদ্ধারের জন্য আপনি পেয়ারা মিয়ার বাড়ি  তল্লাসী করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পেয়ারা মিয়া জীবিত?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তার ছেলে মেয়ে জীবিত আছে কেউ?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : বড় ছেলের নাম কি?
উত্তর :  সানাউল হক  চৌধুরী নামে এক ছেলের নাম আছে।
প্রশ্ন : তার সাথে যোগাযোগ করেছেন চিঠি উদ্ধারের জন্য?
উত্তর : না কারণ আমার ধারণা থাকলেও সে দেবেনা।
প্রশ্ন :  আনোয়ারা বেগম অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছে গেছেন এ মর্মে আপনার তদন্তে কোন তথ্য নাই।
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালে মার্চ মাসে আল হামরা প্রসাদে সৌদি বাদশার সাথে অধ্যাপক গোলাম আযম সাক্ষাৎ করেছেন এ মর্মে আপনার কাছে তথ্য আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এ তথ্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পেয়েছেন না কোন ডকুমেন্ট আকারে পেয়েছেন?
উত্তর : ব্যক্তির কাছ থেকে।
প্রশ্ন : যার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনিও সেদিন সৌদি বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম কবে দেশে আসলেন?
উত্তর : ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই  পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন।
প্রশ্ন : দেশে আসার পরপর  গোলাম আযম  সাহেব তার পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন।
উত্তর : আমার তদন্তে নাই। তবে ১৯৯৩ সালে তার নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ বেআইন ঘোষনা করে হাইকোর্টের প্রদত্ত রায় বহাল রাখেন আপীল বিভাগ।

প্রশ্ন :  তদন্তকালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য জানার জন্য তার কাছে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তার বক্তব্য জানার জন্য তাকে কোন চিঠি দিয়েছিলেন?


উত্তর : না।
প্রশ্ন : সিরু মিয়া এবং তার ছেলে আনোয়ার কামাল  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানায় আটক ছিলেন এ মর্মে কোন দালিলিক প্রমান আছে আপনার কাছে?
উত্তর : সরকারি রেকর্ড নেই। তবে জেলখানা থেকে আনোয়ার কামাল তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছেন তা আছে এবং এ মর্মে সাক্ষীও আছে।

প্রশ্ন : জেলখানা থেকে আত্মীয়দের কাছে চিঠি লিখতে হলে তা জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখতে হয় তা জানা আছে?
উত্তর : ১৯৭১ সালে ওই জেলখানায় সেরকম কোন পরিস্থিতি ছিলনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ওই জেলখানার প্রধান কেউ  ছিলেন ?
উত্তর : থাকতে পারে।
প্রশ্ন : আনোয়ার কামাল কর্তৃক তার মায়ের কাছে যে চিঠি লেখার কথা জানিয়েছেন তা তা জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো হয়নি ঠিক কি-না?
উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো  নয় তবে সাক্ষী আনোয়ারা বেগমের ভাই ফজলুর রহমানের মাধ্যমে  তা আনোয়ারা বেগমের  হাতে আসে।
প্রশ্ন :  ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার  সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসর  (এসডিপিও)  কে ছিলেন?
উত্তর : ইসমাইল হোসেন সিএসপি।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া  জেল সুপার কে ছিলেন সে বিষয়ে কোন  খোঁজ খবর নেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে  ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলখানায় কয়েদী/বন্দী সংক্রান্ত কোন নথিপত্র সংগ্রহ করেননি।
উত্তর : পাইনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ২১ নভেম্বর ওই জেলখানায় কারারক্ষী হিসেবে কারা ছিল তাদের নামও সংগ্রহ করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে কারা বিভাগের প্রধানের কাছে কোন চিঠি লিখেছেন ?
উত্তর : না করন ওই সময় স্বাভাবিক অবস্থা ছিলনা।
প্রশ্ন : তদন্তকালে চিনু মিয়া নামে কারো অস্তিত্ব পেয়েছেন?
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?
উত্তর : না। কারণ খুঁজে পাইনি।
প্রশ্ন : তার ঠিকানা পেয়েছিলেন?
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : তার বাড়ি কোথায়?
উত্তর : এ মুহূর্তে  বলতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর শহীদ সিরু মিয়া, শহীদ আনোয়ার কামাল ছাড়া বাকী যে ৩৬ জনকে জেল থেকে বের করে  শহীদ  করা হয় তাদের কারো  খোঁজ পেয়েছেন?
উত্তর : শহীদ নজরুলসহ আরো কয়েকজনের খোঁজ পেয়েছি তবে এ মুহুর্তে তাদের নাম বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া শহর থেকে নিখোঁজ হয়েছেন এ মর্মে কোন তথ্য পেয়েছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া শহরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা প্রখ্যাত যারা মুক্তিযোদ্ধা  আছেন তাদের  পরিচিত কেউ ১৯৭১ সালে নিখোঁজ হয়েছেন কি-না   সে বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন?

উত্তর : আমার ডায়েরিতে উল্লেখ নেই।




আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার  কার্যক্রম পরিচালনা করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী,  অ্যাডভোকেট শিশির মনির প্রমুখ।
চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম,  প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে।

ডিফেন্স আইনজীবীদের হয়রানির প্রতিবাদে বার কাউন্সিলের হুঁশিয়ারি ///পেশাগত দায়িত্ব পালনে হয়রানি করা হলে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আাব্দুর রাজ্জাকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি এবং  ডিফেন্স টিমের (আসামী পক্ষের আইনজীবী)  অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র  গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের প্রেক্ষিতে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারন করা হয়েছে বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে।

সারা দেশের আইনজীবীদের অভিভাবক সংগঠন ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল’র পক্ষ থেকে  সতর্ক করে দিয়ে   বলা হযেছে  ‘আমরা সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে একজন আইনজীবীর উপর আঘাত আসলে আমরা এটাকে সমগ্র আইনজীবীদের উপর আঘাত বলে ধরে নেবো এবং এর বিরুদ্ধে দেশের সকল আইনজীবীকে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।’

গত মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সিভিল ড্রেসে ১০/১২ জন গোয়েন্দা পুলিশ  হানা দেয়।
এর প্রতিবাদে আজ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবন অডিটরিয়ামে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন লিখিত বক্তব্য পেশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে সরকার। তাদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। গোয়েন্দা নজরদারির নামে তাদের চেম্বারে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা  করা হয়েছে। বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘আমরা দেশে আইনের শাসন চাই। যারা দোষী তাদের সাজা হোক। কিন্তু যদি বিচারের নামে প্রহসন হয় এবং আইনজীবীদের যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হয়রানি করা হয়, তবে আমরাও বাধ্য হবো রাস্তায় নামতে। কালো কোর্ট (আইনজীবীরা) যদি একবার রাস্তায় নামে, অতীতের ইতিহাস দেখুন সে সরকার বেশি দিন টিকেনা।’

সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করে ডিফেন্স টিমের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত  ৮/১০ দিন ধরে ২/৪ জন গোয়েন্দা আমাকে নজরদারি করছে। তারা আমার বাসায় গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমনকি আমার সাথে একজন গোয়েন্দা কথাও বলেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, যাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে না পারি সেজন্যই এমনটি করা হচ্ছে। একজন আইনজীবীকে যদি হয়রানি করা হয় তবে কিভাবে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, একজন আইনজীবীকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে হয়রানি করা আদালত অবমাননার শামিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে। আমরা বার বার এর প্রতিবাদ করেছি। অতীতেও আমরা দেখেছি, যারাই বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছে তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এই কারণে দেশবাসীর মাঝে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবী। আমরা কোনো অপরাধকে সমর্থন করিনা। আমাদের দায়িত্ব, যখন একজন আসামীকে বিচারের আওতায় আনা হয়, তখন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার প্রকৃত অবস্থানকে তুলে ধরা। এমনকি ফাঁসির যে আসামী থাকে, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাদের যদি সামর্থ না থাকে তখন সরকার পক্ষ থেকে তাদের আইনি সহায়তা দেয়া হয় যাতে আদালত ন্যায় বিচার করতে পারে। তাই আজকে আমরা চাই, বাংলাদেশে আইনের শাসন কায়েম হোক। এর বিপরীত প্রচেষ্টা যদি হয় তবে দেশের আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসাবে রুখে দাঁড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিগত কয়েক দিন ধরে দেখছি, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে। শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের অন্যতম একজন আইনজীবীর (অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম) চেম্বারে সাদা পোশাকে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে তারা। আমরা মনে করি, এমন আচরণ আমাদের পেশাগত দায়িত্বের প্রতি সরকারের প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন চাই। যারা দোষী তাদের সাজা হোক। কিন্তু যদি বিচারের নামে প্রহসন হয় এবং আইনজীবীদেরকে যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হয়রানি করা হয় তবে আমরাও বাধ্য হবো রাস্তায় নামতে। কালো কোর্ট যদি একবার রাস্তায় নামে, অতীতের ইতিহাস দেখুন সে সরকার বেশি দিন টিকেনা। তিনি বলেন, দেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেবো না যাতে দেশে অশুভ একটি শক্তির আবির্ভাব হয় এবং দেশে অশান্তির সৃষ্টি হয়।’

লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির লোকেরা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সারা দেশের আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সব আইনজীবীর পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের অন্যতম প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তল্লাশির নামে আইনজীবী, কায়েন্ট এবং কর্মচারীদের হয়রানি করছে। এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। কোনো সভ্য দেশে আইনজীবীদের চেম্বারে এইভাবে হয়রানিমূলক অভিযান চালানো হলে সংবিধান এবং আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হতে বাধ্য। আইনজীবীগণ ‘অফিসার্স অব দ্য কোর্ট’ হিসাবে বিবেচিত এবং তাদের চেম্বারসহ যাবতীয় পেশাগত কার্যক্রম ‘চৎরারষবমবফ’ বলে বিবেচিত। পুলিশ আইনজীবীর চেম্বারে অভিযান চালিয়ে আইনজীবীদের পেশাগত অধিকারকে পদদলিত করেছে। এরূপ অবস্থায় কোনো আইনজীবীর পক্ষে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য স্বাধীন এবং ভয়-ভীতিহীনভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, সব মানুষেরই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে এবং সেটি সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। আইনজীবীকে হয়রানি করার অর্থ সংবিধান স্বীকৃত এই মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করা । অতীতের কোনো সরকার এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড করতে সাহসী না হলেও বর্তমান সরকার অবলীলাক্রমে তা করতে উদ্যত হয়েছে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারির নামে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তিনি যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে না পারেন সে ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে একজন আইনজীবীর উপর আঘাত আসলে আমরা এটাকে সমগ্র আইনজীবীদের উপর আঘাত বলে ধরে নেবো এবং এর বিরুদ্ধে দেশের সকল আইনজীবীকে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।’

বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১২ তম সাক্ষী ///মাওলানা সাঈদী ১৯৬৯ থেকে যশোরে আমাদের বাসার পাশে থাকতেন



মেহেদী  হাসান,10/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে  আজ বুধবার ১২ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  যশোরের এ সাক্ষীর নাম হাফিজুল হক। সাক্ষী বলেন, আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে যশোরের নিউটাউনে থাকতাম। আমাদের বাসার পাশে একটি বাসায় ১৯৬৯ সাল থেকে ভাড়া থাকতেন মাওলানা  সাঈদী। এরপর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের যুদ্ধ শুরু হলে মাওলানা সাঈদীসহ আমরা পাশাপাশি চারটি পরিবার একত্র হয়ে  ৪ এপ্রিল  গ্রামের দিকে চলে যাই।  এর কিছুদিন পর মাওলানা সাঈদী  যশোরের মহীরনে তার এক পীর সাহেবের বাড়িতে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যে অভিযোগ তাতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ৮ মে পারেরহাটে যখন পাকিস্তান আর্মি আসে তখন  অন্যান্য রাজাকারদের সাথে মাওলানা সাঈদী তাদেরকে স্বাগত জানান পাড়েরহাট রিক্সাস্ট্যান্ডে। এরপর ওই দিনই পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান আর্মি,  মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার এবং শান্তিকমিটির নেতৃবৃন্দ লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগে অংশ নেন। এছাড়া  ৮ মে পাড়েরহাটে পাকিস্তান আর্মি আসার আগে সেখানে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের বিষয়ে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী এ  মর্মে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে   গতকালের সাক্ষীসহ আরো কয়েকজন যশোরের সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, মাওলানা সাঈদী যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই যশোরে থাকতেন স্বপরিবারে এবং    এপ্রিল, মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যশোরেই  ছিলেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ হাফিজুল হক । বয়স-৫২ বছর । গ্রাম- খড়কী, বামনপাড়া রোড, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর। আমি মুদি মালের ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১১ বছর এবং আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে যশোর নিউ টাউনে এ ব্লকের ১৮৪ নম্বর বাসা একজন এ্যালটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা ঐ বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৮ সালে আমার বাসার পশ্চিম পাশে ১৮৫ নম্বর বাসা মৃত হযরত আলী সাহেব এক এলোটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা দুই পরিবার পাশাপাশি বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৯ সালে আমার বাসার পূর্বদিকে প্রিন্সিপাল আনোয়ার সাহেবের ১৮৩ নম্বর বাসায় মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন।  ঐ একই সময়ে প্রফেসর আনোয়ার সাহেবের ১৮২ নম্বর বাসায় মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মরহুম হযরত আলী মিয়া যশোর এস.পি অফিসের হেড কার্ক ছিলেন। মাওঃ



আবুল খায়ের সাহেব আমার পিতার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। মাওঃ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ  ভয়াল রাতে  যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যশোর শহরের উপর গোলাগুলি চলতে থাকে।  পরবর্তী ২/৩ দিন ও একই ভাবে গোলাগুলি চলতে থাকে। এমতাবস্থায় শহরের লোকজন গ্রামের দিকে আশ্রয় নিতে থাকে। আমার পিতা, হযরত আলী চাচা, আবুল খায়ের চাচা এবং সাঈদী চাচা সম্মিলিতভাবে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার।
পরবর্তী ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শেখহাটি চলে যাই। ওখানে আমার পিতার স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম জয়নুল আবেদীন সাহেবের বাসায় রাত্রি যাপন করি। পরের দিন সকালে চাচা আবুল খায়ের সাহেবের মামার বাড়িতে ধান কাটাঘাটা নামক স্থানে চলে যাই। ওখানে আমরা ৭/৮ দিন থাকি। অনেকগুলি পরিবার এক জায়গায় থাকায় আবার ৪ জন মুরব্বিরা মিলে  সিদ্ধান্ত  নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বলেন যে, তিনি বাঘার পাড়ায় মহিরণের পীর সাহেবের বাড়ি যাবেন। আমার পিতা এবং হয়রত আলী সাহেব একত্রে ইন্ডিয়া চলে যাবেন। পরবর্তী দিন সকালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব মহিরনের উদ্দেশ্যে চলে যান। তারপর হযরত আলী এবং আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যাই এবং মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ঐ বাড়িতেই থেকে যান।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেফ হাউজের সাক্ষী আনার জন্য মাওলানা সাঈদীর বিচার এক সপ্তাহ মুলতুবির আবেদন///একদিন মুলতুবি দিলেন আদালত

১০/১০/২০১২
সেফ হাউজের পুলিশ সদস্যসহ তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের  মাওলানা  সাঈদীর মামলায় সাক্ষী হিসেবে হাজির করার প্রস্তুতির জন্য  আসামী পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের জন্য   বিচার মুলতবি  চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আগামী কাল বৃহষ্পতিবার এক দিনের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুলতবি দিয়েছেন। শর্ত হল রোববার মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী হাজির করতে হবে। আসামী পক্ষ শর্ত সাপেক্ষে একদিনের মুলতবি নিতে রাজি হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনাল-১ এ মাওলানা সাঈদীর বিচার চলছে।

সেফ হাউজের (রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ঢাকায় এনে রাখা হত যেখানে) দায়িত্বরত পুলিশ এবং তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাসহ মোট ৩৮ জনকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করার জন্য মাওলানা সাঈদীর  আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল গত রোববার। সোমবার শুনানী শেষে  মঙ্গলবার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল । আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে সমন জারি করা হবেনা। আসামী পক্ষ চাইলে তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবে। তবে মোট সাক্ষীর সংখ্যা পূর্ব নির্ধারিত ২০ জনকে  অতিক্রম করবেনা।  অর্থাৎ নতুন সাক্ষী আনতে হলে পূর্বে ২০ জনের যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেখান থেকে বাদ দিতে হবে।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ২০ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন  করে দিয়ে ইতোপূর্বে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম আজকের মুলতবি আবেদনের  শুনানীতে বলেন, যেহেতু ট্রাইব্যুনারের পক্ষ থেকে সমন জারি করা হবেনা তাই সাক্ষীদের কাছে আমাদের যেতে হবে। তারা আসবে কি-না সেটি আমাদের জানা দরকার।  যদি আসে কাদের আনা দরকার সেটাও ঠিক করতে  হবে। কারণ  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  ট্রাইব্যুনাল আমাদেরকে ২০ জন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছেন। এখন সেফ হাউজ থেকে আমাদের নতুন সাক্ষী আনতে হলে বাকী আটজন থেকে কাউকে বাদ দিয়ে আনতে হবে।  সেজন্য নতুন সাক্ষী বাছাই, তাদেরকে রাজি করানোর জন্য  মাওলানা সাঈদীর বিচার এক সপ্তাহ মুলতবি রাখা হোক।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এ  দরখাস্ত আপনারা আগে করতে পারতেন। কিন্তু করেছেন গতকাল। আমাদের মনে হচ্ছে এর পেছনে কোন রহস্য বা গোপন উদ্দেশ্য (আলটারিয়র মোটিভ)  আছে। সব শেষে যখন আর কিছু করার  সময় থাকবেনা মুলতবি  ছাড়া তখন এটা করেছেন কোর্টকে বাধ্য করার জন্য। আগে করলে হয়ত এক সপ্তাহ সময় দিতাম। কিন্তু এখন সময় দেয়া সম্ভব নয়। ইউ আর  সরি। আমরা সময় দেয়ার জন্য প্রস্তুত নই। এটা অনেক দিন আগে থেকে বলেছি।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কাছে মনে হতে পারে  আলটারিয়র মোটিভ আছে। কিন্তু আমরা সেকরম কোন কিছু বিবেচনা করে এ দরখাস্ত করিনি। আমরা মনে করেছি ন্যায় বিচারের স্বার্থে এখন এ দরখাস্ত করা দরকার তাই করেছি।

এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা শর্তে আপনাদের আগামীকাল বৃহষ্পতিবার একদিনের জন্য  মুলতবি দিতে পারি সেটা হল রোববার সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষী আনতে হবে। এতে রাজি আছেন কি-না বলেন।
মিজানুল ইসলাম আরো একদিন  সময় চাইলে কোর্ট তাতে রাজি হননি এবং মিজানুল ইসলাম একদিন মুলতবি মেনে নেন।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।






ডিফেন্স টিমের অফিসে ডিবি পুলিশের হানা দেয়ার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন///আগামীকাল লিখিত আকারে জানানো হবে

 ১০/১০/২০১২
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের অন্যতম সদস্য তাজুল ইসলামের চেম্বারে গতকাল মঙ্গলবার  ডিবি পুলিশের অস্ত্রসহ হানা দেয়ার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আজ।  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সকালে   ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিষয়টি উপস্থাপন করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন এটা আদালত অবমাননার শামিল কারণ আমরা কোর্টের অফিসার। তিনি আইনজীবীদের সুরক্ষার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষকে পরামর্শ দিয়ে বলেন,  আপনারা প্রথমে জিডি করেন। সেটা রিফিউজ করলে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশন নেব।

তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের (২)  পরামর্শক্রমে তারা বিষয়টির ব্যাপারে জিডি করেছেন এবং আগামীকাল বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনালকে লিখিত আকারে পেশ করবেন।


ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সকালে  ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ করে বলেন,  ডিবি পুলিশের সশস্র সদস্যরা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের অফিসে হানা দিয়ে আইনজীবী ও কায়েন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ডিফেন্স আইনজীবীর  চেম্বারে ডিবি পুলিশের হানা দেয়ার বিষয়ে প্রথম আলো, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই আদালত  অবমাননার শামিল।  আমরা কোর্ট অফিসার। আর ওই অফিসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সকল মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ডিবি পুলিশ এভাবে ডিফেন্স কাউন্সেলের অফিসে হানা দিয়ে আইনজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না। বিষয়টি আদালতের নজরে নেয়া উচিত।

এসময় ট্রাইব্যুনাল জানতে চান কেন তারা এই কাজ করল সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দিয়েছে কি?
এর জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, না কোন ব্যাখ্যা দেয়নি।
এরপর ট্রাইব্যুনাল জানতে চান তারা কি ইউনিফর্ম পরা ছিল?
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, না সাদা পোশাকে ছিল। তবে একজন পরিচয় দেন তিনি ডিবি অফিসার মাহফুজ।
ট্রাইব্যুনাল আরো জানতে চান চেম্বারের কোন জিনিষ তছনছ করেছে কি না?
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, না কোন জিনিষ তছনছ করেনি।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনারা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন?
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, না জানায়নি। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, স্থানীয় থানায় জানানো প্রয়োজন ছিল। কারণ তারা যদি বলে যে আমরা যাইনি।
এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, এর আগে একবার আমার চেম্বারে ডিবি পুলিশ গিয়ে বলেছিল এখানে বোমা তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা থানায় জিডি করতে চাইলে তা নেয়া হয়নি।
শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনারা প্রথমে জিডি করেন। সেটা রিফিউজ করলে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশন নিব।

ট্রাইব্যুনাল আরো বলেন, ট্রাইব্যুনালে যা জানানোর তা লিখিত আকারে জানান।
তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন আগামীকাল তারা ট্রাইব্যুনালে বিষয়টি লিখিত আকারে পেশ করবেন।
ডিফেন্স টিমের অফিসে  ডিবি পুলিশের হানা দেয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও আজ পেশ করা হয়। ট্রাইব্যুনাল -১ মন্তব্য করেন এটা আইনশৃঙ্খলার বিষয়। এখানে ট্রাইব্যুনালের করার কি আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারক মো: শাহীনুর ইসলাম  বিষয়টির শুনানী গ্রহণ করেন।





মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাসহ ২ সাক্ষীর জবানবন্দী /// রাজাকার দেলোয়ার শিকদারকে জনতা হত্যা করে



মেহেদী হাসান,9/10/2012
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ   দু’জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে।  এদের একজন  হলেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন । আরেকজনের নাম গোলাম মোস্তাফা।
আনোয়ার হোসেন তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর  পিরোজপুর মুক্ত হবার ২ দিন পরে দেলোয়ার শিকদার, মানিক খন্দকার এবং  শঙ্করপাশার রাজ্জাক রাজাকারকে উত্তেজিত জনতা মেরে পায়ে দড়ি বেঁধে  তাদের  ক্যাম্পে নিয়ে আসে জনতা।

মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বর্তমানে যে বিচার চলছে তাতে একটি অভিযোগ হল মাওলানা সাঈদীর নাম দেলোয়ার শিকদার ছিল।   স্বাধীনতার অনেক পরে নাম পাল্টে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নামে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীগন  ইতোপূর্বে  ট্রাইব্যুনালে প্রমানের  চেষ্টা করেছেন দেলোয়ার শিকদার নামে একজন রাজাকার ছিল এটি সত্য। তবে সে স্বাধীনতার পরপর জনরোষে নিহত হয়। কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার শিকদার এবং মাওলানা সাঈদী সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন ব্যক্তি। তাদের পিতার নামও ভিন্ন। রাষ্ট্রপক্ষের  প্রবীণ সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী জেরায়  স্বীকার করেন দেলোয়ার শিকদার জনরোষে নিহত হয়ে থাকতে পারে।  গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বললেন দেলোয়ার হোসেনকে মেরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে এসেছিল জনতা।
অপর দিকে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন গোলাম মোস্তাফ।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ  ইব্রাহীম কুট্টিকে  ১৯৭১ সালে  ৮ মে পারেরহাট  নিয়ে  মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে হত্যা করা হয়। মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী বললেন ইব্রাহীম কুট্টিকে ১ অক্টোবার তার শশুরবাড়ি নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয়। সে মর্মে ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী  মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে যে মামলা করেছিলেন সে মামলার এজাহার  আদালতে দাখিল করা হয়। তাতে ইব্রাহীম কুট্টির হত্যাকান্ডের স্থান নলবুনিয়া এবং হত্যার তারিখ ১ অক্টোবার  উল্লেখ করেছেন তার   স্ত্রী মমতাজ বেগম।

আনোয়ার হোসেনের জবানবন্দী : আমার নাম আনোয়ার হোসেন। বয়স ৫৭ বছর। গ্রাম কদমতলা, থানা এবং জেলা পিরোজপুর। আমি বর্তমানে ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকাসহ  বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে পাক সেনারা নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। হাজার হাজার  নারনারী খুন করে এবং গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে। এ খবর ২৬ মার্চ আমরা  সকালে জানতে  পেরে আমিসহ আরো ৬/৭ জন আমাদের এম  এন এ  অ্যাডভোকেট  জনাব এনায়েত হোসেন  খান এর কাছে চলে যাই। তিনি তখন জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বলেন, বক্তব্য শোনার জন্য আমরা আসিনি। অস্ত্র চাই। তাৎক্ষনিকভাবে এনায়েত হোসেন সাহেব উত্তেজিত জনতাসহ  ট্রেজারিতে চলে যান। সেখান থেকে বিনা বাঁধায় অস্ত্র গুলি নিয়ে সরকারি স্কুলের মাঠে  চলে যান। অস্ত্র গুলি নিজের কাছে রারেখন। তিনি  বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চান তারা  আগামীকাল সকালে আটটার আগে  একটি থালা, একটি বালিশ, একটি চাদর নিয়ে হাজির হবেন ।  ওইভাবে আমরা ২৭ মার্চ সকালে আমিসহ ২১ জন হাজির হই। আমাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। আমাদের  মোট ৩০ জনের   গ্রুপে  দুই জন ইনস্ট্রাক্টর ঠিক করে দেয়া হয়। এরা হলেন বরকত এবং গোলাম সরোয়ার। দুইজনই সেনাবাহিনীর সাবেক হাবিলদার ছিলেন। প্রশিক্ষনের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ ট্রেজারি থেকে টাকা লুট করে। এই টাকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত  তেরি হয় এবং তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এটা ঘটে মে  মাসের তিন তারিখ।  আমাদের গ্রুপটি নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ে। আমি ওই দিনই বাকলে বাড়ি চলে আসি। পরের দিন মে মাসের চার তারিখ আমার বড় চাচি আমাকে বলেন, তুমি তোমার অমুক ভাইয়ের সাথে গিয়ে তোমার আপাকে নিয়ে আস। শুনতে পাচ্ছি পিরোজপুরে বড় ধরনের গন্ডগোল হবে। আমার আপার নাম ছিল আনোয়ারা বেগম। ভগ্নিপতি আব্দুস সাত্তার পূর্বে পিরোজপুর এসডিও অফিসে চাকরি করতেন। ১৯৭০ সালে ভোলায় বদলি হন এবং পরে ১৯৭১ সালে আবার বদলী হয়ে পিরোজপুরে এসডিও অফিসে হেডকার্ক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ধোপাবাড়িতে  ভাড়া বাসায় থাকতেন। আমি  এবং আমার ভাই অদুত আপার বাসাই যাই। তখন সকাল অনুমান দশটা হবে। আপাকে নেয়ার কথা বলার পর তিনি গোছগাছ শুরু করেন। এর  ৮/১০ মিনিট পরে বাইরে লোকজনের দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি দেখতে পেয়ে আমার ভগ্নিপতি বাইরে বের হন। একটু পরে ফিরে  এসে বললেন হুলারহাট থেকে  মিলিটারি পিরোজপুর আসাতেছে। এই বলে  ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দেন এবং আমাদের বাইরে  বের হতে বারন করেন। অনুমান ১০/৫ মিনিট পরে আমরা বুটের আওয়াজ শুনতে পাই। কাঠের বেড়ার ফাক দিয়ে দেখতে পাই  অনেক মিলিটারি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে  দণি দিকে।  সামনে চারজন বাঙ্গালি ছিল যাদেরকে আমি চিনতাম। এরা হল  হুলারহাটের  আশরাফ চেয়ারম্যান, চিলার দেলোয়ার শিকদার, পিতা রসুল শিকদার, মানিক খন্দকার এবং সাত্তার মোক্তার। আমার ভগ্নিপতিও এ চারজনকে চিনতে পারেন। ৫/৭ মিনিট পরেই আমার বাসা থেকে পশ্চিম দণি দিকে বিকল গুলির শব্দ শুনতে পাই। কাঠের বেড়ার ফাক দিয়ে আগুন এবং ধোয়া দেখতে পাই। ্বরে ৮/১০ মিনিট পর আমাদের বাসার কাছে আবার বিকট গুলির শব্দ  শুনতে পাই। এরপর মিলিটারি আমাদের বাসার সামনে দিয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। তখনো ওই চার বাঙ্গালি অগ্রভাগে ছিল। অনুমান আধাঘন্টা পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে রাস্তায় দুয়েকজনকে চলাফেরা করতে দেখে আমরা ভগ্নিপতি বের হন। প্রায় এক ঘন্টা পরে তিনি ফিরে এসে জানালেন মন্ডলপাড়ায় ১০/১২ জন এবং ধোপাপাড়ায় ৪/৫ জনকে খুন করেছে  আর্মি। মিলিটারি শহরে গিয়ে সরকারি স্কুলে ক্যাম্প করেছে। আমরা সন্ধ্যার পর আমাদের বোন, ভাইগনা ভাগ্নীদেগর নিয়ে  বাড়ি আসি।
এরপর আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য সংঘবদ্ধ হতে থাকি। অনুমান আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি আমিসহ ২১ জন ভারতে যাই। আমাদের নাম তালিকাভুক্ত   করে  বিভিন্ন  এলাকায় প্রশিক্ষনের জন্য প্রস্ততি চলতে থাকে। অনুমান ১৫ দিন পরে শ্রাবন মাসের প্রথাম দিকে আমার পূর্ব প্রশিক্ষক  গোলাম সরোয়ার আমাদের ক্যাম্পে আসেন। তিনি বলেন, তোমরা কে কে এসেছ। তোমরা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে চল। আমি ভারত সরকারের কাছ থেকে অনেক অস্ত্র সংগ্রহ করেছি। আমি ট্রেনিংয়ের প্রস্ততির কথা জানালে তিনি বলেন, তুমি তো রাইফেল ট্রেনিং পার। নতুন অস্ত্রের ট্রেনিং বাংলাদেশে গিয়ে আমি তোমাদের দেব। আমাদের ২২ জনের মধ্য থেকে ১৫ জন এবং তার সাথে  থাকা আরো ১৫ জনসহ আমরা  দেশে আসি। নাজিরপুর থানাধীন  কুমরাখালি গ্রামের মধ্যে ক্যাম্প স্থাপন করি। অনুমান শ্রাবন মাসের মাঝামাঝি রাত দশটার দিকে নাজিরপুর রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করি।  এতে আমাদের  কমান্ডার গোলাম সরোয়ারের কপালে রাজাকারদের গুলি লাগে এবং তিনি শহীদ হন। ওই রাতেই আমরা কদম তলা চলে আসি। জুসখোলা ও কদম তলায় দুটি ক্যাম্প স্থাপন করি। কয়েকদিন পর আমরা জানতে পারি ভাগিরথী নামের এক মহিলা নিয়মিত পাক সেনাদের ক্যাম্পে যাতায়াত করে। তার বাড়ি আমাদের ইউনিয়নে বাগমারা গ্রামে। গোলাম সরোয়ার  মারা যাবার পরে সর্দার মতিউর রহমান (বর্তমানে পিরোজপুর সদর থানার চেয়ারম্যান) আমাদের কমান্ডযার নিযুক্ত হন। সর্দার মতিউর রহমান সাহেব ভাগিরথীর সাথে পরিকল্পনাক্রমে আমাদেরকে বাগমারা গ্রামে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে তিন স্থানে রাখেন।  তিনি জানান, ভাগিরথীর মাধ্যমে জেনেছি  আজ পাক সেনারা আমাদের ধরতে আসবে। আমরাও পাক সেনাদের আক্রমনের অপেক্ষায়  ছিলাম। ওই দিন বিকালে আছরের নামাজের পরে আমাদের ঘেরাওয়ের  মধ্যে এসে পড়ে পাক সেনারা। আমরা তাদের ওপর আক্রমন পরিচালনা  করি।  এতে পাক সেনারা দিশাহীন হয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের গুলিতে ১০/১২ জন পাক সেনা নিহত হয়। ওদের ফেলে যাওয়া ১০টি রাইফেল,   তিনটি হেলমেট, ২টি লাঠি পাই। রাস্তায় অনেক রক্ত দেখি। ওইদিনই ভাগিরথীর সন্ধান  নেয়ার পর  আমাদেরকে কমান্ডার জানালেন ভাগিরথী আজ  বাড়ি যায়নি। সে  প্রতিদিন বাড়ি ফিরত।  পরের দিন কমান্ডার  মতিউর রহমান সাহেব আমাকে এবং আমার সহযোদ্ধা আব্দুল মালেককে ভাগিরথীর সন্ধানের জন্য পিরোজপুর পাঠান ছদ্মবেসে। তার আদেশে আমি এবং মালেক পিরোজপুর গিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে পৌছামাত্র পূর্ব দিক থেকে একটি গাড়ি আসার শব্দ পাই। ২/১ মিনিট পরে দেখতে পাই আমাদের সামনে দিয়ে একজন মহিলাকে গাড়ির  পেছনে দাড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই মহিলা বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল এবং তার দেহ ক্ষত বিক্ষত ছিল। ওই গাড়িতে চারজন পাক আর্মি এবং একজন চালক ছিল । গাড়ি সামনে দিয়ে চলে গেলে আমরা ক্যাম্পে চলে যাই এবং কমান্ডারকে এ ঘটনা দেখার কথা জানিয়ে বলি ভাগিরথীকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর পাকিস্তানী সেনারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রতিদিন কদমতলা এবং জুসখোলা আসে। আমরা কদমতলা এবং জুসখোলা থেকে সুন্দরবন বগি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে চলে যাই। আমাদেরকে তালতলা খালের মধ্যে ১ নং ক্যাম্পে রাখা হয়। তখন শফিউদ্দিন আহমেদ (ব্রিটিশ  আমলের  হাবিলদার) কে আমাদের কমান্ডার  নিযুক্ত করা হয়। তার নতেৃত্বে আমরা তাফালবাড়ি রাজাকার ক্যােিম্প  একটি অপারেশন পরিচালনা করি। চারজন রাজাকার ধরা পড়ে আমাদের হাতে এবং তাদের হত্যা করি আমরা।
ডিসেম্বর ৭ তারিখ কমান্ডার সাহেব আমাদের আদেশ দিলেন গোলাবারুদ, অস্ত্রসহ সবাই নৌকায় ওঠ।  অনেক মুক্তিযোদ্ধা মিলে কয়েকটি নৌকায় করে মোড়েলগঞ্জে আসি।  ডিসেম্বর ৮  তারিখ তিনি বলেন, সবাই পায়ে হেটে পিরোজপুর যাত্রা কর। পিরোজপুর আক্রমন করতে হবে।  আমাদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের আদেশ দেন। আমাদের  গ্রুপটি পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর অপর পারে হাজির হই। সন্ধ্যার পর সাতটা সাড়ে সাতট অনুমান এমন সমসয়  চারদিকে আনন্দ ধ্বনি শুনতে পাই। জয়বাংলা, জয় বাংলাদেশ স্লোগান শুনি। আমরা খেয়া পার হয়ে শহরে প্রবেশ করি। সরকারি স্কুলে  মিলিটারি ক্যাম্প  দখল করে  আমরা ক্যাম্প স্থাপন করি। তখন রাজাকারদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আসতে থাকে। ২ দিন পরে দেলোয়ার শিকদার, মানিক খন্দকার, শঙ্করপাশার রাজ্জাক রাজাকারকে উত্তেজিত জনতা মেরে পায়ে দড়ি বেধে” আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে। আমাদের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিন সাহেব আমাদেরকে কঠোর নির্দেশ দেন আশরাফ চেয়ারম্যান এবং সাত্তার মোক্তারকে খুজে বের করার জন্য। তাদের ধরার জন্য আমরা অনেক খোজাখুজি করি কিন্তু পাইনি। এর পর আমাদেরকে হুলারহাট ক্যাম্পে নিয়োগ দেয়া হয়। অনুমান মার্চ মাসে আমরা অস্ত্র জমা দিয়ে আমি আমার লেখাপড়ায় ফিরে যাই।

জেরা : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন। ৮/১০ টি প্রশ্নের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় জেরা।
প্রশ্ন : মুক্তি বার্তায় আপনার নাম আছে?
উত্তর : আছে কি-না দেখিনাই। তবে জাতীয় তালিকায় আমার নাম আছে এবং সেখানে আমার নম্বর ২০। সরকারি তালিকায় আমার নম্বর ২৯২।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা ভোটর তালিকায় আপনার নাম আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : ভারতে কয়দিন ছিলেন?
উত্তর : অনুমান ১৬/১৬ দিন।
প্রশ্ন : ভাগিরথীর যে ঘটনা বললেন তা অনেক পত্রপত্রিকায় এসেছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যেসব ক্যাম্পের নাম বলেছেন তাও বিভিন্ন বইপত্রে এসেছে।
উত্তর :  এসেছে কি-না আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের বিষয়টি কোন কাগজপত্র দ্বারা সমর্থিত নয়।
উত্তর : সত্য নয়।

গোলাম মোস্তাফার জবানবন্দী : আমার নাম মোঃ গোলাম মোস্তফা, বয়স- ৬২ বছর । গ্রাম নলবুনিয়া, থানা জিয়ানগর, জেলা- পিরোজপুর। বর্তমানে আমি অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ অক্টোবর আমার গ্রাম নলবুনিয়ায় আজাহার আলী হাওলাদারের বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে। ওইদিন ফজরের আজানের পূর্ব মুহূর্তে এক প্রচন্ড শব্দ শুনে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠার পরেই মসজিদে আযান হলে মসজিদে নামায পড়তে যাই। নামাজের পরে মুসল্লিদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হতে থাকে যে, আযানের পূর্বে কোথায় এই প্রচন্ড শব্দটি হলো। এই আলাপ আলোচনা করতে করতে আমরা মসজিদের সামান্য দূরে খালের পাড়ের রাস্তায় আসি। একটু পরেই দেখতে পাই যে, উত্তর দিক থেকে দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, সেকেন্দার শিকদার, রুহুল আমীন, মোমিন আজহার আলী হাওলাদারের ছেলে সাবেহ আলী এবং তার মাকে  নিয়ে পাড়েরহাটের দিকে যাচ্ছে। তার ৫/৭ মিনিট পরে নৌকায় করে আইউব আলী  চকিদার, কালাম   চকিদার, হামিক মুন্সি, আব্দুল মান্নান, আশরাফ আল মিলে আজহার আল হাওলাদারের জামাই ইব্রাহীম কুট্টির লাশ নিয়ে যাচ্ছে।
এরপর আমরা কায়েকজন আজহার হাওলাদারের বাড়ি যাই। সেখানে  গিয়ে বাড়িভর্তি মানুষ এবং ঘরে কান্নার রোল শুনতে পাই। লোকজন বলাবলি করতেছে আজহার হাওলাদারের জামাইকে (ইব্রাহীম কুট্টি)  মেরে ফেলেছে। আজহাল আলীর  স্ত্রী এবং ছেলেকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গেছে। আজাহরকেও মেরেছে। লোকজন বলল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার সময় তার স্ত্রী মমতাজের হাতেও গুলি লাগে। মমতাজকেও  জিজ্ঞাসা করায় সেও তাই জানাল।
এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসি, বিকালের দিকে শুনি সাহেব আলীকে এবং তার মাকে রাজাকাররা পিরোজপুরে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। পরের দিন শুনি  সাহেব আলীর মা সেতারা বেগম ফিরে এসেছে এবং সাহেব আলীকে পাকিস্তানী বাহিনী পিরোজপুরে গুলি করে মেরেছে।  এরপর শুনেছি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মমতাজ বেগম তার স্বামী ও ভাই হত্যার জন্য এস.ডি.ও বরাবরে একটি মামলা দায়ের করেছে।

জেরা : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।
প্রশ্ন : আপনার কয় ছেলে কয় মেয়ে?
উত্তর : তিন ছেলে তিন মেয়ে।
প্রশ্ন : মেয়েদের নাম কি এবং তারা কি করে?
উত্তর : বড় দুই মেয়ে ডিগ্রী পাশ। তাদের বিয়ে হয়েছে । তারা গৃহিনী। তাদের নাম নূরজাহান বেগম এবং সুমাইয়া আক্তার।  ছোট মেয়ে এম এ, এলএলবি পাশ । সে প্রাইমারী স্কুল শিক্ষিকা। তার নাম তানিয়া আক্তার।
প্রশ্ন :  তানিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : তার বিরুদ্ধে জঙ্গি অভিযোগে মামলা হয়েছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি রাজনীতির সাথে জড়িত?
উত্তর : হ্যা।  জামায়াতে ইসলামী।
প্রশ্ন : কোন পদে আছেন?
উত্তর : পিরোজপুর পৌরসভার সভাপতি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব গ্রেফতারের পর  তার মুক্তির জন্য আপনি অনেক মিটিং মিছিল করেছেন।
উত্তর : একটি মিছিলে অংশ নিয়েছি।
প্রশ্ন : ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কয়টি মামলা হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে ?
উত্তর : চারটি। একটি খারিজ হয়েছে।  বাকী তিনটি মামলার একটি হয়েছে পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে। আরেকটি পুলিশের সাথে সংঘর্ষের অভিযোগে।  এ মামলা দুটির বাদী পুলিশ। আরেকটি হয়েছে আওয়ামী লীগের এক বেকার যুবকের পকেট থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে। এ মামলায় আসামী আমিসহ ৪১ জন।
প্রশ্ন : আপনি  সাঈদী সাহেবে নির্বাচনে আর্থিক সহায়তা করেছেন?
উত্তর : আমি ২০০৯ সালে জামায়াতে যোগ দেই।
প্রশ্ন : ২০০৮ সালে আপপনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন সাঈদী সাহেবকে নির্বাচনের জন্য।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও আপনি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন
উত্তর : সত্য নয়। আমাদের বাড়িতে পাড়েরহাটের বেনিমাধব সাহাদের পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী  মমতাজ বেগম তার স্বামী এবং ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে যে মামলা করেন সে মামলার এজাহার আদালতে উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষ। মামলার এ এজাহারকে জাল এবং মামলার প্রয়োজনে তৈরি করা হয়েছে মর্মে সাজেশন দেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোটেক মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী প্রমুখ  আইনজীবী  উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


গোলম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারবেন ১২ জন///ট্রাইব্যুনালের আদেশ


9/10/2102
জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে পারবেন। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১  সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়ে  এ মর্মে  আদেশ দিয়েছেন।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আসামী পক্ষ থেকে দুই হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল।  গোলাম আযমের এ সাক্ষীর তালিকা খারিজ করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  দরখাস্ত করা হয়েছিল  এবং গতকাল সোমবার এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশ দিয়ে বলেছেন  অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী  হাজির করতে পারবেন আসামী পক্ষ। আগামী ১৪ তারিখ এ সাক্ষীর  তালিকা জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আসামী পক্ষকে।

সেফ হাউজের ৩৮ সাক্ষী বিষয়ে আদেশ :
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায়     তদন্ত সংস্থার প্রধান এবং সেফহাউজে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যসহ মোট ৩৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে  ট্রাইব্যুনালে হাজিররের জন্য সমন  জারির আবেদন পেশ করেছিলেন আসামী পক্ষ। গতকাল  সোমবার এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আজ ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশে বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে কোন সমন জারি করা হবেনা। আসামী পক্ষ   তাদের সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবেন। তবে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা ২০ জন নির্ধারন করে  দিয়ে যে আদেশ  ইতোপূর্বে প্রদান করা হয়েছে নতুন সাক্ষী  আনয়নের ক্ষেত্রে  সাক্ষীর সংখ্যা ২০ অতিক্রম করবেনা।  মোট সাক্ষীর সংখ্যা ২০ থাকতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক  সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুাল  এ আদেশ    প্রদান করেন।

 এসময় আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজরুর  আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।




ডিফেন্স টীমের আইনজীবিদের অফিসে অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হানা


9/10/2012
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের অন্যতম সদস্য  হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের চেম্বারে আজ  গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য পরিচয়ে সিভিল ড্রেসে ১০/১২ জন অস্ত্রধারী প্রবেশ করে  । তারা  চেম্বারের উপস্থিত আইনজীবি, কর্মচারী ও কায়েন্টদেরকে জিজ্ঞাসাবা শুরু করে।

ঘটনার সময় অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টীমের সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিম মোমেন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।  উপস্থিত আইনজীবিরা এ ধরণের আকস্মিক অভিযানের কোন সার্চ ওয়ারেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে কোন ওয়ারেন্ট নেই বলে তারা জানান। পরে উপস্থিত আইনজীবিগণ এ ধরণের কার্যক্রম প্রকারান্তরে ডিফেন্স টিমের মামলা পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে প্রতিবাদ করলে ডিবির সদস্যরা কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে যায়।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত তার চেম্বারে পুলিশী হয়রানির নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে অভিযুক্তদের সাক্ষীদের বাড়ীতে বাড়ীতে যেমন তল্লাশি চালাচ্ছে তেমনি এখন  চেম্বারে হানা দিয়ে মামলার প্রস্তুতি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘৃণ্য প্রয়াস চালিয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে ডিফেন্স টীম মামলা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করুক তা সরকার চায় না। একটি স্পর্শ কাতর মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহৃত চেম্বারে পুলিশের উপস্থিতি ও ত্রাস সৃষ্টির নজিরবিহীন। আমরা মনে করি, এ ধরণের হয়রানিমূলক হানার মাধ্যমে আইনজীবিদেরকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে ও মামলার প্রস্তুতি গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং পুলিশী হয়রানি বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

এ ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা,  শফিকুর রহমান বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে নিজেই মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে।

সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১২

সেফ হাউজের ৩৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের আবেদন আসামী পক্ষের


মেহেদী হাসান, 8/10/2012
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো: আব্দুল হান্নান খান, সেফহাউজের  দায়িত্বরত সমস্ত পুলিশ সদস্যসহ  মোট ৩৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য আবেদন করেছেন আসামী পক্ষ। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-১ এ আবেদন করা হয়। আজ এ আবেদনের ওপর  শুনানীনে অংশগ্রহণ করেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীর সময়  ট্রাইব্যুনালকে বলেন, সেফ হাউজ ডায়েরি বিষয়ে আদেশে আপনারা বলেছিলেন আমরা  সেফহাউজ বিষয়ে যে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছি তা আমাদেরই প্রমান করতে হবে। আমরা সেটি প্রমানের সুযোগ চাই। এর সত্যতা প্রমানের জন্য সেফ হাউজে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে তাদের সহ মোট ৩৮জনের তালিকা আমরা দিয়েছি। । তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য সমন জারি করা হোক। তারা ট্রাইব্যুনালে আসলে তাদেরকে আমরা এ ডায়েরি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং এর সত্যতা বের হয়ে আসবে। আমাদের এ সুযোগ দেয়া হেক।

এদিকে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ গতকাল অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী  দিয়েছেন তা  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক। সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে  উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারনে  কেউ কেউ  আত্মগোপন করেছে, কেউ  নিখেঁাঁজ,  তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে ভ্রমনে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে ।

গত ২৯ মার্চ  ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ  করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ রায় পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী  এনে রাখা হত)  সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে  বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ  মিথ্যা। তারা কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন।  অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে।  কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে,  কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ  ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন  তার সমস্ত বিবরণ লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সে ডায়রির কপি  দাখিল করা হয় কোর্টে।

রাষ্ট্রপক্ষের সৈয়দ হায়দার আলী আসামী পক্ষের সেফ হাউজের ডায়েরিকে জাল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি আসামী পক্ষ  তৈরি করেছেন। সেফ হাউজ এবং এ ধরনের  ডায়েরি বলতে তাদের কিছু নেই।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,   একজন সাক্ষী সেফ হাউজে থাকা অবস্থায় তাকে হুমকি দেয়া হয় । সে বিষয়টি তিনি  যাত্রাবাড়ি থানায় ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়টিও সেফ হাউজের ডায়েরিতে লেখা রয়েছে। জিডির নম্বর উল্লেখ রয়েছে।  এটা কেমন করে আমাদের পক্ষে জানান সম্ভব? যাত্রাবাড়ি থানার ডায়েরির সাথে সেফ হাউজের ডায়েরিতে বর্নিত নম্বর মিলিয়ে দেখলেই তো এর সত্যতা প্রমানিত হবে। তাছাড়া একজন পুলিশ সদস্য সেফ হাউজে দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকার একটি কোর্টে সাক্ষী দিতে গেছে। তাও বর্নিত আছে।  এটা আমাদের পক্ষে কেমন করে জানা সম্ভব? ওই কোর্টের তথ্য হাজির করা হোক তাহলেও তো প্রমানিত হবে সে বর্নিত তারিখে  সে কোর্টে গিয়েছিল কি-না। তাহলে প্রমান হবে সেফ হাউজের ডায়েরি সত্য। সেফ হাউজে  দায়িত্ব পালন করেছে যেসব পুলিশ তাদের প্রত্যেকের ফোন নম্বর, কে কতক্ষন দায়িত্ব পালন করেছে সে সময় এবং প্রত্যেকের ব্যাজ নম্বর, পুলিশের কোড নম্বর সব উল্লেখ আছে। এটা আমাদের পক্ষে কি করে জানা সম্ভব?
একজন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার পর তদন্ত সংস্থা থেকে ফোন করে বলা হয়েছে আজ তার সাক্ষ্য খুব ভাল হয়েছে। তাকে মিষ্টি খাওয়ানো হোক। পাঞ্জাবী কিনে দেয়া হোক। তাও লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। এজাতীয় তথ্য সংবিলত ডায়েরি কি করে কোন মানুষের পক্ষে বানিয়ে রচনা করা সম্ভব?
তাই সর্বশেষ এখন এর সত্যতা প্রমান করতে হলে সেইসব পুলিশ সদস্যদের হাজির করে  আমাদেরকে ওপেন কোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ দেয়া হোক।

গোলম আযমের পক্ষে সাক্ষীর তালিকা খারিজের আবেদন



অধ্যাপক গোলাম  আযমের পক্ষে  দুই হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এ   তালিকা খারিজের আবেদন  করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম আবেদনের শুনানীতে বলেন, রাজনৈতিক  অসদউদ্দেশে, বিচারকে বিলম্বিত এবং বাঁধাগ্রস্ত করতে এ দীর্ঘ তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।  দীর্ঘ তালিকা অনুযায়ী সাক্ষী হাজির করলে সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে শুধু তাদের সাক্ষীর জন্য।

জবাবে গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন,  ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী সারা দেশে যত অপরাধ হয়েছে তার সবকিছুৃর সাথে জড়ানো হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমকে। ৩০ লাখ মানুষ হত্যা, দুই লাখ বা তার বেশি ধর্ষণ,  লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ যত অপরাধ আছে তার সবকিছুর তাকে দায়ী করা  হচ্ছে আমার আসামীকে ।  কাজেই সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া  দীর্ঘ  তালিকা জমা দেয়া মানে তাদের সবাইকে হাজির করা  হবে সেটা বোঝায় না। আমরা  এখান থেকে যাদের উপযুক্ত মনে করব তাদের হাজির করব।
তাজুল ইসলামস বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের  তাড়াহুড়ার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ডিসেম্বরের আগে বিচার শেষ করার পেছনে যে নীলনকশা,   চক্রান্ত চলছে  সেটা বাস্তবায়নের জন্য এই তাড়াহুড়া। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আসামীকে ফাঁসি  দিতে হবে। সাক্ষীর তালিকা খারিজের যে আবেদন করা হয়েছে  তার পেছনের উদ্দেশ্য হচ্ছে  সময় নির্ধারন করা এবং নির্ধারিত সমেয়র মধ্যে আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করার আয়োজন করা ।   এ আবেদন গ্রহণ করা মানে হল আসামীকে হাত পা বেঁধে জবাই করার শামিল। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে আমরা বিচার বিলম্বিত করার জন্য দীর্ঘ তালিকা দিয়েছি। কিন্তু বিচার সংক্ষিপ্ত করার জন্য সাক্ষীর তালিকা খারিজ করার নজির কোথায় আছে তা  তারা দেখাক আমাদের।

এছাড়া আজ  আরো কয়েকটি আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে একটি রয়েছে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষীর জবানবনন্দী তার অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করার আবেদন কারণ সে অসুস্থতার কারনে বিদেশে  রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের অন্য আরেকটি মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে নতুন সাতজন সাক্ষী  জবানবন্দীসহ গ্রহনের আবেদন।  মাওলানা  নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এ আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, তদন্ত শেষ হবার পর নতুন করে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহনের কোন বিধান নেই। কাজেই এ আবেদন গ্রহণ করারও কোন সুযোগ নেই আইনে।
 এসব আবেদন শুনানীনে চলে সকাল সাড়ে দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। এরপর আড়াইটায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী গ্রহণ শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

মীর কাসেম আলীকে আরো একদিন সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি



দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি)  জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে আরো একদিন সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ এ অনুমতি প্রদান করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা কর্তৃক ধানমন্ডিস্থ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ৪৮ ঘন্টা আগে  মীর কাসেম আলীর আইনজীবীকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টম্বর মীর কাসেম আলীকে   প্রথমবার  সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার পক্ষে কোন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত ছিলেননা। যদিও একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার  বিষয়ে টাইব্যুনালের আদেশ  ছিল।
আইনজীবীকে না জানিয়ে এবং আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া মীর কাসেম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তদন্ত  সংস্থার বিরুদ্ধে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী আদালত অবমাননার  অভিযোগ দায়ের করেন তখন।

আজ মীর কাসেম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদনের ওপর শুনানী  পেশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে তাকে আরো দুই দিন  জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা আদেশ দেব, সেটা আপনারা মানবেননা,  অন্যভাবে মানার চেষ্টা করবেন সেটা কেন? যেখানে আদেশে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের নিয়ম বিষয়ে সেখানে সেটা আপনারা  মানবেননা কেন?
সুলতান মাহমুদ বলার চেষ্টা করেন আগেরবার  একটা ভুল হয়েছে।

এরপর ট্রাইব্যুনাল আরেকদিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেন। তবে  জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারন করে দেয়া হয়নি।




এর  আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ জুলাই ট্রাইব্যুনাল (১) মীর কাসেম  আলীকে প্রথমবার  একদিনের জন্য সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করে আদেশ দেন। সে অনুযায়ী তাকে ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সেফহোমে নিয়ে।

গত ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের আদেশে  গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী  অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মীর কাসেম আলীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।




রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক//সোমবার একাধিক সাক্ষী না আনলে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ-ট্রাইব্যুনাল

মেহেদী  হাসান, ৭/১০/২০১২
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ করে বলেছেন  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে। আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে একাধিক সাক্ষী হাজির না করায় আজ আবার ট্রাইব্যুনাল একটি আদেশ পাশ করে বলেছেন আগামীকাল সোমবার যদি একের অধিক সাক্ষী হাজির করা না হয় তাহলে আগামীকালই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।

এর আগে গত বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেছিলেন রোববার সাক্ষী হাজির করা না হলে রোববারই সাক্ষ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে একজনমাত্র সাক্ষী হাজির করায় ট্রাইব্যুনাল আবারো  আসামী পক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

এ আদেশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  ট্রাইব্যুনালে বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর। শেষ হয়েছে এ বছর আগস্ট মাসে। তারা ৯ মাস সময় পেয়েছে। ৯ মাসে তারা ২৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে।  আর  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর । আজ পর্যন্ত মোট এক মাস ৫ দিন হয়েছে এবং এ সময়ের মধ্যে  নয় জন সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। আমাদের মাত্র এক মাস ৫  দিনের মাথায় এভাবে কঠোর আদেশ দেয়া হল। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ ১৭ বার ব্যর্থ হয়েছে সময়মত সাক্ষী হাজির করতে। ১৭ বার তাদের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকবার মুলতবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী আনতে না পারার কারনে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কখনো এভাবে  সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে আল্টিমেটাম দিয়ে আদেশ পাশ করা হয়নি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোন কোন তারিখে সাক্ষী আনতে পারেনি,  সাক্ষী আনতে না পারার কারনে  কবে কতদিন সময় দিয়ে  বিচার মুলতবি করা হয়েছে তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কতবার তারা সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানিয়েছে সে তথ্যও আছে।  ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে না পারার অনেকগুলো তারিখ উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনালের সামনে।

এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, তাদেরকে নয় মাস দিয়েছেন। আমরা নয় মাস চাইনা। অর্ধেক দেন। সাড়ে চার মাস  সময় দেন আমাদের ।  সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পক্ষে কাজ করছে। তারপরও তারা  বারবার ব্যর্থ হয়েছেন সময় মত সাক্ষী আনতে। আর আমাদের ক্ষেত্রে মাত্র এক মাস  পাঁচ দিনের মাথায় এভাবে আদেশ দিলেন।

এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।  মার্চ মাসে শেষ হয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল   তারাও সাক্ষী আনতে না পারার কারনে আমরা অনেক কথা তাদের বলেছি। পত্রিকায় সেসব কথা হেডলাইন হয়েছে। তবে এটা ঠিক তাদের ক্ষেত্রে এভাবে আদেশ দেয়া হয়নি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদেরও মুখে বলেন, একশবার বলেন। কিন্তু তাদের বেলায় এভাবে লিখিত আদেশ না দিয়ে শুধু  আমাদের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ দেয়া হচ্ছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমান সুযোগ চাই। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, মাই লর্ড ইজ ডুয়িং ইনজাস্টিস  টু মাওলানা সাঈদী। (মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হচ্ছে)। আমরা  সুবিচার পাচ্ছিনা।

ট্রাইব্যুনালের আদেশ :

আগামীকাল সোমবার  একের অধিক সাক্ষী আনতে না পারলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে এক আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল -১। বেলা দুইটার পরে এ আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। আসামীপক্ষ  বলেছেন আরেকজন সাক্ষী তাদের হাতে আছেন তবে সে অসুস্থ থাকায় তাকে কোর্টে হাজির করা যায়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর একজন সাক্ষী হাজির করা হয় এবং ওইদিন আর কোন সাক্ষী ছিলনা। ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী হাজির করা হয় এবং পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর তার  জেরা হয়। এরপর সেদিনও আর কোন  সাক্ষী তারা আনেনি। ৯ সেপ্টেম্বর   তাদের  সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য্য ছিল তবে তারা সেদিন সাক্ষী আনেনি। ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় সাক্ষী আনা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তারা সাক্ষী আনতে না পারায় মুলতবি চান। ১২ সেপ্টেম্বর চতুর্থ সাক্ষী আনেন এবং  ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষী ছিলনা। ১৬ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষী এবং ১৭ সেপ্টেম্বর  তাদের সাক্ষী ছিলনা। ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ম সাক্ষীর জেরা শেষে তাদের পরবর্তী  কোন সাক্ষী ছিলনা।  ১৯ সেপ্টেম্বর   অসুস্থ থাকা তৃতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ হবার পর সেদিনও আর কোন সাক্ষী আনেনি তারা। ২০ তারিখও কোন সাক্ষী ছিলনা। ২৪ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠ, ২ অক্টোবর  ৭ম, ৪ অক্টোবর  অষ্টম সাক্ষী হাজির করা হয়।
চার নভেম্বর বৃহষ্পতিবার আমরা আদেশ দিয়ে বলেছিলাম রোববার যদি সাক্ষী আনা না হয় তা হলে রোববারই তাদের পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করা  দেয়া হবে। কিন্তু আজ তারা একজন সাক্ষী এনেছেন। আমরা  তাদের বারবার বলেছি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে  পরবর্তী সাক্ষী  প্রস্তুত রাখবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি তারা একদিনে একজনের বেশি সাক্ষী  হাজির করছেনা। আমরা বলেছি সাক্ষী আনতে না পারার কারনে বিচার  মুলতবি করা হবেনা। কিন্তু তারপরও আমরা  তাদের বেশ কয়েকবার সময় দিয়েছি। শেষে ৪ নভেম্বর আমরা  আদেশ পাশ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি তাতেও। তারা একাধিক সাক্ষী আনতে পারেনি। আমরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের সময় দিতে চাই। আগামী কাল একজন সাক্ষী আনলে  চলবেনা। আগামীকাল যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সাক্ষী  না আনা হয় তাহলে     সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীদের  সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদী সাহেবের বিচার  নিয়ে এত তাড়াহুড়া কেন। আরো তো অনেক মামলা আছে এ কার্টে। সেগুলো চলতে পারে।  রাষ্ট্রপক্ষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে। আমাদের ক্ষেত্রে দুয়েকবার অপরাগতা হতে পারেনা? আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষী আনার জন্য। অনেক সাক্ষী বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে রাজি হবার কারনে।  তাদের  ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা। সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে।


ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন  এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক  আজ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

আদেশ পাশের সময় আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারীর, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ।


মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক  সময়মত সাক্ষী আনতে না পারার খতিয়ান :


১.    ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায়  ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয় বিচার।
২.    ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ তম সাক্ষী না আনতে পারায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
৩.    ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১২, ২৮ তম সাক্ষী আফরোজা বেগম অসুস্থতার কারনে বিচার মুলতবি করা হয়।
৪.    ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনতে না পারার কারনে মুলতবি করা হয় বিচার।
৫.    ৭ মার্চ ২০১২ সাক্ষী আনতে  না পারার কারনে মুলতবি করা হয় এবং আদেশ পাশ করা। আদেশে তাদেরকে “শেষ চান্স” দেয়া হল বলে উল্লেখ করা হয়।
৬.    ১৮ মার্চ  ২০১২ তারা জানায় তাদের আর কোন সাক্ষী নেই এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দীর জন্য পেশ করতে চায়।

৭.    ২০ মার্চ ২০১২ ট্রাইব্যুনালে দরখাস্ত দিয়ে জানান তাদের পক্ষে আর সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয়।

এভাবে  ২০১২ সালের জানুয়ারি ৪, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৯, ৩০, ৩১ এবং  ফেব্রুয়ারি ১, ২, তারিখ সহ আরো মোট ১০ বার রাষ্ট্রপক্ষ সময় মত সাক্ষী আনতে পারেনি মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধে। মোট ১৭ বার তারা সময়মত সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়।  অনেকবার রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর তালিকার সিরিয়াল  ভঙ্গ করে অন্য সাক্ষী হাজির করেছে । 

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী শুরু



মেহেদী হাসান, ৭/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা   অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমানের জবানবন্দী শুরু হয়েছে  আজ।

চলতি বছর ১ জুলাই  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এবং জব্দ  তালিকা মিলিয়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হল (তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে) । এর মধ্যে নিয়মিত সাক্ষী হলেন  আটজন। এরা হলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান সুলতানা  কামাল,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মুনতাসির মামুন,  মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল , মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকার নাখালপাড়ার শেখ ফরিদ আলম, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার  সোনা মিয়া  এবং অপর একজন মহিলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে।

নিয়মিত এই আটজন সাক্ষীর মধ্যে তিন জন সাক্ষী তাদের  সাক্ষ্যে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি এমনকি তার নামও উচ্চারন করেননি। এরা হলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শেখ ফরিদ আলম এবং সোনা মিয়া।
এছাড়া সুলতানা কামাল, প্রফেসর মুনতাসির মামুন  প্রমুখ সাক্ষীগন অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মূলত নেতৃত্বের দায় হিসেবে অভিযোগ করেছেন।

নিয়মিত সাক্ষী ছাড়া অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  সাতজন জব্দ তালিকার সাক্ষী হাজির করা হয়। ১৯৭১ সালে সংগ্রাম, আজাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায়  প্রকাশিত অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য বিবৃতি সংবলিত  অনেক খবর সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন  সংস্থা থেকে। সে মর্মে ওইসব সংস্থার  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা  ট্রাইব্যুনালে এসে  সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন যে, তাদের উপস্থিতিতে এসব পেপারকাটিং সংগ্রহ এবং জব্দ করা হয়েছে। এরা হলেন জব্দ তালিকার সাক্ষী।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং  সদস্য বিচারপতি আানোয়ারুল হক  বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 
তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহনের সময় চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু,  প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন প্রমসুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ  উপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর জবানবন্দী :



mehedy hasan, 7/10/2012
আজ  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নবম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমারনাম হেমায়েত উদ্দিন। বয়স ৬৪ বছর। আমার গ্রাম টেংরাখালী, থানা-জিয়ানগর, জেলা-পিরোজপুর। আমি মুদি মালের দোকানদারী করি। ১৯৭১ সালেও আমি মুদি মালের দোকানদারী করতাম। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১১ বৎসর আগে আমার মা মারা যায়। তখন আমার বয়স ছিল ১২ বৎসর। মা মারা যাওয়ার পরের দিন আমার ১০ বছর বয়স্ক ছোট বোন মারা যায়। মা মারা যাওয়ার সময় আমার তিন চার মাস বয়সের এক ছোট ভাই রেখে যায়। আমার বাড়ির উপরে এক চাচী আমাদের লালন পালন করে।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কি শেষের দিকে হবে আমার পার্শ্ববর্তী উমেদপুর গ্রামে আমার চাচীর বাবার বাড়ি সেখানে সে বেড়াতে যাওয়ার পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে আমি একদিন বিকালে চাচীকে সেই বাড়িতে দেখতে যাই। ঐ দিন বিকালে চাচী আর আমাকে আসতে দেয়নি। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টা কি পৌনে দশটা বাঁজে মানুষ চেচামেচি করতেছে পাক সেনারা আসতেছে পাক সেনারা আসতেছে বলে। আমি তখন ঐ ঘর থেকে বের হয়ে আমার সঙ্গে থাকা আফজাল, লতিফ, নুরুল ইসলাম ও অন্যান্য কয়েকজনসহ বাড়িরপূর্ব পার্শ্বে বাগানে গিয়ে দাড়াই। সেখান থেকে দেখতে পাই ১৫/১৬ জন পাক সেনা সাথে মুসলেম মাওলানা, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার সিকদার, আসমত আলী মুন্সী, গণিগাজী, রাজ্জাক, মহসিন, মমিন এরা সবাই উমেদপুর হিন্দু পাড়ায় ঢুকে। কিছু পরেই ঐ বাড়ি থেকে আগুন দেখতে পাই। ১৫/১৬ মিনিট পরে পাক সেনা ও তাদের সাথের লোকজন একজন লোককে ধরে নিয়ে পশ্চিমদিকে বের হয়। আমার সাথে থাকা আফজাল বলে বিশাবালীকে ধরে নিয়ে গেছে। বিশাবালীকে নিয়ে তারা মাঠের উত্তর দিকে হোগলাবুনিয়া হিন্দু পাড়ায় যায়। কিছুক্ষণপরে ঐ হিন্দু পাড়ায় আগুন দেখতে পাই। ঐ খানে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আমি বাড়ি চলে আসি। বিকালে দোকানে গেলে সংবাদ শুনি ১০/১২ টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিশাবালীসহ হোগলাবুনিয়া গ্রাম থেকে আরো ৪/৫ জন হিন্দুকে ধরে নিয়ে গেছে। এর পরের দিন বিকালে দোকানে বসে শুনি হোগলাবুনিয়া গ্রাম থেকে যে ৪/৫ জনকে ধরে নিয়েগিয়ে ছিলতাদেরকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ///প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা এবং ৩৮ জন বন্দী হত্যার বিবরনে চোখ ছলছল ..


মেহেদী হাসান, ৪/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম  আযমের বিরুদ্ধে আজ  সাক্ষ্য দিয়েছেন   গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।  মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রান নিয়ে পালিয়ে আসা এবং ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলাখানায় ঈদের দিন ৩৮ জনকে হত্যার বিবরনে আজ ট্রাইব্যুনালে অনেকের চোখ ছলছল করে  ওঠে।  তবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি এবং দেড়ঘন্টার জবানবন্দীতে একবারও তার নাম উচ্চারন করেননি।

জবানবন্দী :
আমার নাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বয়স ৫৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ১৫ বছরের একটু বেশি ছিল । ১৯৭১ সালে আমি ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়তাম। বর্তমানে আমি একজন গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। ছোটবেলায় আমি খুব দুরন্ত  এবং নির্ভিক ছিলাম। আপনারা যারা ২৫ এবং ২৬ মার্চ অবলোকন করেছেন তারাই শুধু অনুধাবন করতে পারবেন আমার বিষয়টা। আমার মনে পড়ে ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হয়েছিল কয়েক ঘন্টার জন্য। কারফিউ যখনই শিথিল করা হয়েছে তখন আমি আমার বাইসাইকেল নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, পরে পলাশী ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ, রোকেয়া হল, ব্রিটিশ কাউন্সিল এর চতুর্দিক  ঘুরে দেখেছি এবং লাশের পর লাশ দেখেছি । যা আপনারা ছবিতে দেখেছেন  তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেব। আমি ২৭ মার্চ বিকাল বেলা একজন বিহারীর বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে তাদের বন্দুক ছিনতাই করি। একটি ুদ্র দল গঠন করি। তাদেরকে  শেখাই আরো অনেক অস্ত্র দরকার। এর মধ্যে আমার এক বন্ধু যার নাম সজিব তাকে প্রধান করে  আমরা বেশ কয়েকটি বিহারীর বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করি। জিনজিরায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ঘাটি  প্রতিষ্ঠা করি। আপনারা হয়ত শুনে থাকতে পারেন জিনজিরায় পাকিস্ত্না আর্মি আক্রন পরিচালনা করেছিল। সেটা আমাদের  কারনে।  আমরা সে আক্রমনের মুখে টিকতে  পারিনি। আমরা সমস্ত অস্ত্র বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। সেখানে আমরা  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের অনেক ভারী অস্ত্রের দরকার।  তা নাহলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা যাবেনা। এরপর আমরা বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন পালিয়ে বেড়িয়েছি। যখন বাসায় ফিরলাম তখন  মায়ের কাছে শুনলাম আমার বড় ভাই ইফতেখার উদ্দিন টুটুল (মৃত) সে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে ২৭ মার্চ রাতেই। সেই থেকে আমার মনে স্বপ্ন ছিল  আমার ভাই যখন ফেরত আসবে তখন আমি তার কাছে অস্ত্র চালনা শিখব। মে মাসে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। তাকে আমি বিনীত অনুরোধ করি তার সাথে আমাকে রাখার জন্য। আমার ভাই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন।  তাদের কমান্ডার ছিলেন মোফাজ্জাল হোসেন মায়া। আমার বড় ভাই’র সাথে আমি প্রথম একটি অপারেশনে যোগ দেই। সে অপারেশনে শুধু আমি এবং আমার বড় ভাই ছিলেন।  আমরা চেয়েছিলাম আজিমপুর গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার অফিস উড়িয়ে দিতে। আমি নিজে ডিনামাইট বসাই। কিন্তু দু:খের বিষয় হল সেটা আমি চার্জ করতে পারিনি কারণ কয়েকজন ছাত্র সেখানে এসে গিয়েছিল তখন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি  আমি এবং  সরোয়ার (মৃত) দুইট গ্রেনেড নিউমার্কেটের এক নং গেটের সামনে মাত্র ২০ ফিট দুরত্ব থেকে তিনটি পাকিস্তান আর্মির লরির ওপর আক্রমন  চালাই।

আগস্ট মাসের প্রথম দিকে আমি মহবুব, খোকা এবং মানিক ভারতে যাই। আগরতলা  হয়ে মেলাঘর ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। সজিব বাহিনীতে যোগ দিয়ে লালবাগে কাজ করতে থাকি। এরপর অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ আবার ভারতে যাবার সময় আমি, মানিক, মাহবুবু  এবং খোকা ভারতে যাবার সময়  পাকিস্তান আর্মি এবং রাজাকারদের হাতে বন্দী হই কুমিল্লা এবং বি বাড়িয়ার মাঝামাঝি
তন্তর চেকপোস্টে। জিজ্ঞাসাবাদ করার পর যখন আমরা বারবার বলি যে, আমরা মুক্তিযোদ্ধা নই তখন পাশবিক নির্যাতন শুরু হয়। একটানা আড়াই ঘন্টা নির্যতানের পর আমাদের চারজনকে উলঙ্গ করে ।
পরনে শুধু জাঙ্গিয়া ছিল। নাম জানিনা, পাকিস্তান আর্মির  একজন সুবেদার মেজর আমাদের হত্যার নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক পাশের এক মসজিদের ইমাম ডেকে আনা হয়। আমাদের গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে সুরা পরানো হল। চোখে কাল কাপড় বাঁধা হয়।  তবে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমাদের সামনে তিনজন মিলিটারি  বন্দুক/মেশিনগান তাক করে ।  আমি  বিচলিত হইনি।     মৃত্যর প্রহর গুনি। হঠাৎ করে নিস্তব্ধতার ভেতর থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম ওয়াইরলেসের। জোরে ওয়াইরলেস বেজে উঠল। তাতে শুনতে পেলাম মুক্তিকো হেডকোয়ার্টারে লে আও। তারপর  বি বাড়িয়া আর্মি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যায়। আমাদের চারজনকে ভিন্ন করে ফেলা হয়। আমাকে একটা ঘরের মধ্যে  ঢুকিয়ে দেয়া হল। সেখানে দেখতে পেলাম চেয়ারে বসে আছে এক ক্যাপ্টেন। তার নাম ছিল আলী রেজা।  তার মাথায়  চুল এবং সামনের দাত ছিলনা।  সে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করে। আমার নাম জিজ্ঞেস করায় আমি ইংরেজিতে বললাম মাই নেম ইজ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।  সে জানতে চাইল আমি লেখাপড়া করি কিনা। আমি বললাম করি। সে প্রশ্ন করল   একজন শিক্ষিত লোক হয়ে কি করে পাকিস্তান সৈন্যদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করার কথা ভাবতে পার? আমি বললাম আপনাদের এখন কোন র‌্যাংক নেই। আমরা যে র‌্যাংকিং দেব সেটাই আপনাদের র‌্যাংকিং। সে আমাকে বলল তোমার মৃত্যুর ভয় নেই? তারপর বাস্টার্ড বলে গালি দিল। আমিও তাকে পাল্টা বাস্টার্ড গালি দিলাম। সে আমাকে  হুমকি দিয়ে বলল তোমাকে পরের দিন দেখে নেব। 
তারপর আমাদের চারজনকে একত্র করে বি বাড়িয়া জেলখানায় সোপর্দ করে। জেলখানায় ঢুকে আমাদের মত অসংখ্য ছাত্র যুদ্ধবন্দী দেখলাম। ধীরে ধীরে তাদের অনেকের সাথে পরিচয় হয়। যাদের সাথে বেশি পরিচয় হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল শহীদ নজরুল, আমার বয়সী শহীদ কামাল, তার বাবা শহীদ সিরু মিয়া, কুমিল্লার বাতেন ভাই, শফিউদ্দিনসহ অনেকে। সেসময় জেলখানায় সম্ভবত ৫০ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নজরুল সিরু মিয়া, কামাল আমার দুইদিন আগে  ধরা পড়ে তন্তর চেকপোস্টে। পরের দিন আমাকে পিস কমিটির অফিসে হাজির করা হয়। এটা দানা মিয়ার বাড়ি নামে পরিচিত।
সেখানে গিয়ে প্রথমে যাকে দেখি সে হল কুখ্যাত পেয়ারা মেয়া। তার অশ্রাব্য উক্তি এবং নির্যাতনের কথা আমি কোনদিন ভুলবনা। ওখানে সে আমাকে  অনেকক্ষন নির্যাতনের পরও আমি কিছু না বলায় তখন এক ঘন্টা পরে আমাকে আবার আর্মি সেলে পাঠানো হল। লে. ইফতেখার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। সেখানেও আমার ওপর আবার  একই ধরনের নির্যাতন  চলল। এভাবে আমাদের ৫০ জনকে দিনে দুবার করে  দানা মেয়ার বাড়িতে এবং আর্মি সেলে নির্যাতন করা হত পর্যায়ক্রমে। আমাদের শরীরের রক্ত শুকাতে পারতনা।

শহীদ নজরুল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তাকে বলেছিল এখান থেকে পালিয়ে যাই। সে আমাকে বলেছিল মুক্তিযোদ্ধারা পালাতে শেখেনি। একদিন মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গলায় মালা দিয়ে মুক্ত করবে।  নজরুলের পেছনে আমরা নামাজ পড়তাম।  সে ইফতার বন্টন করত আমাদের মাঝে। জেলখানায় সে ছিল আমাদের নেতা।
রোজার ঈদের দিন সন্ধ্যার একটু পরে জেলখানার দরজা খুব শব্দ করে খুলে গেল। আমরা সবাই চমকে উঠি। জেলের মধ্যে পাক আর্মি প্রবেশ করে। উচ্চস্বরে বলতে থাকে লাইন আপ লাইন আপ। শব্দটির সাথৈ আমরা আগে থেকে পরিচিত থাকায় আমরা  গারদ থেকে বের  হয়ে কংক্রিটের মেঝেতে লাইন করে বসলাম।   বসে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন আলী রেজা এবং লে. ইফতেখারকে দেখতে পাই। একটু পরে দেখতে পাই ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহকে। তারপর অনেক রাজাকার এবং পেয়ারা মেয়াকেও দেখতে পাই। ক্যাপ্টেন আলী রেজা আঙ্গুলের ইশারায় একেকজনকে ডাকতে থাকে। এভায়ে  ৪৩ জনকে আলাদা করা হয়। আমাকে একা রাখা হয়। তখন আমি মনে করলাম আমাকে একাই বুঝি হত্যা করা হবে। আমি সাহস করে ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কি আমাকে না তাদেরকে মারবেন?
তখন সাদ উল্লাহ আমার হাতটা তার হাতে নিয়ে বলল আজকের দিনটা কত পবিত্র তা তুমি জান? আমি বললাম জানি। সে আমাকে বলল ভয়ের কোন কারণ নেই। আজ এই দিনে যদি কোন মানুষকে হত্যা করা হয় তাহলে সে সরাসরি আল্লাহর কাছে চলে যাবে। আমি বললাম তাহলে কি ৪৩ জনকে হত্যা করা হবে? তিনি হাসি মুখে বললেন হ্যা। তোমাকেও ২ দিন পর হত্যা করা হবে। কারণ তুমি ২ দিন পর ধরা পড়েছে। আমি তাকে বললাম আমার সাথে মানিক, মাহবুব, খোকা ছিল। তাদেরকেও আমার সাথে রাখেন তাহলে কারণ তারাও আমার সাথে ২ দিন পর ধরা পড়েছে। তখন তাদেরও আমার সাথে রাখা হল।
এরপর আমি নজরুল ভাইর সাথে কথা বললাম।  তাকে বললাম আমাকে তো পালাতে দিলেননা। নজরুল ভাই আমার  দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার কিছু বলার নাইরে। একটি লুঙ্গি   আমাকে দিয়ে
বললেন এটা তদার মায়ের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য। সাথে সিগারেটের একটি টুকরাও দিলেন। সেটাও পৌছে দিতে বললেন। কামালের বাবা সিরু মিয়া কান্নাকাটি করছিল। সে  তার ছেলেকে বলছিল তোর মায়ের তো আর কেই রইলনারে। কামাল তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়  এবং বলে,  কোনদিন যদি রাস্তায় কোন পাগলিনি দেখিস তাহলে মনে করবি এটা আমার মা।  এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হল।

আমাদের গারদে ঢোকানো হল। তারপরদিন জানতে পারি স্টেশনের নিকট কৈলাতলায় তাদের একনাগারেড় হত্যা করা হয়। এর ২ দিন পর আমাকে, মানিক, খোকা এবং মাহবুবকে দানা মেয়ার বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে টরচার করা হয় আমাদের ওপর। সেইরাতে আমরা  প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হই। আমার বন্ধু মালুমের বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেই। প্রাণ নিয়ে পালাতে পারায় আমাদের সেখানে দুধ দিয়ে গোসল করানো হল। তারপর লুঙ্গি গেঞ্জি পরে নৌকাযোগে ঢাকায় আসি। মায়ের সাথে দেখা করি। সেই রাতে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমাদের   ধরে ফেলে পাকিস্তান আর্মি। আমাকে তেজগাও এমপি হোস্টেলে সাত দিন রেখে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে আমি  জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। হুশ হলে দেখি আমি রমনা থানায়। আমার পিঠে এবং পায়ের পেছনে কোন চামড়া ছিলনা নির্যাতনের কারনে। রমনা থানায় মোট ৮৪ টি বন্দী ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন কোলভল্টার মেরাজ উদ্দিন। মেরাজ উদ্দিন আমাকে অর্ধেক সুস্থ করে  তুলেছিল। মেরাজ উদ্দিনকে দিয়ে পাকিস্তান আর্মি একটি ইন্টারভিউ করিয়েছিল। মেরাজ বলেছিল মুক্তিবাহিনীকে ভারত জেরা করে প্রশিক্ষন দিচ্ছে। আসলে মুক্তিবাহিনী বলতে কিছু নেই। সেই ইন্টারভিউ প্রচারিত হয়েছিল। ইন্টারভিউর বিনিময়ে মেরাজ উদ্দিনকে মুক্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। পরে তাকে রায়োরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে চিরতরে মুক্তি দেয়া হয়।
রমনা  থানা থেকে প্রতিদিন সাত জন করে নিয়ে হত্যা করা হত। একটি গাড়িতে করে সাতজন করে নিয়ে যাওয়া হত। তারা আর ফেরত আসতনা। এভাবে ৮৪ জন থেকে বন্দীর সংখ্যা  ১৪ জনে নেমে এল। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর আক্রমন শুরু হল। আক্রমন শুরু হলে সেই গাড়িটি আর দেখিনি। ১৭ ডিসেম্বর আমি মুক্ত হই।

এরপর তাকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন স্বাধীনতার পর সিরু মিয়ার স্ত্রী, আনোয়ার কামালের মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ করেছিলেন কি-না।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন,  যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারের অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল ।  পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আমি একটি টিভি অনুষ্ঠানে আমার এ ঘটনা  বললে সিরু মিয়ার স্ত্রী এবং আনোয়ারের মা  আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তার নাম আনোয়ারা বেগম।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম তাকে প্রশ্ন করেন এ ঘটনা তাকে বলেছিলেন কি-না।
সাক্ষী বলেন, একজন মায়ের কাছে তার শহীদ সন্তানের কথা এবং একজন  স্ত্রীর কাছে তার শহীদ স্বামীর কথা যেভাবে জানানো উচিত সেভাবে বলেছি।
জবানবন্দী শেষে তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। চার থেকে পাঁচটি  প্রশ্নে জেরা শেষ করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল কণ্ট্রাডিকশন।
সেটি হল “২০০৮ সালে আমি একটি টিভি অনুষ্ঠানে আমার এ ঘটনা  বললে সিরু মিয়ার স্ত্রী এবং আনোয়ারের মা  আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তার নামস আনোয়ারা বেগম।” একথাগুলো আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেননি।
জবাবে সাক্ষী বলেন, বলিনি।
এছাড়া গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আজ  আরো একজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।

জবানবন্দী : আমার নাম শেখ ফরিদ আলম। বয়স ৬০ চলছে। আমার বাসার ঠিকানা হল ১৪১ পশ্চিম নাখাল পাড়া। আমার বাসার পশে ১৪২ ঠিকানায় ২ দমমিক ১০ কাঠার এক খন্ড জমি আমার  বাবা আমার নামে ক্রয় করেন। আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে  সিগনাল কোরে চাকরি করতাম। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসি। স্বাধীনতার আগে ১৪২ ঠিকানায় মাদ্রাসা এবং জামায়াতের অফিস ছিল। দেশে ফিরে দেখি সেখানে   ছাত্রলীগের ছেলেরা কাব খুলেছে। তাদেরকে বুঝিয়ে বলায় তারা চলে যায়। তারপর সেখানে আবার মসজিদ এবং পরে মাদ্রাসা বানাই। যখন সেখানে জামায়াতের অফিস ছিল সেটা আমার বাবা তাদের ভাড়া দিয়েছিল।
জবানবন্দী শেষে গোলাম আযমের আইনজীবী তাকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান।