বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ

মেহেদী হাসান, ২০/১/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে শেষ হল এ মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম। যেকোনদিন ঘোষনা করা হবে রায়।

আজ দিনব্যাপী যুক্তি পেশ করে রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি পেশ করে এ মামলায়। পরে আসামী পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে । গত মঙ্গলবার আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। আজ রাষ্ট্রপক্ষ আসামী পক্ষের  উপস্থাপিত যুক্তির পাল্টা জবাব দেয় । রাষ্ট্রপক্ষে আজ  সৈয়দ হায়দার আলী, মোহাম্মদ আলী এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি পেশ করেন।

আজ সকালে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে। চারটা ৩৫ মিনিটের সময় শেষ হয় যুক্তি উপস্থাপন। এরপর আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের সময় বিভিন্ন দেশের বিচারের রায় রেফারেন্স আকারে পেশ করেছে। এসব রায়কে তারা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, ভুল ব্যাখ্যা করেছে। এর মাধ্যমে তারা আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। আমরা  তাদের পেশ করা রায় থেকে দেখাতে পারব যে তারা কিভাবে এসব রায়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে উদাহরন হিসেবে। আইনী যুক্তি  উপস্থাপনের নামে তারা কূটতর্ক করেছে, কুযক্তি দেখিয়েছে ।  আলী আহাসন মোহাম্মদ মুজাহিদ এর মামলায় আসামী পক্ষ যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তা তারা এ মামলায় পেশ করেছে ডকুমেন্ট আকারে।
তাজুল ইসলাম বলেন, এসবের জবাব দেয়া দরকার আমাদের। এজন্য কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় দরকার। তবে আদালত এ আবেদন গ্রহণ করেনি।

গত ১৩ নভেম্বর মাওলানা নিজামীর মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। হরতালের কারনে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা পরপর চারদিন ট্রাইব্যুনালে  না আসায় তাদের যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করে ওই দিন রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করে ট্রাইব্যুনাল। আসামী পক্ষ অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ চেয়ে আদেশ পুনরায় বিবেচনার আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করে এবং গত রোববার থেকে  যুক্তি উপস্থাপন ফের শুরু হয়।

যুক্তি উপস্থাপন শেষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করে অভিযোগ প্রমানে সক্ষম হয়েছি।
অপরদিকে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে অপক্ষেমান সাংবাদিকদের বলেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কোন বিশ্বাযোগ্য ডকুমেন্ট হাজির করতে পারেনি। যেসব সাক্ষ্য প্রমান তারা হাজির করেছে তাতে মাওলানা নিজামীকে একমিনিটিও সাজা দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করছি তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন।

গত বছর ২৮ মে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র  এবং বৃদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট  ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ ছিলনা। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ১৬টি অভিযোগের মধ্যে  বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে আলাদা কোন অভিযোগ ছিলনা। তবে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকে আলাদা একটি অভিযোগ হিসেবে গন্য করে চার্জ গঠন করে।

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ  একজন তদন্ত কর্মকর্তা এবং ২ জন জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ  মোট ২৬ জন সাক্ষী হাজির করে। এর মধ্যে সপ্তম সাক্ষী প্রদীপ কুমার দেব নামে একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ বৈরি ঘোষনা করে। কারণ সে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি এবং মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেনি।
অপরদিকে মাওলানা নিজামীর পক্ষে তার ছেলেসহ মোট চারজন সাক্ষী হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষে মোট চারজন সাক্ষীর সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছিল।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সংক্রান্ত একটি মামলায় মাওলানা নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন জাতীয় প্রেসকাব চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছর ২ আগস্ট তাকে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে  চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, আসামী পক্ষে  অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, নাজিব মোমেন, তারিকুল ইসলাম, আসাদ উদ্দিন, হাসানুল বান্না সোহাগ এবং আমিনুল হক বাপ্পি অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন