ট্রাইব্যুনাল থেকে বিচারক জহির আহমেদের পদত্যাগ
মেহেদী হাসান
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল দুপুরের পর তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
দুপুর দুইটার সময় ট্রাইব্যুনালে তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের কাছে দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে ফোন করে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি কারণ অসুস্থতার কথা জানান। সরকারের পক্ষ থেকে পদত্যাগের জন্য আপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সত্য নয়। আমি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ তা আপনারা জানেন। আমার পায়ে সমস্যা। অসুস্থতার কারনে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সে কারনেই পদত্যাগ করেছি। অন্য আর কিছু না।
গতকাল দুপুর একটা পর্যন্ত বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর একটার সামান্য আগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দশম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়। এরপর একটার সময় কোর্টে দুপুরের বিরতি ঘোষনা করা হয়। সূত্র জানায় এসময় বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে যান আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে। আইনমন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এরপর দুপুর দুইটায় ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের কেউ কেউ তখনই বিচারক জহির আহমেদের সাথে কথা বলে তার পদত্যাগের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন আহমদের কাছে বারবার সাংবাদিকরা খবরের সত্যতা বিষয়ে জানার জন্য গেলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কিছু না জানিয়ে বলেন আমিও আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি।
দুপুর দুইটার সময় পুনরায় কোর্ট বসে এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শুরু হয়। জহির আহমেদ তখন অনুপস্থিত ছিলেন।
ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে বিচারক জহির আহমেদকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ডিফেন্স টিমের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ কে এম জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন সময়। আমরা আশংকা করছি যে,
সরকার বিচারক জনাব এ কে এম জহির আহমেদ এর স্থলে সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।
বিচারক জহির আহমেদ অসুস্থতার কারনে রমজান মাসে মাঝে মাঝে একঘন্টা দেরিতে কোর্টে আসতেন। পায়ে সমস্যার কারনে তিনি থেরাপি নিতেন এবং এ কারনে কোর্টে দেরিতে আসতেন ।
ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন সময় জহির আহমেদের মতভিন্নতা :
ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের সাথে অপর বিচারপতিদের মতভিন্নতা ছিল। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একটি আবেদনের আদেশে তিনি ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতির সাথে তার মতভিন্নতা দেখা দেয় এবং একবার এ নিয়ে কোর্টে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের ভেতরে তার ব্যাপারে অসন্তোষ ছিল বলে জানা গেছে।
গত ১৩ মার্চ বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদন বাতিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ওই দিন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে যে ছয়টি আবেদন খারিজ করা হয় তার মধ্যে একটি ছিল তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান বিষয়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বিষয়ক আবেদনটি খারিজ করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করে বিচারক একেএম জহির আহমেদ ভিন্ন আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল ছয়টি আবেদনই বাতিল করে দিয়ে আদেশ দেয়ার পর বিচারক জহির আহমেদ বেঞ্চ অফিসারকে ডাকেন ডিকটেশন নেয়ার জন্য। আদেশে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের প্রতি সম্মান রেখে আমি একটি আবেদন বাতিল করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করছি। মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন বাতিল বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি অভিযুক্ত’র উপস্থিতিতে এটি বাতিল করা উচিত ছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত নীতি। কেন তার আবেদনটি বাতিল করা হল এটি জানা অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার। আমি মনে করি এই আবেদনটি ছাড়া অন্য আবেদনগুলো তার অনুপস্থিতিতে বাতিল করা যেতে পারত। এ আদেনটি স্থগিত রাখা যেতে পারত।
গত ১২ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায় আলোচিত ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই আদেশের দিন বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে গত ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে পরবর্তীতে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা তথ্য প্রমান দাখিল করে ১৫ সাক্ষী বিষয়ক আদেশ বাতিল করে রিভিউ আবেদন দাখিল করেছিলেন।
গত ১৯ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি ইস্যুতে বিচারক একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল
হক দুজন একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় জহির আহমেদের করা একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন “আপনি নিজে গনেশকে হাজিরের জন্য প্রসিকিউশন বরাবর কোন প্রসেস ইস্যুর আবেদন করেছিলেন কি-না।”
তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন “আমার নোটে নেই” বলে।
তখন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অন্যসব প্রশ্নের মত এটাতেও নোটে নেই বললেতো হবেনা। আপনাকে বলতে হবে আপনি কোন আবেদন করেছিলেন কি-না। ইয়েস অর নো। এটা তো নোটে থাকা না থাকার বিষয় নয়।
এখান থেকে মতপাথ্যর্ক্যরে সূত্রপাত। এরপর বিচারক জহির আহমেদ তদন্ত কমকর্তাতে বলেন, আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন। আমাকে কিয়ার করেন। তিনি নিজে তদন্ত কর্মকর্তাকে পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন। তৃতীয় প্রশ্নের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারাতি নিজামুল হক আপত্তি উত্থাপন করেন।
বিচারপতি নিজামুল হক জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েন। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডার নেই। তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি। শেষে তৃতীয় প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।
এছাড়া অপর একদিন বিচারক জহির আহমেদ কোর্ট চলাকালে বলেন, আমি ওপেন কোর্টে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করলাম। পরে আবার তিনি ভিন্নমত পোষন করার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেন।
এছাড়া বিভিন্ন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশিটের ওপর শুনানী, অভিযোগ বিষয়ে বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদের বিভিন্ন প্রশ্ন রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি করেছে বিভিন্ন সময়।
২০১০ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হককে এর চেয়ারম্যান করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদ নিয়োগ পান। এছাড়া হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির আরেক সদস্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। চলতি বছর ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হলে প্রথম ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রথম ট্রাইব্যুনালে তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় হাইকোর্টের বিচারপতি আনোয়ারুল হককে।
মেহেদী হাসান
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল দুপুরের পর তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
দুপুর দুইটার সময় ট্রাইব্যুনালে তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের কাছে দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে ফোন করে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি কারণ অসুস্থতার কথা জানান। সরকারের পক্ষ থেকে পদত্যাগের জন্য আপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সত্য নয়। আমি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ তা আপনারা জানেন। আমার পায়ে সমস্যা। অসুস্থতার কারনে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সে কারনেই পদত্যাগ করেছি। অন্য আর কিছু না।
গতকাল দুপুর একটা পর্যন্ত বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর একটার সামান্য আগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দশম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়। এরপর একটার সময় কোর্টে দুপুরের বিরতি ঘোষনা করা হয়। সূত্র জানায় এসময় বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে যান আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে। আইনমন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এরপর দুপুর দুইটায় ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের কেউ কেউ তখনই বিচারক জহির আহমেদের সাথে কথা বলে তার পদত্যাগের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন আহমদের কাছে বারবার সাংবাদিকরা খবরের সত্যতা বিষয়ে জানার জন্য গেলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কিছু না জানিয়ে বলেন আমিও আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি।
দুপুর দুইটার সময় পুনরায় কোর্ট বসে এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ শুরু হয়। জহির আহমেদ তখন অনুপস্থিত ছিলেন।
ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে বিচারক জহির আহমেদকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ডিফেন্স টিমের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ কে এম জহির আহমেদ একজন মেধাবী, প্রাজ্ঞ ও নিরপে বিচারক ছিলেন এবং মামলা পরিচালনার েেত্র প সমুহের অধিকার সংরণের ব্যাপারে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। মামলা পরিচালনা কালে রাষ্ট্রপরে নানা রকম অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আদালত কে রাষ্ট্রপরে বিভিন্ন বেআইনি পদেেপর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় রাষ্ট্রপ প্রকাশ্যেই তার উপর ােভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন সময়। আমরা আশংকা করছি যে,
সরকার বিচারক জনাব এ কে এম জহির আহমেদ এর স্থলে সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন বিচারক নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কুগিত করতে চায়।
বিচারক জহির আহমেদ অসুস্থতার কারনে রমজান মাসে মাঝে মাঝে একঘন্টা দেরিতে কোর্টে আসতেন। পায়ে সমস্যার কারনে তিনি থেরাপি নিতেন এবং এ কারনে কোর্টে দেরিতে আসতেন ।
ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন সময় জহির আহমেদের মতভিন্নতা :
ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের সাথে অপর বিচারপতিদের মতভিন্নতা ছিল। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একটি আবেদনের আদেশে তিনি ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতির সাথে তার মতভিন্নতা দেখা দেয় এবং একবার এ নিয়ে কোর্টে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের ভেতরে তার ব্যাপারে অসন্তোষ ছিল বলে জানা গেছে।
গত ১৩ মার্চ বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদন বাতিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ওই দিন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেননা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে যে ছয়টি আবেদন খারিজ করা হয় তার মধ্যে একটি ছিল তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান বিষয়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বিষয়ক আবেদনটি খারিজ করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করে বিচারক একেএম জহির আহমেদ ভিন্ন আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল ছয়টি আবেদনই বাতিল করে দিয়ে আদেশ দেয়ার পর বিচারক জহির আহমেদ বেঞ্চ অফিসারকে ডাকেন ডিকটেশন নেয়ার জন্য। আদেশে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের প্রতি সম্মান রেখে আমি একটি আবেদন বাতিল করা বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করছি। মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন বাতিল বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি অভিযুক্ত’র উপস্থিতিতে এটি বাতিল করা উচিত ছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত নীতি। কেন তার আবেদনটি বাতিল করা হল এটি জানা অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার। আমি মনে করি এই আবেদনটি ছাড়া অন্য আবেদনগুলো তার অনুপস্থিতিতে বাতিল করা যেতে পারত। এ আদেনটি স্থগিত রাখা যেতে পারত।
গত ১২ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায় আলোচিত ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই আদেশের দিন বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে গত ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে পরবর্তীতে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা তথ্য প্রমান দাখিল করে ১৫ সাক্ষী বিষয়ক আদেশ বাতিল করে রিভিউ আবেদন দাখিল করেছিলেন।
গত ১৯ জুলাই মাওলানা সাঈদীর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি ইস্যুতে বিচারক একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল
হক দুজন একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় জহির আহমেদের করা একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন “আপনি নিজে গনেশকে হাজিরের জন্য প্রসিকিউশন বরাবর কোন প্রসেস ইস্যুর আবেদন করেছিলেন কি-না।”
তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন “আমার নোটে নেই” বলে।
তখন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অন্যসব প্রশ্নের মত এটাতেও নোটে নেই বললেতো হবেনা। আপনাকে বলতে হবে আপনি কোন আবেদন করেছিলেন কি-না। ইয়েস অর নো। এটা তো নোটে থাকা না থাকার বিষয় নয়।
এখান থেকে মতপাথ্যর্ক্যরে সূত্রপাত। এরপর বিচারক জহির আহমেদ তদন্ত কমকর্তাতে বলেন, আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন। আমাকে কিয়ার করেন। তিনি নিজে তদন্ত কর্মকর্তাকে পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন। তৃতীয় প্রশ্নের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারাতি নিজামুল হক আপত্তি উত্থাপন করেন।
বিচারপতি নিজামুল হক জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েন। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডার নেই। তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি। শেষে তৃতীয় প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।
এছাড়া অপর একদিন বিচারক জহির আহমেদ কোর্ট চলাকালে বলেন, আমি ওপেন কোর্টে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করলাম। পরে আবার তিনি ভিন্নমত পোষন করার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেন।
এছাড়া বিভিন্ন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশিটের ওপর শুনানী, অভিযোগ বিষয়ে বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদের বিভিন্ন প্রশ্ন রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি করেছে বিভিন্ন সময়।
২০১০ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হককে এর চেয়ারম্যান করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদ নিয়োগ পান। এছাড়া হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির আরেক সদস্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। চলতি বছর ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হলে প্রথম ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রথম ট্রাইব্যুনালে তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় হাইকোর্টের বিচারপতি আনোয়ারুল হককে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন