বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

তিনবোনকে ধর্ষনের ঘটনা ৩৬পূর্বের কোন সাক্ষী বলেননি

মেহেদী হাসান, ১৬/১/২০১২
গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহা ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আজ।  সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৭ বছর। তবে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জেরার সময় ভোটার লিস্টের  সূত্র  উল্লেখ করে আদালতে বলেন সাক্ষী ভোটার লিস্টে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৬৩ সালের ৮ জুলাই। সে হিসেবে  ১৯৭১ সালে  মুক্তিযুদ্ধ  শুরুর সময় তার বয়স দাড়ায় ৭ বছর আট মাস ।

২০০৮ সালে ভোটার লিস্টে উল্লেখিত  জন্ম তারিখ বিষয়ে  সাক্ষী গৌরাঙ্গ  চন্দ্র সাহা বলেন, হয় ঐ সময় আমি ভুল বলেছি, না হয় তারা ভুল লিখেছে।
সাক্ষী   জবানবন্দীতে জানান, ১৯৭১ সালে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকাররা তার তিন বোনকে   ধরে নিয়ে পাক আর্মিদের ক্যাম্পে দিয়ে আসে।    তিন দিন পর ক্যাম্প থেকে  তাদের ফেরত পাঠায়  এবং এরপর তার ঐ তিন বোনসহ অন্যসব ভাইবোন, মা বাবা ভারতে চলে যায়। সে  একা শুধু বাংলাদেশে আছেন।

গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহার আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরার সময় গৌরাঙ্গ স্বীকার করেন  পূর্বের ১২ জন সাক্ষীর সবাইকেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই অনেকের সাথে পরিচয় ।   এমনকি এই মামলার বাদী  এবং এক নম্বর সাক্ষী মাহবুবুল আলমের সাথে স্বাধীনতার পর ভাল করে  পরিচয় হয়।  মাহবুবুল আলমের বাবা স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই পারেরহাট বাজারে তাদের দোকানের খরিদ্দার ছিল। কিন্তু  গৌরাঙ্গ চন্দ্র  সাহার তিন বোনকে ধরে নিয় পাক আর্মি ক্যাম্পে আটকে   রেখে ধর্ষনের মত এত বড় একটি ঘটনা পূর্বের ১২ জন সাক্ষীর কেউই উল্লেখ করেননি।  মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারও বলেননি।

গৌরাঙ্গ  চন্দ্রের  বাড়ি পারেরহাটে।  স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই পারেরহাট বাজারে তাদের  মুদি দোকানের ব্যবসা। এই মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী   রুহুল আমিন নবিনের বাড়িও পারেরহাট বাজারে। তারও সেখানে ব্যবসা আছে।   মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য  দেয়ার সময় রুহুল আমিন নবিন নিজেকে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তার নেতৃত্বে পারেরহাট বাজার শত্রুমুক্ত হয় বলে  বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রুহুল আমিন এবং গৌরাঙ্গ  চন্দ্রের বাড়িও কাছাকাছি। মানিক পসারী, আব্দুল জলিল শেখ সহ অন্যান্যা বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বাড়িও পারেরহাটের খুব কাছে। রুহুল আমিন নবিন, মানিক পসারী, আব্দুল জলিল শেখসহ অন্যান্য প্রায় সকল সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  পারেরহাট বাজার  এবং আশপাশের অনেক এলাকায় লুটপাট, ধর্ষণ হত্যা, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করলেও গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহার তিন বোনকে পাক আর্মি ক্যাম্পে তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষনের বিষয়টি কেউ  কিছু উল্লেখ করেননি।

গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহা জবানবন্দীতে ১৯৭১ সালের  কোন সময় তার তিন বোনকে  ধরে নিয়ে ক্যাম্পে দিয়ে আসেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।

জেরার সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহা প্রশ্ন করেন ভারতে  তারা কোথায় আছেন। তখন সাক্ষী জানান,  ভারতে তারা কোথায় কি অবস্থায় আছে তার কিছুই তিনি জানেননা।  আবার অন্য এক প্রশ্নের  জবাবে জানান, তার মা বাবা মারা যাবার পর তার বড় ভাই টেলিগ্রাম করেছিলেন তাকে।

তাছাড়া পিরোজপুরে পাক বাহিনীর আগমন, পারেরহাটে শান্তি কমিটি  এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের তারিখ বিষয়ে এর আগের সাক্ষীরা যে তথ্য  দিয়েছেন তার সাথে অনেক গরমিল রয়েছে গতকালের গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহার দেয়া  তথ্যের সাথে।

সাক্ষী  জানান কিছুদিন পূর্বে তিনি পারেরহাট  বাজারে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কতদিন আগে তিনি ঘর পেয়েছেন এর জবাবে বলেন তিন বছর আগে।

গৌরাঙ্গ  চন্দ্র  সাহার জবানবন্দী :
আমার  বয়স  ৬৭ বছর। ১৯৭১ সালে বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কিছু রাজাকার নিয়ে আমাদের বাড়িতে যায়। বাড়িতে যাইয়া লুটপাট করে। রাজাকাররা আমার তিন বোনকে ধরে নিয়ে যায়। পিরোজপুর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়ে আসে। সেখানে  জোরপূর্বক ধর্ষন করে  তিনদিন পর তাদের ফেরত  পাঠায়। এর কিছুদিন পর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমার মা বাবা ভাই বোন পরিবারের সবাইকে মুসলমান বানায়। মসজিদে নিয়া নামাজ পড়ায়। এ লজ্জায় আমার মা বাবা ভাইবোন সবাই ভারতে চলে যায়। আমি একাই এদেশে    আসি।

সাক্ষী বলেন,  তারা আরো অনেক হিন্দুকে মুসলমান বানায়। একশ থেকে দেড়শ হবে। এর  মধ্যে কয়েকজন হল নারায়ন সাহা, নিখিল পাল, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল। এদের  অনেকে ভারতে চলে গেছে। অনেকে মারা গেছে। আমাকে মুসলমান বানিয়ে নাম দেয় আব্দুল  গনি। হাতে তজবী টুপি দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর আমি আবার নিজ ধর্মে ফিরে  আসি।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তখন আমার বাড়ির পাশে ভাড়া থাকত।

সাক্ষীর জেরা
আইনজীবী: মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে (এই মামলার বাদী  এবং এক নম্বর সাক্ষী) চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা চিনি।
আইনজীবী: ওনার সাথে  কতদিন ধরে পরিচয়?
সাক্ষী: বহু আগে। স্বাধীনতার আগে স্কুলে পড়ার সময় পরিচয়। স্বাধীনতার পর ভাল করে পরিচয় হয়।
আইনজীবী:  মাহবুব কোন স্কুলে পড়ত?
সাক্ষী: পারেরহাট রাজলক্ষী স্কুলে।
আইনজীবী: স্বাধীনতা  যুদ্ধের  সময় মাহবুবুল আলমের সাথে  আনপার দেখা হয়?
সাক্ষী: তখন যে যার সুবিধামত পালিয়ে থাকত। কার খবর কে রাখে।
আইনজীবী: স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ওনার সাথে ভালকরে পরিচয় হয়   ঠিক কখন?
সাক্ষী: স্বাধীনতার পরপরই। তার বাবা আমার দোকানের খরিদ্দার ছিল।
আইনজীবী: আ্পননার বোনদের ধর্ষণ  এবং পরিববারের সবাইকে মুসলমান বানানো বিষয়ে আজকে যে অভিযোগ করলেন এসব ঘটনা কি স্বাধীনতার পর মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে জানিয়েছিলেন?
সাক্ষী: ওনাকে বলব কেন?
আইনজীবী: স্বাধীনতার পর মাহবুবুল আলম কি এ ঘটনা জেনেছে?
সাক্ষী: হ্যা জেনেছে। অন্য কেউ তাকে বলেছে।
আইনজীবী: এমপি আউয়াল সাহেব কি জানতেন এ ঘটনা?
সাক্ষী: সেটা আমার জানা নেই।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যতজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সকলের নাম উল্লেখ করে সাক্ষীকে জিজ্ঞেস করা হয় তাদের তিনি চেনেন কিনা  এবং  সাক্ষীর তিন বোনকে ধর্ষনের ঘটনা তারা জানত কি-না।
আইনজীবী: রুহুল আমিন নবিন কে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা চিনি।
আইনজীবী: যুদ্ধ   শুরুর ঠিক আগে তিনি কি করতেন?
সাক্ষী: আমি বলতে পারবনা।
আইনজীবী: তিনি কি  ঐ  ধর্ষনের ঘটনা জানতেন ?
সাক্ষী: আমি বলতে পারবনা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে পারেরহাট  বাজারে ছোলামুড়ি/বুটমুড়ি বিক্রি করতেন মোস্তফা হাওলাদার  কে চিনতেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী:  আপনার বোনদের ধর্ষনের ঘটনা  মোস্তফা জানত?
সাক্ষী: আমার জানা নেই।
আইনজীবী: সুলতান আহম্মেদ হাওলাদারকে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালের   আগেই চিনতেন?
সাক্ষী: চিনতাম কি-না বলতে পারছিনা এখন।
আইনজীবী: তিনি কি আপনার বোনদের ঘটনা জানতেন?
সাক্ষী: আমি বলতে পারবনা।
আইনজীবী: মিজানুর রহমান তালুকদারকে চেনেন?
সাক্ষী: বহুদিন ধরেই চিনি। স্বাধীনাতার সময় চিনতাম কি-না স্মরন নেই।
আইনজীবী: মাহতাব উদ্দিন  হাওলাদারকে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: সে কি আপনার বোনদের ধর্ষন এবং সবাইকে মুসলমান বানানো  ঘটনা জানে?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: চিথলিয়ার সইজুদ্দীন পসারীর ছেলে মানিক পসারীকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: তিনি  ঐ ঘটনা জানেন?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: চিথলিয়ার বাসুদেব মিস্ত্রি, আব্দুল  জলিল  শেখ। তারা কি আপনার বোনদের  ঘটনা জানত?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: টেংরাটিলার আলতাফ হোসেন হাওলাদারকেও আপনি দীর্ঘদিন থেকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: তিনি কি আপনার তিন বোনকে ধর্ষন  এবং পরিবারের সবাইকে ধর্মান্তরকরনের বিষয় জানতেন?
সাক্ষী: আমার জানা নেই।
আইনজীবী: মাহবুবুল আলম হাওলাদার  এবং মানিক পসারী এর আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  পিরোজপুর আদালতে মামলা করেছিল। তখন কি তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করেছিল?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা হেলার সাহেবের  সাথে কবে দেখা হয়?
সাক্ষী: আমাকে দোকান থেকে হাইস্কুলে ডেকে নিয়ে যাবার   পর।
আইনজীবী: স্কুলের হেড মাস্টারের রুমে বসে জবানবন্দী দিয়েছিলেন?
সাক্ষী: না । কাসরুমে বসে।
আইনজীবী: ১৯৯২ সালে গণ আদালত হয়েছিল শুনেছেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: ঐ গণআদালতে সাক্ষী দিয়েছিলেন?
সাক্ষী: আমি জীবনে কোনদিন কোন আদালতে সাক্ষী দেইনি। আজ এখানে প্রথম সাক্ষ্য দিলাম।
আইনজীবী: ২ বছর পর ১৯৯৪ সালে গণ  তদন্ত কমিশন হয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে  তথ্য সংগ্রহ  এবং তদন্তের  জন্য।  জাহানারা ইমাম, কবি সুফিয়া কামাল, শাহরিয়ার কবির বা এদের পক্ষে কেউ কি আপনার কাছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের  ঘটনা জানার জন্য গিয়েছিল?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক  পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বিষয়ে বই প্রকাশের জন্য ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত  প্রচারনা চালায়।  ১৯৭১ সালের ঘটনা  তাদেরকে জানানোর জন্য গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তা কি জানতেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: জেলা পরিষদের কারো কাছে আপনার ঘটনা জানিয়ে কোন বক্তব্য দেননি।
সাক্ষী: আমার কাছে কেউ যায়নি। আমিও কিছু  বলিনাই।
আইনজীবী: সাঈদী সাহেব আপনার বাড়ির পাশে ভাড়া থাকতেন। তিনি কি ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় ঐ বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই। ওটা ছিল ওনার ভায়রার বাড়ি।
আইনজীবী: আপনি পড়ালেখা কতদূর করেছেন?
সাক্ষী: থ্রি।
আইনজীবী: যে তিনবোনকে ধর্ষনের শিকার বলে উল্লেখ করেছেন তারা সবাই আপনার ছোট।
সাক্ষী: হ্যা। সবাই আমার পিঠাপিঠি ছোট।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে পিরোজপুর ট্রেজারি থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনার কথা খেয়াল আছে?
সাক্ষী: শুনেছি।
আইনজীবী: এই অস্ত্র লুটের কয়েকদিন পরই পিরোজপুরে পাক আর্মি আসে?
সাক্ষী: কয় দিন পর আসে খেয়াল নেই।
আইনজীবী: অনুমান কতদিন পর ?
সাক্ষী: ৫/৭ দিন পর।
আইনজীবী: পাক সেনাবাহিনী আসার আগেই পিরোজপুর  এবং আপনার  এলাকায় পিস কমিটি  এবং রাজাকার বাহিনী  গঠিত হয়।
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: কতদিন আগে?
সাক্ষী: কিছুদিন আগে।
আইনজীবী: অনুমান কতদিন হবে?
সাক্ষী: মাস খানিক আগে অনুমান।
আইনজীবী: পিস  কমিটি  এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের পরপরই এলাকায় তারা অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: লুটপাটও শুরু হয়?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: পাক হানাদার বাহিনি আসার আগে লুটপাট হয় এমন দুয়েকজন দোকান মালিক বা বাড়ির মালিকের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: বিপদ সাহার দোকান, আমাদের ঘরসহ বহু ঘর লুট হয়।
আইনজীবী: আপনার ঘরে লুট হওয়া মালামালের তালিকা কি তদন্ত  কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
সাক্ষী: সবই নিয়ে গেছে। কি দেব? ঘরের পিছাও (ঝাড়–)  নিয়ে গেছে।
আইনজীবী: পাকিস্তান বাহিনী আসার ৩/৪দিন পর আপনার বোনদের ধরে নিয়ে যায়?
সাক্ষী: ১০/১৫ দিন পর।
আইনজীবী: অস্ত্র লুট হওয়ার ১০/১৫ দিন পরই পাকিস্তান  আর্মি পারেরহাট আসে?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী:  পাক বাহিনী আসার পর না আগে আপনাদের মুসলমান বানানো হয়?
সাক্ষী: পারেরহাট আসার মাস দুয়েক পর।
আইনজীবী: যে মসজিদে নিয়ে আপনাদের নামাজ পড়াত তার ইমাম মুয়াজ্জিনের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী:  পরে যখন আবার নিজ ধর্মে ফিরে আসেন তখন কি প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন?
সাক্ষী: জান বাঁচাতে মুসলমান  হয়েছিলাম। তার আবার প্রায়শ্চিত্ত কিসের?
আইনজীবী: চরখালির পীর ইয়াসিনকে চিনতেন?
সাক্ষী: হ্যা চিনতাম। ইয়াসিন মাওলানা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে আপনি বিবাহিত ছিলেন?
সাক্ষী: স্বাধীনতার লগে লগে বিয়ে করি।
আইনজীবী: স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আপনি কি করতেন?
সাক্ষী: মুদি দোকানী করতাম।
আইনজীবী: এখনো তা করেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে বাজারে আপনার স্থায়ী দোকান ছিল?
সাক্ষী: হ্যা তখন স্থায়ী দোকান ছিল। এখন ফুটপাথে বসি।
আইনজীবী: আপনার ছেলে মেয়ে কতজন?
সাক্ষী: ৩ মেয়ে ১ ছেলে।
আইনজীবী: ছেলে কি করে?
সাক্ষীধ চিটাগাং থাকে। কি করে জানিনা। ১০/১২ বছর ধরে  থাকে সেখানে।
আইনজীবী: আপনার বোনদের ক্যাম্প থেকে ফেরত দেয়ার কয়দিন পর তারা ভারতে যায়?
সাক্ষী: মুসলমান  হবার কিছুদিন পর ।
আইনজীবী: পারেরহাটের অতুল পোদ্দারের ছেলে লক্ষী কান্ত পোদ্দারকে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: আপনার যে তিন বোন ধর্ষনের শিকার তার মধ্যে বড় বোন বিবাহিত ছিল?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: তিন বোন ভারতে যাবার পর এখন বিয়ে হয়েছে?
সাক্ষী: তারা কোথায় কিভাবে আছে কিছুই জানিনা। বিয়ে হয়েছে কি-না তাও জানিনা। আমার আরো এক ছোট বোন ছিল সেও  তিন বোনের সাথে ভারতে যায়।
আইনজীবী: আপনার মা বাবার কোন খবর জানেন?
সাক্ষী: মাও নেই বাবাও নেই। তারা মারা যাবার পর পারেরহাট টেলিগ্রাম এসেছে।
আইনজীবী: টেলিগ্রাম কে করেছিল?
সাক্ষী: আমার বড় ভাই।
আইনজীবী: আপনি কার মাধ্যমে ভারতে গিয়েছিলেন?
সাক্ষী: রইজুদ্দীন নাইয়ার মাধ্যমে।
আইনজীবী: মুত্যৃ সংবাদ ছাড়া তাদের আর কোন খবর জানেননা?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রইজুদ্দীনদের টেন্ডু পাতার (বিড়ির জন্য ভারত থেকে আনা হত) ব্যবসা ছিল?
সাক্ষী: পাকিস্তান আমলে ছিল।
আইনজীবী: আপনার যে তিন বোনকে  পাক আর্মি ধর্ষন করে বললেন তার মধ্যে বড়বোনকে স্বাধীনতার অনেক পরে পারেরহাটের অতুল পোদ্দারের ছেলে লক্ষী কান্ত পোদ্দারের সাথে বিয়ে দেয়া হয় পারেরহাটে বসেই।
সাক্ষী: মোটেই ঠিক না।
আইনজীবী: পারেরহাট বাজারের তিনজন ব্যবসায়ী নারায়ন সাহা, উত্তম পাল, দেলোয়ার হোসেন ফকির এদের চেনেন?
সাক্ষী: এদের কাছ থেকে বাকীতে পাইকারী মাল আনতেন আপনি। সে মালের দাম দিতে না পারায় আপনাকে তারা বাকীতে মাল  দেয়া  বন্ধ করে দেয়। সে কারনে আপনার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে  এবং  আপনি এখন ফুটপাথে বসে ব্যবসা করেন।
সাক্ষী: (বাকীতে মালা আনা টাকা পরিশোধের কথা স্বীকার করে সাক্ষী বলেন)   তাদের বাজারে ডাকাতি হয়েছিল। তার দোকানেও ডাকাতি হয়।  তাছাড়া অন্য একটি  ঘটনায় মালামালসহ নৌকা ডুবে যায় তার। সেসব কারনে তিনি দাম পরিশোধ করতে পারেননি। তাছাড়া তার দোকান  ঘর নদীতে ভেঙ্গে গেছে।  সে কারনে তিনি এখন ফুটপাথে দোকানদারী করেন।
আইনজীবী:  আপনি বলেছেন সাঈদী  এবং অন্যান্য রাজাকাররা আপনার বাড়িতে গিয়ে  লুটপাট করে এবং বোনদের ধরে নিয়ে যায়। অন্য দুয়েকজন রাজাকারের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: অন্য কোন রাজাকারের নাম জানিনা।
আইনজীবী: পিস কমিটির  কারো নাম যেমন চেয়ারম্যান মেম্বার কারো নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: সভাপতি সেক্রেটারির নাম খেয়াল নেই। আরেকজন রাজাকারের নাম জানি। রাজ্জাক রাজাকার। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। অন্য রাজাকারদের কার কি নাম তা আমার জানা নেই।
আইনজীবী: মোসলেম মাওলানাকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনতে পারি তবে নাম জানিনা।
আইনজীবী: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১৯৭১ সালের কতদিন আগে থেকে চিনতেন?
সাক্ষী: এক বছর আগে থেকে।
আ্ইনজীবী: ১৯১৭ সালে তার কোন ছেলে মেয়ে ছিল?
সাক্ষী: অতটা খেয়াল নেই।
আইনজীবী: আপনার বাসা থেকে তার বাসার দূরত্ব কতটুকু।
সাক্ষী: মাঝে তিন চারটা ঘর।
আইনজীবী: ঐ ঘরগুলো কাদের?
সাক্ষী: বিন্দু বাবু, সাধুচরন সাহা, কেষ্ট সাহা, মোজাহার মল্লিকের ঘর তার পেছনে সাঈদী সাহেবের ঘর ।
আইনজীবী: স্বাধীনতার কতদিন আগে সাঈদী সাহেব বিয়ে করেন?
সাক্ষী: বছর দুয়েক আগে।
আইনজীবী: আপনি ২০০৮ সালের ভোটার লিস্টে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: আইডি কার্ড পান?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ভোটার লিস্টের জন্য ছবি তোলা  এবং কাগজপত্র সই করেছিলেন?
সাক্ষী:  খেয়াল নাই।
আইনজীবী: ঐ ভোটার লিস্টে আপনি আপনার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ৮ জুলাই ১৯৬৩ সাল।
সাক্ষী: হয় আমি ভুল বলেছি তখন না হয় তারা ভুল  লিখেছে।
আইনজীবী: আপনি সঠিক তারিখ উল্লেখ করেই আইডি কার্ড নিয়েছেন।
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: বয়স সংশোধনের কোন আবেদন করেছিলেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আমি বলছি আপনার ঐ তিন বোন  ১৯৭১ সালে  খুবই ছোট ছিল।
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনার বাড়ি জিয়ানগর উপজেলায়?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: জিয়া নগর  উপজেলায় ১৯৭১ সালে রাজাকারদের সহায়তায় পাক আর্মি আপনার তিন বোন বা অন্য কোন মেয়েকে ধর্ষণ করেনি।
সাক্ষী: আমার তিন বোনকে ধর্ষন করা হয়েছে।
আইনজীবী: কিছুদিন আগে আপনি পারেরহাট আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ পান?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী:  কবে পান?
সাক্ষী:  প্রায় তিন বছর আগে।
আইনজীবী:  পারেরহাট বাজারে যাদের মুসলমান বানানো হয়েছিল তাদের মুসলমান বানায় চরখালির ঐ ইয়াসিন পীর পারেরহাট বাজারে তার খানকায় বসে।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: মামলায় সাক্ষী হবার পর আপনি পাওয়নাদারদের নিবৃত রেখেছেন শাসক দল এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে।
সাক্ষী: মিথ্যা।
আইনজীবী: যুদ্ধ  শুরুর   আগে থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদী পিরোজপুর  বা পারেরহাট ছিলেননা।
সাক্ষী: সত্য নয়।  তিনি পিরোজপুর ছিলেন।

1 টি মন্তব্য: