রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

আদালত অবমাননার অভিযোগে খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে নোটিশ জারি

মেহেদী হাসান, ৬/১০/২০১৩
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ  তার বিরুদ্ধে এ  নোটিশ জারি করে। আদালত অবমানার অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে  আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।

তবে তার পদমর্যাদা বিবেচনায় তাকে কোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বক্তব্যের জের ধরে রাষ্ট্রপক্ষ তার  বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে গত বৃহষ্পতিবার। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল আজ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করল।

ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয় রাষ্ট্রপক্ষ খন্দকার মাহবুব হোসেন  এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা যৌক্তিক। খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, আইনজীবী এবং সাক্ষীসহ সমস্ত বিচার প্রকৃয়াকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তার বক্তব্য ট্রাইব্যুনাল এবং স্বাধীন  বিচার ব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট হুমকি । সুপ্রমী কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে তার এ  বক্তব্য  বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য হুমকিস্বরূপ।  এ ধরনের বক্তব্য বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।


ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মান এবং পদমর্যাদ বিবেচনা করে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত জবাব দিতে পারবেন।

চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল -১  কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করে।

আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষাপট :
গত ১ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পরপরই   জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রীম কোর্ট বার ভবনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে  খন্দকার মাহবুব হোসেন ট্রাইব্যুনালের বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন,   জাতীয়তাবাদী শক্তি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে এই বিচারের সাথে জড়িতদেরও বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।

তার এ বক্তব্যকে আদালত অবমাননা আখ্যায়িত করে গত বৃহষ্পতিবার  তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দায়ের করে। 

আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারির আবেদন করা হয  রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে।

অভিযোগ দায়ের করার পর জেয়াদ আল মালুম এর প্রেক্ষাপট এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের এই বিচারের সাথে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, তদন্ত সংস্থা, সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অসংখ্য পরিবার জড়িত। বিচারের এই পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এ বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে এবং বিচারের সাথে সম্পৃক্তদের বিচার করা হবে বক্তব্য দিয়ে সবাইকে হুমকি দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য বিচারের প্রতি অবজ্ঞা, আদালত অবমাননা এবং আতঙ্ক সৃষ্টির শামিল। তার এ বক্তব্য ট্রাইব্যুনালের সমগ্র বিচার প্রকৃয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ন্যায় বিচারকে বাঁধাগ্রস্ত করার শামিল। কাজেই তার এ বক্তব্যের কারনে কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমনানার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহন  করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারি করা হোক এবং এ বিষয়ে তার যদি কোন ব্যাখ্যা দেয়ার থাকে তাহলে আদালতে হাজির হয়ে সে ব্যাখ্যা দিতে বলা হোক।

বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের   আবেদনের ওপর জেয়াদ আল মালুম শুনানী পেশ করার পর রোববার আদেশের জন্য ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রহসনের বিচারের সাথে সম্পৃক্তদেরও বিচার করা হবে মর্মে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার   খন্দকার মাহবুব হোসেন  বক্তব্য প্রদানের পর ২ অক্টোর বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বপ্রথম আপিল বিভাগের নজরে আনেন বিষয়টি। মাওলানা সাঈদীর আপিল আদেন শুনানীর লক্ষ্যে গঠিত প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এর কার্যক্রম সকালে শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসময় যথাযথ স্থানে এ বিষয়টি উত্থাপনের পরামর্শ দেন। 
এরপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে ট্রাইব্যুনাল -১ এর কার্যক্রম শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু মৌখিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাকে বিষয়টি লিখিত আকারে দায়ের করার পরামর্শ দিলে  বৃহষ্পতিবার খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
খন্দকার মাহবুব হোসেন এর পরিচয় : খন্দকার মাহবুব হোসেন  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়শেনর পরপর দুবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি সারা দেশের সকল আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান  এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী এদেশীয় পাকিস্তানী সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন তিনি।
তাকে বাংলাদেশে শীর্ষ  ফৌজদারি আইনজীবী  হিসেবে গণ্য করা হয়। সর্বশেষ তিনি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে শুনানী পেশ করেছেন এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষেও তাকে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আমার বক্তব্যে বিচারকদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি-খন্দকার মাহবুব


আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমার বক্তব্যে বিচারকদের সম্পর্কে কিছু ছিলনা। কেননা বিচারক কোন মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেননা। তিনি থাকেন নিরপেক্ষ।

তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আদালত অবমাননার নোটিশ জারির পর দুপুরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মামলার বাদী, বিবাদী এবং যারা সাক্ষ্য দেন তারাই মামলার সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। বিচারক মামলার সাক্ষ্য প্রমান শুনে তা পর্যালোচনা করে রায় দেন। তার রায় বাদী পক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রমানের ওপর নির্ভর করে হয়ে থাকে।  আমাদের দন্ডবিধি আইনেও আদালতে মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। তাই ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় মিথ্যা মামলা তৈরি করে এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কাউকে সাজা দেওয়া হয়েছে তবে অবশ্যই তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি ট্রাইব্যুনাল এবং বিচারকদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করিনাই। আমার বক্তব্য বিকৃত করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদি আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হল তবে এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত কেনননা তা না হলে দেশে আইনের শাসন থাকবেনা এবং সাংবিধানিকভাবে কারো নিরাপত্তা থাকবেনা।
তিনি বলেন, আমরা বক্তব্য কারো প্রতি হুমকি নয়-বরং এটি একটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা।
লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রসিকিউশন এ অভিযোগ দায়ের করেছে।










রায় ফাঁসের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ডিফেন্স টিমের

মেহেদী হাসান, ৬/১০/২০১৩
রায় ফাঁসের ঘটনায় গভীর উদ্বেত এবং শঙ্কা প্রকশ করে ঘটনার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে আসামী পক্ষ তথা ডিফেন্স টিম।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় প্রকাশের পূর্বেই ঐ মামলার রায় আইন মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রস্তুত করা এবং আইন মন্ত্রনালয় থেকে তা ফাঁস হওয়ার যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিম গভীর শংকা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল  বিবৃতি প্রদান করে।
ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে গনমাধ্যমের কাছে পাঠানো লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়- ডিফেন্স টিম মনে করে দেশের আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও আদালতের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে কাউকে অযথা দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দায়ী ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। আমরা বিস্মিত যে, যে আইন মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে আদালতকে প্রভাবিত করা বা আদালতের রায় প্রস্তুত করার মতো মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপিত হলো সেই আইন মন্ত্রনালয়কে তদন্তের সম্পূর্ণ বাইরে রেখে ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রারের স্বঘোষিত “ফাঁস স্বীকারোক্তি”কে ভিত্তি করে তদন্তকার্য পরিচালনা করে জাতির দৃষ্টিকে মুল ঘটনা থেকে বহু দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, লর্ড কার্লাইলের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সমালোচনায় মূখর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা সংবাদ পত্র Financial Times গত ৩ অক্টোবর “
ÒFlawed war crimes trials push Bangladesh to the ledge”  (যুদ্ধাপরাধের ত্রুটিপূর্ণ বিচার বাংলাদেশকে প্রান্ত সীমায় ঠেলে দিয়েছে) শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছে এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া গ্রহন যোগ্যতা হারিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার একটি পক্ষ হিসেবে ডিফেন্স টিম এত গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।
ডিফেন্স টিমের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করন এবং বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের নেতিবাচক ধারনার পরিবর্তনের স্বার্থে সরকারের উচিৎ একজন অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৩

রায় ফাঁস আরেক স্কাইপ কেলেঙ্কারি

মেহেদী হাসান, ৪/১০/২০১৩
স্কাইপ কেলেঙ্কারির মত আরেকটি কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটল ট্রাইব্যুনাল ঘিরে।  এবার ঘোষনার আগেই ফাঁস হয়ে গেল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৈরি করা রায়। রায় ফাঁস হয়েছে সেটি যতনা গুরুতর  তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  হল কোথা থেকে এ রায় ফাঁস হল সেটি। আসামী পক্ষের অভিযোগ আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে উদ্ধার হয়েছে রায়ের অনুলিপি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে রায় ট্রাইব্যুনাল দিয়েছে তা লেখা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় থেকে। ফাঁস হওয়া রায়ের কপির সঙ্গেই  তার প্রমান রয়েছে। তাদের দাবি আইন মন্ত্রণালয়ের লিখে দেয়া রায়  ট্রাইব্যুনাল পড়ে শুনিয়েছে মাত্র। ট্রাইব্যুনাল এ রায় লেখেনি।
ফাঁস হওয়া রায়ের সাথে আরো যে চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে তা হল গত ২৩ মে থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় লেখা শুরু হয়েছে যখন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। এ তথ্য অনুসারে  বিচার শেষ হবার তিন মাস আগেই শরু হয়ে যায় রায় লেখার কাজ।

রায় ফাঁসের খবর :
৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষনা দেয় আগামীকাল মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করা হবে। সোমবার মধ্যরাতের পর বেলজিয়ামের www.tribunalleaks.be নামক একটি ওয়েবসাইট, বিদেশী আরেকটি ওয়েবসাইট
www.justiceconcern.com  এবং www.bdtoday.net  এর ব্লগে  রায় প্রকাশিত হয়। এরপর এর সূত্র ধরে ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগ এবং ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন গনমাধ্যমে এ রায় ফাঁসের  খবর প্রচারিত হতে থাকে। সাথে সাথে ইন্টারনেট, মোবাইল এবং অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তির বরাতে অতি দ্রুত এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মঙ্গলবার সকালে রায় প্রকাশের আগে বাংলাদেশেরও কোন কোন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হতে থাকে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা উপলক্ষে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন ভিড় করতে থাকেন। এসময় হাইকোর্ট এবং ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে রায় ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। যারা এ বিষয়ে অনবহিত ছিল তাদের কাছেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সকালে হাইকোর্টে সাংবাদিকদের মাঝে ফাঁস হওয়া রায় নিয়ে তৈরি করা একটি বুলেটিন প্রচার করা হয় আসামী পক্ষ থেকে। সেখানে ফাঁস হওয়া রায়ের সারমর্ম এবং  আইন মন্ত্রণালয় থেকে রায় ফাঁস হওয়া বিষয়ে তথ্য প্রমান তুলে ধরা হয়।

ফাঁস হওয়া রায়ের কপি হাতে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ আসামী পক্ষ :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা ফাঁস হওয়া রায়ের কপি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে  হাজির হন ট্রাইব্যুনালে।  সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনাল বসার আগেই ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান  অনেককে তারা এটি দেখিয়ে বলেন আমরা রায়ের কপি আগেই পেয়ে গেছি। রায় তো ফাঁস হয়ে গেছে ইন্টারনেটে। আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে এ রায়ের কপি ফাঁস হয়েছে এবং রায় আইন   মন্ত্রনালয় থেকেই লেখা হয়েছে।
এরপর পৌনে  ১১টায়  ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষনা শুরু করে। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার সময়ই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন এ রায় পড়ে কি লাভ। রায় তো অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। রায় ঘোষনার পরপরই সাংবাদিকরা হুমড়ি খেয়ে  ঘিরে ধরেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যদেরকে তাদের প্রতিকৃয়া জানার জন্য। এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম এবং স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী  টিভি ক্যামেরার সামনে রায়ের কপি উচু করে তুলে ধরে বলেন, এই যে দেখেন রায় আগেই ফাঁস হয়ে গেছে। আমরা ইন্টারনেট এবং অনলাইন গনমাধ্যম থেকে রায়ের কপি ডাউন লোড করে  নিয়ে এসেছি। ট্রাইব্যুনালে একটু আগে যে রায় পড়ে শোনানো হল তার সাথে আমরা ফাঁস হওয়া এ রায় মিলিয়ে দেখেছি। আমাদের কাছে থাকা ফাঁস হওয়া রায়ের সাথে ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায় হুবহু মিলে গেছে।

তারা যে রায় পড়ে শুনিয়েছেন সেটি আসলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে লিখে পাঠানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা আইন মন্ত্রণালয়ের লেখা রায় পড়ে শুনিয়েছেন মাত্র। এটি তাদের রায় নয়। 
ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেন, আমরা  বিস্মিত আইনমন্ত্রণালয়ের লেখা রায় কিভাবে বিচারপতিরা পড়ে শোনাতে পারলেন। তাদের এ রায় ঘোষনা থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। আমরা দেশবাসী ও দুনিয়াকে দেখাতে চাই এখানে জুডিশিয়াল কিলিং হচ্ছে। এখানে কেউ বিচার পাবে না। আমরা বুঝতে পারছি না কোথায় যাব, কোথায় বিচার পাব। আমরা আগে থেকেই জানতাম এখানে বিচার পাব না।

রায় ফাঁস নিয়ে বুলেটিন :
রায় ফাস নিয়ে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে যে বিশেষ বুলেটিন প্রচার করা হয় তাতে ফাঁসের ঘটনা বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বুলেটিনের প্রতিবেদন এবং অন্যান্য গনমাধ্যমে  রায় ফাঁস নিয়ে রায় যে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে তাতে  দাবি করা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যে রায় ঘোষনা করা হয়েছে তার  অনুলিপি আইন  মন্ত্রনালয়েল আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হকের অফিসের কম্পিউটারে রতি ছিল। আইন মন্ত্রণালয়ের ষষ্ঠ তলার একটি কম্পিউটারে ‘ডি ড্রাইভে’ এ রায়ের কপি পাওয়া যায়। কম্পিউটারের প্রত্যেকটি ফাইল বা ডকুমেন্টের উৎস নির্ণয়ক তথ্য ওই ফাইল বা ডকুমেন্টে সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্য ওই ফাইল বা ডকুমেন্টের প্রপারটিস অপশনে গেলে পাওয়া যায়। এই রায়ের কপিটি যে ফাইলে পাওয়া গেছে তার প্রাপারটিস অপশনে গিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাহলো- ‘ডি ড্রাইভ’র ‘আলম’ নামে একটি ফোল্ডার রয়েছে। তার অধীনে আরেকটি সাব ফোল্ডারের নাম  ‘ডিফারেন্ট কোর্টস অ্যান্ড পোস্ট ক্রিয়েশন’ । এর অধীনৈ আরেকটি সাব ফোল্ডার হল  ‘ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল’। এই ‘ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল’ এর মধ্যে আরেকটি ফোল্ডার ‘চিফ প্রসিকিউটর-ওয়ার ট্রাইব্যুনাল’ । এর মধ্যে রাখা রায়ের খসড়া কপিটির নাম ছিলো ‘সাকা ফাইনাল-১’। রায় লেখা চূড়ান্ত করার পর খসড়া কপিটির নাম ‘সাকা-১’ পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আইসিটি বিডি কেস নং ০২ অব ২০১১ (ডেলিভারি অব জাজমেন্ট)(ফাইনাল)’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ছে আলম নামের যে ব্যক্তির কম্পিউটারে ফাইলটি পাওয়া গেছে সেই আলম হলেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব  আবু সালেহ শেখ মো : জহিরুল হক এর কম্পিউটার অপারেটর।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কম্পিউটারের তথ্যে  দেখা যায় আইন মন্ত্রণালয়ে উক্ত ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে চলতি বছর ২৩ মে ১২টা ১ মিনিটের সময় যখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিলো। ফাইলের সাইজ ১৬৭ কেবি। ফাইলটি এডিট করা হয়েছে ২৫৮৭ মিনিট পর্যন্ত।  অর্থাৎ ফাইলটি লিখতে মোট ২৫৮৭ মিনিট ব্যয় করা হয়েছে।
এ তথ্য থেকে আসামী পক্ষ দাবি করেছে বিচার শেষ হওয়ার আগেই ২৩ মে থেকে রায় লেখা শুরু হয়েছিল। গত ১৪ জুলাই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। সে হিসেবে বিচার শেষ হওয়ার ৩ মাস আগে রায় লেখা  শুরু হয়েছে যা বিচার জগতে বিস্ময়কর ঘটনা বলে দাবি করেছে আসামী পক্ষ। 

ফাঁস হওয়া রায়ের সাথে ঘোষিত রায়ের মিল :
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষনার  আগে যে রায় ফাঁস হয়েছে এবং ফাঁস হওয়া রায় নিয়ে যেসব প্রতিবেদন এবং বুলেটিন প্রচারিত হয়েছে সেই সব প্রতিবেদনে রায় বিষয়ে যেসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তার সাথে হুবহু মিলে গেছে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়ের তথ্যের সাথে।

মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় প্রকাশের আগেই বিভিন্ন অনলাইন এবং অন্যান্য গনমাধ্যমে ফাঁস হওয়া রায় নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে  ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী মোট ২৩টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সেখান থেকে মোট ১৭টি অভিযোগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হাজির করে। যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করেছে, তাই এ ১৭টি অভিযোগের বিষয়ে রায় লেখা হয়েছে মর্মে তথ্য দেখা যায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া রায়ের কপিতে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া রায়ে দেখা যায়, ১৭টি অভিযোগের মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেনি সেগুলো থেকেও তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৪টি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। তবে ফাঁস হওয়া রায়ে শাস্তির কথা উল্লেখ ছিলনা।
ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার পর ফাঁস হওয়া রায়ের তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখা গেছে আগেই পরিবেশিত তথ্য হুবহু এক।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেব, মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। এসব বিষয়সহ আরো কিছু বিষয়ে রায়ে চৌধুরী সাহেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ বিষয়টি উল্লেখ আছে। রায় প্রকাশের আগে ফাঁস হওয়া রায় নিয়ে তৈরি করা বুলেটিনেও এ তথ্য উল্লেখ ছিল।

ট্রাইব্যুনালের স্বীকারোক্তি :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে ফাঁস হওয়া রায়ের কপিটি  খসড়া রায়ের কপি বলে দাবি করা হয়েছে। রায় ফাঁসের ঘটনা স্বীকার করে  ২ অক্টোবর বুধবার   শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর পক্ষে ট্রাইব্যুনালের মুখপাত্র রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ আনষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার বলেন, কথিত ফাঁস হওয়া রায়ের কপি নিতান্তই একটি খসড়া যা রায় ঘোষণার অনেক আগেই কোন না কোনভাবে ‘লিকড’ বা ফাঁস হয়েছে এবং একটি দুষ্টচক্রের হস্তগত হয়েছে। খসড়া এ রায় ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা কোন না কোনভাবে ফাঁস হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র যারা ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারা এবং যারা এই অপকর্মের সুবিধাভোগী তারাই এই অপকর্মটি করেছে।
এই বিষয়টি উদঘাটনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশক্রমে থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেখা যায় যে, কথিত ‘লিকড’ হওয়া রায়ের খসড়ার সাথে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোন রায় নয় যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-১-এর মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের স্পোকসম্যান হিসেবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী একটি তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু কথা বলা প্রয়োজন। গত ০১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে ট্রাইব্যুনাল উন্মুক্ত আদালতে জানিয়েছেন যে, রায় প্রস্তুত এবং পর দিন অর্থাৎ ০১ অক্টোবর রায় ঘোষিত হবে।

আইন ও বিধি অনুসারে রায় ঘোষণার দিনই সাথে সাথে রায়ের সার্টিফাইড কপি পক্ষগণকে দিতে হয় যা অন্য কোন আইনে দেখা যায় না। তাই সঙ্গত কারণে রায় চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত না করে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ ও রায় ঘোষণা করা হয় না। এ কারণে সাধারণত রায় ঘোষণার ২/১ দিন আগে রায় চূড়ান্ত করা হয়ে থাকে। কেবল সাজা সংশ্লিষ্ট অংশটি রায়ের দিন মাননীয় বিচারকগণ একমত হয়ে চূড়ান্ত করে থাকেন।
রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, মঙ্গলবার  যথারীতি রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী এবং অভিযুক্তের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের মিডিয়াকে দেয়া বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, রায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পূর্বে তা ইন্টারনেটে কিছু ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে। তারা এটিও দাবি করেছেন যে, কথিত ‘রায়’ আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, প্রসিকিউটর এবং অভিযুক্ত পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীগণ কোর্টের অফিসার। গতকাল (মঙ্গলবার) রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল আসন গ্রহণের পর অভিযুক্ত পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর দায়িত্ব ছিল কোন কোন ওয়েবসাইটে কথিত খসড়া রায় আগের দিন রাতে আপলোডেড পাওয়া গেছে সেই বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা। কিন্তু তিনি তা না করে আনুষ্ঠানিকভাবে রায় ঘোষণার পর কথিত খসড়ার হার্ড কপি দেখিয়ে মিডিয়ার সামনে এটি দাবি করেন যে, রায় আগেই ‘লিকড’ হয়েছে এবং এটি আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে রয়েছে এবং এটি একটি ‘ডিকটেটেড রায়’। অভিযুক্তের বিজ্ঞ আইনজীবীর এই উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য অসদাচরণ বটে। নিঃসন্দেহে রায় ঘোষণার পর এমন দাবি করা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্তের অংশ।

লিখিত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার বলেন, দেখা যায় যে, কথিত ‘লিকড’ রায়ের খসড়ার সাথে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোন রায় নয় যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কথিত ‘লিকড’ খসড়া রায়ে কোন অনুচ্ছেদ নম্বর নেই এবং এটি নিতান্তই একটি খসড়া যা রায় ঘোষণার অনেক আগেই কোনভাবে ‘লিকড’ হয়েছে এবং খসড়া পর্যায়ে লিকড হওয়া খসড়াটি রায় ঘোষণার বেশ ক’দিন পূর্বেই দুষ্ট চক্রের হস্তগত হয়েছে মর্মে অনুমিত। তাই যদি হয় তবে তা পূর্বে প্রকাশ না করে ঠিক আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার আগের রাতে কথিত ওয়েবসাইটে আপলোডেড পাওয়া গেল কেন এবং কিভাবে? এ থেকে এটি স্পষ্ট অনুমিত যে, একটি সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র যারা ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারা এবং যারা এই অপকর্মের সুবিধাভোগী তারাই এই অপকর্মটি করেছে।

তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে এটি অনুমান করা হচ্ছে যে, কথিত খসড়া রায় ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা কোন না কোনভাবে ‘লিকড’ হয়েছে। এই বিষয়টি উদঘাটনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার থানায় জিডি করেছেন। আমরা আশা করি, সত্য বেরিয়ে আসবে এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা যাবে। ট্রাইব্যুনালে কর্মরত কেউ যদি এই অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত পক্ষে তার বিজ্ঞ আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দেননি এবং এতে তার অধিকার ুণœ হয়েছে। এটি আদৌ সঠিক নয়। গত ২৭/৬/২০১৩ তারিখের ১৮৯ নং আদেশে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছেন যে,



Ô Proposed witness No. 5 Mr. Justice Shamim Hasnain is the sitting Judge of the Supreme Court of Bangladesh, and as such without obtaining his consent, no summons will be issued upon him.


 ’ কিন্তু দেখা যায় যে, পরবর্তীতে মাননীয় বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর নিকট থেকে এ বিষয়ে সম্মতি সংশ্লিষ্ট কোন কিছু ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়নি।

যে বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা হলো সে বিষয়ে পরবর্তী যে কোন অগ্রগতি যথারীতি আপনাদের অবহিত করা হবে। পরিশেষে এটি বলব যে, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সহযোগিতা আমরা সব সময় পেয়েছি। প্রত্যাশা আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

রায় ফাঁসের ঘটনা বিষয়ে জিডি :
ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় দায়ের করা জিডির কপি সংবাদ সম্মেলনে বিলি করা হয় সাংবাদিকদের মাঝে। জিডির বিবরনে লেখা হয়েছে-
আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী এই মর্মে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, গত ০১/১০/২০১৩ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন আইসিটি বিডি কেস নং -২/২০১১ চীফ প্রসিকিউটর বনাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী-এর রায় প্রচারের জন্য দিন ধার্য ছিল। রায় ঘোষণার পর পরই আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যগণ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে জানান যে, উক্ত মামলার রায়ের কপি তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পূর্বেই প্রাপ্ত হয়েছেন। আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে আদালত হতে রায়ের কপি সরবরাহ করার পূর্বেই একটি ডকুমেন্ট ক্যামেরার সামনে প্রদর্শন করে বলেন যে, এই সেই ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত রায়ের কপি যা রায় ঘোষণার পূর্বেই তারা প্রাপ্ত হয়েছেন এবং সেটি নিয়েই তারা আদালত কক্ষে প্রবেশ করেছেন। তিনি আরো বলেন যে, আদালত হতে প্রচারিত রায় এবং ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত রায়ের মধ্যে মিল আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হতে প্রচারিত সমস্ত রায় ট্রাইব্যুনালেই প্রস্তুত করা হয়। রায় ঘোষণার পূর্বে রায়ের কোন অংশের কপি অন্য কোনভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরেও কথিত খসড়া রায়ের অংশ কিভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত হল বা কিভাবে ট্রাইব্যুনাল হতে খসড়া রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস (Leaked) হল তা উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রতি হুমকি স্বরূপ। উল্লেখ্য যে,
www.tribunalleaks.be  ওয়েবসাইটে কথিত খসড়া রায়ের অংশ আপলোডেড দেখা যায়।
এমতাবস্থায় বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হল।
এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ
রেজিস্ট্রার
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
পুরাতন হাইকোর্ট ভবনম ঢাকা।
জিডি নং ৮৫ তাং ০২/১০/ডি

আলোচনায় নতুন মাত্রা :
ট্রাইব্যুনালে যেসব মামলার রায় হয়েছে এবং আরো যেসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মামলা ছিল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মামলা। এরপর নানা কারনে অন্যতম আলোচিত মামলা ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলা। রায় প্রকাশের আগেই রায় ফাঁস হয়ে যাবার ঘটনার মধ্য দিয়ে এ মামলায় আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ হল।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী হলেন  বিএনপির প্রথম কোন নেতা যার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় প্রদান করা হল। ২০১১ সালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিচারের উদ্যোগ গ্রহন উপলক্ষে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর থেকে বিচার চলাকালে নানা ধরনের রসাত্মক, শ্লেষাত্মক এবং ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করে বিভিন্ন সময় সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন জনপ্রিয় এই রাজনীতিক।

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজে সাক্ষীকে জেরা করেছেন মাঝে মধ্যে। বিচার শুরুর আগে বিভিন্ন বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর নিজেই  শুনানী করেছেন এবং জ্ঞানগর্ভ যুক্তি ও আলোচনা পেশ করেছেন ট্রাইব্যুনালে।  নিজের মামলায় নিজেই ইংরেজিতে দীর্ঘ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তার পক্ষে তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ পরিচিত এবং জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে সাক্ষী মানার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছেন।  বিচারের শুরুতে তিনি তার পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ না করে নিজেই নিজের মামলায় লড়বেন বলে ঘোষনা দেন। এরপর তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার পর তিনি নিজে আবার আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।

রায় ফাঁস এবং  স্কইপ একই মুদ্রার দুই পিঠ
ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে বাইরের বিভিন্ন মহলের প্রভাব বিস্তারের মাত্রা, বিস্তৃতি এবং তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায় ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক এর  স্কাইপ সংলাপের মাধ্যমে। আর রায় ফাঁসের ঘটনাটি স্কাইপের চেয়েও কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। কারণ স্কাইপ সংলাপকে যদি ধরা হয় থিওরি  তবে রায় ফাঁসের ঘটনাটি হল প্রাকটিক্যাল। যাকে বলে কট রেড হ্যান্ডেড । রায় ফাঁসের ঘটনাকে   স্কাইপ ঘটনারই ধারাবাহিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। রায় ফাঁসের ঘটনা স্কাইপ কেলেঙ্কারিকে  সুস্পষ্ট ভিত্তির ওপর দাড় করিয়েছে।  স্কাইপ সংলাপ এবং রায় ফাঁসের ঘটনা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ । কেননা  বিচারপতি নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার স্কাইপ সংলাপে এটি স্পষ্ট যে, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন নেপথ্যে থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন। বিচারপতি নিজামুল হক ম ট্রাইব্যুনালে এমন অনেক আদেশ পড়ে শুনিয়েছেন যা হুবহু বেলজিয়াম থেকে এসেছে মর্মে দেখা যায়। আসামী পক্ষ এসব ট্রাইব্যুনালে দায়ের করেছে। স্কাইপ সংলাপে আরো যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল বেলজিয়াম ছিল মূলত একটি ভায়া মাধ্যম। বেলজিয়ামে বসে ড. আহেমদ জিয়াউদ্দিন নিয়মিত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, বিচার নিয়ে সোচ্চার দেশের বিভিন্ন মহল, সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচু মহলে যোগাযোগ রাখতেন মর্মে প্রমান রয়েছে স্কাইপ সংলাপে। এসব মহলের দিক নির্দেশনা এবং পরামর্শ মোতাবেক তিনি বেলজিয়ামে বসে কার্যক্রম ঠিক করতেন এবং সে ভিত্তিতে তিনি ভায়া মাধ্যম হিসেবে ট্রাইব্যুনালের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন। স্কাইপ সংলাপে আইনমন্ত্রী, আইনপ্রতিমন্ত্রীসহ আরো বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারকে ঘিরে।  এসব কারনে আসামী পক্ষ তখন অভিযোগ করে  ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে  সরকারের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। এখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এবং আসামী পক্ষ অভিযোগ করল আইন মন্ত্রণালয়ের অফিসের কম্পিউটারের থেকে রায় ফাঁস এবং আইন   মন্ত্রণালয়ের অফিসে বসে রায় লেখা হয়েছে।
স্কাইপ এবং রায় ফাঁসের কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ মেলালে যেটি দাড়ায় তা হল  স্কাইপ কেলেঙ্কারি এবং রায় ফাঁস একই মুদ্রার দুই পিঠ। একটি ঘটনা অপর ঘটনাকে সমর্থন  করছে।

বলির পাঠা হবে কে?
ট্রাইব্যুনাল স্বীকার করেছে ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে রায়ের খসড়া ফাঁস হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের এ স্বীকারোক্তি নিয়ে গুঞ্জন এবং আলোচনা চলছে নানা মহলে। কারো কারো মতে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের রক্ষার উদ্দেশে ট্রাইব্যুনালকে দিয়ে এ স্বীকারোক্তি করানো হতে পারে।  তারা এখন অপেক্ষায় আছে এ ঘটনায় কারা কারা বলির পাঠা হয় তা দেখার জন্য।

রায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরন :
১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টরিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করে আন্তর্জঅতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধেল চারটি অভিযোগে তাকে   মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনটি অভিযোগের  প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরো দুটি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে জেল দেয়া হয়েছে তাকে।
যে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সেগুলো হল রাউজানের গহিরায় কুন্ডেশ্বরী কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যাকান্ড, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর এবং তার ছেলে শেখ আলমগীর হত্যা, রাউজানের  ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে  ৫০ থেকে ৫৫ জন হিন্দুকে  ব্রাশফায়ার করে হত্যা এবং সুলতানপুরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা।

এছাড়া রাউজানের গহিরা  গ্রামের  হিন্দু  পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে  পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, মতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা লাল শর্মা হত্যা; জগৎমলপাড়ায় ৩২ জনকে হত্যা এবং  রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে  প্রবেশ করে তাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ২০ বছর করে  জেল দেয়া হয়েছে।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মোট ২৩ টি অভিযোগে  চার্জ গঠন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগের মধ্য থেকে ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করে । ১৭টি অভিযোগ থেকে  তাকে মোট ৯টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকী আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া  হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ বাকী যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমান হাজির করেনি সে ছয়টি অভিযোগ থেকেও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকে মোট  ১৪টি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। 
ট্রাইব্যুনাল-১  চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক পালাক্রমে রায় পড়ে শোনান।

পাকিস্তান অবস্থানের দাবি নাকচ :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালিয়া থানায় বিভিন্ন হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে হত্যা নির্যাতন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে হত্যা, নির্মূল এবং দেশান্তরকরনের অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।  আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দাবি ছিল ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তিনি পাকিস্তানে চলে যান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বদলী ছাত্র হিসেবে তিনি  পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং যুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তান অবস্থান করেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষে ১৯৭১ সালের অক্টোবার মাসে  লন্ডনে চলে যান এবং লিঙ্কন ইনে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম দেশে আসেন বলে দাবি করে তিনি।

১৯৭১ সালে তার পাকিস্তান অবস্থান বিষয়ে বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের জীবিত অনেক ভিআইপি ব্যক্তিবর্গের নাম  উল্লেখ করেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার জবানবন্দীতে।  বাংলাদেশে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান বিচারপতি শামীম হাসনাইনের নাম। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন শামীম হাসনাইন তার সাথে তখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এবং তিনি তার বন্ধু ছিলেন। এছাড়া  বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও সেসময় পাকিস্তান অবস্থান করছিলেন এবং তার সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত হত দাবি করে  তাকেও তিনি সাক্ষী মেনেছিলেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানে অবস্থান বিষয়ে পাকিস্তানে বর্তমানে জীবিত যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং ২০০৮ সালে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সামরু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইসকাহ খান খাকওয়ানী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্দিক খান কানজু প্রমুখ। এরা সকলেই তার কাসমেট ছিলেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে বলেন, আমি যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ছিলাম সে মর্মে তারাসহ আরো অনেকে এফিডেভিড পাঠিয়েছেন আমাকে। তারা আমার পক্ষে এসে সাক্ষ্য দিতে চান কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের এদেশে আসার বিষয়ে ভিসা দিচ্চেনা।

তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার পাকিস্তান অবস্থান বিষয়ে দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছে রায়ে।  দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় ২৯/৯/১৯৭১ সালে প্রকাশিত একটি খবরের ভিত্তিতে আসামী পক্ষের এ দাবি নাকচ করা হয়েছে। ওই খবরে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের বোমা হামলায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তখন আহত হন এবং গাড়িতে থাকা চালক নিহত হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন
গত বছর ১৯ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এক বছর চার মাসের মাথায় আলোচিত এ মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয় গত ১৪ আগস্ট। ওই দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। 
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরে গ্রেফতার করা হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।

১৭টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৪১ জন সাক্ষী হাজির করে। অপর দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আসামী নিজেসহ মোট চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। 

কে এই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী?
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টমন্ডিত একজন  আলোচিত ব্যক্তিত্ব।  বক্তব্যের নিজস্ব স্টাইলের অধিকারী  এবং বাকপটু  এই ব্যক্তিত্ব  তীর্যক এবং স্পষ্ট উচ্চারনের জন্য সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশে হাতেগোনা যে কয়জনকে  খ্যাতিমান পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে গন্য করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি পরপর ছয়বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এবং পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পীকার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে বন্দী অবস্থায় ৫৪ বছর  বয়সে  তার মৃত্যু হয়।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় পিতার মুসলিম লীগের অনুসারী হিসেবে। ১৯৭৯ সালে তিনি মুসলিম লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচতি হন। এরপর ৮৮ সালে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন। ১৯৯৬  সালে দল বিলুপ্ত করে যোগ দেন বিএনপিতে। মাঝখানে জাতীয় পার্টি থেকে তিনি  মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

তৎকালীন পূর্ব  পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজে (বর্তমানে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ) ভর্তি হন  ১৯৬০ সালে এবং সেখান থেকে এসএসসি  পাশ করেন ১৯৬৬ সালে। এরপর  নটরডেম কলেজে ১৯৬৬ সালে ভর্তি হন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাসে ভর্তির পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হন এবং সেখানে অধ্যয়ন শেষে ১৯৭১ সালে অক্টোবর মাসে লন্ডনের লিঙ্কন ইনে ভর্র্তি  হন ব্যারিস্টারি পড়ালেখার জন্য। তবে ব্যারিস্টারি পাঠ শেষ করেননি তিনি।  ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগে তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়াশুনা করেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাত্রজীবনে  সরাসরি কোন ছাত্রসংগঠনের সাথে জড়িত  না থাকলেও আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন।  ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক  ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশেও উপস্থিত ছিলেন বলেন তিনি তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালে ১৩ মার্চ। বর্তমানে তার বয়স ৬৪ বছর ৭ মাস। বিচার চলাকালে তিনি একদিন ওপেন কোর্টে মন্তব্য করেন ঢাকার জেলখানা থেকে আমার পিতার লাশ বের করা হয়েছিল ৫৪ বছর বয়সে। আমার বয়স আমার পিতাকে ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই।
৪/১০/২০১৩









মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা


তাং- ০৩-১০-২০১৩ইং
পূনরায় জেরাঃ
প্রদর্শনী ২/৫ দৈনিক সংগ্রামের ০৫-০৮-১৯৭১ তারিখের দৈনিক সংগ্রামের সংখ্যায় ৩রা আগষ্ট এ একটি ছাত্র সংগঠনের ছাত্র সূধী সমাবেশের খবর পরিবেশিত হয়েছে। এই সংবাদে বক্তাদের পরিচিতির বর্ণনায় কারও নামের পূর্বে আলবদর কথাটি লিখা নাই। এই সমাবেশে কোন সামরিক অফিসার বক্তৃতা দিয়েছেন এই মর্মে কোন উদ্ধৃতি নাই। ঐ বক্তৃতায় পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর সমালোচনা করে কোন বক্তব্য ছিল, ইহা সত্য নহে। এই বক্তব্য শুনে কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংঘটিত করেছে এই মর্মে কোন তথ্য আমি আমার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করি নাই। প্রদর্শনী- ২/৬, ২/৭, ২/৮, ২/৯ সমূহে প্রকাশিত সংবাদে নিজামী সাহেবের সাথে সংশ্লিষ্ট সংবাদের সাথে আলবদর বাহিনীর কোন সম্পর্ক নাই। প্রদর্শনী ২/১০ এ মোস্তফা আল মাদানী হত্যার প্রতিবাদে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেওয়া আছে তবে ঐ সংবাদের সম্পূর্ণ অংশ আমি জব্দ করি নাই, শুধুমাত্র নিজামী সাহেবের বক্তব্যের অংশটুকু আমি জব্দ করেছি। ইহা সত্য নহে যে, এই প্রদর্শনী-২/১০ পাঠ করে বলা সম্ভব নয় যে, এটি নিজামী সাহেবের বিবৃতি না কোন সভার বক্তব্য। মোস্তফা আল মাদানী সাহেব স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন কিনা ইহা আমার জানা নাই। মোস্তফা আল মাদানী সাহেবের হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে কেউ কোন বিবৃতি দিয়েছিল কিনা আমি জানি না। এই প্রদর্শনীর দ্বিতীয় পৃষ্ঠার প্রথম লাইনটি স্ক্যানের অংশ নয়, পরে টাইপ করা।
প্রদর্শনী ২/১১, ২/১২, ২/১৩, ২/১৪ সমূহ এই মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।
প্রদর্শনী ২/১৫ তে যে সংবাদের উদ্ধৃতি দেওয়া আছে তা একটি ছাত্র সংগঠনের সভায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের দেওয়া বক্তব্য। এই সংবাদে আলবদর সংক্রান্ত কোন বক্তব্য নাই। এই সংবাদ পাঠ করে কেউ কোন অপরাধ সংঘটিত করেছিল মর্মে কোন তথ্য আমি তদন্ত রিপোর্টে দাখিল করি নাই।
প্রদর্শনী- ২/১৬ তে দুইটি অংশ, একটি হচ্ছে ছাত্র সংগঠনের সভায় বক্তব্য দেওয়া এবং অন্যটি হচ্ছে কোরআনের তাফসির করা। এই সংবাদ পাঠ করে কেউ কোন অপরাধ সংঘটিত করেছিল মর্মে কোন তথ্য আমি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করি নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব সূরা তাওবার ১১১ এবং ১১২ নং আয়াতের কোন ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না।
প্রদর্শনী- ২/১৭, ২/১৮, ২/১৯, ২/২০, ২/২১, ২/২৩, ২/২৫, ২/২৬, ২/২৭, ২/২৮, ২/২৯, ২/৩০, ২/৩১, ২/৩২, ২/৩৩ সমূহে আলবদর বাহিনীতে জড়িত থাকা সম্পর্কে নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে কোন সংবাদ পরিবেশিত হয় নাই। প্রদর্শনী- ২/২২ মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের লেখা একটি প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে কোন স্থানে কিংবা লেখক পরিচিতি সম্পর্কে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আলবদর বাহিনীর প্রধান, সংগঠক বা প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে উল্লেখ নাই। প্রদর্শনী- ২/২৪ এ প্রদর্শিত ছবিতে নিজামী সাহেবের ছবি থাকার কথা উল্লেখ নাই। (চলবে)

পূনরায় জেরা ঃ
প্রদর্শনী- ৪ এর আইটেম নাম্বার ২২৫ দৈনিক আজাদের ১১-১২-১৯৭১ এর সংখ্যায় আলবদর বাহিনী আয়োজিত পথসভার একটি ছবি আছে তাতে আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব নয়, অন্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে। আইটেম নাম্বার ২২৫ সাপ্তাহিক বিচিত্রা ১০বর্ষ প্রথম সংখ্যা ২০-০৫-১৯৮১ এর “বাংলাদেশ গণহত্যা” শিরোনামে সংবাদ জব্দ করা আছে।
প্রদর্শনী- ৪/১, ৪/২, ৪/৩, ৪/৪, ৪/৫, ৪/৬, ৪/৭, ৪/৮, ৪/৯, ৪/১০, ৪/১১, ৪/১২, ৪/১৩, ৪/১৪, ৪/১৫, ৪/১৬, ৪/১৭, ৪/১৮, ৪/১৯, ৪/২০, ৪/২১, ৪/২২, ৪/২৩, ৪/২৪ সমূহে নিজামী সাহেবের নামের সাথে আলবদর শব্দটি নাই।
প্রদর্শনী-৮ হচ্ছে একটি জব্দ তালিকা, প্রদর্শনী- ৮/১ দৈনিক ইত্তেফাক ১৭-১১-১৯৭১। প্রদর্শনী-৩ শাহরিয়ার কবীর কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা” বই এর ৬৯ পৃষ্ঠায় “তাদের পরিবারের সদস্যরা সেদিনই জানতে পেরেছিলেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন তাহের ও মেজর আসলামের নির্দেশে কারফিউ জারী করা হয়েছিল। আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবীর ধরা পড়ার পর পরই কারফিউ তুলে নেওয়া হয়।”- এই কথাগুলো লিখা আছে। প্রদর্শনী- ৮/১ অনুযায়ী জানা যায় যে, ঐ দুই ডাক্তার সাহেবের হত্যাকান্ডের কারণে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছিল। প্রদর্শনী-৩০ এর ৬৮ নম্বর পৃষ্ঠার শেষ প্যারায় “ডা: আজহারুল হক আর ডা: হুমায়ুন কবীরকে আলবদর বাহিনীর হাতে যে তুলে দিয়েছিল সেই ব্যক্তিই ছিল পেশায় চিকিৎসক। তার নাম এহসানুল করিম খান। ১৬ ডিসেম্বরের পর পালাতে গিয়ে কলকাতার দমদম বিমান বন্দরে ধরা পড়েছিল। কিন্তু একদিন পরই তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে আরেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ঘাতক এহসানুলের ভাই। সালমা হক জানিয়েছেন, সম্ভবতঃ এই লোক এখন বেলজিয়াম অথবা মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও আছে।”- এই কথাগুলো উল্লেখ আছে। উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নাম শাহরিয়ার কবীর সাহেবের নিকট জানতে চাই নাই, তবে সালমা হক সাহেবার নিকট জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি তা জানাতে পারেন নাই। ১৫ই নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান জনাব আহসান সাহেবের ছেলেকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল মর্মে সালমা হক আমাকে জানিয়েছিলেন। আহসান সাহেব বা তার ছেলের সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা আমি করি নাই। ডাঃ আজহারুল হক এবং ডাঃ হুমায়ুন কবীর সাহেবের হত্যাকান্ডের বিষয়ে রমনা থানায় যে মামলা হয়েছিল সেই বিষয়ে রমনা থানায় যোগাযোগ করেছি কিন্তু রমনা থানায় ১৯৭১ সালের মামলা সংক্রান্ত কোন নথি না থাকায় এই মামলার ফলাফলের বিষয়ে আমি জানতে পারি নাই। ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে এই মামলার তথ্য জানার জন্য আমি যাই নাই। অন্য দুই জায়গায় মামলার এজাহার সমূহের কপি থাকার কথা অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সার্কেল অফিস এবং এসপি, এসবির নিকট থাকার কথা সেখানে আমি তাহা সংগ্রহের জন্য যাই নাই। ডা: আজহারুল হক সাহেব এবং ডা: হুমায়ুন কবীর সাহেবের হত্যাকান্ডের বিষয়টি এই মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পূর্বে আমি অবগত ছিলাম, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ডা: আজহারুল হক সাহেব এবং ডা: হুমায়ুন কবীর সাহেবের হত্যাকান্ড সংক্রান্ত মামলার তথ্য গোপন করেছি।
আলবদর মূল বইটি উর্দুতে লিখা। উহার বাংলা অনুবাদ “আলবদর” নামক বইটি প্রদর্শনী ২৮/২ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। যে ব্যক্তি এই বইটির বাংলা অনুবাদ করেছে তার নাম প্রদর্শনী ২৮/২ বইয়ে উল্লে খ নাই। এই অনুবাদ গ্রন্থটি বাজারে পাওয়া যায়না। প্রদর্শনী ২৮/২ এর ২৫৬ পৃষ্ঠায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বক্তব্যের দুইটি উদ্ধৃতি দেওয়া আছে। উক্ত উদ্ধৃতি দুইটির একটিতে আবদুল মালেকের ব্যক্তিগত জীবনের অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা আছে এবং অন্যটিতে নিজামী সাহেবের সাথে মালেক সাহেবের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা আছে। উর্দূতে লেখা আলবদর বইটি আমি বিজ্ঞ প্রসিকিটরের নিকট দিয়েছি, কিন্তু তিনি উহা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। আলবদর বইয়ের লেখক সেলিম মানসুর খালেক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। প্রদর্শনী ২৮/২ এ সেলিম মানসুর খালেদের প্রদর্শনী ২৮/২ এ সেলিম মানসুর খালেদের পরিচিতি উল্লেখ নাই। ইহা সত্য নহে যে, কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আলবদর বইটি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছি। প্রদর্শনী ২৮/২ বইয়ে ২৫৬ নাম্বার পৃষ্ঠায় যেখানে মতিউ রহমান নিজামী সাহেবের নাম উল্লেখ আছে সেখানে তার নামের পূর্বে তার পরিচিতি হিসাবে আলবদর শব্দটি উল্লেখ নাই।
দি ভ্যানগার্ড অব দি ইসলামিক রেভুলেশন (প্রদর্শনী- ২৮) এর ৬৬ নাম্বার পৃষ্ঠার শেষ লাইনের আগের লাইনে “উযধশধ টহরাবৎংরঃু৩৮” লেখা আছে। ঐ বইয়ের ২৩৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় ৩৮ নাম্বার ক্রমিকে  “ওহঃবৎারবি রিঃয গঁঃর দঁ’ ১-জধযসধহ ঘরুধসর রহ তঠঘঅঞ, ঠড়ষ. ২, ২৩৪-৩৫”  লেখা রয়েছে। উক্ত বইয়ের প্রথম দিকে ীীরর পৃষ্ঠায় ঔঠঘঅঞ এর পূর্ণাঙ্গ শব্দ হিসাবে “ঝধুুরফ গঁমধয়য়রঁ’ ১-জধযসধহ ধহফ ঝধষরস গধহংঁৎ কযধষরফ, বফং, ঔধন ঠঁয-ঘধুরস-র অ’ষধ ঃযব, ২ াড়ষ. (খধযড়ৎব: ওফধৎধযর গধঃনঁ’ধঃ-র ঞধষধনধয, ১৯৮১)” উল্লেখ আছে। ঔঠঘঅঞ াড়ষ. ২, ২৩৪-৩৫ পৃষ্ঠায় কি লেখা আছে তাহা আমি দেখি নাই। ইহা সত্য নহে যে, উল্লেখিত ২৩৪-৩৫ পৃষ্ঠায় নিজামী সাহেবের সাক্ষাৎকারের যে বক্তব্য আছে তাহার উদ্ধৃতি না দিয়ে প্রদর্শনী- ২৮ এ ভুল উদ্ধৃতি দেওয়া আছে তাহা আমি জানার কারণে ঐ বইটি না পড়ার কথা বলছি।
“পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কথা” (প্রদর্শনী ৩৩) নামক বইয়ের ৭৩ পৃষ্ঠার ২৭শে নভেম্বর সাঁথিয়া থানার ধূলাউড়ি হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেওয়া আছে, ৬৮ পৃষ্ঠায় ডেমরা ও রূপসী গ্রামে গণহত্যার বর্ণনা আছে, ২১০ পৃষ্ঠায় মাওলানা কাছিম উদ্দিন হত্যাকান্ডের বর্ণনা আছে। এই বর্ণনা সমূহে পাকিস্তান আর্মির স্থানীয় সহযোগিদের নাম উল্লেখ থাকলেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম উল্লেখ নাই। এই উল্লেখিত বইয়ের লেখক মো: জহুরুল ইসলাম বিশু জীবিত আছেন। ড. আবদুল আলিম নামে পাবনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে কোন গবেষক আছেন কিনা তাহা আমি জানিনা। (চলবে)

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ// রোববার আদেশ


মেহেদী হাসান, ৩/১০/২০১৩
 বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর  ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম  আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কি-না সে সম্পর্কে রোববার আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।

গত ১ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পরপরই  জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন ট্রাইব্যুনালের বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে বলেছিলেন এই বিচারের সাথে জড়িতদেরও বিচার করা হবে জাতীয়তাবাদী শক্তি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে। তার এ বক্তব্যকে আদালত অবমাননা আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দায়ের করল।

আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তে।

অভিযোগ দায়ের করার পর জেয়াদ আল মালুম এর প্রেক্ষাপট এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের এই বিচারের সাথে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, তদন্ত সংস্থা, সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অসংখ্য পরিবার জড়িত। বিচারের এই পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এ বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যায়িত করে এবং বিচারের সাথে সম্পৃক্তদের বিচার করা হবে বক্তব্য দিয়ে সবাইকে হুমকি দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য বিচারের প্রতি অবজ্ঞা, আদালত অবমাননা এবং আতঙ্ক সৃষ্টির শামিল। তার এ বক্তব্য ট্রাইব্যুনালের সমগ্র বিচার প্রকৃয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ন্যায় বিচারকে বাঁধাগ্রস্ত করার শামিল। কাজেই তার এ বক্তব্যের কারনে কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমনানার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহন  করা হবেনা সে মর্মে নোটিশ জারি করা হোক এবং এ বিষয়ে তার যদি কোন ব্যাখ্যা দেয়ার থাকে তাহলে আদালতে হাজির হয়ে সে ব্যাখ্যা দিতে বলা হোক।

খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে ২ অক্টোবরের এমন চারটি পত্রিকার পেপার কাটিং জমা দেয়া হয়েছে আবেদনের সাথে।  জেয়াদ আল মালুম আবেদনের পক্ষে বক্তব্য রাখার পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আগামী রোববার আদেশ দেয়া হবে এ বিষয়ে। এ সময় অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।

প্রহসনের বিচারের সাথে সম্পৃক্তদেরও বিচার করা হবে মর্মে ১ অক্টোবরের  খন্দকার মাহবুব হোসেন  বক্তব্য প্রদানের পর ২ অক্টোবার অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বপ্রথম আপিল বিভাগের নজরে আনেন বিষয়টি। মাওলানা সাঈদীর আপিল আদেন শুনানীর লক্ষ্যে গঠিত প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এর কার্যক্রম সকালে শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসময় যথাযথ স্থানে এ বিষয়টি উত্থাপনের পরামর্শ দেন। 
এরপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে ট্রাইব্যুনাল -১ এর কার্যক্রম শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু মৌখিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাকে বিষয়টি লিখিত আকারে দায়ের করার পরামর্শ দিলে আজ খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা অব্যাহত রয়েছে।

তাং- ০২-১০-২০১৩ইং
পূনরায় জেরাঃ
মিসবাহুর রহমান চৌধুরী সাহেবের দেওয়া সিরাজুল ইসলাম মতলিব সাহেবের কথিত চিঠির ফটোকপি আমি জব্দ করেছি। আমার জব্দকৃত প্রদর্শনী-১ এর নিচ অংশে অনেকখানি ফাকা জায়গা আছে। আমি যে প্রদর্শনী- ১ জব্দ করেছি এই জব্দকৃত চিঠি সম্পর্কে অন্য কোন তথ্য তিনি আমাকে দেন নাই।
আমি যে সমস্ত পত্রিকা ও বই পত্র জব্দ করেছি সেগুলি জব্দ করার স্থানে গিয়ে ঐ পত্রিকা ও বইপত্র পড়ে এই মামলার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পরে জব্দ করেছি। ০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে আমি ১৩.২০ ঘটিকায় গিয়ে ১৭.০০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ২৩-১০-২০১১ইং তারিখে বাংলা একাডেমীতে আমি বেলা ১০.০৫ ঘটিকায় গিয়ে ১৪.৩০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ১৫-০৩-২০১১ইং এবং ২৪-০৩-২০১১ইং তারিখে আমি বাংলা একাডেমীতে যাই নাই। আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান সাহেব সেখানে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন অতিরিক্ত কেস ডাইরী না থাকায় আমি বলতে পারছি না তিনি কখন গিয়েছেন এবং কখন ফেরত এসেছেন। ০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে এসপি, ডিএসবি কুষ্টিয়ায় আমি যাই নাই এবং অতিরিক্ত কেস ডাইরী না থাকায় ঐ দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে আমি কোন তথ্য দিতে পারছি না। ১৫-০৫-২০১১ইং তারিখে বাংলা একাডেমীতে আমি ১১.২০ ঘটিকায় গিয়ে ১৪.৩০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ২৯-০৫-২০১১ইং তারিখে বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা আলতাফুর রহমান সাহেব সেখানে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন অতিরিক্ত কেস ডাইরী না থাকায় আমি বলতে পারছি না তিনি কখন গিয়েছেন এবং কখন ফেরত এসেছেন। ০৫-০৭-২০১১ইং তারিখে জাতীয় জাদুঘরে আমি ১০.৩০ ঘটিকায় গিয়ে ১৪.৩০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ১৫-০৫-২০১২ইং তারিখে বাংলা একাডেমীতে আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর সাহেব গিয়েছিলেন কিন্তু কোন অতিরিক্ত কেস ডাইরী না থাকায় আমি বলতে পারছি না তিনি কখন গিয়েছেন এবং কখন ফেরত এসেছেন। ১৪-০৬-২০১২ইং তারিখে বাংলা একাডেমীতে আমি ১২.৩০ ঘটিকায় গিয়ে ১৪.৩০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ০২-০৪-২০১১ইং তারিখে জাতীয় জাদুঘরে আমি ১১.৩০ ঘটিকায় গিয়ে ১৫.৩০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ২০-০৪-২০১১, ০১-০৬-২০১১ এবং ০৭-০৬-২০১১ইং তারিখে আমি জাতীয় জাদুঘরে কয়টায় পৌছাই এবং কয়টায় ফেরত আসি তাহা আমি বলতে পারছি না। ০২-০৮-২০১১ইং তারিখে জাতীয় জাদুঘরে আমি ১০.২০ ঘটিকায় গিয়ে ১৭.০০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ১০-০৯-২০১১ইং তারিখে জাতীয় জাদুঘরে আমি ১০.২০ ঘটিকায় গিয়ে ১৫.০০ ঘটিকায় ফেরত আসি। ১৭-০৪-২০১১ইং তারিখে বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে আমি কয়টায় পৌছাই এবং কয়টায় ফেরত আসি তাহা আমি বলতে পারছি না। ১০-০৯-২০১১ইং তারিখে ১৭৬টি পত্রিকার কাটিং ফটোকপি করতে আমার আনুমানিক সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লেগেছে এবং ফটোকপি করার পর আমি সেগুলো জব্দ করেছি। ০২-০৮-২০১১ইং তারিখে ২০৫টি পত্রিকার কাটিং ফটোকপি করতে আমার আনুমানিক পাঁচ ঘন্টা সময় লেগেছে এবং ফটোকপি করার পর আমি সেগুলো জব্দ করেছি। ০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে ৩৪টি আইটেম ফটোকপি করতে আমার আনুমানিক চার ঘন্টা সময় লেগেছে এবং ফটোকপি করার পর আমি সেগুলো জব্দ করেছি। ২৩-১০-২০১১ইং তারিখে ২৫৫টি আইটেম ফটোকপি করতে আমার আনুমানিক চার ঘন্টা সময় লেগেছে এবং ফটোকপি করার পর আমি সেগুলো জব্দ করেছি।
তদন্তকালীন সময়ে আমি ডা: এম এ হাসান কর্তৃক লিখিত “পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ১৯১” এর প্রথম প্রকাশ ২০০৭, তারেক আলী কর্তৃক লিখিত “The Duel” প্রথম প্রকাশ ২০০৮, মহিতুল আলম ও আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত “মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা ১৯৭১” প্রথম প্রকাশ ২০১০, অধ্যাপক ডা: এম এ হাসান কর্তৃক লিখিত “যুদ্ধ ও নারী” প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ২০০৮, “শীর্ষ পনের পাকি যুদ্ধাপরাধী” প্রথম প্রকাশ ২০০৮ জব্দ করেছিলাম। (চলবে)

পূনরায় জেরা ২টার পর ঃ
ডা: এম এ হাসান কর্তৃক লিখিত “নিরবতার ওপারে কৃষ্ণ মেঘের দিনগুলি” প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ২০০৬, “যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও বিচারের অন্বেষন” এবং “একাত্তরের নারী নির্যাতন ইতিহাসের কৃষ্ণ অধ্যায়” এই বইগুলো আমি তদন্তকালে জব্দ করেছি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্তৃক লিখিত “সান সেট এট মিড ডে” প্রথম প্রকাশ ১৯৯৮, সাঈদ ওয়ালী রেজা নসর কর্তৃক লিখিত “দি ভ্যানগার্ড অব ইসলামিক রেভুলেশন” (কয়েকটি প্রবন্ধের সমন্বয়) প্রথম প্রবন্ধটি ১৯৯২ সালের শীতকালে প্রকাশিত, মুসা খান জালাজাই কর্তৃক লিখিত “সেকটারিয়ানিজম এন্ড পলিটিকো-রিলিজিয়াস টেরোরিজম ইন পাকিস্তান” প্রথম প্রকাশের সন লেখা নাই, রিভাইসড এডিশন ১৯৯৩ সালে, শাহরিয়ার কবীর কর্তৃক লিখিত “বাংলাদেশ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা” প্রথম প্রকাশ ১৯৯৮, ড. আহমেদ শরীফ গং কর্তৃক সম্পাদিত “একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়” এর চতুর্থ সংস্করন (প্রথম প্রকাশ- ১৯৮৭), হোসেন হাক্কানী কর্তৃক লিখিত “পাকিস্তান বিটুইন মস্ক এন্ড মিলিটারী” প্রথম প্রকাশ ২০০৫, সেলিম মনসুর খালেদ কর্তৃক লিখিত “আলবদর” প্রথম প্রকাশ ২০১০ এর অনুবাদ, জাহানারা ইমাম কর্তৃক লিখিত “একাত্তরের দিনগুলি” দশম সংস্করন প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬ এবং মোঃ জহুরুল ইসলাম বিশু কর্তৃক লিখিত “পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কথা” প্রথম প্রকাশ ২০০৯ বইগুলি জব্দ ও প্রদর্শন করেছি। উল্লেখিত বই সমূহের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ও লেখকদের মধ্যে অধ্যাপক আবু সাঈদ, ডা: এম এ হাসান, আজাদুর রহমান চন্দন, শাহরিয়ার কবীর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে গবেষনা করেছেন, বিভিন্ন পুস্তক ও প্রবন্ধ লিখেছেন। জনাব শাহরিয়ার কবীর দৈনিক বাংলা এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৭১ সালে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে অনুসন্ধানী কোন রিপোর্ট ১৯৮১ সালে প্রকাশ করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। শাহরিয়ার কবীর সাহেবকে এই মামলায় আমি সাক্ষী মান্য করেছি। তিনি উক্ত রিপোর্ট সম্পর্কে আমাকে কোন তথ্য দেন নাই। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের পর থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধ এবং এই অপরাধের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখে অনেক বই প্রকাশিত হলেও এই মমলায় আমি জব্দ করি নাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার, জেনারেল সি আর দত্ত এবং জেনারেল শফিউল্লাহসহ মাঠ পর্যায়ের অনেক সামরিক অফিসার এখনো জীবিত আছেন। উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গসহ মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোন সামরিক অফিসারকে আমি এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করি নাই এবং সাক্ষীও করি নাই। পাবনার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব জীবিত আছেন। পাবনার অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা জীবিত আছেন কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকায় বিচ্ছু বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন কিনা তাহা আমার জানা নাই, তবে তিনি জীবিত আছেন। ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল সাহেব ঢাকা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকা সেক্টর-২ এর অধীনে ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। কর্ণেল আয়েন উদ্দিন ঢাকা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঢাকা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় বিচ্ছু বাহিনী নামে একটি গেরিলা গ্রুপ ছিল শুনেছি তবে এর বেশী কিছু আমি জানিনা। যশোর অঞ্চল যে সেক্টরের অধীনে ছিল তার সাব সেক্টর কমান্ডার এসপি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। চট্টগ্রাম এবং যশোর অঞ্চলের কোন মুক্তিযোদ্ধা  মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বা কোন ব্যক্তিকে আমি এই মামলায় সাক্ষী করি নাই।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে গণমাধ্যমের উপর প্রেস সেন্সরশীপ চালু করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে সংবাদ পরিবেশনের উপর কোন প্রেস সেন্সরশীপ ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে এদেশে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক অবজারভার, দৈনিক মর্নিং নিউজ নামে পত্রিকাসমূহ চালু ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দৈনিক সংগ্রামের প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়, দৈনিক পাকিস্তান দৈনিক বাংলায় রূপান্তরিত হয় এবং বাংলার বাণী নামে নতুন একটি পত্রিকা চালু হয়। আমার জানা নাই যে, ঐ পত্রিকা সমূহে ১৯৭১ সালের বা স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে কর্মরত অনেক সাংবাদিক ও কর্মচারী এখনও জীবিত আছেন কিনা। উল্লেখিত সংবাদপত্রসমূহের অফিস ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে আমি একথা জানার চেষ্টা করি নাই যে, ঐ সময়ে কর্মরত কোন সাংবাদিক বা কর্মচারী এখনও জীবিত আছেন কিনা। জনাব এবিএম মুসা ও জনাব আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৭১ সালের ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকে সাংবাদিকতা করতেন, তারা এখনো জীবিত আছেন এবং তারা এখনো সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আছেন।
১৯৭১ সালে বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাদেশে কর্মরত ছিল তবে অন্য কোন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশে কর্মরত ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা থেকে প্রচারিত কোন সংবাদে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আলবদর প্রধান বলা হয়েছিল মর্মে শুনি নাই। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার এই মর্মে প্রচারিত কোন সংবাদ আমি সংগ্রহ করতে পারি নাই যাতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আলবদর বাহিনীর প্রধান বলা হয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সংবাদ প্রচারের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের আমি চেষ্টা করি নাই। আমি শুনেছি যে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বিষয়ে সর্বপ্রথম বৃটেনের চ্যানেল-৪ এ একটি ডকুমেন্টারী প্রচারিত হয়েছিল। এই ডকুমেন্টারী প্রস্তুতকারী এখন বাংলাদেশে বসবাস করেন। বৃটেনের চ্যানেল ৪ এ প্রচারিত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টারীতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আলবদর বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন মর্মে কোন তথ্য আছে কিনা তাহা আমি উক্ত ডকুমেন্টারী না দেখার কারণে বলতে পারছি না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং অপরাধের সহিত জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিদেশী সাংবাদিক বাংলাদেশে এসিছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টীম এর জবানবন্দী আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম তদন্তকালে ঢাকায় লিপিবদ্ধ করেছেন। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য কোন নির্দেশনা আমি প্রাপ্ত হইনি।
গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট আমি তদন্তকালে সংগ্রহ করেছি। গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট প্রণয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট জনাব শাহরিয়ার কবিরসহ অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। শাহরিয়ার কবীর ছাড়া গণতদন্ত কমিশনের কাউকে আমি এই মামলায় সাক্ষী মান্য করি নাই। জনাব শাহরিয়ার কবীর সাহেবকে অত্র মামলায় সাক্ষী হিসেবে হাজির করার জন্য কোন নির্দেশনা আমি পাই নাই।
প্রদর্শনী-২,  জব্দ তালিকার তারিখ ১৫/০৫/২০১১ ইং এর ক্রমিক-১ এর বক্তব্যটি হাতে লিখা এবং বাকীগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করা। প্রদর্শনী-২/১ দৈনিক সংগ্রাম ১৩/০৫/১৯৭১ তারিখের সংখ্যার সংশ্লিষ্ট পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয়। ধূমকেতু ছদ্মনামে উপ সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত। এই লেখার মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বক্তব্যের কোন উদ্ধৃতি নাই। প্রদর্শনী-২/২ দৈনিক সংগ্রামের ২৩/৫/১৯৭১ইং তারিখের সম্পাদকীয়, প্রদর্শনী-২/৩ দৈনিক সংগ্রামের ২৮/৫/১৯৭১ ইং তারিখের সম্পাদকীয়, প্রদর্শনী-২/৪ দৈনিক সংগ্রামের ৩/৮/১৯৭১ তারিখের সম্পাদকীয় পত্রিকার কোনটিতেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম নাই। (চলবে)


বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৩

রায় কে লিখেছে জানতে চায় জাতি

মেহেদী হাসান, ২/১০/২০১৩
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শনের এক সভায় আইনজীবী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় কে লিখেছে তা জাতি জানতে চায়। তারা বলেন, রায় আগেই প্রকাশিত হওয়ায় এ নিয়ে জনমনে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিচার ব্যবস্থায় অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরো বলেন, ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করবো রায় কে লিখেছে তা আপনারা বলেন।  যদি আপনারা সেটা না বলেন, তাহলে এই দোটানার জাজমেন্টের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সমগ্র বিশ্বে যেমন প্রশ্ন দেখা দেবে, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও প্রশ্ন দেখা দেবে।

আজ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক বিশেষ সভায় আইনজীবীরা এসব কথা বলেন।

গত মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয়  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরমের সংবাদ সম্মেলনে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এই বিচারটি প্রহসনের বিচার। এই বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার। ইনশাআল্লাহ যদি জাতীয়তাবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসে, তাহলে সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নির্দোষ ব্যক্তিদের যে বিচার করা হয়েছে, কাল্পনিক গল্প দিয়ে যে মামলা তৈরি করা হয়েছে, অবশ্যই সেটা চলে যাবে।  যারা এই প্রহসনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো, ইনশাআল্লাহ বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে।’

তার এ কথার রেশ ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয় যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে জড়িত বিচারপতিরদেরও বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আজ সকালে  অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন  এর বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যথা সুপ্রীম কোর্টের  আপিল বিভাগে নালিশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি  খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাড়ে নয়টার দিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানী শুরুর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার পর  বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ বিচারের সাথে যারা জড়িত তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। মাই লর্ড এ বিচারের সাথে আপনারাও জড়িত। ফলে  এর এ বক্তব্যের মাধ্যমে আপনাদেরও বোঝানো হয়েছে। তিনি এই কোর্টের একজন অফিসার হয়ে এ ধরনের কথা বলতে পারেন কি-না।

তার এ কথার পর প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সিরিয়াস কথা। তো আমরা কি করতে পারি?
এসময় অপর বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমরা কিছু দেখিনাই, শুনিনাই। আমাদের সামনে ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সামনে আছে শুধু পেপার বুক। তা দেখে আমরা বিচার করি। আপনারা প্রপার জায়গায় যান।
এরপর আর কিছু বলেননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এরপর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু খন্দকার মাহবুব হোসেন এর বিষয়ে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। ট্রাইব্যুনাল তাকে বলেন লিখিত আবেদন নিয়ে আসার জন্য।

এর জের ধরে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর  নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষনিকভাবে বার ভবনেরদণি হলে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে। 


বারের সিনিয়র সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পরপর দুইবার নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের একটি বক্তব্যের ব্যাপারে প্রসিকিউশন টিম আজ ট্রাইব্যুনালে উনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছে। খন্দকার মাহবুব হোসেনকে কলাবোরেটর অ্যাক্টসে বাংলাদেশে যে বিচার হচ্ছিলো সেই বিচারের চিফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অত্যন্ত বিজ্ঞ একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি আদালত অবমাননার বিষয়ে কি বলেছেন, তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে।’

তিনি আরো বলেন, ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে- আইন প্রতিমন্ত্রী বিচার চলাকালীন তাদের ফাঁসি দাবি করেছেন। বহুবার দাবি করেছেন। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি, এমন কথা আইন প্রতিমন্ত্রী দাবি করতে পারেননি। তিনি বলেছেন- বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এর অর্থ আইন প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ কাজটা করা হয়েছে। বিচারকালীন তারা বলছেন, ফাঁসি চাই। বিচার সুষ্টু হোক তারা তা চায়নি, ন্যায়বিচার তারা চায়নি। যারা বিচার চলাকালীন ফাঁসি চেয়েছেন তারা তাদের এই দাবির মাধ্যমে বিচারপতিদের প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এ সমস্ত আচরণ যারা করেছেন, আইন অনুসারে তারা আদালত অবমাননা করেছেন। কিন্তু আজ একটি সঠিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন এমন আচরণ করা হলো জনগণ তা জানতে চায়। পত্রিকায় বলা হয়েছে রায়টা মন্ত্রণালয় থেকে টাইপ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। সরকারও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। আমার প্রশ্ন- আসলে রায়টা কে লেখছে। ওই আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারের ভেতরে রায়টা গেলো কি করে, ঢুকলো কি করে? জাতি জানতে চায় আপনাদের কাছ থেকে, আসলে এ রায়টা কে লেখছে। ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করবো- যদি আপনারা সেটা না বলেন, তাহলে এই দোটানার জাজমেন্টের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সমগ্র বিশ্বে যেমন প্রশ্ন দেখা দেবে তেমনি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও প্রশ্ন দেখা দেবে।

সিনিয়রা আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন যে কথা বলেছেন তা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে দেয়া অধিকারের ভিত্তিতে বলেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা এই কাজটা করছেন, তাদেরকে আমরা বলবো যে- আপনারা সংবিধান পড়–ন এবং আপনারা বার এবং বেঞ্চের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করবেন না। আমরা চাই- বার এবং বেঞ্চের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকুক। ইতিহাসে যখনই কোনো সঙ্কট দেখা দিয়েছে তখই সুপ্রিম কোর্ট বার সে সঙ্কট সমাধানে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা এখন সেই দায়িত্বই পালন করছি। যারা তাদের অবস্থানকে ব্যবহার করে বারের অত্যন্ত সিনিয়র আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করারা পাঁয়তারা করছেন, এটা কারো জন্যই কোনো কল্যাণ বহণ করে আনবে না।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনের মন্তব্যকে নিয়ে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছেন, তারা বিচার বিভাগের সুহৃদ হতে পারেন না। তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। যারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন তারা যেন এটা থেকে বিরত থাকেন।

বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পরপর দুইবার নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, বিচারকার্য স্বচ্ছ করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন- রায় ঘোষণার আগে রায় কিভাবে বাজারে চলে আসলো, ইন্টারনেটে চলে আসলো। এই প্রশ্ন আজ সারা জাতির। কিভাবে এই রায় আগে প্রচারিত হলো। পত্রিকায় এসেছে- বেলজিয়াম থেকে নাকি ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়েছে এ রায়। মে মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে কিভাবে এসেছে? তাই বলতে চাই- খন্দকার মাহবুব হোসেনের যে বক্তব্য সে বক্তব্য সকল আইনজীবীর।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আইনজীবী হিসাবে এবং আইনজীবী নেতা হিসাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বক্তব্য রেখেছেন। এই মন্তব্যকে তারা এখন রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে।’ অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কিভাবে সরকারের মন্ত্রীরা বলেন- ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে তাদের ফাঁসি হবে? আইন প্রতিমন্ত্রী কিভাবে বললো যে- ওদের ফাঁসি হবে? প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বলে- ওদের রায় কার্যকর হবে, ফাঁসি হবে। গণজাগরণ মঞ্চের ডা. ইমরান এইচ সরকার কেন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আসলো?

তিনি আরো বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সম্পূর্ণ কলুষিত করেছে বিচার প্রক্রিয়ায়কে। শুধু তাই নয়, আগের দিন গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগ থেকে বললো- সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি চাই। আগে তারা বললো- কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, গোলাম আযমের ফাঁসি চাই, পরের দিন ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসি দেয়। মাহবুব উদ্দিন বলেন, বিচারপতি নাসিম (নিজামুল হক নাসিম) স্কাইপিতে কথা বলেছেন রায়ের আগে। তারপরও তিনি কিভাবে বিচারকের আসনে বসেন- এ প্রশ্ন রাখেন তিনি প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি। সমস্ত বিচার ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম ইউ আহমেদকে হত্যার সাথে জড়িত। তার কারণেই এম ইউ আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। এ অসহিষ্ণু অবস্থা সুপ্রিম কোর্টে বা বাংলাদেশের আইননাঙ্গনে চলবে না। যদি ট্রাইব্যুনালও কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত কোনো দরখাস্ত গ্রহণ করেন তাহলে বার কাউন্সিল ও সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য হবো- সকল আইনজীবী যেন এই ট্রাইব্যুনাল বর্জন করে।

আইনজীবীদের বক্তব্যের পর সর্বসম্মতিক্রমে সেখানে একটি রেজুলেশন পাস হয়। রেজুলেশনে বলা হয়, ইন্টারনেটে আগেই রায় প্রকাশ হওয়ায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনমনে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে ১৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনে প্রধান বিচারপতি বরাবর দাবি জানানো হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বারের সহসভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান ও মো. শাহজাদা মিয়া, সহসম্পাদক এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা ও মো. সাইফুর রহমান, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

রায় ফাঁসের কথা স্বীকার ট্রাইব্যুনালের /// থানায় জিডি দায়ের


মেহেদী হাসান, ২/১০/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনার আগেই রায় ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে ফাঁস হওয়া রায়ের কপিটি নিতান্তই একটি খসড়া রায়ের কপি বলে দাবি করা হয়েছে। রায় ফাঁসের ঘটনা স্বীকার করে  আজ  শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর পক্ষে ট্রাইব্যুনালের মুখপাত্র রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ আজ আনষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার বলেন, কথিত ফাঁস হওয়া রায়ের কপি নিতান্তই একটি খসড়া যা রায় ঘোষণার অনেক আগেই কোন না কোনভাবে ‘লিকড’ বা ফাঁস হয়েছে এবং একটি দুষ্টচক্রের হস্তগত হয়েছে। খসড়া এ রায় ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা কোন না কোনভাবে ফাঁস হয়েছে। এই বিষয়টি উদঘাটনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশক্রমে থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেখা যায় যে, কথিত ‘লিকড’ হওয়া রায়ের খসড়ার সাথে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোন রায় নয় যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। ঘোসিত রায় এবং ফাঁস হওয়া রায়ের মধ্যে পার্থক্যের একটি দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘোষিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর উল্লেখ আছে কিন্তু ফাঁস হওয়া কথিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর নেই। এটি নিতান্তই একটি খসড়া কপি।

আজ  দপুরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনালের পক্ষে  লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-১-এর মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের স্পোকসম্যান হিসেবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী একটি তথ্য সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু কথা বলা প্রয়োজন। গত ০১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে ট্রাইব্যুনাল উন্মুক্ত আদালতে জানিয়েছেন যে, রায় প্রস্তুত এবং পর দিন অর্থাৎ ০১ অক্টোবর রায় ঘোষিত হবে।

আইন ও বিধি অনুসারে রায় ঘোষণার দিনই সাথে সাথে রায়ের সার্টিফাইড কপি পক্ষগণকে দিতে হয় যা অন্য কোন আইনে দেখা যায় না। তাই সঙ্গত কারণে রায় চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত না করে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ ও রায় ঘোষণা করা হয় না। এ কারণে সাধারণত রায় ঘোষণার ২/১ দিন আগে রায় চূড়ান্ত করা হয়ে থাকে। কেবল সাজা সংশ্লিষ্ট অংশটি রায়ের দিন মাননীয় বিচারকগণ একমত হয়ে চূড়ান্ত করে থাকেন।
রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, মঙ্গলবার  যথারীতি রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী এবং অভিযুক্তের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের মিডিয়াকে দেয়া বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, রায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পূর্বে তা ইন্টারনেটে কিছু ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে। তারা এটিও দাবি করেছেন যে, কথিত ‘রায়’ আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, প্রসিকিউটর এবং অভিযুক্ত পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীগণ কোর্টের অফিসার। গতকাল (মঙ্গলবার) রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল আসন গ্রহণের পর অভিযুক্ত পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর দায়িত্ব ছিল কোন কোন ওয়েবসাইটে কথিত খসড়া রায় আগের দিন রাতে আপলোডেড পাওয়া গেছে সেই বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা। কিন্তু তিনি তা না করে আনুষ্ঠানিকভাবে রায় ঘোষণার পর কথিত খসড়ার হার্ড কপি দেখিয়ে মিডিয়ার সামনে এটি দাবি করেন যে, রায় আগেই ‘লিকড’ হয়েছে এবং এটি আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে রয়েছে এবং এটি একটি ‘ডিকটেটেড রায়’। অভিযুক্তের বিজ্ঞ আইনজীবীর এই উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য অসদাচরণ বটে। নিঃসন্দেহে রায় ঘোষণার পর এমন দাবি করা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্তের অংশ।

লিখিত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার বলেন, দেখা যায় যে, কথিত ‘লিকড’ রায়ের খসড়ার সাথে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোন রায় নয় যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কথিত ‘লিকড’ খসড়া রায়ে কোন অনুচ্ছেদ নম্বর নেই এবং এটি নিতান্তই একটি খসড়া যা রায় ঘোষণার অনেক আগেই কোনভাবে ‘লিকড’ হয়েছে এবং খসড়া পর্যায়ে লিকড হওয়া খসড়াটি রায় ঘোষণার বেশ ক’দিন পূর্বেই দুষ্ট চক্রের হস্তগত হয়েছে মর্মে অনুমিত। তাই যদি হয় তবে তা পূর্বে প্রকাশ না করে ঠিক আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার আগের রাতে কথিত ওয়েবসাইটে আপলোডেড পাওয়া গেল কেন এবং কিভাবে? এ থেকে এটি স্পষ্ট অনুমিত যে, একটি সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র যারা ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারা এবং যারা এই অপকর্মের সুবিধাভোগী তারাই এই অপকর্মটি করেছে।

তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে এটি অনুমান করা হচ্ছে যে, কথিত খসড়া রায় ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা কোন না কোনভাবে ‘লিকড’ হয়েছে। এই বিষয়টি উদঘাটনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার থানায় জিডি করেছেন। আমরা আশা করি, সত্য বেরিয়ে আসবে এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা যাবে। ট্রাইব্যুনালে কর্মরত কেউ যদি এই অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত পক্ষে তার বিজ্ঞ আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দেননি এবং এতে তার অধিকার ুণœ হয়েছে। এটি আদৌ সঠিক নয়। গত ২৭/৬/২০১৩ তারিখের ১৮৯ নং আদেশে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছেন যে,



Ô Proposed witness No. 5 Mr. Justice Shamim Hasnain is the sitting Judge of the Supreme Court of Bangladesh, and as such without obtaining his consent, no summons will be issued upon him.


 ’ কিন্তু দেখা যায় যে, পরবর্তীতে মাননীয় বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর নিকট থেকে এ বিষয়ে সম্মতি সংশ্লিষ্ট কোন কিছু ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়নি।

যে বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা হলো সে বিষয়ে পরবর্তী যে কোন অগ্রগতি যথারীতি আপনাদের অবহিত করা হবে। পরিশেষে এটি বলব যে, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সহযোগিতা আমরা সব সময় পেয়েছি। প্রত্যাশা আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

রায় ফাঁসের ঘটনা বিষয়ে জিডি :
ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় দায়ের করা জিডির কপি সংবাদ সম্মেলনে বিলি করা হয় সাংবাদিকদের মাঝে। জিডির বিবরনে লেখা হয়েছে-
আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী এই মর্মে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, গত ০১/১০/২০১৩ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন আইসিটি বিডি কেস নং -২/২০১১ চীফ প্রসিকিউটর বনাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী-এর রায় প্রচারের জন্য দিন ধার্য ছিল। রায় ঘোষণার পর পরই আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যগণ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে জানান যে, উক্ত মামলার রায়ের কপি তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পূর্বেই প্রাপ্ত হয়েছেন। আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে আদালত হতে রায়ের কপি সরবরাহ করার পূর্বেই একটি ডকুমেন্ট ক্যামেরার সামনে প্রদর্শন করে বলেন যে, এই সেই ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত রায়ের কপি যা রায় ঘোষণার পূর্বেই তারা প্রাপ্ত হয়েছেন এবং সেটি নিয়েই তারা আদালত কক্ষে প্রবেশ করেছেন। তিনি আরো বলেন যে, আদালত হতে প্রচারিত রায় এবং ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত রায়ের মধ্যে মিল আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হতে প্রচারিত সমস্ত রায় ট্রাইব্যুনালেই প্রস্তুত করা হয়। রায় ঘোষণার পূর্বে রায়ের কোন অংশের কপি অন্য কোনভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরেও কথিত খসড়া রায়ের অংশ কিভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত হল বা কিভাবে ট্রাইব্যুনাল হতে খসড়া রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস (leaked) হল তা উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রতি হুমকি স্বরূপ। উল্লেখ্য যে,
www.tribunalleaks.be ওয়েবসাইটে কথিত খসড়া রায়ের অংশ আপলোডেড দেখা যায়।
এমতাবস্থায় বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হল।
এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ
রেজিস্ট্রার
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
পুরাতন হাইকোর্ট ভবনম ঢাকা।
জিডি নং ৮৫ তাং ০২/১০/ডি
মো : জাফর আলী
এস আই। শাহবাগ থানা।

রায় ফাঁস হয়নি দাবি এবং ট্রাইব্যুনালের স্বীকারোক্তি

ট্রাইব্যুনালের পক্ষে রেজিস্ট্রার গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে  স্বীকার করেছেন রায়ের খসড়া কপি কোন না কোনভাবে ফাঁস হয়েছে। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন খসড়া কপির অংশ বিশেষ ফাঁস হয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয় রায় ফাঁস হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায়  ঘোষনার আগেই রায় ফাঁস হওয়া বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি মিথ্যে কথা। আমি এটর্নি জেনারেল হয়ে জানতে পারলামনা ; ওনারা পেলেন কিভাবে। এটি একটি মনগড়া কথা।

আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম,  আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিত  আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও মঙ্গলবার  দাবি করেন, রায় ফাঁস হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। মন্ত্রণালয় থেকে রায় ফাঁস হওয়ার কোন সুযোগ নেই।  তার পরও মন্ত্রণালয়  এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন  কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছে।

১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়। কিন্তু সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে ইন্টারনেটে রায় ফাঁস হওয়ার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে । ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার পরপরই  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম এবং স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরীর  পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ রায় লেখা হয়েছে। রায় আগেই ফাঁস হয়ে গেছে এবং তারা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সে রায়ের কপি নিয়ে এসেছেন। সাংবাদিকদের সে কপি দেখিয়ে তারা দাবি করেন, ট্রাইব্যুনালে একটু আগে যে রায় ঘোষনা করা হল তার সাথে হুবহু মিল রয়েছে ফাঁস হওয়া রায়ের কপির সাথে।







মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৩

রায় ঘোষনার আগেই ফাঁসের অভিযোগ

মেহেদী হাসান, ১/১০/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার পর তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম এবং স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে আজ যে রায় ঘোষনা করা হয়েছে তা আগেই ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে গেছে। রায় ঘোষনার আগেই  সোমবার মধ্য রাত থেকে ইন্টারনেট এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে রায়ের কপি প্রকাশিত হয়ে যায়। তারা অভিযোগ করেন যে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে লেখা রায় পড়ে শোনানো হয়েছে ট্রাইব্যুনালে । ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষনার পর দেখা যায় আগেই ফাঁস হওয়া রায়ের কপির সাথে  হুবহু মিল রয়েছে।

তারা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডকৃত ফাঁস হওয়া রায়ের একটি কপি সাংবাদিকদের দেখান এসময়।

তারা জানান, সোমবার মধ্যরাতের পর বেলজিয়ামের িি.িঃৎরনঁহধষষবধশং.নব, নামক একটি ওয়েবসাইট, বিদেশী আরেকটি ওয়েবসাইট িি.িলঁংঃরপবপড়হপবৎহ.পড়স  এবং নফঃড়ফধু.হবঃ  এর ব্লগে  রায় প্রকাশিত হয়। এরপর এর সূত্র ধরে ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগ এবং ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন গনমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হতে থাকে। ফলে ইন্টারনেট, মোবাইল এবং অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তির বরাতে অতি দ্রুত এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা উপলক্ষে সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন ভিড় করতে থাকেন। এসময় হাইকোর্ট এবং ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে রায় ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। যারা এ বিষয়ে অনবহিত ছিল তাদের কাছেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।

রায় ঘোষনার পরপরই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী, তার ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরী এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম একই সুরে অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনালে একটু আগে যে রায় পড়ে শোনানো হল সেটি আসলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে লিখে পাঠানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা আইন মন্ত্রণালয়ের লেখা রায় পড়ে শুনিয়েছেন মাত্র। এটি তাদের রায় নয়।  এ রায় আগেই ফাঁস হয়ে গেছে। ফাঁস হওয়া রায় বিষয়ক প্রতিবেদনে আরো যে চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে তা হল বিচার শেষ হবার অনেক আ্েগই চলতি বছর ২৩ মে আইন   মন্ত্রনালয়ে এ রায় লেখা শুরু হয় যখন  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল।  আমরা ইন্টারনেট এবং অনলাইন গনমাধ্যম থেকে রায়ের কপি ডাউন লোড করে  নিয়ে এসেছি। এ কপির সাথে ট্রাইব্যুনালের পাঠ করা রায়ের  হুবহু  মিল রয়েছে দেখা যাচ্ছে। তারা দাবি করেন যেসব অনলাইনে রায়টি ঘোষনার আগেই ফাঁস হয়েছে তাতে আইনমন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে এ রায় লেখা মর্মে প্রমান রয়েছে।

রায় ঘোষনার পর ফাহাত কাদের চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রায় ঘোষনার সময় ট্রাইব্যুনালে বলেছেন এটা আইনমন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা রায়। আদালতে রায় ঘোষণার সময় আমি আইনমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রায়ের কপি মিলিয়ে দেখেছি। আমি দেখেছি বিচারপতিরা যে রায় পাঠ করেছেন তা প্রকাশিত কপির সাথে হুবহু মিলে গেছে। রায়ের ভারডিক্ট অংশ ছাড়া বাকী অংশটুকু আইনমন্ত্রণালয়ের লেখা কপির সাথে হুবহু মিলে গেছে। আমি বিস্মিত আইনমন্ত্রণালয়ের লেখা রায় কিভাবে বিচারপতিরা পড়ে শোনাতে পারলেন। তাদের এ রায় ঘোষনা থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল।

তিনি এসময় ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা ফাঁস হওয়া রায়ের  একটি কপি সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন আপনারা দেখেন এই রায় আমন্ত্রণালয় থেকে লেখা হয়েছে। গতকাল রাতে বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে এ রায়।
ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেন, আমরা দেশবাসী ও দুনিয়াকে দেখাতে চাই এখানে জুডিশিয়াল কিলিং হচ্ছে। এখানে কেউ বিচার পাবে না। আমরা বুঝতে পারছি না কোথায় যাব, কোথায় বিচার পাব। আমরা আগে থেকেই জানতাম এখানে বিচার পাব না।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেন, এই রায় আইনমন্ত্রণালয় থেকে লেখা হয়েছে।  ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা তা আজ পাঠ করেছেন মাত্র। রায়টি গতকাল রাত থেকে ইন্টারনে এবং অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির এই রায় পাঠ না করে পদত্যাগ  করা উচিৎ ছিল।

সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, বাবা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন রায় আইনমন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়েছে। ফাঁস হওয়া রায়ের কপিতে তার প্রমান রয়েছে।

আজ  সকালে হাইকোর্ট অঙ্গনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস হওয়া রায় বিষয়ে একটি বুলেটিন প্রচারিত হয় আসামী পক্ষ থেকে। বুলেটিনের এ প্রতিবেদনে  ফাঁস হওয়া রায়ের সারমর্ম এবং কোথা থেকে এটি ফাঁস হয়েছে তার সূত্র তুলে ধরা হয় । বুলেটিনের প্রতিবেদন এবং অন্যান্য গনমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যে রায় ঘোষনা করা হয়েছে তার  অনুলিপি আইন  মন্ত্রনালয়েল আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হকের অফিসের কম্পিউটারে রতি ছিল। আইন মন্ত্রণালয়ের ষষ্ঠ তলার একটি কম্পিউটারে ‘ডি ড্রাইভে’ এ রায়ের কপি পাওয়া যায়। কম্পিউটারের প্রত্যেকটি ফাইল বা ডকুমেন্টের উৎস নির্ণয়ক তথ্য ওই ফাইল বা ডকুমেন্টে সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্য ওই ফাইল বা ডকুমেন্টের প্রপারটিস অপশনে গেলে পাওয়া যায়। এই রায়ের কপিটি যে ফাইলে পাওয়া গেছে তার প্রাপারটিস অপশনে গিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাহলো- ‘ডি ড্রাইভ’র ‘আলম’ নামে ফোল্ডারের সাব ফোল্ডার ‘ডিফারেন্ট কোর্টস অ্যান্ড পোস্ট ক্রিয়েশন’ এর মধ্যে আরেকটি সাব ফোল্ডার ‘ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল’। এই ‘ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল’ এর মধ্যে আরেকটি ফোল্ডার ‘চিফ প্রসিকিউটর-ওয়ার ট্রাইব্যুনাল’ এর মধ্যে রাখা রায়ের খসড়া কপিটির নাম ছিলো ‘সাকা ফাইনাল-১’। রায় লেখা চূড়ান্ত করার পর খসড়া কপিটির নাম ‘সাকা-১’ পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আইসিটি বিডি কেস নং ০২ অব ২০১১ (ডেলিভারি অব জাজমেন্ট)(ফাইনাল)’।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ছে আলম নামের যে ব্যক্তির কম্পিউটারে ফাইলটি পাওয়া গেছে সেই আলম হলেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব  আবু সালেহ শেখ মো : জহিরুল হক এর কম্পিউটার অপারেটর।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কম্পিউটারের তথ্যে  দেখা যায় আইন মন্ত্রণালয়ে উক্ত ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে চলতি বছর ২৩ মে ১২টা ১ মিনিটের সময় যখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিলো। ফাইলের সাইজ ১৬৭ কেবি। ফাইলটি এডিট করা হয়েছে ২৫৮৭ মিনিট পর্যন্ত। 
এ তথ্য থেকে আসামী পক্ষ দাবি করেছে বিচার শেষ হওয়ার আগেই ২৩ মে থেকে রায় লেখা শুরু হয়েছিল। গত ১৪ জুলাই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়।

রায় প্রকাশের আগেই বিভিন্ন অনলাইন এবং অন্যান্য গনমাধ্যমে ফাঁস হওয়া রায় নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে  ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী মোট ২৩টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সেখান থেকে মোট ১৭টি অভিযোগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হাজির করে। যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করেছে, তাই এ ১৭টি অভিযোগের বিষয়ে রায় লেখা হয়েছে মর্মে তথ্য দেখা যায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া রায়ের কপিতে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া রায়ে দেখা যায়, ১৭টি অভিযোগের মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেনি সেগুলো থেকেও তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আজ  ট্রাইব্যুনাল কতৃক প্রকাশিত রায়েও হুবহু একই ফলাফল দেখা যায় বলে আসামীর পরিবার এবং আইনজীবীরা দাবি করেছেন।





সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড

মেহেদী হাসান, ১/১০/২০১৩
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টরিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুাল -১  আজ  তার বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষনা করে।

চারটি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরকে  মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনটি অভিযোগের  প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরো দুটি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে জেল দেয়া হয়েছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মোট ২৩ টি অভিযোগে  চার্জ গঠন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগের মধ্য থেকে ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করে । ১৭টি অভিযোগ থেকে  তাকে মোট ৯টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকী আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া  হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ বাকী যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমান হাজির করেনি সে ছয়টি অভিযোগ থেকেও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকে মোট  ১৪টি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে।  বিস্তারিত আসছে।


জনাকীর্ন ট্রাইব্যুনাল কক্ষে আজ  আলোচিত এবং ঘটনাবহুল এ মামলার রায় প্রদান করা হয়। রায় ঘোষনা উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে কোর্ট প্রাঙ্গনে। এছাড়া  রায় ঘোষনার আগেই সুপ্রীম কোর্ট এবং ট্রাইব্যূনালে উপস্থিত সাংবাদিক এবং অন্যান্য লোকজনের মুখে  ছড়িয়ে পড়ে রায় ফাঁস হওয়ার বিষয়টি। সব মিলিয়ে  আলোচিত এ রায়কে কেন্দ্র করে আজ  একটি ভিন্ন মাত্রা বিরাজ করে কোর্ট প্রাঙ্গনে। সকাল ১০টা ৪২ মিনিটের সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে হাজির করা হয়। এরপরপরই ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি এজলাশে প্রবেশ করেন এবং রায় পড়ে শোনাতে শুরু করেন। ট্রাইব্যুনাল-১  চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক পালাক্রমে রায় পড়ে শোনান। মূল রায়টি ১৭২ পৃষ্ঠার। সেখান থেকে সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনানো হয়।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৪ অভিযোগ : 

যে চারটি অভিযোগে মুত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সেগুলো হল ৩, ৫, ৬ এবং ৮ নং অভিযোগ।
অভিযোগ-৩  :  রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগে বলা হয় ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে রাউজানের গহিরায় অবস্থিত কুন্ডেশ্বরী কমপ্লেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে।  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেও  তাকে গুলি করে । 

অভিযোগ-৫ :  এ অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয় ১৯৭১ সালে ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারীদের নিয়ে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে  হামলা চালিয়ে  তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। 
অভিযোগ-৬  : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর  রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। এসময় ৫০ থেকে ৫৫ জন হিন্দুকে  ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৮  :  ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ তার পুত্র শেখ আলমগীরসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড়ে সকাল অনুমান ১১টার দিকে পৌঁছামাত্র আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যরা তাদের প্রাাইভেট গাড়িটি অবরোধ করে শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে আর তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

২০ বছর জেলদন্ডের ৩ অভিযোগ :
২, ৪ এবং ৭ নং অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
অভিযোগ ২ :   ১৯৭১ সালের  ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান  সেনাবাহিনীর একদল সদস্য রাউজানের গহিরা  গ্রামের  হিন্দু  পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। এসময়  পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, মতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা লাল শর্মা  তিন চারদিন পর মারা যায়।

অভিযোগ ৪ : এ অভিযোগে বলা হয় ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগী এবং  পাকিস্তানি  সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমলপাড়ায় অভিযান চালান। এসময় ৩২ জনকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৭ : ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল  সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা সদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে  প্রবেশ করে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয।

পাঁচ বছর কারাদান্ডের ২  অভিযোগ :
১৭ এবং ১৮ নং অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৭ নং অভিযোগে বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে বন্দী করে রাখা হয়। ১৮ নং অভিযোগে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামের  সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুড়সহিলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার গালে চড় মারেন।

আলোচিত ঘটনাবহুল একটি মামলা :
ট্রাইব্যুনালে যেসব মামলার রায় হয়েছে এবং আরো যেসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত মামলা ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলা। তবে আজ  রায় প্রকাশের আগেই রায় ফাঁস হয়ে যাবার অভিযোগের ঘটনার মধ্য দিয়ে এ মামলায় আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ হল। রায় ঘোষনা উপলক্ষে সকালে আদালতে আসেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা। তারা ফাঁস হওয়া রায়ের একটি কবি হাতে করে আদালতে আসেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী হল বিএনপির প্রথম কোন নেতা যার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় প্রদান করা হল। ২০১১ সালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিচারের উদ্যোগ গ্রহন উপলক্ষে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর থেকে বিচার চলাকালে নানা ধরনের মন্তব্য করে বিভিন্ন সময় সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন জনপ্রিয় এই রাজনীতিক। আজও তিনি রায় ঘোষনার সময় দাড়িয়ে বলেছেন এ রায় পড়ে লাভ কি। এসবতো আগেই ইন্টারনেটে অনলাইনে চলে এসেছে।

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজে সাক্ষীকে জেরা করেছেন মাঝে মধ্যে। তার পক্ষে তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ পরিচিত এবং জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে সাক্ষী মানার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে।  বিচারের শুরুতে তিনি তার পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ না করে নিজেই নিজের মামলায় লড়বেন বলে ঘোষনা দেন। এরপর তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার পর তিনি নিজে আবার আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। বিচার চলাকালে এক পর্যায়ে আবার নিজের আইনজীবী প্রত্যাহর করে নেন এবং আবারো তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগের ঘটনা ঘটে।

পাকিস্তান অবস্থানের দাবি নাকচ :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালিয়া থানায় বিভিন্ন হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে হত্যা নির্যাতন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে হত্যা, নির্মূল এবং দেশান্তরকরনের অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।  আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দাবি ছিল ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তিনি পাকিস্তানে চলে যান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বদলী ছাত্র হিসেবে তিনি  পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং যুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তান অবস্থান করেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষে ১৯৭১ সালের অক্টোবার মাসে  লন্ডনে চলে যান এবং লিঙ্কন ইনে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম দেশে আসেন বলে দাবি করে তিনি।

১৯৭১ সালে তার পাকিস্তান অবস্থান বিষয়ে বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের জীবিত অনেক ভিআইপি ব্যক্তিবর্গের নাম  উল্লেখ করেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার জবানবন্দীতে।  বাংলাদেশে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান বিচারপতি শামীম হাসনাইনের নাম। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন শামীম হাসনাইন তার সাথে তখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এবং তিনি তার বন্ধু ছিলেন। এছাড়া  বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও সেসময় পাকিস্তান অবস্থান করছিলেন এবং তার সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত হত দাবি করে  তাকেও তিনি সাক্ষী মেনেছিলেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানে অবস্থান বিষয়ে পাকিস্তানে বর্তমানে জীবিত যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং ২০০৮ সালে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সামরু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইসকাহ খান খাকওয়ানী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্দিক খান কানজু প্রমুখ। এরা সকলেই তার কাসমেট ছিলেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে বলেন, আমি যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ছিলাম সে মর্মে তারাসহ আরো অনেকে এফিডেভিড পাঠিয়েছেন আমাকে। তারা আমার পক্ষে এসে সাক্ষ্য দিতে চান কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের এদেশে আসার বিষয়ে ভিসা দিচ্চেনা।

তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার পাকিস্তান অবস্থান বিষয়ে দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছে রায়ে।  এ দাবি নাকচের পক্ষে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় ২৯/৯/১৯৭১ সালে একটি খবর প্রকাশিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষ সে ডকুমেন্ট আদালতে দাখিল করেছে। ওই খবরের শিরোনাম ছিল বোমার আঘাতে ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে আহত। খবরে বলা হয়েছে তাদের গাড়ির ওপর বোমা হামলা হয় এবং এতে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আহত হয়। তাদের চালক নিহত হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ ঘটনার পর যে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন সে মর্মে তখনকার একজন ডাক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। কাজেই রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য প্রমান হাজির করেছে তাতে এটি প্রমানিত যে তিনি তখন দেশে ছিলেন। তিনি দেশে ছিলেনননা আসামী পক্ষ এ দাবি প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই এ  আবেদন নাকচ  করা হল।

রায়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি উষ্মা : রায়ে বলা হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ পর্যন্ত ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, আইন প্রনেতা। কিন্তু তিনি বিচার চলাকালে এ কোর্টে যেসব আচরন করেছেন মাঝে মাঝে তা দু:খজনক। আমরা তার অনেক বিষয় খেয়াল করেছি। তিনি কোর্টের ডেকোরাম মানতে চাননি। মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে চিৎকার করেছেন। তাকে সতর্কও করা হয়েছে এজন্য বিভিন্ন সময়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের তিনি চেয়ারম্যান সাহেব এবং মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করেছেন। বিচারপতিরা আদালত  কক্ষ ত্যাগ করার সময় তিনি বসে থাকতেন বলে লক্ষ্য করা গেছে ।

রায়ের কপি হাতে ট্রাইব্যুনালে আসেন আসামী পক্ষ :
আজ  সকাল থেকেই হাইকোর্ট এবং ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস হওয়ার অভিযোগের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা ফাঁস হওয়া রায়ের ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা  কপি নিয়ে হাজির হন ট্রাইব্যুনালে।  তারা অনেককে এটি দেখিয়ে বলেন আমরা রায়ের কপি আগেই পেয়ে গেছি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এবং স্ত্রী  অভিযোগ করেন   আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে এ রায়ের কপি ফাঁস হয়েছে এবং রায় আইন   মন্ত্রনালয় থেকেই লেখা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি পরিচিত নাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি পরপর ছয়বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আলোচিত একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।  তৎকালীন পূর্ব  পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজে (বর্তমানে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ) ভর্তি  ১৯৬০ সালে এবং সেখান থেকে এসএসসি ১৯৬৬ সালে। এরপর  নটরডেম কলেজে ১৯৬৬ সালে ভর্তি হন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাসে ভর্তির পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হন এবং সেখানে অধ্যয়ন শেষে ১৯৭১ সালে অক্টোবর মাসে লন্ডনের লিঙ্কন ইনে ভর্র্তি  হন ব্যারিস্টারি পড়ালেখার জন্য। তবে তা শেষ করেননি তিনি।  ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগে তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়াশুনা করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি সরাসরি কোন ছাত্রসংগঠনের সাথে জড়িত  না থাকলেও আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন।  ১৯৬৯ সালে এই আন্দোলনে নিহত আসাদ এর মৃত্যুর সময় ঘটনাস্তল থেকে মাত্র ১০ ফুট দূরে অবস্থান করছিলেন  বলে জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
গত বছর ১৯ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এক বছর চার মাসের মাথায় আলোচিত এ মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয় গত ১৪ আগস্ট। ওই দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। 
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরে গ্রেফতার করা হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।

১৭টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৪১ জন সাক্ষী হাজির করে। অপর দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আসামী নিজেসহ মোট চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।