বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

মাওলানা সাঈদীর সুপারিশে সাহায্যের আবেদন বাদী এবং সাক্ষীর

মেহেদী হাসান, ১৪/১২/২০১১
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধ, হত্যা ধর্ষণ, লুন্ঠন অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে মামলা দায়ের   করেছেন পিরোজপুরের  মাহবুবুল আলম হাওলাদার। গত সাত ডিসেম্বর   তিনি প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন  ট্রাইব্যুনালে। অথচ   এই মাহবুবুল আলম হাওলাদারই ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে  যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী  এবং পিরোজপুর ডিসির কাছে দুটি সাহায্যের আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর সুাপারিশ নিয়ে। এদিন   মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরায় তিনি একথা স্বীকার করেণ।

বাদী এবং সাক্ষী মাহবুবুর আলম হাওলাদার ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘর নির্মানের জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেণ। এতে তিনি নিজেকে খালেদা জিয়ার পক্ষের শক্তির লোক হিসেবেও উল্লেখ করেণ বলে আদালতকে অবহিত করেণ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এসময় আদালত বলেন, চিঠির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা সাক্ষীকে।

এছাড়া সাক্ষী মাহবুবুল আলম ২০০৫ সালে পিরোজপুর ডিসির কাছে ঘর নির্মানের জন্য ঢেউটিন চেয়ে  সাহায্যের আবেদন করেণ। দুটি আবেদনেই তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুপারিশ গ্রহণ করেণ। এ বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরার জবাবে সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ব্যক্তি সাঈদী হিসেবে নয়, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এ সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে এ সুপারিশ   গ্রহণ করা হয়।

মাহবুবুল আলম জানান, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেণ, জিয়ানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আপনাকে একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে আপনাকে বাদ দেয়।  এর জবাবে তিনি বলেন, আমার বেলায় এটি হয়নি। জেরায় আইনজীবী বলেন, মাওলানা সাঈদীর সুপারিশে সাহায্য গ্রহণ, বিএনপি আমলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার কারনে জনসাধারণের  দরখাস্তের প্রেক্ষিতে   পিরোজপুর সদরের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা এমএ আউয়াল আপনার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধের জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন।
সাক্ষী মাহবুবুল আলম এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেণ। তখন আইনজীবী তাকে আবার প্রশ্ন করেণ, যেহেতু আপনি একজন অসহায় বেকার তাই ভাতা বন্ধের নির্দেশের পর আপনি এমএ আউয়ালের কাছে যান এবং তার কাছে গিয়ে বলেন, আমাকে বাঁচান। আমি অসহায়।  আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
এ অভিযোগও অস্বীকার করেণ সাক্ষী। এরপর তাকে আবার প্রশ্ন করা হয়  এঘটনার পর এমপি এমএ আউয়াল সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপনাকে দিয়ে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করায়। সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেন, অভিযোগ সত্য নয়।

কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের  স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’, পিরোজপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত  মুক্তিযোদ্ধা  মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উত্তাল দিনগুলি’ পিরোজপর জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘পিরোজপুরের ইতিহাস’, হুমায়াহুন আহমেদের মাতা আয়েশা ফয়েজ রচিত ‘পিরোজপুরের জীবন যে রকম’ বইয়ে পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে  সে তথ্যের সাথে  আপনার দেয়া বক্তব্য এবং তথ্যের মিল নেই। তাই আপনি জেনে  শুনে ঐসব  গ্রন্থের বিষয় গোপন করেছেন বলে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। 
সাক্ষী মাহবুবুল আলম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করলেও   পিরোজপুরে মেজর জিয়া উদ্দিনের  গোয়েন্দা প্রধান কে ছিলেন তা  নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এমনকি গোয়েন্দা হিসেবে ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নিলেও সে ক্যাম্প কোথায় তার নাম বলতে পারেণনি তিনি।

চতুর্থ দিনের জেরা: 
আইনজীবী : সুন্দরবন পিরোজপুরের মধ্যে নয়
সাক্ষী: না
আইনজীবী: সুন্দরবন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট খুলনা  এবং ভারতের কিছু এলাকা নিয়ে।
সাক্ষী: সুন্দরবন এলাকার পরিমান বলতে পারবনা।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিনের ক্যাম্পটি নদীর ওপারে সুন্দরবনের ভেতরে  জানেন?
সাক্ষী: কত ভেতরে তা বলতে পারবনা। আমি বেশিরভাগ শরনখোলা ক্যাম্পে যোগাযোগ করি।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিনের  ক্যাম্পটি কেমন ছিল। তাবু না ক্যাম্প ?
সাক্ষী: এটা ফরেস্ট অফিস ছিল।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্দরবন এলাকায় যেতে কতক্ষন সময় লাগত এবং যানবাহন কি ছিল?
সাক্ষী: একদিনের মধ্যে যাওয়া যেত। এটা আমি গতকাল বারবার বলেছি। ঐখানে আমি ভুল বলেছি। পরিবেশ ভাল থাকলে ১/২  দিনের মধ্যে যাওয়া যায়। কোন কোন সময়  কিছু বেশি লাগে।
আইনজীবী: সুন্দরবন ক্যাম্পে মেজর জিয়াউদ্দিনের অধীনে কয়জন কমান্ডার ছিলেন?
সাক্ষী: সঠিক বলতে পারবোনা।
আইনজীবী:সুন্দরবন ক্যাম্প এলাকার নাম কি?
সাক্ষী: সঠিক বলতে পারবনা।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিনকে কেউ পাহারা দিত কিনা, বা ক্যাম্পের চারপাশে কোন নিরাপত্তা বলয় এবং কমান্ডো বাহিনী ছিল কিনা?
সাক্ষী: ছিলনা।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিনের আশপাশে সবসময় থাকতেন এরকম কারো নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: গনি পসারী, চুন্নু খান, গৌতম হালদার, সুধীর হালদার, শঙ্কর সেন।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিন তার কমান্ডকে বিভিন্ন বিভাগ এবং উপবিভাগে ভাগ করেছিলেন। এসব বিভাগের দায়িত্বশীল কারো নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: তার গোয়েন্দা প্রধানের নাম কি ছিল?
সাক্ষী: মনে হয় কালাম মহিউদ্দিন।
আইনজীবী: গোয়েন্দা কমান্ডের কোন অফিস ছিল:
সাক্ষী: আমার জানামতে  ছিলনা।
আইনজীবী: পরিতোষ পাল নামে কান মুক্তিযোদ্ধাকে চেনেন?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: বাবুল গাজী নামে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: তাম্বুল বুনিয়া, পাঙ্গাসিয়ার নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: পাঙ্গসিয়ার নাম শুনেছি।
এসময় সাক্ষী মাহবুবুল আলমকে পিরোজপুরের বিভিন্ন থানার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের নাম জিজ্ঞেস করলে শুধুমাত্র ভান্ডারিয়া থানার কমান্ডারের নাম  (আজিজ) বলতে পেরেছেন।
আইনজীবী: আপনি কোন গোয়েন্দা প্রশিক্ষন নিয়েছেন?
সাক্ষী: ক্যাম্প থেকে স্বাভাবিক ট্রেনিং নিয়েছি।
আইনজীবী: ঐ ক্যাম্প কোথায়?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: মুক্তিযোদ্ধা  আব্দুল মান্নান, মজিদ খান,  জাহাঙ্গীর বাহাদুর এদের চেনেন?
সাক্ষী: সরাসরি চিনিনা। ঠিকানা বললে চিনতে পারি ।
আইনজীবী: ২০/৭/২০১০ তারিখে দাখিলকৃত অভিযোগে আপনি বলেননি যে, আপনাকে এম এ আউয়াল গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। (সাত নভেম্বর সাক্ষ্যে মাহবুবুল আলম বলেছিলেন, মেজর জিয়াউদ্দিন এবং এমএ আউয়াল তাকে এ দায়িত্ব দেন।)
সাক্ষী: এত চিন্তা তো করিনাই।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিন লিখিত মুক্তিযুদ্ধে সন্দরবনের সেই উত্তাল দিনগুলি’ বইটি পড়েছেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: পিরোজপুর জেলা পরিষদ সরকারিভাবে ‘পিরোজপুর জেলার ইতিহাস’ নামে বই বের করেছেন তা জানেন?
সাক্ষী: না।
এ পর্যায়ে সাক্ষী বইটি না পড়ায় এবং বইয়ের খবর না জানায় বইয়ে কি আছে বা না আছে তা নিয়ে আইনজীবীদের সাক্ষীকে প্রশ্ন করা  থেকে বিরত থাকতে বলেন আদালত।
আইনজীবী: পিরোজপুরে ইতিহাস, মেজার জিয়াউদ্দিনের বইয়ে বর্ণিত ইতিহাসের সাথে আপনার বক্তব্যের সত্যতার মিল নেই বিধায় আপনি ঐ  বই এবং বই সম্পর্কিত তথ্য গোপন করেছেন?
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী:   বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বই বের হয় তা জানেন?
সাক্ষী: আমি পড়ি নাই।
আইনজীবী: এ বইয়েও পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণিত তথ্যের সাথে আপনার দেয়া  বক্তব্যের মিল নেই বিধায় আপনি জেনে শুনে গোপন করেছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আট ডিসেম্বরের পর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত  মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্ব্ েস্বাধীনতা বিরোধী, পিসকমিটি, রাজাকার, আল বদর আল  বাহিনীর লোকদের ধরে  জাহাজে করে সুন্দরবনের একটি কিলিং স্কোয়াডে নিয়ে হত্যা করা হয় তা জানেন?
সাক্ষী: মিথ্যা।
আইনজীবী: সেকেন্দার শিকদার, দানেস মোল্লা, মোসলমে মাওলানা, দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, সৈয়দ আফজাল  এদের গ্রেফতার করা হয় তা জানেন?
সাক্ষী: সত্য নয়। শুধু সেকেন্দারকে গ্রেফতার করা হয়।
আইনজীবী: স্বাধীনতার পর পিরোজপুর এলাকায় দালাল আইনে মামলা হয় তা জানেন?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: মেজর জিয়াউদ্দিন তখন মেজর ছিলেননা। আপনার সাথে তার   সম্পর্ক না থাকায় বিষয়টি জানতেননা সত্য?
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনার সাথে মেজর জিয়ার কোন পরিচয় ছিলনা, তিনি আপনাকে গোয়েন্দা হিসেবেও নিয়োগ করেণনি, আপনি সুন্দরবনে কখনো যাননি  এবং আপনি মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেননা?
সাক্ষী: আদৌ সত্য নয়।
আইনজীবী: জিয়ানগর মুক্তিযোদ্ধা  কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক আপনাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
সাক্ষী: আমার বেলায় হয়নি।
আইনজীবী: আপনি কবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন?
সাক্ষীধ খালেদা জিয়ার সময়।
আইনজীবী: ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে আপনি অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী  এবং পিরোজপুর ডিসির কাছে সাহায্য  চেয়ে যে আবেদন করেণ তাতে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুপারিশ গ্রহণ করেণ?
সাক্ষী: ব্যক্তি সাঈদী হিসেবে নয়, সংসদ সদস্য হিসেবে নিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল তা যোগাড় করে।
আইনজীবী: আপনি তখন নিজেকে খালেদা জিয়ার পক্ষের শক্তির লোক হিসেবে আখ্যায়িত করেণ?
এ পর্যায়ে আদালত হস্তপেক্ষ করে বলেন, চিঠির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা।
আইনজীবী: বিএনপি আমলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া, মাওলানা সাঈদীর সুপারিশে সাহায্য পাওয়া এসব কারণ জনতার  দরখাস্তের প্রেক্ষিতে বর্তমান এমপি এম এ আউয়াল মৌখিকভাবে আপনার ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেয়?
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: যেহেতু আপনি অসহায় বেকার তাই এ নির্দেশের পর এম এ আউয়ালের কাছে যান এবং ভাতা বন্ধ না করার অনুরোধ করেণ। আপনি বলেন, আমি অসহায়। আমাকে বাঁচান। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনার এই দুর্বলতার সুযোগে বর্তমান এমপি এমএ আউয়াল সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপনাকে দিয়ে এই মিথ্যা মামলা করিয়েছেন?
সাক্ষী: সত্য নয়।
এ পর্যায়ে মাওলানা সাঈদীর নাম নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেণ আইনজীবী। সাক্ষী মাহবুবুল আলম সাত নভেম্বর সাক্ষ্য দেয়ার সময় “দেলোয়ার হোসাইন বর্তমানে সাঈদী” এভাবে উচ্চারণ করেণ। কিন্তু তিনি  লিখিত যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাতে কোথাও সাঈদী  নামের পূর্বে ‘বর্তমান’ শব্দটি যোগ করেণনি বলে আদালতকে জানান আইনজীবী কফিলউদ্দিন । আদালত তখন বলেন নাম নিয়ে অনেক হয়েছে।  এর সাথে কেসেরই বা কি সম্পর্ক।  তখন কফিল উদ্দিন বলেন, পিরোজপুরে দেলোয়ার হোসেন নামে সত্যিই একজন রাজাকার ছিল। সেজন্য বিষয়টি পরিষ্কার করা  দরকার। এরপর আদালত অনুমতি দিলে আইনজবিী কফিল উদ্দিন বলেন, মাওলানা সাঈদী তিনবার  পিরোজপুর থেকে নির্বাচনের সময় যেসব পোস্টার, ছেপেছেন এবং অন্য যেসব  কাগজপত্রে তার নাম জনসম্মুখে হাজির করা হয়েছে তার কোথায়ও  সাঈদী শব্দের আগে ‘বর্তমানে’ কথাটি ছিলনা এবং সবর্ত্রই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী লিখেছেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে তাকে প্রশ্ন করা হয় সাক্ষ্য দেয়ার সময় আপনি মাওলানা সাঈদীর নাম এভাবে বলেননি। এ প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী মাহবুবুল আলম সত্য বলে স্বীকার করেন।
আইনজীবী: আল্লামা সাঈদী তিনবার নির্বাচনের সময় মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছিলেন?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: উমেদপুর নামক যে গ্রামে বিশাবালীকে সাঈদীর নির্দেশক্রমে গুলি করে হত্যার কথা বলা হয়েছে সেই উমেদপুরে তিনি ২০০১ সালে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেণ?
সাক্ষী: সত্য
আইনজীবী: আপনার গ্রাম টেংরাটিলা, এবং পারেরহাটের আশপাশের কেন্দ্রে যেখানে তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানেও  তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান?
সাক্ষী: জি:
আইনজীবী: তিনটি নির্বাচনেই তিনি বেশি ভোট পান?
সাক্ষী: বেশি কম আছে তবে টোটালে তিনি লিড ছিলেন।
আইনজীবী: বর্তমান এমপি আউয়াল সাহেবের গ্রাম শঙ্কর পাশায়ও তিনি ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বেশি ভোট পান?
সাক্ষী: :শুনেছি।
আইনজীবী: মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম নিরু, লিয়াকত আলী বাদশা, আব্দুল সালা, হাবিবুর রহমান, বাতেন এদের চেনেন?
সাক্ষী: চিনতাম। বাতেন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেননা।
আইনজীবী: খসরুর আলম ছিলেন পারের হাটের কমান্ডার?
সাক্ষী: আমি নেতৃত্ব দেখিনাই।
আইনজীবী: এসব বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধের নেতৃত্বে বিরাট একটি বাহিনী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা কাজ করেছেন তা আপনি জানেন? তারা কখনো আপনার মত এসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে করেণি।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনার এলাকায় এসডিও ফয়জুর রহমানের নাম  শুনেছেন?
সাক্ষী: শুনেছি।
আইনজীবী: তার স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ স্বাধীনতার    পর  ফয়জুর রহমানের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পিরোজপুর আদালতে জানেন?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: সেখানে মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ নেই বিধায় আপনি ঐ তথ্য গোপন করেছেন সত্য?
সাক্ষী: সত্য নয়।

(অভিযোগ করা হয়েছে  যে, ১৯৭১ সালের ৫ মে মাওলানা সাঈদীর সহায়তায় এবং দেখানো মতে পাক বাহিনী হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমান সহ  চার সরকারী কর্মকর্তাকে বলেশ্বর নদীতে হত্যা করা হয়।  অথচ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী ১৯৭২ সালের মামলায় যাদের আসামী করেণ সেখানে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।)

আইনজীবী: মাওলানা সাঈদী স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে কখনো আত্মগোপন করেণনি পলাতক করেণনি এবং স্বাধীনতার পরপরই আবার ওয়াজ মাহফিল করেছেন
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনার বাড়ির রাস্তা কাচা হওয়ায় ১৯৭১ সালে সেখানে কদাচিত রিক্সা চলত?
সাক্ষী: জি।
এরপর আরো কিছু প্রশ্নের পর আজকের  মত জেরা শেষ হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন