মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরো এক সাক্ষীর জবানবন্দী অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ
ক্স সাঈদীকে হাজির করা হল ট্রাইব্যুনালে
ক্স তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল
মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে আরো একজন সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করল ট্রাইব্যুনাল (১)। অর্থাৎ তদন্তকালে সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল।
নতুন যে সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম মুকুন্দ চক্রবর্তী। তিনি গত ২১ এপ্রিল মারা যাওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানায়। গতকাল বুধবার এ আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ট্রাইব্যুনালে আবেদন উপস্থাপন করেন।
এ নিয়ে মোট ১৬ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল। এর আগে গত ২৯ মার্চ এক আদেশের মাধ্যমে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাদের অনুপস্থিতিতে।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন জমা দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী আদালতে আদৌ হাজির করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ওই ৪৬ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তদন্তকালে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা যেন তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এটি ছিল আবেদনের বিষয়।
৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব কারণ জানানো হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে সাক্ষীর অসুস্থতা, সাক্ষী খুজে না পাওয়া, সাক্ষী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং মাওলানা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকি দেয়ার কারনে সাক্ষীদের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া। ২৯ মার্চ ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে এই ৪৬ জনের মধ্য থেকে ১৫ জনের আবেদন গ্রহণ করে এবং ৩১ জনের আবেদন বাতিল করেন। গতকাল মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম ছিল ৪৬ জনের তালিকায় ৩৫ নম্বরে এবং বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।
আবেদনের বিরোধীতায় মিজানুল ইসলামের যুক্তি :
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম মুকুন্দ চক্রবর্তীর আবেদন গ্রহনের বিরোধীতা করে ট্রাইব্যুনালে বলেন, ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের তারা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তারা যে কারণ দেখিয়েছে সেগুলো হল একজন সাক্ষীর অসুস্থতা, চার জন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। বাকী ৬ থেকে ১৯ নং ক্রমিকে বর্ণিত ১৪ জন সাক্ষী
বিষয়ে বলা হয়েছে আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকির কারনে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
এই ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে কারণ দেখানো হয়েছে সে বিষয়ে আপনারা ১৫ জনের বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বাকী ৩১ জনের বিষয়ে যে কারণ দেখানো হয়েছে তাতে আপনারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিধায় তাদের জবানবন্দী আপনারা গ্রহণ না করে বাতিল করেছেন। আজ মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহনের আবেদন তারা করেছেন তার নাম ছিল ওই বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে। ৪৬ জনের তালিকায় তার নাম ছিল ৩৫ নম্বর সিরিয়ালে। তাকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো, খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা বা সে আত্মগোপনে চলে গেয়ে এ জাতীয় কোন কারণ তখন হাজির করতে পারেনি তখন। সুতরাং যার আবেদন তখন গ্রহণ করা আপনারা যৌক্তিক মনে করেননি এখন সে মারা যাবার পরে কি কারনে তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যৌক্তিক হতে পারে?
এসময় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তখন যে কারনে তার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি সেটি এখন আর বিদ্যমান নেই। এখন সে মারা গেছে। এর চেয়ে বড় কারণ আর নেই। আইনের ১৯.২ ধারায় সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার যে কারণ তার মধ্যে এক নম্বর কারণ বলা হয়েছে সাক্ষী যদি মারা যায়। এ সাক্ষী মারা গেছে। এখন তার জবানবন্দী গ্রহনের অসুবিধা কোথায়?
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনার নিকট আমার প্রশ্ন, প্রথমে গ্রহণ করা হয়নি বলে পরে মারা গেলেও গ্রহণ করা যাবেনা এ বিষয়ে আইনে কি কোন বাঁধা আছে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, এই সাক্ষীর জবানবন্দী যদি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হত তাহলে তো তারা শুরুতে যখন ৩১ জনের আবেদন বাতিল করা হয়েছে তখনই এদের হাজির করার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা তো আজ পর্যন্ত মুকুন্দ চক্রবর্তীকে কখনো হাজির করার কোন চেষ্টাই করেনি। কাজেই তার জবানবন্দী যে গুরুত্বপূর্ণ এ দাবির যৌক্তিকতা কোথায়?
শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল মুকুন্দ চক্রবর্তীর জবানবন্দী গ্রহণ করে আদেশ দেন।
এদিকে ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৭ এবং ১৯ মার্চ যে দুটি রিপোর্ট প্রসিকিউশন বরাবার দাখিল করেছিল তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেরার করার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সে আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
মাওলানা সাঈদীকে হাজির করা হল ট্রাইব্যুনালে:
প্রায় দুই মাস পর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ তিনি কোর্টে হাজির ছিলেন গত ১৩ জুন।
গতকাল সকালে মাওলানা সাঈদীকে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালের কোর্ট রুমে হাজির করা হয়। তাকে কাঠ গড়ায় না উঠিয়ে কোর্টরুমের আইনজীবীদের বেঞ্চের পাশে হুইল চেয়ারে বসানো হয়। কিছুক্ষন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করায় বেঞ্চে বসেন। এরপর বেঞ্চে শুয়ে পড়েন মাওলানা সাঈদী। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাকে কোর্টরুমে রাখার দরকার নেই। কারাগারে নিয়ে যাওয়া হোক।
গত ১৩ জুন পিতার বিচার উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদী । কোর্ট চলাকালীন অবস্থায় তিনি হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর ওইদিনই মারা যান তিনি। মাওলানা সাঈদীও ওইদিন কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। পরেরদিন প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমে ছেলের জানাজা পড়িয়ে মতিঝিল বয়েজ স্কুল মাঠ থেকে কারাগারে নিয়ে যাবার পরপরই বুকে ব্যথা অনুভব করায় দ্রুত মাওলানা সাঈদীকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন বারডেমের ইব্রাহিম কার্ডিয়ান সেন্টার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কারাগারে নেয়ার পূর্বে হাজত খানায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী এবং তিন ছেলে তার সাথে সাক্ষাত করেন।
তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল: মাওলানা সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনকে জেরার জন্য আরো দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। গতকাল তার জেরা শেষ হবার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে একটার পর আর জেরা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং জেরার আরো কিছু বিষয় বাকী থাকায় আরো কিছু সময় চান। এ প্রেক্ষিতে এবং নতুন আরেক সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার কারনে আগামী রবি এবং সোমবার আরো দুই দিন জেরার জন্য সময় বাড়িয় দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ক আদেশে বলেছেন এরপর আর সময় বাড়ানো হবেনা।
সকালে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক।
জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : পিরোজপুরের যেসব সাক্ষী অনুপস্থিত তাদের কারো বাড়িতেই আপনি প্রসেস (সমন) নিয়ে যাননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : কার কার বাড়ি গিয়েছিলেন তাহলে?
উত্তর : নাম বলতে পারছিনা। তবে সাক্ষীদের হাজির করার কিছু প্রসেস (সমন) আমার কাছে ছিল।
প্রশ্ন : আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি এবং ভয়ভীতির কারনে ৬ হতে ১৯ নং সাক্ষী আত্মগেপান করেছে বিধায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৪৬ সাক্ষী বিষয়ক দরখাস্তে। সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে এটি দেখেছে এমন কতজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পেয়েছেন?
উত্তর : ১৫/১৬ জন সাক্ষী আছে। তবে ঐ মুহুর্তে তাদের হাতে অস্ত্র ছিলনা। তবে তারা চিহ্নিত স্থানীয় অস্ত্রধারী লোক এবং ডাকাত বলে পরিচিত।
প্রশ্ন : এই ১৫/১৬ জন ব্যক্তির পরিচয় সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ আছে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : সাক্ষীদের এই ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়েছে?
উত্তর : হয়েছে।
প্রশ্ন : ডাকাত শামীম বাদে অন্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে থানা থেকে আপনি কোন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : আমি তদন্ত সংস্থার কোঅর্ডিনেটর বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। । এ প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : দরখাস্তে বর্নিত অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবেনা মর্মে আপনি কোন প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীবৃন্দ) কাছে দাখিল করেন নাই।
উত্তর : ১৭ এবং ১৯ মার্চের ওই দুটি প্রতিবেদন বাদে অন্য কোন প্রতিবেদন আমি দেইনি।
গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মো: তারিকুল ইসলাম প্রমুখ
ক্স সাঈদীকে হাজির করা হল ট্রাইব্যুনালে
ক্স তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল
মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে আরো একজন সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করল ট্রাইব্যুনাল (১)। অর্থাৎ তদন্তকালে সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল।
নতুন যে সাক্ষীর জবানবন্দী তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম মুকুন্দ চক্রবর্তী। তিনি গত ২১ এপ্রিল মারা যাওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানায়। গতকাল বুধবার এ আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ট্রাইব্যুনালে আবেদন উপস্থাপন করেন।
এ নিয়ে মোট ১৬ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল। এর আগে গত ২৯ মার্চ এক আদেশের মাধ্যমে ১৫ জনের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাদের অনুপস্থিতিতে।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন জমা দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী আদালতে আদৌ হাজির করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ওই ৪৬ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তদন্তকালে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা যেন তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এটি ছিল আবেদনের বিষয়।
৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব কারণ জানানো হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে সাক্ষীর অসুস্থতা, সাক্ষী খুজে না পাওয়া, সাক্ষী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং মাওলানা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকি দেয়ার কারনে সাক্ষীদের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া। ২৯ মার্চ ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে এই ৪৬ জনের মধ্য থেকে ১৫ জনের আবেদন গ্রহণ করে এবং ৩১ জনের আবেদন বাতিল করেন। গতকাল মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তার নাম ছিল ৪৬ জনের তালিকায় ৩৫ নম্বরে এবং বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।
আবেদনের বিরোধীতায় মিজানুল ইসলামের যুক্তি :
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম মুকুন্দ চক্রবর্তীর আবেদন গ্রহনের বিরোধীতা করে ট্রাইব্যুনালে বলেন, ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের তারা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তারা যে কারণ দেখিয়েছে সেগুলো হল একজন সাক্ষীর অসুস্থতা, চার জন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। বাকী ৬ থেকে ১৯ নং ক্রমিকে বর্ণিত ১৪ জন সাক্ষী
বিষয়ে বলা হয়েছে আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকির কারনে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
এই ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে কারণ দেখানো হয়েছে সে বিষয়ে আপনারা ১৫ জনের বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বাকী ৩১ জনের বিষয়ে যে কারণ দেখানো হয়েছে তাতে আপনারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিধায় তাদের জবানবন্দী আপনারা গ্রহণ না করে বাতিল করেছেন। আজ মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে যে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহনের আবেদন তারা করেছেন তার নাম ছিল ওই বাতিল হওয়া ৩১ জনের মধ্যে। ৪৬ জনের তালিকায় তার নাম ছিল ৩৫ নম্বর সিরিয়ালে। তাকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো, খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা বা সে আত্মগোপনে চলে গেয়ে এ জাতীয় কোন কারণ তখন হাজির করতে পারেনি তখন। সুতরাং যার আবেদন তখন গ্রহণ করা আপনারা যৌক্তিক মনে করেননি এখন সে মারা যাবার পরে কি কারনে তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যৌক্তিক হতে পারে?
এসময় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, তখন যে কারনে তার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি সেটি এখন আর বিদ্যমান নেই। এখন সে মারা গেছে। এর চেয়ে বড় কারণ আর নেই। আইনের ১৯.২ ধারায় সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার যে কারণ তার মধ্যে এক নম্বর কারণ বলা হয়েছে সাক্ষী যদি মারা যায়। এ সাক্ষী মারা গেছে। এখন তার জবানবন্দী গ্রহনের অসুবিধা কোথায়?
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনার নিকট আমার প্রশ্ন, প্রথমে গ্রহণ করা হয়নি বলে পরে মারা গেলেও গ্রহণ করা যাবেনা এ বিষয়ে আইনে কি কোন বাঁধা আছে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, এই সাক্ষীর জবানবন্দী যদি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হত তাহলে তো তারা শুরুতে যখন ৩১ জনের আবেদন বাতিল করা হয়েছে তখনই এদের হাজির করার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা তো আজ পর্যন্ত মুকুন্দ চক্রবর্তীকে কখনো হাজির করার কোন চেষ্টাই করেনি। কাজেই তার জবানবন্দী যে গুরুত্বপূর্ণ এ দাবির যৌক্তিকতা কোথায়?
শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল মুকুন্দ চক্রবর্তীর জবানবন্দী গ্রহণ করে আদেশ দেন।
এদিকে ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৭ এবং ১৯ মার্চ যে দুটি রিপোর্ট প্রসিকিউশন বরাবার দাখিল করেছিল তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেরার করার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। সে আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
মাওলানা সাঈদীকে হাজির করা হল ট্রাইব্যুনালে:
প্রায় দুই মাস পর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ তিনি কোর্টে হাজির ছিলেন গত ১৩ জুন।
গতকাল সকালে মাওলানা সাঈদীকে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালের কোর্ট রুমে হাজির করা হয়। তাকে কাঠ গড়ায় না উঠিয়ে কোর্টরুমের আইনজীবীদের বেঞ্চের পাশে হুইল চেয়ারে বসানো হয়। কিছুক্ষন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করায় বেঞ্চে বসেন। এরপর বেঞ্চে শুয়ে পড়েন মাওলানা সাঈদী। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাকে কোর্টরুমে রাখার দরকার নেই। কারাগারে নিয়ে যাওয়া হোক।
গত ১৩ জুন পিতার বিচার উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদী । কোর্ট চলাকালীন অবস্থায় তিনি হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর ওইদিনই মারা যান তিনি। মাওলানা সাঈদীও ওইদিন কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। পরেরদিন প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমে ছেলের জানাজা পড়িয়ে মতিঝিল বয়েজ স্কুল মাঠ থেকে কারাগারে নিয়ে যাবার পরপরই বুকে ব্যথা অনুভব করায় দ্রুত মাওলানা সাঈদীকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন বারডেমের ইব্রাহিম কার্ডিয়ান সেন্টার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কারাগারে নেয়ার পূর্বে হাজত খানায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী এবং তিন ছেলে তার সাথে সাক্ষাত করেন।
তদন্ত কর্মকর্তার জেরা দুইদিন বাড়ল: মাওলানা সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনকে জেরার জন্য আরো দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। গতকাল তার জেরা শেষ হবার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে একটার পর আর জেরা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং জেরার আরো কিছু বিষয় বাকী থাকায় আরো কিছু সময় চান। এ প্রেক্ষিতে এবং নতুন আরেক সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার কারনে আগামী রবি এবং সোমবার আরো দুই দিন জেরার জন্য সময় বাড়িয় দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ক আদেশে বলেছেন এরপর আর সময় বাড়ানো হবেনা।
সকালে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক।
জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : পিরোজপুরের যেসব সাক্ষী অনুপস্থিত তাদের কারো বাড়িতেই আপনি প্রসেস (সমন) নিয়ে যাননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : কার কার বাড়ি গিয়েছিলেন তাহলে?
উত্তর : নাম বলতে পারছিনা। তবে সাক্ষীদের হাজির করার কিছু প্রসেস (সমন) আমার কাছে ছিল।
প্রশ্ন : আসামীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি এবং ভয়ভীতির কারনে ৬ হতে ১৯ নং সাক্ষী আত্মগেপান করেছে বিধায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৪৬ সাক্ষী বিষয়ক দরখাস্তে। সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে এটি দেখেছে এমন কতজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পেয়েছেন?
উত্তর : ১৫/১৬ জন সাক্ষী আছে। তবে ঐ মুহুর্তে তাদের হাতে অস্ত্র ছিলনা। তবে তারা চিহ্নিত স্থানীয় অস্ত্রধারী লোক এবং ডাকাত বলে পরিচিত।
প্রশ্ন : এই ১৫/১৬ জন ব্যক্তির পরিচয় সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ আছে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : সাক্ষীদের এই ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়েছে?
উত্তর : হয়েছে।
প্রশ্ন : ডাকাত শামীম বাদে অন্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে থানা থেকে আপনি কোন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন?
উত্তর : আমি তদন্ত সংস্থার কোঅর্ডিনেটর বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। । এ প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : দরখাস্তে বর্নিত অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবেনা মর্মে আপনি কোন প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীবৃন্দ) কাছে দাখিল করেন নাই।
উত্তর : ১৭ এবং ১৯ মার্চের ওই দুটি প্রতিবেদন বাদে অন্য কোন প্রতিবেদন আমি দেইনি।
গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, মো: তারিকুল ইসলাম প্রমুখ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন