বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

রিভিউ আবেদন শুনানী মুলতবি//কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিতাদেশ বহাল

মেহেদী হাসান, ১১/১২/২০১৩, বুধবার
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণ করা হবে কি হবেনা সে বিষয়ে শুনানী  আগামীকাল বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রিভিউ বিষয়ে শুনানী শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত  আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বহাল থাকবে। এ সময়ের মধ্যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবেনা।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের  আপিল বেঞ্চ আজ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর  স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী গ্রহণ শুরু করেন। শুনানী শেষে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত শুনানী মুলতবি করা হয়। শুনানীর সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে আর নতুন করে কোন আদেশের দরকার নেই। বিষয়টি এখন  কোর্টের  বিবেচানধীন রয়েছে।

শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, শুনানী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কোন উপায় নেই।

শুনানী শেষে এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকর  স্থগিত থাকবে। যখন কোন কিছু সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে এবং সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমি উপস্থিত থাকি, সেেেত্র সরকার নিজে থেকে তো অন্য কোন ধরণের পদপে নেয় না।

মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর শুরুতে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন  আদালতের কাছে আবেদন করেন মৃত্যৃদন্ড কার্যকর বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন যে স্থগিত আদেশ দিয়েছেন তা বর্ধিত করা হোক। আর রিভিউ বিষয়ে শুনানীর জন্য পরবর্তীতে একটা তারিখ ধার্য্য করা হোক। রিভিউ বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত করার আবেদন করেন।

এসময় তিনি মঙ্গলবার রাত ১২টার পর আব্দুল কাদের মোল্লার  মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য  সরকার যেসব  পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা তুলে ধরেন। এরপর তারা কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে চেম্বার বিচারপতির কাছে যান স্টে অর্ডার এবং রিভিউ আবেদন নিয়ে যান সে বিষয়ে বলেন।

আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী উপলক্ষে সকাল থেকে সুপ্রীম কোর্টে ভিড় করতে থাকেন বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এবং আইনজীবী। শুনানী শুরু হবার  আগেই প্রধান বিচারপতির সুবিশাল এজলাস কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। স্থানাভাবে অনেক আইনজীবী আদালত কক্ষের বাইরে দাড়িয়ে থাকেন। একটায় শুনানী বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি হওয়ার পর আসামী পক্ষের আইনজীবীদের ঘিরে ধরেন বিপুল সংখ্যক ফটো সাংবাদিক এবং টিভি ক্যামেরাম্যান। তাদের ভিড় সামলে সামনে এগুতে রীতিমত কসরত করতে হয় আইনজীবীদের।  আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে প্রবেশের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী সরকার বিরোধী স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন আদালত অঙ্গন।

সকাল নয়টার সামান্য পরেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ বসে। এসময় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্থগিতাদেশ বিষয়ে বলেন তিনি এ সম্পর্কে কিছু জানতেননা। তাকে জানানো হয়নি। এছাড়া চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন কর্তৃক কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ প্রদানের পর রাতে প্রধান বিচারপতির সাথে এটর্নি জেনারেল এর বৈঠক বিষয়ে কোন কোন টিভিতে খবর প্রচার বিষয়ে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন এটর্নি জেনারেল । তিনি এ ধরনের কোন বৈঠকের বিষয়ে অস্বীকার করেন। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেনও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর কিছুক্ষনের জন্য বিরতিতে যায় কোর্ট।

৯.৫৫ মিনিটে  পুনরায় কোর্ট বসার আগেই আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন।

রিভিউ আবেদন শুনানী :
৯.৫৫ মিনিটে  পুনরায় কোর্ট বসার পর প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর উদ্দেশে বলেন আপনি কি রিভিউ আবেদনের কপি পেয়েছেন? এটর্নি জেনারেল বলেন, না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি তখন প্রধান বিচারপতি দৃষ্টি  আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গতকাল আমরা তাকে পাইনি। আজ সকালে সেকশনে জমা দিয়েছি।

এরপর প্রধান বিচারপতি এটর্নি জেনারেলকে বলেন  রিভিউ আবেদন বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? এটর্নি জেনারেল প্রথমে বলেন দণ্ড কার্যকর স্টে অর্ডার এর সময় বাড়ানো উচিত হবেনা। আর রিভিউ আবেদনে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল বলেন, আমার  সিরিয়াস অবজেকশন আছে।  এটা অবশ্যই চলতে পারেনা। তিনি ট্রাইব্যুনাল আইন  এবং সংবিধান এর বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে যুক্তি পেশ করে বলেন রিভিউ আবেদন করা এবং গ্রহনের কোন সুযোগ নেই। 

এসময় তিনি বলেন, সংবিধানে ৪৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে “ এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবাতা বিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক  আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা  বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া  গণ্য হইবেনা  কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেনা।”

৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে  “এই সংবিধানে যাহা বলা হাইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের  (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়,  এই সংবিধানের  অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবেনা।”

এটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে এটা স্পস্ট যে, আইসিটিতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রীম কোর্টের  কাছে কোন প্রতিকার চাইতে পারবেননা। ট্রাইব্যুনাল আইনেও রিভিউ বিষয়ে কিছু বলা নেই।

রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর সময় আদালত থেকেই প্রশ্ন করা হয় এ আবেদন চলতে পারে কিনা।
এটর্নি জেনারেল  মাহবুবে আলম শুনানী পেশ করার পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান বিচারপতি শুনানী পেশ করার জন্য বললে তিনি সময় প্রার্থনা করে বলেন, আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। সময় দরকার।
এরপর প্রধান বিচারপতি বেশ কয়েকবার অনুরোধ করে বলেন, শুরু করেন তারপর দেখা যাবে। আগে শুরু করেন। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামীর  রিভিউ আবেদন করার অধিকারের পক্ষে  যুক্তি পেশ শুরু করেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রিভিউ আবেদনের পক্ষে প্রথমে সংবিধানের ১০৫ ধারা পড়ে শোনান : এতে বলা হয়েছে ‘সংসদের যেকোন আইনের বিধানাবলীর-সাপেক্ষে  এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপিল বিভাগের ঘোষিত কোন রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’ 

এরপর সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান তিনি। এখানে  বলা হয়েছে ‘এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামাঞ্জস্য  সকল  প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ , এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (১) । রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন  আইন প্রনয়ন  করিবেন না  এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত  যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (২)।’

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রিভিউ করার বিষয়টি আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা। কোন আইনের বলে সংবিধানে প্রদত্ত  এবং আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা কেড়ে নেয়া যাবেনা।

একটা পর্যন্ত চলা শুনানীর সময় মাঝখানে একঘন্টার বিরতি দেয়া হয় ।

আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদন  শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে  পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এইএচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ।

সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের পর গত ৫ ডিসেম্বর ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আট তারিখ তার বিরুদ্ধে মৃত্য পরোয়ানা জারি করা হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে । এরপরই শুরু হয় যা দণ্ড বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। সোমবার রাতেই  মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতে পারে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে রিভিউ বিতর্ক, জেলকোড কার্যকর নিয়ে বিতর্ক অবসানের পূর্বেই  মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে ঘোষনা দেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করে জেল কর্তৃপক্ষ। কাদের মোল্লার আত্মীয় স্বজনকে শেষ সাক্ষাতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে  রাত আটটায় ডেকে পাঠানো হয়। তারাও শেষ সাক্ষাত করে রাতে বের হয়ে আসেন জেলগেট থেকে। ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে সমগ্র ঢাকাসহ জেলখানার আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। সন্ধ্যা থেকে দেশের এবং বিদেশের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ভিড় করতে থাকেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে। ওদিকে রাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে খবর প্রকাশের পরপরই আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ছুটে যান চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর বাসভবনে। মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আর মাত্র দেঘন্টা বাকি। এমন সময় চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ঘোষনা করেন ফাঁসি কার্যকর করা স্থগিত করা হল বুধবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত। এভাবেই দেশে এবং বিদেশে আলোচিত ও ঘটনাবহুল মামলাটি আরো একবার আলোচনার বিষয় আকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করল গোটা বিশ্বসম্প্রদায়ের।

শুনানী বিষয়ে এটর্নি জেনারেল ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর ব্রিফিং 

রিভিউ আবেদন চলবে কি চলবেনা এ বিষয়ে শুনানী শেষে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার অফিসে বসে সাংবাদিকদের বলেন, এই রিভিউ আবেদন যে গ্রহণযোগ্য না আমি সেই ব্যপারে যুক্তি তুলে ধরে আদালতে আমার বক্তব্য রেখেছি। আমি বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে । এটাই ছিল প্রথম সংবিধান সংশোধনী। তাতে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সংযোজিত করে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যদি কোন আইন করা হয়, সেই আইন যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিকও হয় তবু সেটা বাতিল হবে না। আর ৪৭(ক)তে বলা আছে, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের ক্ষেত্রে সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা প্রযোজ্য হবেনা।  ৪৭(ক)(২) তে আছে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, দন্ডিত তারা কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারবে না। যেহেতু কাদের মোলা মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত হয়েছেন, সেজন্য তিনি যে প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে যে রিভিউ করেছেন, সেটা সংবিধান অনুযায়ী পারেন না।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বার এসোসিয়েশন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন, সংবিধানের ৪৭ ধারাসহ যেসব ধারা এবং অনুচ্ছেদ এর কথা তিনি বলেছেন তার কোন একটিতেও সংবিধানের ১০৫ ধারায় প্রদত্ত রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনেও সংবিধানের এ রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনে কোথাও বলা নেই তিনি রিভিউ করতে পারবেননা। সংবিধান আসামীকে রিভিউ করার অধিকার দিয়েছে এটাই আমাদের দাবি।

কোর্ট রিপোটিং দায়িত্বের সাথে করতে হয়: প্রধান বিচারপতি
মঙ্গলবার রাতে প্রধান বিচারপতি ও এটর্নি জেনারেল এর মধ্যে বৈঠক বিষয়ে টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন আদালতে বলেন, কোর্ট রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্বের সাথে রিপোর্ট করা উচিত। সঠিকভাবে না জেনে এ ধরনের সংবাদ দেয়া ঠিক নয় তা সে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক যে মিডিয়াই হোক না কেন। প্রধান বিচারপতি এসময় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,  এটর্নি জেনারেল রাত ১১টায় প্রধান বিচারপতির সাথে বৈঠক করেন? এটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতিকে দরখাস্ত দিতে পারেন, সাবমিশন রাখতে পারেন। আর তাওতো হয়নি। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য ভাল হয়।

 

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করতে লিগ্যাল নোটিশ আসামী পক্ষের

৯/১২/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জারি করা মৃত্যু পরোয়ানাকে বেআইনী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আসামী পক্ষের আইনজীবী টিম। তাই এই বেআইনী পরোয়ানার ওপর ভিত্তি করে আইন লঙ্ঘন করে যাতে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যান নোটিশ পাঠানো হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পরিচালিত দি ল’ কাউন্সিল থেকে আজ স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি ও ডিআইজপি (কারা অধিদপ্তর), ঢাকা জেলা মেজিস্ট্রেট, ঢাকা জেল সুপার ও জেলার বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে যদি তারা আইন ও বিধান লঙ্ঘন করে বেআইনী পরোয়ানার ভিত্তিতে দণ্ড কার্যকর করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে আমাদের মোয়াক্কেল  আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিবিউ পিটিশন দায়ের করার জন্য।  সংবিধানের ১০৫ ধারা মোতাবেক আমরা রিভিউ আবেদন করব। রিভিউ পিটিশন দায়ের করার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে নতুন বেশ কিছু ভিত্তি এবং যুক্তি আছে। আমরা আশা করি আমাদের রিভিউ আবেদন সফল হবে।
রিভিউ আবেদন করার লক্ষ্যে নিয়ম অনুযায়ী গত ৮ ডিসেম্বর চিফ প্রসিকিউিটর বরাবর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে আসামী পক্ষে। রিভিউ আবেদনের এটা প্রথম পদক্ষেপ। নোটিশে বলা হয় জেলকোডের ৯৭৯ ধারা ভঙ্গ করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ৯৭৯ ধারা অনুযায়ী যে আদালত মৃত্যুদন্ড দেয় সেই আদালতকেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে হয়। কাজেই বেআইনী মৃত্যুপরোয়ানার ভিত্তিতে বেআইনীভাবে দন্ড কার্যকর করা হলে তার তাহলে এর সাথে সংশ্লিষ্টরা  আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 
নোটিশে বলা হয় রিভিউ প্রক্রিয়া শেষ হবার পর এবং মৃত্যুপরোয়ানা জারির পর জেলকোডের বিধান  মোয়াক্কেলকে ২১ দিন সময় দেয়া উচিত দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে।

সাক্ষী নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ কাদের মোল্লার পরিবারের// অপর এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে// প্রকৃত মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে আসেননি//

মেহেদী হাসান, ৯/১২/২০১৩
আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিয়ে জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ।  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী প্রকৃত মোমেনা বেগমকে হাজির না করে তার স্থলে অপর এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে হাজির করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করেছে আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবার।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে আজ জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন আব্দুল কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ার জাহান।

রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগের পক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত আছে। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে যে মোমেনা বেগমের ছবি রয়েছে তাকে হাজির করা হয়নি। তার স্থলে অপর মহিলাকে হাজির করা হয়েছে মোমেনা বেগম সাজিয়ে। তিনি বলেন, জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবির সন্ধান পাওয়ার পরই তারা সাক্ষী নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সানোয়ার জাহান দাবি করেন, সর্বশেষ আমরা জানতে পেরেছি যে, একমাত্র সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেই মোমেনা বেগম আদৌ আদালতে সাক্ষী দিতেই আসনেনি। ক্যামেরা ট্রাইয়ালের নামে গোপন বিচারে ভুয়া একজন মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে আদালতে বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে ।  কিন্তু পরবর্তীতে জল্লাদখানায় সংরক্ষিত প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি দেখে আমাদের আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া মোমেনা বেগম প্রকৃত মোমেনা বেগম ছিলেন না। অথচ এইরকম একজন ভুয়া স্বাক্ষীর তিন জায়গায় প্রদত্ত তিনরকমের বক্তব্যে পরে শুধুমাত্র তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আমরা মনে করি তা নজিরবীহিন এবং এটি একটি ভুল রায়। আমরা মনে করি সংবিধান প্রদত্ত রিভিউ এর সুযোগ পেলে সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়গুলি তুলে ধরার মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় পাল্টে যাওয়া সম্ভব।
সানোয়ার জাহান বলেন, এমতাবস্থায় আমরা সরকার, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশের সকল আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, যে বিচার প্রক্রিয়া এবং সাক্ষী নিয়ে এতবড় জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে একজন নির্দোষ মানুষের জীবন বাচানোর স্বার্থে এই রিভিউ গ্রহণ করে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তসংস্থার মাধ্যমে এই ভয়াবহ জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত করে সত্য উদঘাটন পূর্বক মামলার সঠিক এবং পুন:বিচার করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল ও কন্যা আমাত উল্লাহ পারভিন উপস্থিত ছিলেন। সানোর জাহানের চোখের সমস্যার কারনে হাসান জামিল তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে বলা হয়, গভীর দু:খ এবং বেদনা নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য আজকে আমি আপনদের সামেন উপস্থিত হয়েছে। আপনারা  ইতোমধ্যে জেনেছেন আমার স্বামী আব্দুল কাদের  মোল্লাকে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠর ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। যদিও বিচারিক আদালত আমার স্বামীকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগের ইতিহাসে কালিমা লেপন করে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের চাপে পড়ে সরকার আইন পরিবর্তন করে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপীল করে। এই আপীলের প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

আমাদের জানা মতে বাংলাদেশে শুধু নয় এই উপমহাদেশের ইতিহাসে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া সত্তেও সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক মুত্যুদণ্ড প্রদানের এটাই একমাত্র ঘটনা। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কোথাও আপীল করার সুযোগ নেই। তার অর্থ হচ্ছে আমার স্বামীর হাতে যখন মৃত্যুপরোয়ানা পৌছবে কেবল তখনই তিনি জানবেন কেন তাকে মুত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদলতে আপীল করার সুযোগ তিনি পাবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার অধিকার আমার স্বামীর রয়েছে। আর যেহেতু একজন বিচারপতি ইতিমধ্যেই আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিরোধীতা করেছেন এবং অন্য ৫টি অভিযোগ থেকেও খালাস প্রদান করেছেন এবং সর্বোপরি এই রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপীল করার সুযোগ নেই, তাই রিভিউ দায়েরের বিষয়টি এখানে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে  তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চেষ্টা করছেন বলে আমরা জানতে পারছি। আমরা মনে করি সংবিধান স্বীকৃত রিভিউ এর অধিকার না দিয়ে এবং জেলকোডের বিধান অনুসরণ না করে তড়িঘড়ি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে চেষ্টা করা হচ্ছে তা শুধু অবৈধই নয় তা সার্বজনীন মাবাধিকারের নুন্যতম ধারারও পরিপন্থি।

লিখিত বক্তব্যে সানোয়ার জাহান বলেন,  জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার জীবন সব সময়ই প্রকাশ্য এবং স্বচ্ছ। তিনি কোন গোপন আন্দোলনের সদস্য কিংবা কোন গোপন ব্যক্তি নন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনেক সিনিয়ন নেতাই তাকে কাছে থেকে চেনন এবং জানেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে উদয়ন স্কুল, ১৯৭৭ সালে রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি ১৯৮২-৮৩ সালে সাংবাদিক নেতা হিসাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। অথচ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কেউ কখনও তাকে যুদ্ধপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করেননি অথবা “কসাই কাদের মোল্লা” বলেও ডাকেনি। বিগত ৪০ বছরের তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগও কোথাও উত্থাপিত হয়নি। অথচ আজকে কথিত মোমেনা বেগম নামে একজন মহিলার অসমর্থিত ও অনির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাকে ভয়ঙ্কর খুনি হিসাবে চিহ্নিত করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে সানোয়ার জাহান বলেন, দুনিয়ার সকল মানুষের সামনে আল্লাহ তাআলাকে স্বাক্ষী রেখে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আব্দুল কাদের মোল্লা খুনি হওয়া তো দুরে থাক কথিত অভিযোগসহ কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে কোন দিন জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ার কারণে এবং আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আমার নির্দোষ স্বামীকে বৈরী মিডিয়াকে ব্যবহার করে খুনি হিসাবে জাতীর সামনে উপস্থাপিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যে বিচারে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ঐ একই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সেই বিচারের প্রক্রিয়া বরাবরই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। স্কাইপ কেলেঙ্কারী, সেইফ হাউজ কেলেঙ্কারী, সাক্ষী অপহরণ এবং জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ঘটনা দিয়ে এই ট্রাইব্যুনালের ইতিহাস যেমন কলঙ্কিত হয়েছে তেমনিভাবে গোটা দুনিয়ার সকল মানবাধকার সংগঠনসমহ বিশ্ব সম্প্রদায় এই ত্রুটিপূর্ণ বিচারের সমালোচনা করেছেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসান জামিল বলেন, স্বাধীনতার পর সারা দেশে হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দালাল আইনে অসংখ্য মামলা হয়েছে। মিরপুরেও বিহারী, আক্তার গুন্ডাসহ অসংখ্য লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমার পিতার  বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আক্তার গুন্ডাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আক্তার গুন্ডার বিরুদ্ধে মামলা হল আর আমার পিতার বিরুদ্ধে কোন মামলা হলনা কেন স্বাধীনতার পর? সারা দেশে এত মামলা হল কিন্তু আমার পিতার বিরুদ্ধে শত শত লোক হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, জ্বালাও পেড়াওয়ের এত বড় বড়  অভিযোগ থাকাও সত্ত্বেও কেন কেউ কোন মামলা করেনি? আজকের এই আধুনিক যুগে ২৩/২৪ বছরের একজন যুবকের পক্ষে কি করা সম্ভব? আর ১৯৭১ সালে তো আরো পেছনে ছিলেন তারা। অথচ আমার পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পাকিস্তানী সেনাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অপরাধ সংঘটনে, বিহারীদের এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এত বড় বড় অপরাধ সংঘটন করিয়েছেন। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? আমার পিতা যদি এতলুটপাট এবং এতই প্রভাবশালী হয়ে থাকেন সেসময় তাহলে সে অনুযযায়ী সেখানে তার কিছু বিষয় সম্পত্তিও থাকার কথা। কিন্তু কেউ কি প্রমান করতে পারবেন মিরপুরে  বা অন্য কোথাও আমাদের বিপুল কোন সহায় সম্পত্তি আছে?
তিনি বলেন আমাদের পরিবারের কেউ কোনকালে মিরপুরে থাকেনি। আমার পিতা তখন ফরিদপুরে ছিলেন।
হাসান জামিল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা বিষয়টি ভাল করে তদন্ত করে দেখুন তাহলে আপনাদের সামনে সত্য উদঘাটিত হবে। আপনারা এ বিষয়টা নিয়ে একটু কাজ করুন তাহলে সত্য জানতে পারবেন। তিনি বলেন, আমরা বৈরি মিডিয়ার অপপ্রচারেরও শিকার হয়েছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে হাসান জামিল বলেন, এক সময় আমার পিতা আজকের আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তসহ অনেকের সাথে একসাথে চলাফেরা করেছেন, মিটিং করেছেন, গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তখন তো আওয়ামী লীগের কোন নেতা বলেননি যে আব্দুল কাদের মোল্লা যুদ্ধাপরাধী তার সাথে আমরা কোন আলোচনায় বসবনা? এখন কেন এসব অভিযোগ করা হচ্ছে? হাসান জামিল বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনেই আজ এ মিথ্যা অভিযোগে আমার পিতার বিচার করা হয়েছে। তিনি অন্য কোন দল করলে আজ তার এ বিচার হতনা।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিঠু, ফরিদ উদ্দিন খান, এস এম শাহজাহান কবির, তারিকুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন ।

জেলকোড অমান্য করলে তার দায় জেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে -সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন

মেহেদী হাসান, ৯/১২/২০১৩
দেশের শীর্ষস্থানীয় ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ  বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে জেলকোডের বাইরে একচুলও নড়ার কোন সুযোগ নেই জেল কর্তৃপক্ষের। জেল কর্তৃপক্ষ  যদি  ট্রাইব্যুনালের বেআইনী পরোয়ানা অনুযায়ী দণ্ড কার্যকর করে তাহলে তার দায় দায়িত্ব সম্পর্ণ তাদেরই বহন করতে হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আজ তিনি এ কথা বলেন। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জারি করা মৃত্যু পরোয়ানাকে বেআইনী এবং অবৈধ আখ্যায়িত করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জেলকোডের ৯৭৯ ধারায় বর্নিত আছে ‘যে আদালত মৃত্যুদন্ড দেয় সেই আদালতকেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে হয়’।
তিনি বলেন, মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ তাই আপিল বিভাগ থেকেই মৃত্যুপরোয়ানা জারি করতে হবে; ট্রাইব্যুনাল থেকে নয়। ট্রাইব্যুনাল থেকে যে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেইআইনী। এটি জেলকোডের বাইরে হয়েছে। জেলকোড যদি বেআইনী এ পরোয়ানা অনুযায়ী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে তার দায়দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা এ বেআইনী পরোয়ানার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। কারণ জীবন নিতে হলে আইনগতভাবেই নিতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বেআইনী পরোয়ানার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি সরকারকে। রিট ফাইল করব পরে।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এটা একটি বিশেষ কোর্ট। এখানে বিদ্যমান নিয়ম প্রয়োগ না হলে সমস্যা কি।
এর জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারকেও যদি দণ্ড কার্যকর করতে হয় তাহলে একটা নিয়মের মধ্য দিয়েই তো যেতে হবে। কো একটা নিয়ম তাকে মেনে চলতে হবে। সে নিয়মটা কি? কোন নিয়ম তারা ফলো করবে? যদি জেলকোড ফলো না করে তাহলে নতুন করে তাদের নিয়ম বানাতে হবে। কোন জল্লাদ তলোয়ার দিয়ে কোপ দেবে, পাশে কয়জন লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকবে এ বিষয়ে সরকারকে একটা নিয়ম বানাতে হবে বা মানতে হবে। তিনি বলেন, মূল বিষয় হল মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন করবে জেল কর্তৃপক্ষ। জেল কর্তৃপক্ষকে জেলকোডের বাইরে একচুলও যাবার কোন সুযোগ নেই। তারা যদি যায় তাহলে এর দায় দায়িত্ব তাদের।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আজব দেশ, আজব ঘটনা। ট্রাইব্যুনাল বিশেষ আইনের অধীনে গঠিত। এখানে যদি মৃত্যুদন্ড কার্যকর প্রকৃয়া লেখা না থাকে তাহলে ফৌজাদারি কার্যবিধি অনুযায়ী চলতে হবে। যেহেতু ট্রাইব্যুনাল আইনে মৃত্যুদন্ড বিষয়ে লেখা নেই তাই এ ক্ষেত্রে জেলকোড মেনে চলতে হবে। জেলকোডের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একজন মাত্র সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে এটি একটি বিরল ঘটনা। একজন সাক্ষীর ওপর নির্ভর করে যদি কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় তাহলে সে সাক্ষীকে হতে হবে ফেরেশতা সমতুল্য। কিন্তু যে সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সেই মোমেনা বেগম তিন জায়গায় তিন রকম কথা বলেছেন ঘটনা বিষয়ে। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর, তদন্ত কর্মকর্তা এবং ট্রাইব্যুনালে তিনি তিনরকম বক্তব্য দিয়েছেন ঘটনা বিষয়ে। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি তাদের পরিবারের হত্যার ঘটনা বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন সেখানেও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। ফৌজদারি আইনের বিধান হল একজন সাক্ষী যদি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা বলে একই ঘটনা বিষয়ে তাহলে সেই সাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনায় আনা হয়না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। তাকে তাড়াহুড়া করে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে মর্মে  খবর বের হয়েছে। দেশে আইনের শাসন বিরাজ করছে বলে সরকার দাবি করে । তাই আইনের বাইরে গিয়ে তারা মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে তা বিশ্বাস করিনা।
তিনি বলেন, ইন্দো-পাক উপমহাদেশে আজ পর্যন্ত এমন কোন নজির নেই যে, নিম্ন আদালত কাউকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে তা বাড়িয়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু আমাদের আপিল বিভাগ তা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতে  রায় রিভিউ বা পনুরায় বিবেচনার  সুযোগ থাকে। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে রিভিউর সুযোগ নেই।
রিভিউ আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন করার জন্য রায়ের প্রতিটা লাইন পড়া দরকার কোথায় কোথায় রিভিউ দরকার সেটা জানার জন্য। কিন্তু আজো আমরা সার্টিফাইড কপি পাইনি।
তিনি বলেন, সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে সময় শেষ তাই খুব তাড়াহুড়া করে এগুনো হচ্ছে। তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, আইনের শাসন আছে অন্তত এটুকু প্রমানের জন্য আপনারা নিয়ম মেনে চলুন।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করছে রিভিউ করার সুযোগ নেই। আমরা দাবি করছি আছে। তাই এখন আদালতকেই এ বিষয়ে সমাধান দিতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন করা হলে এবং তা আমলে নেয়া হলে মৃত্যুপরোয়ানা স্থগিত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরপরই আমরা রিভিউ আবেদন করব।

সংবাদ সম্মেলনে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, আসামী পক্ষের আইনজীবী টিমের সদস্য ফরিদউদ্দিন খান, তাজুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম ছাড়াও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মশিউল আলম, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি সাইফুর রহমান, সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ইউসুফ আলী, আব্দুর রাজ্জাক, কামাল উদ্দিন, এস এম শাহজাহান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি

৮/১২/২০১৩
আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যু  পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ এ  পরোয়ানা জারি করেন।

বিকেল ৪টায় ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী লাল কাপড়ে মোড়ানো পরোয়ানার কপি কারা কর্তৃপকে পৌঁছে দেন। পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল কাদের মোলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে আনার পরে পরোয়ানা প্রস্তুত করে তা নির্দিষ্ট তিন স্থানে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে রায়ের কপিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও মো: শাহিনুর ইসলাম স্বার করেন। পরে দুই পৃষ্ঠার  একটি পরোয়ানা খামে করে এবং ৭৯০ পৃষ্ঠার নথিসহ রায়ের কপি লাল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রাইভেটকারে চড়ে নিদিষ্ট স্থানে পৌছানো জন্য নিয়ে যান।

আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে কারাগারে আইনজীবীদের সাক্ষাতের জন্য জেল সুপার বরাবার আবেদন

৮/১২/২০১৩
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে ডিফেন্স টিমের পাঁচ আইনজীবী কারাগারে সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সিনিয়র জেল সুপার বরাবর।

আজ দুপুরের পর আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে সাক্ষাতের কারণ হিসেবে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বিগত ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ মহামান্য আপিল বিভাগ কর্তৃক আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ঐ মামলার আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে আমাদের মোয়াক্কেলের নির্দেশনা সাপেক্ষে আমরা রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি নিতে চাই। এতদমর্মে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করে মামলার রায় পরবর্তী রিভিউ সংক্রান্তে নির্দেশনা এবং পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরামর্শের নিমিত্তে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ একান্তই প্রয়োজনীয় বিধায় আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।’
আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে যেসব আইনজীবী সাক্ষাত করতে চান মর্মে দরখাস্তে  উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট,
ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম  এবং অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মাদ মণির


কাদের মোল্লা মামলা : রিভিউ আবেদনের জন্য নোটিশ করেছে আসামী পক্ষ

৮/১২/২০১৩
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের জন্য নিয়ম অনুসারে সরকারের প্রতি নোটিশ পাঠিয়েছে আসামী পক্ষ। মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে তারা রিভিউ আবেদন করতে চান সে মর্মে মামলার বাদী চিফ প্রসিকিউটরের কাছে নোটিশ পাঠানোর নিয়ম রয়েছে।

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ পিটিশন দায়ের করার জন্য সরকারের প্রতি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে   আজ সন্ধ্যায়  এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন এই নোটিশ প্রেরন করেছেন। এই নোটিশ জারির মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশান দায়ের করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাজুল ইসলাম জানান, তারা এখনো রায়ের সার্টিফাইড কপি পাননি। তবে মৃত্যুদন্ডের আসামী হিসেবে বিনা খরচে একটি কপি পেয়েছেন এবং তার ভিত্তিতে তারা রিভিউ আবেদনের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ডিফেন্স টিম বা আসামী পক্ষ মনে করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করা আব্দুল কাদের মোল্লার একটি সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন দ্বারা এই সংবিধানে বর্ণিত কোন অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় না। সে কারণে রিভিউ দায়েরের জন্য নির্ধারিত ৩০ দিন সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অথবা রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর সাজা বহাল থাকলে সেক্ষেত্রে জেল কোডের বিধান অনুসরনের মাধ্যমেই কেবল সাজা কার্যকর করা যাবে। সংবিধান এবং আইনের এই বিধান অমান্য করে তড়িঘড়ি করে সাজা কার্যকর করা হলে তার দায় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে, জেলকোডেরও বিধান অগ্রাহ্য করে যদি তড়িঘড়ি করে সরকার আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে তাহলে এটি একটি বিচারবিভাগীয় হত্যাকান্ড হিসেবে গন্য হবে।



কাদের মোল্লা মামলা ও হযরত আলী পরিবার হত্যাকান্ড : ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে বিপরীতধর্মী তথ্য

মেহেদী হাসান,৮/১২/২০১৩
আবদুল কাদের মোল্লাকে একটি অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন আপিল বিভাগ।  এ অভিযোগটি হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। দেশের সর্বোচ্চা আদালত বা সুপ্রীম কোর্টের  আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুালের  এ যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে  মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন ।

হযরত আলী পরিবার হত্যা ঘটনায়  বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের   বড় মেয়ে মোমেনা বেগম।
রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায় একমাত্র সাক্ষী হিসেবে মোমেনা বেগমকে হাজির করে ট্রাইব্যুনালে । মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দীতে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং বোনকে ধর্ষনের বিবরন দিয়েছেন।
এদিকে মিরপুরে হযরত আলী লস্করের  পরিবারের হত্যার ঘটনার বিবরন সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতের ভিত্তিতে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ  এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায় মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে তাদের পরিবারের হত্যাকান্ড বিষয়ে যে বিবরন দিয়েছেন তার সাথে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী  তথ্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে।  যেমন ট্রাইবু্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা দেখেছেন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে তার বরাত দিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান তিনি। তাছাড়া ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন হত্যাকান্ডের সময় কাদের মোল্লা ঘটনাস্থলে ছিল কিন্তু  মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে কাদের মোল্লার নামই নেই এ ঘটনা বিষয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কথা :

মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে  বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার,  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ। শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে।

যে হযরত আলী লস্করের পরিবার হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  এবং আপিল বিভাগে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরন রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা  লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন আকারে  সংরক্ষন করা হয়েছে। এখানে হযরত আলী পরিবার হত্যার ঘটনার বিবরন রয়েছে।  মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরন তারা সংগ্রহ করে। প্রতিবেদনের সাথে    মোমেনা বেগমের একটি ছবিও সেখানে  সংযুক্ত রয়েছে।

হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০০৭  তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরন দেন তার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘুর কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন তৈরি করে এবং এখনো ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষিত রয়েছে তা  নিম্নরূপ।

ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।
হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকলে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারিরা হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভেতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রানে বেঁচে যায়। হযরত আলী স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্বা ছিল।
কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম যা বলেছেন :
ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা)  মোমেন বেগমের  সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে।  ফলে সেসময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে  বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের  জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের  ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে  ঘটনা বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে  ঘরে আসলেন এবং  বললেন কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরো বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও  হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।

মোমেনা জানায় সে এবং তার  ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়।  এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যর্থা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক  ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে তাদের পরিবারের ঘটনার    বর্ননা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি।

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে সম্পূর্ণ বিপরতী তথ্য :

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে  সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী তথ্য রয়েছে।

যেমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী মোমেনা বেগম তার জবানবন্দীতে  বলেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং তার বোনকে  ধর্ষনের  ঘটনা দেখেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও ধর্ষনের শিকার হন এবং পরে  অচেতন হয়ে পড়েন। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যায়  মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শশুর বাড়িতে চলে যান । ফলে তিনি প্রানে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে  মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন। সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে  মোমেনা বেগম  তার জবানবন্দীতে বলছেন  কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে এবং  নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। কাদের মোল্লা এবং আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে ধাওয়া করে ঘর পর্যন্ত নিয়ে আসে। এরপর ঘরে ঢুকে তার পিতাকে শার্টের কলার ধরে বাইরে নিয়ে যায়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী   জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সেকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোশন করা যায়না।   
আপিল বিভাগের রায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার রায়ে লিখেছেন মোমেনা বেগম ন্যাচারাল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। বর্বরোচিত এ ঘটনায় তিনি তার পরিবারের সব সদস্যদের হারিয়েছেন। তাকে আসামী পক্ষ বিস্তারিতভাবে জেরা করেছে। কিন্তু তার বর্নিত ঘটনা এবং যেভাবে তিনি ঘটনার বিবরন দিয়েছেন তাকে আসামী পক্ষ দুর্বল করতে পারেনি।

আসামী পক্ষের দাবি : মোমেনা বেগমকে জেরার সময় আসামী পক্ষ দাবি করেছিল ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছে তিনি  আসল মোমেনা নন। আসামী পক্ষ থেকে নয়া দিগন্তকে জানানো হয়েছে তখন তাদের কাছে এ দাবির পক্ষে ডকুমেন্ট ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত হযরত আলী পরিবারের হত্যার বিবরন বেশ পরে তারা সংগ্রহ করে  ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। এ ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর   ট্রাইব্যুনাল তখন তা  নথিভুক্ত করে জানিয়েছিলেন বিষয়টি তারা রায়ের সময় বিবেচনা করবেন। তবে  ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আপিল শুনানীর সময়ও তারা এটি জমা দিলে আপিল বিভাগ থেকে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা জানতে চান এ রিপোর্ট যাদুঘরের কাছ থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সে মর্মে কোন রেকর্ড আছে কি-না এবং কে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাকে তারা হাজির করা হয়েছিল কিনা।  আসামী পক্ষের  প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ প্রশ্নের জবাবে তখন আদালতকে বলেন, আমরা দাবি করছি  আমরা যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি সেটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের  কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এখন মাননীয় আদালত চাইলে  এর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে পারেন। আদালত ইচ্ছা করলে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাউকে এখানে ডেকে জানতে চাইতে পারেন তাদের কাছে এ ধরনের কোন ডকুমেন্ট বা প্রতিবেদন আছে কি-না । তাহলেই প্রমান হয়ে যাবে আমাদের দাবি সত্য কি-না। 

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা  হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে দন্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।  হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিল ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী আওয়ামী লীগ করার কারনে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে  আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।  রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড দেয়।  একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ  আবেদন  শুনানী শেষে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন।



শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লাকে ৫ অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা

মেহেদী হাসান, ৫/১২/২০১৩
রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে একটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে  খালাস দেয়া অভিযোগটিতেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  প্রদান করা হয়  আপিল বিভাগের রায়ে। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ৫টি অভিযোগ থেকেই খালাস দেন। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত একটি মাত্র যাবজ্জীবন সাজা তিনি বহাল রাখেন এবং সেক্ষেত্রেও তিনি আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায় দেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বরের সংক্ষিপ্ত রায়ে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। অর্থাৎ চার জন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে এবং একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে রয়েছেন। ভিন্নমত পোষনকারী বিচারপতির নাম সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ ছিলনা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ  রায় প্রকাশের পর  দেখা গেছে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা অপর চার বিচারপতির সাথে একমত পোষণ করেননি।  সাজার বিষয়ে তিনি ভিন্ন রায় দিয়েছেন। 

রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড দেয়।  একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এ অভিযোগটি হল  মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা । এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর চারটি অভিযোগে প্রদত্ত সাজা বহাল রাখা হয় আপিল বিভাগের রায়ে। অপর দিকে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে তাকে খালাস দিলেও আপিল বিভাগ ওই অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই আপিল বিভাগ সাজা দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ছয়টি সাজার ক্ষেত্রেই ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায় লিখেছেন।  সংক্ষিপ্ত রায়ে ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হয় ৪ অনুপাত ১ ভিত্তিতে।

ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে মোট পাঁচটি অভিযোগে দন্ডিত করে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয় সেটি বহাল রেখেছেন তিনি। ফলে তিনি মোট পাঁচটি অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে।

রায় :
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার অংশের রায়ে বলেছেন, সরকারের দায়ের করা আপিল রনযোগ্য। চতুর্থ অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতির ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিল করে এই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হল। ৬ ন¤¦র অভিযোগে ট্রাইবুনালের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ বাতিল করে তার বদলে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হল। অপরদিকে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার দায়ের করা আপিল খারিজ করা হল।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে ছয় নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান বিষয়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, অপরাধের মাত্রা যদি কাদের মোল্লার সাজার ভিত্তি ধরা হয়, তাহলে অভিযোগ ন¤¦র ৬ এর েেত্র কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ দন্ড প্রদানের েেত্র উপযুক্ততম মামলা যেখানে হত্যা এবং ধর্ষণ ছিল বর্বরোচিত, ঠান্ডা মাথার ও নিষ্ঠুরতম। এই অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এই মামলায় যদি ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ সাজা না দেয় তাহলে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার মতো অন্য কোন মামলা পাওয়া কঠিন হবে।

ট্রাইবুনাল রায়ে বলেছেন আদালতের কাজে বিশ্বাসযোগ্য একমাত্র সাীও সাজা দেওয়ার েেত্র যথেষ্ট। এেেত্র ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীকে ৬ ন¤¦র অভিযোগ প্রমানের েেত্র একমাত্র সাী বিবেচনায় এনেছে। ট্রাইব্যুনাল এেেত্র ভুল করেছে। কারণ, রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাী ছাড়াও রাষ্ট্রপরে ১, ২, ৪, ৭ এবং ৯ ন¤¦র পারিপার্শ্বিক সাী রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীকে সমর্থন করেছে। তাদের স্যা ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে কাদের মোল্লার এই অপরাধ সংঘটনের অসৎউদ্দেশ্য সমর্থণ করে। তার এই অসৎউদ্দেশ্য থেকে এটি পরিস্কার যে, কাদের মোল্লা এ অপরাধ করেছিল।

রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীর স্যাপ্রমান থেকে এই উপসংহারে পৌছান যায় যে, এটি এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী হত্যাকান্ডের ঘটনা ছিল যার জন্য যাবজ্জীবন সাজা অপর্যাপ্ত, মৃত্যুদন্ডই যার উপযুক্ত সাজা।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার রায়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার অপরাধসমূহ এতই পৈশাচিক যে, মৃত্যুদন্ড ছাড়া পৃথিবীর ফৌজদারি আইনের পুস্তকে নির্ধারিত কোন সাজাই তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। একমাত্র মৃত্যুদন্ডই তার প্রাপ্য।

৫ অভিযোগে খালাস দিলেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা  আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ছয়টি অভিযোগের মধ্য থেকে ৫টিতেই খালাস দিয়েছেন । একটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছেন  এবং এ ক্ষেত্রেও তিনি আপিল বেঞ্চের অপর বিচারপতিদের সাথে ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায় দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল আব্দুল কাদের মোল্লাকে । এছাড়া ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজা প্রদান করা চারটি অভিযোগ থেকেও তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ছয়টি অভিযোগের মধ্য থেকে তিনি পাঁচটি অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে।  ছয়টি অভিযোগের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা ট্রাইব্যুনালের একটি রায় তিনি বহাল রাখলেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১ নং অভিযোগ যথা মিরপুরে  পল্লব হত্যার দায়ে ১৫ বছর জেল দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রেখেছেন। অপরদিকে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন তার রায়ে। তিনি বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল অন্যায়ভাবে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২ নং অভিযোগ তথা কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগে ১৫ বছর দণ্ড দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের  এ দণ্ড  বহাল রাখা হয়েছে । বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্ব মিঞা এ অভিযোগেও  আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতির সাথে  ভিন্নমত পোষন করে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি।
আব্দুল কাদের মোল্লাকে ৩ নং অভিযোগ যথা সাংবাদিক খন্দকার  আবু তালেব হত্যার অভিযোগে ১৫ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে এ দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগেও আপিল বিভাগের চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে আসামীকে খালাস দিয়েছেন অভিযোগ থেকে।
চার নং অভিযোগ যথা কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ডের অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। আপিল বিভাগ এ অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ট্রাইব্যুনালের  দেয়া খালাস রায় বহাল রেখেছেন।

৫ নং অভিযোগ যথা  মিরপুর আলুবদি হত্যাকান্ডের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।  আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রেখেছেন। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগ থেকেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়ে লিখেছেন আব্দুল কাদের মোল্লা সেখানে উপস্থিত ছিল এবং এ গনহত্যায় কোন সহযোগিতা করেছে এ মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি। ট্রাইব্যুনাল ভুল করেছে এ সাজা দিয়ে।
মিরপুরে হযরত আলী পরিবারের হত্যাকান্ডে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। আপিল বিভাগের রায়ে এ সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চা সাজা মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ ট্রাইব্যুনালের এ রায় বহাল রাখেন।

রায় প্রকাশ :
জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান আজ দুপুরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে রায় প্রকাশের ঘোষনা দেন। এরপর বিকালে সুপ্রীম কোর্টের ওয়েব সাইটে রায় প্রকাশ করা হয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ  আবেদন  শুনানী শেষে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন। ওইদিন মৃত্যুদন্ডের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষনার আড়াই মাসের মাথায় আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।  । আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের  যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  আলোচিত এ মামলার  আপিল শুনানী গ্রহণ শেষে রায় ঘোষনা করেন।  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় আপিল শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পূর্ণ রায় লিখেছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন রায়ে লিখেছেন তিন বিচারপতির লেখা রায় তিনি পড়েছেন এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে তিনি একমত পোষন করেন। একইভাবে রায়ের প্রতি একমত পোষন করেছেন অপর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।  পূর্নাঙ্গ রায়টি মোট ৭৯০  পৃষ্ঠার।   এর মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ২৫২ পৃষ্ঠা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২২৭ পৃষ্ঠা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ৩১০ পৃষ্ঠা লিখেছেন।

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লার পূণার্ঙ্গ রায় প্রকাশ : ৫ অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা

মেহেদী হাসান, ৫/১২/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান আজ দুপুরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে রায় প্রকাশের ঘোষনা দেন। এরপর বিকালে সুপ্রীম কোর্টের ওয়েব সাইটে রায় প্রকাশ করা হয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ  আবেদন  শুনানী শেষে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন। ওইদিন মৃত্যুদন্ডের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষনার আড়াই মাসের মাথায় আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।  । আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের  যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  আলোচিত এ মামলার  আপিল শুনানী গ্রহণ শেষে রায় ঘোষনা করেন।  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় আপিল শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পূর্ণ রায় লিখেছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন রায়ে লিখেছেন তিন বিচারপতির লেখা রায় তিনি পড়েছেন এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে তিনি একমত পোষন করেন। একইভাবে রায়ের প্রতি একমত পোষন করেছেন অপর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।  পূর্নাঙ্গ রায়টি মোট ৭৯০  পৃষ্ঠার।   এর মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ২৫২ পৃষ্ঠা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২২৭ পৃষ্ঠা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ৩১০ পৃষ্ঠা লিখেছেন।

১৭ সেপ্টেম্বরের সংক্ষিপ্ত রায়ে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। অর্থাৎ চার জন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে এবং একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে রয়েছেন। ভিন্নমত পোষনকারী বিচারপতির নাম সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ ছিলনা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ  রায় প্রকাশের পর  দেখা গেছে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা অপর চার বিচারপতির সাথে একমত পোষণ করেননি।  সাজার বিষয়ে তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড দেয়।  একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এ অভিযোগটি হল  মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী,  তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও    মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা । এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর চারটি অভিযোগে প্রদত্ত সাজা বহাল রাখা হয় আপিল বিভাগের রায়ে। অপর দিকে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে তাকে খালাস দিলেও আপিল বিভাগ ওই অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই আপিল বিভাগ সাজা দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ছয়টি সাজার ক্ষেত্রেই ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায় লিখেছেন।  সংক্ষিপ্ত রায়ে ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হয় ৪ অনুপাত ১ ভিত্তিতে।

ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে মোট পাঁচটি অভিযোগে দন্ডিত করে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয় সেটি বহাল রেখেছেন তিনি। ফলে তিনি মোট পাঁচটি অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে।

রায় :
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার অংশের রায়ে বলেছেন, সরকারের দায়ের করা আপিল রনযোগ্য। চতুর্থ অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতির ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিল করে এই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হল। ৬ ন¤¦র অভিযোগে ট্রাইবুনালের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ বাতিল করে তার বদলে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হল। অপরদিকে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার দায়ের করা আপিল খারিজ করা হল।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে ছয় নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান বিষয়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, অপরাধের মাত্রা যদি কাদের মোল্লার সাজার ভিত্তি ধরা হয়, তাহলে অভিযোগ ন¤¦র ৬ এর েেত্র কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ দন্ড প্রদানের েেত্র উপযুক্ততম মামলা যেখানে হত্যা এবং ধর্ষণ ছিল বর্বরোচিত, ঠান্ডা মাথার ও নিষ্ঠুরতম। এই অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এই মামলায় যদি ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ সাজা না দেয় তাহলে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার মতো অন্য কোন মামলা পাওয়া কঠিন হবে।

ট্রাইবুনাল রায়ে বলেছেন আদালতের কাজে বিশ্বাসযোগ্য একমাত্র সাীও সাজা দেওয়ার েেত্র যথেষ্ট। এেেত্র ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীকে ৬ ন¤¦র অভিযোগ প্রমানের েেত্র একমাত্র সাী বিবেচনায় এনেছে। ট্রাইব্যুনাল এেেত্র ভুল করেছে। কারণ, রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাী ছাড়াও রাষ্ট্রপরে ১, ২, ৪, ৭ এবং ৯ ন¤¦র পারিপার্শ্বিক সাী রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীকে সমর্থন করেছে। তাদের স্যা ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে কাদের মোল্লার এই অপরাধ সংঘটনের অসৎউদ্দেশ্য সমর্থণ করে। তার এই অসৎউদ্দেশ্য থেকে এটি পরিস্কার যে, কাদের মোল্লা এ অপরাধ করেছিল।

রাষ্ট্রপরে ৩ ন¤¦র সাীর স্যাপ্রমান থেকে এই উপসংহারে পৌছান যায় যে, এটি এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী হত্যাকান্ডের ঘটনা ছিল যার জন্য যাবজ্জীবন সাজা অপর্যাপ্ত, মৃত্যুদন্ডই যার উপযুক্ত সাজা।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার রায়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার অপরাধসমূহ এতই পৈশাচিক যে, মৃত্যুদন্ড ছাড়া পৃথিবীর ফৌজদারি আইনের পুস্তকে নির্ধারিত কোন সাজাই তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। একমাত্র মৃত্যুদন্ডই তার প্রাপ্য।

৫ অভিযোগে খালাস দিলেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা  আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ছয়টি অভিযোগের মধ্য থেকে ৫টিতেই খালাস দিয়েছেন । একটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছেন  এবং এ ক্ষেত্রেও তিনি আপিল বেঞ্চের অপর বিচারপতিদের সাথে ভিন্নমত পোষন করে ভিন্ন রায় দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল আব্দুল কাদের মোল্লাকে । এছাড়া ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজা প্রদান করা চারটি অভিযোগ থেকেও তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ছয়টি অভিযোগের মধ্য থেকে তিনি পাঁচটি অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে।  ছয়টি অভিযোগের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা ট্রাইব্যুনালের একটি রায় তিনি বহাল রাখলেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১ নং অভিযোগ যথা মিরপুরে  পল্লব হত্যার দায়ে ১৫ বছর জেল দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রেখেছেন। অপরদিকে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন তার রায়ে। তিনি বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল অন্যায়ভাবে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২ নং অভিযোগ তথা কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগে ১৫ বছর দণ্ড দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের  এ দণ্ড  বহাল রাখা হয়েছে । বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্ব মিঞা এ অভিযোগেও  আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতির সাথে  ভিন্নমত পোষন করে  আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি।
আব্দুল কাদের মোল্লাকে ৩ নং অভিযোগ যথা সাংবাদিক খন্দকার  আবু তালেব হত্যার অভিযোগে ১৫ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে এ দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগেও আপিল বিভাগের চার বিচারপতির সাথে ভিন্নমত পোষন করে আসামীকে খালাস দিয়েছেন অভিযোগ থেকে।
চার নং অভিযোগ যথা কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ডের অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। আপিল বিভাগ এ অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ট্রাইব্যুনালের  দেয়া খালাস রায় বহাল রেখেছেন।

৫ নং অভিযোগ যথা  মিরপুর আলুবদি হত্যাকান্ডের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।  আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রেখেছেন। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ অভিযোগ থেকেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়ে লিখেছেন আব্দুল কাদের মোল্লা সেখানে উপস্থিত ছিল এবং এ গনহত্যায় কোন সহযোগিতা করেছে এ মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি। ট্রাইব্যুনাল ভুল করেছে এ সাজা দিয়ে।
মিরপুরে হযরত আলী পরিবারের হত্যাকান্ডে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। আপিল বিভাগের রায়ে এ সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চা সাজা মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ ট্রাইব্যুনালের এ রায় বহাল রাখেন।



বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমি পেইড সাক্ষী নই : কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী

মেহেদী হাসান, ৩/৭/২০১২, মঙ্গলবার
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।  আজ প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন  মোজাফফ আহমেদ খান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ  আব্দুল কাদের মোল্লার বিচার চলছে।
স্যা গ্রহণের এক পর্যায়ে সাক্ষী উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি পেইড সাক্ষী নই। সরকার পক্ষের আইনজীবী ও ট্র ইব্যুনালের বিচারকদের  উদ্দেশে বলেন, আমাকে কেন চার্জ করছেন, আমি কোন স্যাই দেব না। আমাকে আমার নিজের মত করে কথা বলার সুযোগ না দিলে কোন কথাই বলবো না। তিনি উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আমি সাী দেব না অপনারা যা-খুশি করেন।
সাী মোজাফফর  আহমেদ তার সাক্ষ্যের  শুরুতে বলেন, '৭১ সালের ২৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভোর রাতে গুলীর শব্দ শুনি।  ওই সময় আমি  যোদ্ধাদের নিয়ে কলাতিয়া নাজিরপুর থেকে  ঘাটারচর এলাকার দিকে যাই।   ইতোমধ্যে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়। বাবা বললেন তুমি কোনদিকে যাচ্ছ। আমি বললাম ঘাটারচরের দিকে যাচ্ছি। বাবা বললেন ওইদিকে যেওনা। আমাদের বাড়ি আক্রমন করা হয়েছে এবং সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বললেন মুক্তিযোদ্ধা ওসমান ফারুক ও গোলাম মোস্তফাকে ওরা হত্যা করেছে স্থানীয় রাজাকাররা।
সাী এই বক্তব্য দেয়ার পর ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক  মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, পথে খানবাড়ীতে আক্রমণ হলে আমার ভাগ্নে ওসমান গনী ও গোলাম মোস্তফা নিহত হয়। এই লাইনটি কিয়ার করতে হবে। ওসমান গনী ও গোলাম মোস্তফা কিভাবে নিহত হয় তা আগে কিয়ার করেন তারপর বলেন। তখন সাী মোজাফর আহমেদ খান বলেন, আমার পিতার সাথে দেখা হওয়ার ঘটনা বলি তারপর বলব। এ পর্যায়ে বিচারক  মো. শাহিনুর ইসলাম আবার বলেন, ওই লাইনটা কিয়ার হচ্ছে না। তখন সাী  উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করে বিচারকদের ল্য করে বলতে থাকেন, আমাকে কেন চার্জ করছেন। আমাকে বলার সুযোগ দেন। এভাবে চার্জ করলে আমি সাী দেব না আপনারা যা খুশি করেন।
এরপর ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়েই সাক্ষী  চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি হাইব্রিড মুক্তিযোদ্ধা নই। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। বহু হাইব্রিড মুক্তিযোদ্ধা আমি দেখেছি। আমি পেইড সাী নই। আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্যা দিতে এসেছি। সাী ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের উপর প্তি হয়ে যখন এসব বক্তব্য দেন তখন কিছু সময়ের জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিচারপতিরা চুপ করে নির্বিকার বসে থাকেন।

চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, একেএম সাইফুল ইসলাম এবং তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান শেষ পর্যন্ত সাীকে পানি পান করিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনার প্রায় ১৫ মিনিট পর সাী আবার সাী দিতে রাজি হন। তখন তিনি বসে থেকে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর প্রশ্নে উত্তর দেন। এরপর মোজাফফর  আহমেদ খান দীর্ঘসময় স্যা দিলেও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম কোন প্রশ্ন না করে নীরব থাকেন।
স্যাগ্রহণ শেষ হলে বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জনাব চীফ প্রসিকিউটর যা ঘটেছে তার যৌক্তিকতা বিবেচনা করবেন। আমরা কিছুণের মধ্যে নেমে যাব। বিষয়টি আপনি ভেবে দেখবেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোজাফফর আহমেদ খান। পিতা মৃত নূর মোহাম্মদ খান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আটি বাউল হাই স্কুলের ছাত্র। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান কেরানীগঞ্জ ছাত্রলীগ থানা সভাপতি ছিলাম।

১৯৬৯ এর গনআন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতাদের সাথে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ঢাকা মহানগর মিরপুর-মোহাম্মদপুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা করেছি। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন গোলাম আযম। গোলাম আযমের পক্ষে আব্দুল কাদের মোল্লা কাজ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেই। ২৬ মার্চের পর আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার জন্য ভারতে যাওয়ার  প্রস্তুতি নেই। ১৯৭১ সালের ১৫ মে আমি আমার ১৫ জন বন্ধু নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওয়ান দেই। প্রশিক্ষন শেষে আমার নেতৃত্বে ২৫ জন মুক্তিযুদ্ধ দেশে প্রবেশ করি। কেরানিগঞ্জের কলাতিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করি।
যুদ্ধচলাকালীন সময়ে ২৫ নভেম্বর ভোর রাতে সর্বপ্রথম আমরা গুলির আওয়াজ পাই। তারপর আমি আমার ট্রুপস নিয়ে কলাতিয়া নাজিরপুর থেকে ঘাটারচরের দিকে মুভ করি। ইতোমধ্যে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়। বাবা বললেন তুমি কোনদিকে যাচ্ছ। আমি বললাম ঘাটারচরের দিকে যাচ্ছি। বাবা বললেন ওইদিকে যেওনা। আমাদের বাড়ি আক্রমন করা হয়েছে এবং সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বললেন মুক্তিযোদ্ধা ওসমান ফারুক ও গোলাম মোস্তফাকে ওরা হত্যা করেছে স্থানীয় রাজাকাররা। তোমার কাছে যে অস্ত্র আছে তা দিয়ে তুমি ফায়ার ওপেন করোনা। আমি আমার ট্রুপস নিয়ে সেখানেই একটু নিচু জায়গায় বসে পড়লাম। বাবাকে বললাম আপনি আমার ক্যাম্পে যান, আমি দেখছি। আক্রমনটা ছিল ভোরে ফজরের আজানের সময়। ফজরের আজান থেকে ১১টা পর্যন্ত এই আক্রমন চলে। ওখানে ঘাটার চরে হিন্দু ও মুসলিম ৫৭ জনকে হত্যা করে। ঘাটারচর থেকে খান বাড়ি, খান বাড়ি থেকে বড় ভাওয়াল আক্রমন করে ২৫ জনকে হত্যা করে। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই রাজাকার এবং পাক বাহিনী ওই স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে। আমি প্রধান সড়ক দিয়ে না এসে পেছন দিক দিয়ে আমার ট্রুপস নিয়ে ভাওয়াল খান বাড়িতে আসি। ওইখানে এসে দেখলাম আমার বাড়ি আগুনে জ্বলছে। ওসামন গনি এবং গোলাম মোস্তফার লাশ সেখানে পড়ে আছে। লাশের দাফন সেরে পেছনের রাস্তা দিয়ে খান বাড়ি থেকে ঘাটার চরে চলে যাই। ঘাটারচরে গিয়ে বিভৎস অবস্থা দেখি। চারদিকে শুধু রক্ত, লাশ আর লাশ। স্থানীয় তৈয়ব আলী এবং আব্দুল মজিদের সাথে আমার দেখা হয়। তৈয়ব আলী, আব্দুল মজিদ এবং আরো অনেকে লাশ সনাক্ত করতে থাকে হিন্দু ও মুসলিম। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আব্দুল মজিদ বলল ২৩/২৪ নভেম্বর ঘাটারচরে একটি মিটিং হয়েছিল। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল মুসলিম লীগের ডা. জয়নাল, কেজি করিম বাবলা, মুক্তার হোসেন, ফয়জুর রহমান, এরা ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করে ওই মিটিংয়ের আয়োজন করে এবং আব্দুল কাদের মোল্লা ওই সময় ওই সভায় উপস্থিত ছিল। সভায় নিরস্ত্র মানুষকে গণহত্যার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করে ২৫ নভেম্বর ১৯৭১। আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছদ্মবেশে মোহাম্মদপুরে আমার মামার বাসায় গিয়েছি একবার। মামার বাসা থেকে যখন গ্রামের বাড়িতে ফিরি মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে রাজাকার আল বদরের একটা টর্চার সেল ছিল। ওখানে ফেরার পথে দেখি টর্চার সেলের গেটের সামনে অস্ত্র হাতে কাদের মোল্লা সঙ্গীদের সাথে দাড়িয়ে আছে। ২৫ মার্চের (পরে বলেন) ২৬ নভেম্বর ঘাটার চরে যে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয় তা স্থানীয় রাজাকাররা কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করে তার নেতৃত্বে সংঘটিত করে। আমি দীর্ঘদিন   ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি জানিয়ে আসছি। ২০০৭ সালে আমি ঢাকার চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট এর কাছে এই বিচারের দাবিতে একটি সিআর মামলা করি। মামলা নং ১৭/২০০৭। পরবতীতে এটা জিআর মামলায় পরিণত  হয়। কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা নং ৩৪/১২, ২০০৭।

জেরা
প্রশ্ন : ভোটার আইডি কার্ড আছে?
উত্তর : আছে। সাক্ষী কার্ড প্রদর্শন করেন।
প্রশ্ন : ভোটার আইডিতে জন্ম তারিখ লেখা আছে কি?

উত্তর : আছে, ৩ মার্চ ১৯৫৩।

প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন কি?

উত্তর: মনে নেই। এরপর ট্রাইব্যুনাল সাীর জেরা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন। এছাড়া আগামী ১২ জুলাই আসামী পরে ডকুমেন্ট ও সাীর তালিকা জমা দেয়ার দিন ধার্য করেন।

স্যাগ্রহণের আগে ডিফেন্স কাউন্সেল এডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, রাষ্ট্রপ বার বার সাীর তালিকা পরিবর্তন করছে। আজকে যার সাী দেয়ার জন্য আসার কথা ছিল তিনি আসেননি। তালিকার ১০ নম্বর সাী এসেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা শুরু করি। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, তালিকার নাম অনুসারে স্যাগ্রহণ শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ সময় ডিফেন্স ল'ইয়ার ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীর, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

৮/৭/২০১২
রোববার
কাদের মোল্লাকে সরাসরি কোন অপরাধ করতে দেখেননি সাী

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে সরাসরি কোন অপরাধ করতে দেখেননি  সাী মোজাফফর আহমেদ খান। শুধু চাইনিজ রাইফেল হাতে নিয়ে কাদের মোল্লাকে দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখেছেন তিনি। আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও অপর দুই সদস্য ওবাইদুল হাসান ও শাহিনুর ইসলাম সাীর জেরা গ্রহণ করেন। আইনজীবী একরামুল হক সাীকে জেরা করেন। এর আগে গত ৩ জুলাই আদালত কে সাী তার অনাকাঙিত আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মা প্রার্থনা করেন। আজ  জেরাতে সাী বলেন, কাদের মোল্লাকে তিনি অনেক অপরাধ করতেই দেখেছেন। কিন্তু আইনজীবীর প্রশ্ন এবং স্পেসিফিক কোন অপরাধটি কাদের মোল্লা নিজে করেছেন তার সঠিক জবাবই দিতে পারেননি, শুধু বলেছেন কাদের মোল্লা মো.পুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সামনে একটি চাইনিজ রাইফেল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ডিফেন্স টিমের আইনজীবী অবশ্য ট্রাইব্যুনালকে জানান, ৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর কাদের মোল্লা ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। আর ঢাকায় ফিরে আসেন ৭২ সালের জানুয়ারি মাসে। আজকের  সাীর জেরা ও উত্তর তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : আটিবাউল হাই স্কুল কোন থানার অধীনে?

উত্তর : কেরানীগঞ্জ থানার অধীনে।

প্রশ্ন : আপনি কোন সালে এসএসসি, এইচএসসি ও বিকম পাস করেছেন?

উত্তর : এসএসসি ৭২ সালে আটিবাউল হাই স্কুল থেকে, এইচএসসি হাফেজ মুসা কলেজ থেকে পাস করি এটা তখন লালবাগ থানা বর্তমানে হাজারীবাগ থানার অধীনে।

প্রশ্ন : বিকম কবে পাস করেছেন?

উত্তর : আমি বিএসসিতে ভর্তি হয়েছিলাম পরীা দেইনি। বোরহানউদ্দিন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম।

প্রশ্ন : এরপরে কি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিা নিয়েছেন?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : সরকারি বা অন্য কোন চাকরি করেছেন?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : ৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের কারা ভিপি বা জিএস ছিলেন বলতে পারবেন?

উত্তর : না, বলতে পারবো না।

প্রশ্ন : আপনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন কেরানীগঞ্জ থানার। আপনাকে কে স্বীকৃতি দিয়েছে?

উত্তর : তৎকালীন ছাত্রনেতা নুরে আলম সিদ্দিকী।

প্রশ্ন : তিনি এখন কি করেন?

উত্তর : তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য।

প্রশ্ন : কেরানীগঞ্জে কি তখন ছাত্রলীগের কোন অফিস ছিল?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : ছাত্রলীগে আপনার থানায় কত সদস্য ছিল?

উত্তর : ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ছিল।

প্রশ্ন : ঐ সময়ে সেক্রেটারি কে ছিলেন?

উত্তর : জাফরুল্লাহ। তিনি মারা গেছেন।

প্রশ্ন : কমিটির কত জন বেঁচে আছেন?

উত্তর : মনে হয় ১৫ জনের মতো।

প্রশ্ন : জীবিত ১৫ জনের নাম বলতে পারবেন?

উত্তর : ১৫ জনের মধ্যে বর্তমানে একজন সরকারের সচিব। অন্যরা হলেন, সাহাবুদ্দিন, খলিলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ফারুকী, শাহজাহান, শাহনেওয়াজ, আজিজুর রহমান খান, মফিজ উদ্দিন, আ. জলিল, মাহমুদুল হক, ফজলুর রহমান, শামসুল হক, নজরুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, আর মনে পড়ছে না।

প্রশ্ন : এই ১৩ জনের মধ্যে ফ্রিডম ফাইটার কত জন ছিলেন?

উত্তর : আনোয়ার হোসেন ফারুকী, শাহজাহান, নুরুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিন, এই কয়জন।

প্রশ্ন : এরা কি আপনার সমবয়সী?

উত্তর : কাছাকাছি বয়সের।

প্রশ্ন : এরা সবাই কি কেরানীগঞ্জে বাস করেন?

উত্তর : হ্যাঁ, সবাই কেরানীগঞ্জে বাস করেন।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন, ১৫ জন বন্ধু নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা গিয়েছেন। তাদের নাম বলুন?

উত্তর : সাহাবুদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, আ. হাকিম, মজিবুর রহমান, বাবুল মিয়া, এরশাদ আলী, হাসান, সিরাজুল হক, শহিদুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন, আ. আওয়াল, সোবহান, শাহ আলম, আব্দুল মান্নান।

প্রশ্ন : এরা কি সবাই জীবিত?

উত্তর : না, কয়েকজন মারা গেছেন। হাসান, সোবহান, বাবুল মিয়া, এরশাদ এরা মারা গেছেন।

প্রশ্ন : গোলাম মোস্তফার পিতার নাম কি?

উত্তর : সাদেক আলী।

প্রশ্ন : জীবিতরা কি সরকারি কোন চাকরি করেন?

উত্তর : না। তারা সবাই বাড়িতে আছেন।

প্রশ্ন : এই ১৫ জন কি ভারতে গিয়ে কংগ্রেস ভবনে নাম এন্ট্রি করেছেন?

উত্তর : হ্যাঁ।

প্রশ্ন : আগরতলায় গিয়ে আপনি কয় দিন ছিলেন?

উত্তর : বিভিন্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে বিভক্ত করে দিয়েছিল আমাদের।

প্রশ্ন : ১৫ জনের মধ্যে আপনার সাথে কে কে ছিল?

উত্তর : না, আমার সাথে ১৫ জনের মধ্যে কেউ ছিল না। আমি একাই হাপানিয়া ক্যাম্পে গিয়ে ২০ দিন থাকি।

প্রশ্ন : সেখান থেকে কোথায় পাঠালো? কতদিন ছিলেন?

উত্তর : মোহনপুর ক্যাম্পে ৭ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : কত তারিখে সেখানে যান বলতে পারেন?

উত্তর : না, কত তারিখ থেকে কত তারিখ ছিলাম তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।

প্রশ্ন : মোহনপুর থেকে কোথায় গেলেন?

উত্তর : দুর্গা চৌধুরীপাড়া। এটা আগরতলায় ছিল। সেখানে ১৫ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : সেখান থেকে কোথায় গেলেন?

উত্তর : গোকুল নগর ক্যাম্পে, সেখানে ১৫ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনি অস্ত্র পেলেন কখন?

উত্তর : আসামের লাইলাপুরে ২১ দিন ট্রেনিংয়ের পরে দ্বিতীয় ভাগে আরও ৭ দিন বিশেষ ট্রেনিং করেছি আমাদের ইনচার্জ ছিলেন মেজর বরীন্দ্র সিং।

প্রশ্ন : অস্ত্র পেলেন কবে?

উত্তর : আসাম থেকে আগরতলায় আসার পর ট্রানজিট ক্যাম্পে আসার পর অস্ত্র পাই হাতে।

প্রশ্ন : ২১ দিনের ট্রেনিং কত তারিখে শুরু হয়?

উত্তর : '৭১ সালে জুলাই মাসের ৩ তারিখে লাইলাপুর ক্যাম্পে যাই। সম্ভবত ৩০ জুলাই আমাদের ডিপারচার দিন।

প্রশ্ন : মোট কতজন ঐ তারিখে ফেরত আসেন?

উত্তর : আমাদের সাথে ১০টি ট্রাক ছিল। প্রতি ট্রাকে ২০/২৫ জন করে ছিলাম।

প্রশ্ন : তারা কী সবাই বাংলাদেশী?

উত্তর : হ্যা, সবাই বাংলাদেশী।

প্রশ্ন : আপনার সাথে কেরানীগঞ্জের কত জন ছিল?

উত্তর : আমার সাথে আগের ঐ ১৫ জনই ছিল।

প্রশ্ন : রবীন্দ্র সিং কী কোন কাগজপত্র দিয়েছিলেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আমাদের সাথে ভারতীয় অফিসার ছিলেন। তার কাছে দিয়েছেন।

প্রশ্ন : প্রতি টীমে কত জন সদস্য ছিল?

উত্তর : আমার টীমে ২৫ জন ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনাদের কোথায় পাঠালো?

উত্তর : আমাদেরকে কুমিল্লার সিএমবি রোডে অস্ত্রসহ নামিয়ে দিয়ে যায়।

প্রশ্ন : দেশে এসে আপনারা কোথায় অবস্থান নিলেন?

উত্তর : কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় ক্যাম্প স্থাপন করি।

প্রশ্ন : সেখানে কী স্কুল বা প্রতিষ্ঠান ছিল?

উত্তর : না, এটা ছিল প্রাইভেট বাড়ি।

প্রশ্ন : মালিকের নাম কি?

উত্তর : মতিউর রহমান সরকার।

প্রশ্ন : তিনি কি জীবিত আছেন এখন?

উত্তর : হ্যাঁ, বেঁচে আছেন তবে বয়স্ক বিধায় চলাফেরা করতে পারেন না।

প্রশ্ন : কবে আপনারা ক্যাম্প স্থাপন করেন?

উত্তর : '৭১ সালের ২৮ আগস্ট।

প্রশ্ন : প্রথম অপারেশন কবে কোথায় করেন?

উত্তর : প্রথম অপারেশন হয় ৫/৯/৭১ স্থান ছিল সৈয়দপুরের তুলসীখালীতে। এই জায়গাটি ছিল তিনটি থানার সংযোগস্থল।

প্রশ্ন : অপারেশন কখন শুরু হয়?

উত্তর : সকাল ১০টায় আরম্ভ করি।

প্রশ্ন : আপনার অপারেশন কাদের বিরুদ্ধে?

উত্তর : পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ ছিল।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কিভাবে আসছিল?

উত্তর : ধলেশ্বরী নদীতে গানবোটে এসেছিল।

প্রশ্ন : তারা কোথায় আক্রমণ করে?

উত্তর : তারা প্রথমে একটি মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। এর নাম ছিল পাড়াগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প।

প্রশ্ন : ঐ ক্যাম্পে কতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল?

উত্তর : ২০০ জন ছিল।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কত জন ছিল?

উত্তর : গানবোট ও স্প্রীটবোটে ৩০০ জন ছিল পাক আর্মি।

প্রশ্ন : ঐ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার কে ছিলেন?

উত্তর : ইয়াহিয়া খান পিন্টু।

প্রশ্ন : কতণ গুলী বিনিময় হয়?

উত্তর বিকেল ৪টা পর্যন্ত?

প্রশ্ন : কলাতিয়াতে কতটি ক্যাম্প ছিল?

উত্তর : সেখানে ৫টি ক্যাম্প ছিল।

প্রশ্ন : কোন দলের কত জন মারা যায় বা আহত হয়?

উত্তর : মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শহীদ হয় আমিসহ ১০ জন আহত হই।

প্রশ্ন : শহীদ ওমর আলী কার অধীনে ছিল?

উত্তর : পিন্টু সাহেবের অধীনে ছিল আমার গ্রুপে আমি ছাড়া কেউ আহত হয়নি। বাকি নয় জন ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর কমান্ডে ছিলেন।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কত জন হতাহত হয়েছিল?

উত্তর : ৫৩ জন পাক আর্মি মারা যায় ঐ দিন।

প্রশ্ন : আপনি কোথায় ব্যাক করেন?

উত্তর : আমাকে আহত অবস্থায় কলাতিয়াস্থ ডা. আব্দুস সালামের বাসায় নিয়ে আসা হয়। ৭ দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলাম।

প্রশ্ন : ঐ এলাকাতে কী আপনাদের বয়সী কোন রাজাকার ছিল?

উত্তর : হ্যাঁ, ছিল।

প্রশ্ন : সালাম সাহেবের বাসায় কি অন্যান্য সদস্যরা ছিল?

উত্তর : হ্যাঁ, ছিল।

প্রশ্ন : আপনার কথা কি অন্যরা জানাতো?

উত্তর : না, এটা সিক্রেট ছিল।

প্রশ্ন : ৭ দিন চিকিৎসা শেষে আপনি কোথায় গেলেন?

উত্তর : ৭ দিন পর আমি নাজিরপুরে চলে যাই। ১৫ দিন আমি নাজিরপুর ক্যাম্পে বিশ্রামে ছিলাম।

প্রশ্ন : এই সময়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা কি কোন অপারেশন করেছে?

উত্তর : হ্যাঁ, ছোট ছোট অপারেশন করেছে কেরানীগঞ্জের ভেতরেই।

প্রশ্ন : ঐ সময়ে রাজাকাররা কোন আক্রমণ করেছে?

উত্তর : না, আমাদের ক্যাম্পে কোন আক্রমণ হয়নি। আমার ক্যাম্পটি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানেই ছিল।

প্রশ্ন : পুরো সময়টা সেখানেই ছিলেন?

উত্তর : অক্টোবরের ৫ তারিখে আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাই ভারতে ১৫ দিন ছিলাম এই দিন ভারতের বিশাল গড়ে।

প্রশ্ন : এর পর কোথায় গেলেন?

উত্তর : পরে আমি মেলাগড়ে আমার সেক্টর কমান্ডারের সাথে দেখা করতে যাই সেখানে দুই দিন ছিলাম।

পরে আমি নাজিরপুরে নতুন কিছু দায়িত্ব নিয়ে আসি। একই সাথে আমাকে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিলে চলে আসি। আমি ফিরে এসে আমার পূর্বের সহযোদ্ধাদের পাই।

প্রশ্ন : এরপরে আর কোথায় কোথায় অপারেশন করেছেন?

উত্তর : আমাকে দেয়া নতুন দায়িত্ব অনুযায়ী মো.পুর রাজাকার ক্যাম্পটি উড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রশ্ন : রাজাকার ক্যাম্পটি কোথায় ছিল?

উত্তর : নাজিরপুর থেকে মো.পুরের রাজাকার ক্যাম্পটি ১০ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল।

প্রশ্ন : কবে রওয়ানা দেন?

উত্তর : নাজিরপুরের আটিবাজার থেকে নৌকাযোগে মো.পুর এসে পুরনো মসজিদের কাছে ঘাটে এসে নামি। তখন সকাল ১০টা বাজে।

প্রশ্ন : নৌকাঘাট থেকে মো.পুর রাজাকার ক্যাম্প কত দূর?

উত্তর : ঘাট থেকে রাজাকার ক্যাম্প কোয়ার্টার মাইল দূরে ছিল। সেদিন আমার সাথে নিরাপত্তার জন্য ছোট অস্ত্র ছিল। আমি রেকি করার জন্য এসেছিলাম সাথে শাক ও একটি কদু ছিল।

প্রশ্ন : আপনি কিভাবে এসেছেন?

উত্তর : আমি ক্যাম্পটি ভাল করে দেখার জন্য পায়ে হেঁটে ক্যাম্পের সামনে দিয়ে মামার বাসায় আসি।

প্রশ্ন : মামার নাম কি?

উত্তর : গিয়াসউদ্দিন। তিনি মারা গেছেন।

প্রশ্ন : রাজাকার ক্যাম্পটি কোথায় ছিল?

উত্তর : ক্যাম্পটি ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ছিল। তবে বাইরে কোন রাজাকার ক্যাম্প লেখা সাইন বোর্ড ছিল না।

প্রশ্ন : মামার বাসায় কতণ ছিলেন?

উত্তর : মাত্র ১০ মিনিট ছিলাম মামার বাসায় সেদিনই আমার প্রথম আসা হয়।

প্রশ্ন : মামার বাসার নম্বর কত?

উত্তর : নিরাপত্তার স্বার্থে বলবো না। মামী ছাড়া মামাতো ভাই বোনেরা সবাই বেঁচে আছেন। তাদের নামও বলা যাবে না।

প্রশ্ন : কোন পথে আবার বাসা থেকে ফিরে গেলেন?

উত্তর : যে পথে এসেছি সেই পথেই ফিরে গেছি। সাধারণ লোকের সাথে ঐ সময়ের মধ্যে কোন কথা হয়নি। তবে যাওয়ার পথে বাড়িতে যাই। ভাওয়াল খান বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে দুপুরের খাবার খাই।

প্রশ্ন : মামার বাড়ি থেকে আপনার মায়ের বাড়ি কত দূর?

উত্তর : মামা বাড়ি থেকে নাজিরপুরে যেতে পথের মধ্যে আমার মায়ের বাড়ি। দূরত্ব হবে ৫ মাইল। মায়ের সাথে কুশল বিনিময়ে জানতে পারলাম ভারতে যাওয়ার পরে এরমধ্যে আমার মায়ের কোন তি হয়নি। মায়ের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সবাই থাকতো।

প্রশ্ন : মো.পুর থেকে কলাতিয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারদের কতটি ক্যাম্প ছিল?

উত্তর : মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ক্যাম্প ছিল না। তবে ঘাটারচর ও আটিবাজারে দুটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল।

প্রশ্ন : আপনি কখন নাজিরপুর হয়ে চলে আসেন?

উত্তর : তখন প্রায় সন্ধ্যা।

প্রশ্ন : আপনি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে কোথায় কোথায় আক্রমণ করেন?

উত্তর : না। কোন আক্রমণ বা অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। আমি ১০ নবেম্বর আবার ভারতে ফিরে গিয়ে রিপোর্ট করি দুই দিন পরে ফিরে আসি।

প্রশ্ন : ভারত থেকে কোথায় আসেন?

উত্তর : ভারত থেকে নাজিরপুরে ফিরে আসি।

প্রশ্ন : ২০০৮ সালে কোথায় ভোট দিয়েছেন?

উত্তর : আমি লালবাগে ভোট দিয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোস্তফা জালাল অহিউদ্দিন। আমি তার পইে কাজ করেছি।

প্রশ্ন : ৭১ সালের পরে কি আপনি লালবাগ চলে এসেছেন?

উত্তর : আমি লালবাগ থাকলেও আমার ব্যবসা বাণিজ্য কেরানীগঞ্জে।

প্রশ্ন : কেরানীগঞ্জ এলাকা আপনার পরিচিত এলাকা?

উত্তর : এটা আমার নিজস্ব এলাকা।

প্রশ্ন : ওসমান গনি, গোলাম মোস্তফার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিষয়ে আপনার জানা আছে কি?

উত্তর : তাদের সনদ আছে তাদের পরিবারের কাছে তারা সরকারি ভাতাও পাচ্ছে।

প্রশ্ন : ওসমান গনির পরিবারের কে কে বেঁচে আছে?

উত্তর : ওসমান গনির মা, ২ ভাই ও ৫ বোন বেঁচে আছেন। বাবা বেচে নেই।

প্রশ্ন : গোলাম মোস্তফার পিতার নাম আহমদ হোসেন ওরফে টুকুবানী। ওসমান গনির পিতা মৃত মোহাম্মদ হোসেন?

উত্তর : হ্যাঁ। মোস্তফার স্ত্রী ১ ছেলে ও ১ মেয়ে জীবিত আছে।

প্রশ্ন : ৭১ সালের ১০ নবেম্বরের পরে ভারত থেকে ফেরত এসে কোন রেড হয়েছি কি?

উত্তর : না। তবে ২৫ নবেম্বর ছোট একটি ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জবানবন্দিতে উল্লেখিত ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কেউ মারা যায়নি। ২৫ নবেম্বরের পরে আমরা আর কোন অপারেশনে যাইনি।

প্রশ্ন : আপনার অস্ত্র কবে কোথায় জমা দেন?

উত্তর : ১৬ ডিসেম্বরে আমি আমার অস্ত্র মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মোস্তফা মহসীন মন্টুর কাছে জমা দেই। জানুয়ারি মাসে তিনিই ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দেন। জেনারেল ওসমানী তখন মুক্তিবাহিনীর প্রধান ছিলেন।

প্রশ্ন : আ. মজিদ কি বেঁচে আছেন?

উত্তরা : হ্যাঁ, তিনি এখন ঘাটারচরেই আছেন।

প্রশ্ন : ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কার পে কাজ করেছেন?

উত্তর : কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা মহসীন মন্টুর পে কাজ করেছি।

প্রশ্ন : ২০০৭ সালে যে মামলাটি আপনি করেছেন সেটির অবস্থা কি?

উত্তর : আমি শুনেছি আমার মামলাটি অত্র ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা নং- ৩৪(১২)২০০৭।

প্রশ্ন : ৭০ সালে ঢাকসুর জিএস কে ছিলেন?

উত্তর : সম্ভবত তোফায়েল আহমেদ তবে আমি সঠিকভাবে মনে করে বলতে পারছি না।

প্রশ্ন : ৭০ সালে নির্বাচনের পূর্বে আপনার এলাকায় কেউ কি গিয়েছেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আ স ম রব ও শাহজাহান সিরাজসহ আরো ৪ জন কেরানীগঞ্জে গিয়েছিলেন।

প্রশ্ন : ৭০ সালে শহীদুল্লাহ হলের জি এস কে ছিলেন?

উত্তর : সম্ভবত ছাত্রসংঘের কাদের মোল্লা ছিলেন। কাদের মোল্লার সাথে আমার ব্যক্তিগত দ্বনদ্ব ছিল না তবে রাজনৈতিক দ্বনদ্ব ছিল।

প্রশ্ন : কাদের মোল্লাকে কবে থেকে চেনেন?

উত্তর : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন থেকেই চিনি। তাকে ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবেই চিনতাম।

প্রশ্ন : যুদ্ধকালীন সময়ে পাক সেনারা কি আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছে?

উত্তর : আমি তাদের মুখোমুখি হইনি।

প্রশ্ন : আগে কি আপনি জবানবন্দি দিয়েছেন?

উত্তর : আগে ১৭(২০০৭) নং মামলায় সিজেএম কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছি। এছাড়া আর কোথাও জবানবন্দি দেইনি।

প্রশ্ন : কারও কাছে সনদপত্র দিয়েছেন কি?

উত্তর : আমার কাছে কেউ মুক্তিযুদ্ধের সনদ চায়নি আমি দেইনি। আমার কমান্ড সার্টিফিকেট পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমি ডুপ্লিকেট কপি মেজর হায়দারের কাছে চেয়েছি কিন্তু ফটোকপি মেশিন না থাকায় পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন : ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এরকম কোন জবানবন্দি বা বক্তব্য কোথাও দিয়েছেন কি?

উত্তর : না, দেইনি।

প্রশ্ন : কাদের মোল্লা নিজে কোন অপরাধ করেছেন?

উত্তর : নির্বাক। আপনি নিজে দেখেছেন কি?

প্রশ্ন : ৭১ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে কোন অপরাধ করতে স্বচে দেখেছেন কি?

উত্তর : হ্যাঁ দেখেছি।

প্রশ্ন : কি অপরাধ করতে দেখেছেন?

উত্তর : চাইনিজ রাইফেল হাতে দেখেছি।


মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

অবরোধে অনুপস্থিত আইনজীবী// আরো এক সাক্ষীর জেরা বন্ধ ঘোষনা

মেহেদী হাসান, ৩/১২/২০১৩
অবরোধের কারনে সিনিয়র আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় মাওলানা একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে আরো এক সাক্ষীর জেরা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৪ তম সাক্ষীর জেরার জন্য ধার্য্য ছিল আজ। কিন্তু আসামী পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় জেরা বন্ধ ঘোষনা করে ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১২ এবং ১৩ তম সাক্ষীর জেরাও একই কারনে অসমাপ্ত অবস্থায় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

সকাল সোয়া ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল বসলে আসামী পক্ষে উপস্থিত জুনিয়র আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ১৪ তম সাক্ষীর জেরা মুলতবি রাখার জন্য আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান কেন মুলতবি করা হবে। গাজি তামিম বলেন, অস্বাভাবাবিক পরিস্থিতির কারনে  তিনি আসতে পারেননি। অবরোধে হাইকোর্টেরও কোন বেঞ্চ বসেনি।
এসময় সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা কি হাইকোর্টের আন্ডারে? চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমরা স্বাধীন। আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করব।
এসময় গাজি তামিম অবরোধ পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তার বিষয়টি তুৃলে ধরার চেষ্টা করলে অপর সদস্য বিচারপতি শাহীনূর ইসলাম বলেন, কতদিন মুলতবি করব? অবরোধ তো চলছে। আপনাদের আইনজীবী  সৈয়দ মিজানুর রহমান যেদিন আসতে পারবে সেদিন পর্যন্ত মুলতবি করব আমরা? এভাবে কি চলতে পারে?
এ পর্যায়ে গাজি তামিম আবারো অবরোধ এবং সহিংস পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, কার ওপর কখন যে কোন দিক দিয়ে হামলা হয় কেউ বলতে পারেনা।
এসময় চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, দেখুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও অনেক মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ে, মারা যায়। তাই বলে সবাই ঘরে বসে নেই। কপালে যা আছে হবেই । মৃত্যু যেভাবে লেখা আছে হবেই । এ বিশ্বাস করেন তো নাকি? আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আপনাদের কম মনে হয়? দেখুন যে আগুনে পড়ে মারা গেছে মনে করতে হবে এটা তার কপালে লেখা ছিল এভাবে তার মৃত্যু হবে। উছিলা হল ওই বদমাশ যে আগুন দিয়েছে। এ বিশ্বাস রাখতে হবে। এ বিশ্বাস করেনতো নাকি?

এরপর তিনি আসামী পক্ষের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র আইনজীবীর প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি হাটেননা, খাননা, চলাফেরা করেননা? আমরা সবাই কোর্টে আসি, অন্যরা আসে, সাক্ষী আসে, আর উনি আসতে পারেননা? আমরা সবাই আছি শুধু তিনি নেই। দেখুন আমরা চাই উনি কোটি বছর হায়াত পাক। কিন্তু কপালে থাকলে এভাবে মৃত্যু হবে।কেউ ঠেকাতে পারবেনা। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলেনা।

এরপর তিনি রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন  ১৪ তম সাক্ষীকে কাঠগড়ায় আনার জন্য । গাজি তামিমকে তিনি প্রশ্ন করেন আপনি কি জেরা করবেন? গাজি তামিম বলেন, না। তখন চেয়ারম্যান বলেন জেরা কোজ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নতুন সাক্ষী আছে? রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয় নতুন সাক্ষী নেই আজ। এরপর নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয় বিচার কার্যক্রম।


এছাড়া গাজি তামিম ১৩ তম সাক্ষীর জেরা বন্ধের আদেশ বিষয়ে  রিভিউ আবেদন জমা দিলেও তাও খারিজ করে দেয়া হয়।





সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ : ভারতে বসে পিতার কাছ থেকে ঘটনা শুনেছেন সাক্ষী। পিতাও শুনেছেন অন্যদের কাছে। ১৩ তম সাক্ষীর জেরা বন্ধ ঘোষনা

মেহেদী হাসান, ২/১২/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে আজ ১৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তার নাম বাবুল কুমার মিস্ত্রি। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ৭/৮ বছর। সাক্ষী মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ডাকরা গনহত্যা বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা তিনি ভারতে বসে তার পিতার কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানান। তার পিতাও তখন ভারতে ছিল এবং সেও এ ঘটনা অন্যদের কাছ থেকে শুনেছে বলে জানান সাক্ষী।


এদিকে অবরোধে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় ১৩ তম সাক্ষীর জেরা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। গতকাল ১৩ তম সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে উপস্থিত জুনিয়র আইনজীবী কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে তার জেরা শুরু করেন। এরপর তিনি মঙ্গলবার পর্যন্ত জেরা মুলতবি করার আবেদন করেন । ট্রাইব্যুনাল বলেন, সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হল। সোমবারও সিনিয়র আইনজীবী না আসলে জেরা বন্ধ করে দেয়া হবে। সকালে ১৩ তম সাক্ষী শুধাংশু মন্ডল কাঠগড়ায় আনা হয় জেরার জন্য। আসামী পক্ষে উপস্থিত জুনিয়র আইনজীবী গাজি এম এইচ তামিম জেরা মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবির আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এসময় জানতে চান মঙ্গলবারও যদি কর্মসূচী থাকে তাহলে কি করবেন। গাজি তামিম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ওনারা আসবেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল  মৌখিক এ আবেদন আমলে না নিয়ে গতকালের আদেশ অনুযায়ী সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় জেরা বন্ধ করে আজ নতুন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহনের নির্দেশ দেন।

জবানবন্দী : সাক্ষী তার নিজের পরিচয় সম্পর্কে শুরুতে বলেন, আমার নাম বাবুল কুমার মিস্ত্রি। বয়স অনুমান ৪৯/৫০ বছর। পিতা অনিল কৃষ্ণ মিস্ত্রি (মৃত)। গ্রাম ও থানা রামপাল। জেলা বাগেরহাট।

এরপর সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল সোমবার সকাল অনুমান ১০টা বা সাড়ে দশটার দিকে রামপাল কলেজ অডিটোরিয়াম এর মাইক থেকে বলা হয় বিকাল তিনটার দিকে শান্তি কমিটির মিটিং হবে। এ অবস্থায় আমাদের বাড়ির সামনে অনেক লোকজন বলাবলি করছিল যে, তিনটার সময় মিটিং আছে। মিটিং শুনতে যেতে হবে। আমি অনুমান সাড়ে তিনটা বা চারটার দিকে আমার কাকা কালীপদ মিস্ত্রির সাথে মিটিংয়ে যাই। মিটিংয়ে গিয়ে দেখি সেখানে অনুমান ৩০০/৪০০ লোক উপস্থিত আছে। গিয়ে দেখি বাগেরহাটগামী একটি লঞ্চ রামপাল ঘাটে আসে। ওখান থেকে অনুমান ৩০/৪০ জন লোক নেমে আসে। তারাআসলেই ওই মিটিংয়ের অনেকে নারায়ে তাকবির বলে মাইকে উল্লাস করতে থাকে। প্রথমে রজব আলী ফকির পরে মোসলেম ডাক্তার বক্তব্য রাখে। মোসলেম ডাক্তার তোতলা ছিল। উনি বললেন, মালায়নকো মাল লোতোপাতো খাও। এদেশ পাকিস্তান, এদেশ মালায়ানদের না। মালায়ানদের মালামাল মহিলাসহ যে যা লুট করে নিতে পার নিয়ে যাও। একথা বলার পর নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দিতে থাকে। এতে আমি ভীত হয়ে কাকার হাত ধরে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি এসে কাকা সবাইকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। বাড়ির সবাইকে একত্র করে । এরই এক পর্যায়ে আমরা বাড়ির লোকজন বাড়ির পাশের পুকুরেরর পাকা সিড়ির নিচে কুঠুরিতে আত্মগোপন করি। এসময় আমাদের বাড়ির ছয়টি টিনের ঘর এবং চারটি লোহার সিন্দুক লুটপাট করে নিয়ে যায়। লোহার সিন্দুক ভেঙ্গে টাকা সোনাদানা সব নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় আমরা আকবর চেয়ারম্যানের বাড়ি চলে যাই। ওই বাড়িতে ২/৩ তিন মাচা ওচকির নিচে আত্মগোপনে থাকি। পরে আকবর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা অনেক লোক ভারতের দিকে রওয়ানা হই।

সাক্ষী বলেন, সম্ভবত ১৯/৫/১৯৭১ তারিখ ডাকরায় একটি গনহত্যা হয়। সেখানে আমার মামা কার্তিক হালদার সহ ৫/৭ হাজার লোক সমাগত হয়েছিল। রাজাকাররা চারদিক থেকে ঘেরাও করে এলোপতাড়ি গুলি করে প্রায় ৫০০/৬০০ লোক হত্যা করে। ভারতে থাকা অবস্থায় বাবার কাছে এ ঘটনার কথা শুনেছি। বাবার কাছে শুনেছি ইউসুফ সাহেবের নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

এ পর্যন্ত বলে জবানবন্দী শেষ করার পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রশ্ন করেন ১৯৭১ সালে আপনার বয়স কত ছিল। সাক্ষী বলেন, অনুমান সাত/আট বছর। দেশে ফিরলেন কবে জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন, ছয়/সাত মাস পরে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, সেসময়কার কিছু কিছু ঘটনা আমার মনে আছে। বাকী ঘটনা আমার শোনা।

জবানবন্দী শেষে গাজি এম এইচ তামিম তাকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করেন। এরপর জেরা আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।





রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে একটি ঘটনায় ৫০০/৬০০ হিন্দু হত্যার অভিযোগ

মেহেদী হাসান, ১/১২/২০১৩
জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে আজ ১৩ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।  সাক্ষী একটি ঘটনায় ইউসুফের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৬শ হিন্দু হত্যার নির্দেশ দানের অভিযোগ আনেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম শুধাংসু মন্ডল। পিতা মৃত ভবনাথ মন্ডল। ঠিকানা গ্রাম টেংরামারি, থানা রামপাল, জেলা বাগেরহাট। বংস ৫৯। আমি কৃষি কাজ করি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার পর আমি স্থানীয় জবেদ কমান্ডারের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হই। ১৯ এপ্রিল ১৯৭১ আমি জানতে পারি রামপাল অডিটোরিয়াম হলে শান্তি  মিটিং হবে। ওই দিন বেলা দুইটা আড়াইটার সময় আমাদের এলাকার সব লোকজন ওই মিটিংয়ে উপস্থিত হই। বেলা তিনটা সাড়ে তিনটার সময় বাগেরহাট থেকে একটি লঞ্চ ৩০-৩৫ জন লোক নিয়ে রামপাল কলেজ ঘাটে ভেড়ে। ওই লঞ্চ থেকে ৩০-৩৫ জন লোক নামে। তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ, একেএম ইউসুফ আলী জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে দিতে অডিটোরিয়াম সভাপস্থলে উপস্থিত হয়। ওই মিটিংয়ে রজ্জব আলী (মৃত), মোজাম ডাক্তার, মোসলেম ডাক্তার বক্তব্য দেয়ার পর সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন এ কে এম ইউসুফ আলী। বক্তব্যে ইউসুফ আলী বলেন, মালায়ন খতম কর। এদেশ হিন্দুদের নয়। এদেশ মুসলমানদের। হিন্দুদের মালামাল, মহিলা গনিমতের মাল। এসবই ভোগ করতে পারে যেকেউ।  এতে কোন অপরাধ নেই। সর্বশেষ বলে লোটোপাট খাও, মালায়ন খতম কর। একথা বলার পর নারায়ে তকবির দিয়ে ইউসুফের সঙ্গীয় লোকজন স্থানীয় রামপাল সদরে অবস্থিত যাদব মিস্ত্রি, কৃষ্ণধন মিস্ত্রিী এদের বাড়ির ওপর চড়াও হয়ে ঘরবাড়ি তছনছ করে মালামাল নিয়ে লঞ্চযোগে বাগেরহাটের দিকে চলে যায়। এরপর আমি বাড়িতে এসে সবাইকে এ ঘটনার কথা খুলে বলি।
একেএম ইউসুফ আলী খুলনা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন এবং বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। রাজাকার বাহিনীকে ইউসুফ আলী নির্দেশ দেয় হিন্দুদের বাড়ি নষ্ট করবা এবং যেখানে পাবা তাদের হত্যা করবা, এদেশ পাকিস্তান।

২১ মে ১৯৭১ রামপাল থানাধীন ডাকরা কালিবাড়িতে হাজার হাজার হিন্দুরা এসে আশ্রয় নেয় সেখান থেকে ভারতে চলে যাবার জন্য। একেএম ইউসুফ বাগেরহাটের রাজাকার রজ্জব আলী, সিরাজ মাস্টারকে নির্দেশ দেন ডাকরা কালিবাড়িতে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে রাজাকাররা ২১ মে, ১৯৭১ তারিখে ডাকরা কালিবাড়িতে আক্রমন করে ৫০০/৬০০ হিন্দুদের হত্যা করে। ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া একজনের নাম আমি বলতে পারি। সে হল নারায়ন চৌকিদার যার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরে।
এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ইউসুফ সাহেব যে নির্দেশ দিলেন তা আপনি জানলেন কি করে? আপনি তো র্নিদেশ দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেননা।
তখন সাক্ষী বলেন, আমাদের এলাকার শান্তি কমিটির নেতা সিদ্দিক মাস্টার, শাহাদাত কাজী ওরফে বাসার কাজী  প্রমুখদের কাছ থেকে শুনেছি ইউসুফ সাহেবের নির্দেশে রাজাকাররাও ওইসব ঘটনা ঘটায়।
ট্রাইব্যুনাল আবার প্রশ্ন করেন, যে দুই জনের নাম বললেন তারা কি জীবিত না মৃত। সাক্ষী বলেন, মৃত।

এরপর সাক্ষী বলেন, ২২ মে ১৯৭১ সকাল বেলা নারায়ন চৌকিদার আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে বলল এদেশে  আর থাকা যাবেনা। সবাইকে ভারতে চলে যেতে হ।ে তারপর আমরা আমাদের গ্রামের সবাইকে নিয়ে ভারতে চলে যাই। ভারতের বশিরহাটে আশ্রয় নেই। সেখানে আমার বাবা মাকে রেখে আমি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য বিহারের চালুকিয়াতে চলে যাই। ২৭ দিন ট্রেনিং শেষে আফজাল কমান্ডারের সঙ্গে ৯ নং সেক্টর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। দেশে এসে বিভিন্ন রনাঙ্গনে যুদ্ধ করি।
সর্বশেষ ১৩ অক্টেবার ১৯৭১ বাগেরহাট থানার ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি করে। ওই দিনই বাগেরহাট থেকে রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে রাজাকাররা আমাদের ঘিরে ফেলে চারদিক থেকে। রাজাকারদের সাথে আমাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। জায়গাটি অচেনা বিধায় আমরা যুদ্ধে টিকতে না পেরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাই। আমরা চার/পাঁচজন পাশের একটি সুপারি বাগানে আশ্রয় নেই। পরদিন ১৪ অক্টোবর ভোরে একটি লোক আমাদের দেখে ফেলে। সে আমাদেরকে জানায় যেখানে আছেন সেখান থেকে নডবেননা। আপনাদের বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজনকে ধরৈ রাজাকাররা চুলকাঠি বাজারে নিয়ে গেছে। সেখানে তাদেরকে হত্যা করে হবে বলে শুনেছি। এই লোকটি পরে আমাদেরকে এসে জানায় ইউসুফের নির্দেশে চুলকাঠি বাজারের কাছে একটি কাঠের ব্রিজের ওপর মোট সাতজনকে রাজাকাররা হত্যা করেছে। এর মধ্যে বিজয় দাস ও সুনীল নামে দুজনের নাম সে আমাদেরকে বলতে পেরেছে। বাকিদের নাম বলতে পারেনি। ওই লোকটি আমাদেরকে ১৪ অক্টোবর একটি নৌকাযোগে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটায় পৌছে দেয়।

অবরোধের কারনে আসামী পক্ষের সিনিয়র কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলনা ট্রাইব্যুনালে। আসামী পক্ষে গাজী এম এইচ তামিম নামে একজন মাত্র জুনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : ১৩ অক্টোবরের যে ঘটনা আপনি বললেন তা সত্য নয়।
উত্তর : অসত্য।
প্রশ্ন : ১৯ এপ্রিল সমাবেশে এ কে এম ইউসুফের বক্তব্য দেয়ার ঘটনাও সত্য নয়।
উত্তর : অসত্য।
প্রশ্ন : ওই বক্তব্য দিয়েছিল রজ্জব এবং মোজাম ডাক্তার। ইউসুফ সাহেব নয়।
উত্তর : অসত্য।
প্রশ্ন : ওই দিন ছাড়া আর কোন শান্তি কমিটির মিটিংয়ে গেছেন কখনো?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার জানামতে  আর কোন হিন্দু কি শান্তি কমিটির মিটিংয়ে গেছে কখনো?
উত্তর : আমরা ভারতে যাবার আগ পর্যন্ত রামপালের ওই সমাবেশ ছাড়া   শান্তি কমিটির আর কোন মটিং হয়নি।
এ পর্যন্ত জেরার পর গাজি তামিম আদালতের কাছে আবেদন করেন যেহেতু সিনিয়র আইনজীবী নেই তাই জেরা দুই দিন মুলতবি রাখার জন্য। তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান বলেন, আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হল। গাজি তামিম আরো সময় প্রার্থনা করলে তিনি বলেন, নো। কাল না আসলে জেরা কোজ করা হবে। উকিল না আসার কারনে বিচারকদের উঠে যেতে হবে এটা আনহার্ড।
এসময় গাজি তামিম অবরোধের সময় সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে তাদের চলাচালে রসমস্যার কথা বলেন। তখন চেয়ারম্যান বলেন, পেছনে তাকিয়ে দেখেন সব লোক এসেছে। রাস্তায় হরদম যানবাহন চলছে। অবরোধে রাজধানীর ভেতরে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে, যানবাহন চলতে পারবে এটা বলা আছ।গাজি তামিম বলেন দোকানপাট খোলা কিন্তু যানবাহন চলতে পারেনা। খুব কম চলছে। চেয়ারম্যান এ দাবির বিরোধীতা করে বলেন, আপনারা সব জায়গায় যেতে পারেন, টকশোতে যেতে পারেন আর ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননা এটা হবেনা। কাল না আসলে জেরা কোজ।



ট্রাইব্যুনালের আজকের কার্যাবলী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ আদালত অবমাননা মামলায় সকালে হাজির হন সাংবাদিক কলামিস্ট মাহফুজ উল্লাহ। তাকে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির জন্য তার পক্ষে আবেদন পেশ করেন আইনজীবী রুমিন ফারহানা। এ আবেদন শুনানীর জন্য আগামী ২৪ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য্য করেন।

এছাড়া হাজী মোবারকের পক্ষে অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম সময় প্রার্থনা করলে আগামী মঙ্গলবার নির্ধারন করা হয় সাফাই সাক্ষী শুরুর জন্য।

ট্রাইব্যুনাল-২ এ একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৩ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীর নাম শুধাংসু মন্ডল। বাড়ি রামপাল। জবানবন্দী শেষে তাকে কিছু সময়ের জন্য জেরা করেন অ্যাডভোকেট তামিম। জেরা আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

আমার ভাই হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন তা কখনো শুনিনাই

মেহেদী হাসান
মাওলানা  সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে  অপহরনের শিকার সুখরঞ্জন বালী বলেছেন, আমার ভাইকে হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন বলে কখনো শুনিনাই। মিলিটারি এবং  দেশীয় যেসব লোক আমাদের বাড়ি থেকে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায় সেদিন সাঈদী সাহেব সেখানে ছিলেননা, তাকে দেখিনাই।

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও সাক্ষ্য দিতে না আসা প্রসঙ্গে সুখরঞ্জন বালী বলেছেন, মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমাকে  বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে । তাতে রাজি না হওয়ায় আমারে তারা আনেনাই। আমিও   হেদিকে  যাই নাই ।

ঢাকায় আসার পর অপহরনের একদিন পূর্বে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী উপরোক্ত কথা বলেন। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে তাকে একটি বাড়ি একটি খামার এবং নগদ অর্থও  দিতে চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন সুখরঞ্জন বালী।

১৯৭১ সালে  পিরোজপুরে উমেদপুরে বিশাবালী নামে এক ব্যক্তিকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে মাওলানা  সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। সেই বিশাবালীর ছোট ভাই সুখরঞ্জন বালীকে সাক্ষী করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে না এসে মাওলানা সাঈদীপর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন গত  পাঁচ নভেম্বর। সেদিন তাকে গোয়েন্দা পুলিশ অপহরন করে নিয়ে যায় ট্রাইব্যুালের গেট থেকে।

বিশাবালী নিহত হওয়া বিষয়ে সুখরঞ্জন বালী বলেন, ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়  হবে। আমার ভাই বিশাবালী  অসুস্থ  ছিলেন  ।  ঘটনার দিন মিলিটারি আসার খবর এবং চিৎকার টের পেয়ে  আমি আমার মাকে নিয়ে বাড়ির পাশে বাগানে যাই।  আমার অসুস্থ ভাই ঘরে থাকে।  ১৫/১৬ জন মিলিটারি আসে। তাদের সাথে  রাজ্জাক, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, গনি গাজি, মোসলেম মওলানা, মোহসিন ও মোমিন ও মুন্সি এরা ছিল । সাঈদী সাহেব ছিলেন না।  তারে আমরা ভালোভাবেই চিনি। তার শ্বশুরের কাপড়ের দোকান  ছিল পাড়েরহাটে। সে কারনে তার সাথে আমাদের পরিচয় ছিল।  ঘটনার দিন তিনি থাকলে  আমরা চিনতাম। তিনি  ছিলেন না, তারে আমরা দেখি নাই।

সুখরঞ্জন বালী বলেন, মিলিটারি এবং তাদের সাথে থাকা দেশী মানুষ আমাদের ঘরে উইড্যা  আমার অসুস্থ ভাই বিশাবালীকে  ঘর থেকে নামাইয়া রাইফেলের কোন্দা দিয়া পিডায়। পিডাইয়া তারে বাইন্দা ছাইন্দা নিয়া যায়। পরদিন সকাল বেলা শুনি পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর পাড়ে নিয়া আমার ভাই ও হোগলাবুনিয়ার যে ৫/৬ জন লোক ধরছে তাদেরকে একত্র করিয়া বলেশ্বর নদীর ঘাটে নিয়া গুল্লি কইরা হত্যা করছে। আমার ভাইকে হত্যার সময় সাঈদী সাহেব ছিলেন বলে কখনো শুনিনাই।
রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও আপনি তাদের পক্ষে কেন সাক্ষ্য দিতে আসলেননা সে প্রশ্নের জবাবে  সুখরঞ্জন বালী জানান, আসি নাই কারন আমি সত্য সাক্ষী দিতে চাই। কিন্তু তারা আমারে বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে । আমি বলছি, না আমি বলতে পারবো না।  আমি মিথ্যা কথা বলবো না। যারে আমি দেহি নাই তার নামে কিভাবে মিথ্যা বলব। এজন্য আমি হেদিকে  যাই নাই। এদিকে আমারে আনছে।  তারা আমারে আনে নাই।

রাষ্ট্রপক্ষের কথামত সাক্ষ্য দিতে চাপ সৃষ্টি প্রসঙ্গে সুখরঞ্জন বালী বলেন, ট্রাইব্যুনালের পক্ষে  লোক গেছিলো  আমার বাড়িতে।  তখন মাহবুব (মামলার বাদী) আমার বাড়িতে যাইয়া বলে তুমি সাক্ষী দিতে যাবা একটু পাড়ের হাট। আমি বলছি, ঠিক আছে আমি যা জানি সেই সত্য কথাই বলব। সে বলে, ঠিক আছে যাবা আমার সাথে এহন চলো। হেরপর, আমারে নিয়া পাড়েরহাট রাজলক্ষী স্কুলের দোতলায় বইস্যা আমার সাক্ষী নেয়া শুরু করছে। আমি যেডুক জানি আমার ভাই সমন্ধে তা বলি। আমার ভাইরে কে মারছে এই কথা আমি বলা শুরু করছি । আমি বলি  অমুক অমুক ছিল, তখন মাহবুব বলে যে, না ঐসব বাদ দিয়ে তুমি সাঈদীর কথা বলবা। আমি বলছি আমি পারবনা।  তখন আমার পেট পাছাইয়া চিমটি মারে, আমার পিঠে আঙুল দিয়া গুতা মারে মানিক (মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী এবং পিরোজপুরে দায়ের করা মামলার বাদী) ও মাহবুব।

এসময় ঢাকা থেকে যাওয়া এক লোক  বলে , মাহবুব সাহেব আপনি যে সাক্ষী আনছেন, এই সাক্ষীতে  আপনার সর্বনাশ হইয়া যাইতেছে, আপনার সাক্ষী হয় না। এরপর ঐখান দিয়া মাহবুব আর মানিক  আমারে উঠাইয়া দেয়।  আমি চইল্লা আসি ।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে ট্রাইব্যুালে অভিযোগ করা  হয়েছে আপনিসহ আরো অনেক সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর  পক্ষে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হুমকি ধামকি দিয়েছে। সে কারনে আপনি চার মাস   ধরে নিখোঁজ। তারা  আপনাকে খুঁজে পাচ্ছেনা এবং ট্রাইব্যুনালেও হাজির করতে পারছেনা। এ প্রশ্নের জবাবে সুখরঞ্জন বালী বলেন,    কোনদিন আমার সাথে হেদের কেউ দেখাও করে নাই, হুমকি ধামকিও দেয় নাই। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যে মাহবুব আর মানিক হেরা আমারে হুমকি ধামকি করতেছে। আমাকে আর একদিন বলছে  তোমারে একটি বাড়ি একটি খামার দেব আর দেড় লাখ টাকা দেব, তুমি সাঈদী সাহেবের নামের কথা বলবা। আমি বলছি না, আমার মরা ভাইকে আমি বেচতে আমি স্বিকার নাই। আমি মিথ্যা কথা কইতাম না। যারে না দেখছি আমি কেউর নামের কথা বলতে পারব না।

সাঈদী সাহেবের লোকজন কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো এবং আপনার নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে আপনার মেয়ে একটি জিডি করেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে সুখরঞ্জন বালী বলেন,  আমি রাজি না হওয়ায়  মাহবুব আর মানিক  আমারে লোকজন দিয়া রগকাটার হুমকি দিছে। ওরা বাড়িতে যাইয়া  গালাগালি করছে।

হেরপর একদিন আমার সাথে  দেখার পরে বলে তুমি একটি বাড়ি একটি খামার  নিবা নাইলে তুমি এই দেশে থাকতে পারবা না। তারপরে আমি বাড়ি থেকে চইল্লা গেছি। চইল্লা যাওয়ার পরে আমার মেয়ে, মেয়েরে এসে হুমকি ধামকি দিছে, তোর বাবার নামে তুই  গুম কেস করবি। । আমার মেয়ে বলছে, আমার বাবার নামে গুম কেস করা লাগবে না। আমার স্ত্রী বলছে, হেয় যেখানে থাকুক না কেন আমাগো সাথে কথা বার্তা চলে, আমরা কারো নামে গুম কেস করতে পারব না। শেষ মেষ বলে জোর করে আমার মেয়েকে ১০০০/- এক হাজার

টাকা দিয়া একটা সাদা কাগজে সই নিছে। তারপর ঐ সই করা কাগজ দিয়া তারা কি করছে না করছে তা আমি বলতে পারব না।

বিশাবালী হত্যা বিষয়ে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০ টি অভিযোগে বিচার চলছে তার মধ্যে একটি হল তার নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে বিশাবালী নামে একজনকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ বিষয়ে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম গত বছর ৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী প্রদানের সময় বলেন,
২ জুন সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম। লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি অনুমান সকাল ১০টায় পারের হাটের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী দানশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোমিন হাওলাদার, হাকিম  কাজী, হাবিবুর রহমান মুন্সী  পাক হানাদার বাহিনী সঙ্গে নিয় উমেদপুর গ্রামে  আমার বাড়ির  নিকটস্থ হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে।  ২৫/৩০টি ঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিশাবালী অসুস্থ  থাকায় তাকে ধরে ফেলে এবং একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁেধ মারমিট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশক্রমে বলে যে, ওটাকে যখন পেয়েছি ওটাকে গুলি কর। জনৈক রাজাকার গুলি করে বিশাবালীকে হত্যা করে।