বিচারপতিদের সাথে শাহরিয়ার কবিরের সাক্ষাৎ
ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর আবেদন খারিজ
জামায়াতের কেউ সাক্ষাৎ চাইলে কি আপনারা সাক্ষাৎ দিবেন? শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রশ্ন
মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কার্যক্রম থেকে ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারপতিদের নিজ থেকে সরে দাড়ানোর আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
গত ১২ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর ট্রাইব্যুনালের (২) চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য বিচারপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন।
শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী।। সাক্ষী কর্তৃক এভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সাথে সাক্ষাতের ফলে বিচারপতিদের নিরপক্ষেতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আসামীর ন্যায় বিচার না পাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের আর এ মামলার বিচার কার্যক্রম এবং শুনানিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর দাবি জানিয়ে গত ২৬ আগস্ট ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের প্রতি সরে দাড়ানোর এ আবেদন করা হয়।
গতকাল ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন। রাষ্ট্র পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী শুনানী করেন। উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আবেদনটি নামঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের উক্ত তিনজন বিচারপতি শুনানী গ্রহণ করেন।
আবদেন বাতিলের আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী তা সত্য। কিন্তু তারা আমাদের সাথে সাক্ষাতে মামলার কোন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা ট্রাইব্যুনালের বিবিন্ন সমস্যা যেমন অবকাঠামোগত সমস্যা, নিরাপত্তা সমস্যা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন । তাদের এ সাক্ষাদের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব বা নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি বা কোন পক্ষের স্বার্থও রক্ষা করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষীদের সাথে বিচারপতিদের সাক্ষাতের পর ট্রাইব্যুনাল -২ এ আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কাজ আর চলতে পারেনা। বিচারপতিদের সাথে দুজন সাক্ষীর বৈঠকের পর মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে তাদের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে। কারণ শাহরিয়ার কবির এক পক্ষের নেতা। এ ঘটনার পর বিচারপতিদের এ মামলার বিচার কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ এ হস্তান্তর করা যায়।
আবেদন বাতিলের পর ডিফেন্স টিমের সদস্য অ্যাভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে দুজন সাক্ষী। সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা একান্তে বৈঠক করেছেন। যে মুহুর্তে তারা এ কাজ করেছেন সে মুহূর্তে তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যত চলে গেছে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। বিচারপতিদের একটি আচরনবিধি আছে। সাক্ষীর সাথে এভাবে দেখা করার ঘটনা তাদের আচরন বিধি এবং শপথের পরিপন্থী কাজ। আমরা তাদের আদেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা মনে করি আবেদন বাতিল করার আদেশ একটি ভুল আদেশ। আমরা কতটা ন্যায় বিচার পাব তা নিয়ে আমাদের সংশয় আছে।
শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের যুক্তি:
বিচারপতিদের সাথে সাক্ষীর সাক্ষাতের ঘটনায় কিভাবে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এ কাজ বিচারপতিদের জন্য পক্ষপাতদুষ্ট ঘটনার শামীল হয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের আচরনবিধি, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিচার কার্যক্রমের নজীর তুলে ধরেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, হাইকোর্টে শত শত ঘটনা আছে যেখানে সামান্য ব্যাপারে বিচারপতিরা বিব্রত বোধ করে সরে দাড়িয়েছেন বিভিন্ন মামলা থেকে। অন্য বেঞ্চে সে মামলার শুনানী হয়েছে। আর এখানে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা তার থেকে অনেক গুরুতর। আমরা আজ এখানে যে আবেদন করেছি তা বিচার ব্যবস্থার মান মর্যাদা রক্ষার জন্য। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনে সহায়তার জন্য। সবার ওপরে হল আপনাদের বিবেক এবং আদালতের মর্যাদা। আমরা কোর্টের সে মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। আমরা মনে করি আপনাদের আর এ মামলার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
শাহরিয়ার কবির একজন এক্টিভিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে তার অসংখ্য লেখা লেখি আছে। আলী আহসান মো: মুজাহিদসহ বর্তমানে বন্দী জামায়াত নেতৃবৃন্দকে তিনি যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাদের বিরুদ্ধে তিনি তথ্য সরবরাহ করেছেন এ ট্রাইব্যুনালে। সে তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি। এভাবে তিনি এ মামলার একটি পক্ষ। তিনি এ মামলার সাক্ষী এবং ইতোমধ্যে আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। কাজেই এ ঘটনার পর আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আপনারা কি জামায়াতের এমন কোন নেতাকে সাক্ষাৎ দিবেন যিনি এ বিচার বন্ধের দাবি করে আসছে?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, এরকম কেউ কি চেষ্টা করেছে?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমি একশ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি এরকম কেউ সাক্ষাৎ চাইলে আপনারা সাক্ষাৎ দেবেননা এবং দেয়া উচিতও হবেনা।
বিচারপতিদের আচরনবিধির ৩(৬)(এ) ধারা তুলে ধরে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, কোন বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে বিচারপতি মামলার কাজে নিজেকে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক আচরনবিধির আরো অনেকগুলো ধারার তুলে ধরে বলেন, বিচারপতিদের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয় আসামীর মনে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, বিচার শুরুর অনেক আগে থেকেই শাহরিয়ার কবির আলী আহসান মো: মুজাহিদকে একজন প্রথম সারির যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। ১৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট তৈরিতে তিনি সহায়তা করেছেন। সে কমিশন রিপোর্ট তিনি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ সে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে। এভাবে শাহরিয়ার কবির এ মামলার একটি পক্ষে পরিণত হয়েছেন এবং সর্বোপরি তিনি একজন সাক্ষী।
১২ আগস্ট তারা আপনাদের সাথে দেখা করে গনমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক ১০ জন নেতার বিচার ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন। কাজেই সাক্ষীর সাথে বিচারপতির বৈঠকের পর তাদের আর এ বিচার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ উঠলে অন্য দুজন সদস্য বিচারপতি তার শুনানী শেষে রায় দেন। সেখানে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিবেকের ওপর ছেড়ে দেন। আমরা আজ এখানে আপনাদের শুভ বিবেচনার আশা করছি।
তিনি বলেন ট্রাইব্যুনাল -১ এ একজন সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
শুনানীতে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, শিশির মো: মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর আবেদন খারিজ
জামায়াতের কেউ সাক্ষাৎ চাইলে কি আপনারা সাক্ষাৎ দিবেন? শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রশ্ন
মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কার্যক্রম থেকে ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারপতিদের নিজ থেকে সরে দাড়ানোর আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
গত ১২ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর ট্রাইব্যুনালের (২) চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য বিচারপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন।
শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী।। সাক্ষী কর্তৃক এভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সাথে সাক্ষাতের ফলে বিচারপতিদের নিরপক্ষেতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আসামীর ন্যায় বিচার না পাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের আর এ মামলার বিচার কার্যক্রম এবং শুনানিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিচারপতিদের সরে দাড়ানোর দাবি জানিয়ে গত ২৬ আগস্ট ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের প্রতি সরে দাড়ানোর এ আবেদন করা হয়।
গতকাল ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন। রাষ্ট্র পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী শুনানী করেন। উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আবেদনটি নামঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের উক্ত তিনজন বিচারপতি শুনানী গ্রহণ করেন।
আবদেন বাতিলের আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী তা সত্য। কিন্তু তারা আমাদের সাথে সাক্ষাতে মামলার কোন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা ট্রাইব্যুনালের বিবিন্ন সমস্যা যেমন অবকাঠামোগত সমস্যা, নিরাপত্তা সমস্যা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন । তাদের এ সাক্ষাদের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব বা নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি বা কোন পক্ষের স্বার্থও রক্ষা করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষীদের সাথে বিচারপতিদের সাক্ষাতের পর ট্রাইব্যুনাল -২ এ আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিচার কাজ আর চলতে পারেনা। বিচারপতিদের সাথে দুজন সাক্ষীর বৈঠকের পর মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে তাদের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে। কারণ শাহরিয়ার কবির এক পক্ষের নেতা। এ ঘটনার পর বিচারপতিদের এ মামলার বিচার কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ এ হস্তান্তর করা যায়।
আবেদন বাতিলের পর ডিফেন্স টিমের সদস্য অ্যাভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে দুজন সাক্ষী। সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা একান্তে বৈঠক করেছেন। যে মুহুর্তে তারা এ কাজ করেছেন সে মুহূর্তে তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যত চলে গেছে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। বিচারপতিদের একটি আচরনবিধি আছে। সাক্ষীর সাথে এভাবে দেখা করার ঘটনা তাদের আচরন বিধি এবং শপথের পরিপন্থী কাজ। আমরা তাদের আদেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা মনে করি আবেদন বাতিল করার আদেশ একটি ভুল আদেশ। আমরা কতটা ন্যায় বিচার পাব তা নিয়ে আমাদের সংশয় আছে।
শুনানীতে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের যুক্তি:
বিচারপতিদের সাথে সাক্ষীর সাক্ষাতের ঘটনায় কিভাবে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এ কাজ বিচারপতিদের জন্য পক্ষপাতদুষ্ট ঘটনার শামীল হয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের আচরনবিধি, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিচার কার্যক্রমের নজীর তুলে ধরেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, হাইকোর্টে শত শত ঘটনা আছে যেখানে সামান্য ব্যাপারে বিচারপতিরা বিব্রত বোধ করে সরে দাড়িয়েছেন বিভিন্ন মামলা থেকে। অন্য বেঞ্চে সে মামলার শুনানী হয়েছে। আর এখানে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা তার থেকে অনেক গুরুতর। আমরা আজ এখানে যে আবেদন করেছি তা বিচার ব্যবস্থার মান মর্যাদা রক্ষার জন্য। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনে সহায়তার জন্য। সবার ওপরে হল আপনাদের বিবেক এবং আদালতের মর্যাদা। আমরা কোর্টের সে মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। আমরা মনে করি আপনাদের আর এ মামলার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
শাহরিয়ার কবির একজন এক্টিভিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে তার অসংখ্য লেখা লেখি আছে। আলী আহসান মো: মুজাহিদসহ বর্তমানে বন্দী জামায়াত নেতৃবৃন্দকে তিনি যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাদের বিরুদ্ধে তিনি তথ্য সরবরাহ করেছেন এ ট্রাইব্যুনালে। সে তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি। এভাবে তিনি এ মামলার একটি পক্ষ। তিনি এ মামলার সাক্ষী এবং ইতোমধ্যে আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। কাজেই এ ঘটনার পর আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আপনারা কি জামায়াতের এমন কোন নেতাকে সাক্ষাৎ দিবেন যিনি এ বিচার বন্ধের দাবি করে আসছে?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, এরকম কেউ কি চেষ্টা করেছে?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমি একশ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি এরকম কেউ সাক্ষাৎ চাইলে আপনারা সাক্ষাৎ দেবেননা এবং দেয়া উচিতও হবেনা।
বিচারপতিদের আচরনবিধির ৩(৬)(এ) ধারা তুলে ধরে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, কোন বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে বিচারপতি মামলার কাজে নিজেকে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক আচরনবিধির আরো অনেকগুলো ধারার তুলে ধরে বলেন, বিচারপতিদের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয় আসামীর মনে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, বিচার শুরুর অনেক আগে থেকেই শাহরিয়ার কবির আলী আহসান মো: মুজাহিদকে একজন প্রথম সারির যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। ১৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট তৈরিতে তিনি সহায়তা করেছেন। সে কমিশন রিপোর্ট তিনি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ সে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে। এভাবে শাহরিয়ার কবির এ মামলার একটি পক্ষে পরিণত হয়েছেন এবং সর্বোপরি তিনি একজন সাক্ষী।
১২ আগস্ট তারা আপনাদের সাথে দেখা করে গনমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক ১০ জন নেতার বিচার ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন। কাজেই সাক্ষীর সাথে বিচারপতির বৈঠকের পর তাদের আর এ বিচার কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ উঠলে অন্য দুজন সদস্য বিচারপতি তার শুনানী শেষে রায় দেন। সেখানে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিবেকের ওপর ছেড়ে দেন। আমরা আজ এখানে আপনাদের শুভ বিবেচনার আশা করছি।
তিনি বলেন ট্রাইব্যুনাল -১ এ একজন সাক্ষীর সাথে বিচারপতিরা সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
শুনানীতে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, শিশির মো: মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন