বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

কোন অভিযোগই করলেননা এমপি আউয়াল

মেহেদী হাসান, ১০/১/২০১২
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক  মুক্তিযোদ্ধা এ. কে. এম. এ. আউয়াল এমপি ওরফে সাইদুর রহমান আজ  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট অগ্নিসংযোগের  বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগই করেননি।

মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করে তিনি  চারটি  অভিযোগ করেছেন এবং তার সবগুলোই শুনেছেন বলে জানিয়েছেন আদালতে। তিনি নিজে একটিও দেখেননি। যুদ্ধকালীন সময় তিনি  পিরোজপুর শহরেও  আসেননি।  মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করে তিনি যে চারটি তিনটি অভিযোগ করেন জবানবন্দীতে সেগুলো হল “পারের হাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসার পরে যেহেতু তারা উর্দুভাষী ছিলেন তাই তারা নাকি সাঈদী সাহেবকে তাদের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন ভাষার সুবিধার জন্য”।
দ্বিতীয় অভিযোগটি হল “আমি আমাদের সোর্সের মাধ্যমে   শুনেছি মদন সাহার ঘরটি লুট হয় । সে ঘরটি লুট করে সাঈদী সাহেব তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে রাখেন।”
মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করে তিনি তৃতীয় যে অভিযোগটি করেন তা হল “যুদ্ধকালীন সময়ে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে   শুনেছি লুটের মালামাল নিয়ে পাস  তহবিলের একটি দোকান হয় । যুদ্ধের পরে  একথা শুনেছি। সেই পাস তহবিলের ট্রেজারির দায়িত্ব পালন করেন  সাঈদী সাহেব”
চুতর্থ অভিযোগ হল দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন এবং তারা পাড়েরহাট এলাকার ভিন্ন ইউনিয়নের  লোক হওয়া সত্ত্বেও এতবেশি উৎসাহী ছিল যে, আমাদের  ইউনিয়ন  শংকরপাশাতে এসেও লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি সংগঠন করে।

এর আগে ১১ জন সাক্ষী আদালতে মাওলানা  সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের   সকলেই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ লুটপাটের কোন না কোন অভিযোগ করেছেন। কোন কোন সাক্ষী হত্যা ধর্ষণ লুটপাট অগ্নিসংযোগ বিষয়ে গড়ে সকল অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। পাড়েরহাট এলাকায় যত হত্যা ধর্ষন, লুটপাট অগ্নি সংযোগ হয় তার সবকিছুর সাথেই মাওলানা সাঈদী প্রত্যক্ষ  এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এমন  অভিযোগও করেছেন কোন কোন সাক্ষী। মাওলানা সাঈদী ভানু সাহা নামে একজনকে নিয়মিতত ধর্ষণ করতেন এ অভিযোগও করা হয়েছে।  কিন্তু গতকাল বীর মুক্তিযোদ্ধা পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুন্দরবন সবসেক্টর ক্যাম্পের পরিচালক (অপারেশন) এবং  ঐ ক্যাম্পের হেডকোয়ার্টার ইনচার্জ এ. কে. এম. এ, আউয়াল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের  বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগই করলেননা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে।  ঘর লুটসহ  তিনি মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করে যে  চারটি  অভিযোগ করলেন তার সবগুলোই তিনি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া পূর্বের প্রায় সকল সাক্ষী মাওলানা সাঈদীকে পারেরহাটের রাজাকার এবং  শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাজাকার এবং শান্তি কমিটি গঠন এবং নেতৃত্বে প্রসঙ্গে যখনই কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তখনই তারা মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করেছেন ।  যখনই কোন সাক্ষী তিন থেকে চারজন  উল্লেখযোগ্য রাজাকার শান্তি কমিটির  নেতার নাম  বলেছেন তখনই তারা মাওলানা সাঈদীর নাম বলেছেন। মাওলানা সাঈদীরসহ   দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিককদার এবং মোসলেম মাওলানার নেতৃত্বেই রাজাকার, শান্তি কমিটি গঠন হয় বলে তারা উল্লেখ করেন।   এ চারজনসহ আরো কয়েকজন রাজাকার  নেতা এবং শান্তি কমিটির নেতৃত্বেই পাক আর্মি পারেরহাট  এবং তার আশপাশের এলাকায় হত্যা, লুটপাট,  ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ, পাাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রাম্য মেয়েদের  তুলে দেয়ার কাজ হত বলে তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন।  কিন্তু  গতকাল এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়ায় রাজাকার  এবং শান্তি কমিটি গঠন বিষয়ে সেকেন্দার  শিকদার  এবং দানেশ মোল্লার নাম উল্লেখ করেছেন। মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করেননি।  তিনি বলেন, সেকেন্দার শিকদারের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠন হয়।    দানেশ মোল্লা (আমার শিক্ষক ছিলেন) সেও রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দায়িত্বে ছিল। এরা পরবর্তীতে রাজাকার বাহিনী গঠন করে বলে আমি শুনেছি।

মাওলানা সাঈদী ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ. কে. এম. এ. আউয়াল  এর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
এর আগে প্রায় সকল সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন মে মাসের প্রথম দিকে পাক আর্মি পারের হাট বাজারে আসেন।  তার কয়েকদিন আগে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু  গতকাল এমপি আউয়াল জবানবন্দীতে বলেন, মে মাসের  শেষের দিকে  পাক বাহিনী আসার পর পিরোজপুর মহকুমায় রাজাকার ও শান্তিবাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেন এবং পরের দিকে  গঠন করা হয়। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের সঠিক তারিখ বলতে পারবনা।

১২টা সামান্য পরে এমপি আউয়ালের জবানবন্দী শেষে ২টায় তার জেরার সময় নির্ধারণ করেন আদালত। ২টায় জেরার জন্য তিনি ডকে দাড়িয়ে বলেন, আমি একজন  নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এ বিষয়টি আমার জবানবন্দীতে আসেনি। এটি জবানবন্দীতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এ  তাছাড়া আমি জবাবন্দীর সময়  বলেছিলাম মে মাসের শেষের দিকে পাক আর্মি আসার পর শান্তি কমিটি গঠন হয়। এটি হবে মে মাসের প্রথম দিকে।  এটিও জবানবন্দীতে অন্তুর্ভুক্ত করা হোক। তিনি বলেন, এ বিষয়টি বলার সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের তর্কের কারনে আমি মনোযোগ  সমস্যা হয়  ।  অথবা আমার বক্তব্য ভাল করে বোঝা যায়নি। এরপর পাক আর্মি উর্দুভাষী হওয়ার কারনে  ভাষার সুবিধার জন্য  মাওলানা সাঈদীকে অন্তভুক্তি  বিষয়ে তিনি বলেন আমি ঐ সময় “নাকি” শব্দ বলেছিলাম। এটিও বাদ দেয়া হোক।
তার প্রস্তাবের পর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি উত্থাপন করা হয়। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, জবানবন্দীর  দুই ঘন্টা পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের  সাথে আলাপ করে এবং তাদের  শেখানো মতে এখন তার জবানবন্দীতে এসব বিষয় প্রবেশ করানোর দাবি করা হচ্ছে। এটি কোন অবস্থাতেই হতে পারেনা। এ নিয়ে আদালতে দেড় ঘন্টা যুক্তিকর্ত চলার পর আদালত   বিষয়টি জবানবন্দীতে অন্তভুক্তির পরিবর্তে জেরার  পূর্বে  উল্লেখ করেন আসামী পক্ষের তীব্র আপত্তি সাপেক্ষে।

মাওলানা সাঈদীর কুশল জিজ্ঞাসা
দুপুর ১২টার সামান্য পরে এমপি আউয়ালের জবানবন্দী শেষ হয়। জবানবন্দী শেষে এমপি আউয়াল  আদালত থেকে বের হওয়ার সময়  আদালতের ডকে উপস্থিত মাওলানা সাঈদীর সাথে কুশল বিনিময় করেন।  এমপি আউয়াল প্রথমে মাওলানা সাঈদীকে সালাম প্রদান করেন। তারপর বলেন,
বেয়াই কেমন আছেন। আপনার শরীর কেমন। তখন মাওলানা সাঈদী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহার মেহেরবানীতে ভাল আছি।

এমপি আউয়ালের জবানবন্দী :
আমার নাম আলহাজ্ব এ.কে.এম.এ. আওয়া ওরফে সাইদুর রহমান। আমার বয়স ৫৮ বছর  আমি বর্তমান সংসদ সদস্য। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এবং এপ্রিলের কিছুদিন আমি পিরোজপুরে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে আহবান করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবাদের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণের পরে পিরোজপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বিভিন্ন থানায় (বর্তমানে উপজেলা) ঘুরে ঘুরে মরহুম এনায়েত হোসেন খানের নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করি এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করি। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলে আমরা রাস্তায় নেমে আসি। তৎকালীন টাউন হল ময়দানে (বর্তমানে  স্বাধীনতার মঞ্চ) পিরোজপুরের সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হলেন।  তৎকালীন এম. এন. এ. মরহুম এনায়েত হোসেনের  কাছে জনতা অস্ত্র  দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের  জন্য। এনায়েত হোসেন খান ছাড়াও  আব্দুল হাইসহ  বেশ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি সেখোনে  ছিলেন।  অস্ত্র দাবির পর মরহুম এনায়েত হোসেন খান বলেন যে, অস্ত্র আমাদের কাছে । ট্রেজারীতে  অস্ত্র আছে। ওটা এখন আমাদের। সেখান থেকে অস্ত্র দিব, চলুন ট্রেজারীতে যাই। ট্রেজারী থেকে সংরক্ষিত অন্ত্র নিয়ে এনায়েত সাহেব আমাদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। তৎপর এনায়েত হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়।  তিনি ঐ পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যান্য এম.  এন. এ. সদস্যরাও ঐ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। আমি ঐ সময় পিরোজপুর মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। এরপর আমাদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন হলে, আমরা ছাত্ররা পি. টি.আই.  এর মাঠে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করি এবং সেখানে ট্রেনিং দেয়া শুরু করি। বিপ্লবী পরিষদ কর্তৃক তৎকালীন লে. এবং  বর্তমান মেজর জিয়াউদ্দিনকে  (অবঃ) সামরিক শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। মেজর জিয়াউদ্দিন দায়িত্ব পাওয়ার পর তার নেতৃত্বে সকল অস্ত্র একত্রিত করা হয় এবং ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্রদের ট্রেনিং এর ইন্সট্রাক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দূর্নীতি দমন বিভাগের দারোগা জনৈক মহাজন, তার সম্পূর্ণ নামটা মনে করতে পারছিনা। ছাত্র  সংগ্রাম পরিষদের আরো কয়েকজন ইন্সট্রাক্টর ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন বরাকত ও আরেকজন ছিলেন আনসার কমান্ডার নূরুল হক। ট্রেনিং চলাকালে আমরা জানতে পারি যে, পাকিস্তান  সেনাবাহিনী বরিশাল দখল করেছে। পিরোজপুর মুভ করতে পারে। ঝালকাঠী  পৌছে গেছে ।  তখন ঐ সংবাদ প্রাপ্তির পরে ট্রেনিংরত ছাত্র  এবং যুবনেতাদের অনেকে ভারতে চলে যায়। অনেকে  বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।  আমি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার জিউদা গ্রামে চলে যাই। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর মেজর জিয়াউদ্দিন এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতের পর আমরা একত্রিত  হই।  পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য স্থানীয় জনগণকে উদ্ভুদ্ধ ও একত্রিত করি। এরপর আমরা পাশ্ববর্তী সুন্দরবনে চলে যাই। সেখানে ট্রেনিং করানো যাবে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষার  স্থানীয় ফরেষ্ট অফিসটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রিক্রুটমেন্ট অফিস স্থাপন করি। এরপর আমি ও মেজর জিয়াউদ্দিন ভারতে চলে যাই, ট্রেনিং নেয়া ও অস্ত্র আনার জন্য। ট্রেনিং  শেষে  আমরা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করি এবং ১৪ই আগষ্ট মোড়লগঞ্জে অবস্থিত পাকিস্তানী আর্মী ও রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করি। সে

আক্রমণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কিছু লোক মারা যায় এবং আমাদের ৫/৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ঐ আক্রমণের পর আমরা সুন্দরবনে ফিরে যাই সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করি ।  পুরানো যারা কলিগ ছিল, যাদের  ট্রেনিং দিয়েছিলাম তাদেরকে পুনরায় একত্রিত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকি।  সুন্দরবন ক্যাম্প পরবর্তীতে  বৃহত আকার ধারন করায় সাব-সেক্টর হিসাবে উন্নিত হয় এবং আমি ঐ সাব-সেক্টরের হেড কোয়ার্টারের দায়িত্ব সহ মুক্তিযুদ্ধের অপারেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। ক্যাম্প যখন বড় হয়ে গেল তখন আমরা বিভিন্ন জায়গায় সিভিলিয়ানদের থেকে সোর্স নিয়োগ করলাম। এই সোর্স দেরকে গোয়েন্দার দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোয়েন্দা ছিলেন পিরোজপুর পাড়েরহাটের মাহবুবুর রহমান, রইজউদ্দিন পসারী, সিরাজসহ সহ আরো অনেকে। কিভাবে পাকিস্তানী বাহিনী কখন পিরোজপুরে আসে কখন পাড়েরহাট আসে, কারা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে সেই সব বিষয়ে আমরা ঐ গোয়েন্দাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করতাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রথমে  হুলারহাট বন্দর  হয়ে মে  মাসে  পিরোজপুর আসে। এরপর পিরোজপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে যায়, পাড়েরহাটেও আসে। মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী বাহিনী আসার পরে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং পরবর্তীতে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের সঠিক তারিখটি আমার স্মরণ নাই বিধায় বলতে পারব না। পাড়েরহাটে সেকান্দার শিকদার (বর্তমানে মৃত) এর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি  গঠন হয়। তাকে আমরা পরে গ্রেপতার করেছিলাম। দানেশ মোল্লা আমার শিক্ষক ছিলেন। সেও রাজাকার বাহিনীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দায়িত্বে ছিল।  তবে, ঠিক কোন পদে ছিলেন সেটি আমি এ মুহুর্তে স্মরণে আনতে পারছি না। পাড়েরহাটে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আসার পরে যেহেতু তারা উর্দূভাষী ছিলেন তাই তারা নাকি সাঈদী সাহেবকে তাদের সাথে অন্তর্ভূক্ত করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাড়েরহাট আসার পরে বাজারে লুটপাট করে এবং একটি দোকান থেকেই ২২ সের সোনা লুট করে নেয় এবং ঐ লুটপাটের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে পাড়েরহাটের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর লোকজন ছিল বলে আমি শুনেছি ।  ঐ স্বর্ণ লুটের কারণে পাড়েরহাট বাজারের নাম দেয় সোনার হাট। আমি আমাদের সোর্সের মাধ্যমে শুনেছিলাম যে, মদন সাহার যে ঘরটি লুট হয়েছিল সেই ঘরটি সাঈদী সাহেব তার শশুর বাড়িতে রাখেন।  যুদ্ধকালীন সময়ে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে শুনেছি যে, পাড়েরহাটে লুটপাটের মালামাল দিয়ে পাসতহবিল নামে একটি  দোকান করে। স্বাধীনতার পরেও একথা শুনেছি ।  সেই পাসতহবিলের ট্রেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাঈদী সাহেব।

পাড়েরহাট এলাকা হিন্দু অধ্যূসিত এলাকা হওয়ায় ও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যাধিক্য থাকায় ঐ এলাকায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন সময় আমার নিজ ইউনিয়ন শংকরপাশার বাদুরা, চিথলিয়া গ্রামের  নুরুল ইসলাম, রইজ্দ্দুীন পসারী, সইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারীসহ  হিন্দু পাড়া  একদিনে একটানা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল ।  ঐ পোড়া বাড়িঘর আমি স্বাধীনতার পরে এসে দেখেছি।  দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন এবং  তারা পাড়েরহাট এলাকার  ভিন্ন ইউনিয়নের লোক হওয়া সত্ত্বেও এতবেশি উৎসাহী ছিল যে, আমাদের ভিন্ন ইউনিয়নে শংকরপাশাতে এসেও লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি সংগঠন করে।  গোয়েন্দাদের মাধ্যমে শুনেছি একথা।

দানেশ মোল্লা ও সেকান্দার শিকদার (বর্তমানে মৃত) পিরোজপুর শত্রুমুক্ত হওয়ার পর অনেক রাজাকার শান্তি কমিটির লোকজন পালিয়ে গেছে, অনেকে ধরা পড়েছে, অনেকে গণপিটুনিতে মারা গেছে, সাঈদী সাহেবকে এলাকায় পাওয়া যায় নাই। (সাঈদী সাহেবের নাম উল্লেখের বিষয় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি করেন। তারা অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  সাক্ষীকে লিড প্রশ্ন করে এ নামটি বলিয়েছেন) ।
 এ পর্যন্ত  জবানবন্দী প্রদানের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষী এমপি আউয়ালকে বলেন পিরোজপুর এলাকার কোন ঘটনা আপনার জানা থাকলে বলেন আদালতে।

তখন সাক্ষী বলেন, পিরোজপুর সদরে ভগিরথি নামে একজন গরীব মহিলা পানের বরজ করতেন, সেই ভগিরথীকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা সন্দেহে রাজাকাররা তাকে ধরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ভগিরথীকে জীপের পেছনে বেঁধে শহরে ঘুরিয়ে  টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বলেশ্বর নদীর বেদীতে হত্যা করে। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ওমর ফারুককে রাজাকাররা ধরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী  বাংলাদেশের পতাকাসমেত ১৩টা রড় ফারুকের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়া বলেছিল বল শালা জয় বাংলা বল। আমরা এখনও নদীর বেদীতে ফুলের মালা দিয়ে সেই স্মৃতি স্মরণ করি। পিরোজপুর শহরের পাশে ডুমুর তলা, কদম তলা, টেংরাখালী, উমেদপুর গ্রামসহ শহরের অনেক এলাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ঐ সব এলাকায়ও লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড ঘটায়েছিল। কত বলব। অনেক ঘটনা আছে।

এরপর আরো কিছু বলার জন্য সাক্ষীকে  অনুরোধ করা হলে, আদালত  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করেন বলেন এই কেসের সাথে এবং  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আছে সাথে  সম্পৃক্ত নয় এমন বিষয় বলে লাভ  কি। সারা বাংলাদেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে এবং তা ইতিহাসের ফ্যাক্টস।  আমরাও জানি। কিন্তু কেসের সাথে সরাসরি সম্পর্ক নেই যে বিষয়ে তা   এনে লাভ কি।  ১২টার সামান্য পরে তার জবানবন্দী শেষ হয়।

অতপরঃ মধ্যহ্ন বিরতির পরে ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহণ  করার পর সাক্ষী  নিজ উদ্যোগে আদালতকে বলেন যে, “আমি জবানবন্দীকালে মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী বাহিনী আসে বলেছি মর্মে জবানবন্দী রেকর্ড হয়েছে। আদালত কক্ষে উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবিদের কথাবার্তার কারনে আমি ডাইভার্টেড হয়ে গিয়ে শেষের দিকে বলে থাকিতে পারি। কিন্তু  পাকিস্তানী বাহিনী পিরোজপুরে মে মাসের প্রথমে আসে ও শান্তি কমিটি গঠন করে এই কথা লেখা হবে। আমি জবানবন্দী দস্তখত করার সময় এ বিষয়টি চোখে পড়েছে কিন্তু আমাকে দস্তখত করতে বলায় আমি দস্তখত করেছি এবং এখন ট্রাইব্যুনাল আসন গ্রহণ করায় জেরার পূর্বে আমি আমার এই কথাগুলো বল্লাম। (আসামী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের তীব্র আপত্তি সহকারে উল্লেখিত বক্তব্যটি রেকর্ড করা হলো)।

জেরার আগে দেড়ঘন্টা বিতর্ক:
এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়াল  বেলার দুইটার সময় জেরার জন্য আদালতের ডকে দাড়িয়ে জবনবন্দীতে  কয়েকটি শব্দ   অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করার সাথে সাথে  তীব্র বিরোধীতা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।

এ নিয়ে চলে দেড়ঘন্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।  এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতিদের মধ্যেও মতভেদ দেখা দেয়। পরে অবশ্য তিন বিচারপতি  একমত হয়ে  আদেশ প্রদান করেন। 

এমপি আউয়াল একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এ বিষয়টি জবানবন্দীতে   অন্তর্ভুক্ত করার কোন বিরোধীতা করেননি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। কিন্তু  তার জবানবন্দীতে মে মাসের শেষের দিকে স্থলে প্রথম দিকে কথাটি লেখার প্রস্তাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হক  কম্পিউপার ম্যানকে বলেন ঐ বাক্যটি বের করা হোক। তখন তিনি  ঐ বাক্যটি অুন্ন রেখে “পরে সাক্ষী বলেন” কথাটি উল্লেখপূর্বক সাক্ষীর প্রস্তাবমত পরের বাক্যটি লেখার  প্রস্তাব করেন। তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  তাজুল ইসলাম এর তীব্র বিরোধীতা করে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন,  জবানবন্দী শেষে তিনি  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে বলেছেন, আপনি যা বলেছেন তাতে তো সর্বনাশ হয়ে গেছে। তাই এ বাক্যটি  বদলের জন্য তারা কাকে শিখিয়ে দিয়েছেন।

তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী যখন তার জবানবন্দীতে সাক্ষর করেন তখন যদি তিনি দেখেন তার কোন একটি বক্তব্য সঠিকভাবে আসেনি তখন তা পরিবর্তনের অধিকার  তার আছে।
তখন তাজুল ইসলাম আবার বলেন, তিনি বলেন সাক্ষী সাক্ষর করার সময় অবশই জবানবন্দীতে পরিবর্তন করতে পারে । এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে শতভাগ একমত।  কিন্তু সাক্ষী এটি  করতে পারে যতক্ষন তিনি ডকে থাকবে ততক্ষন । ততক্ষন তার  অধিকার তার আছে।  তার বক্তব্য  যদি  ভুল লেখা হয় বা কোন  কিছু যদি  বাদ পড়ে যায় তাহলে তিনি তা যোগ করতে পারেন।  কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাতো হয়নি। তিনি বার বার জোর দিয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, মে মাসের শেষের দিকে পাক আর্মি আসার পর শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তাছাড়া  তার জবানবন্দী শেষে  হয়েছে দুই ঘন্টা আগে। এর মধ্যে তিনি  আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ পেয়েছেন।  আইনজীবীরাই তাকে এ পরিবর্তনের কথা শিখিয়ে দিয়েছেন।  তাই কোন অবস্থাতেই  এটি   গ্রহণযোগ্য নয়।  এটি আইন সম্মত নয়। পৃৃথিবীর কোন ইতিহাসে এটি নেই। এটি  হলে আমারাও আমাদের  সাক্ষীদের জবানবন্দী শেষ হলে ইচ্ছামত বক্তব্য পরিবর্তনের দাবি জানাবো। তাহলে আর বিচারেরই দরকার হবেনা। জবানবন্দীতে সাক্ষীর  বক্তব্য নতুন করে পরিবর্তনের বিরোধীতা করে  তাজুল ইসলাম আরো বলেন, এটি করা হলে তার মক্কেল ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন  দারুনভাবে।

যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে ভিন্ন মত পোষন করে বলেন, আমার প্রস্তাব হল সাক্ষীর এই নতুন বক্তব্যটি এখন জেরার আগে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ প্রস্তাবে রজি হন। কিন্তু তখনো এর বিরোধীতা করতে থাকেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।  

মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, পুনরায় পরীক্ষা ছাড়া এটি  রেকর্ডে আনার কোন সুযোগ নেই। বক্তব্য দিতে হলে তা রিইক্সামিন ফর্মে দিতে হবে। জবানবন্দীতে আনার সুযোগ নেই। তিনি যা বলেছেন তা রেকর্ড করা আছে আদালতে।  তার  বক্তব্য  পুনরায় পরীক্ষা করে যদি  দেখা যায় তার বক্তব্য ভুলভাবে লেখা  হয়েছে তখন তা জবানবন্দীতে আনতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  বলেন তার বক্তব্য রেকর্ড হতে অসুবিধা কোথায়। আমরা  পর্যালোচনার সময় এটি অবশ্যই বিবেচনা করব যে কখন কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এটি বলেছিলেন। কিন্তু আপনারা আপত্তি জানাচ্ছেন ওনার বক্তব্য আনাই যাবেনা। ক্রসের আগ পর্যন্ত জবানবন্দী রিভিউ করার সুযোগ আছে।

এর এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের রিইক্সামিনের আবেদন করতে বলেন। তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি  নিজামুল হক বলেন আমার দুই পাশের দুই জন ব্রাদার্স রিইক্সামিনের পক্ষে  মত দিয়েছেন। মেজরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেট। এ পর্যায়ে বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ বলেন আমি রিইক্সামিনের কথা বলিনাই। তখন  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, অবশ্যই আপনারা দুজন একমত হয়েছেন। তখন  বিচারপতি নিজামুল হক রিইক্সামিনের বিষয়ে আদেশ  দেন।

তারপরও এ নিয়ে যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এ পর্যায়ে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির আসামী পক্ষের আইনজীবীদের বলেন আমরা এটি জেরার  পুর্বে রেকর্ড করতে চাই আপনাদের আপত্তিসহকারে।

তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী  একজন সংসদ সদস্য। তার সাক্ষরে আইন পাশ হয়। তিনি অবশ্যই দায়িত্বশীল মানুষ। তিনি যা বলেছেন বুঝে  শুনেই বলেছেন এবং তিনি যখন তার জবানবন্দীতে সাক্ষর করেছেন তাও বুঝে শুনে করেছেন বলেই ধরে নিতে হবে। তিনি জবানবন্দীতে সাক্ষর করার সময় আদালতকে বলতে পারতেন যে তার বক্তব্য সংশোধন করতে হবে। জবানবন্দী সাক্ষরের সময় একজন আইনজীবী তার সাথে ছিলেন। তখন তার মাধ্যমে তিনি আদালতকে বলতে পারতেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও বলতে পারতেন আমাদের। কিন্তু তা তিনি বলেননি। তিনি সাক্ষরের সময় তার আপত্তির যে কথা বলেছেন বলে দাবি করছেন তাও আমরা শুনিনাই। কাজেই জবানবন্দী শেষে দুই ঘন্টা শেষে এখন তার এ বক্তব্য পরিবর্তনের দাবি গ্রহণযোগ্য  হতে পারেনা। তিনি যদি ভুলও বলে থাকেন তাহলে তা রিইক্সামিন ছাড়া সংশোধনের আর কোন সুযোগ নেই। 

এরপর আদালত রিইক্সামিনের  আদেশ সংশোধন করে জেরার পূর্বে আপত্তিসহকারে সাক্ষীর নতুন বক্তব্য উল্লেখ করার আদেশ দেন।

জেরা ঃ
আইনজীবী: আপনি মোড়েলগঞ্জে কবে গেলেন?
সাক্ষী: আমার মোড়লগঞ্জ থানার জিউদা গ্রামে যাবার তারিখ আমি এ মুহুর্তে বলতে পারছি না, মে মাসের ১/২  তারিখে হবে হয়তো।
আইনজীবী:  মোড়েল গঞ্জের জিউদ গ্রামে  কতদিন ছিলেন?
সাক্ষী: জিউদা গ্রামের যাবার ৮/১০ দিন পর আমি সুন্দরবন যাই। মোড়লগঞ্জ থানার জিউদা থাকাকালিন আমি তেঁতুলবাড়িয়া, রামপাল, সোনাখালী, ঘসিয়াখালি, শরণখোলা, মোংলা ইত্যাদি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার জন্য গিয়েছিলাম।
আইনজীবী: ভারতে যাবার আগে কতদিন ছিলেন?
সাক্ষী: জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে রওয়ানা দেই। তৃতীয় সপ্তায় ভারত পৌছি।
আইনজীবী: ভারতে ট্রেঙনিং কবে শুরু করলেন?
সাক্ষী: জুলাইয়ের শেষের দিকে ট্রেনিং শুরু করে আগষ্টের প্রথম দিকে শেষ করে দেশে চলে আসি। ট্রেনিং শেষ করে প্রথমে আমরা মোড়লগঞ্জে এসে ১৪ আগস্ট  আমির্, রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে সফল হয়ে তৎপর সুন্দরবনে যাই।
আইনজীবী: সুন্দরবন যাবার কতদিন পর  ঐ ক্যাম্প সাব সেক্টর  হয়?
সাক্ষী: সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা, শক্তি এবং সফলতা বৃদ্ধি হবার পর সুন্দরবন  ক্যাম্প সাব-সেক্টরে উন্নিত হয়।
আইনজীবী: আপনি সব সেক্টর  হেডকোয়ার্টারের ইনচার্জ কবে হলেন?
সাক্ষী:  শুরু থেকেই সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার ইনচার্জ হই।
আইনজীবী:  সাব সেক্টর ক্যাম্পের গোয়েন্দা প্রধান কে ছিলেন?
সাক্ষী: গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব সাব-সেক্টর কমান্ডারের নিজ হাতে ছিল। লেঃ জিয়াউদ্দিন তখন ক্যাপ্টেনে উন্নীত হয়েছেন এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
আইনজীবী: যুদ্ধ চলাকালে আপনি পিরোজপুরের কোন এলাকায়  আসেন।
সাক্ষী: আমি যুদ্ধকালীন সময় পিরোজপুরের মাঠবাড়িয়া, তুশখালী, ভান্ডারিয়া, ইন্দুরকানী এসেছিলাম। ।
আইনজীবী: যুদ্ধকালীন সময়ে কোনদিন  পিরোজপুর শহরে গেছেন।
সাক্ষী:না। 
আইনজীবী: বর্তমানে বরিশালের কোন থানায় গেছেন?
সাক্ষী: না। বরিশাল আমাদের জুরিসডিকশনের বাইরে ছিল।
আইনজীবী: নেছারাবাদ গেছেন?
সাক্ষী: আমি স্বরূপকাঠী (নেছারাবাদ) যাই নাই।
আইনজীবী: পটুয়াখালির কোন থানায়?
সাক্ষী: পটুয়াখালীর বামনা ও পাথরঘাটা গিয়েছিলাম।
আইনজীবী: ঝালাকাঠির কোন থানায়?
সাক্ষী: ঝালকাঠির কোন জায়গায় যাই নাই।

এ পর্যায়ে চারটা বাজলে আদালত মুলতবী ঘোষনা করেন।  সাক্ষীকে জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন তাজুল ইসলাম,  মনজুর আহমদ আনছারী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী,  ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন, মুন্সি আহসান কবির, এস এম শাহজাহান কবীর প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন