বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

বিচারপতি নিজামুল হক আসেননি ট্রাইব্যুনালে// আমার দেশকে ধন্যবাদ জানালেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন

১১/১২/১২ মঙ্গলবার

চেয়ারম্যান বিচারপতি  নিজামুল  হক আজ ট্রাইব্যুনালে আসেননি।  সকালে ট্রাইব্যুনাল বসার কথা থাকলেও বসেনি ।  শেষে সোয়া দুইটায় বিচারপতি নিজামুল হকের অনুপস্থিতিতে বসে ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল এর দুই সদস্য  বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়রুল হক  দৈনিক  আমার দেশ বিষয়ে আদেশের জন্য স্বল্প সময়ের জন্য বসেন এজলাসে। তবে তারা কোন আদেশ দেননি আমার দেশ সম্পর্কে।   বরং বিচারপতি  জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক আমার দেশ, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং  রিপোর্টারকে   ধন্যবাদ জানিয়েছেন  স্কাইপি সংলাপ   ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে। তিনি বলেন নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে আমি বলতে চাই আমার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন।

বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে বেলজিয়ামে অবস্থানরত ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিভিন্ন বিষয়ে স্কাইপি সংলাপ  দৈনিক আমার দেশে ফাঁস করা হয়েছে।  এ রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ এবং আমার দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী আবেদন করেন।  আজ  সকালে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য্য ছিল। আদেশ শোনার জন্য সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত হন।  কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও ট্রাইব্যুনাল না বসায় রেজিস্ট্রার অফিসে যান সাংবাদিকরা। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয় বিচারপতি নিজামুল হক অসুস্থ। দুইটায়  তার অনুপস্থিতিতে বসবে ট্রাইব্যুনাল।
সোয়া দুইটার দিকে ট্রাইব্যুনালে আসেন দুই সদস্য বিচারপতি। চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় কোন আদেশ না দিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন কিছু কথা বলেন  আমার দেশে স্কাইপি সংলাপ ফাঁস হওয়া  এবং  সংলাপে তার নাম আসা প্রসঙ্গে।

এজলাসে বসার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,  সৈয়দ হায়দার আলী (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) কোথায়? তখন প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় তিনি আসতে পারেনিন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিনি আমার দেশ বিষয়ে আবেদনটি রেখেছিলেন। তিনি থাকলে ভাল হত। তার  কাছে এ বিষয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল। আর চেয়ারম্যান মহোদয়ও যেহেতু নেই তাই এ বিষয়ে আমরা আজ কোন আদেশ দিচ্ছিনা। আসামী পক্ষেও কেউ নেই। আগামী বৃহষ্পতিবার  আদেশ দেয়া হবে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে।

এরপর তিনি আমার দেশে স্কাইপি সংলাপ ফাঁস হওয়া বিষয়ে তার নিজের  বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি  বলেন, দৈনিক আমার দেশের প্রতিবেদনে আমার সম্পর্কেও কিছু কথাবার্তা আছে। এ নিয়ে কথা বলা বড় মুশকিল। আমার দেশের রিপোর্ট পড়ে মনে হল আমার সম্পর্কে কারো কোন স্পষ্ট ধারণা নেই।  কারো সম্পর্কে বক্তব্য লেখা বা পড়ার আগে তার সম্পর্কে জেনে বলা বা লেখার কথা কিন্তু ধর্মেও আছে। কিন্তু জ্ঞানী গুনিরা এই নিষিদ্ধ কাজটি করা পছন্দ করেন আজকাল। মনে হয়  এটি কালচারে পরিণত হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে আমি যতটুকু অগ্রসর হয়েছি তা মসৃন ছিলনা। কঠিন সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার কাছে মনে হল বাকী জীবনটাও সংগ্রাম করেই যাবে। ব্যক্তিগত জীবনে, কর্ম জীবনে আমি কোনদিন মিথ্যার আশ্রয় নেইনি। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি  এমন রেকর্ড নেই। রাজনৈতিকভাবে কোন সুযোগ সুবিধা নেইনি আমার জানামতে। কিছু নিন্দুকের  একশ  পার্সেন্ট নির্জলা মিথ্যা মন্তব্যে মাঝে মধ্যে বিচলিত হই মানসিকভাবে। তবে হতাশ হইনা। কারণ মিথ্যা তো মিথ্যাই। তা একদিন হারিয়ে যাবে।
যতটুকু  দায়িত্ব পেয়েছি সেজন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক বন্ধুরাও দায়িত্ব পালনকালে আমার নাম লিখতেন। এটা নিন্দুকদের কাছে খারাপ লেগেছে। যতটুকু জীবনে পেয়েছি সেজন্য  মহান আল্লাহ রব্বুল আল আমিনের কাছে শুকরিয়া।  যতুটুকু ছিলাম সৎ ছিলাম,  সৎ আছি এবং  বাকী জীবনও সৎ থাকব।
সর্বশেষ একটা অনুরোধ করতে চাই। যে আমার দেশ পত্রিকা বিষয়ে আজ আদেশ দেয়ার জন্য বসেছি সেই পত্রিকার সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের একটি কেস আমার কোর্টে এসেছিল যতদূর মনে পড়ে। হাইকোর্টে থাকা অবস্থায় আমি একটি বেঞ্চে তখন সেকেন্ড জাজ ছিলাম এবং জাস্টিস নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রিসাইডিং জাজ।  তখন দুদকের মামলাটি এসেছিল। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাহেব সে মামলায়  এপিয়ার করেছিলেন।   সে মামলায় শুনানী করার পরও  আমাদের মধ্যে যদি কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকত তাহলে সেদিন ওই মামলায় ভিন্ন আদেশ দিতে পারতাম। কিন্তু তা দেইনি। স্টে অর্ডার দিয়ে রুলিং দিয়েছিলাম।

আমার সম্পর্কে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এত বড় বড় হেডলাইন দিয়ে না লিখতেও পারতেন। আমি আবারো বলতে চাই আমার সম্পর্কে এত বড় বড় হেডলাইন দিয়ে আমার দেশ না লিখলেও পারতেন। তারপরও  আমার দেশ,  তার সম্পাদক এবং রিপোর্টারকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে আমি বলতে চাই আমার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। সার্টিফিকেটেও আমার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। আমাকে যে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে তাতেও আমার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন লেখা আছে।
আমি এ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরেছি। দেখা যাক কি হয়।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ দাড়িয়ে বলেন, একথাগুলো  পেপার পত্রিকায় যাতে না আসে সে ব্যাপারে কিছু বলবেন কি-না মাই লর্ড।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কেন বলব। আমি আমার কথা বললাম। তারা সেটা কিভাবে নেয় সেটা তাদের বিষয়। আমার সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা এসেছে সে বিষয়ে তো আমার কোন প্রতিবাদ দেয়ারও অবস্থা নেই। আমি এখানেই যা বলার বলতে পারি। সেটাই বললাম।

এসময়  চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সুলতান মাহমুদ সিমনসহ  আরো বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।

৯ ডিসম্বের আমার দেশ পত্রিকায় স্কাইপ সংলাপ  ফাঁস হবার পরের দিন কোর্ট বসে বিচারপতি নিজামুল হকও আসেন  ট্রাইব্যুনালে বসেন। তার চেহারর দিকে যেন তাকানো যাচ্ছিলনা। তাকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। আসামী পক্ষের কোন আইনজীবী আসলেননা। ফলে দিনের নির্ধারিত কোন মামলা চালানো গেলনা। অল্প কিছুক্ষন থাকার পর তিনি কোর্ট মুলতবি করে উঠে গেলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন