মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সুলতানা কামালের জেরা শুরু////দেশে থাকা পর্যন্ত আমাদের এলাকায় কোন রাজাকার দেখিনি নামও শুনিনি

মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষী সুলতানা কামালের জেরা আজ শুরু হয়েছে। জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয় “আপনি যে সময় পর্যন্ত ধানমন্ডিতে আপনাদের বাড়িতে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত কতজন রাজাকারের সাথে আপনার দেখা হয়?” উত্তরে সুলতানা কামাল বলেন, “আমি  ১৯৭১ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত  ধানমন্ডিতে আমাদের বাড়িতে ছিলাম।  তখন পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী গঠনের খবর শুনি। তাদের কাউকে তখন ধানমন্ডিতে দেখিনি। নামও শুনিনি। 
অপর এক প্রশ্নের  জবাবে সুলতানা কামাল জানান,  স্বাধীনতার পর দেশে ফেরার পরও তিনি তার এলাকার কোন রাজাকার আল বদর সদস্যের নাম শুনেননি এবং দেখেননি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী আমার কাছে কোন পরিচতি ব্যক্তি ছিলনা।

আজ জেরা শুরু হবার পূর্বে অসমাপ্ত জবানবন্দী শেষ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি’র চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। গতকালও তিনি সোয়া একঘন্টা জবানবন্দী দেন। গত সোমবার তার জবানবন্দী গ্রহণ শুরু হয় এবং সেদিন তিনি সোয়া দুই ঘন্টা জবানবন্দী প্রদান করেন।

আজ  জবানবন্দী শেষে তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক প্রমুখ।

জেরা :
প্রশ্ন : যে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেন তার নাম বলেন।
উত্তর : মনোয়ারা।
প্রশ্ন : কবে জবানবন্দী দেন?
উত্তর : তিনি বেশ কয়েকবার আমার কাছে যান। তবে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কনকুসিভলি শেষ করেছি।
প্রশ্ন : মোট কয়দিন জবানবন্দী দিয়েছেন?
উত্তর : যেহেতু গত বছর জবানবন্দী দিয়েছি তাই নির্দিষ্ট সংখ্যা মনে নেই। একাধিকবার দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বাসায় না অফিসে দিয়েছেন?
উত্তর : অফিসে।
প্রশ্ন : আপনি নিজেও কয়েকবার তদন্ত  সংস্থার অফিসে গিয়েছিলেন?
উত্তর : আমি মনে করতে পারছিনা যে, আমি কখনো সেখানে গিয়েছি।
প্রশ্ন : রাজাকার অর্ডিনেন্স আপনি তদন্ত সংস্থার অফিসে গিয়ে জমা দিয়েছেন মনে পড়ে?

উত্তর : এই ট্রাইবু্যুনালে যখন তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের অফিস ছিল তখন আমি এই ট্রাইব্যুনালে এসে তদন্ত সংস্থার কাছে  রাজাকার অর্ডিনেন্স দিয়েছি।
প্রশ্ন : তারিখ?
উত্তর : খুব সম্ভবত ২০১০ সাল। তারিখ মনে নেই।
প্রশ্ন : আপনি তো এই মামলার নালিশকারী ব্যক্তি নন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তদন্ত সংস্থার কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার ক্রমিক নং ৫, তারিখ ১/৮/২০১২ নালিশকারী কে তা আপনার জানা নেই।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী গঠনের তারিখ বলতে পারেন?
উত্তর : সঠিক বলতে পারবনা। মে মাসের প্রথম দিকে খুলনায়  জনৈক ইউসুফের নেতৃত্বে হয়েছে ।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনাদের বাড়িতে কি কি পত্রিকা যেত?
উত্তর : পূর্বদেশ, আজাদ, মর্নিং নিউজ, দি পিপল।
প্রশ্ন রাজাকার বাহিনী গঠনের খবরটা কি পূর্বদেশে  ছিল?
উত্তর :  হ্যা।
প্রশ্ন : পত্রিকাটি কি সংরক্ষিত আছে বা তদন্ত সংস্থার কাছে জমা দিয়েছেন?
উত্তর : সংরক্ষনে নেই এবং জমাও দেইনি।
প্রশ্ন : যে খবরটি পড়েছিলেন তাতে কি ইউসুফ সাহেবের নাম পড়েছিলেন?
উত্তর : যতদূর মনে পড়ে ছিল।
প্রশ্ন : দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অন্য কোন পত্রিকায় কি এ খবর পড়েছিলেন যে, ইউসুফ সাহেব রাজাকার বাহিনী গঠন করেছেন?
উত্তর : প্রকাশিত হবারই কথা। তবে আমি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তা দেখেছি কি-না মনে করতে পারছিনা। ৮০ র দশকে বিচিত্রায় এসেছে মনে হয়।
প্রশ্ন : ওই সময়  বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন বর্তমান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার কবির।
 উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মোস্তারি শফি শাহরিয়ার কবির দায়িত্ব নেয়ার আগে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির  আহবায়ক ছিলেন।
উত্তর : মোস্তারি শফি ঘনিষ্ঠভাবে ঘাতক দালাল নিমর্ূূল কমিটির সাথে জড়িত ছিলেন জানি তবে আহবায়ক ছিলেন কি-না সঠিক মনে নেই।
প্রশ্ন : আনসার বাহিনী বিলুপ্ত করে গেজেটের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়  ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে তা জানা আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীর প্রথম পরিচালক ছিলেন ডিআইজি পুলিশ আব্দুর রহিম সাহেব।
উত্তর :   জানা নেই। কারণ ওই সময় দেশে ছিলামনা।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের  সচিব হয়েছিলেন  তা জানা আছে?
উত্তর : এ নামে কোন সচিব ছিল কি-না জানা নেই।
প্রশ্ন : রাজাকারদের এসডিওরা নিয়োগ দিতেন।
উত্তর : একটি বাহিনী যখন গেজেটের মাধ্যমে সরকারের অধীনে নেয়া হয় তখন  তা সরকারের নেতৃত্বে থাতকেই পারে।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে ট্রেনিং দিত সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।

উত্তর : এরও উত্তর আগের প্রশ্নের মতই । যখন তাদের দায়িত্ব সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয় তখন সরকারি লোক তাদের ট্রেনিং দিতে পারে।
প্রশ্ন : ২ আগস্ট সরকারি বিধিবদ্ধ বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তারা কোন অস্ত্রধারী বাহিনী ছিলনা।
প্রশ্ন : এ ধরনের বাহিনী যখন কাজ করে তখন সবসময় তাদের অস্ত্রের দরকার হয়না। তথ্য সরবরাহ করা, বাড়ি চিনিয়ে দেয়া, হুমকি দেয়ার জন্য অস্ত্রের দরকার হয়না।
প্রশ্ন : আপনাদের বাড়িতে কখনো আর্মি রাজাকার গেছে?
উত্তর : না । তবে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমার মায়ের ওপর আল বদর কর্তৃক হামলার একটি  পরিকল্পনার  তথ্য পাওয়া গিয়েছিল বলে শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনার মা সুফিয়া কামাল দুটি ডায়রি লিখতেন। একটিতে কবিতা লিখতেন এবং একটিতে দৈনন্দিন বিষয় লিখতেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : দৈনন্দিন ডায়েরি পরে বই আকারে প্রকাশ হয়।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ওই ডায়েরিতে আল বদর কর্তক হামলার পরিকল্পনার কথা লেখা নেই।
 উত্তর : আছে শেষের দিকে।  পরে তার বিভিন্ন বক্তৃতায়ও এসেছে।
প্রশ্ন : তিনি কখনো এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের নাম আপনাদের বলেছেন?
উত্তর : নাম জানার সুযোগ ছিলনা এবং বলেনওনি।
প্রশ্ন : ১৬ জুন আপনাদের ঢাকা থাকাকালে কোনদিন কোন রাজাকার বা আল বদর ফোর্সের কারো সাথে দেখা হয়েছে?
উত্তর : আল বদর গোপন কিলার ফোর্স ছিল। তারা কখনো প্রকাশ্যে পরিচয় দিয়ে আসতনা। যাদের তারা হত্যা করেছে তাদের কাছেও তারা মুখ ঢেকে যেত।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি কোন আল বদর সদস্যকে সনাক্ত করতে পারেননি।
উত্তর : পারিনি।
প্রশ্ন : আপনি যে সময় পর্যন্ত ধানমন্ডিতে আপনাদের বাড়িতে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত কতজন রাজাকারের সাথে আপনার দেখা হয়?
উত্তর : আমি ১৬ জুন পর্যন্ত ছিলাম। তখন রাজাকার বাহিনী গঠনের খবর শুনি। তাদের কাউকে তখন ধানমন্ডিতে দেখিনি। নামও শুনিনি।
প্রশ্ন : দেশে ফেরার পর ওই বাড়িতেই ছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  এখন কোথায় থাকেন?
উত্তর : ওখানেই।
প্রশ্ন : সুফিয়া কামাল তো ভারতে যাননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : দেশে  আসার পর আপনার এলাকায় কোন রাজাকার আল বদরের নাম শুনেছেন বা দেখেছেন?
উত্তর : না ।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার  অব্যবহিত পরে যেসব পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হয় তাতে  রাজাকার, আল বদর, শান্তি কমিটি প্রধানের নাম প্রকাশিত হয়নি।
উত্তর : পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : আল শামস প্রধানের নাম সর্বপ্রথম কবে শুনেছেন এবঙ তার নাম কি?
উত্তর : মনে  নেই।

প্রশ্ন : কোন আল শামস সদস্যের নাম পত্রিকায় দেখেছেন?
উত্তর : না । তবে আল বদরের অনেকের নাম দেখেছি।
প্রশ্ন : সর্বপ্রথম কোন আল বদর সদস্যের নাম দেখলেন এবং কবে দেখলেন?
উত্তর : মতিউর রহমান নিজামী। ৮০’র দশকের প্রথম দিকে।
প্রশ্ন : মতিউর রহমান নিজামীর তখন আর কোন পরিচয় ছিল?
উত্তর : জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিল।
প্রশ্ন : কোন পর্যায়ের নেতা ছিলেন?
উত্তর : জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে নিজামী কোন পরিচিত ব্যক্তি ছিল কি-না।
প্রশ্ন : আমার কাছে কোন পরিচিত ব্যক্তি ছিলনা।
প্রশ্ন : আপনি ছাত্র রাজনীতি করতেন?
উত্তর : সরাসরি কোন ছাত্ররাজনীতি করতামনা।
প্রশ্ন : ছয় দফা, ১১ দফা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি।
প্রশ্ন : ১১ দফার উদ্যোক্তা  করা ছিল?
উত্তর : বড় দল ছিল আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থী বিভিন্ন দল।
প্রশ্ন :  স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনটি রাজনৈতিক ধারা ছিল। জাতীয়তাবাদী, সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মভিত্তিক।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ধর্মভিত্তিক দলগুলো পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার  পক্ষে রাজনৈতিক ভূমিকা  গ্রহণ করে ১৯৭১ সালে।
প্রশ্ন : হ্যা।
প্রশ্ন : তার মধ্যে জামায়াতে ইসলাম একটি দল ছিল
উত্তর : অবশ্যই।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন খাজা  খয়েরউদ্দিন ।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটি কোন পদ্ধতিতে কাজ করতেন জানা আছে?
উত্তর : তারা বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য প্রচারনার কাজ করেছে। ইসলাম রক্ষা করতে হলে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে। ইসলাম এবং পাকিস্তান একই সূত্রে গাথা এ মর্মে প্রচার করেছে। এ জন্য ধারা ধর্মকে ব্যবহার করেছে। তারা মনে করত প্রকৃত মুসলমানরাই হচ্ছে পাকিস্তানের অধিবাসী। তারা আরো বলেছে কোন ভাল মুসলমান মুক্তিযুদ্ধ  এবং বাংলাদেশ আন্দোলন সমর্থন করতে পারেনা। মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা ধর্মের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেছে মানুষকে পাকিস্তানের পক্ষে নেয়ার জন্য।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য কতজন ছিল জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কত তারিখে প্রথম কেন্দ্রীয় শান্তি  কমিটি হয় বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটিতে কোন দলের লোক বেশি ছিল জানা আছে?
উত্তর : কোন  দলের বেশি ছিল তা বলতে পারবনা। তবে মুসলিম লীগ, পিডিবি,  জামায়াতের লোকই বেশি ছিল।
প্রশ্ন : খাজা খয়েরউদ্দিন  নেতৃত্বাধিন শান্তি কমিটি ছাড়া অন্য কোন শান্তি কমিটি ছিল?


উত্তর : মৌলভি ফরিদ   আহমদ নামে আরেকজন শান্তি  কমিটির নেতার নাম শুনেছি। তবে তার নেতৃত্বে আলাদা কোন শান্তি কমিটি ছিল কি-না জানা নেই।
প্রশ্ন : মৌলভি ফরিদ আহমদ কোন দলের?
উত্তর : পিডিবি।
প্রশ্ন : মৌলভি ফরিদ আহমেদ নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটির অফিস ছিল ধানমন্ডি তা জানেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির  জেলা প্রধান এবং  তাদের দলীয় পরিচয় জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের  চেয়ারম্যান।
উত্তর : কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছিল।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে তাতে দেখা যায় শান্তি কমিটি কখনো কখনো  পাক হানাদার বাহিনীর সাথে শসস্ত্র অভিযানে  অংশ নিয়েছে’ । আমার প্রশ্ন হল  এ জাতীয় কয়টি অভিযানে অংশ নেয়ার তথ্য আপনার কাছে আছে?
উত্তর : নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারবনা। তবে একাধিক।
প্রশ্ন : এ তথ্য আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন?
উত্তর : কিছু কিছু ।
প্রশ্ন : এগুলো কি পেপার কাটিং না কেউ আপনাকে দিয়েছেন না আপনার ব্যক্তিগত সংগ্রহের?
উত্তর : কিছু ব্যক্তিগত সংগ্রহের, কিছু গবেষনার, কিছু কিছু পেপার কাটিং।
প্রশ্ন : শান্তি কমিটির এসব অপারেশনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের নাম আছে আপনার কাছে?
উত্তর : এ মুহুর্তে মনে পড়ছেনা।
প্রশ্ন : শান্তি বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র সরবরাহের  জন্য পাকিস্তান সরকার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য আছে আপনার কাছে?
উত্তর : না।
 এ পর্যন্ত জেরা চলার পর মুলতবি করা হয়।  আগামীকাল  বুধবার আবার তার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নিজামী মুজাহিদরা রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সাথে যুক্ত ছিলেননা?/// শাহরিয়ার কবিরের জেরা

১০/৯/২০১২
শাহরিয়ার কবির  আজ ট্রাইবু্যুাল -২ এ জেরায়  বলেন,  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না   ইহা সত্য।  সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল।  মওলানা মতিউর রহমান নিজামী  বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।

জেরায় শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বঞ্চালীয কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী লিখিত বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। জেনালে নিয়াজী এই বইয়ে বলেছেন রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী। ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।

আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ  সাক্ষীকে জেরা করেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।


জেরা :
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর একটা প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন :  সামরিক বাহিনীর প্রজ্ঞাপন জারীর পূর্বে ঢাকা জেলার রাজাকার বাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট কে ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর :  তা আমি বই না দেখে বলতে পারব না। এই তথ্যটি একাত্তরের ঘাতকেরা  কে কোথায় নামক বইতে পাওয়া যাবে
প্রশ্ন : এই প্রজ্ঞাপন জারির পরে রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বা পরিচালনার দায়িত্ব ইস্টার্ন-কমান্ডের কোন অফিসারের উপর দেওয়া হয়েছিল বলতে পারবেন?
উত্তর : তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলায় তালিকাভূক্ত রাজাকারের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : তা বই না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মেজর আরেফিন কর্তৃক তিন খন্ডের সম্পাদিত তেত্রিশ হাজার রাজাকারের পরিচিতি সম্বলিত একটি বই আছে যেখানে ঢাকা জেলার রাজাকারদের সংখ্যা ও তালিকা আছে।
উত্তর : থাকতে পারে।
মেজর আরিফিনের বইয়ে তিনি রাজাকারদের দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেননি। আমার গবেষণাতে এবং মেজর আরেফিনের উল্লেখিত বইয়ে রাজাকারদের দলীয় পরিচিতি সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। (পরে বলেন) আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ রাজাকারই দলীয় পরিচয়ে পরিচিত ছিল আবার অনেকের দলীয় পরিচয় ছিল না। (আপত্তি সহকারে) যুদ্ধাপরাধ একাত্তর শীর্ষক প্রমাণ্য চিত্রে উল্লেখ আছে জামায়াত নেতারা কিভাবে রাজাকার বাহিনীতে জামায়াত কর্মী এবং সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভূক্তি ঘটিয়েছিলেন। এ ছাড়াও মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।

প্রশ্ন :  রাজাকাররা পাকিস্তানে সেনা বাহিনীর সহযোগী বাহিনীর বেতনভোগী সদস্য ছিল। মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন।
উত্তর : (আপত্তি সহকারে) রাজাকাররা জামায়াত নেতাদের সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহন করত।
প্রশ্নঃ অধ্যাপক গোলম আযম, আব্বাস আলী খান, এড. আফাজ উদ্দিন, মতিউর রহমান নিজামী এদের কারো কর্তিক ইস্যুকৃত রাজাকারের পরিচয় পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?

উত্তরঃ আমার সংগ্রহে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাক্ষরিত কোন রাজাকারের পরিচয় পত্র নেই। আমার প্রামাণ্য চিত্রে রাজাকাররা তাদের সাক্ষাতকারে বলেছেন তারা মতিউর রহমান নিজামীর সাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহণ করত।

প্রশ্ন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।  
উত্তর: ইহা সত্য।  সরকারি ভাবে ছিলেন না। তবে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান আর্মির সহযোগী বাহিনী ছিল।  মওলানা মতিউর রহমান নিজামী  বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন তার দল ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অংশ ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল।

প্রশ্ন: আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও মতিউর রহমান নিজামীর মতো বেসামরিক ব্যক্তি ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী কর্তৃক লিখিত  বিট্রেয়াল অব ইস্টপাকিস্তান বইটি পড়েছেন?
উত্তর: বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী বলেছেন, রাজাকার বাহিনী গঠন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বললেও প্রকৃত সত্য এই যে, রাজাকার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট একটি সহযোগী বাহিনী এবং ওই রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই বইয়ে জেনারেল নিয়াজী আরো বলেছেন, আল-বদর ও আল-শামস নামে কোন পৃথক বাহিনী ছিল না। এগুলো রাজাকার বাহিনীর দুটি উইং বা শাখা ছিল।
উত্তর: হ্যাঁ। এটা নিয়াজীর কথা।
প্রশ্ন: আল-বদর বাইটি আপনি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বইটির লেখক সেলিম মনসুর খালেদ?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বইয়ে আল বদর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আল-বদর বাহিনী সৃষ্টি করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জামালপুরে কর্মরত মেজর রিয়াজ এবং আল-বদর নামও তার দেয়া।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলী কমান্ড যখন যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমার্পণ করেন তখন তাদের সঙ্গে তাদের সহযোগী বাহিনীও আত্মসমার্পণ করে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই বাহিনীগুলো ছিল ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস।
উত্তর: অনেকেই আত্মসমার্পণ করেন, এগুলো আংশিক সত্য।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনীর তালিকায় আল-বদর আল-শামস বাহিনীর নাম ছিল না। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের কি হয়েছিল?
উত্তর: রাজাকারদের অধিকাংশই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। আর যারা যুদ্ধবন্দী হিসেবে দেশে ছিল তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছিল। আত্মসমর্পণকৃত রাজাকাররা যারা এদেশে থেকে যায় তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছে।

প্রশ্ন: যেসক রাজাকারদের বিচার হয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: আত্মসমর্পণকৃত রাজাকারদের যাদের বিচার হয়েছিল তাদের বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে ইপিসিএফ, মুজাহিদ, রাজাকার, ওয়েস্ট পাকিস্তান পুলিশ ও ইন্ডাসট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সেস এর প্রধান কে ছিলেন বলতে পারবেন? 
উত্তর: মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: রাজাকারদেরকে মহাকুমা প্রশাসক নিয়োগ দিতেন?
উত্তর: দিতেন, পরে বলেন জামায়াত নেতারা তাদের আইডি কার্ড দিতেন।
প্রশ্ন: অধ্যাপক গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী কর্তৃক ইস্যুকৃত আপনার কথিত রাজাকারদের পরিচয়পত্র আপনার সংগ্রহে আছে কি?
উত্তর: সংগ্রহে নেই।
প্রশ্ন: রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তান সরকার একটি প্রজ্ঞাপন দ্বারা সামরিক বাহিনীর অধীনে আনা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ৭১ সালে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুর অবাঙ্গালী বিহারী অধ্যুসিত এলাকা বা বিহারী সংখ্যা গরিষ্ট এলাকা ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এ এলাকা থেকে ’৭০ এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন এবং তিনি বিহারী ছিলেন? 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিও ছিলেন।
উত্তর: এটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদেননি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা উত্তর গঠিত গণপরিষদে তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতা করার জন্য অ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটি বেসামরিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন মুসলিম লীগের খাজা খয়েব উদ্দিন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরণ করার অভিযোগে স্বাধীনতার পর একটি মামলা করা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলা করেছিলেন নাসির আহমেদ।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পান্না কায়সার, নাসির আহমেদ, জাকারিয়া হাবিব, নিলা জাকারিয়া এবং শাহানা বেগমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলাকারী নাসির আহমেদ ওই ঘটনায় জড়িয়ে কোন আল-বদর কমান্ডারের নাম উল্লেখ করেননি।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: জহির রায়হান ও অন্যান্যদের সহায়তায় এবিএমএ খালেক মজুমদারকে আটক করে শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন কি না?
উত্তর: জানা নেই। তখন দেশের বাইরে ছিলাম।
প্রশ্ন: ওই সময় এবিএমএ খালেক মজুমদারের দালাল আইনে সাত বছর সাজা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: দণ্ডের বিরুদ্ধে এবিএমএ খালেক মজুমদার হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি বদরুল হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাকে খালাস প্রদান করেন।
উত্তর: এ আপিল কবে হয় এবং কবে নিষ্পত্তি হয় তা জানা নেই।
প্রশ্ন: এবিএমএ খালেক মজুমদারের আপিলের রায় ম্যারিটের উপর হয়?
উত্তর: রায় না দেখার কারণে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: দালাল আইন বাতিল হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিলকৃত আপিল সমূহ ম্যারিটের বা গুনাগুণ বিবেচনায় নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাজা বহাল, এমনকি সাজা বৃদ্ধিও করা হয়েছে।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: অধ্যাপক মুনির চৌধুরী অপহরণের অভিযোগে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল এবং ওই মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।
উত্তর: জানা নেই। দালাল আইনে আধীনে যে বিচার হয়েছে তা শহীদ পরিবারের সদস্যরা কখনো মেনে নেয়নি কারণ প্রচলিত আইনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: তা হলে দালাল আইনকে কালো আইন মনে করেন কি না?
উত্তর: না, দালাল আইনের ক্রটিমুক্ত করার জন্য ’৭৩ সালে আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন করা হয়।
প্রশ্ন: ওই সময় তিনজন বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ও মনোরঞ্জন ধর দালাল আইন ও আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ করার সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।

লাট মেয়ার জেরা চলছে//সাীকে ইশারা-ইঙ্গিতে সহযোগিতা করার কারণে প্রসিকিউর মোহাম্মদ আলীকে সতর্ক করল ট্রাইব্যুনাল

১০/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাী আমির হোসেন মোল্লা ওরফে লাট মিয়ার  চতুর্থ দিনের মতো জেরা করা হয়েছে। জেরাকালে সাীকে ইশারা-ইঙ্গিতে সহযোগিতা করার কারণে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউর মোহাম্মদ আলীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। প্রসিকিউর মোহাম্মদ আলী জেরাকালে বার বার সাীকে ইশারা ইঙ্গিত দিচ্ছেলেন। আজ  জেরা শেষে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-২ এ কাদের মোল্লার আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন : একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী মিরপুরে অবস্থান নেয়।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী মিরপুরের কর্তৃত্ব বুঝে নেয়।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৩১ জানুয়ারি যখন মিরপুর মুক্ত হয় তখন ভারতীয় মিত্র বাহিনী মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল না।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আলুবদি গ্রামের আব্দুল বারেক যিনি ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ঘটনার প্রত্যদর্শী তাকে চেনেন?
উত্তর : তাকে চিনি না। তিনি প্রত্যদর্শী কি না তাও জানি না।
প্রশ্ন : আলুবদী গ্রামে বীরঙ্গনা মোসা. লাইলীকে চেনেন?
উত্তর : আমি চিনি।
প্রশ্ন : আলবদী গ্রামের কালু মোল্লা, মনসুর আলী দেওয়ান, ওহাব আলী দেওয়ান, বদু বেপারী, বারেক মাদবর,  রহমান বেপারী এদের চেনেন?
উত্তর : এদের আমি চিনতাম।
প্রশ্ন : আলবদী গ্রামের উত্তর পাড়ার কিতাব আলী ও চুনু বেপারীকে চেনেন?
উত্তর : চিনতাম।
প্রশ্ন : মোহাম্মদ আব্দুল হাই পিতার নাম হাজী মোঃ নাঈম উদ্দিনকে চেনেন?
উত্তর : চিনতাম।
প্রশ্ন : জবানবন্দীতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার কথা কাল্পনিক মিথ্যা ও বানোয়াট?
উত্তর : প্রশ্নই আসে না, অসত্য।
প্রশ্ন : স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন ওরফে কালাচাঁদকে চেনেন?
উত্তর : চিনি।
প্রশ্ন : স্থানীয় বাসিন্দা আলী আসগরকে চেনেন?
উত্তর : চিনি না।
প্রশ্ন : ২৪ এপ্রিল ঘটনার যে কথা বলেছেন তার প্রত্যদর্শী ছিলেন হাজী আব্দুল করিম। তাকে চেনেন?
উত্তর : চিনি না।
প্রশ্ন : ২১ জন আত্মীয় মারা গেছে। প্রথম বলেছেন খালু রুস্তম বেপারীর কথা। তার কয় সন্তান?
উত্তর : দু'ছেলে আনামত বেপারী ও নিলামত বেপারী।
প্রশ্ন : আলুবদি গ্রামের কিতাব আলীকে চেনেন?
উত্তর : চিনি না।
প্রশ্ন : মামাত ভাই ছুনুকে চেনেন?
উত্তর : ঘটনার সময় নিঃসন্তান ছিল।
প্রশ্ন : চাচা মোখলেছুর রহমানের কয় ছেলে ছিল?
উত্তর : এক ছেলে ঘটনার সময় ১২/১৩ বছর বয়স ছিল।
প্রশ্ন : ভাবী ইয়াসমিন বানুর কয় সন্তান ছিল?
উত্তর : নিঃসন্তান অবস্থায় নিহত হন।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন এডভোকেট জহির উদ্দিন। নির্বাচনী এলাকার সীমানা বলতে পারবেন।
উত্তর : উত্তরে ধৌর কামারপাড়া (হরিরামপুর ইউনিয়ন) দেিণ রায়েরবাজার ঝিগাঁতলা পর্যন্ত ছিল।
প্রশ্ন : তখন মিরপুর মোহাম্মদপুর কোন নির্বাচনী এলাকা ছিল?
উত্তর : একই নির্বাচনী এলাকা।
প্রশ্ন : ওই সময় জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কতোজন প্রার্থী মনোনয়ন দেন?
উত্তর : কে কোন পরিষদের প্রার্থী ছিলো বলতে পারবো না। সম্ভবত ড. মোশাররফ এমপি প্রার্থী ছিলেন।
প্রশ্ন : এডভোকেট জহির উদ্দিন বাঙ্গালি না অবাঙ্গালি ছিলেন?
উত্তর : অবাঙ্গালি ছিলেন।
প্রশ্ন : জহির উদ্দিন মিরপুরে বিহারীদের এলাকায় বসবাস করতেন?
উত্তর : আমি জানি না।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে জহির উদ্দিন সাহেব নির্বাচনী প্রচারণায় আপনাদের গ্রামে গিয়েছিলেন?
উত্তর : গিয়েছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন।
প্রশ্ন : জহির উদ্দিনের পে প্রচারণার সময় কে কে থাকতো?
উত্তর : অনেক বাঙ্গালি অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে রশিদ মোল্লা ও দুলা মিয়া বেঁচে আছে।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে মিরপুর এলাকায় বিহারীরা ভোটার সংখ্যায় বেশি ছিল।
উত্তর : এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন : যেহেতু বিহারীরা বেশি ছিল তাই বঙ্গবন্ধু অবাঙ্গালি এডভোকেট জহির উদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
উত্তর : এটা সত্য নয়।



কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষীর জেরা শেষ:


10/9/2012
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. হাসানুজ্জামানকে আসামী পক্ষের জেরা শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ গতকাল সাক্ষীকে জেরা করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী  কফিল উদ্দিন চৌধুরী। জেরা শেষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দী দেয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। 
জেরা:
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পরে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হওয়া বা স্বাধীনতা বিরোধীদের যে তালিকা হয়েছিল তাতে কামারুজ্জামানের নাম অন্তর্ভূক্তি সংক্রান্ত কোন কাগজ আপনি আদালতে দেখাতে পারবেন?
উত্তর: আদালতে দেখাতে পারব না।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আপনার বা আপনার পরিবারের দায়েরকৃত কোন অভিযোগের কাগজ আদালতে দেখাতে পারবেন?
উত্তর: কাগজ আমি দেখাতে পারব না।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর কামারুজ্জামান সাংবাদিকতা করেছেন এবং তিনি একজন জামায়াতে ইসলামীর নেতা?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনার ভাইকে পাকিস্তান আর্মির কাছে ধরিয়ে দিতে আপনার শ্বশুর গোষ্টির নিয়ন্ত্রিত রাজাকারা ভূমিকা রেখেছে জানতে পেরে পুনরায় ঝামেলায় জড়াবার আশঙ্কায় আপনার ভাইয়ের মৃত্য আপনাদের পরিবারের কেউ আনতে যায়নি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: যেহেতু আপনার শ্বশুর গোষ্টির প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে আপনার ভাইকে হত্যা করানো হয়, সেজন্য তারও আপনার ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করতে যায়নি?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি আপনার ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে সময় কাটানোর জন্য দেশের বাড়িতে গিয়ে কতদিন ছিলেন?
উত্তর: মনে নেই।
প্রশ্ন: আপনি ’৭১ সালে গ্রামের বাড়িতে যেয়ে ভাইয়ের সাঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা জবানবন্দীতে বলেছেন এটা অসত্য। আপনি দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ি পুরান ঢাকার প্রতাপ সেন লেনের বাড়িতে থাকতেন, যেখানে সোহেলার সঙ্গে আপনার সম্পার্ক ছিল এবং যিনি পরে আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী হয়।  
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ২৯ জুন আহমদ নগর স্কুল ক্যাম্পে আপনার ভাইয়ের রেকি করার জন্য আপনার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া, তাকে আল-বদর কর্তৃক ধরে নিয়ে যাওয়া যা আপনি চাচা শ্বশুর সৈয়দুর রহমান, মকবুল হোসেন ও ভায়রা জামশেদের কাছে শুনেছেন বলে জবানবন্দীতে বলেছেন তা অসত্য।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: প্রকৃত পক্ষে আপনার ভাই কোন দিন কোথায় কিভাবে মারা গেছেন তা আপনারা জানে না?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার শালিকা রাশেদার বিয়ে হয় ১৯৬৯ সালে। 
উত্তর: হতে পারে। স্বাধীনতার আগে বিয়ে হয়।
প্রশ্ন: আপনার অপর শালিকা সাজেদার বিয়ে হয় ’৭১ সালে আপনার ভাই মারা যাওয়ার ৪/৫ মাস পরে।  
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: সাজেদার এখন তিন ছেলে ও দুই মেয়ে, বড় ছেলে উজ্জল বিবাহিত ও সিঙ্গাপুরে থাকে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে কামারুজ্জামান আল-বদর বা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে কামারুজ্জামান এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। 
উত্তর: হতে পারে।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাল্ডের সাথে জড়িত এমন অভিযোগ ছিল না, তিনি ’৭১ সালে এইচএসসির ছাত্র ছিলেন এবং নিজ এলাকায় ছিলেন। এরপর বিএ ও এমএ পাস করেন ও স্বাভাবিক জিবন যাপন করেন। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান একজন সাংবাদিক ও জামায়াত নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের দেশীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড ও অতি ভারতীয় নীতির বিরোধীতা করায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধাপরাধের মামলা সৃষ্টি করা হয়েছে। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি আওয়ামী লীগ ঘরনার লোক হিসেবে, আওয়ামী লীগের এই অন্যায় কর্মের সহযোগিতা করার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ও নির্দোষ।
উত্তর: সত্য নয়।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাক্ষী পাড়েরহাট রাজাকার ক্যাম্প, পিস কমিটি অফিস এবং লুটপাটের ঘটনায় সাঈদী সাহেবকে দেখিনি


১০/৯/২০১২
মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ  তৃতীয় সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন। তার নাম নুরুল হক হাওলাদার। নুরুল হক হাওলাদার  তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে  স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি পাড়েরহাট বাজারে  তাদের বাড়িতে ছিলেন। পাড়েরহাট বাজারে রাজাকার ক্যাম্প, শান্তি কমিটির অফিসে কারা যেত  তাদের তিনি দেখেছেন। কিন্তু এদের মধ্যে তিনি কখনো মাওলানা সাঈদীকে দেখেননি। তাছাড়া পাড়েরহাট বাজারে আর্মি আসার পর কারা  দোকানপাট লুটপাট করেছে তাও দেখেছেন। কিন্তু এ লুটপাটের ঘটনাও তিনি মাওলানা সাঈদীকে দেখেননি।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী  মাহবুবুল আলম হাওলাদার গত ৭ ডিসেম্বর তার জবানবন্দীতে তাদের বাড়ি লুটের অভিযোগ করেছিলেন । এ বিষয়ে সাক্ষী নুরুল হক গতকাল বলেন, ৪০ বছরে কোনদিন শুনিনাই তাদের বাড়ি লুট হয়েছে। মাহবুবু আলম আমার ভগ্নিপতির ভাগনে এবং ফুফাত ভাইয়ের চাচাত ভাই। তাদের বাড়ি আমার ছোটবেলা থেকে যাওয়া আসা ছিল। সাক্ষী নুরুল হক তার ফুফাত ভাইকে উদ্ধৃত করে  বলেন, বড় রকমের স্বার্থ আদায়ের জন্য মাহবুুব  সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। শুনেছি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার পর সে দোতলা বাড়ি  করছে। একতলার কাজ শেষ হয়েছে।

সাক্ষীর জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ নুরুল হক হাওলাদার, বয়স  ৬০ বছর।  আমি আমার কলার ক্ষেত পরিচর্যা করি এবং কৃষি জমি দেখাশুনা করি। আমি ট্রাইব্যুনালে এসেছি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। আমি ১৯৬৯ সালে পাড়েরহাট বন্দর নিজ বাসায় বসবাস করতাম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম দিকে ফকির দাসের বিল্ডিংয়ে পিস কমিটি অফিস করে। ঐ অফিস আমাদের বাসা থেকে ১০০/১৫০ গজ দূরে হবে। ঐ অফিসে আমি সব সময় দেখেছি সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, মোসলেম মওলানা, হাজী আব্দুল গণি গাজি, শফিক উদ্দিন মৌলভী, আসমত আলী মুন্সিদেরকে। ঐ অফিসে আমি কখনও সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই। ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে পাড়েরহাট রাজলক্ষী হাইস্কুলের দোতলায় আবার একটি রাজাকার ক্যাম্প করে। ঐ রাজাকার ক্যাম্পে আমি দেখেছি রাজাকার আব্দুল হালিম, মশিউর রহমান, সুলতান, ইছহাক, সোলায়মানদেরকে। আমি ঐ রাজাকার ক্যাম্পে কখনও সাঈদী সাহেবকে দেখি নাই।
১৯৭১ সালে বৈশাখ মাসের শেষের দিকে পাক আর্মিরা পাড়েরহাটে আসে। এসে তারা ৫/৬ টি দোকান লুট করে। ঐ দোকানগুলির মালিক ছিলেন মাখন সাহা, মদন সাহা, নারায়ন সাহা, বিজয় মাষ্টার এবং গৌরাঙ্গ পাল। তারা লুট করে পিরোজপুরে চলে যায়। সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, মোসলেম মওলানা হাজি গণি গাজী, আসমত আলী মুন্সি তাদের সাথে ছিল। সাঈদী সাহেবকে কোথাও দেখি নাই। তার পরদিন বাসায় বসে বাহিরে শোরগোল শুনি। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে অনেক লোক দেখতে পাই, তাদের সংগে পাক আর্মিও ছিল। পূর্বে যারা ছিল ঐদিনও পাক বাহিনীর সংগে তারা ছিল। তারা যখন আমাদের বাসা অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে যায় তখন আমি ঐ লোকজনের পিছনে ছিলাম। তারপর দেখি তারা পাড়েরহাট ব্রিজ পার হয়ে বাদুরা গ্রামে যাইতেছিল। আমি ঐ ব্রিজের গোড়ায়  একটি দোকানের আড়ালে ছিলাম। দেখি তারা আওয়ামী লীগের নেতা নুরু খাঁ এর বাড়িতে ঢুকছে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম যে, দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। তারপর তারা বাহির হয়ে আবার দক্ষিন দিকে যাইতেছে। এর আধাঘন্টা পর দেখি যে, ধোয়ার কুন্ডলী আকাশের দিকে উঠিতেছে। আনুমানিক ঘন্টা খানেক পরে তারা আবার ব্রিজ পার হয়ে পিরোজপুর চলে যায়।
টেংরাখালীর মাহবুব আলম হাওলাদার আমার ভগ্নিপতির আপন ভাগ্নে। আরেকদিকে তিনি আমার আপন ফুফাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাই। সেই হিসাবেও তিনি আমারও ভাই। ফুফাতো ভাইয়ের ঘর ও মাহবুব আলম হাওলাদারের ঘর পাশাপাশি। ছোট বেলা থেকেই ঐ বাড়িতে আমাদের যাওয়া আসা ছিল। ৪০ বৎসরের মধ্যে আমি কোন দিন শুনি নাই যে, তাদের বাড়ি লুট হয়েছিল। আমি শুনি যে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি একটি মামলা করেছেন। মামলা হওয়ার পরে আমি তার বড় ভাই বাতেন হাওলাদারের নিকট জিজ্ঞাসা করি, ভাইডি মাহবুব তো সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কেস করল। বাতেন হাওলাদার উত্তরে বলে, ওকথা বলো না, বললে আমার লজ্জা করে, আমাদের বাড়িতে লুট হলে তো তোমরাও জানতা। আমাদের বাড়ি তো দূরের কথা টেংরাখালী গ্রামে কখনও রাজাকার বা পাক বাহিনী আসে নাই। তৎপর আমি আমার ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম হাওলাদারকে জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিল, ১৯৭১ সালে মাহবুব হাওলাদারের বয়স ১০/১১ বৎসর ছিল এবং সে প্রাইমারী স্কুলে পড়তো। ও বড় কোন স্বার্থের জন্য সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে। আমাদের বাড়িতে কিংবা আশে পাশে কোন সাক্ষী পাবে না বিধায় দূরের সাক্ষী মেনেছে। সব মিলিয়ে ওর বাবার চার/পাঁচ বিঘা সম্পত্তি ছিল মাত্র। মাহবুবুল আলম হাওলাদারের ভাগে পড়ে এক/দেড় বিঘা সম্পত্তি। সে সম্পত্তি সে বিক্রি করে ফেলেছে এবং তার স্ত্রীর সম্পত্তিও বিক্রয় করে ফেলেছে। সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করার পর সে এখন দোতলা বিল্ডিং তৈরি করেছে। একতলা শেষ হয়েছে। (ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তাহলেতো মামলা করে তার উপকার হয়েছে) ।
 মিজানুর রহমান তালুকদার আমার মামাতো ভাইয়ের শ্যালক। সেই হিসাবে তিনি আমার বিয়াই। তার বাড়ি আমার বাড়ির সন্নিকটে। জোরে ডাক দিলে তার বাড়ি থেকে শোনা যায়। তিনি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে অত্র ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তার বড় ভাই মান্নান তালুকদার সাহেবকে পাড়েরহাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। রাজাকাররা মালামাল লুট করে মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়িতে জমা দিয়েছে। তিনি সেই মালামাল ঢোল সহরত করে যাদের মাল তাদেরকে ফেরত দিয়েছে বলে বলেছে।  আমরা আজ ৪০ বৎসরের মধ্যে এমন কথা শুনি নাই। মান্নান তালুকদারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।  তিনি টগরা কামিল মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি ছিলেন। আমি ঐ মাদ্রাসার সহ সভাপতি ছিলাম প্রায় ৮/৯ বৎসর। তিনি অনেক সময় আমার সাথে তার পারিবারিক ব্যাপারে আলাপ করতেন। তিনি কখনও তাকে নিয়ে নির্যাতন করার কথা বলেন নাই। অন্য কোন লোকের নিকট থেকে এই ৪০ বৎসর যাবত পাড়ের হাট রাজাকার ক্যাম্পে নির্যাতনের কথা শুনি নাই।
গৌরাঙ্গ সাহা অভিযোগ করেছে যে, তার বোনকে সাঈদী সাহেব পাক আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ করিয়েছে। সেই সময় গৌরাঙ্গ সাহার বয়স ১০/১১ বৎসর। তার বোনেরা তার ছোট ছিল। বড় বোনের বয়স ৬/৭ বৎসর। আমাদের পাড়ের হাট ইউনিয়েনে কোন মহিলা ধর্ষিত হয় নাই। আজ প্রায় ৪০ বৎসর হয়ে গেছে কোন লোক বলাবলি করে নাই যে, গৌরাঙ্গ সাহার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যদিও আমরা দীর্ঘদিন যাবত বাজারে চলাফেরা করি। হিন্দুরা তাদের জান বাঁচানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ইয়াছিন মাওলানা সাহেবের খানকায় গিয়ে মুসলমান হয়েছে।
সাক্ষী এ  কথা বলার পর ট্রাইুব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক সাক্ষীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি কিভাবে জানলেন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমান হয়েছে? আপনি কি সেখানে তখন ছিলেন?
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম তখন আপত্তি উত্থাপন করে বলেন,  তাকে বলতে দেন। আপনি তো জেরা শুরু করেছেন।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি. তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে যেকোন প্রশ্ন করতে পারে।
তাজুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই পারে। কিন্তু আপনি তো সাক্ষীকে ধমকাচ্ছেন।
এরপর  ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন,  আমি শুনেছি। তারপর সাক্ষী  আবার জবানবন্দী প্রদান শুরু করেন।
এই ঘটনা ১৯৭১ সালে। দেশ স্বাধীনের পরে তারা  আবার স্ব-ধর্মে ফিরে যান। বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে সাঈদী সাহেব ধর্ষণ করেছে মর্মে অভিযোগ করেছে। এই অভিযোগ অসত্য । মোসলেম মওলানা ঐ বাসায় ১৯৭১ সালে সব সময় থাকতো। বাজারে  প্রচারিত হয়েছিল যে, ঐ মেয়েকে (ভানু সাহা) মোসলেম মওলানা বিবাহ করেছে। সাঈদী সাহেব রাজাকারও ছিলেন না, স্বাধীনতা বিরোধীও ছিলেন না এবং মানবতা বিরোধী কোন কাজ তিনি করেন নাই। তিনি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। সাঈদী সাহেব তিনবার  এম,পি, নির্বাচন করেছেন।  তার প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রচারনায় তার বিরুদ্ধে মাঠে কোন দিন এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন নাই।  যদি তিনি এই অপরাধে অভিযুক্ত হতেন তাহলে নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ তার নির্বাচনী প্রচারনার সময় তা তুলে ধরতো।
জবানবন্দী প্রদানে সাক্ষীকে পরিচালনা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী। এসময় তাকে সহায়ত করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু,  আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

জেরা :
প্রশ্ন :  জমিজমা দেখাশুনা ছাড়া আর কিছু করেন ? যেমন বিচার শালিশী।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা হলে তার খোঁজ নেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন পক্ষে সাক্ষী জোগাড় করর জন্য যান?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার কয় ছেলে মেয়ে?
উত্তর : ৩ মেয়ে ১ ছেলে।
প্রশ্ন : তারা কি করছে?
উত্তর : ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ২ জন পড়ছে।
প্রশ্ন : মেয়ের বিয়েতে সাঈদী সাহেবকে দাওয়াত দিয়েছিলেন বা তিনি এসেছিলেন?
উত্তর : দাওয়াত দেইনি। তিনি আসেনও নি।
প্রশ্ন ১৯৬৯ সালের আগে থেকেই সাঈদী সাহেবের সংগে আপনার পরিচয় ছিল?
উত্তর : তার আগে থেকেই।
প্রশ্ন : ঢাকা আসলেন কিভাবে?
উত্তর: বাসে করে। সায়েদাবাদ আসার পর সাঈদী সাহেবের শ্যালক আমাকে নিয়ে আসেন।
প্রশ্ন :  আপনাকে কোর্টে এসে সাক্ষ্য দিতে হবে তা প্রথম কবে জানলেন?
উত্তর : প্রায় এক বছর আগে। সাঈদী সাহেবের ছেলে রাফিক সাঈদী আমাদের মাদ্রাসার সামনে যান। সেখানে অনেক লোক   জড়ো হয়। তিনি তাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার আবার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ আছে আপনারা তা শুনেছেন? আমিসহ অনেকে বলি শুনেছি এবং সব মিথ্যা । তিনি তখন বলেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবেন? আমিসহ অনেকে তখন রাজি হই।
প্রশ্ন : ঐ মাদ্রাসার সভাপতি সেক্রেটারি কে ছিল তখন?
উত্তর : সভাপতি এমপি আওয়াল সাহেব। সেক্রেটারি কে স্মরন নেই।
প্রশ্ন : যখন  রাফিক সাহেবের কাছে মামলার কথা শুনলেন তখন কি মামলার তদন্ত চলছিল?
 উত্তর : চলছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে  ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনি পাড়েরহাট ছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার মত যারা ব্যবসা বানিজ্য করত তারাও কি তখন সেখানে ছিল না পালিয়ে গিয়েছিল>
উত্তর : বিশেষ করে হিন্দুরা পালিয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : মুসলমান কেউ পালায়নি?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার ক্যাম্পে গেছেন?
উত্তর : কখনো যাইনি। পিস কমিটির অফিসেও  যাইনি।
প্রশ্ন : ওই দুই অফিসে কি কাজ হত তা জানা নেই আপনার।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : রাজাকার শান্তি কমিটির লোকেরা যেখানে যেত তাদের সাথে আপনি যেতেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তাদের কোন অপরাশেনে যেতেন?
উত্তর : না। আমি তো রাজাকার নই যে যাব।
কাল সোমবার তার আবার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।


গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন সুলতানা কামাল ৭১ সালে গোলা আযম স্বাধীনতার শত্রুপক্ষের প্রতীকে পরিণত হয়


১০/৯/২০১২
মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক  আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান সুলতানা  কামাল। today ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক ছিলেন তেমনি গোলাম আযম শত্রুপক্ষের এক প্রতীকে পরিণত হয়। রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির নেতা হিসেবে অনেকের সাথে প্রায়ই গোলাম আযমের নাম শুনতাম। তার সাথে আরো অনেকের নাম শুনতাম যেমন মতিউর রহমান নিজামী, আল আহসান মো: মুজাহিদ, আব্বাস আলী খান। তবে সবসময় গোলাম আযমের নাম বেশি উচ্চারন হত জামায়াত নেতা হিসেবে। স্বাধীনতা বিরোধী এসব কাজ  তার নেতৃত্বেই হত বলে শুনেছি।
today (10/9/2012)  সোয়া দ্ঘুন্টা জবানবন্দী দেন সুলতানা কামাল। tomorrow  আবার তার জবানবন্দী গ্রহনের কথা রয়েছে। সুলাতান কামাল জানান তিনি এবং তার ছোট বোন সাঈদা কামাল মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন । এক পর্যায়ে এবং ভারতের আগরতলায় যান ।  সেখান থেকে তারা  বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীন খবর এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের তৎপরতার  খবর পেতেন নিয়মিত।
সুলতানা কামালা  ২৫ মার্চের গনহত্যা, স্বাধীনতা যুদ্ধ  শুরু, তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের দীর্ঘ প্রেক্ষাপট বর্ননা করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, তার মা (কবি সুফিয়া কামাল) বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য মূলধারার রাজনীতির সাথে  আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন। তাদের বাসা ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসার  খুব কাছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তার মায়ের কারনে তাদের বাসাটি একটি যোগাযোগের কেন্দ্র হয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য। যুদ্ধে যোগদানের জন্য আমাদের বন্ধুরা তখন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। সেভাবেই আমরা দুবোনেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের কাজে জড়িয়ে পড়ি। সুলতানা কামাল তখন ঢাকা বিভাগে ইংরেজি সাহিত্যের এমএ কাসের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২৫ মার্চের গণহত্যা  শুরু এবং গনহত্যার পরের বিভিন্ন দৃশ্য বর্ণনা করে সুলতানা কামাল বলেন, হঠাৎ করে এপ্রিল মাসে  শুনতে পেলাম তখনকার কিছু ধর্মভিত্তিক  রাজনৈতিক দল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকা পালন শুরু করেছে।  তখনকার পত্রপত্রিকায় সেসব খবার ছাপা হত। ঘুরে ফিরে  জামায়াতে ইসলামী, পিডিবি, মুসলিম লীগ দলের নাম উঠে আসত। একটি নাম খুব বেশি করে আমাদের চোখে পড়ত। সে নামটি হল গোলাম আযম।


তিনি টিক্কা   খান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হতেন এবং কিভাবে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিতেন।
প্রথমে শান্তি কমিটির নামে কিছু সাংগঠনিক তৎপরতা চালায়। পরে মে মাসে রাজাকার বাহিনী বলে একটি বাহিনী গঠন করে। আমি যতদূর জানতে পারি খুলনায় প্রথমে জামায়াতের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এও জানতে পারি তারা কিছু গোপন কিলার ফোর্স তৈরি করে আল বদর আল শামস নামে। জামায়াতের ছাত্র এবং তরুনদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গোলাম আযমের নাম উঠে এসেছে বারবার। প্রায়শই দেখেছি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর উচ্চতর পর্যায় থেকে টিক্কাখানসহ গোলাম আযমের নাম ধরেই প্রশংসা করেছে যে, পাকিস্তান রক্ষার জন্য তিনি এতকিছু করেছেন।

সুলতানা কামাল বলেন, জুন মাসে  একটি ঘটনার জন্য আমি এবং আমার ছোট বোন সীমান্ত পার হয়ে আগরতলা যেতে বাধ্য হই। আমাদের সামনের বাড়িতে থাকতেন স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহ খান। রায়ের বাজারে তাকে একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় অপারেশনের জন্য হেডকোয়ার্টারে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি আমার মায়ের কাছে আসেন সাহায্যের জন্য। তখন তাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে সাহায্য করি। কিন্তু তার বাসার কাজের ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তান আর্মি। তার কাছ থেকে আমাদের বিষয়ে তথ্য আদায়ের আশঙ্কায় আমাদের দুই বোনকে সীমান্ত পার হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

সুলতানা কামাল বলেন, এরপর  আগরতলা গিয়ে তাদের পূর্ব পরিচিত একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি  সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী সেখানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র  খোলেন। সেখানে তারা দুই বোন কাজে যোগদেন। এরপর ২ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সাথে যোগাযোগের পর তারা দুই বোন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিবন্ধিত হন। পরবর্তী পর্যায়ে তারা সেখানে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে  আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। সেখানে ডা. জাফরুল্লাহসহ আরো অনেকে কাজ করেন।
সুলতানা কামাল  জানান, রেডিও এবং গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা যারা অপারেশনের জন্য দেশের মধ্যে প্রবেশ করত এবং আবার আগরতলায় ফিরে যেত তাদের সহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্মকান্ডের খবরাখবর পেতেন। আমরা এও শুনতে পাই যে, তারা বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে প্রদান করে। তাদের ক্যাম্প এবং ব্যাঙ্কারে রাখা হত। তাদের ধর্ষণ, যৌন নির্যতানে অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে, অনেকে আত্মহত্যা করেছে। রাজাকার, আল বদর, আল শামস নেতা হিসেবে অনেকের সাথে প্রায়শই গোলাম আযমের নাম শুনতাম। আরো অনেকের নাম শুনতাম তবে সব সময় গোলাম আযমের নাম বেশি উচ্চারন হত জামায়াত নেতা জিসেবে। তার নেতৃত্বেই এসব হত বলে শুনেছি। এসব বাহিনীর প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই গোলাম আযম আমাদের শত্রুপক্ষের এক প্রতীকে পরিণত হয়। tomorrow আবার তার জবনাবন্দী প্রদানের কথা রয়েছে।

দালাল আইনে গ্রেফতার হয় সাক্ষীর শ্বশুর/সাক্ষীর পরিবার এবং মাতৃকুলও স্বাধীনতা বিরোধী দাবী আইনজীবীর// সাক্ষীর বলেন সত্য নয়

৯/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. হাসানুজ্জামানকে আজ দ্বিতীয় দফায় জেরা করা হয় ।  জেরায় সাক্ষী স্বীকার  করেন  তার শ্বশুর আহমদ আলী মেম্বার মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলন। সাক্ষীর পরিবার, শ্বশুর পক্ষ এবং নানার পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থি ছিল এবং স্বাধীনতা বিরোধী ছিল বলে আসামী পক্ষের আইনজীবী দাবি করলে সাক্ষী বলেন, সবাই ছিল না ।  পরে বলেন এটা সত্য নয়।

এর আগে সাক্ষী জবানবন্দীতে  ১৯৭১ সালে নিহত তার ভাই বদিউজ্জামানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও গতকাল জেরায় স্বীকার করেন সে  মুক্তিযোদ্ধ ছিল না।

জেরায় আইনজীবী বলেন, ’৭১ সালে সাক্ষী ডা. হাসানুজ্জামানের  শালিকা সাজেদা বেগমের সঙ্গে তার ভাই নিহত বদিউজ্জামানের সম্পর্ক ছিল। সাক্ষীর শ্বশুর বাড়ির কাছে আহমদনগর স্কুলে পাক আর্মি ক্যাম্প থাকায় বদিউজ্জামান সেনাবাহিনীর নজরে আসে এবং সেনাবাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বদিউজ্জামান পাকিস্তান নৌ বাহিনীর সদস্য জানার পরে সেনা ক্যাম্পেই তাকে হত্যা করা হয়। এছাড়া বদিউজ্জামানের হত্যার পেছনে শ্বশুর পক্ষের হাত আছে এই ধারণায় সাক্ষী হাসানুজ্জামান দীর্ঘ ১২ বছর  শ্বশুর বাড়িতে যাননি। আসামিপক্ষের এসব প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এটা সত্য নয়।

আসামী পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে  প্রশ্ন করেন, আপনার বৃদ্ধ বাবা মাকে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আটকে রেখেছেন। এছাড়া কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেয়া নিয়ে পারিবারিক বিরোধ হয় এবং সাক্ষীর দুই ভাই আসাদুজ্জামান ও আনিসুজ্জামান বাড়ী থেকে রাগ করে চলে যান। জবাবে সাক্ষী বলেন,  সত্য নয়।

আন্তর্জাতক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষীকে জেরা করেন মুহাম্মদ  কামারুজ্জামানের আইনজীবী  কফিল উদ্দিন চৌধুরী।


জেরা:
প্রশ্ন: কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেয়া নিয়ে আপনাদের পরিবারে বিরোধ হয় এবং আপনার দুই ভাই আসাদুজ্জামান ও আনিসুজ্জামান বাড়ি থেকে রাগ করে চলে গেছেন। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার বৃদ্ধ বাবা মাকে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আটকে রেখেছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার শ্বশুর আহমদ আলী মেম্বর এলাকার একজন প্রভাবশালী মুসলীম লীগ নেতা ছিলেন।
উত্তর: জানিনা।
প্রশ্ন: আপনার শ্বশুর এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার পরিবারের উদ্যোগে আহমদ নগর স্কুলে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করে। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার চাচা শ্বশুর সৈয়দুর রহমান, মকবুল হোসেন, ভায়রা ভাই জামশেদসহ শ্বশুর পরিবারের সবাই পাকিস্তানপন্থি ছিল এবং স্বাধীনতা বিরোধী ছিল। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার শ্বশুর দালাল আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিল। 
উত্তর: হতে পারে।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার চাচা শ্বশুর এবং ভায়রা ভাইসহ শ্বশুর পরিবারের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে পালাতক ছিল।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার চাচা সাইদুল হক?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনার চাচা এলাকার রাজাকার সংগঠক এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
উত্তর: আমি জানি না।
প্রশ্ন: আপনার চাচার বিরুদ্ধে দালালী আইনে মামলা হয় এবং স্বাধীনতার পর তিনি পালাতক ছিলেন। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনার পুরো পরিবার ছিল পাকিস্তান পন্থী ও স্বাধীনতা বিরোধী?
উত্তর: পুরো পরিবার নয়।
প্রশ্ন: আপনার নানার পরিবারও স্বাধীনতা বিরোধী ছিল। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই ছুটিতে এসে আপনার শ্বশুর বাড়িতে বিভিন্ন অযুহাতে থাকতেন। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার শালিকা সাজেদা বেগমের সঙ্গে আপনার ভাই নিহত বদিউজ্জামানের সম্পর্ক ছিল। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার বিয়ে নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে প্রতারণা করার কারণে আপনার ভাইয়ের সঙ্গে শালিকার  সম্পর্ক সুনজরে দেখেননি আপনার শ্বশুরের পরিবার। 
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই বদিউজ্জামান দীর্ঘদিন আপনার শ্বশুর বাড়িতে থাকার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নজরে আসে এবং পাক সেনাবাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অপনার ভাই পাকিস্তান নৌ বাহিনীর সদস্য জানার পর হত্যা করে। 
উত্তর: এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই হত্যার পেছনে শ্বশুর পক্ষের হাত আছে এই ধারণা করে আপনি ও আপনার পরিবারের কেউ দীর্ঘ ১২ বছর শ্বশুর বাড়িতে যাননি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই হত্যার জন্য কখন মামলা করেন?
উত্তর: স্বাধীনতার পর কোর্ট কাচারীর কাজ শুরু হলে।
প্রশ্ন: কোন থানায় মামলা করেন?
উত্তর: সম্ভবত নলিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করি।
প্রশ্ন: ওই মামলায় কতজনকে আসামী করেছেন?
উত্তর: ১১ জনকে।
প্রশ্ন: কামারুজ্জামান বাদে বাকী আসামীদের নাম ঠিকানা বলতে পারবেন?
উত্তর: পারব না। তারা কোন এলাকার তাও বলতে পারব না। 
প্রশ্ন: মামলা দায়েরের কতদিন পরে তার খোঁজ নিতে যান?
উত্তর: এক মাস পরে।
প্রশ্ন: যে কোর্টে গিয়েছিলেন তা জজ কোর্ট না ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনার দায়ের করা মামলা নম্বর কত ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: মামলার খোঁজ নিয়েছেন এর সমর্থনে ইনফরমেশন স্লিফ দেখাতে পারবেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনার দায়েরকৃত মামলার খোজ না পাওয়ার পর আপনি পুনরায় অভিযোগ এনে আজ পর্যন্ত আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্য আপনার ভাই হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন?
উত্তর: না করিনি।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ ভাই হত্যার বিচার দাবি করে কোন আবেদন করেছেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান কি করতেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান আপনাদের এলাকায় ছাত্র হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে না অন্যকোন পেশায় নিয়জিত ছিলেন কি না বলতে পারবেন?
উত্তর: বলতে পারব না কারণ আমি তখন ঢাকায় ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনি এলাকার আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: মতিয়া চৌধুরীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার পরামর্শে আপনি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শাহরিয়ার কবিরকে জেরা// মাওলানা আবুল কালাম আযাদ তার ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম বইয়ের অপ্রকাশিত অংশে ভারত বিভক্তির জন্য কংগ্রেস নেতা জওহর লাল নেহেরু ও সরদার ভাই প্যাটেলকেও দায়ী করেছিলেন।

৯/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরকে আজ চতুথ দফা  জেরা করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট  মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার, শান্তি কমিটি এবং আল-বদর সম্পর্কে পৃথকভাবে গবেষণা করেছেন না একত্রে করেছেন?

উত্তর : পৃথকবাবেও করেছি  একত্রিতভাবেও গবেষণা করেছি।

প্রশ্ন : নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের উপর গবেষণা  করেছেন?
উত্তর : না তবে পড়াশুনা করেছি।

প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদূদীর লেখা অনেক বই আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এই পাঠ্য সূচিতে মওদূদীর লেখা ১৯৪১ এর পূর্বে এবং পরে উভয় সময়কালের বই-ই অন্তর্ভূক্ত।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী সদস্যদের পাঠ্য সূচিতে ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের লিখিত কোন বই আছে কি?
উত্তর : আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : আবুল কালাম আজাদ সাহেব ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম নামে একটি বই লিখেছেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এই বইয়ের ৩০ পৃষ্ঠা তার মৃত্যুর ৫০ বছর পরে প্রকাশের সিদ্ধান্ত দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশে তা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর ৩০ বছর পরই প্রকাশিত হয়।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ঐ ৩০ পৃষ্ঠা বইয়ের কোন বিচ্ছিন্ন অধ্যায় ছিলনা। এটা বিভিন্ন অধ্যায়েরই অংশ ছিল।
প্রশ্ন :  হ্যা।
প্রশ্ন : এই অপ্রকাশিত অংশে তিনি অত্র বিষয়ের মধ্যে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কংগ্রেস তাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ভংগ করার কথা বলা হয়েছে
উত্তর : হ্যা। কংগ্রেসের কোন কোন নেতাকে তিনি প্রতিশ্রুতি ভংগের জন্য দায়ী করেছিলেন।
প্রশ্ন  :  তিনি তাঁর বইয়ের অপ্রকাশিত অংশে ভারত বিভক্তির জন্য কংগ্রেস নেতা জওহর লাল নেহেরু ও সরদার ভাই প্যাটেলকেও দায়ী করেছিলেন।
উত্তর : হ্যা।

প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী তার লেখা কোন বই বা বিবৃতিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি, মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ এবং আল্লামা ইকবাল পরিকল্পনাকারী মর্মে দাবী করেছিলেন কিনা
উত্তর : আমি জানি না।

প্রশ্ন : মাওলানা মওদূদীর ছেলে সৈয়দ ফারুক হায়দার মওদূদী বেঁচে আছেন।
উত্তর : হ্যা।

প্রশ্নঃ মাওলানা মওদূদীর ছেলে সৈয়দ ফারুক হায়দার মওদূদী তার পিতা মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ এবং আল্লামা ইকবাল পাকিস্তানের পরিকল্পনাকারী মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তব্যের সমর্থক তিনি আপনাকে কোন প্রমাণ তথ্য দিয়েছিলেন কিনা?

উত্তরঃ হায়দার ফারুক মওদূদী মাওলানা আবুল আলা মওদূদীর পুত্র। তার পিতার সম্পর্কে তিনি আমাদের যে কারো চেয়ে বেশি জানেন। সুতরাং তার এই বক্তব্যের জন্য তাকে আমার চ্যালেঞ্জ করার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করিনি। গবেষণার ক্ষেত্রে কথ্য ইতিহাস বা ওরাল এভিডেন্সকেও ইতিহাসের উপাদান হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

আমাকে হায়দার ফারুক মওদূদী বলেছেন তারা নয় ভাই-বোন। আমি এটা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করিনি। মাওলানা মওদূদীর বড় সন্তানের নাম আমার জানা নেই। হায়দার ফারুক মওদূদী তার পিতার সন্তানদের মধ্যে কনিষ্ঠ অথবা কনিষ্ঠদের মধ্যে একজন হতে পারেন। হায়দার ফারুক মওদূদী লাহোর তার পিতার বাড়িতেই থাকেন।

প্রশ্নঃ ফারুক মওদূদী জামায়াতে ইসলামী করেন কি?
উত্তরঃ আমার সংগে সাক্ষাতকালে হায়দার ফারুক মওদূদী বলেছেন তার পিতা মাওলানা আবুল আলা মওদূদী তার কোন সন্তানকে জামায়াত বা জমিয়তের কোন রাজনীতির সংগে সম্পৃক্ত হতে দেননি। তিনি এমন কথাও বলেছেন তাদের কেউ যদি কখনও জামায়াতে ইসলামীর কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখেছেন তখনই তিনি তাকে তিরস্কার করতেন। ড্রাগ ব্যবসায়ীরা যেমন মাদক দ্রব্য কখনও বাড়ির ভিতরে ঢুকান না বাড়ির বাইরে রাখেন এইভাবে তার পিতা মাওলানা তার সন্তানদেরকে জামায়াতের রাজনীতির বাইরে রেখেছেন।


প্রশ্নঃ হায়দার ফারুক মওদূদীর সাক্ষাতকার নেওয়ার জন্য আপনি যখন লাহোর যান তখন তার অন্য ভাইবোনদের সাক্ষাতকার নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কি?

উত্তরঃ অন্যান্য ভাইবোনদের সাক্ষাতকার নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। লাহোরে আমি শুধু হায়দার ফারুক মওদূদীর সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতেই যায়নি। আমি গিয়েছিলাম পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী জঙ্গি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানবার জন্য। তখন লাহোরের একজন সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন এই বিষয়ে জানতে গেলে মাওলানা মওদূদীর ছেলে ফারুক হায়দার মওদূদী সঙ্গে কথা বলা উচিত কারণ তিনি এবিষয়ে অনেক লিখেছেন এবং সেই সাংবাদিকই হায়দার ফারুকই মওদূদীর সঙ্গে আমাকে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেয়।

হায়দার ফারুক মওদূদী মওলানা কাওছার নিয়াজি মালিকানাধীন একটি পত্রিকায় কলাম লিখতেন কিনা আমি জানি না।  তবে তিনি লাহোরের কয়েকটি উর্দু পত্রিকার একজন নিয়ামিত কলাম লেখক।

মাওলানা কাওছার নিয়াজি ১৯৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জাতীয় পরিষদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন।

প্রশ্ন :  মাওলানা মওদূদী তার মৃত্যুর পূর্বে তার লেখা অনেক বইয়ের মালিকানা স্বত্ব জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানকে দিয়ে গিয়েছিলেন ।

উত্তর : আমার জানা নেই। তবে ঐ বিষয়ে মালিকানা নিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতে জামায়াতের সংগে মওদূদীর পরিবারের সদস্যদের মামলা মোকদ্দমা চলছে বলে আমাকে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : হায়দার ফারুক মওদূদী মাওলানা মওদূদী কর্তৃক সম্পাদিত উইল বাতিলের জন্য কোন মামলা করেছিলেন কিনা।
উত্তর : এটা আমার জানা নেই ।

প্রশ্নঃ জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান জঙ্গি সংগঠনের সংগে জড়িত এই মর্মে পাকিস্তান সরকারের বা কোন দপ্তরের পক্ষকে এ যাবত কোন অভিযোগ আনা হয়েছে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ জামায়াতে ইসলামী ও মওলানা মওদূদী জঙ্গিপনার কারণেই লাহোরের কাদিয়ানি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এবং সামরিক আদালতে মাওলানা মওদূদীর ফাসির আদেশ হয়েছিল। মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে লাহোরে কত ব্যক্তিকে হত্যার জন্য অভিযোগ আনা হয়েছিল তা আমার জানা নেই। ঐ মামলায় মাওলানা মওদূদী ছাড়া জামায়াতের অন্য কোন নেতা বা কর্মীর বিচার হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই।

প্রশ্নঃ ১৯৫৩ সালের লাহোর এর আরো কয়েকটি শহরে সামরিক শাসন জারির অন্যতম কারণ ছিল কি? (১৯৪৮ সালে একজন মেজরের হত্যাকান্ড)
উত্তরঃ এটা আমার জানা নেই। আমি যতদূর জানি লাহোরে সিভিল প্রশাসন দাঙ্গা দমনে ব্যর্থ হয়েছিল বলে সামরিক শাসন জারী করতে হয়েছিল।

প্রশ্নঃ ১৯৪৮ সালে একজন মেজরের হত্যাকান্ড কাদিয়ানি সমস্যার সূত্রপাত ঘটে এটা মুনির কমিশনের রিপোর্টে আছে এটা আপনি জানেন কি?

উত্তরঃ এটা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। (পরে বলেন) মুনির কমিশনের রিপোর্ট কাদিয়ানি দাঙ্গার জন্যে মাওলানা মওদূদীর উস্কানীমূলক লেখা, বক্তৃতা এর তার পরিপেক্ষিতে জামায়াতের কর্মীদের সহিংস কর্মকান্ডে দায়ী করা হয়েছে। মাওলানা মওদূদী লেখা পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই।

প্রশ্নঃ ডাইরেক্ট এ্যাকশন কর্মসূচী ঘোষণাকারী মজলিশ-ই আমলে যে ১৪ টি দল অন্তর্ভূক্ত ছিল তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোন দলের দলীয় প্রধানকে বাদে জামায়াতে ইসলামীর কোন কর্মীকেও ঐ মামলার আসামী করা হয়েছিল কি?

উত্তরঃ হয়নি। কারণ অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন মাওলানা মওদূদী।

প্রশ্নঃ মুনির কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলিম লীগের অনেক কর্মী আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এবং সরাসরি ১৯৫৩ সালের দাঙ্গায় অংশ গ্রহণের অভিযোগ থাকলেও মুসলিম লীগের কোন নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল কি?

উত্তরঃ মুনির কমিশনের রিপোর্ট না দেখে আমি বলতে পারব না।
প্রশ্নঃ আপনি কোন বিশ্বাসে একজন কমিউনিষ্ট কর্মী?
উত্তরঃ আমি কমিউনিষ্ট নই। আমি একজন মানবতাবাদী।
প্রশ্নঃ জৈনিক প্রতারকের কাহিনী বইটি কি আপনি লিখেছেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্নঃ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত এই বইয়ের “লেখকের কথায়” নিজেকে আপনি একজন কমিউনিষ্ট কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কি?
উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে আমি কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সংগে যুক্ত ছিলেন না। আমি যুক্ত ছিলাম সত্তর দশকের শুরুতে এবং একথাই বর্ণিত বইয়ে লেখকের কথায় উল্লেখ করেছি। আমি সত্তর দশকের শুরুতে কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। পরবর্তীতে আমি আর কোন আন্দোলনের সংগে জড়িত ছিলামনা।  পরবর্তীতে আমি আর কোন রাজনৈতিক দলের সংগে জড়িত হইনি।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডায় বিশ্বাস করতেন কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ে আমি কোন গবেষণা করিনি।
প্রশ্নঃ এটা সত্য নয় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেনি। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। এটা সত্য নয় যে, ৩ মার্চ ১৯৭১ এর পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলে নাই।


প্রশ্নঃ ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে এন বি সি নিউজ এ প্রচারিত (পূর্বে গৃহিত তারিখ উল্লেখ নেই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলেননি। এই সাক্ষাতকারটি আপনি দেখেছেন কি?
উত্তরঃ এই সাক্ষাতকার আমি দেখিনি।
প্রশ্নঃ রাজাকার বাহিনী ২ আগষ্ট ১৯৭১ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি?
উত্তরঃ আমি জানি ১৯৭১ সালের মে মাসে জামায়াতের নেতা মাওলানা একে এম ইউসুফ খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। পরে পাকিস্তান সরকার আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করে অধ্যাদেশ জারি করে।
প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালে অথবা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত মাওলানা একে এম ইউসুফ কর্তিক খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয় মর্মে কোন সংবাদ বা সরকারী প্রেস বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
প্রশ্নঃ রাজাকার বাহিনী গঠনের বিষয়টি কোন সময় পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
উত্তরঃ পত্রিকায় কখন প্রথম কবে প্রকাশিত হয়েছিল তা আমার জানা নেই। তবে আশির দশকের মাঝামাঝি “একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়” লেখার সময় আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে এ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মাওলানা একে এম ইউসুফ মালেক মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর আদালতে আত্মসমর্পন করেছিলেন। আমার বিরুদ্ধে রাজাকার বাহিনী গঠনের কোন অভিযোগ আনা হয়েছিল কিনা। এটা হতে পারে যে, বঙ্গবন্ধুর ক্ষমতাসীন অবস্থায় আদালতের নির্দেশে তিনি মুক্তিপান তবে এটা আমার সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই।

প্রশ্নঃ রাজাকার বাহিনীর প্রথম ডিরেক্টর কে ছিলেন?
উত্তরঃ এটা আমি বই না দেখে বলতে পারব না।
আব্দুর রহিম নামে কোন রাজাকার ডিরেক্টর ছিলেন কিনা আমি বই না দেখে বলতে পারব না।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ যাবতীয় অপরাধ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার সচিব জনাব আব্দুর রহিমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলেন
উত্তর :  আামর জানা নেই।

প্রশ্ন : সচিব আব্দুর রহিমই রাজাকার প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন এবং আমি এটা জেনে গোপন করছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  স্বাধীনতা পরে সার্কেল অফিসার  ডেভ)কে আহ্বায়ক এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত একটি কমিটিকে স্বাধীনতা বিরোধীতা এবং বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে যাদেরকে আটক রাখা হয়েছিল তাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশের জন্য বলা হয়েছিল কি?

উত্তরঃ উক্ত কমিটিতে সার্কেল অফিসার ছিলে কিনা তা আমার জানা নেই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
প্রশ্নঃ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এরূপ কোন তদন্তে মাওলানা একে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হয়েছিল কি?
উত্তরঃ এটা আমার জানা নেই, তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে তখন পত্রিকায় যথেষ্ট লেখালেখি হয়েছিল।
প্রশ্নঃ  কাদের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে তখন যথেষ্ট লেখালেখি হয়েছিল সে মর্মে পত্র পত্রিকায় কোন কাটিং দেখেছেন ?
উত্তরঃ আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেইনি। তবে একাত্ররের ঘাতকরা কে কোথায় এই বইটি তাকে দিয়েছি।
প্রশ্নঃ একাত্তরের ঘাতকেরা  কে কোথায় এই বইয়ে লেখক কে ?
উত্তরঃ এই বইয়ের লেখক কয়েকজন যা ভূমিকায় বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ এই বইয়ে কোন প্রবন্ধ  আপনি  লিখেছেন কি ?
উত্তরঃ না, তবে ভূমিকাটি লেখায় আমার অংশগ্রহন আছে।
বইটির মুখবদ্ধ সম্পাদকীয় পরিষদ কর্তৃক লিখিত।
প্রশ্নঃ বইটিতে সম্পাদকীয় পরিষদের কোন নাম আছে কি ?
উত্তরঃ প্রসিকিউশন কর্তৃক সরবরাহকৃত যে বইটি ডিফেন্স কাউন্সিলের এর হাতে আছে মর্মে দাবী করা হয় তাতে সম্পাদকীয় পরিষদের কোন নাম দেখেছিনা। তদন্তকারী কর্মকর্তা কিছু বই আমার কাছ থেকে নিয়েছেন আর কিছু বই সম্ভবত বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন। যে বইটি আমাকে এখন দেখানো হলো সেটি মনে হচ্ছে জাল। আমাদের কর্তৃক সম্পাদিত বইটিতে সম্পাদকীয় পরিষদের নাম আছে। এই বইয়ের প্রকাশনা স্বস্ত নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। ঐ সময় ঐ মামলায় দুই পক্ষ পৃথক পৃথক ভাবে প্রকাশ করেছিল (নিজে বলেন) বইটি যারা জাল করেছেন তারা অনেক তথ্য বাদ দিয়েছেন।                            
 প্রশ্ন: মাওলানা একেএম ইউসুফ মালেক মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর তিনি আদালতে আত্মসমার্পণ করেছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই সময় তার বিরুদ্ধে রাজাকার বাহিনী গঠনের অভিযোগ আনা হয়নি।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাসীন অবস্থায় আদালতের নির্দেশে তিনি জামিন পান।
উত্তর: হতে পারে।

মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুনরায় নির্দেশ কোর্টের


 9/9/2012
মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন  দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।  ওইদিনও যদি তাকে হাজির করা না যায় তাহলে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া  হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি।

আজ মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) সাহিদুর রহমান গত ১ সেপ্টেম্বর মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে ৬৪ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন। তাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২২টি ঘটনায় ১০টি অভিযোগ আনা হয়। যার মধ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফরিদপুরে হত্যা, গণহত্যা, জোর করে ধর্মান্তরিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ এপ্রিল আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-২। তবে তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

মাওলানা আযাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত ইসলামী অনুষ্ঠানে একজন জনপ্রিয় ভাষ্যকার এবং ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

মাওলানা সাঈদীর বিচার পুনরায় শুরুর আবদেন খারিজ//// সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজির করা হয়নি


মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার পুনরায় শুরুর আবদেন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। আজ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি শুনানী শেষে খারিজ করে দেন।

ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবার পর দুজন পুরনো সদস্য বিচারপতির স্থলে নতুন  দুজন সদস্য বিচারপতি  নিয়োগ দেয়ার প্রেক্ষাপটে এ আবেদন করা হয়।

গত ২৮ মার্চ  বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেন। এর আগে গত ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল শুরুর আগে অপর সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়। এ দুজন সদস্য প্রথম ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকে ছিলেন।  বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ পদত্যাগ করার পর তার স্থলে  নতুন সদস বিচারপতি  জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির চলে যাবার  পর  তার স্থলে বিচারপতি আনোয়ারুল হককে নিয়োগ দেয়া হয়।

আজ মাওলানা সাঈদীর বিচার পুনররায় শুরুর আবেদনের পক্ষে শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। তিনি বলেন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে এমন সময় নিয়োগ দেয়া হল যখন মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপক্ষের কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনে অংশগ্রহণ করতে পারেনন্ ি। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য  গ্রহনের শেষ পর্যায়ে নিয়োগ পান বিচারপতি আনোয়ারুল হক।   ফলে তারা এ মামলার সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত নন।  তাদের অনুপস্থিতিতে চলা  লম্বা বিচারপ্রক্রিয়া পড়ে সম্পূর্ণরুপে অবহিত হওয়াও দুরুহ কাজ। তাই  ন্যায় বিচারের স্বার্থে মাওলানা সাঈদীর বিচার পুনরায় শুরু হওয়া দরকার।

ট্রাইব্যুনাল শুনানী শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজির করা হয়নি
আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাক্ষী হাজিরে কথা ছিল আসামী পক্ষের। সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম  শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তাজুল ইসলাম জানান,  আজকের জন্য নির্ধারিত সাক্ষী  নুরুল হক হাওলাদার অসুস্থ। এর পরের সাক্ষী আব্দুল হক হাওলাদারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। তাজুল ইসলাম একদিনের জন্য মুলতবি প্রার্থনা করেন। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এরপর থেকে আসামী পক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষ কোন পক্ষের সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারনে বিচার মুলতবি করা হবেনা।

আজ কোন সাক্ষী না থাকায় বিচারপতি নিজামুল হক  বিভিন্ন অনিস্পন্ন আবেদনের শুনানীর জন্য  বলেন আইনজীবীদের। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে  তাদের আবেদনের শুনানীর জন্য বলা হলে তিনি বলেন, আজ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোর্টে নেই। আমরা চাই তার উপস্থিতিতে শুনানী হোক। তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা কি আজ গ্রুপ করে এসেছেন যে, আমাদের  আজ কোন কাজ করতে দেবেনন? যদি কাজ করতে না দেন তাহলে শনিবার প্রয়োজনে কোর্ট বসাব তা মনে রাখবেন। আমাদের সে ক্ষমতা আছে।

এরপর  বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিনকে বলেন, আপনাদের দায়ের করা আবেদন শুনানী করেন (হুমায়ুন আহমেদের পিতাকে হত্যা বিষয়ে চ্যানেল আইয়ে শাহরিয়ার কবিরের একটি বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে শাহরিয়ার কবির এবং চ্যানেল আইয়ের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষ থেকে।) তানভির আল আমিন বলেন, এ আবেনটি  আমাদের অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলামের শুনানী করার কথা। তিনি আজ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে রয়েছেন। তাই আজ এটি  শুনানী করতে চাচ্ছিনা আমরা। অন্য কোন দিন তারিখ নির্ধারন করা হোক।

বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য  গ্রহণ বন্ধ রেখে আমরা  আবেদন শুনবনা। সাক্ষ্য গ্রহন  থাকবেনা এমন  কোন একদিন বলবেন সেদিন শুনানী হবে।
এরপর  আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী   ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর  সৈয়দ হায়দার আলী এবং জেয়াদ আল মালুম উপস্থিত ছিলেন অন্যান্যের মধ্যে।






শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জেরায় লাটভাই///‘অর্ধশত মামলার আসামী লাটভাই গ্রেফতার’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হতে পারে

৩/৯/২০১২
২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। খবরটির শিরোনাম ছিল  ‘অবশেষে গ্রেফতার হল সেই লাট ভাই মোল্লা বাহিনীর প্রধান আমির হোসেন মোল্লা।’
প্রকাশিত খবরে লাটভাই সম্পর্কে  বলা হয় “এলাকায় লাটভাই হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত, কুখ্যাত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদকদ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং বিশাল সরকারি সম্পত্তি দখলকারী মোল্লা বাহিনীর প্রধান আমির হোসেন মোল্লা।
এই লাটভাই গত ২৭ আগস্ট জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল ২ এ  জবানবন্দী প্রদান করেন। ২ সেপ্টম্বর তার জেরা শুরু  হয়।

আজ (৩/৯/২০১২)  পুনরায় তার জেরা শুরু হয়।

জেরা :
প্রশ্ন: আপনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি দখল করার অভিযোগে দায়ের করা মামলা চলমান আছে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি কি এখনো আপনার দখলে আছে?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: ওই সম্পত্তি আনবিক শক্তি কমিশন গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতির ৭৫ নং প্লট।
উত্তর: হ্যাঁ, আমি ওই সমিতির সভাপতি।
প্রশ্ন: আপনি বাড়ি ও মসজিদ মাদ্রাসা করে অধিগ্রহণ করা জমি দখল করে আছেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হয়, আপনি এলাকায় লাটভাই হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত, কুখ্যাত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদকদ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং বিশাল সরকারি সম্পত্তি দখলকারী মোল্লা বাহিনীর প্রধান আমির হোসেন মোল্লা। ওই সংবাদ দৈনিক আজকের কাগজেও প্রকাশিত হয়।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: একই তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়, ‘অর্ধশত মামলার আসামী লাট ভাই গ্রেফতার’ শীরোনামে সংবাদ প্রকাশিথ হয়।
উত্তর: হতে পারে। এসব সংবাদ করা হয়েছে আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
প্রশ্ন: আপনি এক সময় ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন?
উত্তর: ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময় আমাকে ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল সফুরা হক আপনার বিরুদ্ধে জিডি করেন যে তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির লোক হয়ে তার জমি দখলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন?
উত্তর: জিডির বিষয় জানি না। আমি কখনো বিএনপি করিনি।
প্রশ্ন: বিচারপতি এএফএম আলী আসগারের জমি দখল করার মামলায় কোন তারিখে জেলে যান?
উত্তর: মনে নেই।
প্রশ্ন: ’৭০ এর নির্বাচনে মিরপুর থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন গোলাম আযম?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: গোলাম আযমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য ওই সময় ৫০ টাকা নিয়েছেন?
উত্তর: সত্য নয়।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষীর পুনরায় জেরা

৬/৯/২০১২
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ৩/৯/২০১২ তারিখ  ষষ্ঠ সাক্ষী ডা. মো. হাসানুজ্জামান জবানবন্দী প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এ।  সেদিন তার আংশিক জেরা হয়।
আজ বৃহষ্পতিবার  সাক্ষী ডা. মো. হাসানুজ্জামানকে পুনরায়  জেরা  করেন আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী। আজকের জেরা এখানে তুলে  ধরা হল।

প্রশ্ন: আপনি দুই বিয়ে করেছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: প্রথম বিয়ে করেছেন কবে?
উত্তর: ১০ মে ১৯৬৮ ।
প্রশ্ন : স্ত্রীর নাম?
উত্তর :  নাম আছিয়া বেগম
প্রশ্ন : তিনি জীবিত আছেন বর্তমানে?
উত্তর : আছেন।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় বিয়ে কবে করেন এবং স্ত্রীর নাম কি?
উত্তর: ১৯৮২ নালে, স্ত্রীর নাম সোহেলা পারভিন।
প্রশ্ন : দ্বিতীয় স্ত্রীর বাপের বাড়ী কোথায়?
উত্তর : রাজধানীর পুরান ঢাকার প্রতাপ দাস লেনে।
প্রশ্ন: ডেন্টাল কলেজে পড়া অবস্থায় সোহেলা পারভিনদের বাড়িতে লজিং থাকতেন?
উত্তর: হ্যাঁ। জগন্নাথ কলেজে এইচএসসিতে পড়াকালীন সময় থেকে তাদের বাড়িতে লজিং থেকেছি।
প্রশ্ন: সোহেলা পারভিনদের বাড়িতে লজিং থাকাকালে তার সাথে সম্পর্ক ছিল এবং সোহেলা পারভিনের সাথে বিয়ের কথা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: সোহেলা পারভিনের সাথে সম্পর্কের বিষয় গোপন করে প্রথম স্ত্রী আছিয়ার পিতার অর্থ বিত্তের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আছিয়াকে বিয়ে করেন?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে আপনার শ্বশুর বাড়ি আহমদ নগর গ্রামে কয়বার গিয়েছিলেন?
উত্তর: এক বারও যাইনি।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম স্ত্রী তখন কোথায় থাকত? 
উত্তর: আমাদের বাড়িতে থাকত।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার স্ত্রী একবারও বাপের বাড়িতে গিয়েছেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: যে ভাই মারা যান তিনি নৌ বাহিনীতে কবে যোগদেন?
উত্তর: ১৯৬৯ বা ’৭০ সালে।
প্রশ্ন: তিনি কবে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন?
উত্তর: ’৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে।
প্রশ্ন: ২৯ জুন যেদিন আপনার ভাই আপনার শ্বশুরবাড়িতে যান সেদিন আপনি বাড়িতে ছিলেন?
উত্তর: আমি ও আমার স্ত্রী নানা বাড়িতে যাই।
প্রশ্ন: আপনার ভাই আপনার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার বিষয় আপনাকে জানিয়ে ছিল?
উত্তর: আমার ছোটভাই কাউকে কিছু না বলে গোপনে আমার শ্বশুর বাড়িতে যায়।
প্রশ্ন: আপনার ভাই স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছিলেন তা রাজাকার, আল-বদর বা সাধারণ মানুষ কেউ জানত?
উত্তর: জানি না।
প্রশ্ন: ২৯ জুন পর্যন্ত আপনার ভাই বাড়িতে থাকত না অন্য কোথাও থাকত?
উত্তর: বাড়িতে থাকত, মাঝে মধ্যে নানী বাড়িতে যেত।
প্রশ্ন: আপনার ভাই কোন সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছে?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: ২৯ জুনের আগে আপনার ভাই কয়টি ক্যাম্প রেকি করে?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনার ভাই কোন অপারেশনে গিয়েছিল কি না?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনাদের বাড়ি থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য কত দূরে?
উত্তর: চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার হবে।
প্রশ্ন: আপনাদের পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে যাননি?
উত্তর: আমাদের পরিবারের কেউ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যাননি।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনাদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার শ্বশুর বাড়ি স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার শ্বশুর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আসত?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় সংগ্রাম পরিষদ হয়েছিল জানেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: আপনার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান তালুকদারের নাম শুনেছেন?
উত্তর: শুনেছি।
প্রশ্ন: আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে না বিপক্ষে ছিল?
উত্তর: কোন পক্ষে ছিল না।
প্রশ্ন: আপনার নানা বাড়ির কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি?
উত্তর: হ্যাঁ।




বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শাহরিয়ার কবিরের জেরা৩

৬/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরকে বৃহষ্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো জেরা করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুরাল-২ মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন: বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: গণতদন্ত কমিশনে জড়িত ছিলেন?
উত্তর: ছিলাম, তদন্ত পরিচালনা করেছি ও রিপোর্ট প্রণয়নে সহযোগিতা করেছি।
প্রশ্ন: যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করেছেন তাদেরকে অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন?
উত্তর: না। পরে বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।
প্রশ্ন: তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে এ বিষয়টি সংযুক্ত করেছেন?
উত্তর: করা হয়নি, কারণ সংক্ষিপ্ত ভার্ষণ ছিল।
প্রশ্ন: গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে আপনারা অভিযুক্তদের কোন উদ্বৃতি দেননি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: লাহোর, পাঞ্জাব ও অন্যান্য শহরে কাদিয়ানী বিরোধী দাঙ্গার তদন্তর জন্য বিচারপতি মনিরের নেতৃত্ব কমিশন হয়। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তখন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মুসলীম লীগের।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মনিরের কমিশনের রিপোর্টে দাঙ্গার জন্য সংবাদপত্রের রিপোর্টকেও দায়ী করা হয়।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: রিপোর্টে জামায়াত ও সৈয়দ আবুল আলা মওদূদী বক্তব্য উল্লেখ আছে।  
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মওদূদী দাবি করেছিলেন যে, ডাইরেক্ট অ্যাকশানের ওলামাদের সিদ্ধান্তে তিনি নিজে ও জামায়াতে ইসলামী ছিল না?
উত্তর: হ্যাঁ, মওদূদী বলেছেন। কিন্তু কমিশন তা গ্রহণ করেনি।
প্রশ্ন: বিচারপতি মনির কমিশনের রিপোর্টে মূলত মজলিসে আহরারকে কাদিয়ানী বিরোধী দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
উত্তর: রিপোর্টের অন্যখানে জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রশ্ন: রিপোর্টে হত্যাকাণ্ডের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে নিহতের সংখ্যা ২০ জন অতিক্রম করেনি।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: বিচারপতি মনির কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বেই মওদূদীর বিচার সামরিক আদালতে সম্পন্ন হয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনি সামরিক শাসন ও সামরিক আদালতের বিরোধী।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে যে কোনো বিচারের বিরোধী।
উত্তর: হ্যাঁ। পরে বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সামরিক শাসনের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়েছে।

ওরা বলেছিল সাঈদী পারেরহাটে চট বিছিয়ে তেল নুন সাবান মরিচ বিক্রি করত

মেহেদী হাসান, ৬/৯/২০১২
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের   বেশ কয়েকজন সাক্ষী   ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন , স্বাধীনতা যুদ্ধের  আগে থেকে মাওলানা সাঈদী পারেরহাট বাজারে চট বিছিয়ে তেল, নুন, সাবান, মরিচ বিক্রি করত। এমনকি লঞ্চে ফেরি করে আবে হায়াত নামে দাতের মাজন বিক্রি করত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি প্রথমে যশোরে পালিয়ে  গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সেখানে তার অবস্থান জানাজানি হলে সেখান থেকেও  তিনি অন্যত্র পালিয়ে যান।  দীর্ঘদিন  পালিয়ে থাকার পর  নাম পরিবর্তন করে ভুয়া মাওলানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

কিন্তু আজ  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরায়  সম্পূর্ণ  ভিন্ন তথ্য  বের হয়ে এসেছে। জেরায় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক জানান,  ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে  মাওলানা সাঈদী এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন। স্বাধীনতার এক বছর পরও তিনি এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেছেন।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জেরা আজ শেষ  হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাককে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। জেরায়  সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয় “সাঈদী সাহেব মুক্তিযুদ্ধের আগে কি করতেন  তা জানেন?” সাক্ষী বলেন,   “মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাহফিল করতেন।”
কোথায় মাহফিল করতেন?
আমাদের গ্রামে দিঘির পাড় নামক এক মাঠ আছে সেই মাঠে তার মাহফিল আমি শুনেছি ।
এবং সেটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে।
যুদ্ধের পর  এলাকায় তিনি  মাহফিল করেছেন?
করেছেন।
কবে করেছে বলতে পারবেন?
যুদ্ধের এক বছর পরে তিনি মাহফিল করেছেন।

জেরা:
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসছেন বলেছেন। সাঈদী সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় কবে থেকে?
উত্তর : স্বাধীনতার দেড়/দুই বৎসর আগে থেকে।
প্রশ্ন : যে নান্না মিয়া (মাওলানা সাঈদীর শ্যালক) আপনাকে নিয়ে এসেছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তার সাথে পরিচয় কবে থেকে?
উত্তর :  ১৫/২০ বৎসর পূর্ব থেকে।

প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের বাড়িতে আপননার যাওয়া আসা ছিল বা সাঈদী সাহেব আপনার বাড়িতে যাওয়া আসা করত?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের বাড়িতে আমার যাওয়া আসা ছিলনা  এবং সাঈদী সাহেবও আমার বাড়িতে যাওয় আসা করতেন না।
প্রশ্ন : নান্না মিয়ার বাড়িতে যাওয়া আসা ছিল আপনার?
উত্তর : নান্না মিয়ার পিতা ইউনুস মুন্সির পাড়েরহাট বাজারে কাটা কাপড়ের দোকান ছিল। সেই দোকানে আমরা কাপড় চোপড় সেলাই করতাম সেই হিসাবে পরিচয়।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব মুক্তিযুদ্ধের আগে কি করতেন জানেন?
উত্তর :  মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মাহফিল করতেন।
প্রশ্ন : কোথায় মাহফিল করতেন?
উত্তর : আমাদের গ্রামে দিঘির পাড় নামক এক মাঠ আছে সেই মাঠে তার মাহফিল আমি শুনেছি ।
এবং সেটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে।
প্রশ্ন : যুদ্ধের পর  এলাকায় তিনি  মাহফিল করেছেন?
উত্তর :  করেছেন।
প্রশ্ন : কবে করেছে বলতে পারবেন?
উত্তর : যুদ্ধের এক বছর পরে তিনি মাহফিল করেছেন।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেব গ্রেফতার হয়েছে এরকম কিছু শুনেছেন?
উত্তর : এখন গ্রেফতার হয়েছে শুনেছি।
প্রশ্ন : এখনকার নয়, এর আগে গ্রেফতার হওয়ার কথা শুনেছেন?
উত্তর :   আগে কখনও গ্রেফতার হয়েছেন কিনা তা আমি শুনি নাই।
প্রশ্ন :  মুক্তিযুদ্ধের পরে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ শুনেছেন?
উত্তর : শুনি নাই। অভিযোগ হয় নাই।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের কি কি সম্পত্তি আছে তা জানেন?
উত্তর :  তা কি করে জানব?
প্রশ্ন :  তার ছেলেরা কে কি লেখাপড়া করেছে তা জানেন?
উত্তর :  সঠিক জানি না।
প্রশ্ন :  কুট্রির লাশ নৌকায় কে তুলেছিল তা দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি এবং আপনার ভাগনে বাবুলের বিরুদ্ধে এক মহিলা মামলা করেছিল?
উত্তর :  হ্যা।  বাবুলকে ঐ মহিলার ছেলে কোপাইছিল।  তখন সেই ঘটনার জন্য আমি আমার ভাগনের পক্ষ হয়ে মহিলার বিরুদ্ধে মামলা করি। সেই  কারনে  ঐ মহিলা আমাদের দু জনকে আসামী করে মামলাটি করেছিল কাউন্টার হিসেবে। 
প্রশ্ন : বাবুলদের পৈত্রিক সম্পত্তি তারা কি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে?
উত্তর : বাহাদুর অনেক সম্পত্তির মালিক এবং মধু এখনও বিবাহ করে নাই সে কারণে ভাগ বাটোয়ারা হয় নাই।
প্রশ্ন : ওই মহিলা যে মামলা করেছে সেখানে আপনার এবং আপনার ভাগনের বয়সের ব্যবধান দেখানো হয়েছে মাত্র দুই বছর।
উত্তর : সেখানে কার বয়স কি দেখানো হয়েছে বা না হয়েছে তা আমি জানিনা।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের  পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। আপনি আসলে সাঈদী সাহেব সম্পর্কে কিছুই জানেননা।
উত্তর : ইয়েস । জানি।

প্রশ্ন : তখন গিয়ে দেখি উত্তর দিক থেকে সামনের খাল দিয়ে নৌকায় করে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে পাড়ের হাটের দিকে আসতেছে। নৌকায় কালাম চৌকিদার, আইয়ুব আলী চৌকিদার এবং হাকিম মুন্সি দেখি। এরপর দেখি আরও কয়েকজন লোক খালের পাড় দিয়ে উত্তর দিক থেকে আসতেছে। যে সব লোক আসতেছে তাদের মধ্যে দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, রুহুল আমিন, মোমিনা রাজাকার ছিল। আরও দেখি যে, উক্ত লোকেরা আজু হাওলাদারের বৌ এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে বেঁধে নিয়ে আসতেছে এবং পাড়েরহাটের দিকে নিয়া যাচ্ছে। তারপর দিন শুনি আজু হাওলাদারের বৌ বাড়িতে আসে এবং সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে । আপনার এই কথাগুলি সত্য নয়। মিথ্যা বলেছেন।
উত্তর : আমি সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার কিছু দিন পরে শুনেছি যে, ইব্রাহিম কুট্টির বৌ একটি মামলা করেছে। আপনার এ কথাও সত্য নয়।
উত্তর : সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার ভাগ্নে আব্দুল হালিম বাবুলের বাড়িতে কোন পাক সেনা এবং রাজাকার যায় নাই, লুট  হয় নাই, আগুন দেয় নাই এবং এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নাই- আপনার এ কথাগুলিও সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমি সত্য বলেছি।
প্রশ্ন : বাবুলের বাড়ি, খসরু মিয়ার বাড়ি, আমির খাঁর বাড়ি একই দিনে রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। একথা জানা সত্ত্বেও সেটা গোপন করে আপনি  অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন :  সাঈদী সাহেবের আত্মীয় স্বজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি  সাঈদী সাহেবকে রক্ষা করার জন্য এই মামলায় অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীকে পরিচালনা করেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভেকেট তাজুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম,  গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।  আগামী রোববার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাক্ষী হাজিরের কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক  বিচার কার্যক্রমে অংশ নেন। 




সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষীর জেরা শেষ

৬/৯/২১০২
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষী এস এম মাহবুবুল আলমের  জেরা আজ  শেষ হয়েছে। সাক্ষীকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।

জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : আক্রমনের পরে গাড়ির মধ্যে কোন ডাক চিৎকার শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে  এম আর আখতার মুকুলের চরমপত্র অনুষ্ঠানে আপনাদের আক্রমন বিষয়ে কোন  আলোচনা  শুনেছেন?
উত্তর :  শুনিনাই।
প্রশ্ন : আপনার নাম  ডিসি অফিসের  তালিকায় নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি  যে কমান্ডার ছিলেন সে মর্মে কোন কাগজপত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন তদন্তকালে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি কোন মুক্তিযোদ্ধা বা কমান্ডার ছিলেননা।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার বা নিহত ড্রাইভারের পরিবার উক্ক ঘটনার জন্য কোন মামলা করেছিল আপনার বিরুদ্ধে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : জিয়াউর রহমান সাহেব আপনাকে যে হিট লিস্ট দিয়েছিলেন তা আছে আপনার কাছে?
উত্তর : সময়ের পরিক্রমায় তা হারিয়ে গেছে।
প্রশ্ন : আক্রমনে যে গ্রেনেড চার্জ করা হয় সেটি কি রকম ছিল?
উত্তর : এনারগা গ্রেনেড। সেটি যথেষ্ঠ শক্তিশালী ছিল।
প্রশ্ন : স্টেনগান?
উত্তর : ৯ এম এম এসএমটি মার্ক ২।
প্রশ্ন : এ ধরনের স্টেনগান এবং গ্রেনেড দিয়ে হামলা করলে গাড়ির মধ্যে কারো বেঁচে থাকার কথা নয়।
উত্তর : ড্রাইভার নিহত হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের সাহেব  গুরুতর আহত হয়েছিল। বাকীদের অবস্থা জানা নেই।
প্রশ্ন : ঘটনার দিন আপনি কখনো আয়েশা খাতুন লেনে যাননি। আপনি অন্যত্র ছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।

শাহরিয়ার কবিরকে জেরা/// ১৯৪৮ সালে ডাকসুর পক্ষে জিন্নাহকে প্রদত্ত মানপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম

৫/৯/২০১২
বুধবার  দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে শাহরিয়ার কবিরকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে ডাকসুর পক্ষে যে মানপত্র দেয়া হয় তাতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার দাবি করা হয়।  
শাহরিয়ার কবির জবাব দেন ‘হ্যাঁ’।
তারপর তাকে প্রশ্ন করা হয় ওই মানপত্র পাঠ করেন তৎকালিন ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম।
শাহরিয়ার কবির জবাব দেন ‘হ্যা’। পরে বলেন, বিশেষ কারণে তিনি মানপত্র পড়েছিলেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার তাকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

বুধবারের জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ:
প্রশ্ন: আয়ুব খান সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি জামায়াতে ইসলামীর জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত জামায়াতের বিষয়ে গবেষণা করছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: এই মামলার আসামীর পিতার নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: মনে নেই।
প্রশ্ন: তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: মাওলানা আবদুর রহিম পূর্ব বাংলার জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তিনি ৬৯ সাল পর্যন্ত আমির ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত মাওলানা আবদুর রহিম জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন?
উত্তর: শীর্ষ নেতা ছিলেন।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: মাওলানা আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে দালালী আইনে কোন মামলা হয়নি?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে আভিযোগ আনা হয়নি? 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ’৭৯ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তিনি ইসলামি ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফায় ধর্মনিরোপেক্ষতা ছিল না। 
উত্তর: হ্যাঁ। প্রয়োজন ছিল না।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের কোন দাবি কোন দিন করেননি।
উত্তর: হ্যাঁ, ২৬ মার্চের আগে করেননি।
প্রশ্ন: ১৯৪৮ থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের অংশীদার ছিল না।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৯৫৬ সালে সংবিধান রচনার মাধ্যমে পাকিস্তানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়? 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: সোহরাওয়াদী বা শেখ মুজিবুর রহমান কেউই মওদূদী বা তার দল জামায়াতের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে হয়ে রাজনীতি করতেন না। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ভষা আন্দোলনের বিরোধীতা করে জামায়াত কখনো  কোন দিন বিবৃতি প্রদান করেনি। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে ডাকসুর পক্ষে যে মানপত্র দেয়া হয় তাতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার দাবি করা হয়।  
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই মানপত্র পাঠ করেন তৎকালিন ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম।
উত্তর: হ্যাঁ। পরে বলেন, বিশেষ কারণে তিনি মানপত্র পড়েছিলেন।
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকা ভুল ছিল বলে গোলাম আযম সম্পার্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে কোন অডিও রেকর্ড আছে?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গোলাম আযম কোথায় এ বক্তব্য দিয়েছিলেন?
উত্তর: এটা বদরুদ্দিন উমরের বই পড়ে বলতে হবে।
প্রশ্ন: এ বিষয়ে সংবাদপত্রে কি খবর প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: যত দূর মনে পড়ে বদরুদ্দিন উমর দৈনিক আযদের উদ্বৃতি দিয়েছেন।
প্রশ্ন: যে সংবাদের উদ্বিৃতি দিয়েছেন তা ’৭১এর আগে না পরে?
উত্তর: আগের ।
প্রশ্ন: উদ্বিৃতিতে সংবাদদাতার নাম আছে?
উত্তর: বই দেখে বলতে হবে।
প্রশ্ন: ওই বইটির নাম কি?
উত্তর: এ মুহুর্তে মনে নেই।
প্রশ্ন: অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা ভুল ছিল মর্মে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জামায়াতে ইসলামির আদর্শের বিরোধী ব্যক্তি হিসেবে জামায়াত ও ওই দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আপনার ও আপনার সংগঠনের যে ধারাবাহিক অসত্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারই অংশ।   
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে পরিবর্তন করার জন্য কোন বিবৃতি দেননি বা আন্দোলন করেননি। 
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: আপনি ও আপনার সংগঠন জামায়াতে ইসলামি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছেন?  
উত্তর: ধর্ম একটি পবিত্র বিষয় ধর্মকে রাজনীতির ভেতর টেনে এনে কলুষিত করা উচিত নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত না করার জন্য আপনি ও আপনার সংগঠন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন? 
উত্তর: জামায়াতকে নিবন্ধিত না করার জন্য ইসিকে আহ্বান জানিয়েছি। কারণ জামায়াত বাংলাদেশের সংবিধান মানে না।
প্রশ্ন: ১৯৯১, ’৯৬, ’০১ ও ’০৮ সালে জামায়াতে ইসলামি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছেন?
উত্তর: এটা জামায়াতের শঠতা।
প্রশ্ন: ২০০১ সালে জামায়াতের আমি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদ মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তারা সংবিধান বিরোধী কোন কাজ করেন নাই।
উত্তর: মন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে তারা সংবিধান মেনে কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি না। সংবিধান লঙ্ঘন করে আমাকে গ্রেফতার করেছে।
প্রশ্ন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদ কি ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: নিজামী বা মুজাহিদ আপনার বিরুদ্ধে মামলাকারী ছিলেন কি?
উত্তর: না। তবে জোট সরকারের দায় এই দুই মন্ত্রীকেও নিতে হবে।
প্রশ্ন: ২০০১ সালের জোট সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরাও কি সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন?
উত্তর: না। জামায়াত যে অর্থে সংবিধান বিরোধী বিএনপি সে অর্থে সংবিধান বিরোধী নয়।

বুধবার  জেরার সময় শাহিরয়ার কবির আইনজীবীর  প্রশ্নকে ‘স্টুপিড কোশ্চেন’ বলায় ট্রাইব্যুনাল-২  তীব্র উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মিজানুল ইসলাম জেরায়  সাক্ষী শাহরিয়ার কবির প্রশ্ন করেন, অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা ভুল ছিল মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন বলে আপনি যে কথা বলেছেন এর  সমর্থনে আপনার কাছে কোন অডিও বা ভিডিও আছে কি? শাহরিয়ার কবরি বলেন, এটা একটা স্টুপিড কোশচেন। এসময় ডিফেন্স কাউন্সেল মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীরসহ উপস্থিত আইনজীবীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদলও ডিফেন্স আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধীতা করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে আদালতের পরিবেশ কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। 
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম শাহরিয়ার কবিরের মন্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, এটা কোর্ট ল্যাঙ্গয়েজ নয়। আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে সাক্ষী অপমানজনক উক্তি করতে পারে না। আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন, সাক্ষী আইনজীবীকে লক্ষ্য করে স্টুপিড বলেছেন। এসময় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি (সাক্ষী) বলেছেন ‘স্টুপিড কোশ্চেন । এসময় ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর শাহরিয়ার কবিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মন্তব্য করার কারণে আপনার দুঃখ প্রকাশ করা উচিৎ। এতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এরপর শাহরিয়ার কবির তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাক্ষী আগে বলেছেন ভাষা ঠিক হচ্ছে না, আবার এখন তিনি বলছেন, স্টুপিড কোশচেন, এটা কি? এসময় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। 


লাট মিয়ার জেরার বাকি অংশ



৫/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে নবম সাক্ষী মোঃ আমির হোসেন মোল্লা ওরফে লাট মিয়াকে বুধবার (৫/৯/১২)  দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন: আনবিক শক্তি কমিশন গৃহনির্মান সমবায় সমিতির দুয়ারী পাড়া প্রজেক্টের ৭৫ নং প্লট নিয়ে ঢাকার প্রথম সহকারী জজ অঅদালতে মামলা হয়েছিল ওই মামলায় আপনি বিবাদী হিসেবে আছেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর তারিখে এ বিষয়ে একটি নিষেধাজ্ঞা আদেশ হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: পরে ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর আপনার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় জিডি হয়?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গত ৫ মার্চ জমির নির্মান কাজ বন্ধের হুমকির অভিযোগে ৬ মার্চ আপনার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় জিডি করা হয়?
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: গত ৬ মার্চ আপনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগে চার্জশিট দেয়া হয়?
উত্তর: মামলা হয়েছে, চার্জশিট দেয়া হয়েছে কিনা জানি না।
প্রশ্ন: একটি বাড়ির ছবি দেখিয়ে, ওই বাড়ির নাম ফলকে আছে আমির হোসেন মোল্লা, ওই বাড়ি দুয়ারি পাড়ায় এবং অধিগ্রহণ করা সম্পত্তি কি না।
উত্তর: ওই বাড়িটি পুনর্বাসন প্লটে, আমরা বরাদ্দ পায়নি।
প্রশ্ন: মিরপুরে জন্দি নামে একটি জায়গা আছে এবং ’৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাক বাহিনী ওই স্থান থেকে আপনাদের গ্রামে গোলা বর্ষণ করত?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই মামলার আসামী কোথায় লেখাপড়া করতেন জানেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ’৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মিরপুরের বিহারী এলাকা ভারতীয় বাহিনীর বিহার রেজিমেন্টের অধীনে ছিল?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি কত নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধ ছিলেন?
উত্তর: ২ নং সেক্টরে।
প্রশ্ন: ওই সময় কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মান্নানকে চেনেন?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: কমান্ডার হেলাল মোরশেদকে চেনেন?
উত্তর: ’৭১ এ চিনতাম না, এখন চিনি।
প্রশ্ন: ’৭২ সালেল ৩০ জানুয়ারি মিরপুর-১২ এর পানির টেঙ্কির কাছে কমান্ডার হেলাল মোরশেদ অবস্থান নেন?
উত্তর: জানি না।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় ১০নং প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন চাঁন মিয়া।
উত্তর: জানি না।

বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আমার ভাগনে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে/// জবানবন্দীতে সাঈদীর পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষী



মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে গত  ১৭  জানুয়ারি  ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন আব্দুল হালিম বাবুল। সাক্ষ্য দেয়ার সময়  তিনি  বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার  এবং সশস্ত্র  পাক আর্মির লোকজন তাদের ঘরে প্রবেশ করে লুটপাট করে। এরপর তারা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।  

সাক্ষী আব্দুল হালিম বাবুলের মামা আব্দুর রাজ্জাক আঁকন আজ  ট্রাইব্যুনালে এসে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, তার ভাগনে আব্দুল হালিম বাবুল এই ট্রাইব্যুনালে এসে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে আমার ভাগনে আব্দুল হালিমের বাড়িতে কোন পাক সেনা, রাজাকার যাই নাই। লুটপাট হই নাই। আগুন দেই নাই। এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি।

আব্দুর রাজ্জাক দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন  মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। জবানবন্দী শেষে  আজ তার জেরা শুরু হয়।

আব্দুর রাজ্জাকের জবানবন্দী :
আমার নাম আব্দুর রাজ্জাক আকন। পিতা মৃত ইসকান্দার আলী আকন। মাতা মৃত  আকিমুননেসা। আমার বয়স ৬৫ বছর। গ্রাম নলবুনিয়া। থানা জিয়ানগর। পিরোজপুর। আমি কৃষিকাজ করি। আমরা আট ভাইবোন। আমাদের সবার বড় বোন সাফিয়া খাতুন। এই বোনকে আমাদের পাশের বাড়িতে বিয়ে দেয়া হয়। তার তিন ছেলে। মেয়ে নেই। তিন ছেলেরা হল আব্দুল হালিম বাবুল, আব্দুস সালাম বাহাদুর এবং আব্দুল করিম মধু। আমি আজ সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য সাক্ষ্য দেয়ার জন্য  ট্রাইব্যুনালে এসেছি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে আমার ভাগিনা আব্দুল হালিম বাবুলের বাড়ি কোন পাক সেনা যাইনাই, কোন রাজাকার যাইনাই। লুট হয়নাই। আগুন দেই নাই। এরকম  কোন ঘটনাই ঘটেনি।
আব্দুল হালিম বাবুল এই ট্রাইব্যুনালে এসে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে।স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে  বাবুলের বয়স ছিল মাত্র আট নয় বছর।

এক বছর আগে শোনা গেল বাবুল সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে। একথা শুনে বাবুলের মা  বাবুলকে বলেন বাবা তুমি একরকম একজন ভাল মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবেনা।  বাবুলের ভাই আব্দুস সালাম বাহাদুর এবং আব্দুল করিম মধুও বলেছে ভাইয়া তুমি এরকম সাক্ষ্য দেবেনা। উত্তরে বাবুল বলেছে আমি সাক্ষ্য দেব। তখন তার মা রাগে বাবুলের ঘর থেকে বের হয়ে  তার মেঝ ছেলে  আব্দুস সালাম বাহাদুরের  বাসায় ঢাকা আসেন। তার মা আমাকে বলেছেন, আমি যদি সুস্থ থাকতাম তাহলে সাঈদী সাহেবের পক্ষে গিয়ে সাক্ষ্য দিতাম। তুমি সব জান। তুমি গিয়ে সত্য সাক্ষ্য দিয়ে আসবা।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের নলবুনিয়ায় একটা ঘটনাই ঘটেছে। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ একদিন শেষ রাত্রে একটা আওয়াজ হয়।  আমি অনুমান করলাম এটা গুলির আওয়াজ। তারপর দেখি যে, ফজরের টাইম হয়ে গেছে। আমি আযান দিয়া নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর উত্তরদিকে রাস্তার পাশে যাই কোথায় কি হয়েছে জানার জন্য। তখন গিয়ে দেখি উত্তর দিক থেকে সামনের খাল দিয়ে নৌকায় করে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে পাড়ের হাটের দিকে আসতেছে। নৌকায় কালাম চৌকিদার, আইয়ুব আলী চৌকিদার এবং হাকিম মুন্সিকে দেখি। এরপর দেখি আরও কয়েকজন লোক খালের পাড় দিয়ে উত্তর দিক থেকে আসতেছে। যে সব লোক আসতেছে তাদের মধ্যে দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, রুহুল আমিন, মোমিন রাজাকার ছিল। আরও দেখি  উক্ত লোকেরা আজু হাওলাদারের বৌ এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে বেঁধে নিয়ে আসতেছে এবং পাড়েরহাটের দিকে নিয়া যাচ্ছে। তারপর দিন শুনি আজু হাওলাদারের বৌ বাড়িতে আসে এবং সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। এটাই আমার বক্তব্য। স্বাধীনতার কিছুদিন পরে শুনেছি যে, ইব্রাহিম কুট্টির বৌ একটা মামলা করেছে।

আব্দুল হালিম বাবুল যা বলেছিলেন:
গত ১৭ জুন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  ১৪ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আব্দুল হালিম বাবুল। তিনি জবানবন্দীতে বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ২ জুন আমি আমার নিজ বাড়িতে ছিলাম। ঐদিন আমি আমার বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর দাড়িয়ে ছিলাম। এসময় লোকজনের হৈচৈ শুনতে পাই। আমি লোকজনের কাছে  জানতে চাইলাম কি হয়েছে। তারা বলল পাক হানাদার বাহিনী আসতেছে।  আমরা সব সময় পাক হানাদার বাহিনীর  ভয়ে আতঙ্কে থাকতাম। তাদের আসার খবর পেয়ে তাড়াতড়ি বাড়ির লোকদের বললাম তোমরা সবাই সরে যাও।  তারা সবাই আত্মগোপন করে। আমিও আত্মগোপন করলাম। দূর থেকে দেখতে পাই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দানেশ মোল্লা,  মোসলেম মাওলানা তার সাথে আরো কিছু   সশস্ত্র   রাজাকার   এবং পাক  সেনারা আমার ঘরে  প্রবেশ করে মালামাল লুটপাট করে।  লুটপাটের পর আমার   ঘরে  আগুন দেয়।

অথচ আজ  তার মামা ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়ে বললেন তার  ভাগনে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীর জবানবন্দীর সময় সাক্ষীকে পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী। এসময় তাকে সহায়তা করেন  অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ প্রমুখ।

জেরা :
জেরার শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, আসামী পক্ষ থেকে আমাদের সাক্ষীর যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে আব্দুর রাজ্জাক এবং আব্দুর রাজ্জাক খান নামে দুজন সাক্ষীর নাম আছে। আব্দুর রাজ্জাক আঁকন নামে কোন সাক্ষীর নাম নেই। তারা তালিকায় যে আব্দুর রাজ্জাকের নাম উল্লেখ করেছেন সেই আব্দুর রাজ্জাক আর আজকের আব্দুর রাজ্জাক আঁকন দুজন ভিন্ন ব্যক্তি।
তখন ট্রাইব্যুনালন বলেন, শুরুতে কেন এটা আপনি বলেননি। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাবি করলে তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীর নিরাপত্তার  কারনে কোড নেম ব্যবহার করা যায়। সাক্ষীর নিরাপত্তার কারনে আমরা পারিবারিক পদবী আঁকন শব্দটি ব্যবহার করিনি। তালিকা আব্দুর রাজ্জাক নামে যে সাক্ষীর নাম আমরা জমা দিয়েছি তিনিই আজকের আব্দুর রাজ্জাক আঁকন।  শেষে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি এবং আসামী পক্ষের বক্তব্য রেকর্ড করেন জেরার শুরুতে। তারপর জেরা শুরু হয়।

সাক্ষীকে জেরা করেন সৈয়দ হায়দার আলী।
প্রশ্ন :  আপনার বড় বোন, বাবুলের মায়ের  বয়স কত ?
 উত্তর : ৮৫ বছরের উপরে হতে পারে।
প্রশ্ন :  আপনার বড় বোনের পরই কি আপনি?
উত্তর : না আমার উপরে আরও বড় তিন ভাই আছে।
প্রশ্ন : আপনার বড় বোনের বিয়ে হয় কবে বলতে পারবেন?
উত্তর : না। আব্বা বিয়ে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : তার বিয়ের সময় আপনার বয়স কত ছিল?
উত্তর : তাও মনে নেই।
প্রশ্ন : বাবুলরা বড় কে?
উত্তর : বাবুল।
প্রশ্ন : বাবুলের জন্ম কবে মনে আছে?
উত্তর : তার আগে আরো চার ভাই জন্মের পর মারা যায়। বাবুলের জন্ম কবে তা মনে নেই।
প্রশ্ন : চারজন কোন সালে মারা গেছে তা মনে আছে?
উত্তর :  স্মরন নেই।
প্রশ্ন : আপনার বড় বোনের বিয়ের সময় ভগ্নিপতির বয়স কত ছিল?
উত্তর :  মনে নেই।
প্রশ্ন : কবে মারা গেছে সে?
উত্তর : স্বাধীনতার পর।
প্রশ্ন : তখন তার বয়স কত ছিল?
উত্তর : তাও জানা নেই।
প্রশ্ন : নলবুনিয়া গ্রাম কোন দিকে লম্বা?
উত্তর : উত্তর দক্ষিনে।
প্রশ্ন : লম্বায় কত?
উত্তর : আধা মাইল।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময়  হাটবাজার করতেন?
উত্তর : মাঝে মধ্যে।
প্রশ্ন : আশ্বিন মাসে কয়বার পারেরহাট গেছেন?
উত্তর : একবার।
প্রশ্ন : হাটের দিন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আশ্বিন মাসের আগে পরে গেছেন?
উত্তর : গেছি তবে কম।
প্রশ্ন :  কেন কম গেছেন?
উত্তর : পাকিস্তানী এবং রাজাকারতে  ভয়ে।
প্রশ্ন : রাজাকাররা কি করত?
উত্তর : লুট ।
প্রশ্ন : বাড়িঘরে আগুন দিত?
উত্তর : হোগলাবুনিয়া গ্রামে আগুন দেয় শুনেছি।
প্রশ্ন : কাদের বাড়িতে আগুন দিত?
উত্তর : হিন্দুদের।
প্রশ্ন : মুসলমানদের বাড়িতে আগুন দেয়ার কথা শুনেছেন?
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : কোন মুসলমানদের বাড়িতে দিত?
উত্তর : মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে। শঙ্কর পাশা গ্রামে খসরু মুক্তিযোদ্ধা এবং তার বাড়ির পাশে আরো একজনের বাড়িতে আগুন দেয়।
প্রশ্ন : আপনাদের বাড়িতে কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তির : ছিল।
প্রশ্ন : নাম?
উত্তর : মোবারক। সম্পর্কে আমার ফুফাত ভাই।
প্রশ্ন : আপনার ভগ্নিপতি কি মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করতেন না রাজাকারদের  সমর্থন করতেন?
 উত্তর : তিনি ঘোর আওয়ামী লীগ করতেন।
প্রশ্ন : তার পেশা ?
উত্তর : মোহরার ছিলেন। একার মেম্বার হয়েছিলেন।
প্রশ্ন : জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় মাসে আপনার দুলাভাই বাড়িতে থাকত না পালিয়ে থাকত?
উত্তর : তাকে নিয়ে আমি পালিয়ে থাকতাম। অন্য গ্রামে এবং আমাদের গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পালিয়ে থাকতাম।
প্রশ্ন : তিনি আওয়ামী লীগের কি ছিলেন?
উত্তর : ইউনিয়নের একটা পদে ছিলেন।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার ক্যাম্পে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার গ্রামে কোন রাজাকার ছিলনা এবং কেউ আসেওনি।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
উত্তর : সাত্তার নামে একজন ছিল।
প্রশ্ন : আর্মি ক্যাম্পে গেছেন কখনো?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আর্মি ক্যাম্প ছিল?
উত্তর : পারেহাটে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। সেখানে মাঝে মাঝে আর্মি আসত।
প্রশ্ন : দিনে পালাতেন না রাতে?
উত্তর : দিনে রাতে কোন সময় আমি পালাইনি। কারন রাজাকারদের কোন চাপ ছিলনা।
প্রশ্ন : আপনার বিয়ের সাল মনে আছে?
উত্তর : ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে।
প্রশ্ন : ঢাকায় কবে আসেন?
উত্তর : গতকাল।
প্রশ্ন কে নিয়ে এসেছেন?
উত্তর : রফিকের মামা।
উত্তর : রফিক কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে।
প্রশ্ন : আপকি কোথায় থাকেন। এ প্রশ্ন করার সাথে সাথে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় দুই পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম  এ প্রশ্নে তীব্র আপত্তি জানান। সাথে সাথে সৈয়দ হায়দার আলীও তা প্রত্যাহার করে নেন।
প্রশ্ন : বাবুলের মা কি করম অসুস্থ
উত্তর : পুরো পুরি সুস্থ না। বয়স হয়েছে। কোন রকম চলাফেরা করতে পারেন।
প্রশ্ন : তিনি বেশির ভাগ সময় কোথায় থাকেন?
উত্তর : ঢাকা।
প্রশ্ন : এখন কোথায়?
উত্তর : আমাদের  বাড়িতে।
প্রশ্ন : ঢাকায় এসে কোথায় থাকেন?
উত্তর: ধানমন্ডি ছেলের বাসায়।
প্রশ্ন : লঞ্চ ঘাট থেকে আপনার বাড়ি কতদূর?
উত্তর : ৪/৫ মাইল।
প্রশ্ন :  “এক বছর  আগে শোনা গেল আব্দুল হালিম বাবুল সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা  সাক্ষ্য দেবে।  এই কথা শুনে তার মা তাকে  বলেছিল যে, বাবা তুমি এরকম ভাল মানুষের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য দিবে না। তার ভাই মধু ও বাহাদুর তাকে বলেছিল ভাইয়া তুমি এরকম সাক্ষ্য দিও না।” এই কথাগুলি অসত্য, আপনি মিথ্যা বলেছেন।
উত্তর :  আমার কথা সত্য। 
প্রশ্ন :     “তার মা আমাকে বলে ভাই আমি যদি সুস্থ থাকতাম তাহলে সাঈদী সাহেবের পক্ষে সত্য সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে যেতাম। তুমি তো সব জান, তাই আমি অসুস্থ বিধায় তুমি গিয়ে সত্য সাক্ষ্য দিয়ে আস। ।” এই কথাগুলি অসত্য, ।
উত্তর  : আমার কথা সত্য।
প্রশ্ন : আব্দুস সালাম বাহাদুর ঢাকায় কি করে তার বয়স কত?
উত্তর : ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে। তার বয়স ৪০ হয়নি।
প্রশ্ন : আব্দুল করিম মধুর বয়স কত?
উত্তর : ৩৫ হবে।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় বাহাদুর এবং মধু কোথায় থাকত?
উত্তর : বাড়িতে ।
প্রশ্ন : আশ্বিনের মাঝামাঝিঢ় গুলি শোনার কথা বললেন। ওটা যে গুলির শব্দ কিভাবে বুঝলেন?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অন্যান্য সময়েও গুলির আওয়াজ শুনেছিলাম।
প্রশ্ন : অন্যান্য সময় গুলির শব্দ শুনে তার খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তাহলে ওই সময় কারা গুলি করেছে তাও জানেননা।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : জৈষ্ঠ্য মাসে পারেরহাট বাজারে গেছেন?
উত্তর : মনে হয় একবার ।
প্রশ্ন :  আপনার ভগ্নিপতি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পারেরহাট বাজারে যেত?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি পারেরহাট গেলে কেউ আপনাকে ভয়ভীতি,  হুমকি বা  খারাপ ব্যবহার করত?
উত্তর : কারো সাথে  আমার সাক্ষাতও হয়নি ভয়ভীতিও দেখায়নি। আমি শেষ বেলায় যেতাম।
প্রশ্ন : সবসময় শেষ বেলায় যেতেন?
উত্তর : হ্যা। সংসারের কাজকর্ম শেষ করে যেতাম।
প্রশ্ন : কারো সাথে দেখা হয়নি বলতে আপনি কাদের মিন করেছেন?
উত্তর : রাজাকার।
প্রশ্ন : রাজাকাররা কখন থাকে বা না থাকে তা জানতেন?
উত্তর : না।

সাকা চাই প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যা বললেন

মেহেদী  হাসান
আজ  বিকালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষী এস এম মাহবুবুল আলমের জেরা শুরু হয়। গত  ২৮ আগস্ট জবানবন্দীর সময় সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমান  তাদের  কাছে ২২ জনের একটি ছোট লিস্ট দিয়েছিলেন । তাতে  ১ নং ক্রমিকে  ফজলুল কাদের চৌধুরী,  ২ নং ক্রমিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীর নাম ছিল । । ট্রাইব্যুনালের রেকর্ডেও  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী এভাবে নামটি লিপিবদ্ধ করা হয় তার জবানবন্দী গ্রহনের সময়।

আজ  জেরার সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীকে  বলেন ১৯৭১ সালে সালাজউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তো সাকা চৌধুরী বলা হতনা। কাজেই ১৯৭১ সালে তার নামের সাথে ওরফে  সাকা চৌধুরী কিভাবে আসল। এ সময় ট্রাইব্যুনাল এ প্রশ্ন বিষয়ে আপত্তি জানালে আহসানুল হক হেনা বলেন, জবানবন্দীতে যদি ওরফে  সাকা চৌধুরী না রাখা হত তাহলে আমি এ প্রশ্ন করতামনা। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন সাংবাদিকরা অনেক সময় সংক্ষেপে এভাবে লেখেন। আমরাও কারো নাম এভাবে লেখা পছন্দ করিনা। তখন  ডকে উপস্থিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমার নাম আপনারা সাকা চৌধুরী লেখেন আপত্তি নেই।  কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি আমরা  সংক্ষেপে শেমুর লিখি তখন কেমন হবে? তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, সবার নিকট নাম একটি স্পর্ষকাতর এবং সম্মানিত বিষয়। নাম বিকৃত করা ঠিক নয়।

এর আগেও মাঝে মাঝে সাক্ষী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কর্তৃক  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম সাকা চৌধুরী বলায় তিনি তীব্রভাবে এর প্রতিবাদ জানাতেন। একবার ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  সবাইকে নির্দেশ দেন তার নাম ওভাবে না বলার জন্য।

তার আগে একবার বিচারপতি নিজামুল হকও সাকা চৌধুরী বলেন। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গে হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠেন হু ইজ সাকা চৌধুরী। বিচারপতি নিজামুল হক সরি বলেন তখন।